১। প্রশ্নটি প্রথম তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন। গুমট গরমের পর বিকেলে এক ঝলক স্বস্তির বৃষ্টির সময় কাবেরী আপা মনে করিয়ে দেন শৈশবের সেই মায়াময় শিশুপাঠ:
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
নদেয় এলো বান
শিব ঠাকুরের বিয়ে হবে
তিন কন্যা দান।এক কন্যা রাঁধে-বাড়ে
আরেক কন্যা খায়
আরেক কন্যা গাল ফুলিয়ে
বাপের বাড়ি যায়।
এই শিশুপাঠে শিব ঠাকুরকে তিনটি কন্যা দান করার কথা বলা হচ্ছে, অর্থাৎ কি না তিন-তিনটি স্ত্রী! এর উপস্থাপনাটি এতোই নিরীহ যে, যেনো এটি ঠাকুর মশাইয়ের প্রাপ্য এবং এটিই স্বাভাবিক। আর কি বিস্ময়করভাবে প্রশ্নাতীত অবলীলায় সরল শিশু মনে স্থান করে নিচ্ছে এই নৈতিক অসঙ্গিতপূর্ণ ছড়াটি!
এ পর্যায়ে হাসান মূর্শেদ বলেন, ওই বিকেলেরই এক তাজা অভিজ্ঞতার কথাটি। বৃষ্টি-টৃষ্টি ধরে যাওয়ার পর ছোট্ট শিশুটিকে স্কুল থেকে বাড়িতে নিয়ে ফিরছিলেন তিনি। আনমনে আবৃত্তি করে ফেলেন, বৃস্টি পড়ে টাপুর-টুপুর।…
ছড়াটি ভালো করে শিশুটিকে শোনানোর পর তার প্রশ্ন ছিলো, বাবা, শিব ঠাকুর কি দুষ্টু লোক? নইলে তিনি তিনটি বিয়ে করবেন কেনো?
তবে এখানে বাঁচোয়া এই যে, আমাদের এই কিন্ডারগার্টেন পড়ুয়া চিপস জেনারেশন ঠিকঠাকভাবে ছড়াটির অসঙ্গতি ধরতে পেরেছে এবং সে চুপ করে না থেকে আধুনিক চিন্তার মানুষ বাবা মশাইকে প্রশ্ন করে হয়তো সঠিক উত্তরই পেয়েছে। কিন্তু এখানে চরিত্রটি খানিক বদল করে ফেললে কী হয়?
ধরা যাক, কোনো গণ্ড-গ্রামের শিশু ও স্বল্প শিক্ষিত বাবা। অথবা কোনো মফস্বলের সেমি- চিপস জেনারেশন ও স্বল্প শিক্ষিত বাবা। তাহলে ওই ছড়াটির পাঠ-প্রতিক্রিয়া বা মিথস্ক্রিয়া কী একই রকম হতো?
২। আমাদের শিশুতোষ পাঠে লক্ষিন্দরের লোহার বাসরে ঢুকে পড়া লাউডগা সাপের মতো প্রায় হুটহাট করে ঢুকে পড়ে বিয়ে নামক এক সামাজিক বন্ধন। এটি আবার একই সঙ্গে বাঙালি জীবনে এক স্বপ্নময় উৎসব এবং মোটাদাগে ছেলেদের স্ট্যাটাস এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েদের ক্যারিয়ার। এ প্রসঙ্গটি অবশ্য ভিন্নতর ক্ষেত্রে বিশদ আলোচনার দাবি রাখে; অতএব এটি একটি বাই লাইন। বরং শিশুতোষ পাঠে ফেরা যাক।
ছড়া ছড়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সরল শিশুমনে বিয়ের জটিল চিন্তা।…
চাঁদ উঠেছে, ফুল ফুটেছে,
কদম তলায় কে?
হাতি নাচে, ঘোড়া নাচে
খুকুমনির/ খোকা সোনার বিয়ে।
অথবা–
আইকম-বাইকম তাড়াতাড়ি
যদু মাস্টার শশুড় বাড়ি
রেল গাড়ি ঝমাঝম
পা পিছলে আলুর দম।…
এটি কেনো? এইসব পুরনো পাঠের আমলে বাল্য বিবাহ সিদ্ধ ছিলো বলেই কী? তাহলে ‘বাল্য বিবাহ আইনত দণ্ডনীয়’ এবং পরিবার-শাপলা মূদ্রার ঝকঝকে আমলে কেনো ও কীভাবে এইসব ঢুকে যায় আমাদের বাল্যশিক্ষায়?
আবার দেখুন প্রায় কিংবদন্তীর শিশু সাহিত্যিক রোকনুজ্জামান খানের (দাদা ভাই) শ্রেণী অবিচার:
বাক্ কুম পায়রা
মাথায় দিয়ে টায়রা
বউ সাজবে কাল কি?
চড়বে সোনার পালকি?পালকি চলে ভিন গাঁ-
ছয় বেহারার তিন পা।
পায়রা ডাকে বাকুম বাক্
তিন বেহারার মাথায় টাক।বাক্ বাকুম কুম্ বাক্ বাকুম
ছয় বেহারার নামলো ঘুম।
থামলো তাদের হুকুম হাঁক
পায়রা ডাকে বাকুম্ বাক্।ছয় বেহারা হুমড়ি খায়
পায়রা উড়ে কোথায় যায়?
৩। লক্ষনীয়, এই সব ছড়াকার ও শিশুপাঠ্যের রচয়িতাগণ সকলেই পুরুষ এবং সকলেই উগ্র পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা ছড়িয়ে দেন তাদের আপাত সরল লেখনিতে। বিষয়টি আরো পরে ব্যাখা করা যাবে।
এখন চট করে দেখে নেই আমাদের শিশুপাঠের আরো কিছু অসঙ্গতি।
স্বরে অ’তে অজগর, স্বরে আ’তে আম।
ঐ অজগর আসছে তেড়ে,
আমটি আমি খাবো পেড়ে।
শিশু বইয়ে একই সঙ্গে অজগরের তেড়ে আসার ভয়াল চিত্র ও রংচং-এ আমের লোভনীয় ছবি থাকার পরেও প্রশ্ন হচ্ছে, অজগর তেড়ে আসার সময় আমাদের কী আম খাওয়ার ইচ্ছে জাগে?
খুব জানতে ইচ্ছে করে, এই গুরুতর প্রশ্নটি কী বিদ্যাসাগর মশাইকে সে সময়ের ছোট-বড় কেউ করেছিলেন? করে থাকলে কী ছিলো তার জবাব?
অথবা–
নোটন নোটন পায়রাগুলি
ঝোটন বেঁধেছে,
ওপাড়েতে ছেলেমেয়েরা
নাইতে নেমেছে।দুই ধারে দুই রুই-কাতলা
ভেসে উঠেছে,
দাদুর হাতে কলম ছিলো
ছুঁড়ে মেরেছে,
উফ্, বড্ডো লেগেছে!
হুমম…কলম ছুঁড়েই রুই-কাতলা ঘায়েল? মামা বাড়ির আব্দার বুঝি? মামা বাড়ি নিয়েই বরং আরেকটি ছড়ার উদাহরণ দেওয়া যাক।
তাই তাই তাই,
মামা বাড়ি যাই,
মামা দিলো দুধ-ভাত,
পেট পুরে খাই।
মামী এলো লাঠি নিয়ে,
পালাই পালাই।…
মামা না হয় আব্দারের আশ্রয় মানলাম, মামী মানেই কী লাঠি হাতে তেড়ে আসা এক ভয়ংকর দজ্জাল মহিলা? যেমন, রূপকথা ও গল্পকথার বইয়ে সতীন মা’কে মহিলা ভিলেন সাজানো হয়, তার না হয় বেশ খানিকটা সামাজিক বাস্তবতা আছে মানলাম। কিন্তু তাই বলে মামা যখন ভাগ্নেকে দুধ-ভাত খেতে দিচ্ছেন আদর করে, তখন মামীর এই লাঠি হাতে তেড়ে আসা কেনো হে?
একটু আগেই ছড়া লেখকগণের যে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কথা বলা হচ্ছিলো, এখানে তো সেটিই স্পষ্ট। অবশ্য ছড়াকার পুরুষ না হয়ে নারী হলেই এর খুব বেশী হেরফের হয়তো হতো না।
বিষয়টি কী খানিকটা স্পষ্ট হয়, মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিসা রাইসের ইরাক যুদ্ধনীতিতে? কই, তিনি নারী, অর্থাৎ মায়ের জাত এবং কালো মানুষ, অর্থাৎ কয়েক হাজার বছরের নির্যাতীতর একজন বলে তো, ইরাক যুদ্ধনীতির প্রশ্নে সাধারণ নিরীহ গণমানুষ হত্যার আদেশে তার এতোটুকু হাত কাঁপেনি!
এখানে অবশ্য রাজনীতির কূটচালের কথা এসে যায়। এসে যায়, সেই ধাক্কা জাগানিয়া রাগ ইমনের প্রোফাইল কথনের অসারতা: আমার শাড়ি খুলে ফেললে, তোমার মা উলঙ্গ হন! সে সব অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। লেখার শুরুতে যে শিব ঠাকুরের বিয়ের কথা বলা হচ্ছিলো, এ সব সেই ‘ধান ভাঙতে শিবের গীতের’ মতোন।
৪। আলোচনার খাতিরে আমরা যদি ধরে নেই, ‘হামটি-ডামটি স্যাট অন আ ওয়াল’ বা ‘হাট্টিমা টিম টিম,তারা মাঠে পাড়ে ডিম’-এর মতো ওইসব শিশুতোষ পাঠ, একেকটি নন-সেন্স রাইম বা অর্থহীন ছড়া, তাহলেও বিপদ আছে। কেনো না এইসব লেখনি সত্যি সত্যি বেশ খানিকটা সেন্স তৈরি করে, শিশু মনে মনছবি আঁকে, তাঁকে একটি ম্যাসেজ দিতে চায়। …ম্যাসেজটি কী, এর গতি-প্রকৃতি ও দিক-দর্শন কী, সেটিই হচ্ছে ভাবনার বিষয়।…
এখনকার শিশুপাঠ্যে ‘সিংহ মামা, সিংহ মামা, করছে তুমি কী?/ এই দেখো না কেমন তোমার ছবি এঁকেছি’–এইসব নির্বিবাদী ও নিরীহ ছড়ার বাইরে আরো কী কী ভয়ংকর বিষয়-আশয় ঢুকে গেছে, সেটিও খতিয়ে দেখার দাবি রাখে বৈকি।…
—
ছবি: কোয়াহগ নিউজফাইভ ডটকম
আপনার এই লেখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । শিশু বয়সে এইসব ‘নির্দোষ’ জিনিষ পড়ে তাদের অজান্তেই মাথার ভিতর কিছু বিষয় আশয় ঢুকে পড়ে সারা জীবনের মত ! কেউ তা থেকে বেরুতে পারে, কেউ পারেনা । এ প্রসঙ্গে আমার একটি ইংরেজী রাইমের কথা মনে পড়ল । ছড়াটা পড়ে মেজাজ খুব খারাপ হয়েছিল, বাঁচ্চাদের সাথে বইটা পড়ার সময় সব সময়ই আমি এই ছড়াটা স্কিপ করে যেতাম ।
ছড়াটা তুলে দিচ্ছি, পড়ে দেখুন !
Goosey, goosey gander,
Whither shall I wander?
Upstairs and downstairs
And in my lady’s chamber.
There I met an old man
Who would not say his prayers,
I took him by his left leg
And threw him down the stairs.
এই ছড়া স্থান পেয়েছে বহুল প্রচলিত একটা ছড়ার বই ‘100 BEST-LOVED
NURSERY RHYMES’ এ । যে বই বাঁচ্চারা হরদম পড়ছে মজার কিছু নির্দোষ ছড়া হিসেবে !
@নন্দিনী, :-s
মাধ্যমিকের ব্যাকরণ বইয়ে পড়েছিলাম যে “সৎপাত্রে কন্যা দান কর” সম্প্রদান কারক হবে। এতই আপত্তিকর একটা কথা, ইচ্ছা করে ভুল উত্তর দাগিয়ে দিই!
@prithibi,
হুমম, “কন্যা দান”, “কৃতদার”। ওয়াক থু।
@রৌরব, 😛
@prithibi,
এখন থেকে একশ দশ বছর আগে সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকাতে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেই প্রবন্ধে তিনি বলেছিলেন,
সম্প্রদান কারকের উদাহরণের এই দুর্বলতার কারণেই মনে হয় কোন এক বাঙালি মহা প্রতিভাবান ব্যাকরণবিদের মনে হয়েছে যে, সৎপাত্রে কন্যা দান করলে এটা সম্প্রদান কারকই হবে। এখানে যে কন্যাকে একেবারে স্বত্ব ত্যাগ করে চিরকালের জন্য সৎপাত্রের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
🙁
@prithibi,
🙁
বিপ্লব রহমান,
লেখাটা কয়েকদিন আগে পড়লেও সময়াভাবে যা বলতে চেয়েছি পেড়ে উঠিনি। বিষয়টি নিঃসন্দেহে দারুন এবং আলোচনার দাবীদার। আমিও মনে করি শিশুপাঠ্যসূচী নির্ধারণ একটি জরুরী, জটীল এবং অতীব গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এই বিষয়টি যারা আমাদের দেশে দেখেন কিংবা নির্ধারণ করেন, তাঁদের মেধা নিয়ে কোন সংশয় না থাকলেও সংশ্লিষ্টদের মনন এবং মানসিকতা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। এমনিতেই আমরা আধুনীক জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী অধ্যুসিত দেশের নাগরিক। সেই সাথে চেতনা বিশ্বাসেও রয়েছে পশ্চাদপদতা। ইদানিং যুক্ত হয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামীর বিরক্তিকর তেজী ভাব। কি করে সেই পশ্চাদগামীতাকে দুই হাতে সরিয়ে সামনে এগুনো যাবে, নাগরিক সমাজের তথা বুদ্ধিজীবিদের আদৌ সে ব্যাপারে কোন নেতৃত্ত্বের সক্ষমতা আছে বলেও আমার সন্দেহ আছে। আর তা থাকবে নাই বা কেনো? এই শ্রেণীটিও তো আজ বিভ্রান্তির অতলে তলিয়েছে।
শিক্ষক সমাজের যে অংশটির অগ্রণী ভূমিকা নেবার কথা, সেই অংশটি আজ হয় অক্ষম প্রতিকূল পরিবেশে নতুবা হতাশ্বাসে নূব্জ্য। লোভ, লালসা, বিশৃঙ্খলা এবং একধরনের জোড় জবরদস্তি যেনো আমাদের সমাজের বাসিন্দাদের জন্যে অনিবার্য হয়ে উঠেছে। সুতরাং একটি প্রান্তিক নাগরিক ভব্যতা-সভ্যতার স্থায়ী আবহ প্রতিষ্ঠা জরুরী।
জনাব ফরিদের কালাশ্রয়ী সাহিত্য প্রসঙ্গের ব্যাপারে আমি একমত। কারন আমি মনে করিনা যে চেতনার বিকাশ রাতারাতি সম্ভব। এটি সমাজ প্রগতির ধারাবাহিকতারই অংশ। যুগে যুগে প্রগতির ধারায় সমাজ এগিয়েছে সেই সাথে সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশও ঘটেছে। সেই বিকশিত সাহিত্য এবং সংস্কৃতি সমাজকে প্রগতির পরবর্তী ধাপে ঠেলে দিয়েছে। কাজেই সমাজ প্রগতির বিকাশের ক্ষেত্রে সাহিত্য-সংস্কৃতির এই অনস্বীকার্য ভূমিকাকে এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই। কিন্তু এখানে এর কালক্রমিক উত্তরণের পর্যায় গুলোকে বিবেচনায় রাখা জরুরী। আরো একটি বিষয় এখানে প্রণিধান যোগ্য। তাহলো কালোত্তীর্ন সাহিত্য সমগ্র। জনাব ফরিদ বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন কি করে জানিনে। কারণ কিছু কিছু সৃষ্টি আমাদের বাংলা সাহিত্যে রয়েছে যা তার সমকালকে অতিক্রম করে উত্তরকালে পরিব্যপ্তি পেয়েছে। উপড়ে লেখকের এবং রৌরবের মন্তব্যে তা উৎসারিত। আমাদের সমস্যা হলো পাঠ্যপুস্তকের নির্ধারিত বিষয় গুলো যথাযথ যুগপোযোগী করার ব্যর্থতা। যেভাবে তা হওয়া উচিৎ সেভাবে তার বৈশিষ্ট্যগত উৎকর্ষতা আরোপের অভাব। প্রচলিত রীতিতে বিষয়টি অনেকটা রাজনৈতিক! আমরা এক আমলে দেখি তথাকথিত ধর্মীয় আদলে সেকেলে ধারনার ঝলকানি, আবার আরেক আমলে আধুনীকতা থেকে পশ্চাদপসরনের পাঁয়তারা! দুইই বিপজ্জ্বনক! আর এই সব টানাপোড়েনে আমজনতা নেহাতই বিভ্রান্ত!
রবি ঠাকুরের বীর পুরুষে অভিজিৎ রায় পুরুষতান্ত্রিকতার ছাঁয়া দেখতে পেলেও আমার তা দেখিনি। যেই যুগে বসে রবি জমিদারবাড়ির তৃতলের বেলকনী থেকে দিগন্তের ওপাড়ে দেখতে চেষ্টা করতেন সে সময় সাবওয়ে বা আধুনীক ট্রাম থাকলে সম্ভবতঃ এই ছড়াটির জন্ম হতো না! কারণ আমি আর মা-তো তখন একই সাথে একই কামড়ার যাত্রী হতাম! তাছাড়া বঙ্গের মায়েরা যে কোনকালেই ঘোড়সওয়ার হন নি তা বোধ হয় ঠিক নয়। আরো একটা ব্যাপার হলো, যে বয়েসে একটি শিশু ছড়াটি পড়ে, তখন সেতো শিশু, নারী কিংবা পুরুষ নয়! কাজেই ছড়াটির অভিব্যাক্তি শিশুমনে দোলাদেয়। শুরু হয় মায়ের প্রতি অকুন্ঠ ভালোবাসা আর স্বপ্নের রঙ ছড়ানোর পালা। শিশু মনের বিকাশে ছড়াটির ভূমিকা আজো যে অক্ষুন্ন এতে আমার কোন সন্দেহ নেই!
আসলে যে বিষয়টি আমাদের ভাবা উচিৎ, তাহলো পাঠ্যক্রমের যুগপোযোগীকরণ। আর একাজটি করতে যে আধুনীক প্রগতিশীল মন এবং সংস্কারমুক্ত দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গী দরকার, সেধরনের ধীশক্তি সম্পন্ন সমাজের আগ্রগন্যদের দ্বারা গঠিত একটি সংগঠনের নৈতিক অবস্হানগত যুক্তিভিত্তিক সিদ্ধান্তের আলোকে আমাদের পাঠ্যসূচী নির্ধারণ করা জরুরী।
@কেশব অধিকারী,
এ ক ম ত। (খুব খেয়াল করে।) :yes:
সাহিত্য সবসময়ই কালাশ্রয়ী হয়। নিজ কালকে অতিক্রম করার মত প্রাগ্রসর সাহিত্যিক বা সাহিত্য সব যুগেই সীমিত। ফলে, খুব স্বাভাবিকভাবেই সাহিত্যে সেই সমাজের ধ্যান-ধারণা জাঁক মেরে বসে থাকে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সাহিত্য যে মোটা দাগে পুরুষতান্ত্রিক ভাবনা-চিন্তাকে প্রতিফলিত করবে সেটাইতো স্বাভাবিক। বেশিরভাগ মানুষ ওতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারো লেখাতে সামান্য একটু অগ্রসর চিন্তাভাবনা থাকলেই, সমাজ রসাতলে গেলো বলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তোলে তারা। এ কারণেই গত শতাব্দীর প্রথম দুই তিন দশকে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে আনোয়ারা, মনোয়ারা, সালেহা বা গরীবের মেয়ে ধরনের চরম পুরুষবাদী তৃতীয় শ্রেণীর উপন্যাসগুলো।
শিশুরা যে ছড়াগুলো পড়ছে সেগুলোকেও তাদের কালের বিচারেই বিবেচনা করতে হবে। পঞ্চাশ বা একশো বছর আগের লেখা ছড়া যদি এখন শিশুকে শেখানো হয়, তবে শিশুতো সেই পঞ্চাশ বা একশো বছর আগের সমাজ ব্যবস্থার অপরিচিত রূপটাই দেখবে। শিশুদের মনে যেহেতু যে কোন কিছু দীর্ঘ এবং গভীর রেখা একে যায়, সেহেতু যারা শিশুর জন্যে ছড়া বা কবিতা বাছাই করছেন তাদেরকেই অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে পাঠ্য পুস্তকে সংযোজিত ছড়া বা কবিতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তবে, দুঃখজনক হচ্ছে যে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন সব স্থূল রুচির বেকুব ধরনের পশ্চাদপন্থি লোকজন বসে থাকে যে তারা ওইসব উদ্ভট ধরনের ছড়া কবিতাগুলোকেই অতি উন্নতমানের বিবেচনা করে গভীর ভালবেসে পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করে রাখে। যার দীর্ঘ জের টানতে হয় আমাদেরকে, আমাদের সমাজকে।
আমার বেশ মনে আছে যে, আমাদের ছাত্র বয়সে স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তক বোঝাই করা থাকতো রবীন্দ্রনাথের কোন ভাবালু কবিতা, জীবনানন্দের বাংলার রূপ বর্ণনাকারী কোন কবিতা, নজরুলের কোন ছন্দমিলের উচ্চ কোলাহলময় পদ্য বা ফররুখ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা, সুফিয়া কামাল, জসীমউদ্দিন বা বে-নজীর আহমদদের পদ্যাশ্রয়ী অকবিতা দিয়ে। বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, জীবনানন্দ দাশ, শামসুর রাহমান বা অমিয় চক্রবর্তীর মত অসাধারণ আধুনিক কবিরা যে অমিয় সব কবিতা লিখে রেখে গেছেন বাংলা সাহিত্যে, তার কোন খবরইতো আমরা জানতাম না।
@ফরিদ আহমেদ, “…পদ্যাশ্রয়ী অকবিতা দিয়ে” 😀 :rotfl:
বলেছেন ভাল। এর সাথে “মহাকবি” কায়কোবাদকেও যোগ করতে চাই।
@রৌরব,
“মহাকবি” কায়কোবাদ! 😕
@বিপ্লব রহমান,
“মহাশ্মশান” শীর্ষক “মহাকাব্য” লেখার জন্য বই পুস্তকে দেখতাম তাঁকে “মহাকবি” খেতাব দেয়া হত।
@রৌরব,
মহাকাব্য > মহাশ্মশান> মহাকবি > কায়কোবাদ 😛
@ফরিদ আহমেদ,
একমত।
বেশ খানিকটা দ্বিমত।
রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, নজরুল, ফররুখ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা, সুফিয়া কামাল, জসীমউদ্দিন– এদের কোনো বিকল্প নেই। চীরায়ত পাঠের দিক বিবেচনায় তাদেরকে পাঠ্যসূচিতেভূক্তি মনে হয় ঠিকই আছে। তবে তাদের কোন কবিতাটি বাছাই করা হচ্ছে, সেটিও ভেবে দেখা দরকার।
এর বাইরে বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, জীবনানন্দ দাশ, শামসুর রাহমান বা অমিয় চক্রবর্তীও যোগ করা যেতে পারে। এমন কি হাল আমলের লিটল ম্যাগাজিনের কোনো সম্ভাবনাময় কবিও। তবে সেটি হবে বিস্তারিত পাঠ।
আপনি যে আধুনিক কবির কথা বলছেন, জীবনানন্দ কিন্তু তাদেরই একজন।
উঁচু ক্লাসে কিন্তু সাহিত্য পড়ানোর সময় আলাওল থেকে শুরু করে শামসুর রাহমান পর্যন্ত পড়ানো হয়।
অন্যদিকে আমাদের শিশুপাঠে রবীন্দ্র-নজরুল স্থান করে আছেন বৈকি। এমন কি অভিজিৎদার ‘হাঁরে রে রে রে রে’সহ।
সংক্ষেপে, শুধু কবি বাছাই নয়, সঠিক কবিতা বাছাইও একটি গুরুতর বিষয়।।… :yes:
@বিপ্লব রহমান,
আপনার শেষ লাইনের সাথে একমত, কিন্তু ফরিদ আহমেদ কিন্তু জীবনানন্দ প্রসংগে ঠিক তাই বলতে চেয়েছেন বলে মনে হয় — বই-পুস্তকে জীবনানন্দের যেসব কবিতা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই “রূপসী বাংলা” থেকে নেয়া।
অন্যভাবে বলতে গেলে, লেখকদের লেখা বাছাই করা হয় কিভাবে তাদের domesticate করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে। “বেগম” রোকেয়া এর অন্যতম শিকার।
@রৌরব,
অনেক ধন্যবাদ।
কিন্তু…রূপসী বাংলা’য় আপত্তি? ঠিক বুঝলাম না। :-/
@বিপ্লব রহমান,
রূপসী বাংলা, গোলাম মোস্তফা, গীতাঞ্জলী — কিছুতেই আপত্তি নেই। কিন্তু সংগে আরো আধুনিক/আধুনিকতর/চ্যালেঞ্জিং কবিতা (একই বা ভিন্ন কবির) থাকলে ভাল হত।
@রৌরব,
ঠিক আছে। চলুক। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
ভ্রাতা,
হয়তো ঠিকমত বোঝাতে পারি নি আমি। আমারই ব্যর্থতা। ফলে আপনার বেশ খানিকটা দ্বিমত রয়ে গেছে। ঠিকমত ব্যাখ্যা করতে পারলে হয়তো বেশ খানিকটা দ্বিমতকে অল্প খানিকটা দ্বিমতে নামিয়ে আনতে পারতাম।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে বাতিল করে দেবার মোটেও পক্ষপাতি আমিও নই। যদিও নজরুলের বিষয়ে আমার তেমন কোন মায়াচ্ছন্ন মোহগ্রস্থতা নেই। অনেকের কাছে নজরুল অনেক কিছু হতে পারে তবে আমার কাছে নজরুল বাংলা সাহিত্যে মাঝারি মানের একজন কবির চেয়ে বেশি কিছু নয়। এটা সত্যি যে নজরুল তার আবির্ভাবেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল চারদিক। শিল্প-সাহিত্যে হিন্দুদের থেকে হাজারো মাইল পিছনে পড়ে থাকা মুসলমানদের জন্য বিরাট অনুপ্রেরণা এবং গর্ব হয়ে এসেছিলেন তিনি। তবে কথা হচ্ছে যে কবিতার শিল্পমানতো আর ওটা দিয়ে করা হয় না। করা হয় কবিতার মান বিবেচনা করে। সেই বিবেচনায় মাঝারির চেয়ে বেশি উঁচুতে বসাতে তাকে পারছি না বলে দুঃখিত।
এই দুইজন বাদ দিয়ে বাকি যাদের কথা বলেছিলাম তাদেরকে বাতিল করে দিতে বিন্দুমাত্রও বাধবে না আমার। সব যুগেই স্বল্প সংখ্যক সত্যিকারের মেধাবী সাহিত্যিকদের সাথে সাথে অসংখ্য পরিমানে অমেধাবী অসাহিত্যিক জন্ম নেয়। মজার বিষয় হচ্ছে এদের নিজেদেরও তাদের মেধাহীনতা নিয়ে কোন সংশয় থাকে না। ফলে, মেধার এই শুন্যতা তারা পুষিয়ে নেয় আত্মসম্মানকে বিকিয়ে দিয়ে রাষ্ট্র বা সমাজের সাথে সখ্যতা তৈরি করে। আর এই সখ্যতার সুযোগে মেধাবীদেরকে সরিয়ে দিয়ে সামনের সারি দখল করে নেয় তারা। এরা সাহিত্যের ভান্ডারে কোন কিছু্তো যোগ করেই না বরং অকাতরে তৈরি করে আবর্জনার স্তুপ। এই আবর্জনার স্তুপকে আর যাই হোক চিরায়ত সাহিত্য বলতে আমি রাজী নই কিছুতেই।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বা জীবনান্দের কবিতা যে ভুলভাবে বাছাই করা হয়েছে সেটাতো আমরা নিজেরাই দেখেছি। রবীন্দ্রনাথের কবিতা মানেই ছিল বিপদে মোরে রক্ষা করো ধরনের কোন কোমল প্রার্থনা সঙ্গীত, নজরুল বলতে ওই ক্ষেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই বা চল চল চল ধরনের হইহট্টগোলে পরিপূর্ণ কিছু পদ্য আর জীবনান্দ মানেই রূপসী বাংলার রূপ নিয়ে আকুতিভরা কবিতা। এরা যে অনেক উৎকৃষ্ট মানের কবিতাও লিখেছেন সেই ধারণাটা আমরা তখন করতে পারতাম না। কিন্তু বাকী যাদের কবিতা বাছাই করা হতো তাদের মান আসলে ওই মানেরই। ওর থেকে উন্নত মানের কোন কবিতা তাদের ছিলই না।
একটা জিনিস কী খেয়াল করেছেন কখনো? আমাদের পাঠ্যপুস্তকে যারা কবিতা বাছাই করে তারা কোন এক অজ্ঞাত কারণে কবিতার বদলে পদ্যকেই বেশি পছন্দ করে। পদ্যের প্রতি তাদের প্রবল পক্ষপাত নামকরণের ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান ছিল। বাংলা বইয়ে দুটো অংশ থাকতো। একটা গদ্য, আর একটা পদ্য অংশ। কবিতা বা কাব্য অংশ নয়, পদ্য অংশ।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনি বলেছেন:
আমি বলেছি:
এ ক্ষেত্রে আমাদের দুজনের মূল কথা একই। অর্থাৎ কোনোই বিতর্ক নেই। :rose:
আসলে কোন মানের ও মানসিকতার শিক্ষকরা কবি ও কবিতা/ পদ্য বাছাই করছেন — সেটিই এখানে মূখ্য।
যেমন, এই কিছুদিন আগেও জামাতী পোস্টারে নৌকা সাদৃশ্য টুপি পরা নজরুলের ছবিসহ পোস্টারে তাকে উদ্ধৃতি করে লেখা হয়েছিল:
কেনো? বিপ্লব ও দ্রোহের কবি তো এ কথাও বলেছিলেন:
আসলে দর্শনের দারিদ্র কিছুতেই পাঠ্যপুস্তক-রচয়িতাদের পিছু ছাড়ে না।… :deadrose:
@বিপ্লব রহমান,
একেই বলে কালের মধুর প্রতিশোধ। এদের পূর্বপুরুষেরাই একদিন নজরুলকে কাফের বলেছিল, আজকে তাদেরই উত্তরপুরুষ এ যুগের মোল্লা মৌলবিরা তাকে টুপি পরিয়ে বিরাট বড় মুসলমান বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এই সব মৌ-লোভী মৌলবিদেরকে নিয়েই নজরুল লিখেছিলেন,
@ফরিদ আহমেদ, :clap2:
চমৎকার এবং গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। অনেক ধন্যবাদ। আসলে ছোটবেলায় শেখা যে কোন ছোট ছোট কবিতাতেই লিঙ্গভেদের নানা পরিচয় পাওয়া যায়-
কিংবা এমনকি ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথের বীরপুরুষ কবিতাতেও –
পরিস্কার ইঙ্গিত যে, মা পাল্কিতে চড়ে দরজা একটু ফাঁক করে যাচ্ছেন,
আর তার বীরপুরুষ পুত্র যাচ্ছে ‘রাঙা ঘোরার’ পরে! তারপর —
মানে মা কেবল বিপদের সময়ে ভয়ে ভয়ে ঠাকুর দেবতার নাম জপ করছে, আর ছোট্ট বীরপুরুষ ছেলে অবলা নারীকে বলছে – ‘আমি আছি, ভয় কেন, মা, করো!’ 🙂
ছোটবেলায় এগুলোকে যথেষ্ট নির্দোষ ছড়া বা কবিতাই মনে হতো, এখন কেন যেন সেরকম লাগে না …। বয়সের দোষ মনে হয়। 🙂
@অভিজিৎ দা,
সত্য সত্যই এবং তা লুক্কায়িত হলেও। আমরাই অজান্তে ছোট ছেলেটির জন্য কিনি খেলনা পিস্তল, মেয়েটির জন্য পুতুল। অর্থাৎ শৈশবেই নির্ধারণ করে দেই আগামী দিনে সংসারের কর্তা ও গৃহকর্ত্রীর ভূমিকা। :yes:
একমত পোষন করছি।
@ব্রাইট স্মাইল্,
:yes:
যতদূর জানি, “নদেয় এলো বান” হবে।
লেখাটি খুবই ভাল লাগল। পুরুষতন্ত্র একটা সর্বব্যাপী রোগ।
@রৌরব,
সংশোধন করেছি। :yes:
কথা সত্য।লেখাটি ভাল হয়েছে। :yes: এর বাইরেও আর আছে লেখা পড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে।এই জাতীয় কথাও শিশু মনকে আঘাতহানে।
আর সিলেবাসটি যে মাইক্রোবাস,মিনিবাস বা দোতলাবাস এর চেয়ে কম যায়না, সেটিও শিশুদের শৈশব কেড়ে নেওয়ার জন্য যথাযথ।
কথাটি বেশ ভাল লেগেছে।যদিও আমরা তাদের চকলেট জেনারেশন বলি তবে চিপস জেনারেশন কথাটি ভাল লেগেছে 😀
@আনোয়ার রানা,
সত্যিই এখনকার বাচ্চাদের খেলার সময় খুব কম, পড়ার সময় বেশী। আর এখন তো আমাদের পাষানপুরীতে খেলার মাঠ নেই। না স্কুলে, না পাড়ায়। খেলা বলতে কম্পিউটার ও মোবাইলে ভয়ংকর সব কিলিং গেম! টিভির কার্টুনেও এলিয়েন অ্যাকশন! :brokenheart:
@বিপ্লব রহমান, খুব সত্য বলেছেন।শৈশব বলতে যেই এক ছবি চোখে ভেসে উঠে আজো , : সেই শৈশবটা যে কি আজকাল শিশুরা জানতেই পারছে নাহ।brokenheart:
@আনোয়ার রানা, :deadrose:
প্রয়োজন শিশু মনস্তত্ব অনুযায়ী তাদের জন্য রচনা করা।
এ কথা গুলো শিশু সাহিত্যিকরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই মঙ্গল!
আসলে বোর্ডের বই যারা নির্বাচন করেন তাদেরও এব্যাপারে ভাবতে হবে!
যুগটা হচ্ছে বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার।
এটা তাদের মাথায় রাখতে হবে।
ছোট্ট একটা দেশের বিশাল প্রজন্মকে যোগ্যতর করা ছাড়া আর কোন
বিকল্প নেই আমাদের!
ভাল লাগল!
@লাইজু নাহার,
চ র ম স হ ম ত।।
শুধু তাই নয়- এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করলে ৭০০০০ বছর দোজখের ভয়াবহ আগুনে পুড়তে হবে-ছেলেবেলায় শেখানো এসব ভয়াবহ শিক্ষার কথা মনে পড়লে এখন গা শিউরে ওঠে।
@মাসরুফ হোসেন,
তাই বুঝি? আমাদের জ্বালানি-বাবুরা করেটা কী? দোজখের ওই সুপার এনার্জির খানিকটা এনে এখানে বিদ্যুত সাপ্লাই দিতে পারে না? ছিক! 😀
আপনি তো শুধু ছড়া নিয়ে বললেন, ছোট্ট শিশুদের মনে যেভাবে সাম্প্রদায়িকতা পরিবার, স্কুল ও পঁচে যাওয়া সমাজ থেকে ঢেলে দেয়া হয় তার খবর কে রাখে? আমি ছোটবেলায় শিখেছিলাম, মুসলমানরা ছাড়া সবাই খারাপ, মরার পর দোজখে যাবে তাই আমার অমুসলিম বন্ধুদের সাথে মিশতে সবসময় একটা সংকোচ কাজ করত। এমনকি রবীন্দ্রনাথ সহ অন্যান্য অমুসলিম লেখকদের লেখা পড়তে আমার কেমন যেন অন্য রকম লাগত।
ধর্ম বিশ্বাস হারানোর কিছুদিন পরে আমি আমার কিছু আমুসলিম বন্ধুদের নিয়ে সারা রাত আড্ডা দিলাম, একসাথে খাওয়া দাওয়া করলাম, তার পর গাদাগাদি করে ঘুমালাম একবারো সাম্প্রদায়িক চিন্তা আসে নি(আসার কথাও না)ভেবে আমি আবেগে প্রায় কেঁদে ফেললাম।
:yes:
@একা,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। 🙂
@সৈকত চৌধুরী,
আমি ছড়াকে কেন্দ্র করেই শিশুপাঠের অসঙ্গতি খানিকটা বয়ান করেছি মাত্র। আর আপনি যে সাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলছেন, সত্যিই তা পীড়াদায়ক। শিশু পাঠে তো বটেই, এমন কী পারিবারিক শিশু শিক্ষায় বাচ্চাদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় অমনি সব সাম্প্রদায়িকতার বীজ।
এ মুহূর্তে মনে পড়ছে, ছোটবেলার সেই ‘জনপ্রিয় ছড়া’:
বুঝুন অবস্থা! 😛
@সৈকত চৌধুরী,
ছোট বেলায় আমরাও বিধর্মী সহপাঠীদের নিয়ে নানান নিষ্ঠুর রংগ রসিকতা করতাম। প্রায়ই খোঁটা দিতাম তারা কাছিম খায় এসব বলে। বেচারাদের অবস্থা ছিল অনেকটা অঘোষিত একঘরে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পরেও তাদের সাথে সবসময়ই একটা বিভাজনের রেখা থাকত।
ছেলেবেলায় আমাদের একটা খেলা ছিল লাল পিপড়া মারা, কারন লাল পিপড়া হল হিন্দু পিপড়া, কালো পিপড়ারা ছিল মুসলমান পিপড়া। অথচ এসব কাজকারবার করতে কেউ আমাদের সচেতনভাবে শেখায়নি। তবে শিশুরা মনে হয় পরিবেশের আবেশ ধরতে পারে ভাল।
@আদিল মাহমুদ,
হিন্দু পিঁপড়া! মুসলমান পিঁপড়া! 🙁
অভিনন্দন বিপ্লব দা !
শিশু-সাহিত্যে আপনার সূঁই হয়ে ওঠা দৃষ্টিটাকে বহাল রেখে এবার ফাল বানাতে থাকবেন, এই কামনা রইলো।
এরকম বহু অনাচার নিয়ে আমি সেই অঙ্গনে লেখালেখি করে তো লিখিয়েদের কাছে রীতিমতো ভয়ঙ্কর শত্রু হয়ে উঠেছি ! এবার আপনাকে সঙ্গি হিসেবে পেয়ে ভালো লাগছে।
@রণো দা,
আমি শিশু সাহিত্যিক নই, এমন কি নিজেকে লেখক বলতেও কুণ্ঠিত হই; নিতান্তই এক সংবাদকর্মী মাত্র।
কিন্তু শিশু সাহিত্যে আপনার অবদান আমি জানি। আপনিই বলুন, যুগের পর যুগ এমন সব অসঙ্গতি সত্যিই কী মেনে নেওয়া যায়? 😕