হুমায়ূন আজাদ ও তার বিশ্বাস

[অভিজিৎ রায়ের “স্মৃতিতে হুমায়ুন আজাদ” পড়েছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। আজকেও আবার পড়লাম। ভীষণ ভাবেই হুমায়ুন আজাদকে মনে পড়ছে। তাই পোষ্টটি দিলাম]
——————————————————————————-

প্রশ্নঃ আপনি আপনার অজস্র লেখায় ও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বেঁচে থাকার জন্য আপনার কোন ব্যাকুলতা নেই। আমি জানতে চাই, যখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিলেন তখন কি বেঁচে থাকার কাতরতায় কোন শক্তির কাছে প্রার্থনা করেননি?

উত্তরঃ না, না। কোন শক্তির কাছে আমি প্রার্থণা করিনি। এমনকি হসপিটালের চিকিৎসকরা আমার জ্ঞান ফেরার পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, স্যার – আল্লাহর রহমতে আবার আপনি ফিরে এসেছেন। আল্লাহ আপনাকে বাচিঁয়েছেন। আমি চুপ করে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। আমি তাদেরকে আহত করতে চাইনি। তারা শান্তি পাচ্ছে; তাদের বিশ্বাস থেকে তারা বলছে। আমি কিন্তু তাদের সাথে একমত হইনি। আমি চুপ করে থেকেছি। আমি একবারও কোন শক্তির কাছে বলিনি – আমাকে বাঁচাও বা তুমি বাঁচিয়ে তুলেছ। বরং আমার ছোট বোন যখন ডাক্তারদের মতই বলছিল, তখন আমি বলেছি – সে যদি আমাকে বাঁচিয়েই থাকে তাহলে আক্রমণের দরকার ছিল কেন? আমি তাকে বলেছি, এসব বাজে কথা বলো না। ওসব অলৌকিক শক্তিতে আমার কোন বিশ্বাস নেই। অত্যন্ত দক্ষ কয়েকজন খুনী মানুষ আমাকে আক্রমণ করেছে এবং আমাকে বাঁচিয়ে তুলেছে আমার দৈহিক শক্তি, মনোবল বা সাহসিকতা ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। এছাড়াও সিএমএইচ হসপিটালের চিকিৎসকদের অসামান্য দক্ষতা। আমি শুনেছি, পঞ্চাশজন চিকিৎসক আমাকে বাঁচানোর জন্য কাজ করেছেন। অতি আধুনিক যন্ত্রপাতি সেখানে যা রয়েছে, সেগুলো আমাকে বাঁচিয়েছে। কোন ঐশ্বরিক শক্তি আমাকে বাঁচায়নি।

তথ্যসূত্র: Open: All content is public

ড. হুমায়ুন আজাদের ‘আমার অবিশ্বাস’ বই থেকে একটি অংশ:

মৃত্যু হচ্ছে জীবনপ্রক্রিয়ার উল্টোনো অসম্ভব পরিসমাপ্তি। আর ফেরা নেই, আর অগ্রগতি নেই; চিরকালের জন্য থেমে যাওয়া। যে ছিলো সে আর সেই; আর সে নিশ্বাস নেয় না, তার শিরা আর কাঁপে না, আলো তাকে আর চকিত করে না, আঘাত তাকে আর ব্যথা দেয় না। আমি জানি, ভালো করেই জানি, কিছু অপেক্ষা করে নেই আমার জন্যে; কোনো বিস্মৃতির বিষণ্ন জলধারা, কোনো প্রেতলোক, কোনো পুনরুত্থান, কোনো বিচারক, কোনো স্বর্গ, কোনো নরক; আমি আছি, একদিন থাকবো না, মিশে যাবো, অপরিচিত হয়ে যাবো, জানবো না আমি ছিলাম। নিরর্থক সব পুণ্যশ্লোক, তাৎপর্যহীন প্রার্থনা, হাস্যকর উদ্ধত সমাধি; মৃত্যুর পর যে-কোনো জায়গাই আমি পড়ে থাকতে পারি,- জঙ্গলে, জলাভূমিতে, পথের পাশে, পাহাড়ের চূড়োয়, নদীতে।