[মানুষের বিবর্তন নিয়ে লিখতে শুরু করার পর মনে হয়েছিল এভো ডেভোর মত এতো কাটিং এজ গবেষণাগুলো নিয়ে না লিখলে মানব বিবর্তনের অনেক কিছুই, বিশেষ করে বংশগতিয় ব্যাপারগুলোর অনেক কিছুই, ঠিক পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তবে লিখতে বসার পর ক্রমশ বুঝতে শুরু করলাম যে বিষয়টা যত সহজ মনে করেছিলাম আসলে কিন্তু তা নয়, সহজবোধ্য বাংলায় এ ধরণের জটিল বিষয় নিয়ে লেখা আসলে বেশ কঠিন। তাই আগের পর্বগুলোতে গবেষণাগুলোকে খুব সহজভাব উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু তার ফলে যা হওয়ার তাই হল, বেশ কিছু কঠিন বিষয় এই শেষের পর্বে এসে এক সাথে লিখতে হল এবং লেখাটা আকারেও হাতীর মত সাইজ ধারণ করলো। যারা এতদিন কষ্ট করে এমন একটা খটমটে লেখা পড়েছেন, প্রশ্ন করেছেন এবং সাথে থেকেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ও হ্যা, প্রায় ভুলে যাচ্ছিলাম…… বিবর্তন নিয়ে লেখালিখির প্রতি শর্তহীনভাবে প্রগাঢ় ভালোবাসা দেখানোর জন্য লেখাটা শাফায়েতকে উৎসর্গ করা হল 🙂 ]
:line:
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
এইতো কয়েক দশক আগের কথা, গরিলা নয় বরং শিম্পাঞ্জির সাথে আমাদের বেশী মিল বা শিম্পাঞ্জির ক্রোমোজোম আর আমাদের ক্রোমোজমের মধ্যে এত সাদৃশ্য দেখে রীতিমত হইচই পড়ে গিয়েছিল। অথচ কি আশ্চর্য, একুশ শতকে পা রাখার আগেই আমাদের আলোচনার টপিকই উলটে যেতে শুরু করেছে। আমরা যেন আজ এক্কেবারে ভিন্ন মেরুতে দাঁড়িয়ে আছি! শিম্পাঞ্জির জিনোমের সাথে আমাদের জিনোমের ৯৮-৯৯% মিল আর কোন খবর নয়। যারা জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় নিয়োজিত আছেন তারা তো বটেই, এমনকি যারা এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন তাদের কাছেও আজ এই প্রশ্নগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। জীববিজ্ঞানে আজ প্রাণের বিবর্তন নিয়ে আর কোন সন্দেহ নেই, প্রশ্ন নেই আমাদের এবং শিম্পাঞ্জির সাধারণ পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব নিয়ে; আজ আমাদের গবেষণা এবং সংশয়গুলোর ধরণধারণই বদলে গেছে। এখন আমরা প্রশ্ন করছি, বংশগতীয়ভাবে এতই যদি মিল থাকবে তাহলে শিম্পাঞ্জির সাথে এত বাহ্যিক, শারীরিক, আচরণগত, বুদ্ধিবৃত্তিক পার্থক্য আসছে কোথা থেকে? প্রশ্নগুলো একদিকে যেমন প্রমাণ করে যে গুণগতভাবে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের উত্তরণ ঘটে গেছে, আবার অন্যদিকে বোঝা যায় যে, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার জন্য বিজ্ঞানের এবং প্রযুক্তির যে অগ্রগতির দরকার ছিল তা হয়তো মোটে আমাদের হাতের মুঠোয় আসতে শুরু করেছে।
এই প্রশ্নগুলোই আগে যে কেউ করেননি তা বললে অবশ্য ভুল হয়ে যাবে। যারা করেছেন এবং যেভাবে করেছেন তার সাথে আজকের প্রশ্নগুলোর গুণগত এক বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আগে যারা বিবর্তনে অস্বীকার করতেন, মানুষকে জীবজগতের অন্যান্য প্রাণীর সাথে এক করে দেখতে নারাজ ছিলেন তারাই এ ধরণের কথাবার্তা বলতেন। বলতেন মানুষ আর শিম্পাঞ্জী বা অন্যান্য নরবানরদের মধ্যে পার্থক্য ‘এতটাই বেশী’ যে, এদের পূর্বপুরুষ কোনভাবেই এক হতে পারেনা। প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণীদের সাথে মানুষের বুদ্ধিমত্তা কোনভাবেই তুলনীয় নয়, ‘সৃষ্টির সেরা’ মানুষকে কোনভাবেই প্রকৃতির সাধারণ নিয়মের মধ্যে এক করে দেখা সম্ভব নয়, । হাক্সলী এবং ডারউইন যখন প্রথম মানুষকেও অন্যান্য প্রাণীর মতই প্রকৃতি এবং বিবর্তনের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন তখনও রীতিমত হইচই পড়ে গিয়েছিল।
ছবিঃ সাইন্টিফিক আমেরিকানের সৌজন্যে (১৬)
কিন্তু বিবর্তন তত্ত্ব এবং তারই অংশ হিসেবে মানব বিবর্তনের প্রক্রিয়া আজকে এতটাই সুপ্রতিষ্ঠিত যে জীববিজ্ঞানীরা আজকে আর এ ধরণের প্রশ্নগুলো নিয়ে মাথা ঘামান না। আমাদের বিবর্তনের পথের অনেক অলিগলির সন্ধান হয়তো আমরা এখনও পাইনি কিন্তু মানুষ যে অন্যান্য প্রাণীর মতই বিবর্তিত হয়ে এখানে এসে পৌঁছেছে এটা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই। দেড়শ বছর আগেই ডারউইন বলেছিলেন, আমাদের সাথে অন্যান্য প্রাণিদের বুদ্ধিমত্তার পার্থক্যটি আসলে মাত্রাগত, প্রকারগত নয় -তার দেওয়া এই অনুকল্পটি আজ বৈজ্ঞানিকভাবেই সুপ্রতিষ্ঠিত। এক দশকেরও বেশি আগে, সেই ১৯৯৮ সালে আমেরিকার ন্যশানাল আ্যকাডেমি অফ সায়েন্সেস একটি রিপোর্টের বক্তব্যে এই বিষয়টি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়, ‘’ বৈজ্ঞানিকভাবে এখন আর মনে করা সম্ভব নয় যে, কোন জীব তার আগের কোন এক জীব থেকে বিবর্তিত হয়ে আসেনি, বা, অন্যান্য সব জীবের ক্ষেত্রে বিবর্তনের যে প্রক্রিয়াটা প্রযোজ্য সেই একই প্রক্রিয়ায় মানুষের উদ্ভব ঘটেনি’ [১৪]।
শুধু ফসিল রেকর্ডই নয়, জেনেটিক্স এবং অণুজীববিদ্যার গবেষণা থেকেই এটা সন্দেহাতীভাবেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি একই পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল প্রায় ৬০-৭০ লক্ষ বছর আগে। ২০০৫ সালে শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের জিনোমের তুলনামূলক সংশ্লেষণের ভিত্তিতে পাওয়া গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, মানুষ বা শিমাঞ্জির জিনোমে প্রায় ৩০০ কোটি বা ৩ বিলিয়ন ডিএনএ বেস পেয়ার রয়েছে এবং দু’টি প্রজাতির মধ্যে যৌথভাবে হিসেব করলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি বেস পেয়ারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে (১৫)। অর্থাৎ, সার্বিকভাবে আমাদের জিনোমে বেস পেয়ারগুলোর মধ্যে অমিলের শতকরা পরিমাণ মাত্র দেড় ভাগের মত। প্রায় ৯৮.৫% এর এই সাদৃশ্যগুলো যেমন আমাদের সাথে শিম্পাঞ্জির সাধারণ পূর্বপুরুষের বিবর্তনের ধারাটিকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে ঠিক তেমনি আবার আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে বাকি দেড় ভাগের মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে রয়েছে মানুষ এবং শিম্পঞ্জির মধ্যে পার্থক্যগুলোর চাবিকাঠি।
শিম্পাঞ্জির সাথে আমাদের জিনোমে এত মিল থাকা সত্ত্বেও বাহ্যিক এবং বুদ্ধিগতভাবে এতটা পার্থক্য কিভাবে হল, এই প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার মত ক্ষমতা বিজ্ঞানের ছিল না এইতো কিছুদিন আগে পর্যন্তও। ডারউইন তো জানতেনই না, বিংশ শতাব্দী জুড়ে বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির পরেও কিন্তু পুঙ্খানুপু্ঙ্খভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মত জ্ঞান এবং তথ্য আমাদের হাতে ছিল না। বিজ্ঞানের সাথে সাথে কম্পিউটার প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির কারণেই একবিংশ শতাব্দীতে এসে প্রথমবারের মত আমরা এ নিয়ে গবেষণা শুরু করার মত অবস্থায় এসে পৌঁছাতে শুরু করেছি। কিন্তু মানুষ নিয়ে সরাসরি যে কোন গবেষণাই যে অত্যন্ত ধীর গতিতে এগুবে সেটা মেনে নিয়েই আমাদের এগুতে হবে। কারণ, মানুষ নিয়ে গবেষণার বৈধতা নিয়েও আবার বেশ কিছু জটিলতা আছে, ইচ্ছা বা ক্ষমতা থাকলেও অনেক গবেষণাতেই চট করে হাত দেওয়া সম্ভব নয়। ফলের মাছি, মুরগী, ইদুঁর বা মাছের মত বিভিন্ন প্রাণীর ভ্রূণের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন জিনের এক্সপ্রেশন ঘটিয়ে জেনেটিক্স বা এভো ডেভোর যে সমস্ত গবেষণা করা হচ্ছে, সেটা তো আর মানুষের ভ্রূণতে করা সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরেও আমরা এগুচ্ছি, আধুনিক প্রযুক্তি এ ধরণের অনেক সীমাবদ্ধতাকেই আজ কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করছে।
৬০ লক্ষ বছর আগে সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি যার যার মত বিবর্তিত হয়ে চলেছে। এই সময়ে আমাদের জিনোমের যে পরিবর্তনগুলো ঘটেছে সেগুলো মানুষের ‘বিশেষ’ বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিজেদের উৎপত্তির ইতিহাসটুকু জানার নিছক কৌতুহল থেকেই নয়, বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি এবং চিকিৎসার জন্যও বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তাই আমরা দেখি, শুধু জীববিজ্ঞানীরাই নন, মেডিকেল ডাক্তার থেকে শুরু করে কম্পিউটার বিজ্ঞানী, পরিসংখ্যানবিদ পর্যন্ত বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার গবেষকেরাই মানুষের বিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় নিয়োজিত হচ্ছেন।
এমনি একজন বিজ্ঞানী ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার জৈব-পরিসংখ্যানবিদ ডঃ ক্যাথারিন পোলার্ড, ২০০৩ সাল থেকে শিম্পাঞ্জি জিনোম সংশ্লেষণ এবং বিশ্লেষণের কন্সোর্টিয়ামের অন্যতম গবেষক হিসেবে কাজ করে আসছেন। তিনি তার লেখা অত্যাধুনিক কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে গত ৬০-৭০ লক্ষ বছরে আমাদের জিনোমের কোথায় কোথায় সর্বোচ্চ পরিমাণে পরিবর্তন ঘটেছে তা খুঁজে বের করার কাজে নিয়োজিত আছেন। ২০০৯ সালে সাইন্টিফিক আমেরিকানে তিনি এ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেন (১৬)। তার সেই লেখাটি, ডঃ শন ক্যারলের লেখা বিভিন্ন বই এবং প্রবন্ধ এবং এভো ডেভো নিয়ে নোভায় প্রচারিত ভিডিওটিতে উল্লেখিত অত্যাধুনিক গবেষণাগুলোকে তুলে ধরবো এখানে। চলুন দেখা যাক এবং সেগুলো কিভাবে মানব বিবর্তনের বিভিন্ন ধাপ বুঝতে সহায়তা করছে ।
সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকে এই সময়টাতে আমাদের অর্থাৎ শুধুমাত্র Homo sapiens দের জিনোমে প্রায় দেড় কোটি বেস পেয়ারের পরিবর্তন ঘটেছে [১৬]। শতকরা হিসেবে এর পরিমাণ এক ভাগের অনেক কম হলেও ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি বেস পেয়ারের বিশ্লেষণ করা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। আর এর মধ্যে কোন কোন মিউটেশন বা পরিবর্তনগুলো আমাদের ‘মানুষ হয়ে ওঠা’র পিছনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে তা খুঁজে বের করা তো বলতে গেলে খড়ের গাদা থেকে সুই খুঁজে বের করার মতই দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। এখানে আরেকটা ব্যাপারও মনে রাখা দরকার। বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় বেশীরভাগ বিক্ষিপ্ত মিউটেশনই কিন্তু ক্ষতিকর নয়, তেমনি সেগুলো আবার তেমন কোন উপকারেও আসে না। নিরপেক্ষ এই মিউটেশনগুলো একরকম স্থির এবং নিয়ত গতিতে বাড়তে থাকে যা দিয়ে বিজ্ঞানীরা সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আসা দু’টি প্রজাতির মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ার সময় নিরূপণ করতে পারেন। কিন্তু কোন একটা বিশেষ জায়গায় যদি এই সাধারণ হিসেবের চেয়ে অনেক বেশী হারে মিউটেশন ঘটতে দেখা যায় তখন বোঝা যায় যে সেই বংশগতীয় বৈশিষ্ট্যগুলো ধণাত্মক নির্বাচনের(Positive Selection) মধ্যে দিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। অর্থাৎ এই পরিবর্তনগুলো কোন না কোনভাবে প্রজাতিটির টিকে থাকায় বিশেষ সুবিধা দিয়েছে যার ফলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় এই পরিবর্তনগুলো শুধু যে টিকে গেছে তাইই নয় ত্বরান্বিতও হয়েছে। ডঃ পোলার্ড এই অসাধ্য কাজটি করতেই মনোনিবেশ করেছেন তার লেখা বিশাল কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলো দিয়ে। এই দেড় কোটি ডিএনএর মধ্যে তিনি কিছু নির্দিষ্ট অনুক্রমের খোঁজ করে চলেছেন। তিনি ডিএনএর এমন অনুক্রমগুলো খুঁজছেন যেগুলো একদিকে শিম্পাঞ্জির চেয়ে আলাদা, অর্থাৎ সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে মানুষের জিনোমে যাদের সর্বোচ্চ মিউটেশন ঘটেছে কিন্তু অন্যদিকে আবার বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় শিম্পাঞ্জি এবং অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণীর জিনোমে তাদের মধ্যে তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি।
২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে এল সেই প্রথম ইউরেকা মুহূর্তটি। মানুষের জিনোমের এই ১৫ কোটি বেস পেয়ারের মধ্যে সর্বোচ্চ-পরিবর্তনশীল সেই ডিএনএ অনুক্রমগুলোর লিষ্ট বের করার জন্য চূড়ান্ত প্রোগ্রামটা রান করা হল। যে কোন ডেস্কটপ কম্পিউটারে শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের জিনোমের এই তুলনামূলক প্রোগ্রামটা চালাতে সময় লাগবে ৩৫ বছর, তার সুপার কম্পিউটারে তা রান করে ফেললো এক দুপুরেই এবং তার ফলাফল হল বিস্ময়কর। লিস্টের শীর্ষে অবস্থান করছে মানুষের ডিএনএর মধ্যকার ১১৮টি বেসের একটি অনুক্রম। বিভিন্ন প্রাণীর জিনোমের ডাটাবেসগুলো ঘেটে দেখা গেল যে, শুধু মানুষের জিনোমেই নয়, মুরগী, ইঁদুর এবং শিম্পাঞ্জিসহ অনেকের মধ্যেই ডিএনএর এই অনুক্রমটির অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। অতীতের বিভিন্ন গবেষণায় মানুষের মস্তিষ্কের কোষে এই অনুক্রমটির কার্যক্রম দেখা গেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। অনুক্রমটির নাম দেওয়া হয় হার১ (HAR1, Human Accelerated Region 1)। সেই দুপরটির কথা স্মরণ করে ডঃ পোলার্ড বলেন, ‘আমরা যেন লটারি জিতে গেলাম। সবাই জানেন যে, মানুষের মস্তিষ্ক শিম্পাঞ্জির মস্তিষ্কের চেয়ে আকারে, গঠনে এবং জটিলতায় সব দিক দিয়েই খুবই অন্যরকম। কিন্তু মানুষের মস্তিষ্ককে আলাদা করার পিছনে যে পার্থক্যমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো কাজ করে তার বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া এবং বিকাশ সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানি। মানুষের এই সবচেয়ে রহস্যময় দিকটির উপর আলোকপাত করার জন্য হার১ কে বেশ সম্ভবনাময় মনে হচ্ছিল‘‘[১৬] ।
আসলেই হয়তো তাই, পরবর্তী গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো যেন সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। মানুষ এবং শিম্পাজি বিবর্তনের পথে আলাদা হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কোটি কোটি বছর ধরে এই হার১ অনুক্রমটি যেন অলসভাবে ঘুমিয়ে ছিল। তারপর হঠাৎ করেই সে প্রবল বিক্রমে জেগে উঠেছে মানুষের জিনোমে। মুরগীর সাথে শিম্পাঞ্জির ( বা মানুষের) সাধারণ পূর্বপুরুষের বিভাজন ঘটেছিল প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে। কিন্তু এদের জিনোমে হার১ অনুক্রমটির তুলনা করলে দেখা যায় যে এত কোটি বছরে পরিবর্তন ঘটেছে মাত্র ২টি অক্ষরের। বেশীরভাগ মেরুদন্ডী প্রাণীর জিনোমের ক্ষেত্রেও মোটামুটিভাবে একই কথা প্রযোজ্য। অথচ তুলনামূলকভাবে মানুষ আর শিম্পাঞ্জির জিনোমের মধ্যে এই দুটি অনুক্রমের মিউটেশনের পরিমাণ দেখলে অবাক না হয়ে উপায় থাকে না। অপেক্ষাকৃত অনেক কম সময়ের ব্যবধানে, মাত্র ৬০-৭০ লক্ষ বছরে পরিবর্তনের ঘটেছে শতকরা ১০%। অর্থাৎ, আমাদের জিনোমে হার১ অনুক্রমের ১১৮ টি বেসের মধ্যে ১৮ টি বেস বদলে গেছে, বিবর্তনীয় সময়ের স্কেলে বিচার করলে একে বেশ বড়সড় সাইজের মিউটেশন বলেই ধরে নিতে হয়। এ থেকে দু’টো অনুকল্প দাঁড় করানো যায় খুব সহজেই।
ছবিঃ মানুষ, শিম্পাঞ্জি এবং মুরগীর জিনোমে হার১ অনুক্রমের তুলনামূলক চিত্র, সাইন্টিফিক আমেরিকানের সৌজন্যে (১৬)
প্রথমতঃ এই হার১ অনুক্রমটি আমাদের জিনোমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোন ভূমিকা পালন করে। না হলে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় একে এত কোটি বছর ধরে প্রায় অপরিবর্তিতভাবে সংরক্ষণ করা হতো না। আর দ্বিতীয়তঃ গত কয়েক লক্ষ বছরে মানুষের জিনোমে এর যে দ্রুতগতিতে পরিবর্তন ঘটেছে তা থেকে এও বোঝা যায় যে, এই পরিবর্তনগুলো খুব সম্ভবতঃ ধণাত্মক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে বা যাচ্ছে এবং মানুষের বিবর্তনে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
পরবর্তী গবেষণাগুলো থেকে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। আমাদের মস্তিষ্কের বাইরের দিকের ভাঁজ হয়ে থাকা অংশটির নাম হচ্ছে সেরেব্রাল কর্টেক্স, আমাদের মস্তিষ্ক এবং বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনে এই অংশটির একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ভাষা, সুর সৃষ্টি বা গণিত চর্চার মত ‘মানবিক’ ক্ষমতাগুলোর বিকাশের সাথে মস্তিষ্কের এই অংশটি ঘনিষ্টভাবে জড়িত বলে ধারণা করা হয়। শিম্পাজির সাথে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে ভাগ হয়ে যাওয়ার পরে আকার এবং জটিলতায় সর্বোচ্চ পরিমাণ পরিবর্তন ঘটেছে আমাদের মস্তিষ্কের, আর সেই মস্তিষ্কের মধ্যে সেরেব্রাল কর্টেক্সের পরিবর্তন ঘটেছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। আমাদের সেরেব্রাল কর্টেক্সকে যদি টেনে ফ্ল্যাট করে বিছিয়ে দেওয়া যায় তা হলে দেখা যাবে যে, তা চার পৃষ্ঠা জুড়ে জায়গা করে নিচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে কাছের আত্মীয় শিম্পাঞ্জিদের সেরেব্রাল কর্টেক্স নেবে মাত্র এক পাতার সমান জায়গা, সাধারণ বানরেরটা নেবে একটি পোষ্টকার্ডের সমান আর ইদুঁরের ক্ষেত্রে তা নেবে মাত্র একটা স্ট্যাম্পের সমান জায়গা (১৭)। আর ২০০৫ সালের এক গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের এই হার১ অনুক্রমটি সেরেব্রাল কর্টেক্সের বিন্যাস এবং ছক তৈরিতে নিয়োজিত এক ধরণের নিউরনের উপর অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ভ্রূণাবস্থায় এই নিউরনগুলোতে একটু এদিক সেদিক হয়ে গেলে ‘স্মুথ ব্রেইন’ নামক একধরণের মারাত্মক জন্মগত ব্যাধি দেখা দিতে পারে। এমনকি বড় বয়সে সিজোফ্রেনিয়ার মত রোগ সৃষ্টিতেও এই নিউরনগুলোর ভূমিকা থাকতে বলে মনে করা হয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই হার১ অনুক্রমটি কিন্তু প্রোটিন তৈরিকারি জিন হিসেবে কাজ করে না, তারা শুধু আরএনএ কোড করে। ডঃ পোলার্ড যে ২০১ টি সর্বোচ্চ-পরিবর্তনশীল ডিএনএর অনুক্রম বা ‘হার’গুলোর এর লিষ্ট বের করেছিলেন, তার মধ্যে বেশীরভাগগুলোই কিন্তু প্রোটিন তৈরি করা জিন নয় বরং জিনের উপর নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাপালনকারী বিভিন্ন ধরণের ডিএনএর অনুক্রম বা সুইচ। আমাদের মানুষ হয়ে ওঠার পিছনে যে সব ডিএনএর অনুক্রম বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে তাদের অনেকেই আসলে প্রোটিন তৈরি করা জিন নয়। এভো ডেভোর নিয়ে লেখা আগের পর্বগুলোতে যে সুইচগুলোর কথা আলোচনা করেছিলাম এদের অনেকেই সেরকম সুইচ বা আরএনএ কোড করা ডিএনএর বিভিন্ন অংশ। অর্থাৎ, আমাদের মানুষ হয়ে ওঠার পিছনের পরিবর্তনগুলো খুঁজে বের করতে হলে শুধুমাত্র প্রোটিন তৈরিকারি জিনগুলোর খোঁজ করলেই আর হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী জিনোমের অন্যান্য অংশগুলোর কার্যকারিতাও বুঝতে হবে। এতদিন আমরা প্রোটিন তৈরি করা শতকরা দেড় ভাগ জিন ছাড়া ডিএনএর বাকি অংশগুলোকে অনেকটা ‘জাঙ্ক’ বা অপ্রয়োজনীয় ডিএনএ বলে মনে করে এসেছি। গত দুই দশকে আনবিক জীববিজ্ঞানের সাথে সাথে কম্পিউটার প্রযুক্তির এহেন উন্নতি না ঘটলে আমাদের জিনোমের এই অংশগুলির ভূমিকা বুঝে ওঠা একরকম অসম্ভবই হয়ে দাঁড়াতো।
ডঃ পোলার্ডের বের করা সর্বোচ্চ পরিবর্তনশীল অনুক্রমগুলোর আশে পাশে যে জিনগুলো রয়েছে তার মধ্যে অর্ধেকের বেশী জিনই আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ, গঠন এবং কাজের সাথে জড়িত। তা তে অবশ্য অবাক হওয়ারও কিছু নেই, শিম্পাঞ্জির সাথে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষের আলাদা হয়ে যাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩ গুণেরও বেশী, অন্যান্য প্রাইমেটদের তুলনায় মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনও ঘটেছে অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতিতে। তাই সর্বোচ্চ-পরিবর্তনশীল ডিএনএর অনুক্রমগুলোর লিষ্টে মস্তিষ্কের বিবর্তনের সাথে জড়িত জিন বা সুইচগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
ডঃ পোলার্ডের লিষ্টের মধ্যে এমনি একটি উল্লেখযোগ্য জিন হচ্ছে ফক্সপি২(FOXP2) এবং এই জিনে মিউটেশন ঘটলে মানুষের ভাষা এবং কথা বলার ক্ষমতা বিঘ্নিত হয়। তিন প্রজন্ম ধরে এ ধরণের রোগে আক্রান্ত একটি পরিবারের জিনের উপর গবেষণার ফলে অনেক নতুন নতুন তথ্য জানা গেছে। শুধু ভাষাই নয় বরং ভ্রূণাবস্থায় মস্তিষ্কের আরও অনেক জায়গাতেই এই জিনটির সক্রিয়তা দেখা যায়। আগের লেখাগুলোতে উল্লেখিত জিনগুলোর মতই এটিও একটি টুল কিট বা নিয়ন্ত্রক জিন, এবং হ্যা, হক্স জিন বা প্যাক্স জিনের মতই মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাইমেট, ইঁদুর এমনকি পাখির মধ্যেও এই জিনটির অস্তিত্ব রয়েছে। অর্থাৎ, এই জিনটিও আমাদের জিনোমে নতুন করে উদ্ভাবিত হয়নি। ২০০৭ সালের এক তুলনামূলক গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, শুধু আমাদের মধ্যেই নয় নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির জিনোমেও হুবুহু একই ভার্সান উপস্থিত ছিল। অর্থাৎ, নিয়ান্ডারথালদের সাথে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষের ভাগ হয়ে যাওয়ার সময় হিসেব করে বলা যায় যে, প্রায় ৫ লাখ বছর আগেই এই জিনটির অস্তিত্ব ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে (১৬)। এদের জিনোমের সাথে তুলনামূলক গবেষণা থেকেও দেখা যাচ্ছে যে এর মধ্যে মিউটেশনের পরিমাণও আসলে খুবই নগন্য। শিম্পাঞ্জির জিনটির সাথে বেশ কয়েক জায়গায় পার্থক্য দেখা গেলেও আমাদের প্রোটিন প্রোডাক্টের মধ্যে মাত্র দু’টি মিউটেশন ঘটেছে। আর অন্যদিকে ওরাং ওটাং এর সাথে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে ৩ টি এবং ইঁদুরের সাথে ৪টি পজিশনে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে, এই জিনটির আশে পাশে অবস্থিত ডিএনএর মধ্যে প্রোটিন কোডিং করে না এমন ধরণের বেশ কিছু সুইচ এবং ডিএনএর অনুক্রম রয়েছে যাদের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মিউটেশন দেখা যাচ্ছে।
আমরা আগেই দেখেছি যে, হক্স, প্যাক্স৬ বা ফক্সপি২ এর মত মাষ্টার টুলকিট জিন বা নিয়ন্ত্রক জিনগুলোর প্রত্যকে যেহেতু একই সাথে জীবদেহের বিভিন্ন অংশের বিকাশে ভূমিকা রাখে তাই এত সহজে এদের মিউটেশন ঘটতে পারে না। শুধু তো তাই নয়, এরা আবার অন্যান্য অনেক জিনের কাজের উপর নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবও বিস্তার করে থাকে। তাই, এদের যে কোন একটাতে মিউটেশন ঘটলে দেহের বহু জায়গা এবং শারীরবৃত্তীয় কাজের উপর বড়সড় প্রভাব পরতে পারে এবং তার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ। প্রজাতির টিকে থাকায় খুব বড় ধরণের বাড়তি সুবিধা না পেলে বিবর্তনের ধারায় এধরণের প্রভাবশালী এবং অভিজাত জিনগুলোকে আসলে অপরিবর্তিতভাবেই সংরক্ষণ করা হয়, অর্থাৎ এদের মধ্যে খুব বেশী মিউটেসশন ঘটতে পারেনা। তাই ডঃ পোলার্ড বা ডঃ শন ক্যরলের মত বিজ্ঞানীরা এখন মনে করেন যে, এই জিনগুলোতে মিউটেশন ঘটার চেয়ে এদের উপর নিয়ন্ত্রণকারী সুইচগুলোতে মিউটেশন ঘটা এবং তাদেরকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অর্থপূর্ণভাবে টিকিয়ে রাখা অনেক বেশী সহজ। কোন প্রজাতিতে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটার মধ্যে এদের ভূমিকাকে আর ছোট করে দেখার উপায় নেই। শুধু জিনগুলোর মধ্যকার মিউটেশনগুলোই নয় বরং তাদের আশে পাশে প্রোটিন কোডিং করে না এমন ধরণের ডিএনএ অনুক্রমগুলোর মধ্যেও আমাদের বিবর্তনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে (১৮)।
এতক্ষণ মস্তিষ্কের বিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি ডিএনএ অনুক্রমের উদাহরণ দেখলাম। ডঃ পোলার্ডের লিষ্টে কিন্তু এছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুক্রম রয়েছে। সর্বোচ্চ-পরিবর্তনশীল ডিএনএর অনুক্রম বা ‘হার’গুলোর এর লিষ্টে দ্বিতীয় অনুক্রম বা হার২(একে HACNS1 ও বলা হয়) এর কথাই ধরা যাক। আমাদের হাত এবং বিশেষ করে বুড়ো আঙ্গুলের গঠন কিন্তু অন্যান্য সব প্রাইমেটদের থেকেই আলাদা। আর তার ফলেই আমরা এমন কিছু সুক্ষ্ম কাজ করতে পারি যা আমাদের খুব কাছের আত্মীয় নরবানরদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। আমরা দক্ষতার সাথে অস্ত্র বা হাতিয়ায় ব্যাবহার করতে পারি, কলম ধরতে পারি, তুলি দিয়ে ছবি আঁকতে পারি, কম্পিউটারের কি-বোর্ড টিপে ব্লগের পর ব্লগ লিখতে পারি। ভ্রূণাবস্থায় মানুষের জিনোমের এই হার২ এর এক্সপ্রেশান থেকে যাচ্ছে যে তারা বুড়ো আঙ্গুল এবং কব্জির গঠনে অংশগ্রহণকারি জিনগুলোর কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু শিম্পাঞ্জির জিনোমে যে হার২ এর অনুক্রমটি রয়েছে তা কিন্তু বুড়ো আঙ্গুল এবং কব্জির গঠনে তেমন কোন ভূমিকাই পালন করে না। এ ধরণের ডিএনএ অনুক্রমগুলোর কার্যক্রমের মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে রয়েছে আমাদের এই বিশেষ অপোসেবল বুড়ো আঙ্গুলের বিবর্তনের ইতিহাস।
এধরণের আরেকটি দ্রুত হারে পরিবর্তিত হওয়া জিন হচ্ছে AMY1 , আমাদের শারীরিক বিবর্তনই শুধু নয়, ব্যাবহারিক এবং সাংস্কৃতিক বিবর্তনেও প্রত্যক্ষ্যভাবে এর অবদান রয়েছে। আগুনের ব্যবহারের মতই কৃষিও আমাদের প্রজাতির বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কৃষির উদ্ভাবনের ফলে আমাদের সামনে ক্যালরি সমৃদ্ধ স্টার্চ জাতীয় খাদ্যের ভান্ডার উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এই ধরণের খাদ্যগুলোর ব্যাপক ফলন এবং মজুদ গড়ে তুলতে না পারলে আমাদের আধুনিক সভ্যতাগুলোই হয়তো গড়ে উঠতে পারতো না। কিন্তু শুধুমাত্র সাংষ্কৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমেই তো খাদ্যভ্যাসের এই পরিবর্তন সম্ভব হয়নি, এর জন্য শারীরবৃত্তিয় কিছু পরিবর্তনেরও প্রয়োজন পড়েছে। আর সেখানেই বিশেষ ভূমিকা রেখেছে এই AMY1 জিনটি।
ছবিঃ সাইন্টিফিক ছবিঃ মানুষের দেহে সর্বোচ্চ পরিবর্তনশীল ডিএনএ অনুক্রমগুলোর উদাহরণ, সাইন্টিফিক আমেরিকানের সৌজন্যে (১৬)
মানুষের বিবর্তনের ধারায় এই জিনটির বেশ কিছু মিউটেশন যে ঘটেছে তাইই শুধু নয়, প্রাইমেটদের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, আমাদের জিনোমে এই জিনের অনেক বেশি সংখ্যক কপিও রয়েছে। অত্যাধুনিক কিছু গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, যে প্রজাতির মধ্যে যত বেশী এই AMY1 এর কপি রয়েছে তারা তাদের মুখে তত বেশী এমাইলেজ নামক এনজাইমটি নিঃসরণ করতে সক্ষম এবং তারই ফলশ্রুতিতে তারা তুলনামূলকভাবে বেশী স্টার্চ হজম করতে সক্ষম।এরকম আরেকটি জিনের উদাহরণ হচ্ছে LCT। মাত্র ৯০০০ বছর আগে এই জিনটির মধ্যে পরিবর্তনের কারণেই আমরা আজকে প্রাপ্তবয়ষ্ক অবস্থায়ও গৃহপালিত পশুদের দুধ খেয়ে হজম করতে পারি। বেশীরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণিতেই শুধুমাত্র শিশুরা দুধের মধ্যকার কার্বোহাইড্রেট ল্যাকটোজ হজম করতে সক্ষম। এই মিউটেশনটা না ঘটলে আমাদের পক্ষেও এই ল্যাকটোজ হজম করা সক্ষম হত না।
শুধু তো আমাদের নিজেদের উৎপত্তির গল্পটি জানার জন্যই নয় বরং নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যও আজ বিবর্তনের ইতিহাসটা জানা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। মানুষ, শিম্পাঞ্জি এবং অন্যান্য প্রাইমেটদের তুলনামূলক গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের জিনোমে এমন কিছু মিউটেশন ঘটেছে যেগুলো হয়তো আমাদের প্রজাতিতে আলজাইমারস বা ক্যান্সারের মত অসুখগুলোর জন্য দায়ী। এই ধরণের বেশ কিছু অসুখ শুধু আমাদেরই হয় বা আমাদের মধ্যে বেশী পরিমাণে হয়। অন্যান্য প্রাইমেটদের জিনোমের অপরিবর্তিত জিনগুলো কম কিংবা বেশী হলেও এই রোগগুলো প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এইচাইভির মত রেট্রোভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। এ ধরণের অসুখগুলোর চিকিৎসা বের করতে হলে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাইমেটদের মধ্যকার বিবর্তনীয় সম্পর্ক এবং জিনোমের পার্থক্যগুলো এবং মিউটেশনগুলো বোঝা এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তবে এ বিষয়টা আপাতত তোলা থাক, পরবর্তীতে জেনেটিক্স নিয়ে আলোচনার সময় এ প্রসংগটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে ।
আমরা মানুষ হলাম কি করে, কি দিয়ে, কোথা থেকে এসেছি আমরা? সেই অনাদিকাল থেকে এই প্রশ্নগুলো করে এসেছি আমরা। হ্যা, এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে আমরা এই ছোট্ট পৃথিবীতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। জীবজগতে আমরা এমন অনেক কিছুই করতে সক্ষম যা আর কোন প্রাণীই করে না। আমরা কি না পারি? আমরা আত্মসচেতন, আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারি, কথা বলতে পারি, গান গাইতে পারি, ‘সভ্যতা’ গড়ে তুলতে পারি, আমরা পড়তে লিখতে পারি, আর্ট, সাহিত্য, বিজ্ঞানের চর্চা করতে পারি, এমনকি একটা বোতাম টিপে সভ্যতার ইতিও ঘটাতে পারি। কিন্তু আবার অন্যান্য জীবের মতই বিবর্তনের ধারায় যে আমরা আজ এখানে এসে পৌঁছেছি সেটা নিয়েও সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। প্রাকৃতিক নিয়মেই আমাদের বুদ্ধিমত্তার বিবর্তন ঘটেছে, আর তারই হাত ধরে আমরা আজ এমন একটা অবস্থায় এসে পোঁছেছি যেখানে বসে আমরা আমাদের উৎপত্তি, বিকাশ এবং বিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন করতে পারছি। স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পরবর্তীতে প্রাইমেটদের ছকের মধ্যে আমাদের বিবর্তন ঘটেছে, তাই আমাদের সাথে শিম্পাঞ্জী, বনোবো বা ইঁদুরের জিনোমের অভাবনীয় সাদৃশ্যও বাস্তবতা বই আর কিছু নয়।
কতগুলো প্রশ্ন দিয়ে এভো ডেভোর লেখাটা শুরু করেছিলাম। যেমন ধরুন, মাত্র ২০-২৫ হাজার জিন নিয়ে (যা কিনা মুরগী বা ভুট্টার জিনের চেয়েও সং খ্যায় কম) আমরা কি করে এত বুদ্ধিমান প্রাণীতে পরিণত হলাম? বা সবচেয়ে নিকট আত্মীয় শিম্পাঞ্জির সাথে আমাদের জিনোমে এত মিল থাকা সত্ত্বেও, বা ঘুরিয়ে বললে এত অল্প অমিল থাকার পরও, মানুষের আকার, গঠন এবং বুদ্ধিবৃত্তিতে এতটা পার্থক্য ঘটলো কিভাবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরও লুকিয়ে আছে আজকের এই আধুনিক গবেষণাগুলোর মধ্যেই। উপরের আলোচনাগুলো থেকে আমরা পরিষ্কারভাবেই দেখতে পাচ্ছি যে, এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতিতে বিবর্তিত হতে হরেক রকমের নতুন নতুন জিনের উদ্ভব ঘটার প্রয়োজন পরে না। শুধুমাত্র প্রোটিন তৈরি করা জিনগুলোর উদ্ভাবনের মধ্যেই নয়, বরং কোথায়, কিভাবে কোন অবস্থায় জিনগুলোর এক্সপ্রেশান ঘটছে, তার আশে পাশের সুইচ এবং অন্যান্য ডিএনএ অনুক্রমগুলো তার উপর কিরকম প্রভাব ফেলছে, এসব অনেক কিছুর উপর ভিত্তি করেই জীবদেহে বেশ বড় বড় পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র জিনের সংখ্যা বা নতুন করে অভিনব সব জিনের মধ্যেই নয়, বরং এই সুইচ বা ডিএনএর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশের পরিবর্তনের মধ্যেও হয়তো আমাদের ‘মানুষ হয়ে ওঠা’র রহস্যের অনেকখানি লুকিয়ে রয়েছে। আমাদের বুদ্ধিমত্তা, ভাষা বা দ্বিপদী হয়ে ওঠার মত ‘মানবিক’ বৈশিষ্ট্যগুলোর পিছনে অভিনব কিংবা আলাদা ধরণের জিন খোঁজার দিন হয়তো ফুরিয়েছে। মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির জিনোম সিকোয়েন্সিং এর আগে পর্যন্তও ভাবা হত যে আমাদের জিনোমে নতুন নতুন জিনগুলো থেকেই হয়তো তথাকথিত ‘মানবিক’ বৈশিষ্ট্যগুলোর ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, তা মোটেও ঠিক নয়। দ্বিপদী হয়ে ওঠা, ভাষার বিকাশ, বা বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনের পিছনে হয়তো নতুন নতুন জিনের প্রয়োজন পড়েনি। পুরোনো জিনগুলোই নতুন সাজে নতুন আঙ্গিকে ব্যবহৃত হয়েছে বারবার বিভিন্ন ধরণের প্রাণীর বিবর্তনে।
এভো ডেভো নিয়ে এই দীর্ঘ আলোচনাটার ইতি টানার সময় হয়েছে। মানব বিবর্তনের মত জটিল একটা বিষয় বুঝতে হলে মনে হয় এভো ডেভোর দুয়ারে টোকা দেওয়া ছাড়া আর গতি নেই। আর আনবিক জীববিজ্ঞান, জেনেটিক্স, জিনোমিক্স, বা এভো ডেভোই তো শুধু নয়, আজকে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির আরও অনেক শাখাও বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মত আমরা কোন জিনগুলোর প্রভাবে এক কোষী ভ্রূণ থেকে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যংগগুলো তৈরি হচ্ছে তা প্রত্যক্ষ করছি। শুধু তো তাই নয়, অবাক বিস্ময়ে দেখছি, হাতের সাথে পায়ের পার্থক্য কোথায়, কত অল্প পরিবর্তনেই হাতের বদলে বাদুড়ের পাখার বিবর্তন ঘটে যেতে পারে। বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মত বিবর্তনও আজ এক্সপেরিমেন্টাল বা ব্যবহারিক বিজ্ঞানে রূপ নিতে চলেছে। জীবের আকারে, গঠনে বিবর্তন ঘটছে -এটা দেখানোতেই আর সীমাবদ্ধ নেই বিবর্তনবাদ, কিভাবে এই জটিল গঠনগুলো তৈরি হচ্ছে সেই রহস্যের গভীরেও আমাদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। জীবের বিবর্তনকে শুধু কোটি কোটি বছরের ফসিলের আলোয় বা ডিএনএ এর ভিতরে ঘটা পরিবর্তনের ভিত্তিতে বা ব্যাক্টেরিয়ার জনপুঞ্জে ঘটা পরিবর্তনের মাধ্যমেই আমরা জানবো না, চোখের সামনে গবেষণাগারেই হয়তো প্রমাণ করতে পারবো আমাদের প্রজাতির বিবর্তনের ধাপগুলো।
তথ্যসূত্রঃ
(১ থেকে ১৩ পর্যন্ত রেফারেন্সগুলোর জন্য আগের পর্ব দেখুন)
১8)National Academy of Science, Teaching about Evolution and the Nature of Science (Washington, DC: National Academy Press, 1998), p.16.
১৫) Nature 437, 69-87 (1 September 2005); Initial Sequence of the Chimpanzee genome and comparison with the human Genome.
১৬) Pollard Katherine, May 2009. ‘What makes Us Human’. Scientific American, INC.
১৭) বন্যা আহমেদ, ২০০৬, বিবর্তনের পথ ধরে, পৃঃ ১২৮, অবসর প্রকাশনা সংস্থা।
১৮) Carroll S, 2005, Endless Forms most Beautiful. W.W. Norton & Company, p. 270-280.
১৯) http://www.cirs-tm.org/researchers/researchers.php?id=563
২০) Science 22 June 2007, VOL 316.no. 5832, pp. 1756-1758. Restriction of an Extinct Retrovirus by the Human TRIM5 Antiviral Protein.
২১) http://www.naturalhistorymag.com/features/061488/the-origins-of-form?page=5
কোটি কোটি বছর ধরে এই হার১ অনুক্রমটি যে অলসভাবে ঘুমিয়ে ছিল , এটা কি কিছুর ইঙ্গিত করে? হার১ এর যদি আগের কোন প্রানীর প্রয়োজন না থাকে , তাহলে ওরা তাদের জিনোমে এই হার১ কোটি কোটি বছর ধরে বহন করেছেই বা কেন বা হার১ তাদের জিনোমের অংশই বা ছিল কেন? আমরা জানি চাহিদার প্রয়োজনে নুতন নুতন জিনের উদ্ভব হয় মিউটেশনের মাধ্যমে। হার১ এর তো চাহিদা ছিল না মানুষ এবং শিম্পাজি বিবর্তনের আগের প্রানীদের , তাহলে ওদের উদ্ভব হলো কেন?
‘জাঙ্ক’ বা অপ্রয়োজনীয় ডিএনএ র কথা ও চিন্তা করুন। আমি যদি বলি সৃষ্টিকর্তা প্রথম থেকেই বিভিন্ন প্রানীর কোড এই জাঙ্কের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছেন এবং সেই পরম্পরায় বিভিন্ন প্রানীর বিবর্তন হয়েছে, আপনি কিভাবে খন্ডাবেন?
@ফারুক, আপনার এই মন্তব্যটা দেখা হয়নি আগে, দুঃখিত। আপনি বোধ হয় আবারো ভুল বুঝেছেন, আমি কোথাও বলিনি যে হার১ এর চাহিদা ছিল না, বা এটা একটা জাঙ্ক ডিএনএ তাও কিন্তু বলিনি। বরং উল্টোতা বলেছি, পরের প্যারাটাতে কি লিখেছি দেখুন
।
আর আপনি এখানে স্রষ্টাকে টেনে নিয়ে আসলে আমার কিছু বলার নেই। আপনি যা ইচ্ছা তাই বিশ্বাস করতে পারেন, সেটা একান্তই আপনার নিজস্ব একটা ব্যাপার। আপনি খেয়াল করেছেন কিনা জানি না আমি বিজ্ঞানের লেখায় স্রষ্টা নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করি না, কোন প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না। আপনি যেহেতু স্রষ্টার এই অনুকল্পটি দিচ্ছেন তা খন্ডন বা না-খন্ডন করার দায়িত্ব আপনারই, আমার নয়।
@বন্যা আহমেদ,
না আপনাকে ভুল বুঝিনি। আমিও কিন্তু বলিনি , হার১ একটা জাঙ্ক ডিএনএ । আমার প্রশ্ন ছিল- এই যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় হার১কে এত কোটি বছর ধরে প্রায় অপরিবর্তিতভাবে সংরক্ষণ করা হলো , এরা (আদিম প্রাণীরা)কিভাবে জানতো যে , কোটি কোটি বছর পরে মানুষ সৃষ্টির জন্য এদের দরকার হবে? সুতরাং এদেরকে সংরক্ষন করা লাগবে!!
মানুষের ডিএনএ’র ৯৯% ই জাঙ্ক হিসাবে গন্য করা হোত। এখন জানা যাচ্ছে , এদের ও ভূমিকা আছে জিন এক্সপ্রেশনে। ভবিষ্যতে এরা কাজে লাগবে , এই ভেবেই কোটি কোটি বছর আগেই এদেরকে তৈরি করা হলো ও সংরক্ষন করা হলো , আশ্চর্য বৈকি।
আমি ও মনে করিনা বিজ্ঞানের লেখায় স্রষ্টা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। তবে কিনা আপনার বিবর্তনের পথ ধরে বই তে বহুবার স্রষ্টাকে টেনে নিয়ে এসেছেন। আপনি না চাইলে ঠিক আছে, স্রষ্টা নিয়ে আলোচনা এখানেই শেষ।
@ফারুক,
নাহ একদিন মানুষের কাজে লাগবে সেকথা ভেবে প্রাকৃতিক নির্বাচন কিছু সংরক্ষণ করে না, বরং ঠিক তার উল্টোটা। বিবর্তন কোন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেনা, ডিএনএর যে সব অংশ প্রজাতির পর প্রজাতি ধরে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ( অপরিবর্তিত বা প্রায় অপরিবর্তিতভাবে) সংরক্ষণ করা হয়েছে সেগুলো আমাদের পূর্বপুরুষ প্রজাতিগুলোতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল বলেই তা করা হয়েছিল। আমি এভো ডেভোর লেখাতে সেটাই বলার চেষ্টা করেছি, বলতে পারেন সেটাই ছিল আমার আলোচনার থিম। প্যক্স৬, হক্স জিন বা এই হার১ এর মত ডিএনএর অনুক্রমগুলো আমাদের জন্য নতুন করে তৈরি হয়নি, আমাদের পূর্বপুরুষের জিনোমেই এরা কোটি কোটি বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জিন, সুইচ বা ডিএনএর অন্যান্য অনুক্রমে অল্প কিছু মিউটেশন বা পুরোনো জিনকেই নতুন করে ব্যবহারের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে অনেক নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটেছে। সে জন্যই আমাদের জিনোমে যে মাত্র ২০-২৫ হাজার জিন আছে তা তে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখানে ‘অলৌকিক’ বা ‘ আশ্চর্য’ কিছু নেই 🙂 ।
আমি স্রষ্টাকে শুধু সেখানেই আনি যেখানে স্রষ্টার কথা বলে বিজ্ঞানকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়, যেমন ধরুন আইডি বা সৃষ্টিতত্ত্ব। এগুলোকে রিফিউট করার জন্য স্রষ্টার প্রসংগ চলে আসে, আমি নিজের থেকে কখনও তা আনি না। ল্যপ্লাসের মতই আমারও মনে হয় এখানে স্রষ্টার অনুকল্পের কোন প্রয়োজন নেই 🙂 ।
আপনার সাথে আলোচনা করে ভালো লাগলো, লেখাটা নিয়ে এত বিস্তারিত মতামত জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বেশ বড় লেখা। সময় হাতে নিয়ে পড়তে হবে। শুধু সময়টাই পাই না 😥 ।
শেষ পর্ব দেখে মন খারাপ হয়ে ছিল। যেনে খুশি হলাম যে এটাই শেষ নয়। এটা শুরু মাত্র। :-/ ।
৯০০০ বছরের টাইমিংটা আমাকে আশ্চর্য করেছে। অনেকটা খৃষ্টানদের দাবীকৃত আদমের পৃথিবীতে আগমনের টাইমিং এর সাথে মিল আছে। একটু মজা করলাম , আর কি। আসল প্রশ্নে আসি-
LCT জিনটির পরিবর্তন এক সাথে সকল মানুষের ভিতরে কিভাবে হোল? মিউটেশন হলে তো একটি মানুষের ভিতর হওয়ার কথা। ঠিক একি প্রশ্ন করা যায় হার১/২ ও অন্যান্য জিন সম্বন্ধেও। সবগুলো জিনের মিউটেশনের মাধ্যমে একি ব্যক্তির মধ্যে একি সাথে আবির্ভাব সম্ভব না। একটা জিন একজনের মাঝে প্রকাশ পাওয়ার পরে বিবর্তনীয় ধারায় তার বংশের মাঝে বিস্তার লাভ করবে ও এই বংশের বাইরে বাকি সমুদয় মানুষের বিনাশ ঘটবে , অতঃপর নুতন আরেকটি উপকারি জিনের ও একি ভাবে প্রকাশ ঘটবে। এখন যদি এই রকম ফাইন টিউনিং এর মাধ্যমে সবগুলো জিনের সমাবেশ ঘটে থাকে , তাহলে শিম্পান্জির থেকে আলাদা হওয়ার পরে বর্তমানের মানুষ হতে কয়েক কোটি বছর ও যথেষ্ট নয়।
@ফারুক,
ধার্মিক খ্রীষ্টানদের সসাথে এ নিয়ে কথা বলে দেখেন, সব ধর্মের লোকের মতই তারাও আপনাকে এ নিয়ে ধুণফুন বহু কিছু বুঝায় দিবে। সব ধর্মই আটকে গেলে যেমন বলে, তেমনি বলবে – এটা তো রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, স্রষ্টার ১০ হাজার বছর কি আর আমাদের দশ হাজার বছর?
মনে হচ্ছে মিউটেশন নিয়ে আপনার বেশ কিছু ভুল ধারণ রয়েছে। এসম্পর্কে বেসিক ধারণা দেয় এমন কোন বই বা লেখা পড়লে ভালো হয়, কারণ এটা বেশ বড় আলোচনা, এখানে সেটা করার সময় বা স্কোপ আমার নেই। মুক্তমনাতেই বেশ কিছু লেখা আছে এ নিয়ে, কয়েকদিন আগেই অনন্ত একটা লেখা দিয়েছিল মিউটেশন নিয়ে।
খুব অল্প কথা কয়েকটা কথা বলি, কোন জনপুঞ্জে মিউটেশন এক বা একাধিক জীবের মধ্যে হতে পারে একই সাথে। এই মিউটেশনগুলোর কারণেই কোন প্রজাতির জনপুঞ্জে ভেরিয়েশন বা প্রকারণ দেখা দেয়। তারপর প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং আরও কিছু ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে এই পরিবর্তনগুলো টিকে থাকবে কি থাকবে না। এই পরিবর্তনগুলো যদি কোন জীবের টিকে থাকায় বাড়তি সুবিধা দেয় তাহলেই সেগুলো টিকে থাকবে এবং পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়বে। আপনি যেভাবে বলেছেন বাকিরা ‘বিনাশ’ হয়ে যাবে সেটাও ঠিক নয়, নতুন কোন জিন বা বৈশিষ্ট্য যদি টিকে যায় তার অর্থ এই নয় যে আগের জিনগুলো বিনষ্ট হয়ে যেতে হবে। কোন প্রজাতির জনপুঞ্জের একাংশে এভাবে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটার মাধ্যমে একসময় নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটতে পারে, এবং ঘটেও। এক্ষেত্রে পুরনো প্রজাতিগুলো টিকে থাকতেও পারে, আবার কোন কারণে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় বিলুপ্তও হয়ে যেতে পারে। আগের সব জিনগুলো ‘বিনষ্ট’ হয়ে গেলে তো প্রকৃতিতে এত কোটি কোটি প্রজাতির উদ্ভব হত না,জৈব বৈচিত্র দেখা যেত না, আবার একই প্রজাতির মধ্যেই এত প্রকারণও দেখা যেতো না।
আপনি যে এখানে LCT এর কথা যে বলছেন, দেখুন, এই মিউটেশনটাও কিন্তু আলাদা আলাদাভাবে ইউরোপ এবং আফ্রিকায় ঘটেছে। এখনও পৃথিবীতে বহু মানুষ আছে যাদের মধ্যে এই পরিবর্তনটা ঘটেনি, এবং সে কারণেই তারা ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্সে ভুগতে পারেন। একটা মিউটশন কত তাড়াতাড়ি কোন জনপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়বে তার পিছনে জনপুঞ্জের সাইজ, ভৌগলিক দূরত্ব, টিকে থাকার জন্য উপযোগিতা, পারিপার্শ্বিকতার সাথে সম্পর্কসহ বহু ফ্যাক্টরই কাজ করতে পারে।
আজ এ পর্যন্তই….এখানে আরো বহু কথাই বলা যেত, আসলে এত কম কথায় মিউটেশনের বেসিক্স নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। আপনার আগ্রহ থাকলে অনুরোধ করবো এ বিষয়ে একটা ভালো কোন লেখা পড়ে ফেলুন, তাহলে অনেক কিছু হয়তো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
@বন্যা আহমেদ, এখনতো আমারি সন্দেহ হচ্ছে আপনি মিউটেশনের বেসিক্স জানেন কিনা?
আপনার কাছে আরো পরিস্কার ব্যাখ্যা আশা করেছিলাম। আপনি তো সাধারন জ্ঞানের কথা বল্লেন।
নির্দিষ্ট ভাবে জানতে চাই LCT জিনটির পরিবর্তন এক সাথে সকল মানুষের ভিতরে কিভাবে হোল? মিউটেশনটা আলাদা আলাদাভাবে ইউরোপ এবং আফ্রিকায় ঘটে থাকলে দঃআমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসিদের মাঝে এই জিনটি কিভাবে গেল ও কোন ভ্যারিয়ান্টের- আফ্রিকা নাকি ইউরোপের?
আমার মনে হয় আপনি উল্টোটা বলছেন। কারন ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্সে ভোগা লোকের সংখ্যা নগন্য। আমার তো ধারনা এই লোক গুলোর জিনে মিউটেশন ঘটে এদের LCT জিনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
@ফারুক, @ফারুক,
না জানতেই তো পারি, এতে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই। অনেক কিছুই তো জানি না, আপনি আমাকে যদি মিউটেশনের উপর বেসিক কিছু বই পড়ার উপদেশ দিতেন তাহলে আমি মনে হয় তা সানন্দেই গ্রহণ করতাম 🙂 । এক কাজ করুন না, আপনি একটা লেখা লিখে ফেলুন মিউটেশনের উপর, আমরা না হয় সেখান থেকেই শিখলাম বাকিটা।
এবার আসুন, দেখি কে কোনটা ভুল বলছে…
কি মুশকিল, বলুন তো ‘যা হয়নি’ তা কিভাবে ‘হয়েছে’ বলবো? বারবারই তো বলছি সব মানুষের মধ্যে এই মিউটেশনটা ঘটেনি। সে জন্যই পৃথিবীতে এত মানুষের মধ্যে ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স রয়েছে। উপরে আমার আর পথিকের আলোচনাটা দেখুন, সেও সেখানে তার মেডিকেলের কারিকুলামে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স এর কথা বলেছে। আবারও বলছি, ৯০০০ বছর আগে ইউরোপ এবং আফ্রিকায় এই মিউটেশনটা ঘটে, তারপর বহু মাইগ্রেশন ঘটেছে, এর ফলে বিভিন্ন জায়গার জনপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে এই মিউটেশনটা। কিন্তু এখনো পৃথিবীর বিশাল অংশের মধ্যেই এই মিউটেশন না ঘটায় বা ছড়িয়ে না পড়ায় ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স দেখা যায়। এক কাজ করুন না, আমার কথা বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করার দরকার কি, আপনি নিজেই গুগুলে সার্চ দিয়ে দেখুন না, হাজার হাজার লেখা বেড়িয়ে আসবে। একটু কষ্ট করলেই কিন্তু এই অপ্রয়োজনীয় বিতর্কগুলো এড়ানো যায়, লেখকের যেমন দায়িত্ব আছে, পাঠকেরও বোধ হয় কিছু দায়িত্ব আছে। বিতর্ক করতে ধেয়ে আসার আগে সামান্য একটু হোমওয়ার্ক করে নিলে আসলে বিতর্কটাও অনেক সুখকর হয় দুই পক্ষের জন্যই।
দেখুন তো এখানে কি বলছে, আপনাকে ইন্টারনেটের বিভিন্ন সোর্স(যেখানে সাবস্ক্রিপশান লাগবে না) থেকে কয়েকটা লিঙ্ক দেই, দেখুন,
Sixty percent of adults can’t digest milk
৬০% কথাটা খেয়াল করেছেন তো?
Convergent adaptation of human lactase persistence in Africa and Europe
Convergent adaptation of human lactase persistence in Africa and Europe
গুগুলে সার্চ দিলেই এরকম হাজারো লিঙ্ক আপনি ইচ্ছা করলেই বের করতে পারবেন।
সাইন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশিত ডঃ পোলার্ডের লেখাটির একটা অংশ দিচ্ছি এখানে, ওনার রিসার্চের কথাই আমি উল্লেখ করেছি উপরের লেখায়,
Another famous example of dietary adaptation involves the gene for lactase (LCT), an enzyme that allows mammals to digest the carbohydrate lactose, also known as milk sugar. In most species, only nursing infants can process lactose. But around 9,000 years ago—very recently, in evolutionary terms—changes in the human genome produced versions of LCT that allowed adults to digest lactose. Modified LCT evolved independently in European and African populations, enabling carriers to digest milk from domesticated animals. Today adult descendants of these ancient herders are much more likely to tolerate lactose in their diets than are adults from other parts of the world, including Asia and Latin America, many of whom are lactose-intolerant as a result of having the ancestral primate version of the gene.
কে উলটো বলছে সেটা নিয়ে মনে হয় বিতর্কের আর দরকার নেই, আশাকরি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন উপরের লিঙ্কগুলো থেকে।। এজন্যই ৬০% এর হিসেবটা খেয়াল করতে বলেছিলাম উপরে 🙂 ।
ভালো থাকবেন।
@বন্যা আহমেদ,
আপনার দেয়া ঐ একি আর্টিকেলে বলছে মাত্র ৫% এশিয়ান দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার (lactose) হজম করার ক্ষমতা ধরে রাখে। আপনার কি মনে হয় , টিভিতে দুধের যে এত বিজ্ঞাপন দেখায় আমাদের দেশে , তা শুধুমাত্র ৫% বৃদ্ধ যূবক ও কিশোরের জন্য? আমার পরিচিত কোন বাঙালীর দুধ সহ্য হয়না , আমার চোখে এখনো পড়েনি।
“I think that there are huge gaps in knowledge,” panel chairman Frederick Suchy, a pediatric liver specialist at the Mount Sinai School of Medicine in New York, said at a news briefing after the 2½-day conference in Bethesda, Md.
http://www.usatoday.com/news/health/2010-02-25-1Alactose25_ST_N.htm?csp=obnetwork
@ফারুক, যাক এবার আপনার সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। আমি আসলে চাচ্ছিলাম আপনি এ প্রসঙ্গে আরও কিছু পড়ে আমার সাথে আলোচনা করুন। সে জন্যই লিঙ্কগুলো দিয়েছিলাম যাতে আপনি নিজে আরও দেখে নেন। এ প্রসঙ্গে দুটো কথা বলবো…
আপনার সাথে আমার বিতর্কটা কিন্তু এই শতকরা হিসেব নিয়ে হচ্ছিলো না। আপনি বলেছিলেন, যে আমি নাকি সরাসরি বা নির্দিষ্টভাবে আপনার কথার উত্তর দিচ্ছি না, কিভাবে এই মিউটেশন পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে তার ব্যাখ্যা চান(মিউটেশনের বেসিক্স নিইয়েও কথা হচ্ছিল )। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই বলেছিলাম যে এই মিউটেশনটা আসলে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েনি। আপনার মতই আমারও আমাদের দেশের ক্ষেত্রে এই ৬০% নম্বরটা মানতে আসলে কষ্ট হয়। সে জন্যই খেয়াল করলে দেখবেন যে, আমি আমার মূল লেখায় এ প্রসঙ্গে খুব সতর্ক থেকেই লিখেছি। এরকম একটা মিউটেশন এত সাম্প্রতিককালে ঘটেছে যা শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ( বিশেষ করে আমাদের সাংষ্কৃতিক বিবর্তনের সাথে জড়িত) তা বলার জন্যই এই জিনটির কথা উল্লেখ করেছিলাম। আমার মতে পৃথিবীতে গত নয় হাজার বছরে অনেক মাইগ্রেশন ঘটেছে, বিভিন্ন জাতির মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে বসতি স্থাপণ করেছে। যেমন ধরুন, আর্যরা ৩-৪ হাজার বছর আগে যখন আমাদের উপমহাদেশে এসেছিল ( এখনকার হিন্দু ধর্ম তো এদের কাছ থেকেই আসা), তখন তারা হয়তো এই জিনটি নিয়ে এসেছিল, বা মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানেরা হয়তো নিয়ে এসেছিল। এদের সবার সাথেই তো আমাদের জিন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত যে ভারতীয় উপমহাদেশে এই জিনের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে আসল তথ্যটা বের হয়ে আসবে, আমি নিজে এ ধরণের কোন গবেষণার কথা জানি না।
ব্যক্তিগত কথা ব্লগে বেশী বলতে ইচ্ছে করে না বলেই আগে বলিনি, তবে আমার নিজেরই মাইল্ড ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স আছে। আসলে এটা অনেক রকম ফর্মেই বিরাজ করে, বমি করা, একেবারেই সহ্য করতে না পারার মত চরম সিম্পটমগুলো ছাড়াও খুব মাইল্ড ফর্মে শুধু পেট ফাপানো, মৃদু এসিডিটি, মাথা ব্যাথার মত সিম্পটমও দেখা যায়। আমরা অনেকেই হয়তো জানতে পারি না যে, আমাদের ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স আছে। আমি নিজেই জেনেছি অনেক পরে, দুধ খেতে আমার কখনই ভালো লাগতো না, কিন্তু ঐ পর্যন্তই, পরে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এটা বেরিয়ে আসে। আপনি চাইনিজদের সাথে কথা বললে দেখবেন ( আমার নিজের বেশ কিছু চাইনিজ, থাই, জাপানী এবং তাইওয়ানিজ বন্ধুর কথা থেকে শুনেছি) ওরা কিন্তু আমাদের মত এত দুধ খায় না, কে জানে, এদের মধ্যে হয়তো ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স অনেক বেশী। আর এই আমেরিকার মানুষজনের একটা অদ্ভূত ব্যাপার আছে, এরা অনেক সময়ই এশিয়ান বলতে মূলত ওরিয়েন্টাল (মঙ্গোলয়েড) বোঝায়, আমাদেরকে হিসেব থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
@বন্যা আহমেদ,
আমি কিন্তু আগের জিনগুলো বিনষ্ট হওয়ার কথা বলিনি। কোন প্রজাতির নুতন উপকারি জিনবিহীন বাকি সদস্যদের বিনাশ হওয়ার কথা বলেছি।
@ফারুক,
নাহ এমন কোন নিয়ম নেই যে ‘কোন প্রজাতির নুতন উপকারি জিনবিহীন বাকি সদস্যদের বিনাশ’ হয়ে যাবে। আমি আসলে জিন এবং প্রজাতি ( যাদের আপনি সদস্য বলছেন) দুটোর কথাই বলেছি, এবং সে প্রসঙ্গেই জৈব বৈচিত্রের কথাটাও উল্লেখ করেছি। একটু চিন্তা করুন, এক বা একাধিক মিউটেশনের ফলে এক সময় এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির বিবর্তন ঘটলো, পুরোনো প্রজাতিটির জনপুঞ্জের একটি অংশের মধ্যে ঘটা কিছু পরিবর্তনের কারণেই হয়তো তারা বাড়তি কোন সুবিধা পেয়েছে এবং তার ফলে তারা পরবর্তী প্রজন্মে তাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো সঞ্চালিত করতে পেরেছে। এখন যে অভিভাবক প্রজাতি থেকে তাদের উৎপত্তি হয়েছে তারা হয়তো এতদিন তাদের পরিবেশে ভালোভাবেই টিকে ছিল, এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতেও টিকে থাকতে পারে। আবার আপনার বলা উদাহরণটিও সঠিক হতে পারে কখনো কখনো। এমন কোন একটা পরিবেশের কথা চিন্তা করুন যেখানে কোন প্রজাতি কোন এক কারণে ( পরিবেশ, জলবায়ুর পরিবর্তন, জীবাণুর আক্রমন বা অন্য যে কোন কারণে) আর টিকে থাকতে পারছে না, যুদ্ধ করে চলেছে বেঁচে থাকার জন্য। সেই সময় তাদের এক বা একাধিক সদস্যের মধ্যে হয়তো এমন একটা মিউটেশন ঘটলো ( সেই জনপুঞ্জের কিছু সদস্যের মধ্যে হয়তো প্রকারণটি আগে থেকেই ছিল এমনও হতে পারে) যা সেই নতুন পরিস্থিতে টিকে থাকতে বাড়তি কোন সুবিধা দিল। তখন এরাই বেশী বেশী করে বংশবৃদ্ধি করতে থাকবে আর বাকিরা হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ, যা বলতে চাচ্ছি তা হল, এমন কোন নিয়ম নেই যে ‘কোন প্রজাতির নুতন উপকারি জিনবিহীন বাকি সদস্যদের বিনাশ’ হয়ে যেতেই হবে। এক্ষেত্রে অন্যান্য প্রজাতির মতই পুরনো প্রজাতির সদস্যরা টিকে থাকতেই পারে আবার নাও পারে। এটা বিভিন্ন ভেরিয়েবলের উপর নির্ভর করবে। এখানে মিউটেশন নিয়ে কিছু কথা লিখেছিলাম অনেক আগে, ইচ্ছে করলে দেখতে পারেন।
ইশসসসসস, বিপ্লব দিলা তো সব শেষ করে 🙂 !! মোটে তো এভো দেভোর চ্যাপ্টারটা শেষ করলাম। এ সব কিছুই তো লিখব আরেক চ্যাপ্টারে, মানব বিবর্তনের বইটা যদি আসলেই শেষ করতে পারি এ বছর তাহলে এই বিষয়টা নিয়ে উপসংহারে লেখার ইচ্ছে আছে। মজার জিনিস হল, আমরা মাত্র দেড়শ বছর আগে বিবর্তন বুঝতে শুরু করলাম, তার আগে কত হাজার বছর ধরে নিজেদের উৎপত্তি এবং বিকাশ নিয়ে কতই না ধুণফুণ বুঝালাম, বুঝলাম। আর এদিকে বিবর্তনের ব্যাপারগুলো সম্পূর্ণভাবে বুঝে উঠতে না উঠতেই প্রাকৃতিকভাবে ঘটা বিবর্তনের উপর খোদকারি করতে শুরু করে দিলাম।
এটাকে শেষ চ্যাপ্টার করা ঠিক হল না। আসলে সাধারন মানুষ বিবর্তনের বেসিকটাই বোঝে না-তাদের জন্যে আরেকটা ঝাক্কাস শেষ চ্যাপ্টার জুরে দাও ভবিষয়তের মানুষ কেমন হবে-
এখানেই সমস্যা। চিকিৎসার ফলে আজ শিশু মৃত্যু নাই-মানবিকতার ফলে যে অদক্ষ বা যার ব্রেইন খুব বেশী কাজ করে না-তারই অধিক সন্তান হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বে। শিশু মৃত্যু না হলে বা প্রতিযোগিতায় মৃত্যু না হলে ভাল মিউটেশনগুলোর নির্বাচন হবে কি করে?
তাহলে বিবর্তনকি আটকে গেল না রিভার্স ইভ্যলুশন দেখছি আমরা যেখানে তৃতীয় বিশ্বের রহমান মোল্লার ১০ টি সন্তান আর প্রথম বিশ্বের সিই ও সন্তানহীন! রিভার্স না হোক-শিশুমৃত্যু আটকানো মানে মানব বিবর্তন ও আটকে গেল! বাজে মিঊটেশনগুলো এখন সমান ভাবে বেঁচে থাকবে! কি করা যাবে! আমার ছোট বেলায় যা রোগভোগ হত, ২০০ বছর আগে জন্মালে বাঁচতাম না-আমার ছেলের সম্মন্ধেও এক কথা বলতে পারি-এখন এই যে দুর্বল মিউটেশনগুলো টিকে যাচ্ছে এর ফল কি হবে? নির্বাচনশুন্য বিবর্তনের বিকল্প কি তবে ভবিষতে কৃত্রিম নির্বাচন বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করিয়ে মানবজাতিকে আরো পারফেক্ট করা? এরকম একটা ইঙ্গিত আমি আমার এক কল্পবিজ্ঞানের গল্পে দিয়েছি। জানি না কি হবে ভবিষয়তে। হকিংস সাহেব ত বলেই দিয়েছেন এস্টারয়েড এসে সব ভাসিয়ে দেবে! তবে মনে হয় না ডাইনোদের মতন মানব জাতি বিলুপ্ত হতে পারে বলে।
@বিপ্লব পাল,
মানুষ প্রজাতি বিবর্তনেরই এক উৎপাদ্য। তাই মানুষ যা কিছুই করবে তা বৃহত্তর চিত্রে বিবর্তনেরই কাজ। বলা হয় বিবর্তনের কোন উদ্দেশ্য নেই। তাই মানুষ প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখা বিবর্তনের উদ্দেশ্য নয়। অনেক প্রজাতিই তো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই মানুষের কোন কাজের জন্য মানব প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটা অসম্ভব বা অবাস্তব কোন ব্যাপার নয়। অ্যাস্টেরয়েড তো এক দৈবাৎ ব্যাপার। মানুষ নিজেই নিজেকে ধ্বংস করতে সক্ষম। মানুষ বাঁচলেও সেটা বিবর্তনের কারণে, বিলুপ্ত হলেও তা বিবর্তনের কারণে।
@অপার্থিব,
সম্পূর্ণভাবে একমত। আর সবাই ধ্বংস হলেও আমরা হব না, এটা বোধ হয় আমাদের সেই ধৃষ্ট মানসিকতারই প্রতিফলণ, ঠিক যেভাবে আমরা নিজেদের এতদিন সব প্রাণী থেকে আলাদা করে রেখেছি, সর্বশ্রেষ্ঠ জীবের আসনে বসিয়ে রেখেছি। আসলেই তো। আমরা নিজেরাই তো নিজেদের ধ্বংস করতে সক্ষম! আমাদের মত করে ভাবতে পারলে কোটি কোটি বছর আগে বিভীষিকাময় যে সরীসৃপেরা পৃথিবীর সমূদ্র-মহাসমুদ্রগুলোতে রাজত্ব করে গেছে তারাও হয়তো একইভাবে ভাবতো, দৈত্যাকৃতি ডাইনোসরেরাও হয়তো একইভাবে নিজেদের অমরত্ব ঘোষণা করতো।
ধীরে ধীরে পুরো সিরিজটা পড়তে হবে বুঝতে পারছি। যতটুকু পড়লাম সেটুকু চমৎকার লাগল।
পুরো সিরিজটাই অসাধারণ লাগল। :yes:
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং একটি জটিল বৈজ্ঞানিক বিষয় । আমার জানা নাই, কি ধরাণের পাঠকদের উদ্দেশ্য করে শ্রীমতি বন্যা আহমেদ প্রবন্ধটি লিখেছেন । যদি বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ড পাঠকদের উদ্দেশ্যে লিখে থাকেন, তবে লেখাটি যথার্থই হয়েছে ।
কিন্তু সাধারণ পাঠকদের জন্য লেখা হলে প্রবন্ধটি বস্তুবাদী তত্ত্ব সমৃদ্ধ হওয়া উচিত ছিল । বস্তুবাদ শুনেই আমাকে মার্ক্সিষ্ট বলে তেড়ে আসবেন না । কারণ মার্ক্স বস্তুবাদের জনক নয় । বস্তুবাদের জনক হলো হেগেল । বস্তুবাদের মূল বক্তব্য হলো “বস্তু চলমান”, অর্থ্যাৎ বস্তুর বিবর্তন ঘটে । হেগেলের মতে বস্তুর বিবর্তন ঈশ্বর ঘটান । বিপরীতে মার্ক্সের মতে বস্তুর অন্তর্নিহিত তিনটি বৈশিষ্টের কারনে বস্তুর বিবর্তন ঘটে । বিজ্ঞানের কাজ হলো বস্তুর বৈশিষ্টগুলি উদঘাটন করা ।
@আ. হা. মহিউদ্দীন,
বিবর্তন সম্পর্কে অনেক আলোচনা আছে মুক্ত-মনায়। এখানে ও এখানে দেখেন।
@আ. হা. মহিউদ্দীন, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য, তবে আপনার বক্তব্যটা ঠিকমত বুঝতে পেরেছি কিনা জানি না, যা বুঝেছি তার ভিত্তিতেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি।
আমার বিবর্তনের লেখাগুলো দীর্ঘদিন ধরে লেখা অন্যান্য অনেক লেখার কন্টিনিউয়েশন, আপনি ওগুলো দেখেননি বলেই মনে হচ্ছে। জীবজগত সদা পরিবর্তনশীল এবং বিবর্তন যে একটা ফ্যাক্ট এ নিয়ে একটা আস্ত বইই লিখেছিলাম ২০০৭ সালে, এখানে তার অনলাইন ড্রাফট কপিটা দেখতে পারেন। এগুলো তো বিবর্তনবাদের একেবারেই মূল বিষয়, একই কথা বারবার বলতে থাকলে তো আর আগানো যাবে না, একই বিষয়ের আবর্তে ঘুরতে হবে সারা জীবন ধরে। এখনকার লেখাগুলোতে আমি পরবর্তী টপিক হিসেবে মানব বিবর্তন নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছি, বিবর্তনকে তার ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়েই। আর আপনি মার্ক্সিস্ট হলে আমি তেড়ে আসবো কেন, তা কিন্তু বুঝতে পারিনি। আমার নিজেরই তো মার্ক্সিজমে দীক্ষা খুব ছোটবেলায়। তবে বিজ্ঞানের লেখায় সামাজিক বস্তুবাদ, বস্তুবাদ বা মার্ক্সবাদকে আলাদা করে নিয়ে আসার কোন প্রয়োজন দেখি না, আমার মতে বিজ্ঞানের লেখা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেই লেখা উচিত তার সাথে অন্য কিছু না মেলানোই সঠিক। এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত, এ নিয়ে বিতর্ক করার তেমন কোন ইচ্ছা অবশ্য আমার নেই।
@বন্যা আহমেদ, আপনার উত্তর থেকে যে জিনিষটা আমি বুঝেছি, তা হলো বিবর্তনকে আপনি বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেছেন জীব-বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে ।
ডারিউনের On the Origin of Species তত্ত্ব উদ্ভাবনের বহু পূর্বেই দর্শন শাস্ত্রে বিবর্তন তত্ত্বের উদ্ভাবন ঘটেছিল । ডারইউনের উল্লেখিত তত্ত্বটি ছিল দর্শন শাস্ত্রের উদ্ভাবিত বিবর্তন তত্ত্বের বিজ্ঞান ভিত্তিক স্বীকৃতি ।
বিবর্তনের মূল বিষয় দর্শন শাস্ত্রের মধ্যে নিহিত । তাই বিবর্তনকে যেমন দর্শনের দৃষ্টিকোন থেকে দেখা যায়, তেমনি বিজ্ঞানের এবং সমাজ-বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকেও দেখা যায় ।
লেখকের স্বাধীনতা হলো তিনি বিবর্তনকে কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখবেন ও কোন শ্রেনীর পাঠকদের জন্য এবং কি উদ্দেশ্যে লিখবেন ।
আস্তিকতা বা নাস্তিকতা দর্শনের বিষয়, বিজ্ঞানের বিষয় নয় । কুসংষ্কার হলো সামাজিক বিষয়, যার সাথে যুক্ত পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্র, যা বিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত নয় ।
আপনার লেখার উপর আমার মন্তব্য ছিল না । আমি জানতে চেয়ে ছিলাম কোন শ্রেনীর পাঠকের জন্য আপনার লেখা । আপনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে আপনার লেখা বিজ্ঞান ভিত্তিক । ভাল । চালিয়ে যান ।
@আ. হা. মহিউদ্দীন,
বিজ্ঞানের সাথে কি দর্শণ যোগ করলে আরও ভাল ফসল পাওয়া যায়না? শুধু এমনি জানতে চাওয়া। কোন মতামত নয়। দর্শণ ব্যতিত বিজ্ঞান একটু কেমন যেন একরোখা লাগে বলে মনে হচ্ছে।
ধন্যবাদ
@Russell, বিজ্ঞানের সাথে দর্শন কেন যোগ দেয়া যাবে না ? বিজ্ঞানের সাথে দর্শন যোগ দেয়া যায় । তবে বিজ্ঞান বলতে আমরা মানব জ্ঞানের যে শাখাগুলকে বুঝি, সেগুলি একটু জটিল বিষয় । তাই মানব জ্ঞানের যে শাখাগুলি কম জটিল, জ্ঞানের সেই শাখাগুলি সাধারণ পাঠকদের বুঝার স্বার্থে ব্যবহার করা শ্রেয় ।
@আ. হা. মহিউদ্দীন, রাসেল,
বিবর্তনবাদ নিয়ে লিখতে গেলে দর্শন তো আসবেই, আমরা যখন বলি, জীবজগৎ পরিবর্তনশীল, বিবর্তনবাদ আসলে একটি বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি, বা মানুষ কোন স্বর্গীয় স্পর্শের ফসল নয়, তখন কিন্তু দর্শনকেই তুলে ধরি। বিবর্তনবাদ আমাদের হাজার বছরের লালন করা স্থবির ধারণাগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়, আমাদের প্রজাতির উৎপত্তি, বিকাশ, ভবিষৎ, জন্ম, মৃত্যু, জীবন এবং আমাদের পারিপার্শ্বিকতা, প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক, ইত্যাদি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়। তবে আমি এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দর্শনকেই তুলে ধরতে আগ্রহী, যেহেতু এটা একটা বৈজ্ঞানিক লেখা। বিজ্ঞানের সাথে সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দর্শনগুলোকে না মেলানোরই চেষ্টা করি, যাতে করে সোশ্যাল ডারউইনিজমের মত ভুলগুলোর পুনারাবৃত্তি না হয়।
রামগড়ুড়ের ছানাের স্বরূপ আপনি এখনও ধরতে পারেননি 😀 । দেখুন গণিতে অন্তর্জ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যায় রামগড়ুড়ের ছানা কি লিখেছেন:
😛
@রৌরব,
এটা তো কিছুই না, এর আগে যে কত বড় বড় থ্রেট করেছে সেগুলো বোধ হয় আপনি দেখেন নি। আমি কেন ও কথাটা বলেছি তা রামগড়ুড়ের ছানা ভালো করেই বুঝবে 😥 ।
@বন্যা আহমেদ,
🙁
অতি আনন্দের সংবাদ 😀 । আশা করি বিবর্তন নিয়ে আমার ভালবাসা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। আর আশা করি আপনার পরবর্তী বইটাও আমাকে উৎসর্গ করা হবে :rotfl: । বিবর্তন নিয়ে আপনার বইটার বেশ কিছু অংশ কিন্তু আমি পড়েছি,সুখের ব্যাপার এই বইয়ের পরিশিষ্ট মূল অংশের থেকে বড় নয় 😀 ।
@বন্যা আহমেদ,
ধন্যবাদ উত্তরের জন্য । ইদানিং Behavioural Science এর একটা প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে বিবর্তন নিয়ে আমার বেশী নাড়া চাড়া করতে হচ্ছে যা আগে কখনও করিনি । প্রতিদিনই অবাক হতে হচ্ছে ।
বন্যাদি’র লেখা যখন পড়ি তখন একটা কথাই আমার মনে হয় ‘calm and firm’ সাবলীল, নির্মেদ। বিবর্তন আমার বিষয় নয়। এ বিষয়ে আমার যতটুকু জানা- সবই গুরু বন্যা আহমেদের লেখা পড়ে। বর্তমান সিরিজটি আবার শুরু থেকে পড়তে হবে।
একটা ব্যাপার এখানে উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না। গত বছর জাপানে গিয়েছিলাম একটা কাজে। ফেরার পথে টোকিও-তে একজন বাংলাদেশী ছাত্রের ডর্মে গিয়েছিলাম দেখা করতে। তার বইয়ের তাকে দেখলাম দুটো মাত্র বাংলা বই- একটা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘কোরান শরিফ সরল বঙ্গানুবাদ’, এবং অন্যটি বন্যা আহমেদের ‘বিবর্তনের পথ ধরে’। কিছুদিন পর পরই নাকি সে বই দুটো পড়ে। তার মত আমাকেও মাঝে মাঝে বিবর্তন পড়তে হয়।
@প্রদীপ দেব,
বই দুটো একে অপরের পরিপুরক 😀
@প্রদীপ দেব,
এই বই দুটো এক সাথে? আপনি কি নিশ্চিত যে দু’টো বই এর কোন একটার নাম লিখতে ভুল করেননি? যদি ঠিক দেখে থাকেন তাহলে এর ব্যাখ্যা একটাই হতে পারে, উনি হয়তো কোন একটার রিবিউটাল লিখছেন।
@প্রদীপ দেব,
:-X :-X :-Y :-/ :-/ :hahahee: :hahahee: :hahahee:
এভো-ডেভোর পুরো সিরিজটাই মারাত্নক হয়েছে। আগেই পিবিএস এর ভিডিওটা দেখায় অনেক কিছু বুঝতে সুবিধা হয়েছে। জাঙ্ক ডিএনএ আসলে যে জাঙ্ক না সেটা তখন জেনেছিলাম। এ লেখাটায় ব্যাপারটা স্পষ্ট হল আরো।
ল্যাক্টোজ ডাইজেশন নিয়ে তথ্যটা মজার লাগল। এ প্রসংগে জানাই,ল্যাক্টোজ ইন-টলারেন্স নামে একটা জেনেটিক রোগের কথা পড়েছিলাম অনেক আগে। সেটার বিস্তার আবার পৃথিবীর অঞ্চল ভেদে আলাদা আলাদা। রোগটা যাদের আছে তারা দুধ খেয়ে হজম করতে পারেনা। সেটার কারণ এতদিনে মনে হয় বুঝলাম!
আচ্ছা জিনের নাম হার১ না লিখে HAR1 বলে উল্লেখ করলেই ভাল হয় বলে আমার মনে হয়।( একদম ব্যক্তিগত মতামত)। আর বিবর্তনের ‘আন্ডার দ্য হুড’ মেকানিজম নিয়ে আরো লেখা চাই আপনার কাছে। এইসব নিয়ে লেখা লিখতে অনেক কষ্ট তবে লেখা পড়তে খুব-ই মজা লাগে! 🙂
@পথিক,
এই LCT র উপর মিউটেশনটা বেশ মজার। কৃষি এবং গৃহপালিত পশুর ফার্মিং শুরু হওয়ার পর ইউরোপ এবং আফ্রিকায় আলাদা আলাদাভাবে প্রায় একই মিউটেশন ঘটেছে। ধারণা করা হয় যে, সে জন্য এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকাসহ অন্যান্য জায়গার অধিবাসীদের মধ্যে ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স অনেক বেশী কারণ তাদের মধ্যে আমাদের পূর্বপুরুষদের অপরিবর্তিত জিনগুলোই রয়ে গেছে। তাই এই রোগের বিস্তারও যে অঞ্চলভেদে আলাদা হতেই পারে।
আমি ঠিক উল্টোটা ভাবছিলাম, বাংলা লেখার মধ্যে বারবার ইংরেজি শব্দ দেখতে বিরক্ত লাগে, তাই প্রথমে প্যারেন্থিসিসের মধ্যে ইংরেজিটা দিয়ে তারপর বাংলার নামটা লিখতে চাচ্ছিলাম। অবশ্য ভালো না লাগলে তা বদলানোই যায়…
আরো কয়েক বার পড়তে হবে। রীতিমত অভিভূত হয়ে গেলাম, লেখার শৈলী অতি আকর্ষণীয় হয়েছে।
“ক্রমশঃ” বানানটা “ক্রমশ” লেখবেন। কারণ বাংলা বানানের প্রচলিত নিয়ম হল শব্দের শেষে “বিসর্গ” থাকবে না। যেমনঃ কার্যত, মূলত, প্রধানত, প্রয়াত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ ইত্যাদি।
‘সুফির জগত’ বইটির প্রথমেই যেসব প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে-
Who are you?
What was a human being?
এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর যা থেকে জানা যায় তাহলো আমাদের বিবর্তনের ইতিবৃত্ত। আমি কি, আমি কোথা থেকে এলাম, কিভাবে এলাম তা যারা আমাদের বিবর্তন সম্পর্কে অজ্ঞ তারা জানবে কি করে? এজন্য যদি জিজ্ঞেস করেন পৃথিবীতে মানুষের উদ্ভব কবে হয়েছে বা কিভাবে হয়েছে তবে বিবর্তনসম্পর্কে না জানা চিড়িয়ারা হা করে তাকিয়ে থাকে আর পারলে ধর্ম-পুঁথির দুয়েকটা কথা শুনিয়ে দেবে যা শুনে ভালো মেজাজটা বিলা হতে সময় লাগবে না।
বিবর্তনের উপর লিখে যান অবিরত। এই সময়টাই বিবর্তন বিষয়টির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার সময়।
@সৈকত চৌধুরী, ক্রমশ বানানটা ঠিক করে দিলাম। আর ভুলভাল পাইলে জানান দিও। লেখাটা এত বড় হয়ে গেলো যে নিজেরই আর পড়ার ধৈর্য ছিল না, বেশ কিছু ভুলই থাকতে পারে। আর আমার বানানের যে অবস্থা, ফরিদ ভাইএর মত ‘বানানবাদী’ যে এখনও তেড়ে আসেননি এইতো বেশী 🙂 ।
মানুষের বিবর্তন বেশ জটিল একটা বিষয়, এখানে শুধু জেনেটিক পরিবর্তনগুলো জানলে বা বুঝলেই হচ্ছে না। আমাদের মস্তিষ্ক এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ আর তার সাথে সাথে কালচারাল বিবর্তন ( একটা আরেকটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে) এমন এক জটিল অবস্থায় গেছে যে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা জানতে আরও সময় লেগে যাবে।
হ্যা তা তো বটেই, না হইলে রামগড়ুড়ের ছানাের হাতে মাইর খামু কেমনে? তুমি তো মনে হয় সেই ব্যবস্থাই করতেসো, এখন তো আমার রীতিমত সন্দেহ হচ্ছে, তুমি হয়তো তলে তলে ওর দলেরই লোক :-X । আজকালকার দুনিয়ায় আর কাউরেই বিশ্বাস নাই :-Y
আপনাদের মত সুন্দর করে লিখতে পারিনা। বোঝাতে পারব কিনা জানিনা। একটু চিন্তার খোরাক- হতে পারে-যেহেতু আপনারা বিবর্তন নিয়ে ভাবছেন। হয়ত-হতে পারে আমার চিন্তা পুরোটাই ভুল।
কলা খাবার পরে, কলার ছোবাটা ফেলে দিলে দুই একদিনের ভিতরেই সেখানে একধরনের জীব সৃষ্টি হয়। ঢাকায় বর্ষার সময় পানি- কোন ডোবায় জমলে বা ড্রেনে- দেখা যায় অসংখ্য মাছ। যেখানে দেখা যায় নদী বা পুকুরের সাথে কোন সংযোগ ছিলনা। কোথা থেকে সৃষ্টি হল এই জীব? কিভাবে পেল তারা জীবন? আকার? কিসে সেই শক্তি? মানুষ হতে পারে সৃষ্টির শুরুটা এমন। হয়ত এভাবে সৃষ্টি হয়েছিল কোনভাবে মানুষের ডিনএ, ক্রোমজম…এইসব আরকি। সৃষ্টি হতে লাগে পাচ পদার্থ- মাটি, পানি, বায়ু, আগুন আর শুন্য। শুন্য হতে সকল কিছুর সৃষ্টি। এর ভিতর বায়ুতে থাকে চালনা শক্তি। পানির দুই রুপ ঘটে- এখানে যেমন গোপন থাকে, তেমন প্রকাশিত হয়, যেমন শুক্রকীট। বায়ুতে জলীয়বায়ু থাকে। আর নির্দিষ্ট তাপ-মাত্রাত আছেই। সেই কারনে দেখা যায় কলার ছোবড়া বা কোন ময়লা আবর্জনা থেকে জীব সৃষ্টি হয়ে যায়।
এই বায়ু মন্ডলে থাকে জীবানু শক্তি। আমাদের চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই শক্তি ঘুরে বেড়ায়। আমরা এই শক্তি থেকে শ্বাস গ্রহন করছি। অক্সিজেন সাথে আর কত কিছু নিচ্ছি। সৃষ্টির শুরুটা হয়ত এইরুপ ছিল, তখন হয়ত কিছুই ছিলনা, বাতাস পানির সাথে প্রেমে যে ঢেউ ক্রিয়া করে, এতে তাপ উতপন্ন হল, (হতে পারে) (আমার লেখা ভালনা আগে থেকেই বলে দিয়েছি) ধরুন তখন ঘর্ষন হল জমিনে, মাটিতে। ফেনা, ফেনা থেকে হয়ত কোন জীব, সেখান থেকে আকার…একটা থেকে আর একটা…উদ্ভিত হল হয়ত প্রথমে, এইদিকে ধরুন কিছু ছোট জীব…এভাবে জীব আর উদ্ভিতের প্রেমে…যেমন ধরা যেতে পারে – মৌমাছি ফুলের গন্ধে, সেখান থেকে আরও বীজ উতপন্ন…হতে পারে…এভাবে সৃষ্টির শুরু।
এরপর আসুন, সেই জীব যখন মরে যাচ্ছে, আসলে তার ভিতরে ছিল জীবনী শক্তি রুপে বাতাস, আমাদের শরীরও কিন্তু এই বাতাসে চলে। মরে যাওয়া অর্থ একটা শক্তি যা বাতাসকে টানে ধরে রাখে সেটা আর নেই। তাহলে শক্তি সেটা বাতাসের সাথেই রয়েছে। কিন্তু আমরা কি জানি? শক্তি বিনাশ হয়না। শক্তি শুধু রুপান্তরিত হয়। শক্তি একটি মাধ্যমে ক্রিয়াশীল হয়ে গুন উতপন্ন করে। এখন যেই শক্তি আমার ভিতরে আছে উহা বের হয়ে বা যাই বলি আমার মরার পর কি হবে? সে এই বাতাসেই থাকার কথা, হয়ত আর কারও নাসিকা (যেকোন জীব) দমের দ্বারা কারও ভিতরে প্রবেশ করছে। হতে পারে। সেই মাধ্যমে তথা বস্তুতে সেই শক্তি ক্রিয়া শীল হতে পারে।
জীবের দেহে পানির পরিমান বেশি। বাতাস থেকে যে শক্তি দেহে প্রবেশ করে তা রক্তের দ্বারা সমস্ত শরীরে পৌছাচ্ছে, পানিতে সেই শক্তি শোষন করছে হয়ত। সেই শক্তি আবার শুক্র বা ডিম্বানু কীট রুপে আর একটি দেহে আকার ধারন করছে। হতে পারে।
জানিনা বোঝাতে পারলাম কিনা। আরও অনেক কিছু আছে। কিন্তু আমি আসলে লিখে বোঝাতে পারিনা বলে আর লিখছি না আপাতত।
আপনার লেখা পড়ে ভালই লাগল। ধন্যবাদ।
@Russell, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। দুঃখিত, আপনার কথাগুলো ঠিকমত বুঝতে পারলাম বলে মনে হয় না। আপনি যদি সরাসরি প্রশ্নগুলো করেন তাহলে আমার উত্তর দিতে সুবিধা হত। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আপনি এখানে জীব আর জড়ের উৎপত্তি নিয়ে কথা বলছেন, নাকি বিবর্তন নিয়ে কথা বলছেন।
@বন্যা আহমেদ,
আমি আমার মত করে বলি-দেখি বোঝানো যায় কিনা। আমি মূলত আপনাকে কোন প্রশ্ন করিনি। কিছু ধারনা দিতে চেয়েছি।
জীবের বিবর্তন বুঝতে জীবের সৃষ্টি সম্পর্কেও জানা দরকার। আপনার পূর্বের লেখাগুলোতে জীন, ডি এন এ এইসব নিয়ে লেখা আছে। আমি অত গভিরে যাবনা।
যেটা বলতে চেয়েছিলাম, যেমন ধরুন আপনে আম বা কলা কোথাও অনেকদিন ফেলে রাখলে দেখবেন সেখান থেকে কিছু জীব খুব ক্ষুদ্র পোকা জন্ম নেয়। সেই পোকা কিভাবে এল? তার সৃষ্টি সেখান থেকে। এখন সে কি করে সেখানে জীবন পেল।
জীবের/উদ্ভিদের সৃষ্টি হতে পাচটি উপাদান/পদার্থ প্রয়োজন। সৃষ্টির শুরুর ভাগে যদি তাকাই তাহলে হতে পারে, তখন এই পৃথিবীতে বাতাস, পানি, মাটি, আগুন(তাপ), এবং শুন্য ছিল। এই পাচ বস্তুতে সকল কিছুর সৃষ্টি হয়। বাতাসের সাথে পানির মিলনে পানিতে ঢেউ উঠে। বাতাস বস্তুতে আছে পাচটি গুন। যেখানে বস্তু থাকবে সেখানে তার গুন বিদ্যমান থাকবে। এগুলো সব স্বাভাবিক কথা।শক্তি বস্তুতে গুন সৃষ্টি হয়। বাতাসের পাচ গুন পানিতে ক্রিয়া করে পানিতে পাচ গুনের সৃষ্টি করে। এই বাতাসে থাকে জীবনী শক্তি( উদাহরন দিয়ে বলতে পারি অক্সিজেন; যদিও এরও গভির) আমাদের চারপাশে অসংখ্য এই জীবনী শক্তি গুলো রয়েছে। পানি বস্তুতে ইহা ক্রিয়া করে গোপন থেকে প্রকাশিত হয়। যেমন শুক্রকীট/ডিম্নানু। যখন বাতাস বস্তু পানিতে ঘর্ষণ হয় তখন তাপ উতপন্ন হয়, এছাড়াও তাপ বিদ্যমান আছে এই সৃষ্টিতে।আর সমস্ত প্রক্রিয়া ঘটিতে অবশ্যই শুন্য মাধ্যম থাকে। এসব আমি কিছুই বিস্তৃত বলছিনা। শুন্যতে সকল কিছুর সৃষ্টি।
এই বাতাস, পানি, শুন্য, তাপ মাটির একটি উদাহরন এরুপ হতে পারে, ধরুন- সমুদ্রে বাতাসের মিলনে পানিতে যে ঢেউ উঠে, তখন মাটিতে এসে ঘর্ষন হয়, ফেনা হয়, হয়ত সেখানে কোন কোষ/ডিম্বানু সৃষ্টি হতে পারে, বা সৃষ্টির শুরুতে হয়েছিল। কেননা দেখবেন কোন জলাশয়ে অনেকদিন পানি জমা থাকলে সেখানে ছোট ছোট মাছ পাওয়া যায়। কিভাবে? সেখানে নদী-নালা, খাল-বিল পুকুর এর কোন সংযোগ না থাকলেও।
এবার আসুন বিবর্তন যদি বলিঃ যে জীব মারা যায়, আসলে সেখানে কি ঘটে? সৃষ্টিতে সকল বস্তুই ক্ষয়শীল। শুধু শক্তির ক্ষয় হয়না। বস্তুর ক্ষয়ের সাথে সাথে তার জীবনী শক্তি সেখান থেকে রুপান্তরিত হয়ে আবার এই বাতাসেই ফিরে যাচ্ছে। বস্তু/জীব/দেহ মাটির সাথে, পানির সাথে তাপের সাথে মিশে যাচ্ছে। কিন্তু শক্তির কোন ক্ষয় হয়না। সে শুধু রুপান্তরিত হয়, এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে…রুপ পরিবর্তন হচ্ছে।সে বাতাসে সে ফিরে যাচ্ছে। আবার কোন মাধ্যমে সে প্রবেশ করছে; যেমন-আমরা শ্বাস প্রশ্বাস টানছি, আমরাওত সেই জীবনী শক্তি ভিতরে নিচ্ছি। হতে পারে আমাদের রক্তে দেহে সেই শক্তি পঞ্জিভুত হচ্ছে। বাতাসের এই শক্তি আমাদের রক্তে মিশে আমাদের ভিতরে জমা থাকছে, যখন মিলন হচ্ছি একজন আর একজনের সাথে তখন দেহে তাপ উতপন্ন হচ্ছে, আবার সেই শুক্রকীট…এভাবে এর কি শেষ আছে?
এইত এইভাবেই হয়ত জীবের বিবর্তন চলছে।মানুষ পৃথিবীতে কবে আসছে ইহা আসলে বলাটা কঠিন। কেননা এই বিবর্তনের দ্বারা মানুষ তার চিন্তা চেতনার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যুগের পর যুগ আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের উন্নত করতে পারছে। এই একটি বিষয় একমাত্র মানুষ ব্যতীত আর কেউ পারেনা। হয়ত বিবর্তনের দ্বারা কোন এক সময় এই “চিন্তা করা মানুষ” এর সৃষ্টি হয়ে যায়, যে তার নিজেকে , এই সৃষ্টিকে ধরে রাখতে চিন্তা করতে করতে নিজের রুপান্তর করেছে। এই “চিন্তা করা মানুষ” এর পূর্বেও এই আকারের মানুষ ছিল। সেও বিবর্তনের দ্বারা আকার পেয়েছিল।
যেমন ধরুন মানুষের ক্রোমজমে তার চরিত্র প্রকাশ হয় (সম্ভবত)- সেখান থেকে মানুষ চেষ্টা করছে নিজের রুপান্তর তথা আর একটি তার মত মানুষ পৃথিবীতে আনতে, কেউ হয়ত তখন চিন্তা করেছিল আরও ভাল কিভাবে এই সৃষ্টিতে মানুষ আনা যায়।
যেমন ধরা যেতে পারে, একজন মানুষ সে সাধনার দ্বারা আর এক জ্ঞানী মানুষ এই সৃষ্টিতে আনতে পারে। ইহা সম্ভব। এভাবে হয়ত তখনও কোন জ্ঞানী মানুষ এসেছিল, প্রকৃতির উপর সে নির্ভর হতে চায়নি, বা চারিপাশের সব কিছু থেকে সে নিজেকে অন্য ভাবে গড়ে তুলেছিল, কেউ তাকে গড়ে তুলিয়েছিল।
যাইহোক, বিবর্তন আছে, রুপান্তর আছে, নয়ত সৃষ্টি স্তব্ধ হয়ে যায় বলে মনে করি। যাইহোক আপনারা জ্ঞানী গুনী জন, আপনারাই ভাল বুঝবেন।
জানিনা এখনও বুঝাতে পারলাম কিনা।
ধন্যবাদ।
@Russell,
কিছু মনে করবেন না। যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন করতে হলে একটা যোগ্যতা প্রয়োজন হয়। যেমন আমি “পদার্থবিজ্ঞান” সম্পর্কে কিছুই জানি না। এখন যদি আমি সময়ের আপেক্ষিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি তবে বিষয়টা কি দাঁড়াবে?
বিবর্তন সম্পর্কে জানতে হলে এখানে ও এখানে দেখুন। আপনার দেখছি আরো বিস্তারিত পড়তে হবে ধৈর্য ধরে।
আচ্ছা, আপনি কি আধ্যাত্মিক লাইনের কারো সাক্ষাত পেয়েছেন? 🙂
একটা কাজ করেন। এখন বিতর্ক বা প্রশ্ন না করে বিষয়টা সম্পর্কে জেনে তারপর প্রশ্ন করলে সুবিধা হয়। আমি আপনাকে প্রশ্ন করতে নিরুৎসাহিত করছি না বরং অনুরোধ করছি যাতে আপনার সুবিধা হয়। ভালো থাকবেন।
@সৈকত চৌধুরী,
আমি আমার মত করে বলি-দেখি বোঝানো যায় কিনা। আমি মূলত আপনাকে কোন প্রশ্ন করিনি।
@Russell,
আপনি বোধ হয় জীবের উৎপত্তির কথা বলছেন এখানে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে জীবের উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইটি পরে দেখতে পারেন। এখানে এর অনলাইন ভার্সানটি রাখা আছে।
@বন্যা আহমেদ,
হুমম…সবই পুস্তকে লিপিবদ্ধ আছে। পুস্তক পড়েত টিয়া পাখিও কথা বলে।
পুস্তকের বাইরে আপনার কথা শুনতে চেয়েছিলাম।
যাইহোক আমিই বুঝাতে পারিনি, লিখে বোধগম্য করতে পারিনি আপনাদের।
তবে আপনার লেখা ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ।
@Russell, আপনাকে কিন্তু আমি অন্য কারও বই পড়তে বলিনি, আমাদের নিজেদের লেখা বইই পড়তে বলেছি। অভিজিৎ, ফরিদ আহমেদ, আমি, শিক্ষানবিস, রায়হান সহ অনেকেই আমরা একসাথে লেখালিখি করি, তাই এই বইগুলো আমাদের নিজেদেরই। আপনারা প্রশ্ন করবেন বলে বারবার ঘুরে ফিরে একই কথা যদি লিখতে থাকি তাহলে নতুন লেখা লিখবো কিভাবে? নিজেদের লেখা বই এর রেফারেন্স দিলে কেম্নে টিয়া পাখি বা ময়না পাখি হয় সেইটা কিন্তু বুঝতে পারলাম না 🙂 ।
মিউটেশন তো একটি অসচেতন প্রক্রিয়া। কোনো জিনের কাজ গুরুত্বপূর্ণ বলে তার মিউটেশন সহজে ঘটবেনা,এটা তাহলে কীভাবে সম্ভব?
@মিথুন, আপনি আসলে ঠিকই ধরেছেন, আমি যেভাবে লিখেছি সেখান থেকে এই কনফিউশান হতেই পারে। দেখি আরেকটু ঠিক করে দিতে পারি কিনা। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, মিউটেশন র্যন্ডম বা বিক্ষিপ্তভাবে ঘটতেই থাকে জিনোমের সব ডিএনএ অনুক্রমের উপরেই। তারপর কোনটা নির্বাচিত হবে বা টিকে থাকতে পারবে অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্মে এই পরিবর্তনগুলো সঞ্চালিত করতে পারবে তা নির্ভর করে প্রাকৃতিক নির্বাচন বা পজিটিভ সিলেকশানের উপর। ধরুন, শরীরের আকার, বিভিন্ন আ্যক্সিস, ডান বাম যে নিয়ন্ত্রক জিঙ্গুলো ঠিক করে তাদের মধ্যে যদি কোন মিউটেশন ঘটে তাহলে তার পরিনাম মারাত্মক হতে পারে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সেই শিশু হয়তো বেঁচে থাকতেই পারবে না বা পারলেও বংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে না। তার ফলে তার মিউটেশনগুলো কোন জনপুঞ্জে হয়তো টিকেই থাকতে পারবে না। তবে এই ধরণের কোন পরিবর্তন যদি কোন জীবের টিকে থাকায় বিশেষ কোন সুবিধা দিতে পারে তাহলেই শুধু সেগুলো টিকে থাকবে। এ কারণেই দেখা যায় যে, যে জিন বা ডিএন এর অংশগুলো খুব বেসিক বা অপরিহার্য কাজগুলো সম্পাদন করে তাদের মধ্যে মিউটেশনের পরিমাণ কমে যায় ( অর্থাৎ মিউটেনগুলোকে নির্বাচিত হতে দেওয়া হয় না)। আর একই কারণে, জিনোমের এরকম কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশে খুব দ্রুত মিউটেশন ঘটতে দেখা গেলে বোঝা যায় যে, নিশ্চয়ই এরা জীবের বেঁচে থাকায় খুবই ইম্পর্ট্যান্ট কিছু কাজ করছে বা বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।
জানি না বুঝাতে পারলাম কিনা, কনফিউশান থাকলে আবারো প্রশ্ন করতে দ্বিধা করবেন না। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
@বন্যা আহমেদ,
বুঝিয়ে বলার জন্য ধন্যবাদ।
খুবই উত্সাহব্যঞ্জক বিষয় । বিশেষ করে , আমাদের এবং আমাদের নিকটাত্মীয় প্রাইমেইটদের মস্তিষ্কের বিবর্তন যার একটা গুরুত্বপুর্ন অংশ নিওকরটেক্স ঘিরে । আমাদের নিওকরটেক্স যেখানে ৮০% , সেখানে সাধারন চিম্পাঞ্জির (বা শিম্পাঞ্জি ) নিওকরটেক্স মোট মস্তিষ্কের ২০% । সামাজিক আচরণগত পার্থক্যের সূত্রপাতটা এখানেই । এটা না থাকলে চিম্পাঞ্জিদেরও হয়ত মানুষের সাথে ধর্ম-কর্ম কিংবা গান-বাজনা করতে দেখা যেত ।
@সংশপ্তক, @সংশপ্তক, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। হ্যা, সেরেব্রাল কর্টেক্সেরই সবচেয়ে নতুন অংশ এই নিউরো কর্টেক্স ( আমার কাছে শতকরা হিসেবটা নেই দেখে এব বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না), বিবর্তনের ধারায় মানুষের মস্তিষ্কের এই অংশগুলোর যেহেতু খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে তাই আমাদের মস্তিষ্কের কাজ এবং বুদ্ধিমত্তার উৎস বুঝতে হলে এই অংশগুলোর কাজ এবং বিকাশ বুঝতে হবে। মানুষের জিনোমের সর্বোচ্চ পরিবর্তনশীল ডিএনএ অনুক্রমগুলোর লিষ্টেও মস্তিষ্কের এই অংশের সাথে জড়িত জিন এবং অনুক্রমগুলোই বারবার উঠে আসছে। এখনও আমরা ব্রেইনের কাজ সম্পর্কে খুবই কম জানি, তবে যে হারে বিভিন্ন ফ্রন্টে এ নিয়ে গবেষণা চলছে, তা তে করে মনে হয় খুব বেশীদিন আর এগুলো আমাদের অজানা থাকবে না।
ফরিদ ভাই,
আপনার কথামত ‘এভু ডেভু’র বদলে ‘এভো ডেভো’ লিখলাম আর আগের পর্বে আপনার প্রশ্নটার উত্তর দেই নাই নিতান্তই আলসেমি করেই, এখন দিচ্ছিঃ
পরের প্রশ্নটার উত্তর আগে দেই… এত দ্রুত কই? প্রাণের উৎপত্তি ঘটে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি বছর আগে আর এই নিয়ন্ত্রক জিনগুলোকে আমরা ট্রেস করতে পারছি প্রায় ৫০ কোটি বছর আগ পর্যন্ত। মাঝখানে তো আরও প্রায় তিনশ’ কোটি বছর, খুব কম সময় কি?
এখন কারণ নিয়ে কথা বলি। ‘দৈব’ বলে কিছু তো আমার জানা নেই 🙂 , জীবের টিকে থাকার পিছনে নিশ্চয়ই এরা কিছু বাড়তি সুবিধা দিয়েছে, তাই হয়তো বিভিন্ন মিউটেশনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই বৈশিষ্ট্য বা জিনগুলো বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় টিকে গেছে। জীবের টিকে থাকার জন্য বেসিক কিছু কাজতো করতেই হবে আর এখন দেখা যাচ্ছে এই জিনগুলো সেই খুব বেসিক কাজগুলোই সম্পাদন করে। এগুলোর পরিবর্তন হলে জীবের দেহের কাঠামো বা খুব বেসিক শারীবৃত্তিক কাজে তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে। এই একই কারণে এদের মধ্যে মিউটেশনের হারও খুব কম, এই পর্বে এ নিয়ে কিছু আলোচনাও করেছি।
@বন্যা আহমেদ,
ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষা থেকে প্রমিত বাংলায় উত্তরণের জন্য সাধুবাদ। 🙂
লেখা যথারীতি সরল এবং উপভোগ্য হয়েছে। আমার মত বিজ্ঞানবিবর্জিত এবং বিবর্তনবিমুখ মানুষেরও পড়তে যখন কষ্ট হয় নি, তখন বাকিদের কাছেও উপাদেয় হবে বলেই আশা করছি।
এইবারও যথারীতি একটা বোকার মত প্রশ্ন করি। দয়া করে অট্টহাসি দিও না বা আমাকে সৃষ্টিবাদী মনে করো না (বাদী নিয়ে বাদানুবাদ করে বারবার গালি খাইতে ভাল লাগে না)।
অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের অবিশ্বাস্য বুদ্ধি নিয়ে আমি সমসময়ই আশ্চার্যান্বিত। একই সাথে পৃথিবীতে ঘুরলো ফিরলো সব প্রাণীরা, মাঝখান থেকে একটা উর্ধ্বলম্ফন দিয়ে একটা চলে গেলো অন্যগুলোর ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেমন যেন একটু রহস্যময়-রহস্যময় লাগে। আর্থার সি ক্লার্কের স্পেস অডিসি-র থিওরিকে বিশ্বাস করতে খুব বেশি মন চায়। 😛
তোমার এই লেখায় সেই জায়গাটাতে আলোকপাত করা হয়েছে। বোঝা গেলো যে, HAR1 sequence-ই হচ্ছে যত নষ্টের মূল অথবা মানুষের সৌভাগ্যের প্রতীক। কোটি কোটি বছর অলসভাবে ঘুমিয়ে যেই মানুষ আর শিম্পাঞ্জি পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হলো অমনি বিপুল বিক্রমে জেগে উঠলো মানুষের জিনোমে।
আমার আসলে প্রশ্ন একটা নয় মনে হয়, দুটো।
প্রথম হচ্ছে, যেখানে ত্রিশ কোটি বছর আগে আলাদা হয়ে যাওয়া মুরগির সাথে (শিম্পাঞ্জিকে চাচাতো ভাই মানতে তেমন একটা কষ্ট হয় না আমার, তবে মুরগিকে চাচাতো বোন মেনে নিতে কেমন যেন শরম শরম লাগছে, যদিও অনেক দূর সম্পর্কের বোন।) 🙁 শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের সাধারণ পূর্বপুরুষের HAR1 Sequence এ পার্থক্য মাত্র দুইটা, সেখানে মাত্র ছয় মিলিওন বছরে মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জির পার্থক্য হয়ে গেছে আঠারোটা। এই অবিশ্বাস্য দ্রুতগতির মিউটেশনের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ আছে কি? নাকি মানুষ ভাগ্যক্রমেই এই মিউটেশন পেয়ে গেছে? শিম্পাঞ্জি কেন এই সুবিধাটা প্রকৃতির কাছে থেকে পেলো না? এর কি কোন ব্যাখ্যা আছে?
দ্বিতীয়ত প্রশ্নটা অবশ্য ঠিক প্রশ্ন নয়, অনেকটা আশংকাই বলতে পারো। মানুষের ক্ষেত্রে যে অবিশ্বাস্যহারে মিউটেশন ঘটেছে, এই হার যদি একই থাকে বা আরো বেড়ে যায়, তবে কি আমরা আগামি পাঁচ-ছয় মিলিওন বছরে মানুষের থেকে বিবর্তিত অন্য কোন প্রজাতি পাবো? নিয়ান্ডারথাল আর আধুনিক মানুষের মত তারাও কি একই সময়ে এই পৃথিবীতে থাকবে? তারপর তাদের আক্রমণে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই আধুনিক মানুষেরা?
@ফরিদ আহমেদ,
:laugh:
@ফরিদ ভাই, আপনি তো দেখি একজন ইউনিভার্সাল ‘বাদী’ – পুরুষবাদী, আঞ্চলিকতাবাদী, সাম্প্রদায়িকতাবাদী, সৃষ্টিবাদী, হোমোস্যাপিয়েন্সবাদী – যেখানেও বৈষম্য সেখানেই আপনি! এ ধরণের মানুষ কি কি করতে সক্ষম তার লিষ্টটা তো আমরা জানিই… :laugh: ।
প্রথমেই আমার বাপের মাতৃভাষাকে হেয় পেতিপন্ন করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র পেত্তিবাদ জানাচ্ছি।
এই যে রহস্যময়-রহস্যময় লাগে বললেন, এইটাই তো ভাবতে পারতেন না যদি এই বিবর্তনটা না ঘটতো। যাক গিয়া, আসল কথায় আসি, আসলেই কি তেমন কোন উল্লম্ফণ ঘটেছে, আপনি যদি স্তন্যপায়ী এবং প্রাইমেটদের ধারাবাহিক বিকাশ দেখেন তাহলে কিন্তু দেখবেন যে বিবর্তনীয় টাইম স্কেলে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটছে বেশ কিছুদিন ধরেই। প্রাইমেটদের মস্তিষ্ক অন্যান্য প্রাণিদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশ বড়, তবে এটা ঠিক যে তাদের মধ্যে আমাদেরটা আরও বড়। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিয় বিবর্তনটা আসলে অনেক কিছুর সমন্বয়, বেশ কিছু ফেবারেবল জিনিস ঘটেছে প্রাইমেটদের এবং তারপরে আমাদের বিবর্তনের ইতিহাসে। যেমন ধরুন, আমাদের হাতের বা বুড়ো আঙ্গুলের পরিবর্তন, দ্বিপদী হয়ে ওঠা, সেই সাথে মস্তিষ্কের বিবর্তন ইত্যাদি। তার সাথে সাথে কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে আগুনের ব্যবহারসহ বেশ কিছু ক্রিটিকাল সাংষ্কৃতিক বিকাশ আমাদের বিবর্তনকে অকল্পনীয় গতিতে ত্বরান্বিত করেছে। আমাদের বিবর্তনটা তাই অনেক কিছুর সমন্বয়, একে মোজাইক ধরণের পরিবর্তনও বলা হয়। শুধু একটা বৈশিষ্ট্যের বিবর্তন দিয়ে একে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। এজন্যই ডারউইন যে বলেছে, আমাদের সাথে অন্যান্য প্রাণিদের বুদ্ধিমত্তার পার্থক্যটি আসলে মাত্রাগত, প্রকারগত নয়, এটা বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যতই দিন যাচ্ছে ততই বেশি করে মনে হয় আমরা সেটা বুঝতে পারছি।
আয় হায়, আমি কি তাই লিখেছি? তাহলে তো খুবই মুশকিল। হার১ অনেকগুলো ফ্যাক্টরের মধ্যে একটা হতে পারে, সে নিজে একাই একশ তা তো মনে হয় বলিনি। দেখুন আমি পরের প্যারায় বলেছি – ডঃ পোলার্ডের বের করা সর্বোচ্চ পরিবর্তনশীল অনুক্রমগুলোর আশে পাশে যে জিনগুলো রয়েছে তার মধ্যে অর্ধেকের বেশী জিনই আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ, গঠন এবং কাজের সাথে জড়িত। তা তে অবশ্য অবাক হওয়ারও কিছু নেই, শিম্পাঞ্জির সাথে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষের আলাদা হয়ে যাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩ গুণেরও বেশী, অন্যান্য প্রাইমেটদের তুলনায় মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনও ঘটেছে অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতিতে। তাই সর্বোচ্চ-পরিবর্তনশীল ডিএনএর অনুক্রমগুলোর লিষ্টে মস্তিষ্কের বিবর্তনের সাথে জড়িত জিন বা সুইচগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
আপনি যে হোমোসেপিয়েন্সবাদী (মানুষবাদী, হোমোবাদী??) সেটা তো আগেই বলেছি, শরমের কিছু নাই, সবাই এক জীবনে সব কিছুর উর্দ্ধে উঠতে পারে না। আমরা আপনার সব সীমাবদ্ধতাসহই আপনাকে আ্যক্সেপ্ট করে নিয়েছি, কি আর করা। দুঃখ একটাই, হার্মলেস একটা প্রাণীকেও ক্ষমা ঘেন্না করে মাফ করে দিতে পারলেন না, বেচারা একটা মুরগীর সাথেও বৈষম্য দেখাতে হল আপনার।
মিউটেশন তো সবসময়ই ঘটছে,সব জীবেই ঘটচ্ছে, কিন্তু কোনটা কোন পরিবেশে অন্যান্য বৈশিষ্ট্য এবং পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষিতে টিকে যাবে এবং একটা জীবকে টিকে থাকতে বাড়তি কোন সুবিধা দিবে সেটা বলা মুশকিল। আমি উপরে যে মোজাইক পরিবর্তনের কথা বলেছি সেটাও এখানে বিবেচ্য বিষয়। মিউটেশনটা ভাগ্যের ব্যাপার না এখানে, ভাগ্যের ব্যাপার হয়ত এই যে, আমরা সঠিক সময়ে পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা, মিউটেশন এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলোর একটা ফেভারেবল কম্বিনেশন হয়তো পেয়েছি। ( আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করলে ‘সঠিক’ না বলে দুর্ভাগ্যজনক বলবো, মস্তিষ্কের এই বিকাশ না ঘটলে আজকে আমার বিবর্তন নিয়ে এখানে অযথা বকবক করতে হত না, গাছের ডালে বসে মনের সুখে হয়তো লেজ দুলায় দুলায় পেয়ারা খেতে পারতাম )। বিভিন্ন ভেরিয়েবলের উপর নির্ভর করে বিবর্তন এভাবেই আগায়, কখনও দ্রুত, কখনও ধীরে, কখনও এক পা আগায় তো দুই পা পিছায়। আমাদের প্রজাতি আজকে টিকে গেছে দেখেই যে এর ভবিষ্যতেও টিকে থাকার কোন গ্যারান্টি আছে এমন কোন কথা নেই।
পরিবর্তন তো কম বেশী সব প্রজাতিরই ঘটছে, আর হ্যা এই বিলুপ্তি, টেক ওভার, পরিবর্তনের আশংকাগুলো সব প্রজাতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ( অনেক তার অনেক আগেও পেতে পারেন, ভুলে যাবেন না, আপনার এই রাজ্যজয়ী প্রজাতির বয়স মাত্র দুই লক্ষ বছর! শিম্পাঞ্জির সাথে আমাদের পূর্বপুরুষের ভাগ হয়ে যাওয়ার পর গত পাচ ছয় মিলিয়ন বছরেই তো ১৫-২০ ধরণের প্রজাতির সন্ধান পেয়েছি আমরা)। আপনি হোমোসেপিয়েন্সবাদী না হলে এত স্বার্থপরের মত শুধু নিজের প্রজাতির জন্য চিন্তা করতেন না। এখনো সময় আছে ফরিদ ভাই, আপনার প্রজাতির পুরুষদের মরটালিটি রেটের হিসেবে আরও কিছুদিন তো মনে হয় বাঁচবেন, ভালো হয়ে যাবেন কিনা চিন্তা করে দেখেন। হয়তো সেটা আপনার প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করতে পারে :lotpot:
(অফ টপিকঃ ফরিদ ভাই, অসম্ভব মজা পাইলাম আপনাকে উত্তরগুলা লিখে, আপনার এখন থেকে সব বাদ দিয়ে শুধু বিজ্ঞানের লেখা পড়া উচিত।)
@বন্যা আহমেদ,
মূল বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশ নেয়ার ক্ষমতা নাই বিধায় ভিন্ন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতাম চাই: বাপের মাতৃভাষাকে এক কথায় “ঠাকুরমাতৃভাষা” বলা যায় না? 😛