একটা কঠিন এবং সম্ভবতঃ জটীল ক্রান্তিকাল আমরা জাতিগত ভাবে অতিক্রম করছি অধুনা। কেননা, জাতি হিসেবে বিশ্ব-সভায় আমাদের যে অবস্থান, সেখান হতে বেড়িয়ে এসে আমাদের সামীল হতে হবে মানবজাতির অগ্রযাত্রার অগ্রসর মিছিলে। স্বাধীনতার পর কয়েক বছরের মধ্যেই অভিভাবকহীন হযে পড়ে দেশটি। কান্ডারী বিহীন নৌকো যেমন এদিক ওদিক দোলে এবং গন্তব্যহীন ভেসে চলে, আমাদের অবস্থা অনেকটা তাই। আজো সেই গন্তব্য নির্ধারিত হয়নি। সদ্যস্বাধীন দেশের সরকার যখন বিদ্ধস্ত পটভূমিতে পথখোঁজায় ব্যস্ত, তখনি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কুচক্রীকূলের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব। তারপর থেকেই শুরু হয় আমাদের গন্তব্যহীন যাত্রা। এর শেষ কোথায়, জানিনা। বাতাসে গন্ধ পাই খুনের আর অসুস্থ নিঃশ্বাসের!
গতকাল, ৮ তারিখের দৈনিক প্রথম অলোতে ওয়াসেক বিল্লাহ্ রিপোর্ট করেছেন একটা খবর, “ শিক্ষানীতি, পঞ্চম সংশোধনী বিষয়ে একজোট হচ্ছে ধর্মভিত্তিক দলগুলো”। কি সাংঘাতিক কথা! আমরা চাইছি সেকুলার দেশ ও জাতি আর ওরা কিনা বলছে, প্রতিরোধ করবে! কি হতে পারে সেই প্রতিরোধের ভাষা? মিছিল, মিটিং, হরতাল? …. ….., নাকি গুপ্ত হত্যা? নাকি সেই পুরোনো রক্তে ভেজা স্যাঁতলানো উঠোনে আবার আমাদের গিয়ে দাঁড়াতে হবে! আবার সেই অকৃতজ্ঞ জাতি ভুলে যাবে আজকের এই দিন গুলোর কথা, পরিস্থিতির কথা, নতুন করে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টার কথা, যেমন করে ভুলে গেছে(?) বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের নায়ক বঙ্গবন্ধুকে! তখন মুক্তমনা সহ সর্বত্র বিদগ্ধ জনেরা আবারো বিতর্ক করবেন, তৎকালীন সরকার ক্ষমতা কুক্ষীগত করার মানসে খোদ ধর্মকে আশ্রয় করে রাজনীতিকে সংকুচিত করতে চেয়েছিলেন! আর যাই হোক রাজনীতিকে সংকুচিত করা মানেই তো গনতন্ত্রকে সীমিত করা! অন্যেরা বলবেন, ‘না, তখন সরকার আগ্রযাত্রাকে গতিময় করতে আর পশ্চাদ্পদতার অবসানে কিঞ্চিৎ কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন’! পত্র-পত্রিকার দিকে তাকালে বোঝা যায় ষড়যন্ত্র বহুদূর পর্যন্ত শেকড় মেলেছে! আবার এগিয়ে আসছে ধর্মনামের নাঙ্গা তলোয়ার, এ-জাতির হৃদপিন্ড উপড়ে ফেলবে বলে!
আজ বাংলাবাসীদের চোখ মেলে তাকাবার দিন এসেছে। শুধু নিজের আঙ্গীনায় নয় বিশ্বচরাচরে। যেখানে মুক্তমানুষ হন্যে হয়ে খুঁজছে মানবতার ঐক্যতান। সমস্ত জরা-জীর্নতা, কুসংস্কার ঠেলে আলো ঝলমলে ঊঠোনে এসে দাঁড়াতে তারা ব্যকুল! দুই পায়ে ঠেলে দিচ্ছে সমাজের যত জঞ্জাল, প্রানের স্পন্দন বয়ে চলেছে প্রাণ থেকে প্রাণে! সেখানে জনস্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ গুলো কে আরো সুসংহত নাকরে বিরোধীরা করে অনাবশ্যক বিরোধীতা! ভাবখানা এই যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা! দেশের কিছু কিছু বিদগ্ধজনেরা আজ আরোষ্ঠ! যেখানে গোটা জাতিকে উজ্জীবিত করে সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করা উচিৎ, সেখানে একটা আনিশ্চয়তা, স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে পলে পলে। এই সংবাদ ভাষ্যতে বলা হয়েছে, অধুনা প্রকাশিত কিঞ্চিৎ অগ্রসর খসড়া শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক দল গূলো আন্দোলন করবে! জাতীয়তাবাদী দলও নাকি পরে তাদের সাথে যোগ দেবে! চাল্লু! হাওয়া বুঝে পতাকা ওড়াবার ধান্দা! নাকি তলে তলে ষড়যন্ত্রের শেকড়ের শীর্ষে, তাই বা কে জানে! তবে আতঙ্কিত হচ্ছি যে ষড়যন্ত্রের ছিদ্রপথগুলো অবরুদ্ধ না হলে এজাতির ভাগ্যাকাশের মেঘ সহজে সড়বে না। অগ্রসর চিন্তার তরুণ সমাজকে আজ নিশ্চিত ভাবেই আগামী দিনের পরিকল্পনা করতে হবে। ঘোষিত শিক্ষানীতির অধুনিকায়ন জরুরী ভিত্তিতে করা প্রয়োজন। ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর বোধ সৃষ্টির পূর্বে বলবৎ করা অবশ্যই যুক্তি সংগত নয়। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষাদানের বিষয়টিও রোহিত করা জরুরী বলে আমি মনে করি। ধর্মীয় শিক্ষা সীমাবদ্ধ থাকবে পরিবারের মধ্যে, এটাই স্বাভাবিক হওয়া উচিৎ। ধর্মের নামে শিশু-কিশোরদের মনোজগৎকে বিভাজিত করা অনুচীৎ, যখন ওরা জাগতিক অভিজ্ঞতা গুলো পরষ্পর শেয়ারের নেশায় থাকবে আচ্ছন্ন, দুই চোখ মেলে জগৎটাকে দেখতে চাইবে, দেখতে চাইবে তার চার দিকের বিষ্ময় গুলো। পাখা মেলবে নতুন নতুন চিন্তা রাশি! এভাবেই না এগুবে জাতি! আজ যা আমরা করতে চলেছি, তা এক অর্থে অনাগত ভবিষ্যতের পথে কাঁটা হয়ে থাকতে বাধ্য। তাই সোচ্চারে ভেঙ্গে দেবার দিন সমাগত হউক তাদের দ্বারে, আজকে যারা তরুন অরুণ।
উক্ত সংবাদে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের কাদের মোল্লা বলেছেন, “চেষ্টা করবো সবার সঙ্গে মিলে মিশে কিছু করতে। যদি অন্যরা না আসে, তাহলে আমরা একাই করবো। তবে আসবে সবাই। এটা মুসলমানের ইস্যু না?” এভাবেই ব্যক্তির ধর্ম পরিবার, সমাজ ছাপিয়ে রাষ্ট্রে দস্যুতা করে। চেতনা দিয়েই এই কূপমন্ডুকতার অবসান ঘটাতে হবে। শিক্ষা বাড়ায় সেই চেতনা। তাই শিক্ষাকে, তার ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে হবে যুগপোযোগী করে।
পঞ্চম সংশোধনী সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী অবিলম্বে সরকারকে বাধ্যকরা উচিৎ ৭২ সালের সংবিধানে অসঙ্গতি অপসারন সাপেক্ষে ফিরে যাবার। জাতীয় চেতনার মূল ক্ষেত্রে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের অগ্রযাত্রা কোন কালেই অর্থবহ হবেনা। বিতর্ক-বিস্সম্বাদ নিত্য সঙ্গী হতে বাধ্য। এগুলো আমাদের প্রতিবন্ধক। এগুলোর অপসারন জরুরী ভিত্তিতে কাম্য। আমরা যে যন্ত্রনা দগ্ধ জীবনের উত্তরাধিকারী, এমন একটি সমাজ কাঠামো বিনির্মান জরুরী, যেখানে আমাদের অনাগত ভবিষ্যৎ যেনো একই কলঙ্কিত পদচাড়ণায় বাধ্য না হয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াক শিল্পী হিসেবে, মানবতাবাদের সৈনিক হিসেবে সর্বোপরি মানুষ হিসেবে, এই প্রত্যয় দৃপ্ত দিক নির্দেশনাই আজ আমাদের কাম্য হউক।
সরকারী স্কুলগুলিতে ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধ হওয়া উচিত। তবে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সরকারী কারিকুলামের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা কেউ চালুরাখতে চাইলে সেটা অনুমোদন যোগ্য।
@শামীম,
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সরকারী নিয়ম নীতি মেনেই চলতে হয়।
@ব্রাইট স্মাইল,
এই কারনেই জাতীয় কারিকুলাম অনুসরন। জাতীয় কারিকুলামের পাশাপাশি বেসরকারী প্রাইভেট স্কুল ধর্মিয় শিক্ষা চালু রাখতে পারে। উদাহরনঃ ইংল্যান্ড বা ইউরোপের ফেইথ স্কুল (মুসলিম, ক্যাথলিক, ইহুদী,… )। বাংলাদেশে যদি বেসরকারী মাদ্রাসা (বা যে কোন প্রাইভেট স্কুল) জাতীয় সিলেবাসের অতিরিক্ত হিসাবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত করে (একই ভাবে হিন্দু বা ক্যাথলিক স্কুল স্ব-স্ব ধর্মকে) তাতে তো কোন সমস্যা দেখছিনা। একই ভাবে বেসরকারী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল জাতীয় কারিকুলামের অতিরিক্ত হিসাবে ইংরেজী বিষয়ক অতিরিক্ত বিষয় সংযুক্ত করতে পারে। অভিভাভকগন সিদ্ধান্ত নিবেন তারা তাদের শিশুকে কোন স্কুলে পড়াবেন।
@শামীম, বেসরকারী মাদ্রাসা এবং প্রাইভেট স্কুল একই ক্যাটেগরিতে পড়েনা। মাদ্রাসা হলো ধর্মীয় স্কুল যেটা শুধুই ব্যক্তিগত পর্য্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে, আর প্রাইভেট স্কুলগুলো একটি বড় জনগোষ্ঠির সাথে জড়িত, যেখানে সব ধর্মের লোকের সমাবেশ।
@ব্রাইট স্মাইল,
সেক্যুলার উন্নত দেশসমূহের ফেইথ স্কুল গুলি কিন্তু প্রাইভেট স্কুলই। তাতে সরকার ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে কোন হস্তক্ষেপ করেনা। যেমন ফ্রান্সে পাবলিক স্কুল গুলিতে হিজাব পরা নিষিদ্ধ কিন্তু ফেইথ স্কুল/ প্রাইভেট স্কুল গুলিতে সরকারের এ ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ করেনা। সংশ্লিশ্ট স্কুলগুলি নিজেরাই এ ব্যাপারে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।
বেসরকারী মাদ্রাসা আর প্রাইভেট স্কুল গুলিতে নাম ব্যাতিত কোন পার্থক্য নেই [বেসরকারী(বাংলা) = প্রাইভেট(ইংরেজী), সরকারী(বাংলা) = পাবলিক(ইংরেজী), মাদ্রাসা (আরবী)= স্কুল (ইংরেজী)]।
আমার কাছে একটু খটকা আছে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হল । সংবিধানের প্রস্তাবনায় ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি স্থাপিত হল, সাম্পদায়িক রাজনীতি বন্ধ হল। কিন্তু ৮ম সংশোধনী বহাল রইল। অর্থাৎ রাষ্ট্রধর্ম ইসলামই থাকল। এ স্ববিরোধীতা কাটাবে কি করে? আমি এর উত্তর খুঁজছি।
@গীতা দাস,
ঘোড়ার ডিমের অস্তিত্ব নেই, শুধু কথাটিই চালু আছে। কিন্তু “জগাখিচুড়ি” শব্দটি নামেও আছে, বাস্তবেও আছে। পৃথিবীতে কত কিছু আছে জগাখিচুড়ি হিসেবে! এলোমেলো জিনিষ মাত্রেই আমরা বলি জগাখিচুড়ি। দেশ-সংবিধান এভাবেই থাকবে।
পশ্চিম বঙ্গের কমিউনিস্ট দাদাদের বড় গলায় কথা বলার জুড়ি নেই। জনমানুষের কথা বলতে বলতে বিমানবাবুরা মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। একই মুখে বলে্ন – তসলিমাকে রাজ্য থেকে বের করে দাও। গলা উচু করে যত কথাই বলুক, জুজুর ভয় তো একটাই।
“ভানু সিংহ পুরস্কার” নেওয়ার জন্য একটি সংস্থা চাচ্ছে তসলিমাকে কলকাতায়। কিন্তু লাঠি সোটা্র ভয়ে বিমানবাবুরা লেজ কতটা গুটিয়ে ফেলেন দেখা যাক।
আসলে বিএপি-জামাত জোট সরকার সাধারন মানুষের ধর্ম নিয়ে মগজ ধোলায় করে ফেলছে। তারা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল ফলে প্রতিটি মসজিদ হয়ে উঠেছিল এক একটি ব্রেইন ওয়াশ কারখানা।তখন প্রায় সব মসজিদের ইমামদের প্রধান আলোচনার বিষয়ই ছিল ধর্মের সাথে রাজনীতি। ধর্ম রাজনীতি থেকে আলাদা হলে যদি কাফের হতে হয়, তবে ধর্মীয় রাজনীতি তথা জামাতকে বা বিএনপিকে সাপোর্ট তারা করবেই আর সেক্যুলারিজম ঠেকাতে তারা রক্ততো দিতেই পারে। আর আওয়ামি লীগ গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাবেই। তারাতো রাজনীতি করে ব্যবসার জন্য আদর্শের জন্য না। সেক্যুলারিজম নিয়ে ব্যাপক লেখালেখাই পারে এই কুৎসিত বর্বর ধর্মীয় রাজনীতির জনসমর্থন কমাতে।
লেখককে ধন্যবাদ ।
কোন সভ্য জাতি, বরবর দের সাথে শারিরীক যুদ্ধে পারেনি। সভ্যা জাতির বিজয়টা সাধিত হয় ভিন্ন ভাবে। সভ্য জাতির উন্নত সভ্যতা গ্রাস করে বরবরদের।
এখানেও তাই, মধ্যযুগীও এইসব ধর্মীয় চেতনার লালনকারীদের মারামারিতে হারানোর কোন সুযোগ নেই। যেখানে মরার সাথে সাথে তারা নীজেদেরকে অনন্তকালের জন্য অসংখ্য হুরের কোলে কাটাবার স্ব্প্ন দেখছে, সেখানে কি অসীম বিক্রম কাজ করে তা তো বোঝাই যায়!!!!!!!!!
আমরা জীবনকে ভালবাসি। জীবন একটাই। ওরাও যেদিন এমনি ভাবতে পারবে, সেটাই হবে আমাদের বিজয়। তবে শেখ হাসিনাকে তথা আওয়ামিলীগকে যদি কেউ মক্তমনাদের প্রধান সেনাপতি ভেবে থাকেন তবে, দিল্লি দূর।
খবরটি পড়ার পর নিজেরও একই রকমের অনুভুতি হয়েছে। আমাদের আসলে এখন এই ধরণের লেখা দিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা উচিত যেন জামাতের এই ভুলে সাধারণ জনগণ পাঁ না দেয়। জামাত এখন চাইবে এই ইস্যু দিয়ে সাধারণ মুসলমান/ধর্ম ভীরু লোকদের বিভ্রান্ত করতে। আর এগুলোর মূল উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বিলম্বিত বা বিঘ্নিত করতে।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।