আমি সাধারনত টিভি একটু কম দেখি। আগে তাও যা দেখতাম এখন ইন্টেরনেট নামক বস্তুটি বাসায় আনার পরে তাও দেখা হয় না। তবে মাঝে মাঝে একটু খবর দেখা হয় এই যা। তো সেদিন এই রকমই একটু খবর দেখতে বসলাম। খবর শুরু হওয়ার সাথে সাথে একটা ধাক্কা খেলাম।চ্যানেলটা আরেকবার চেক করে দেখালাম, খবরের চ্যানেলেই আছে তো নাকি আবার “ বিবাহ-যোগ্যা সুন্দরী পাত্রী রহিয়াছে এখন পাত্র চাই, এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। না না হাসবেন না। এই রকম কোন চ্যানেল যদি নাও থাকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি কিছু দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বিভিন্ন চ্যানেলে ঈশ্বরের আশীর্বাদযুক্ত পাথর
বিক্রির রমরমা বিজ্ঞাপন চলছে। বিষয়গুলো অনেকটা এই রকমঃ আপনার ব্যাবসার দিনকাল কি খারাপ যাচ্ছে? আপনি আর্থিক উন্নতি করতে পারছেন না? পরীক্ষায় পাশ করতে পারছেন না? বিবাহোত্তর দাম্পত্ত জীবন সুখের নয়? কাউকে বশ করতে চান?
এবং অতি অবশ্যই প্রনয় ঘটিত সমস্যা। এখন ওনারা যেভাবে দূর্নিবার গতিতে এগিয়া চলেছেন তাতে করে টিভিতে পাত্র-পাত্রী চাই,
এবং পাত্র-পাত্রীকে লাইভ দেখান সময়ের মাত্র।
আমরা মনে হয় মুল টপিক থেকে সরে যাচ্ছি। যাই হোক।, আমি যখন শিওর হলাম, নাহ আমি খবরই দেখছি তখন খবরের দিকে মনোযোগ দিলাম। পাঠিকা সালাম-টালাম বিনিময়ের পর বললেন, মুল খবরে ঢোকার আগে আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি সিটিসেল সংবাদ শিরোনাম। ভিরমি খেলাম। সিটিসেল সংবাদ শিরোনাম বলতে কি বুঝাল আমি শত চেষ্টা করেও বুঝে উঠতে পারলাম না।
তারপর ভাবলাম এই রকম একটি মিডিয়াতে যখন বলেছে তখন এর নিশ্চই কোন মানে আছে যা আমি জানি না। নিকৃষ্ট ভাষা জ্ঞ্যানের জন্য নিজের উপরে খুবই বিরক্ত হলাম। তারপর ভাবলাম, কি আর করা যাবে, সবাইতো আর সব কিছু জানে না। তাই আমি আমার অজ্ঞতাকে ভুলতে চেষ্টা করতে করতে খবর দেখতে লাগলাম।
পাঠিকা দশ মিনিটের মত সংবাদ পাঠ করে বললেন এবার নিচ্ছি IFIC ব্যাংক সংবাদ বিরিতি। আমি হতভম্ব। বাকরুদ্ধ। এবার নিজের উপরে রীতিমত রাগ হল। প্রতিজ্ঞা করলাম খবর শেষ হওয়া মাত্র এই শব্দগুলো গুগল করে মানে বের করতে হবে। আফসোস, ধিক নিজের প্রতি, কি অজ্ঞতা, কি অজ্ঞতা?
যাই হোক খবরের পরবর্তি অর্ধেক দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কেননা যাওয়ার আগে সুন্দরী পাঠিকা যে মিষ্টি হাসি দিয়ে অপেক্ষা করতে বলে গেছে তাতে করে আমি এই দুই চার মিনিট কোন ছাড় সারা জীবন এখানে ঠায় অপেক্ষা করতে পারি। তো মিনিট পাচেক পরে মাড্যাম আসলেন। যথারীতি সংবাদপাঠ করা শুরু করলেন।
কিছুক্ষন পর বললেন,”এবার আপনাদের জন্য রয়েছে গ্রামীনফোন খেলার সংবাদ।“ এবার আর আমি ছাড়ার পাত্র নই। বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার ওটি হবে না। মোটামুটি সব ধরনের খেলার নামই শুনেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন গ্রামীণফোন নামে যে কোন খেলা আছে ও আমি কস্মিনকালেও শুনিনি। তাও নাকি আবার বাংলাদেশে। নাহ আমি মানতে পারছিলাম না। তারপরও বিশাল এই পৃথিবীর কতটুকুই বা জানি এই ভেবে গুগল করে দেখলাম গ্রামীনফোন বাংলাদেশের একটি মোবাইল কোম্পানি। কি তাজ্জব কথা, ঐটা জানতে আবার গুগল করতে হয় নাকি? ঐ কাহিনী তো আপনি আমি সবাই জানি। তারপরেও আমি আরও বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন কায়দায় গুগল করেও গ্রামীনফোন খেলা নামে কোন খেলার সন্ধান পেলাম না এবং বলাই বাহুল্য যারপর নাই হতাশাগ্রস্থ হলাম। অত্যন্ত বিষন্ন চিত্তে খবর দেখা শেষ করে(এর মাঝখানে আবার Partex বানিজ্য সংবাদও দেখিয়েছে,) একটু বের হলাম। দেখি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে মনের বিষন্ন ভাবটা একটু দূর করতে পারি নাকি। তো, আমার একটা বন্ধুর বাসায় গিয়ে চা-টা খাওয়ার ফাকে সাবধানে কথা বের করার একটা পুরন ট্রিক্স কাজে লাগালাম। বললাম তুই কি জানিস, বলে ওকে সব বললাম। ওর মুখ তখন পূর্বদিগন্তে ওঠা নতুন সুর্যের মত উজ্জ্বল। জিজ্ঞেস করল কেন তুই জানিস না? আমিও কম যাই না।
চটপট উত্তর, জানব কেন? দেখলাম তুই পারিস নাকি। তখন ও আশ্বস্থ হয়ে আমাকে বলল যে ওগুলো হলো স্পন্সর করা বিভিন্ন কোম্পানীর নাম। আমি হাফ ছাড়লাম লম্বা একটা।
ওর বাসার থেকে বের হলাম একটা ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে। যাক শেষ পর্যন্ত উত্তর পেলাম। ধন্যবাদ বাংলাদেশের খবরগুলোকে। তারা মানুষের মনে জানতে চাওয়ার স্পৃহা বারাবার এক মহতি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। অবশ্য মনে মনে একবার নিজেকে বললাম ধিক, ধিক, কি অজ্ঞতা কি অজ্ঞতা….।
সাইফুল ইসলাম,
বেশীদিন ঐ অত্যাচার আর সত্য করিনি।
মাসে মাসে ফাউ ৩০ ডলার খরচ করার মত বড়লোক আমি নই।
সাইফুল,
জ্যোতিষী, আলৌকিক উপায়ে মুশকিল আসান, বা পাত্র/পাত্রী চাই এ জাতীয় বিজ্ঞাপনগুলি যদি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হতে পারে তাহলে টিভিতে আসতে দোষ কি?
এরশাদ আমলে যখন শুধু বিটিভি ছিল তখন মানুষে স্নেহ করে বিটিভির নাম দিয়েছিল সাহেব বিবি গোলামের বাক্স; কারন ৮/১০টার খবরের প৫০ ভাগ থাকত সাহেবের খবর, ২০-৩০ ভাগ থাকতে ওনার স্বঘোষিত ফার্ষ্ট লেডির খবর।
এখন গনতান্ত্রয়নের ফলে দেখা যাচ্ছে নাম পাল্টাচ্ছে। একদিন এটিএন বাংলা দেখছিলাম, বছর দেড়েক আগের কথা। খবর শুরু হল। আগ্রহ ভরে দেখছি দেশের খবর। দেখলাম একজন ভদ্রলোককে (মনে হল পরচুলা পরিহিতি) লোককে নিয়েই খবরের অধিকাংশ সময়। তিনি কোন সভায় কি বানী দিয়েছেন, কোথায় কি পরিদর্শনে যাচ্ছেন, সেখানে ফুলেল সম্বর্ধণা দেওয়া হচ্ছে। গলার মালা প্রায় থুতনীর কাছে চলে এসেছে। মুশকিল হচ্ছে এই ভদ্রলোক কে কিছুতেই ধরতে পারছি না। দেশে তো তখন জেনারেল মঈন আর ফখরুদ্দিনের শাসন। ইনি তো এনাদের কেউ না। তাহলে? এনাদের বা সরকারের এমনকি কোন বড় রাজনৈতিক দলেরো কেউ না বলেই মনে হল। খবরগুলিরও জাতীয় তো অনেক দুরের কথা বলতে গেলে কোনই গুরুত্ত্ব নেই।
ওনার নাম ডঃ মাহফুজুর রহমান, জানতে পারলাম উনিই এটিএন এর গর্বিত মালিক। এরপর থেকে এটা অভ্যাস হয়ে গেল। উনি এবং সাথে সাথে ওনার সুন্দরী গায়িকা স্ত্রী ইভা রহমান চ্যানেলের একটা উল্লখযোগ্য সময় নেন।
@আদিল ভাই,
“”জ্যোতিষী, আলৌকিক উপায়ে মুশকিল আসান, বা পাত্র/পাত্রী চাই এ জাতীয় বিজ্ঞাপনগুলি যদি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হতে পারে তাহলে টিভিতে আসতে দোষ কি?””
কোনো সমস্যা নাই তো। আমি কি বলেছি নাকি কোনো সমস্যা আছে?
আমিতো আপনাকে আরও নিশ্চয়তা দিয়েছি লেখাতে। দেখেননি বোধ হয়। 😀
@সাইফুল ইসলাম,
আমি চাই এগুলি টিভিতেই ঢুকুক।
নিজে টিভি দেখি খুব কম, তখন না দেখার আরো ছূতা পাওয়া যাবে 😀
@আদিল ভাই,
:yes:
ঠিকই বলছেন আদিল ভাই। আপনি যদি বাংলাদেশের চ্যানেলের প্রোগ্রামগুলো
দেখতেন……..। মানে মাথা খারাপ করার মত অবস্থা।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে :-Y ফেলি।
@আদিল মাহমুদ,
ঈদের পর দিন সামুতে একটা পোস্টে দেখলাম এটিএন বাংলার স্লোগানকে খুব সুন্দর ব্যঙ্গ করা হয়েছে।
মূল স্লোগান- এটিএন বাংলা, অবিরাম বাংলার মুখ।
পরিবর্তিত- এটিএন বাংলা, অবিরাম ইভার মুখ!!! :hahahee:
:hahahee: :laugh:
বেদম মজা পাইছি।
তবে ভাই আপনাকে একটা প্রশ্ন করি(রাগন্বিত হইলে :guli: :guli: কইরেন) আপনি কি সত্য সত্য ‘গ্রামীণফোন খেলার সংবাদ’ এর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য গুগলে খুজেছিলেন? নাকি প্রবন্ধে রস আনার জন্য বললেন। মানে ভাই আমি খুব সহজ সরল তো তাই আপনার কথায় কেমন যেন বিশ্বাস করে ফালাইছি আবার মনে মনে আপনার প্রবন্ধের বিশ্বাসযোগ্যতা(এই মানে, সব কথা সত্য কইছেন কিনা!) নিয়ে একটা সন্দেহ জন্মাল ;তাই আর কি।
(মানে মনে কোন প্যাচ ঘোচ রাখতে চাই না,কারো দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকাতেও চাই না তাই আর কি….)
@মুহাইমীন,
না গো দাদা রস আনার জন্যই বলছি। মানে হলো ধরেন সত্যি একটা কথা আমার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুললাম আর কি। সবটাই ভোগাস কাহীনি। 😀
যাই হোক মন্তবের জন্য ধন্যবাদ। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
দেখিলেন তো সহজ সরল মানুষকে কি সহজে প্রতারিত করা যায়। তাই দাদা এটাও এক প্রকার প্রতারণা(রাগন্বিত হইলে :guli: চাই)।
তাই আমার অনুরোধ, ভবিষ্যতে এই সহজ সরল মানুষ গুলারে বোকা না বানাইয়া নিজ ভাষ্যে গল্প না লিখে কোন চরিত্র ব্যবহার করাটাই শ্রেয়। কারণ, প্রতারণা তা সে যে বৈশিষ্ট্যেরই হোক(মধুর নয়তো নিদারুণ) মানুষের ক্ষতি করে ।এতে সবার আগে লেখকের ক্ষতি হয়ঃ তার মানুষ ঠকানোর প্রবণতা বাড়ে। লেখকের এ রকম মধুর প্রতারণাও পরিহার করা উচিত।
ধন্যবাদ।
@মুহাইমীন,
আমি বুঝতেছি না আপনি আসল থীমটা বাদ দিয়ে কেন চরিত্রের পেছেনে লাগলেন?
আর প্রতারনা কেন বলছেন? আমি যদি আপনার কাছে স্বীকার না করতাম তাহলে আপনি জানতেন কিভাবে যে আমি শুধুমাত্র গল্পচ্ছলেই কথা গুলো লিখেছি?
সমালোচনা করতেও জানতে হয়। একজন লেখকের কি লেখা উচিত ছিল ঐটা বলাটাই বোকামি। তারচেয়ে আপনার দেখা উচিত লেখক কি লিখেছে?
কেন লিখেছে? লেখার মান কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আবারও। ভাল থাকবেন।
@সাইফুল ইসলাম,
আপনি নিজে তো জানেন যে, আপনি পুরোপুরি সত্য কথা বলছেন না। আপনি এভাবে উত্তম পুরুষ ব্যবহার না অন্য কোন নাম পুরুষ ব্যবহার করলে এটা কেবল একটি গল্পই থাকত। তা না করায় এটা গল্পের চেয়ে বেশী কিছু হয়েছে। ফলে এটা পাঠকের কাছে আরো চিন্তাজাগানিয়া হয়েছে। আমি কেন এই কথাটা বলেছি তা আপনাকে বুঝতে হলে পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। ধরুন এই প্রবন্ধটি আপনার না হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম প্রবন্ধটি লিখছেন। তাহলে এই লেখাটা পড়ে পাঠক নিশ্চয় উত্তম পুরুষ হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামকেই কল্পনা করবে এবং সে ঘটনাটি কাজী নজরুলের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হিসেবে ধরে নেবে অথচ তা কিন্তু কাজী নজরুলের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়।ধরুন, আপনি একদিন খুবই বিখ্যাত লেখক হয়ে গেলেন, তখন কিন্তু আপনার এই ঘটনা কিংবদন্তিতে পরিনত হবে(যদি আপনি সত্য প্রকাশ না করেন) আমি প্রশ্ন করেছি বলেই আপনি সত্য প্রকাশ করেছেন অথবা ভবিষ্যতে এই নিয়ে আলোচনা করলে হয়ত সত্য প্রকাশ করতেন।আপনি যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন তা একেবারে বাস্তব। সহজ সরল মানুষ কিন্তু এটাকে ঠিকই আপনার ঘটনা মনে করবেন।সেই অর্থে এটা এক প্রকার প্রতারণা( মধুর প্রতারণা)
এই বোকামি করাটা ভাল কারণ সব পাঠকের চিন্তা শক্তির পরিধি সমান নয়। কেও শুধু লেখার চরিত্র নিয়ে চিন্তা করে কেঊ চরিত্রের সাথে প্রেক্ষাপট, কেঊ তার থেকেও বেশী বিষয় নিয়ে চিন্তা করে আবার কারো চিন্তাটা গল্পের লেখকের দর্শনে গিয়ে পৌছায় । আবার কারো চিন্তা তারো বেশী দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। লেখক কি বিষয় নিয়ে লিখবে সেটা লেখকের স্বাধীনতা তবে লেখক যাতে কোন খারাপ কিছু না লেখে সেটা দেখা পাঠকের দায়িত্ব(আমি এখানে আপনাকে ইঙ্গিত করছি না)।
আর হ্যা থীমের কথা বলছেন সেটা অবশ্যই সময়পোযোগী এবং আকর্ষনীয় হয়েছে। লেখার মান নিঃসন্দেহে ভাল।
আমি শুধু আপনাকে সমালোচনা করছি না এরকম উত্তম পুরুষব্যবহার করে ছদ্মবেশী সকল লেখাকেই সমালোচনা করেছি। আমি আপনাকে এই পরামর্শটুকুই দিয়েছিলাম যে এভাবে উত্তম পুরুষ ব্যবহার না করে অন্য কোন নাম ব্যবহার করলে লেখাটা আরো বিশ্বাসযোগ্য হত। কারণ সহজ সরল মানুষ এটাকে আপনার ভাষ্যই মনে করবে( যদিও সহজ সরল মানুষের সংখ্যা নিতান্তই সীমিত)।
এখানে দেখি ফান পোস্ট নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা শুরু হইসে 😕
পড়ে মজা পেলাম। খবরের স্পন্সরগুলোকে একেকজন একেক দৃষ্টিতে দেখে, আমি কোন দৃষ্টিতে দেখব সেটা বুঝতে পারছিনা :-X