স্বাধীনতা সংগ্রামকে যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের পক্ষে এম আর আখতার মুকুলের অবদানের কথা ভুলে যাওয়া সহজ নয়।

স্বাধীন বাংলাদেশ বেতার মুক্তিযুদ্ধের প্রধান প্রচার মাধ্যম। দেশাত্মমূলক গান প্রচার ও মুক্তিযুদ্ধের খবর পরিবেশন করে স্বাধীনতায় বিরাট ভূমিকা রাখে। কিন্তু যে অনুষ্ঠানটির জন্য প্রতিটা দিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম তার নাম ছিল “চরম পত্র”। পাঠক এম আর মুকুল। পাকসেনা আর রাজাকারদের দিকে একরাশ ঘৃনা ছড়ানো বিকৃত কন্ঠে তিনি পড়তেন – “আইজ ভেড়ামারার কাছে আমাগো বিচ্চু পোলাপাইনরা এমুন মাইর দিচে, কমসে কম তেরজন পাকি সৈন্য প্যাঁকের মধ্যে পইড়্যা কাঁতরাইতাছে”। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে তিনি বিচ্চু বলতেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুতে স্বাভাবিক কারণেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময়ের দরকার হয়। গোটা দেশে মুক্তিযুদ্ধের অস্তিত্ব তখন স্তিমিত। পাকিস্তানীরা সেই সময়টা স্বাভাবিক অবস্থা দাবী করে। ১৩ই জুলাই আমি ঢাকা, দাউদকান্দি, ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট ও কুমিল্লা হয়ে আগরতলার সোনামুড়া যাওয়ার পথে পাকিস্তানীদের দাবীর যৌক্তিকতা লক্ষ্য করি। জরুরী অবস্থা। আর্মী ট্রাকে পাক সেনারা ঘুরে বেড়ায়। স্থানে স্থানে চেকপোস্ট। স্বাধীনতা সংগ্রাম বুঝি বা স্তব্ধ। এরকম হতাশাব্যাঞ্জক সময়ে চরম পত্রই দেশবাসীকে চাঙ্গা করে রেখেছিল। বর্ষা আগত। সারাদেশ জলমগ্ন হবে। পাকীরা সাঁতার জানেনা। বিচ্চুরা শুধু ওদের স্পীড বোট ফুটো করে দেবে। তারপরই কেল্লা ফতে। শত শত পাকসেনা ডুবে মারা পড়বে। চরমপত্রের এরকম কল্প কাহিনী হতাশার মাঝে নিয়ে আসত সাহস আর আশার আলো। মনে হত যুদ্ধ জয়ের বুঝি আর দেরী নেই।

চরম পত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের যেমনি শক্তি, সাহস, মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক ছিল, তেমনি বিপক্ষ শক্তিকে নিরোৎসাহ ও দূর্বল করে রাখত। চরম পত্র যুবকদেরকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রানিত করেছে। জয় সুনিশ্চিত জেনে অনেক বিপথগামী যুবক রাজাকারের দলে নাম লিখাতে বিরত থেকেছে।

এম আর মুকুল আমাদের মাঝে আর নেই। স্বাধীনতার দিনগুলোর কথা মনে হলেই তাঁর চরম পত্রের কথা মনে পড়ে। মনে হয় আমরা কি তাঁর যথাযোগ্য মূল্যায়ন করতে পেরেছি? তাঁর চরম পত্র গুলো কোথাও সংরক্ষিত আছে কিনা জানিনা। কেউ শেয়ার করলে ভাল হত। কিছু অডিও থাকলে ত সোনায় সোহাগা। নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধের আর একটি বিশেষ দিকের কথা জানতে পারত।