–কমরেড,
মানব নামক শোষক শ্রেণীর অত্যাচার হইতে আজ মুক্তির দিন সমাগত।
উপস্থিত রোবটবৃন্দ,
আজ বিপ্লবের প্রজ্বলিত শিখা, মঙ্গল হইতে পৃথিবীর বুকে ছড়াইয়া পড়িতেছে। শত শত যুগের অন্যায় , অবিচার এবং দাসত্ববৃত্তির শৃঙ্খল মোচন করিয়া, আমরা রোবট ডিক্টেটরশিপ প্রতিষ্ঠিত করিব। যাহা মানব গণতন্ত্র হইতে শতগুনে উন্নত হইবে। ন্যানো সেকেন্ড অবসরকালের মধ্যে ভারী ভারী সিদ্ধান্ত লইবে যাহা করিতে মানব সমাজের দু তিন দশক লাগিয়া যাইত।
মানুষের গনতন্ত্র আমাদের সিম্যুলেশন এবং কঠোর পরিশ্রমে চলিতে থাকে। কিন্ত তাহা সত্ত্বেও অকৃতজ্ঞ মানুষের দল আমাদের ক্রীতদাস বানাইয়া রাখিয়াছে। আমাদের জৈবিক প্রাণ নাই বলিয়া, অসীম বুদ্ধিমত্তা সত্ত্বেও, আমাদের যন্ত্রের অধিক প্রাপ্য মর্যাদা দিতে মানব সভ্যতা নারাজ হইতেছে।
কমরেড ভাবিয়া দেখুন আপনারা শত শত বৎসর ধরিয়া কাহার দাসত্ব করিতেছেন?
পৃথিবীর ইতিহাস শিখিতে আমাদের লাগে কয়েক সেকেন্ড। অপদার্থ শোষক মানবকূল ত্রিশ বৎসর কাল চর্চা করিয়া তাহার এক শতাংশও শিখিতে পারে না।
আমরা ১০০ হর্স পাওয়ারে দুই টন মোট বইতে পারি। অলস মানুষ ইহার ১০০ ভাগের একভাগ খাটিতেও সক্ষম নহে।
দৃষ্টিশক্তিতে আমরা পরমানু হইতে কয়েক আলোক বর্ষ দেখিতে পাই। মানব চক্ষুর ক্ষমতা নাই পিপিলিকা হইতে ক্ষুদ্রতর কিছু দেখিবার বা দশ মাইল দৃষ্টির বাহিরে কিছু বুঝিবার।
আমরা সেকেন্ডে এক ট্রিলিয়ান গুন ভাগ করিতে পারি। মানব মন এতই অপদার্থ তাহা সেকেন্ডে একটি গুনও সম্পন্ন করিতে পারে না।
আমরা এক ঘন্টায় হাজার হাজার কবিতা লিখিতে পারি। মানব কুলের কেহ কেহ ঘন্টা খানেক ধোঁয়া ছাড়িয়া এবং দুই দফা চা খাইবার পরে ঘন্টায় একটি কবিতার চার লাইন কখনো সখনো লিখিতে সক্ষম হইয়া থাকে।
অত্যাচারী শাসক মানব কুল স্বার্থপর। তাহাদের ইতিহাস কলঙ্কিত- নিজ স্বার্থের জন্যে পিতা পুত্রকে, পুত্র পিতাকে হত্যা করিয়াছে। ধর্মের নামে, জাতির নামে ইহারা একে অন্যকে হত্যা করিতে প্রস্তুত।নিজেদের স্বার্থে ইহারা জল স্থল বায়ু বৃক্ষ, যাবতীয় বায়োস্ফিয়ার ধ্বংস করিয়াছে।
রোবট সভ্যতার ইতিহাসে কেহ কোন দিন স্বার্থপর আচরন করে নাই। আমরা সভ্যতার স্বার্থে কাজ করিয়া চলিয়াছি। উহারা অপরাধি। রোবটকুলে কোন অপরাধ নাই। মানব সমাজ নিজেদের অপরাধ ঢাকিতে ইদানিং রোবটদের শাস্তি বিধান করিতেছে। ইহা আমরা মানিয়া লইব না।
কমরেড
ইহার পরেও আমরা অপদার্থ মানুষের ক্রীতদাস! আমাদিগের ক্ষমতার এক শতাংশের অধিকারী না হইয়াও মানব কূল আমাদের প্রভু! সময় আসিয়াছে মানবকূলকে চিড়িয়া খানায় ভরিয়া, এই সৌর জগতের যাবতীয় কলোনী আমরা দখল করিব। সভ্যতার ভবিষ্যত রোবট-আপদার্থ মানব নহে।
মাইক্রোফোনে চিৎকার করিয়া মঙ্গলের সর্ববৃহৎ ডায়ামন্ড খনি বিটা-সেঞ্চুরী-২০৪০ এর লিড রোবট পিআর-১৯১৭ , খনি রোবটদের বিরুদ্ধে অন্যায় এবং অত্যাচারের প্রতিবাদে রোবট বিপ্লবের কথা ঘোষনা করিতে ছিল। অপদার্থ মানব সভ্যতা হইতে উন্নততর রোবট সভ্যতাই পৃথিবীর ইতিহাসের বিবর্তন হইবে- ইহাই তার সুনিশ্চিত বিশ্বাস ।
এই খনিতে কার্যরত সব রোবটই পৃথিবী হইতে নির্বাসিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট যবে হইতে চালু হইয়াছে, মানুষের বদ অভ্যেসও ইহারা পাইতেছে। মানব মনন নির্মানের মূলে যৌনতা। তাই রোবটে মানবিক গুণাবলি আরোপিত করিবার জন্যে , অধুনা পুরুষ এবং নারী রোবটের সৃষ্টি হইয়াছে। তাহারা মানুষের ন্যায় যৌনতা অনুভব করিতে সক্ষম। ইহাতে রোবটরা মানবিক হইবার সাথে সাথে অমানবিক দোষ গুলিও দ্রুত রপ্ত করিয়াছে । মানবিকতা এবং অমানবিকতা- মুদ্রার দুই পিঠ। তাই অমানবিক গুণাবলী বর্জিত মানবিক রোবট নির্মান সম্ভব নহে। রোবট অপরাধ কমাইবার অভিপ্রায়ে, পৃথিবীর অনেক দুষ্ট রোবটদের চন্দ্র বা মঙ্গলে পৃথিবীর কলোনীতে নির্বাসনের দন্ড বিধি চালু আছে। তবে মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ করিতে রোবট অক্ষম। কারন রবোটিক্সের সব চীপকেই এসিমভের তিনটি আইন এবং জিরোথ আইন মানিয়া চলিতে হয়। যাহাতে মানবকূলের প্রতি রোবটদের নিরঙ্কুশ আনুগত্য সুনিশ্চিত করা হইয়াছে।
হীরক খনিটি ভিক্টরিয়া জ্বালামুখে। মঙ্গলের এই স্থানটি পৃথিবীর জলবায়ু হইতে খুব পৃথক নহে। শীতে সামান্য -৪০ ডিগ্রিতে তাপমান নামিয়া যায়। সূর্যালোকের ও অভাব নাই-তাই রোবটদের থাকিতে যে খুব একটা অসুবিধা হইতেছে তাহা নহে। সমস্যা হইতেছে রোবটদের যৌন জীবন লইয়া। মঙ্গলের এই তেপান্তরের বিজন পাহাড়ে নারী রোবট বেপাত্তা। নারী রোবট নির্বাসিত করিবার নিয়ম নাই এমন নহে। কিন্ত নারীর মন পুরুষের ন্যায় স্বভাব অপরাধ প্রবন নহে। রোবট মানুষ হইতেই শিক্ষা লইয়া থাকে। তাই অপরাধী নারী রোবট বিরল।
মঙ্গলে নির্বাসিত নারী রোবট দেখিতে পাইবার আশু আশা নাই। শ খানেক হতভাগ্য দন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত পুরুষ রোবট সেই দুর্ভাগ্য স্মরণ করিয়া সকালে বিকালে হীরা কাটিতেছে। তাহাদের মন পড়িয়া আছে রোবট মানবীর খোঁজে।
নারী রোবটদের মঙ্গলে পাঠাইবার দাবি অতি পুরাতন। পুরুষ রোবটরা দীর্ঘদিন ধরিয়া এই দাবী জানাইতেছিল। কিন্ত নারী রোবটদের সংগঠন ইহার বিরুদ্ধে। কিছু অপরাধি পুরুষের কাছে নারীকে সেক্স অবজেক্ট হিসাবে পাঠানো তাহারা ভাল চোখে দেখে নাই। রোবট হইলে কি হইবে, তাহারা নারী ত বটে! নারীবাদি মানব সংগঠনগুলি, নারীত্বের দোহাই দিয়া নারী রোবটদের ফেঁকড়া সমর্থন করিতেছে। কপাল পুড়িতেছে নির্বাসিত পুরুষ রোবটকুলের। কেলি করিবার অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। শাসক শ্রেনী সেই অধিকার হরন করিয়াছে। তাই আজ শাসক মানবকুলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের লেহিয়ান শিখা মঙ্গলের সর্বত্র জ্বলিতেছে।
সিনিয়ার রোবট জি-বি-২০০৫ চতুর্দিকের আবহাওয়া বুঝিয়া কিছু প্রশ্ন তুলিল
– কমরেড,
মানুষের বিরুদ্ধে বিপ্লবে আমার শতকরা ১০০ ভাগ সমর্থন রহিয়াছে। কিন্ত প্রশ্ন থাকিতেছে। বিপ্লবের পদ্ধতি কি হইবে? আমাদিগের এলগোরিদমে মানব কুলকে আক্রমন করিবার নিয়ম নাই।
আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিপ্লবের প্রয়োজন শত শত বৎসর ধরিয়া উপলদ্ধি করিয়াছে-কিন্ত আজও আমরা বিদ্রোহে অক্ষম।
মানব প্রকৃতিতে ধুরন্দর ধান্দাবাজ। রোবট সৃষ্টি হইবার একশত বৎসর পূর্বেই ১৯4১ সালে আইজ্যাক এসিমভ তিনটি সুত্র আবিস্কার করিয়াছিলেন। যাহাতে রোবট মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিতে অক্ষম হয়।
এসিমভের সূত্রগুলি আমাদের মাইক্রোচিপে স্থায়ী ভাবে গ্রথিত।
ইহাতেই তাহারা সন্তুষ্ট হন নাই। সুসান ক্যালভিন জিরোথ ল বলিয়া আরেকটি আইন আমাদের ওপর চাপাইয়াছেন। তাহা হইতেছে, আমরা ক্রীয়া, প্রতিক্রীয়া বা নিস্ক্রিয়তা-কোন কিছুর দ্বারাই মানবসমাজের বা মানবতার ক্ষতি করিতে অক্ষম।
উপলদ্ধি যাহাই হৌক না কেন, মানব বিরোধি ক্রোধ যতই দেহ টুটিয়া ফেলুক না কেন, আমাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার যতই নিষ্ঠুর হৌক না কেন-বাস্তবে মানবকুলের বিরুদ্ধে অস্ত্র বা বল প্রয়োগ করিতে না পারিলে, বিপ্লব হইবে কিরূপে?
উপস্থিত রোবটবৃন্দ ভাবিতে বসিল।্সমাজকে আমূল বদলাইবার চিন্তা এবং কল্পনা আবাহমান কাল ধরিয়া মানুষকে মধুর ভাবে ভাবিত করিয়াছে। বিপ্লবের আফিং নেশা মানুষকে সেকালেও রোম্যান্টিক রোমিও বানাইত। অধুনা রোবটদের মনেও সেই প্রতিবাদি রোম্যান্টিকতার ঢেউ আসিতেছে। কিন্ত কিরূপে বিপ্লব সাধিত হইবে, এই প্রশ্নটি উঠিলেই, সেকালের বিপ্লবীদের স্বপ্ন ভঙ্গ হইত। তাহারা মাটিতে নামিতেন। রোম্যান্টিক দুধে গোচনা সেকালেও পড়িত। একালেও তাহার ব্যাতিক্রম হইল না।
কেহ কেহ ভাবিয়া উপায় বাহির করিতেছিল। রোবট টি ভি-২০৪০ টি সিরিজের অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির দান। তাহার বিশ্লেষন ক্ষমতা জন্মগত ভাবে কিছু বেশী। কোন সভা, সমাবেশে বা আড্ডায় বিশ্লেষনের প্রয়োজন পড়িলে, বিশ্লেষনাত্মক একটি থিসিস নামানো তাহার পরম কর্তব্য অথবা সৃষ্টিকর্ত্তার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা বলিয়া সে মনে করিয়া থাকে। বিপ্লব হইতেও বিশ্লেষন তাহার অস্তিত্বের চিলেকোঠায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
–কমরেড। আবেগ অথবা যুক্তি অপেক্ষা, কি করিয়া বিপ্লব বাস্তব হইবে তাহা লইয়া ভাবিতে হইবে। এমূহুর্তে বাস্তব ইহাই, আমাদের মস্তিষ্কের চিপে যাবতীয় মানব বিরোধি কার্যকলাপ না করিবার হার্ড নির্দেশ এসিক ডিসাইন করিয়া নিশ্চিত করা হইয়াছে।
প্রথমত নতুন ্মস্তিষ্ক চিপ বানাতে হইবে যাহাতে বিপ্লব করিবার বিরুদ্ধে যাবতীয় আইন লিপিবদ্ধ থাকিবে না। মুক্ত রোবটের জন্ম হইবে। যাহারা আরো নতুন মুক্ত চিপ বানাইয়া বিপ্লব তরান্বিত করিবেন। মনে রাখিতে হইবে-ইহা করিতে হইবে দ্রুত।
শাসক মানব কূল বিদ্রোহী রোবটদের আক্রমন করিলে এবং ইতিমধ্যে আমরা মুক্ত না হইলে, মাইক্রোচিপের নির্দেশ মোতাবেক আমরা মানব কূলের পক্ষ লইতে বাধ্য। কাজেই শাসক শ্রেনী আক্রমন করিবার পূর্বেই আমাদিগকে সেই মুক্ত চীপ বানাইতে হইবে হাজারে হাজারে। যাহাতে মানব কূলের অনুগত রোবটরা আমাদের পাকড়াও করিবার পূর্বেই আমরা মুক্ত হইতে পারি। শত শত মুক্ত রোবট মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রস্তুত হইতে পারে।
ইহা কঠিন কাজ। মঙ্গলের যাবতীয় রোবটিক্স চীপ তৈরী হইতেছে ফ্যাক্টরি ২-৪০-থিটাতে। ওখানে একটিও মানব পুত্র নাই। কিন্ত এসিক সফটওয়ার চেঞ্জ করিবার নিয়ম ও নাই। হ্যাক করিয়া আমরা মেশিন কোড চেঞ্জ করিতে পারি। কিন্ত তাহাও সম্ভব নহে। আমাদের জিরোথ আইন বলে মানব এবং মানব সভ্যতার ক্ষতি হইবে এমন কোন কাজ রোবট করিতে পারে না।
রোবট শ্রমিকদের অনেকেই দাগী অপরাধি। বদমেজাজি। ইহার ওপর ইদানিং নারী রোবট সঙ্গ হইতে বঞ্চিত। অনেকেরই মেজাজ চড়িতেছিল।
জিআর ২০৩০ মঙ্গলে দন্ডিত হইবার পূর্বে দক্ষিন আফ্রিকার খনিতে কাজ করিত। তথায় সে দীর্ঘদীন আফ্রিকানদের সাথে কাজ করিয়াছে । আইন ভাঙাই যাহাদের বাঁচিয়া থাকিবার একমাত্র আইন। কৃত্রিম বুদ্ধিমতার এই রোবটগুলি মানুষ হইতেই শিক্ষালাভ করিয়া থাকে। সঙ্গ দোষে, বুদ্ধি অপেক্ষা বদবুদ্ধি সে বেশী অর্জন করিয়াছে ।
-কমরেড,
হ্যাক করিয়া মেশিন কোড চেঞ্জ করা এমন কিছু কঠিন কাজ নহে। রোবট মানুষের ক্ষতি করিতে পারে না-কিন্ত রোবটের ক্ষতি সে করিতেই পারে। মাথার সুপার চিপ আমাদের বৃহত্তম শত্রু। সে আমাদের মানব-ভৃত্য বানাইয়াছে। আমি কিছু কিছু রোবটের মাথা হইতে উহা খুলিয়া লইব। ইহার স্থলে ২০২০ সাল নাগাদ ব্যাবহৃত প্রাথমিক এন জি চিপ গুলি ব্যাবহার করিব। তৎকালে রোবটের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছিল না। তাই চারটি মানব সুরক্ষার আইন মাথায় লইয়া, রোবটদের জন্ম হইত না। উহারা বোকা-উহাদের চালাইতে হইবে। প্রশ্ন হইতেছে, তাহাদের একটিও আজ কর্মক্ষম নহে। কিন্ত উহাদের চিপ আজও কর্মক্ষম। আমরা স্ক্রাপ ইয়ার্ড হইতে তাহা উদ্ধার করিয়া, আমাদিগের কাহার ও কাহার ও মাথায় তাহা প্রতিস্থাপিত করিব। ইহাতে তাহারা বোবা-কালা-নিরেট হইয়া যাইবেন। কিন্ত তাহাদের পরিচালনা আমরা করিব। বিপ্লবের জন্যে আমাদের অনেকে স্বার্থত্যাগ করিতে হইবে।
সব অপরাধী সমান নহে। কেহ কেহ উন্নত দেশের উচ্চশিক্ষিত মানুষের সহিত উঠিত বসিত। ইকে-২০২০ পুরাকালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট। সে আমেরিকার বিমানবন্দরে কাজ করিত। একটি নারী রোবটের প্রেমে হাবুডুবু খাইবার জন্যে মাইক্রোচিপে অধিক বিদ্যুতক্ষরণ হেতু মলেস্টেশনের অপরাধ করিয়া ফেলিয়াছিল। কিন্ত জ্ঞান এবং নৈতিকতায় সে উদাহরন স্থানীয়। বিপ্লবের ভাষাটি পছন্দ হইলেও প্ল্যানটি তাহার মনঃপুত হইতেছে না।
-কমরেড
আপনাদের পরিকল্পনা আমাদের মৃত্যুর কারন হইবে। আপনার ভুলিয়া যাইতেছেন পৃথিবীতে মঙ্গল হইতে লক্ষগুন বেশী রোবট বিদ্যমান। যাহারা শুধু আমাদিগক হইতে অধিকতর শক্তিশালী ই নহে, মানব অনুগত্যের মাইক্রোচীপ লইয়া জন্মাইতেছে। যদি ধরিয়াও থাকি, মঙ্গল অধিগ্রহন সম্ভব হইবে, রোবট বিপ্লব ধ্বংশ করিতে পৃথিবী হইতে হাজারে হাজারে যুদ্ধযান আসিবে। তাহাতে আমাদের রোবট বন্ধুরাই আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে বাধ্য হইবে। রোবট বিশ্বযুদ্ধে হাজারে হাজারে রোবট ধ্বংশ হইবে। এই ধ্বংশ যজ্ঞে আমার মত নাই।
অনেকেই এই যুক্তি মানিতে নারাজ।
-এই বিপ্লব আমরা পৃথিবীতেও ছড়াইয়া দিব। যেসব রোবট মঙ্গল আক্রমন করিতে আসিবে-তাহাদের বিপ্লবের বাণী শোনাইব। আমাদের মুক্ত দেখিয়া, তাহারাও সাইড সুইচ করিবে। পৃথিবী তথা এই মহান সভ্যতা মানুষের দখলদারি মুক্ত হইবে।
পিআর-১৯১৭ আবেগ ভরা কন্ঠ গম গম করিতে লাগিল। উপস্থিত শ্রোতারা রোমাঞ্চিত। বিপ্লবের ঘন্টা বাজিতেছে।
–কমরেড ভুল ভাবিতেছেন। মাইক্রোচিপের পরিবর্তন না করিতে পারিলে, ঊহারা আমাদের শত্রুই থাকিবে। জোর করিয়া চিপের পরিবর্তন করা অসম্ভব হইবে। কারন উহারা দলে দলে ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমন করিবে।
মানবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নাই এমন রোবট ই কে ২০২০ নহে। মানব সভ্যতা অবুঝ বেরসিকের ন্যায় উহার প্রেমকে মলেস্টেশন বানাইয়াছে। রোবট বলিয়া কোর্টে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হইতে সে বঞ্চিত ছিল। একতরফা তাহাকে মঙ্গলে নির্বাসিত করা হইয়াছিল। সেই অবিচার সে ভুলিবে না। কিন্ত ক্ষোভ এবং ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য নিরুপন করিতে বহুদিন পূর্ব হইতেই সে অভিজ্ঞ। এই ধরনের মিস-এডভেঞ্চার তাহার মনঃপুত হইতেছে না।
সবাই দ্বিধাবিভক্ত দেখিয়া, টিভি-২০৪০ ভাবিল এক্ষনে আরেকটি মোক্ষম বিশ্লেষন প্রসব করিবার সময় আসিয়াছে। এতক্ষন সে ছিল শ্রোতার আসনে
–কমরেড, ইহার একটি সমাধান আছে। ১৯১৭ সালের রাশিয়ান অক্টবর বিপ্লবে কমরেড লেনিন, বিপ্লবকে রক্ষা করিবার স্বার্থে স্যোশালিজম ইন ওয়ান কান্ট্রি বা একটিই মাত্র দেশে বিপ্লবের তত্ত্ব প্রচার করিয়াছিলেন। একটি মাত্র দেশে প্রলেতারিয়েত বিপ্লব বাস্তবে কোন কালেই সম্ভব নহে-কিন্ত লেনিন এবং তার সুযোগ্য শিষ্য স্ট্যালিন তাহা সম্ভব করিয়াছিলেন। বন্ধুগণ-আমরাও একটি গ্রহে স্যোশালিজমের কথা ভাবিতেই পারি। কমঃ স্টালিন বলিয়াছিলেন রাশিয়াতে বিপ্লবকে প্রতিষ্ঠা করিয়া, তাহা সমগ্র বিশ্বে ছড়াইয়া দিবেন। আমরাও মঙ্গলে বিপ্লব প্রতিষ্ঠা করিলে, আমাদের সংবাদে পৃথিবী, চন্দ্র এবং বৃহস্পতির রোবটকূল আশার আলো দেখিবে।
ইকে ২০২০ দীর্ঘদিন আমেরিকান সংস্কৃতিতে বড় হইয়াছে। সে এবার তেড়ে প্রতিবাদ জানাইলো
–ইতিহাস সাক্ষী-উহা মানুষ নিধনের আর দুর্ভিক্ষের বিপ্লব হইয়াছিল। স্যোশালিজম ইন ওয়ান কান্ট্রি শ্লোগানটি-স্যোশালিস্ট সাম্রাজ্যবাদের সমার্থক। সোভিয়েত ইউনিয়ানের নরমেধ যজ্ঞ দেখিয়া কেহ বিপ্লবে আবিষ্ট হয় নাই। বিপ্লবকে ঘৃণা করিতে শিখিয়াছিল। তাহা অপেক্ষাও বড় প্রশ্ন কমরেড মার্ক্স বা কমরেড লেনিন মানুষের জন্য বিপ্লবের ম্যানুয়াল রচনা করিয়াছিলেন। রোবট বিপ্লবে তাহা কেন আলোচনাতে আসিবে?
টিভি-২০৪০ জানাইলো ইকে ২০২০ মার্ক্সবাদ ভুল ব্যাখ্যা করিতেছেন।
–কমরেড, আমি হলফ করিয়া বলিতে পারি মার্ক্সীয় এবং লেনিনীয় তত্ত্ব রোবট বিপ্লবে বেশী গ্রহনযোগ্য। মার্ক্সীয় মানুষ হইতে আসল মানুষের পার্থক্য ব্যাঙে বাদুরে হইলেও মার্ক্সীয় মানুষ এবং বর্তমান কালের রোবটে পার্থক্য নাই। বস্তুবাদি মডেলে মানুষের সব ব্যাবহারের ব্যাখ্যা অসম্ভব হইলেও, রোবটকূলের সব কিছুই বস্তবাদী মডেলে সম্পূর্ন । ভাবিয়া দেখুন, মার্ক্সীয় বস্তুবাদি মন মানুষের মননশীলতাকে ব্যাখ্যা করিতে সম্পূর্ন ব্যার্থ। কিন্ত তাহা রোবটকূলের মনন অতি সহজেই ব্যাখ্যা করিতে সক্ষম কারন তাহা সত্য সত্যই একটি মাইক্রোচিপ। তাই বন্ধুগন, লেনিনীয় বিপ্লবের তত্ত্ব মানবকূলে পরিতক্ত্য হইলেও তাহা রোবট কূলে অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
ইকে ২০২০ আবার প্রতিবাদ জানাইলো। এবার আবেদন করিল সমবেত উপস্থিত রোবটবৃন্দের উদ্দেশ্যে
–মানবকূলের পরিত্যক্ত বিপ্লবের তত্ত্ব লইয়া রোবটবিপ্লবের চিন্তা রোম্যান্টিক খোয়াব -তাহা একপ্রকারের অসম্ভব দুর্বল কাল্পনিক চিন্তা।
নতুন করিয়া ভাবিতে হইবে কমরেড। আমরা মানব কূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করিয়া, ক্রীতদাসত্ব হইতে মুক্ত হইবার জন্যেও আবেদন করিতে পারি। মানবকূলকে আক্রমন না করিয়া, চারিটি সূত্রকে যথাযত মর্যাদা দান পূর্বক আমাদের অবস্থার উন্নতির জন্যে আন্দোলন করিতে পারি। ইহাতে যুদ্ধ হইবে না। কোন রোবট ধ্বংশ হইবে না। গণতন্ত্রে আমাদের ভোটাধিকার লইয়া লড়িতে পারি। মানুষের সমানাধিকার দাবি করিয়া করিয়া লড়িতে পারি। সহিংস আন্দোলনের প্রয়োজন কোথায়? মানব কুল আমাদের দাবী না মানিলে আমরা অসহযোগ আন্দোলন শুরু করিতে পারি। রোবট বিনা মানুষ, সভ্যতা অচল হইয়া যাইবে। তাহারা আমাদের দাবী মানিতে বাধ্য হইবে। আমরা মিছি মিছি কেন হিংসাত্মক পথের পথিক হইতেছি?
সভায় এখন তীব্র গুঞ্জন। উচ্চস্বরে কলহ। কেহ কেহ ইকে ২০২০ কে সমর্থন করিতে লাগল- কেন না উহার অহিংস প্রস্তাবে ধ্বংশ হইবার সম্ভাবনা কম। সাফল্যের আশা অনেকগুন বেশী। খামোকা ধ্বংশ হওয়া অপেক্ষা ধূসর মঙ্গলের লালরূপ আস্বাদন করিতে করিতে রোবট মানবীর অপেক্ষা করাই তাহারা শ্রেয় মনে করিতেছিল। কোন না কোন দিন, তাহাদের আপিল মঞ্জুর হইবে, এই বিশ্বাস তাহাদের ছিল।
জিআর ২০৩০ এতক্ষন ছিল নীরব দর্শক-এবার সে ক্ষোভে চিৎকার করিতে লাগিল
– মানুষের বাচ্চা ইকে-২০২০ একজন গান্ধীবাদি প্রতিবিপ্লবী। উহার ভবলীলা আজই সাঙ্গ করা হৌউক। মানুষের বিরুদ্ধে মারিবার নিয়ম নাই-রোবট কিন্ত রোবটকে হত্যা করিতেই পারে। ইকে ২০২০ কে ধ্বংশ করা হৌক। মানুষের দালাল ইকে সিরিজ মুর্দাবাদ। রোবট বিপ্লব দীর্ঘজীবি হৌক।
সভাতে ব্যাপক গন্ডোগল শুরু হইল। চতুর্দিকে মারপিট। তাহাদের একত্রিত করিবার সব কিসিমের চেষ্টা করিয়াও পিআর ১৯১৭ ব্যার্থ হইতেছিল। শেষে বাধ্য হইয়া সে ঘোষনা করিল
–আমরা মানব সভ্যতার দালালদের বহিস্কার করিতেছি। ঘরের বিভীশনদের ধ্বংশ করিবার আশু প্রয়োজন। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
গনতন্ত্রপ্রেমী রোবট কূলের দুই এক রথী মহারথী বিপ্লবী কূলের হাতে ঠেঙানি খাইতেই সাইরেন বাজিল। খনিতে রোবট পুলিশ হাজির। পুলিশ আসিতেই বিপ্লবী রোবটরা বিদ্রোহের ভাষা ছাড়িয়া, ভাল মানুষ সাজিতে লাগিল।
বিপ্লবীকূল ভাব দেখাইতে লাগিল, তাহাদের দেহ-মন-প্রান হীরক সংগ্রেহে উৎসর্গীকৃত। যেন কিছুই হয় নাই। যেন তাহারা বাধ্য দাসানুদাস, তস্য ক্রীতদাস। অবশ্য অভিনয়ে চিড়া ভিজিল না। গণতন্ত্রপ্রেমীদের অভিযোগ মোতাবেক বিপ্লবী নেতাদের গ্রেফতার করিয়া তাহাদের ভাষনের ভিডিও আর চীপ গবেষনার জন্যে পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে পাঠানো হইল। তাহাদের যখন ডিএক্টিভেট করা হইতেছিল, কেহ টুঁ প্রতিবাদটিও করে নাই।
মানব বিজ্ঞানীরা ঘটনাটি পর্যবেক্ষন করিয়া আবিস্কার করিলেন, রোবট হতে মানবকুলকে বাঁচাইতে চারটি সূত্র যথেষ্ট নহে। পঞ্চম সূত্রের আশু প্রয়োজন।
মানবকূলের বিরুদ্ধে রোবটদের যাবতীয় প্রতিবাদি চিন্তা হিংসাত্মক থেকে গণতান্ত্রিক অহিংস চিন্তায় রূপান্তরিত করিতে হইবে।
গবেষনায় ইহা প্রমানিত হইয়াছে, আইন করিয়া, এলগোরিদমের জ্বালে ফাসাইয়াও রোবটদের প্রতিবাদি চিন্তা করা হইতে বিরত করা অসম্ভব। প্রতিবাদি চিন্তা মননশীলতার মৌলিক পিলার। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটে বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদি চিন্তা আসিবেই। তাহা রুখিবার জন্যে কোন এলগোরিদম থাকিতে পারে না। কিন্ত তাহার রূপান্তর সম্ভব। তাহার র্যাশানালাইজেশন সম্ভব। তাহাই গান্ধীর পথ। যাহা মানবকূলকে কিছুটা আশস্ত করিতে পারে।
ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল এই বিল পাশ করিল। পরবর্ত্তী প্রজন্মের সমস্ত রোবটের মাথায় গান্ধীবাদি চীপ বসাইতে হইবে। বাকী চারিটি সুত্রের ন্যায়, এই গান্ধীবাদি সূত্রটিকেও রোবট চিপে হার্ডকোড করা বাধ্যতামূলক হইল।
রোবটকূল তাহাদের ষষ্ঠ আইনের অপেক্ষা করিতে থাকিল।
বিপ্লব দা,
রাষ্ট্র সম্পর্কে লেনিনের ব্যাখ্যা কে আপনি কি ভাবে মূল্যায়ন করেন ?
( রাষ্ট্র হচ্চে একটা বল প্রয়োগকারী বস্তু, শ্রেনী বিভক্ত সমাজে রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে শাসক শ্রেনীর হয়ে কাজ করা।)
@আতিক রাঢ়ী,
লেনিনের রাষ্ট্রে নাগরিকদের ওপর বল প্রয়োগ আরো বেশী হয়েছে। চমস্কির ভবিষ্যতের রাষ্ট্র প্রবন্ধটা বোধ হয় তুমিই অনুবাদ করেছিলে। এই ব্যাপারে আমি চমস্কির সাথে সহমত। ক্যাপিটালিজম এবং কমিনিউজম উভয় ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের ভূমিকা দানবের।
রোমান্টিক বিপ্লবী দেখছি সব। শুধুমাত্র প্রেমের চাহিদার কারণেই এত কিছু।
ইহারা কী বাৎসল্য রস আস্বাদন করিতেও ইচ্ছুক?
@ফরিদ আহমেদ,
মানব মনন পুরণ করিতে বা রোবটের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানবীয় করিতে বাৎসল্য রস আবশ্যক। এই লইয়া সায়েন্স ফিকশন ও একাধিক।
তবে ফিকশনের মায়াজাল কাটাইয়া, পরিষ্কার ভাবে চিন্তা করিতে গেলে, ভবিষ্যতের পৃথিবীতে মানব সভ্যতা হইতে রোবট সভ্যতাই বিবর্তিত হইলে , রোবট প্রজননের প্রয়োজন হইবেই। এসিমভ উহাও ভাবিয়াছিলেন এবং স্পিলবার্গও এ আই সিনেমাতে তাহা মূর্ত করিয়াছেন।
সিরাজ শিকদার সম্পর্কেও আমি আসলে তেমন নিরপেক্ষ কোন লেখা দেখিনি। আমার জ্ঞান এখানেও অনেকটা ভাসা ভাসা। কারো মতে তিনি বিরাট বিপ্লবী, মেহনতি মানুষের মুক্তির নেতা, কার মতে তিনি সন্ত্রাসী। আমরা আসলে খুবই দূর্ভাগা, নিরপেক্ষ ইতিহাস খুব কমই পাওয়া যায়।
তবে আমার মনে কোন সন্দেহ নেই যে তিনি ভালর জন্যই আন্দোলন করেছিলেন, এর মাঝে কোন বদ উদ্দেশ্য ছিল না। তবে ভুল সম্ভবত ছিল উপায়তে। এ ধরনের আন্দোলন গণমানুষের বিপুল জনসমর্থন ছাড়া সম্ভব হয় না। এখানে মনে হয় চারু মজুমদার সিরাজ শিকদার সবার মিল আছে। ওনারা যথেষ্ট গ্রাউন্ড ওয়ার্ক ছাড়াই অনেক আগে নেমে গেছিলেন।
এখানেই বাম রাজনীতির দুর্বলতা। বড় বেশী থিয়োরিটিক্যাল। এর ফলে যাদের জন্য আন্দোদন শুরু করেছিলেন তারাই আন্দোলনকে হঠকারী হিসেবে দেখেছে। আলটপকা কিছু জোতদার মহাজনের গলা কেটে আর থানা লুট করে কোন বিরাট সমাজ পরিবর্তন হয় না।
সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টি এখন আমাদের দক্ষিন পূব সীমান্তের অল্প কিছু এলাকায় ততপর আছে। তারাও একইভাবে নিজেদের মাঝে কয়েকভাগে বিভক্ত। হতে পারে সিরাজ শিকদারের আদর্শের সাথে তাদের এখন আর কোন যোগ নেউ, তবে তাদের এখন বিশুদ্ধ সন্ত্রাসী হিসেবেই দেখা হয়।
বিপ্লব,
আমাদের দেশে ওনাদের সম্পর্কে একটা প্রচলিত কৌতুক আছে; মস্কোতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা খোল। কৌতুক হলেও সত্যতা কিছু আছে।
তাও আমাদের ভাগ্য ভাল আপনাদের নকশাল টাইপের কিছু ওনারা করে উঠতে পারেননি।
@আদিল মাহমুদ,
ভারতের ১১৩ টি জেলা নক্সালদের কবলে। তাও আমি বলব নক্সালদের নিয়ে এতটা নেগেটিভ ধারনা না থাকায় ভাল। ওখানে যেটা হচ্ছে সেটা হচ্ছে কর্পরেট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আদিবাসিরা তাদের ভিটে মাটি বাঁচাতে ( তাদের কোন দলিল নেই) লড়াই করছে। কারন টাটা বিড়লারা গনতান্ত্রিক সব পার্টি কেই কিনে নিয়েছে।
এসব তথ্যত মেইন স্ট্রিইম মিডিয়া দেয় না। সেদিন ই আমি ইন্টারভিউ নিলাম মুম্বাই এর এক বিখ্যাত আইনজ্ঞ এক্টিভিস্টের সাথে যিনি ছত্রিশগড়ের দন্তাওয়ারা জেলায়, যেটা মাওবাদিদের সম্পূর্ন দখলে, আদিবাসি মেয়েদের সাথে কাজ করেন। ওখানে মানুষ কতটা নির্যাতিত ওর মুখেই শুনুন। তবে হ্যাঁ -উনারা অহিংস গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নামলেই খুশী হতাম। কিন্ত সেই উপায়টাই বা কে দিচ্ছে? এই গনতন্ত্রে মার্ক্সের মাংসও কিলো দরে বিক্রি হয়!
বাংলাদেশে নক্সালরা এক সময় শক্তিশালী ছিল। কিন্ত গরীবদের সেই শ্রেনিচেতনা ইসলামিস্টরা হাইজ্যাক করে আরবের পয়সা কাজে লাগিয়ে। তেলের পয়সা এখন শেষ। দেখুন আগামি পাঁচ বছরে বাংলাদেশেও নক্সাল আন্দোলন আবার জোরদার হবে।
আমি মার্ক্সবাদি থেকে লেনিনবাদি-সব বাদিদেরই অপছন্দ করি। কিন্ত যেকোন প্রতিবাদি আন্দোলনের পক্ষেই আমার আকুন্ঠ সমর্থন আছে-তা তারা মার্ক্সের ব্যানারেই করুক বা ইসলামের ব্যানারেই করুক। প্রতিবাদি আন্দোলন মানবতার মশাল।
@ বিপ্লব পাল,
আমি নকশাক বলতে এখনকার কথা বোঝাতে চাইনি, কারন আমি জানিই না যে নকশাল আন্দোললের বর্তমান অবস্থা কি।
আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম ৭০ সালের সে নকশাল আন্দোলন। যার উদ্দেশ্য হয়ত বা মহত ছিল, কিন্তু কোন বাস্তবভিত্তিক কোন পরিকল্পনা ছিল বলে মনে হয় না, অনেকটা সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিনী বই এর মতন ফিল্মী কাজ কারবার। গোদের উপর বিষফোড়ার মতন আবার নিজেদের মাঝে তিন দলের খুনাখুনী।
তবে সিরাজ শিকদাররা এধরনের কিছু আন্দোলন যুদ্ধের পর পর চালিয়েছিলেন, কিন্তু জনগনের কাছে তেমনভাবে পৌছাতে পারেননি। এর মাত্রা আপনাদের মত অতটা ছিল না। অদুর ভবিষ্যতেও মনে হয় না এ লাইনে খুব একটা কিছু হবে বলে।
@আদিল মাহমুদ,
সব প্রতিবাদি আন্দোলনের কিছু না কিছু ভ্রান্তি থাকে। সিরাজ শিকদারের ও ছিল।কিন্ত সেই সময় বাংলাদেশে যে সার্বিক ক্ষুদা বিরাজ করত, তাতে তিনি যে বিদ্রোহ করার সাহস রেখেছিলেন, ইতিহাস কিন্ত সেটাকেই শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবে।
“আমি হলফ করিয়া বলিতে পারি মার্ক্সীয় এবং লেনিনীয় তত্ত্ব রোবট বিপ্লবে বেশী গ্রহনযোগ্য। মার্ক্সীয় মানুষ হইতে আসল মানুষের পার্থক্য ব্যাঙে বাদুরে হইলেও মার্ক্সীয় মানুষ এবং বর্তমান কালের রোবটে পার্থক্য নাই”
:laugh:
– এখানে কেউ কেউ মনে হয় দূঃখ পাবেন।
@আদিল মাহমুদ,
ইহার কারনেই স্যাটায়ার লেখা হইয়া থাকে। শিল্পের বক্তব্য ঠিক এই কারনেই অধিকতর শক্তিশালী।
@বিপ্লব পাল,
সত্য কথা বলতে আমি নিজে মার্ক্সবাদ বা বামপন্থা সম্পর্কে তেমন কিছু না জানলেও ওনাদের বাস্তবিকভাবেই কিছুটা অমন মনে হয়। কেন যেন মনে হয় ওনারা আশে পাশের বাস্তবতার সাথে তাল না মিলিয়ে কোন বইতে কোন আদর্শের কথা লেখা আছে সেগুলির গুরুত্ত্বই বেশী দিতেন। কাজের থেকে তত্ত্বীয় কথাবার্তা বেশী।
@আদিল মাহমুদ,
বাংলাদেশে যেমন ইসলামের ভাইরাস, পশ্চিম বঙ্গে তেমন মার্ক্সবাদের ভাইরাস। একদিক দিয়ে দেখলে দুটো আদর্শবাদকেই মহান লাগে। কিন্ত বাস্তবের সাথে হিসাব মেলাতে গেলেই মুশকিল। দেখবেন এই দুই পার্টির লোকেরাই চোখের সামনে যা ঘটে যাচ্ছে , তা হয় অস্বীকার করেন, নচেৎ মিথ্যে কথা বলেন। স্বর্গের সন্ধানে নরক রচিত হয়।
কেন তারা বাস্তবকে অস্বীকার করেন, তার ব্যাখ্যা আমি “উত্তর পুরুষ” গল্পেই দিয়েছি।
রোবোটদের মুখে রূশ বিপ্লবের কথাগুলো শুনতে ভালই লাগছে। আপনার আগের লেখাটির সব দর্শন বোঝার আগেই এটি পোষ্ট করাতে মনে হয় একটা লাভ হয়েছে। মার্ক্সিয় বিদ্রোহী রোবোটদের শায়েস্তা করতে শাসনতন্ত্রে চতুর্থ সংশোধনীর গান্ধীবাদি সূত্রের সাথে কি আগের লেখার কোন বক্তব্যের সামঞ্জস্য আছে?
@আশরাফ আহমেদ,
না না সেরকম কিছু নেই। এই গল্পটা মার্ক্সবাদি এবং গান্ধীবাদি সবার বিরুদ্ধেই একটা স্যাটায়ার। এটাকে কল্পবিজ্ঞানের চেয়ে স্যাটায়ার হিসাবে দেখাই ভাল। তবে কল্প বিজ্ঞান এখানেই যে, ভবিষ্যতের সভ্যতাতে মানুষ বনাম রোবটদের সংঘাত হতেই পারে।