দুটো তীর্থস্থান ভ্রমনের পরিকল্পনা ছিল ২০০৮ এর ডিসেম্বর মাসে। স্থান গুলোর নাম উচ্চারণ করাটা বেশী বেশী মনে হবে। কারন এগুলো এখনও তীর্থস্থানের পর্যায়ে পড়েনা। কারো জীবদ্দশায় তাঁর জন্মস্থান তীর্থকেন্দ্র হয়না। লালন শাহের সমসাময়িক কেউ কি ভেবেছিল তাঁর সমাধিস্থল একদিন তীর্থস্থান হবে? বেগম রোকেয়াও একদিন উপেক্ষিত-অবহেলিত ছিলেন। তাঁকেও কিছুনা কিছু সামাজিক বাধাবন্ধন অতিক্রম করতে হয়েছে। আজ তাঁকে একজন মহীয়ষী মহিলা হিসেবে শ্রদ্ধা করা হয়। তাঁর লেখা স্কুল-কলেজে পড়ানো হয়। তাঁকে নিয়ে গবেষনা হয়। এখন তাঁর সময়ের পৃষ্ঠপোষকরা বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন – ‘বিলম্বে হলেও সুমতি হয়েছে তাহলে…।’
বরিশালের লামচরি যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মস্থান। তিনি একাধিক বিষয়ে পন্ডিত ছিলেন। কিন্তু সবিনয়ে নিজেকে একজন কৃষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেশী স্বচ্ছন্দ অনুভব করতেন। এবারে যেতে পারিনি। অত্যন্ত সাহসী এই মহান ব্যক্তিটি যে জায়গা দিয়ে একসময় হাটাচলা করেছেন, সেই জায়গাটির আলো-বাতাস-গন্ধ অনুভব করতে পারব আমার পরবর্তী সফরে। মুক্তমনার একটি বিশেষ অবদান ই-বই, প্রকৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানীদের মুক্তচিন্তা ও যুক্তিনির্ভর সঙ্কলন – “বিজ্ঞান ও ধর্মঃ সংঘাত নাকি সমন্বয়?” ভাবতে পারিনা – লামচরি গ্রামের একজন কৃষক প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে কিভাবে বললেন, “ধর্মজগতে এরূপ কতগুলি নীতি, প্রথা, সংস্কার ইত্যাদি এবং ঘটনার বিবরণ প্রচলিত আছে, যাহা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নহে, এবং ওগুলি দর্শন ও বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ নহে এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিপরীতও বটে।” তিনি কল্পনাতীত দূরদর্শী ছিলেন। তাঁর তিনটি বইয়ের উতসর্গে লিখে গেছেন, “মুক্তচিন্তা চর্চা ও প্রসারে উতসাহী এবং যুক্তিপ্রবণ পাঠকের উদ্দেশে।” একজন কৃষক কারও বিদ্যা ধার না করে যা ভাবতে পেরেছেন, এত বছর পরেও সামান্য সংখ্যক শিক্ষিত লোকই তা ভাবতে পারছেন। ১৮৬ পৃষ্ঠা লম্বা “সৃষ্টি রহস্য” তাঁর একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি। অত্যন্ত সহজ ভাষায় বিবর্তনবাদ বুঝতে গেলে, আরজ আলী মাতুব্বরের “সৃষ্টি রহস্য” পাঠের বিকল্প নেই। যাদের মগজ কোন বিশেষ মতবাদের বেস্টনীতে আটকা পড়ে আছে তাদের জন্য “সৃষ্টি রহস্য” অবশ্য পঠনীয়। মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদীদের জীবনের ঝুকি আসে। মাতুব্বর সাহেবেরও হাজতবাস হয়েছে। হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের দুর্বল বিষয় গুলো তুলে ধরাতে জনতা নাখোশ হয়েছে। হিন্দুরা মেনে নিলেও সব মুসলমানরা মানতে পারেনি। চুয়াত্তুরের কোন এক সময় মাদ্রাসার ছাত্র দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে (আরজ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্র – ৩, পৃষ্ঠা ১৪-২১)।
একদিন হয়তো ঢাকার রমনা পার্কের নাম আবার পরিবর্তন হবে। নাম হবে আরজ আলী উদ্যান। হবে একদিন। আমি দেখে যেতে পারব না।
আজকে মুক্তমনা মুক্তবুদ্ধি চর্চার অগ্রপথিক। আরজ আলী মাতুব্বরের জন্ম ও মৃত্যু তিথিতে তাঁকে নিয়ে বিশেষ সংকলন বের করলে মুক্তমনার হাত আরও শক্তিশালী হবে বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশে বেগম রোকেয়ার পর দ্বিতীয় মহিয়সী মহিলা তসলিমা নাসরিণ। তিনি হাজত বাস করেননি। তবে মাথায় মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে অহর্নিশি দিন কাটাচ্ছেন। “নির্বাচিত কলাম” লিখে প্রচুর সুনাম অর্জন করেছিলেন। মুসলিম নারীদের বৈষম্যের কারণ খুজতে গিয়ে কোরানের আয়াত টুকতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন।
ডিসেম্বর ৬, ১৯৯২। হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভাংগল ভারতে। বাংলাদেশে মুসলমানরা বাংলাদেশী হিন্দুদের উপর অমানবিক অত্যাচার শুরু করল। উদোর পিন্ডি গিয়ে পড়ল বুদোর ঘাড়ে। তসলিমা নাসরিণ চুপ থাকতে পারলেন না। সেই দৃশ্যগুলো অবিকল বর্ননা করলেন “লজ্জা” নামক বইতে। মুসলমান হয়ে অমুসলমানের পক্ষে কথা বলা তো বরদাস্ত করা যায় না! নারীর সমান অধিকার কোরান দেয়নি সেটা কে তোকে খুঁচিয়ে বের করতে বলেছে? হাবিবুর রহমান তসলিমা নাসরিণের মাথায় পঞ্চাশ হাজার ডলার বসিয়ে দিল। রাতারাতি তাঁর সমস্ত লেখা গুলো অখাদ্য হয়ে গেল। এটা হল সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
এক মা তাঁর মেয়ের জন্মদিনে “নির্বাচিত কলাম” উপহার দিয়েছিলেন। সেই মেয়েটি আগ্রহভরে আমাকে বইটি পড়তে দেয়। অনেকদিন পরে তার তার বাড়িতে গিয়ে দেখি তার বুক শেলফে বইটি নেই। নেই কেন? “ওটি” এখন আর পড়ার যোগ্য বই নয়। লেখিকা পঁচা, তার লেখাও পঁচা। মা তাকে একটি পঁচা বই উপহার দিয়েছিলেন!
বাইশ বছর ময়মনসিংহে কাটিয়েছি। কিন্তু অবকাশ চোখে পড়েনি। আমেরিকাতে বসে তসলিমা নাসরিণের স্মৃতিচারণ পড়তে পড়তে মনে মনে ময়মনসিংহের কত অলিগলি ঘুরেছি। কোথাও খুজে পাইনি। শেষ পর্যন্ত ৩১শে ডিসেম্বর ২০০৮ “অবকাশ” খুজে পেলাম। অবাক! এই বাডীটির সামনে দিয়ে সপ্তাহে অন্তত একবার করে হেটে গেছি ১৯৭৬ সনে। তসলিমা নাসরিণ তখনো বিখ্যাত হননি। তাই অন্য দশটা বাড়ীর নামের মত এটিও চোখে পড়েনি।
বাংলাদেশ ও ভারতে রাতের আঁধারে খোলা আকাশের ছবি তুললেও বিপদ। কেউ না কেউ এসে বলবে – এখানে ছবি তোলা নিষেধ, আপনি জানেন না? অবকাশের ছবি তুলতে পারব কিনা তা নিয়ে আমি অনিশ্চিত ছিলাম। আমার সহায়ক ছিলেন সিটি কলেজিয়েট স্কুলের অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক শচীন আইচ। বাড়িটি দেখানোর সাথে সাথেই কেউ দেখে ফেলার আগেই দুরু দুরু বক্ষে নাসরিণের প্রিয় নারিকেল গাছ ঘেরা বাড়ীটির কয়েকটি ছবি তুলে ফেললাম।
শুভ তসলিমা নাসরিণের ভাইপো, অত্যন্ত প্রিয়। আমদেরকে লিভিং রূমে নিয়ে গেল। ফুপুর স্মৃতি জড়ানো জিনিষপত্র ঘুরে ঘুরে দেখালো। আবেগে অনেক কথাই বলল (ভিডিও ক্লিপ সংযোজন করা গেল না)। ২৬সে ডিসেম্বর ২০০৮ ছোট্ট শুভ বিয়ে করল, কিন্তু আদরের ফুপু নেই।
অবকাশ। প্রতিটি নারকেল গাছ তসলিমার এক একটি কবিতা।
২৬শে ডিসেম্বর ২০০৮। শুভর বিয়ে। ৩১শে ডিসেম্বরেও অবকাশ বৈদ্যুতিক আলোকমালায় আলোকিত।
অবকাশের সামনে শুভ
ফুপিদের সাথে বাবার ছবি
শুভ ও নব বধু সীমরণ।
নৃপেন্দ্র সরকার, ৮ই জানুয়ারী ২০১০
“ব্যাক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় তসলিমা নারী আন্দোলনের মূল ধারাকে বরংচ ক্ষতিগ্রস্থই করেছেন। আমার মনে হয় তসলিমার টাইমিংটি সঠিক হয়নি। বেগম রোকেয়া এক্ষেত্র ব্যাতিক্রম। তিনি তার সময়-বাস্তবতাকে সঠিক ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তার সাথে মিলিয়ে সামর্থের সর্বোচ্চ ব্যাবহার করেছেন। বেগম রোকেয়া বিপ্লবী ছিলেনা না কিন্তু যে আন্দলনের গোড়াপত্তন করেছিলেন তা আজও চলমান। এখানেই তার স্বার্থকতা”।
শামীম,
আপনার কথাগুলো আমার সঠিক মনে হয়েছে।তবে তসলিমা বাংলাদেশের রক্ষনশীল সমাজের শেকড়কে অনেকটা দূরবল করেছেন।ইতিহাসে এ জন্য তসলিমার স্থান হবে।তবে ব্যাক্তিগত ভাবে চাই বাংলাদেশ সরকার তার দেশে ফেরার ব্যবস্থা করুক। সাথে দাউদ হায়দারেরও।
@লাইজু নাহার,
মূলধারাকে ক্ষতিগ্রস্থ নয়, বরং বেগবান করেছেন বলেই আমার মনে হয়।
বেগম রোকেয়ার প্রেক্ষিত ভিন্ন ছিল, যেমনঃ
১) সাবধানে বলেছেন
২) ধর্ম কর্ম করে নিজেকে মানুষের রোষানলমুক্ত রেখেছেন
৩) তখনকার মানুষের যে সহিষ্ণুতা ছিল এখন তা নেই। এখন ডেনমার্কে কেউ কিছু বললে সারাদুনিয়া কেঁপে উঠে।
মুক্তমনা থেকে তোলা বেগম রোকেয়ার মারাত্মক উদ্বৃতিটি নীচে দেখুন
নাসরিণ একই কথা বলেছেন কিন্তু গ্রন্থগুলির নাম বলে ভুল করেছেন।
বেগম রোকেয়ার “সুলতানার স্বপ্ন” ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তকে দেখেছি। উপরের উদ্বৃতিটি কোন পাঠ্যপুস্তকে দেখিনি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
“বেগম রোকেয়ার “সুলতানার স্বপ্ন” ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তকে দেখেছি। উপরের উদ্বৃতিটি কোন পাঠ্যপুস্তকে দেখিনি।”
– মজার ব্যাপার হল আমিও তেমন কিছু কোনদিন কোথাও দেখিনি। বেগম রোকেয়ার জীবনে পড়েছি, তিনি সমাজ সংস্কারক বলে খ্যাতিমান জেনেছি। তবে দেশে মনে হয় না কোথাও পড়েছি যে তিনি প্রথাগত ধর্মবিরোধী কোন কথাবার্তা বলেছেন বলে। এ দিকটা মনে হয় সযত্নে চেপে যাওয়া হয়।
সত্যের সাথে আপোষ করে কিছু হয় না। হতে পারে না। ছাগলকে ছাগল, পাগলকে পাগল বলতেই হবে। পচা মাছকে শাক দিয়ে ঢাকা যায় না। ধর্মগুলো হচ্ছে পচা মাছ। কেও পচামাছ খেলে, আমার আপত্তি নেই-শুধু আমার সামনে না নিয়ে আসলেই হল। সামনে নিয়ে আসলে তাকে জানাতে হবে তার পচা মাছ খাওয়ার জন্যে গন্ধ ছড়াচ্ছে। কেও বাড়িতে ধর্ম পালন করলে আমার আপত্তি নেই-বাইরে এসব করলে, আমি সরাসরি বলে দিই এসব পচা জিনিস আমার পছন্দ না। এসব দুর্গন্ধের আবর্জনা।
@বিপ্লব পাল,
আমারও একই কথা। তবে-
আমি বলবো, তোমার ঘরে বসে পচা মাছ খাও কিন্তু পচা মাছের গন্ধে বায়ূ দূষিত করা হলেও আমার আপত্তি আছে। যেমন, দিনে পাঁচবার চতুর্দিক থেকে বিকট চিৎকারে মাইকে আজান।
@আকাশ মালিক,
দিনে পাঁচবার মাইকে আজান দিয়ে শুধু নিজেরা সওয়াব হাসিল করছেন তাইনা যাদের কর্ণকুহরে এই বিকট শব্দ প্রবেশ করছে তারাও এই সওয়াবের ভাগীদার হচ্ছেন। শুধু তাইনা, মাইকের সাথে উচু মীনার যোগ করে শব্দ একগুনের জায়গায় দশগুন করে সওয়াবের পরিমান একশগুন বাড়ানো যায় কিনা তারও চিন্তা-ভাবনা চলছে।
@আকাশ মালিক,
বিদেশ বিভূইয়ে দিনে ৫ বার আজান শোনেন কি করে? মানুষে কমপ্লেন দেয় না?
@আদিল মাহমুদ,
দূর ছাই, কথা হচ্ছিল পচা মাছের সৌখিনদের নিয়ে। তবে ইংল্যান্ডের কথা যখন তোললেন শুনুন, আজ থেকে তিন দশক আগে এ দেশে চার্চের ঘণ্ঠার আওয়াজে ঘুম হারাম হয়ে যেতো। এখনকার প্রজন্ম জানেইনা চার্চে একসময় ঘণ্ঠা থাকতো। বেশীরভাগ চার্চগুলো এখন হয় মানবশুন্য কবুতরের উপাসনালয়, না হয় মসজিদ, ইসলামী সেন্টার। আল্লাহর অসীম কৃপায় প্রায় ঘরেই ট্রান্সমিটার লাগানো হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে স্পীকার বাহিরেও যাবে ইনশাল্লাহ। যাদের ঘরে বা পরিবারে উচ্চকণ্ঠে কথা বলার অভ্যেস নেই, ট্রান্সমিটারে আজান যারা শুনে অভ্যস্ত নয়, তাদের কানে এ আওয়াজ যে কত কর্কশ বিশ্রী শুনায় তা না শুনলে বুঝবেন না।
সময়-বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে তার সাথে তাল মিলিয়ে চললে অনেক সময় বাস্তবতার সাথে আপোষ করেই চলতে হয়, তাতে আরাধ্য জিনিষটি অর্জনের সম্ভাবনা ক্ষীন হয়ে দাড়ায়। এই আপোষ করে চলতে চলতে বাংলদেশে মেয়েদের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি বলেই আমার বিশ্বাস।
বিশুদ্ধ সাহিত্যিক অনেকেই আছেন, কিন্তু খাঁটি, সৎ সংগ্রামী লোকের বড়ই অভাব।
@ব্রাইট স্মাইল্,
একমত। তবে “বিশুদ্ধ” কথাটি নিয়ে আমার দ্বন্দ্ব আছে। অনেক কবিদের কবিতায় ব্যক্তি স্বার্থের জন্য তৈল মর্দন বা মাত্রাতিরিক্ত বন্দনার সুর লক্ষ্যনীয়।
তসলীমার সাহিত্য প্রতিভাঃ
এখানে তসলীমা সাহিত্য প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমার পালটা প্রশ্ন বাংলা গদ্য সাহিত্যে এই মুহুর্তে ke আন্তর্জাতিক মানের? রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের গদ্য সাহিত্য আর কে বাংলাকে দিয়েছে? মানিক, বিভূতি, মহেশ্বতাদেবী,সমরেশ বসু-এরা বেশ ভাল, কিন্ত আন্তর্জাতিক সেরা সাহিত্যের মানে, তেমন কিছু নন। বর্তমানে যারা লেখক-সুনীল, সমরেশ মজুমদার -এদের লেখাতে কোন গভীরতাও নেই, ভাষাও দুর্বল। বাংলাদেশের দিকের সাহিত্য আমি পড়িনি-তাই মন্তব্য থেকে বিরত থাকলাম।
বাংলায় পেশাদার সাহিত্যিক তৈরী হয় না-সবাই লিখতে লিখতে ওঠে। আমেরিকাতে
“ক্রিয়েটিভ রাইটিং” একটা সাবজেক্ট। এখানকার লেখকদের ফর্মাল ট্রেনিং আছে।
ফলে তাদের লেখার মান এবং গদ্য সাহিত্যের ভাষা অনেক ভাল। এটা ত বাংলা সাহিত্যে চালু নেই। ফলে আমরা মনে করি আমাদের সাহিত্য দারুনকিছু-বাস্তবে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া গদ্য সাহিত্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা কাওকেই পেলাম না।
কবিতা নিয়েও কিছু লিখব না। কারন বুঝি কম।
@বিপ্লব পাল,
সাহিত্যের ক্ষেত্রে এক ভাষার সাহিত্যের সাথে কি আরেক ভাষার সাহিত্যের তূলনা আসলে করা চলে? আমার মনে হয় এটা ফেয়ার না।
আমি প্রফেশনাল সাহিত্য সমালোচক নই, তবে তসলিমার নারীবাদী ও ধর্মবিরোধী লেখা ছাড়া সাধারন গল্প উপন্যাসগুলি অতি সাধারন মানেরই মনে হয়েছে। অবশ্য গত বছর ৬/৭ এর মধ্যে আর কিছু পড়িনি। আমার তো মনে হয় বিশুদ্ধ সাহিত্যিক হিসেবে ওনার থেকে ভাল লেখক এই মুক্তমনাতেই একাধিক আছে। কবিতা বুঝি না বলে কিছু বলছি না তবে অভিজিতের সার্টিফিকেটের উপর আস্থা আছে।
তবে ওনাকে শেক্সপিয়ার রবীন্দ্রনাথের শ্রেনীর সাহিত্যিক হতে হবে এমন কোন কথা নেই। জগত ওনাকে মনে রাখবে নারীবাদি লেখার কারনে।
@আদিল মাহমুদ,
উন্নত সাহিত্য সার্বজনীন। স্থান কালকে ভেদ করা উচ্চতর সাহিত্যের ধর্ম। সেই জন্যে কমপারেটিভ লিটারেচার বা তুলনামূলক সাহিত্য বলে একটা সাবজেক্ট আছে। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ১৯ বছর বয়সেও সাহিত্য কিছুই বুঝতাম না। ভালোও লাগত না। প্রথম চেকভ পড়লাম-লেখার সাথে নিজের আত্মার যোগ পেলাম। এরপর থেকে আমি পড়াশোনা ফেলে দীর্ঘ এক দশক বিশ্বসাহিত্যের চর্চা করেছি। চেকভকে আমার যত নিজের মনে হয়-কোন বাঙালী লেখকের লেখাকেও অত কাছের মনে হয় না। এটাই উন্নত সাহিত্যের গুন।
@বিপ্লব পাল,
এরকম শুনেছি, তবে ঠিক মানতে পারি না।
“ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ১৯ বছর বয়সেও সাহিত্য কিছুই বুঝতাম না।”
আমি আসলে তার ডবল বয়সে এসেও মনে হয় কিছুই বুঝি না।
আপনি নিশ্চয়ই রাশিয়ান ভাষা শিখে চেখভের বই পড়েননি। পড়েছেন হয় বাংলা না হয় ইংরেজী অনুবাদ। কাজেই মূল সাহিত্যরস কি আপনি পেয়েছেন বলা যায়? আমার তো মনে হয় না। অনুবাদ করা বই পড়লে মূল ভাষার অলংকরন কি অনেকটাই হারিয়ে যায় না? কখনো কখনো অবশ্য অনুবাদের জোরে উল্টাটাও হতে পারে।
আমি একই ভিন দেশী ভাষার ভিন্ন ভিন্ন লেখকের অনুবাদ পড়েছি, তাতে ভিন্ন ভিন্ন অনুভুতি হয়েছে। আমার মনে হয়েছে যে অনুবাদে কাহিনীটা জানা যায়, কিন্তু ভাষার সূক্ষ্ম কারুকাজ জানতে মূল ভাষায় পড়া ছাড়া উপায় নেই।
:yes: :yes:
বেগম রোকেয়ার থেকে আমি তসলিমাকে অনেক এগিয়ে রাখব। বেগম রোকেয়ার যে কাজটা করেছেন সেটা হচ্ছে পুরুষতন্ত্রে মেয়েদের গৃহপালিত গাভীর অবস্থানটি মেনে নিয়ে-সেই গাভীটি যাতে বিদ্রোহ না করে দুধ দেয়-তারজন্যে গাভীটির উন্নত পরিচর্যা। ঠিক এই কারনে উনি পুরুষতন্ত্রের উন্নত সেবাদাস হিসাব স্বীকৃত এবং পুরস্কৃত। এবং ধার্মিক নারীবাদি নামে সোনারপাথর বাটির ট্রাডিশনে অগ্রগণ্য। এতে ইসলামে, বাংলাদেশে মেয়েদের অবস্থানের কোন উন্নতি হয় নি। বরং মেয়েদের অবস্থানের আরো অবনতি হয়েছে। সুতরাং পুরুষতন্ত্রকে স্বীকার করে গ্লোরিফাই করা ছাড়া বেগম রোকেয়ার অবদানটা কি?
তার থেকে তসলিমা আসল সত্যটা বলতে পেরছেন। সেটা হচ্ছে যৌনতার ব্যাপারে মেয়েদের মুক্তি না এলে এই সব স্বাধীনতা ইত্যাদি আসলেই পুরুষতন্ত্রের খাঁচা। ্মৌচাকে ঢিল ছুড়েছেন, তাই মৌমাছিরা তাকে তাড়া করেছে।
বেগম রোকেয়ার চেয়ে তসলীমা আন্তর্জাতিক ভাবেও অনেক এগিয়ে-কারন তসলিমা একটি সত্যকে সামনে এনেছেন। আর বেগম রোকেয়া একটি মিথ্যেকে ঢাকতে চেয়েছেন। তাই তুলনা করাটা খুবই হাস্যকর-বেগম রোকেয়া যা করেছেন সেটা স্বীকার করেও বলা যায়, তার কাজটি একটি পচা মাছকে শাক দিয়ে ঢাকা ছাড়া কিছু না-এবং তাতে মাছাওয়ালা তার প্রশংসা করলেই, তিনি তসলিমার সমকক্ষ হন না। কোন যুক্তিতেই না।
@বিপ্লব পাল,
আমি একমত। সারা জীবন শুনে এসেছি বেগম রোকেয়া নারীবাদি কার্যকলাপের জন্য বিখ্যাত হয়েছেন। কিন্তু বাস্তব জীবনে কোন প্রয়োগ দেখিনি। কাউকে বলতে শুনিনি আমরা বেগম রোকেয়ার আদর্শে শেকল ভেংগেছি। আমাদের দেশেও নারীবাদ সততই জাগ্রত হচ্ছে। তভে তাতে বেগম রোকেয়ার সরাসরি কি অবদান আছে পরিষ্কার নয়।
“বেগম রোকেয়ার যে কাজটা করেছেন সেটা হচ্ছে পুরুষতন্ত্রে মেয়েদের গৃহপালিত গাভীর অবস্থানটি মেনে নিয়ে-সেই গাভীটি যাতে বিদ্রোহ না করে দুধ দেয়-তারজন্যে গাভীটির উন্নত পরিচর্যা। ঠিক এই কারনে উনি পুরুষতন্ত্রের উন্নত সেবাদাস হিসাব স্বীকৃত এবং পুরস্কৃত।”
সেজন্যই আমি বলেছিলাম যে “বেগম রোকেয়া কিন্তু শেষ জীবনে ধর্মকর্মের পথে ঝুকেছিলেন বলেই জানা যায়। সেটা না করলে আজ তার অবস্থান একইভাবে মূল্যায়িত হত কিনা তাতে আমার সন্দেহ আছে।”
তবে দুজনের তূলনা করতে হলে সময় কালটাও চিন্তা করতে হবে।
@বিপ্লব পাল,
বেগম রোকেয়া কোন যুগের মানুষ, কোন পারিপার্শ্বিকতায় বড় হয়েছেন এগুলো ভূলে এভাবে সমালোচনা করা বড় অন্যায় হচ্ছে। বেগম রোকেয়া নারীদের পুরুষের সমকক্ষ হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন, রান্নাঘরে বন্দি নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো দেখতে চেয়েছিলেন, তখনকার যুগে এ চিন্তা কয়জন করতে পারত?
সে সময়কার লেখকদের সাহিত্যগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন যে তখন নারীরা যে পুরুষ থেকে অধম সেটাই সবাই সঠিক বলে ধরে নিত। মেয়েদের মধ্যেই এ ধারণা ছিল যে তারা অধম, স্বামী সেবাতেই তাদের পূণ্য। বেগম রোকেয়া সে সময় এ ধরনের মানসিকতা থেকে বের হতে পেরেছেন তাই তাকে আমি অনেক শ্রদ্ধা করি।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
এটাই আমি বলতে চেয়েছিলাম।
আপত দৃষ্টিতে বেগম রোকেয়ার তেমন কোন বৈপ্লবিক অবদান চোখে পড়বে না, তসলিমার তূলনায় তিনি অতি নিষ্প্রভ। কিন্তু তিনি যে সময়ের মহিলা সে সময়কার একজন মহিলার থেকে এমন কথাবার্তা প্রকাশ্যে শোনাটা খুবই ব্যাতিক্রম। তসলিমার সমসাময়িক কালে কিন্তু আরো কেউ তেমন ধরনের লেখা লিখেছেন, হয়তবা অত প্রকটভাবে লেখেননি বা যেকোন কারনেই হোক তারা বিখ্যাত হতে পারেননি।
এটা নিয়ে আমার কিছু বলার আছে। দেখুন ১৮১০ সালে নারীর যে অবস্থা ছিল, ১৯১০ সালের নারীর অবস্থা তার থেকে কিছুটা উন্নত, ২০১০ সালের নারীর অবস্থা হয়তো আরও উন্নত। উন্নতি এভাবেই ধাপে ধাপে হয়। বেগম রোকেয়া তার যুগে নারীর উন্নতি ত্বরান্বিত করে দিয়ে গেছেন, এই যুগে সেটা করতে চেষ্টা তসলিমারা, কাওকে খাটো করার অবকাশ এখানে নেই।
বিপ্লব পাল হয়তো করেন যে বেগম রোকেয়া নারীর মানসিকতা উন্নত করতে পারেনি, আমি সেটা মনে করিনা
@আদিল মাহমুদ,
একমত।
আন্দোলন মানেই বিপ্লবী হতে হবে এটা ঠিক নয়। বিপ্লব সবসময় সমাজ পরিবর্তন করতে পারেনা। বিপ্লব অনেকসময় প্রতি-বিপ্লবীদের হাতে পরাস্ত হয়। আবার কোন বিপ্লব যেহেতু সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকে তাই সাধারন মানুষ বিপ্লবের মর্মার্থ বুঝতে পারেনা তাই জনসাধারন অনেক সময় এধরনের বিপ্লবে অংশ নেয়না।
বিপ্লবী মাত্রই আন্দোলনের প্রবক্তা নন। বিপ্লবীরা অনেকসময় আন্দোলনের প্রবক্তাদের ন্যায়নীতি ধ্যানধারনাকে প্রয়োগ করেন বা এগিয়ে নিয়ে যান। যেমন কমিউনিজমের প্রবক্তা মার্কস-এঙ্গেলস, কিন্তু লেলিন এই ধারনাকে বাস্তবিব প্রয়োগ করেন বিপ্লবী ভাবে। বিপ্লবীরা অনেক সময় মুল আন্দলোনের ক্ষতি করে বসেন (ভূল ভাবে বোঝার কারনে বা ভূল টাইমিং-এর কারনে কিংবা উপযুক্ত পূর্ব-শর্তের অভাবে)। লেলিন-ষ্টালিন কমিউনিজমের যে অপূরনীয় ক্ষতি করেছেন তা পোষাতে যুগ যুগ লেগে যাবে।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় তসলিমা নারী আন্দোলনের মূল ধারাকে বরংচ ক্ষতিগ্রস্থই করেছেন। আমার মনে হয় তসলিমার টাইমিংটি সঠিক হয়নি। বেগম রোকেয়া এক্ষেত্র ব্যাতিক্রম। তিনি তার সময়-বাস্তবতাকে সঠিক ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তার সাথে মিলিয়ে সামর্থের সর্বোচ্চ ব্যাবহার করেছেন। বেগম রোকেয়া বিপ্লবী ছিলেনা না কিন্তু যে আন্দলনের গোড়াপত্তন করেছিলেন তা আজও চলমান। এখানেই তার স্বার্থকতা।
একদম ঠিক :yes: । এ কথাটিই আমি চিন্তা করছিলাম কিন্তু গুছিয়ে লিখতে পারিনি।
তসলিমা তার লেখালেখির জন্য দেশ ছাড়া হয়েছেন, টিভি সাক্ষাৎকারে ঠিক তেমনি হলেতো তাকে দুনিয়া ছাড়া হতে হবে। ভাগ্যিস উনি হননি।
@ব্রাইট স্মাইল,
আপনার একাউণ্টে লগ-ইন তথ্য পাঠানো হয়েছে। দয়া করে লগ-ইন করে মন্তব্য করুন।
@ব্রাইট স্মাইল,
তসলিমা তার লেখালেখির জন্য দেশ ছাড়া হয়েছেন, টিভি সাক্ষাৎকারে ঠিক তেমনি হলেতো তাকে দুনিয়া ছাড়া হতে হবে। ভাগ্যিস উনি হননি। :clap2:
আমাদের ভূলে গেলে চলবে না যে তসলিমা কোনো রাজনৈতিক দলের নেত্রী নন, তাকে গলা ফাটিয়ে বক্তৃতা দিতে হবে।আরো ভূলে গেলে চলবে না যে কোনো মানুষই সব কিছুতে একই রকম চৌকস বা সকল গুনের পারদর্শী হতে পারে বা হতে হবে।তসলিমা একজন লেখিকা,লেখাই তার চিন্তা ও মননের প্রতিফলন।সে প্রতিফলনের প্রভাবটাই হলো মূল কথা।
তসলিমার সাথে আমার ২০০৮ সালের জুলাই এ দুই বার খুব কাছ থেকে দেখা হয়েছিল।একবার ছিল এক ঘনিষ্ট বন্ধুর বাসায় আমন্ত্রনের সময়,আরেক বার ছিল সুইডিশ হিউমানিষ্ট অরগানাইজেশনের আমন্ত্রনের একটি সেমিনারে।দুইবারই তখন আমরা এক সাথে প্রায় ৬/৭ ঘন্টা একত্রে সময় কাটিয়েছি।দুই দিনের তার সাথে আলোচনায় সাহিত্য,ধর্ম,দশর্ন,রাজনীতি,অর্থনীতি থেকে শুরু করে তাঁর পারিবারিক, লেখাপড়া,চাকুরী,লেখালেখি এবং লেখালেখি করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রগতিশীল লেখক থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ছাড়া ,ইউরোপে বাস করা এবং ইন্ডিয়াতে জীবন-যাপন ইত্যাদি ইত্যাদি আলোচনা হয়েছিল।সব আলোচনার মধ্যে যে বিষয়টি মূল বিষয় হয়ে উঠে এসেছিল তা হলো স ত তা ।যেটা না-কি আমাদের দেশের ডানের কথা বাদ যারা সমাজে প্রগতিশীল দাবীদার এবং সমাজের আইকন তাদের মধ্যে সততার না-কি খুবই দূর্ভিক্ষের মহামারি চলছে।
তসলিমা যে একজন ভাল বক্তা না সেটা সে নিজেও জানে।আর নিন্দুকেরা এটাকে যদি তাঁর দূর্বলতা মনে করে এতে কি কিছু কারো বা তার আসে যায়?
জানি না তসলিমা এখন নিয়মিত মুক্ত-মনা পড়েন কি-না ?? তাঁর আমার কাছে অনুরোধ ছিল আমি যেন তাঁর ফটো বা ভিডিও ক্লীপ কাউকে না দেই।নিজের কাছে কথা রেখেছি।কাউকে দেই নাই।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
তসলিমা সম্পর্কে আমারো তাই মনে হয়েছে। তার সততার প্রসংশা করতেই হবে। যা মনে সত্য বলে নিজে জেনেছেন প্রকাশ করেছেন। একই কারনে হুমায়ুন আজাদকেও ভাল লাগে।
সবাইকে ভাল বা বাকপটু বক্তা হতে হবে এমন কোন কথা নেই। তসলিমার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আমার চোখে আছে, তবে তিনি বক্তা হিসেবে নিম্নমানের এমন সমালোচনার খুব বেশী মূল্য দেই না।
@আদিল মাহমুদ,
“তসলিমার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আমার চোখে আছে ”
এই মানবজীবনের সীমাবদ্ধতা কার না আছে বলুন ? আমার,আপনার সহ ৬০০ কোটি সব মানুষেরই কিছু না কিছু জীবনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা বিরাজমান আছে,তাই নয় কি?। তার মধ্যে জ্ঞানী-গুনীদের সীমাবদ্ধতা তো সাধারনের চোখে এমনিতেই বেশী পড়ে।আপনার চোখে বা চিন্তায় কারো ব্যাপারে যেগুলি সীমাবদ্ধতা বলে মনে হবে অন্যদের চোখে হয়ত তা সম্পূর্ন বিপরীত বিষয় বলেও গন্য হতে পারে।
ধন্যবাদ।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
একমত।
আমি তাঁকে কোনদিন দেখি নাই, কিন্তু তাঁর লেখার সাথে পরিচিত। তাঁর সাথে কথা বলার ইচ্ছা প্রবল। ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে ও নারীর অধীকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিবেদিত তসলিমা নাসরিনকে মনের অন্ত:স্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাই।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
:yes:
অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ভ্রমণে ব্যস্ত থাকায় ব্লগে অনেকদিন ধরেই আমি অনুপস্থিত। এর মধ্যে বহু ভালো লেখা এসেছে দেখলাম, বহু বিষয়ে তর্ক বিতর্কও জমেছে। সেগুলোতে অংশগ্রহণ না করতে পারার জন্য আপসোসই হচ্ছে।দেখি আজ থেকে একটু নিয়মিত হওয়া যায় কিনা। যদিও কর্মস্থানে ফিরিনি এখনো। 🙂
তসলিমার অসংখ্য সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, যে দু তিনটি কারণে আমার তসলিমাকে অসামান্য মনে হয়, তা হল –
১) তিনি যে সময়টাতে ‘নির্বাচিত কলাম’ লিখেছিলেন, সে সময় সে ধরনের লেখা বিশেষতঃ বাঙ্গালী মেয়েদের কাছ থেকে খুবই দুর্লভ। পশ্চিমে আমরা দেখেছি ওলস্ট্যানক্রফট, মিল, বুভ্যায়া, শেইলা রোবোথাম প্রমুখ নারীবাদীদের দেখেছি, দেখেছি সোশালিস্ট/মার্ক্সিস্ট ফেমিনিজম, লিবারাল ফেমিনিজম থেকে শুরু করে র্যাডিকাম ফেমিনিজম পর্যন্ত বহু কিছুই। তসলিমা নির্বাচিত কলাম লেখার আগে নারীবাদের ধারণা এত স্পষ্ট করে, এত সাহসিকতার সাথে ব্যক্ত করা হয়নি। ‘আমি শৃংখল ভেঙ্গেছি, পান থেকে খসিয়েছি সংস্কারের চুন’ – এ তাসলিমার পক্ষে বলাই শোভা পায়। আমি বহুজনের সাথেই কথা বলে জেনেছি (এখন মুখে যতই অস্বীকার করুক), তসলিমার লেখাই তখন তাদের ভাবতে শিখিয়েছে কেন শুধু মেয়ে হবার কারণেই সে ভাইয়ের যেয়ে সম্পত্তি কম পাবে, কিংবা মেয়ে হবার কারণেই তাকে সামাজিক অনেক সযোগ সুবিধা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হবে। নির্বাচিত কলামের আগে ইস্যুগুলো এমনভাবে কোন বাংগালী মেয়ে মেয়েদের আর্তিটুকু এমন চীৎকার করে বলে যেতে পারেননি।
২) সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠিকে সামাজিকভাবে বিভিন্ন জায়গায় সুযোগ সুবিধায় বঞ্চিত করা হচ্ছে – ব্যাপারটা সবাই জানতেন। সবাই জানতেন যে, সেনাবাহিনীর মত গুরুত্বপূর্ন জায়গায় খুব কমই সংখ্যালঘুদের নিয়োগ দেয়া হতো। বহু জায়গাতেই শুধু হিন্দু হবার কারণেই অনেককে নিগৃহীত হিওতে হয়েছে। আর দাঙ্গার সময় অত্যাচার তো আছেই। তসলিমার লজ্জা উপন্যাস্টির আগে এ ইস্যুগুলো এতো বলিষ্ঠভাবে কেউ বলতে পারেননি। উপন্যাস হিসেবে লজ্জা কতটুকু সাহিত্য মান সম্পন্ন তা নিয়ে রাতভর তর্ক করা যেতে পারে, কিন্তু তসলিমা সে সময় তার সীমিত সামর্থ নিয়েও যে ভাবে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁরিয়েছিলেন – তা অন্য যে কোন কবি সাহিত্যিকদের লজ্জায় ফেলবে। সংখ্যালঘুদের উপ্র অত্যাচারের করুওন কাহিনী অনেক সাহিত্যিকই নিজের চোখে দেখেছিলেন, কিন্তু কেউই লজ্জার মত উপন্যাস লেখার মত দায়িত্ব পালন করেননি।
৩) যদিও আমি কবিতার খুব একটা বুঝদার মানুষ নই, তবুও বলি – তসলিমার লেখা কিংবা তার লেভেল নিয়ে যত সমালোচনাই হোক না কেন, তসলিমার কবিতা আমার অসাধারণ মনে হয়, এখনো। প্রাসঙ্গিক মনে করায় তার ‘পাখি হয়েও ফিরব একদিন’ কবিতাটি উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি না –
আমার জন্য অপেক্ষা করো মধুপুর নেত্রকোনা
অপেক্ষা করো জয়দেবপুরের চৌরাস্তা
আমি ফিরব। ফিরব ভিড়ে হট্টগোল, খরায় বন্যায়
অপেক্ষা করো চৌচালা ঘর, উঠোন, লেবুতলা, গোল্লাছুটের মাঠ
আমি ফিরব। পূর্ণিমায় গান গাইতে, দোলনায় দুলতে, ছিপ ফেলতে বাঁশবনের পুকুরে-
অপেক্ষা করো আফজাল হোসেন, খায়রুননেসা, অপেক্ষা করো ঈদুল আরা,
আমি ফিরব। ফিরব ভালবাসতে, হাসতে, জীবনের সুতোয় আবার স্বপ্ন গাঁথতে-
অপেক্ষা করো মতিঝিল, শান্তিনগর, অপেক্ষা করো ফেব্রুয়ারি বইমেলা আমি ফিরব।
মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে কফোটা জল দিয়ে দিচ্ছি চোখের,
যেন গোলপুকুর পাড়ের বাড়ির টিনের চালে বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে
শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষায়, বঙ্গোপসাগরে।
ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব।
শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকু- পাহাড়-আমি ফিরব।
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।
এরকম কিছু অসামান্য কবিতার জন্যই তসলিমা বেঁচে থাকতে পারেন অনেকদিন!
লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, নৃপেন্দ্র সরকার। :rose2:
উপরের মন্তব্যটাকে আরেকটু বিস্তৃত করলাম…
সমাজ/ সংসার/ধর্ম/রাষ্ট্রের প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে দাড়ালেই কেউ মহিয়সী হয়ে যায় না। যে সব নারী শান্তিপূর্ন ভাবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নিয়মের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন, এভাবে বললে তাদের ছোট করা হয়। তসলিমা নাসরিন যে পদ্ধতিতে লড়ে যাচ্ছেন এতে তাকে বিপ্লবী বলা চলে কিন্তু ‘দ্বীতিয় মহিয়সী’ বলার মত উপযুক্ত সময় হয়তো হয়নি এখোনো। আমরা এখোনো তসলিমা নাসরিনের পরিনতি জানিনা। আমরা জানিনা চাপের মুখে তিনি নতি স্বীকার করবেন কিনা? তার অনুসৃত পদ্ধতিতে সমাজে পরিবর্তন আসবে কি না? তার পদ্ধতি গ্রহন যোগ্যতা পাবে কি না? আন্দোলনরত বৃহত্তর জনগোষ্ঠি তার এই পদ্ধতি গ্রহন করবে কি না? এই সব অসংখ্য প্রশ্নের জবাব না আসা পর্যন্ত ‘দ্বীতিয় মহিয়সী’ বলাটা সম্ভবত ভুল।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, তসলিমা সাধারন ভাবে সমাজ পরিবর্তনের চেয়ে, সেনসশন তৈরীতেই বেশী আগ্রহী। তার লেখাতে আহামরি কোন মৌলিকত্ব আমি খুজে পাইনা। এর চেয়ে অনেক বেশী মৌলিক ও আবেদন ময় লেখা অনেক বাঙ্গালীই (নারী) লিখেছেন কিন্তু একথা সত্য কেউওই তসলিমার মত মিডিয়ার নজর কাড়তে পারেননি।
মাহবুব সাঈদ মামুন কতৃক যে ভিডিওটি সংযুক্ত করা হয়েছে তাতে তসলিমাকে মোটেও স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি। যে নিজেকেই ঠিকমত ডিফেন্ড করতে পারেনি (একজন [বন্ধুভাবাপন্ন] সমালোচকের সমালোচনার জবাবে) তিনি কিভাবে সমাজ পরিবর্তন করবেন ( হাজারো [শত্রুভাবাপন্ন] সমালোচকের বিরুদ্ধে) ভাবতে কষ্ট হয়।
@শামীম,
ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠির কাছে তাঁর পদ্ধতি কখনোই গ্রহনযোগ্য হবেনা।
@শামীম,
বিষয়টি আপেক্ষিক। তাঁর “নির্বাচিত কলাম” কোন সাহিত্য সৃষ্টি নয়। কিন্তু এর মধ্যে আছে যে মৌলিকত্ব আছে হাবিবুর রহমান সহ বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের মোল্লাগোষ্ঠি হাড়ে হাড়ে খুজে পেয়েছেন। যে জন্য তসলিমা নাসরিণ জন্মভূমি ছেড়েও মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
তিনি কবিতা সাহিত্যেও অবদান রাখতে পারতেন। যারা কবিতা বুঝেন তাঁদের অনেকেই কবিতায় তাঁর মৌলিকতা খুজে পেয়েছেন।
ধন্যবাদ আপনার অভিমতের জন্য।
নৃপেন্দ্র সরকার,
ধণ্যবাদ লেখাটির জন্য, কিছু সুন্দর ছবি বাড়তি আকর্ষন যোগ করেছে।
তবে তসলিমাকে বেগম রোকেয়ার সাথে এখনই তূলনা করে ফেলাটা কি ঠিক হচ্ছে? আপনার মতের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু আমার মতে এটা বলার সময় এখনো আসেনি। ভবিষ্যতে হয়ত কখনো হবে, তবে নিক্ট ভবিষ্যতে হবে তেমন কোন সম্ভাবনা আমি এখনো দেখি না।
আমরা যতই বলি না কেন যে ব্যাক্তি জীবন ধরে টানাটানি করতে নেই, কিন্তু ব্যাক্তি জীবনের গুরুত্ত্ব এড়িয়ে যাওয়া যায় না। খোদ পশ্চীমেই ব্যাক্তিজীবন চলে আসে আর আমাদের দেশে তো কথাই নেই। তসলিমা নিজেই নিজেকে যথেষ্ট বিতর্কিত করে ফেলেছেন। বিশেষ করে তার ব্যাক্তিজীবন নিয়ে তিনি নিজেই যা যা বলেছেন সেগুলি তার মুক্তচিন্তার অবদানকে অনেক খানি খাটো করে দিয়েছে বলেই আমি মনে করি। তাই বেগম রোকেয়ার সাথে তাকে এক কাতারে বসানো মনে হয় এখনো ঠিক না। বেগম রোকেয়া কিন্তু শেষ জীবনে ধর্মকর্মের পথে ঝুকেছিলেন বলেই জানা যায়। সেটা না করলে আজ তার অবস্থান একইভাবে মূল্যায়িত হত কিনা তাতে আমার সন্দেহ আছে।
দেখুন, আরজ আলী মাতব্বরের ব্যাক্তিজীবন নিয়ে কোন রকম বিতর্ক নেই, তারপরেও তার অবস্থান আজ আমাদের দেশে কোথায়? আমি নিজে বই এর পোকা, তার নাম প্রথম শুনি বিদেশে থাকা আমার বোনের কাছে, সেও বিদেশে এসে নাম শুনেছে তার লেখা পড়েছে।
মনে করবেন না যে আমি এদের বিরোধী। শুধু বলছি যে এদের নিয়ে অতটা আশাবাদী হওয়া মনে হয় বাস্তবসম্মত নয়।
@আদিল মাহমুদ,
মনে হয় তসলিমা নাসরিনের মুক্তচিন্তার অবদানকে কখোনই মূল্যায়িত করা হবেনা যতক্ষন না তিনি ধর্মকর্মের পথে ঝুকছেন।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার সুলিখিত মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার সাথে একবিন্দুও দ্বিমত পোষন করছি না। এক কাতারে দেখলেও তফাত তো অবশ্যই আছে। সংক্ষেপে এভাবে বলা যায়ঃ-
১) বেগম রোকেয়া নারীর সমান অধিকারের জন্য কাজ করেছেন সাবধানে, সাধারন মানুষের মধ্যি থেকে। মানুষের ধর্মানুভূতিতে ধাক্কা দেননি। সমাজকে নড়াচড়া দিয়েছেন কম, আদায় করেছেন বেশী।
২) তসলিমা নাসরিণ – নড়াচড়া দিয়েছেন বেশী মাত্রায় যা সমাজ হজম করতে পারছে না। নারীর অধিকার আদায়ে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। এই যুদ্ধে সহযোদ্ধা তৈরী করার জন্য অপেক্ষা করার মত ধৈর্য ধারণ করতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন – সত্যকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেই সবাই তা দেখবে এবং গ্রহন করবে। কিন্তু অনেক সত্য আছে যা অপ্রিয়। তা জেনেও তিনি অপ্রিয় সত্যকে পাশ কাটিয় যান নি। ফল হয়েছে বিপরীত। তিনি যত কম সময়ে সমাজ পরিবর্তন দেখতে চেয়েছিলেন তা সম্ভব নয়। হবে একদিন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় নয়। ধর্মের যুপকাষ্ঠ যখন ধুলিস্মাত হবে তখন।
তিনি অপ্রিয় হলেও যুব সমাজে যে তাঁর বাণী পৌছুচ্ছে না তা কিন্তু নয়।
৩)আরজ আলী মাতুব্বর – একই কথা বলেছেন। কিন্তু বিচক্ষনতার সাথে। ফলে হুমকির সন্মুখীন হলেও তাঁকে উদ্ধার করার মত লোকের অভাব হয়নি। এই জন্যই শেষ জীবনে তিনি লামচরির মাটিতে শ্রদ্ধার সাথেই জীবন অতিবাহিত করেছেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
সত্য সত্যই এবং এটা রুঢ় অপ্রিয় হলেও শেষমেষ সেটাকে সবাই একটা সময় পরে (হতে পারে একশত বা হাজার হাজার বছর) তা গ্রহন করতে বাধ্য করে।আমাদের দেখতে হবে বেগম রোকেয়া ও তসলিমা ২জন দুই সময়ের ও প্রযুক্তির বাসিন্দা।বেগম রোকেয়া যেটা পারেন নি তাঁর জীবতকালের সমাজ ও সামাজিক অবস্হা-ব্যবস্হার কারনে সেটা প্রায় ১০০ বছর পর তসলিমার দ্বারা সম্ভব হয়েছে।তসলিমা যেভাবে আমাদের মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারনার ধর্মীয় লেবাসধারী বর্বরদের থেকে শুরু করে তথাকথিত আতেল-বুদ্ধিজীবি থেকে সমস্ত পুরুষতন্ত্রের,সামত্রতান্ত্রিক মন-মানসিকতাসহ সকল কূপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে যে একক যুদ্ধ করে যাচ্ছেন সেটা সময় ও সভ্যতার ইতিহাসে খুবই নগন্য নারীদের আমরা দেখতে পাই।তার ভাগ্য ভালো আড়াই হাজার বছর আগের মহীয়সি আরেক নারী ” হাইপোসিয়াকে ” খ্রীস্টিয় ধর্মীয়,বর্বর পান্ডারা যেভাবে শাররিক অত্যাচার,ধর্ষন ও পরে জলন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল তাতো আর এযুগের আব্রাহামিক রিলিজ্যয়নের শেষ মুসলিম মৌলবাদী পান্ডারা তসলিমাকে নিয়ে তা করতে পারে নি।ঐ সব পান্ডাদের ক্ষোভটা মনে হয় এ জায়গাতেই ছিল বা আছে।শেষতঃ বদ্ধ,পচা,দূর্গন্ধযুক্ত মানসিকতার সমাজ কে কেউ যদি এভাবে আঘাত করে তাহলে তো তার ৯৫% শত্রু ছাড়া কপালে আর কি আছে।তসলিমা তাঁর সময় থেকে শত শত বছর সামনে বাস করে বলে তার জীবনের হলো এই দূ্র্গতি।২/১ জন মানুষরাই পৃথিবীর সব সমাজে এভাবে মহৎ কাজ করে পেছনে পড়া বদ্ধ সমাজকে এভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়। জয়তু তসলিমা।তসলিমাদের কোনো দেশ কাল নাই,তাঁরা বেঁচে থাকে সভ্যতার মাঝে।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
দারুন বিশ্লেষন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
খুবই ভাল বলেছেন। আপনার সম্পুর্ন মতামতের সাথে একমত পোষন করছি।
ই হয়ত সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করবার যে সপ্ন তিনি অন্তরে লালন করছেন সেটা পূর্ণ হবে।
মুক্তমনার মডারেটরগন বা অন্য কেউ যদি দয়া করে ভিডিও ক্লিপ কিভাবে সংযোজন করতে হয় এ ব্যাপারে একটু সাহায্য করেন তাহলে ভিডিওটি আমাদের দেখার সুযোগ হয়।
ধন্যবাদ।
@ব্রাইট স্মাইল,
ইউটিউবে আপলোড করে মুক্তমনায় এমবেড করে দিতে পারেন।
@মুক্তমনা এডমিন,
আমি এই মাত্র তাই করলাম। ধন্যবাদ তারপরেও, সত্যিই ধন্যবাদ।
দেখুন। এমন আহামরি কিছু ক্লিপ নয়। শুভর আবেগভরা কিছু কথা এখাবে শোনা যাবে এই যা।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দেখি এবারে যায় কিনা
httpv://www.youtube.com/watch?v=zGtPH6Nz2Co
@নৃপেন্দ্র সরকার,মুক্তমনা এডমিন: ধন্যবাদ।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
URL address এ http এর পরে একটা v দিলেই মুক্তমনায় ইউটিউবের ভিডিও এমবেড করা যায়।
তসলিমা নাসরিন কে এভাবে মুল্যায়ন করায় লেখকের মনের উদারতার প্রশংসা না করে পারছিনা। তসলিমা নাসরিণের সব ছবিগুলোই উপভোগ করলাম। ছবিগুলো শেয়ার করার জন্য লেখক-কে অশেষ ধন্যবাদ।
@ব্রাইট স্মাইল,
অনেক ধন্যবাদ।
“অবকাশের” আরও কিছু ছবি আছে আমার কাছে। শুভকে বলে এসেছি, ছবিগুলো তোমার ফুপির কাছে পৌছে দেব। পারিনি।
দেখলেই বুঝা যায়, অন্তত বিয়ে উপলক্ষে, বাড়িটির সংস্কার করা হয়েছে – নতুন সাজ, নতুন রং। ফটকটি্ নতুন – নতুন ডিজাইন, নতুন রং। পাশে খোদাই করা নাম – “ডাঃ এম আর আলী, এম বি বি এস”। বেস্টনীর ভিতরে নারিকেল গাছ গুলো বেড়ে আকাশে ঠেকেছে। সব মিলিয়ে এলাকাটিতে দেখার মত একটিই বাড়ি।
ফুপিকে নিয়ে গর্বিত শুভ অনর্গল কথা বলল। ভিডিও ক্লিপটি কিভাবে সংযোজন করতে হয় জানিনা। তসলিমা নাসরিণের কাছের কেউ থাকলে আওয়াজ দিবেন। পাঠিয়ে দেব।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
“বাংলাদেশে বেগম রোকেয়ার পর দ্বিতীয় মহিয়সী মহিলা তসলিমা নাসরিণ” :rose2: :rose2: :rose2:
সহমত. :yes:
Cnn এর সাথে তসলিমার ২টি ইন্টারভিউ ঃ —-
http://www.youtube.com/watch?v=6msPCcpiXT4
http://www.youtube.com/watch?v=Z55pLOYN0XI
@মাহবুব সাঈদ মামুন, ধন্যবাদ আপনার ভিডিও লিন্কগুলোর জন্য।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
CNN-IBN এর সাথে তসলিমার নাসরিনের এই সাক্ষাৎকারটি দেখেছিলাম অনেকদিন আগেই। দেখার পর প্রথম অনুভূতিটাই ছিল যে, এটা না দেখলেই বোধহয় ভাল হতো। বাংলাদেশ থেকে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশি কোন নতুন মহিলা আসার পর কোন চাকুরীর সাক্ষাৎকারে গেলে যে রকম নার্ভাস থাকে, আড়ষ্ঠ থাকে, আমতা আমতা করে কথা বলে, ঢোক গেলে, জোর করে মুখে হাসি ধরে রাখার চেষ্টা করে, ইয়েস-নো দিয়ে কথা চালানোর চেষ্টা করে, তসলিমাকে আমার ঠিক সেরকমই মনে হয়েছে।
তসলিমা তার লেখালেখিতে যতখানি স্বাচ্ছন্দ, সাবলীল এবং তীক্ষ্ণ, টিভি সাক্ষাৎকারে ঠিক ততখানিই অস্বাচ্ছন্দ, জ়ড়সড় এবং ভোঁতা। হয়তো ইংরেজীতে ঠিকমত দখল না থাকার কারণে এরকম হতে পারে। তবে আমার কথা হচ্ছে নিজের দুর্বলতা তসলিমার নিজেরই বোঝা উচিত ছিল। ভাষায় পারদর্শী না হয়ে এধরনের সাক্ষাৎকারে যাওয়াটা আত্মহত্যারই সামিল। বুঝে অথবা না বুঝে তসলিমা সেটাই করেছেন।
এরকম আত্মবিশ্বাসহীন, দিশেহারা, ভীতু এবং ভঙ্গুর তসলিমার উপস্থাপনা তসলিমা বিরোধীদের হাতকেই শক্তিশালী করবে। এমনিতে ভদ্রমহিলার উপর যে অবিচার করা হয়েছে তার কোন সীমা পরিসীমা নেই। এই ভিডিও হাতে পেলেতো তারা রীতিমত উল্লসিত হবে।
তসলিমাকে মহিয়সি নারী আখ্যা দেয়া আর তার ময়মনসিংহের বাড়ীকে তীর্থস্থান বলাটা যেহেতু ভবিষ্যৎকাল হিসাবে বলা হয়েছে সেজন্য আর এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করলাম না।
ধর্মে বিশ্বাস হারানোর কিছুদিন পরেই আমি আরজ আলী মাতুব্বরের বইয়ের সন্ধান পাই। আমার পটিত বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে তাঁর লেখা বইগুলো। কৈশোরের দূর্দান্ত দিনগুলো অতিবাহিত করেছি এগুলো পড়ে পড়ে। আরজ আলীর কথা স্মরণ হলেই মনে পড়ে যায় তাঁর লামচরি গ্রামের কথা যেখানকার আলো-বাতাস মেখে তিনি তাঁর মহান জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাঁর প্রতিষ্টিত লাইব্রেরীর কথা স্মরণ হলে কেমন যেন কষ্টে মনটা ভরে যায়।
আরজ আলীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।