মানব প্রকৃতির ভ্রান্ত ধারনার ইতিহাস এবং এর প্রকৃত সরূপ -২
ইমরান হাবিব রুমন
পূর্ব প্রকাশের পর ……
শিশুর জন্মের পর তার স্নায়ুতন্ত্রে কেন্দ্রাভিগ যে সব স্নায়ুসূত্র নিউরোন থেকে তথ্য বহন করে নিয়ে যায় তা যথার্থভাবে অন্তরিত থাকে না এবং যথেষ্ট পুরুভাবে তা গঠিত হবার মত সময় পায় না। এর ফলে মস্তিষ্কে যে তথ্য প্রেরিত হয় তা পথেই হারিয়ে যায় অথবা গোলযোগ ঘটার ফলে ত্রুটিপূর্ণ ভাবে পৌঁছে। যেমন, শিশু তার মায়ের মুখ স্পর্শ করবে এমন তথ্য মস্তিষ্ক থেকে যাবার কথা। কিন্তু কেন্দ্রাভিগ স্নায়ুসূত্র অন্তরিত না হওয়ায় শিশুর হাত হয়তো ভুল নির্দেশ লাভ করে মায়ের চোখে হাত লাগিয়ে দিল।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য শিশুর জন্মের পরপরই স্নায়ুতন্ত্র অন্তরিত হতে থাকে। মায়োলিন স্নায়ুসূত্রাবরক এই অপরিবাহী আবরণ সৃষ্টি করে। শিশুর বয়স যতই বাড়তে থাকে তার স্নায়ুসূত্রগুলো নিপুণভাবে অন্তরিত হতে থাকে। এলোমেলো তথ্য প্রেরণ ও আনুষঙ্গিক ব্যতিচার তখন বন্ধ হয়ে যায়। শিশুর স্নায়ুতন্ত্র এমনিভাবে অন্তরিত হবার আগে তার কাছ থেকে এই নিপুণতা আশা করা ঠিক হবে না। শিশু পাঁচ বছর বয়সে আনেক কিছু নিখুত ভাবে করতে পারে, তবে এই স্নায়ুসূত্র অন্তরিত হবার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। স্নায়ুসূত্র মায়োলিন দ্বারা আবৃত হওয়া একটি পূর্ব নির্দেশিত প্রক্রিয়া মাত্র যা জীনের নকশায় আগে থেকেই প্রোগাম করা থাকে। মানব মস্তিষ্কের জন্য যা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও অনন্য তা হল, স্নায়ুকোষগুলোর মধ্যে যে সংযোগ তা নতুন অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন করে যুক্ত ও বিযুক্ত হবার ভিতর দিয়ে নতুন ভাবে বিন্যস্ত হয়। ফলে অনেক স্নায়ু সংযোগ, অনৈচ্ছিক প্রতিবর্তী ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেখানে সৃষ্টি হয় নতুন স্নায়ুসন্ধি যা ঐচ্ছিক অঙ্গচালনা নিয়ন্ত্রণ করে। অভিজ্ঞতার আলোকে শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের এই বিবর্তন তাকে নতুন স্বাধীনতা দেয় পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের। এই পরিবর্তনটাই হচ্ছে ক্রান্তিক ঘটনা যা মানব শিশুকে অন্যান্য প্রাণীদের মতন প্রতিবর্তী ক্রিয়ার জগতে আবদ্ধ না রেখে চিন্তার জগতে উত্তীর্ণ করে। শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটার অর্থ হল তার অভিজ্ঞতা স্মৃতি হিসেবে তার মস্তিষ্কে বিধৃত হওয়া। একজন মানব শিশুর যা কিছু আপন বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্ব তা আসলে তার স্মৃতিতে ধারণকৃত তথ্য ও ঘটনামালার অপেক্ষক। নতুন অভিজ্ঞতাকে সঞ্চিত পুরানো অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে গ্রহণ ও বর্জনের ভিত্তিতে নির্বাচিত তথ্যকে সাজাতে থাকে মস্তিষ্ক। এই ক্রম সঞ্চিত ও বিন্যস্ত তথ্যই সৃষ্টি করে তার ব্যক্তিত্ব ও আচরণ। এমনকি কি মানুষ তার মস্তিষ্কে বল্কল বা নিওকর্টেক্সের কল্যাণে অতিক্রম করতে পারে তার পুরানো ম্যামেলীয় মস্তিষ্কের প্রভাব, যেখানে অবস্থান করে আবেগ ও অজানা জিনিসের প্রতি ভীতির মত জৈব বৈশিষ্ট্যগুলো। জন্মগতভাবে প্রাপ্ত মানব মস্তিষ্কের গঠন ও জৈব বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু প্রধান নিয়ন্ত্রক নয়। জন্মগতভাবেই কেউ স্বাধীনচেতা, কেউ অধীনতা প্রবণ, কেউ সাহসী, কেউ ভীতু, কেউ নেতা, কেউ সাধারণ- এ কথা বলা যাবে না। মানুষের অভিব্যক্তি ঘটে বাইরে থেকে ভিতরে শিক্ষা-অভিজ্ঞতার প্রভাবে, ভিতর থেকে বাইরে নয়। যেমনটি ঘটে অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে, পূর্বনির্ধারিত পথে।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের প্রতিভা সম্পর্কে অনেক কথা প্রচলিত ছিল, যেমন- আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের তুলনায় বড়, মস্তিষ্কে খাঁজ সাধারণের চেয়ে বেশী ইত্যাদি। অথ্যাৎ বংশাণুর ভূমিকাকেই প্রধান করে দেখা হতো। অথচ আমরা জানি, ছোট বেলায় আইনস্টাইনের মধ্যে কোন প্রতিভায় দেখা যায়নি। স্কুল-কলেজে কোন দিনই ফাষ্ট-সেকেন্ড হননি। শিক্ষান্তে দুবছর বেকার থাকা এবং বহু ইন্টারভিউতে বিফল হবার পর কোনক্রমে জুটিয়েছিলেন এক পেটেন্ট অফিসের কেরানির চাকুরি। যদি জন্মগতভাবেই তিনি প্রতিভাধর হতেন তবে তবে তো প্রথম থেকেই তার স্বাক্ষর থাকতো। আইনস্টাইন বিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে ‘অলিম্পিয়াড একাডেমি’ নামে বিজ্ঞান ক্লাব। যা আইনস্টাইন, তাঁর বন্ধু মাইকেল গ্রসমান এবং আরও কয়েকজন মিলে গড়ে তুলেছিলেন। তাঁরা প্রতি সপ্তাহে আলোচনায় বসতেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল মূলত বিজ্ঞানের দর্শন। সেসময় যেসব দর্শন চিন্তা ইউরোপের জনমানসে প্রভাব ফেলেছিল সেগুলো নিয়ে চর্চা হতো। লেখকদের রচনা পড়া হতো এবং বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারগুলো নিয়ে দর্শনের আলোকে আলোচনা হতো। এই আলোচনাগুলোতেই আইনস্টাইন দর্শন চিন্তার নানা স্রোতের সাথে অবহিত হন, যা তাকে নিজের অবস্থান সন্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
লেখক তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, “… আগেই উল্লেখ করেছিলাম যে মানুষের স্বভাব বিকাশে বংশাণুর প্রভাবই মুখ্য। এবং কোন কোন বৈশিষ্ট্য শুধু বংশাণুর দ্বারায় নিয়ন্ত্রিত হয়, পরিবেশের কোন প্রভাব এই বৈশিষ্ট্যে পড়ে না। এর সমর্থন মেলে অভিন্ন যমজ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। উইলিয়াম ক্লার্ক তাঁর ‘অৎব ডব ঐধৎফরিৎবফ’ বইয়ের ১৮-১৯ পৃষ্টায় লিখেছেন যে অভিন্ন যমজেরা সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে লালিত হয়েও এক আশ্চর্যজনক সাদৃশ্য প্রদর্শন করে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে ভিন্ন পরিবেশে অভিন্ন যমজদের মধ্যে সাদৃশ্য আনয়নে বংশানুর ভূমিকা যমজ নয় এমন দু’ব্যক্তির মধ্যে সাদৃশ্য আনয়নে অভিন্ন পরিবেশের ভূমিকার চাইতে অনেক বেশী শক্তিশালী। স্টিভেন পিঙ্কার তাঁর উল্লেখিত “ঞযব ইষধহশ ঝষধঃব” বইয়ের ৪৭ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন যে অভিন্ন যমজদের মধ্যে প্রাণদ-, ধর্ম ও অন্যান্য বিতর্কিত সামাজিক বিষয়ে চিন্তাধারার এক অদ্ভুত মিল দেখা যায়। অণ্যদিকে অসদ যমজ, যাদের বংশানু ভিন্ন বা দুই ভাই/বোন যারা অভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠে তাদের মধ্যে প্রায়ই দিন রাতের মত তফাত পরিলক্ষিত হয়।”
এখানে লেখক বলেছেন যে কোন কোন বৈশিষ্ট্য শুধু বংশাণুর দ্বারায় নিয়ন্ত্রিত হয়, পরিবেশের কোন প্রভাব এই বৈশিষ্ট্যে পড়ে না। কিন্তু কোন্ কোন্ বৈশিষ্ট্য তা উল্লেখ করলে ভাল হত। আবার যমজদের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় যে প্রায় একই ধরনের শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অভিজ্ঞতা এমনকি অনেক ক্ষেত্রে খাবার, পোষাক এবং পরিবেশের অনেক কিছুই প্রায় একই ধরনের হবার কারণে স্বভাব বা চিন্তার ক্ষেত্রে অনেকটা কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। কিন্তু জন্মের পরপরই যদি যমজদেরকে আলাদা করে একজনকে জ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন সমগ্র বিষয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষত করা হয়। অন্যজনকে যদি আমাদের দেশের এবতাদিয়া মাদ্রাসায় কামিল, ফাজিল ডিগ্রী লাভের পর দুজনকে একত্রিত করলে এই অভিন্ন যমজদের একত্রিত করলে তাদের হাসি বা মুখের গড়ন এক হলেও বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে তাদের চিন্তাধারার কতটুকু মিল পাওয়া যাবে তা সহজেই অনুমেয়।
আবার অপার্থিব, উইলিয়াম ক্লার্ক এবং স্টিভেন পিঙ্কার তাদের লেখায় বারবার ‘অভিন্ন পরিবেশ’ এর কথা বলেছেন। লেখকগণ তাদের আলোচনায় পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা অতি সরলীকৃতভাবে ভাবছেন। এবং এতটায় সরলীকৃত যে লেখক পিঙ্কারের উদ্ধৃতি বললেন যে কানাডীয়রা আমেরিকানদের মত একই ধরণের টিভি শো দেখে কিন্তু কানাডায় অপরাধজনিত হত্যার হার আমেরিকার চেয়ে এক চতুর্থাংশ মাত্র। এবং এর কারণ হিসেবে তিনি বংশাণুর ভূমিকার কথাই বুঝাতে চেয়েছেন। অথচ পরিবেশ বলতে তার মধ্যে অতি সুক্ষ্ম খুঁটিনাটি সমস্ত কিছুকেই (সরহঁঃবংঃ ফবঃধরষং) ধরা হয়। যেমন বাবা মা ভাবেন, তাঁরা তাদের সমস্ত সন্তানকেই সমান ভালবাসেন। বৈজ্ঞানিক বিচারে এই সমানভাবে ভালবাসা অসম্ভব- তত্ত্বগত দিক থেকে অসম্ভব এবং মানুষের সাধ্যের মধ্যেও অসম্ভব। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে প্রতিমুহূর্তে বাবা-মা’র একই ব্যবহার করাও সম্ভব নয়। বাবা-মার ছেলে-মেয়েদের প্রতি এবং ছেলে-মেয়েদের বাবা-মা’র প্রতি মমত্ববোধ দুবার একই রকমভাবে প্রকাশ পেতে পারে না এবং তার প্রতিক্রিয়াও এক হতে পারে না। একই পরিবারের দুই ছেলে যে পরিবেশে বড় হচ্ছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করলে দুই ছেলের বন্ধু-বান্ধব, কাদের সাথে কে মেশে, কে কাদের সঙ্গ দেয় ইত্যাদি বিচার করলে দেখা যাবে দুজনের পরিবেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিরাজ করছে। পরিবেশ ও ব্যক্তির মধ্যে এরকম হাজার হাজার দ্বন্দ্ব আছে। ফলে একই পরিবারের দুই ছেলে মুক্তিযুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আরেকজন রাজাকার হবার ইতিহাসও আমরা জানি। কিন্তু তা কখনোই ‘অভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা বংশাণুর ভিন্নতার জন্য’ নয়। অবশ্যই পরিবেশের ভিন্নতার জন্য।
আবার পিঙ্কারের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখক বলেছেন, “… অন্যান্য অনেক ঘটনাও এই সাক্ষরই দেয় যে মানুষের স্বভাব শেখার দ্বারা সৃষ্ট নয়। আমরা দেখি কিভাবে কোন কোন মানুষ ধার্মিক হয়ে যায় ধর্মশিক্ষা বা প্রচারণার অবর্তমানেই। আবার উল্টোটাও দেখা যায়। হঠাৎ করেই ধর্মভীরু বা ধর্মান্ধ ব্যক্তি নাস্তিক বনে যান।”
যারা ইতিহাস এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে জানেন তাদের মধ্যে সংশয় থাকার কথা নয় যে, মানব সমাজ বিবর্তনের একটা পর্যায়ে মানুষের মধ্যে ধর্ম চিন্তার উদ্ভব হয়। অপার্থিবের যুক্তি অনুসারে যদি ধর্ম শিক্ষা বা প্রচরণার অবর্তমানে মানুষ ধার্মিক হয়ে যায়, তাহলে সমাজে ধর্ম চিন্তা আসার পূর্বেও কি ধার্মিকদের অবস্থান ছিল!
লেখক পিঙ্কারের বইয়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি হচ্ছে, পুলিতজার পুরষ্কারপ্রাপ্ত এক লেখক তাকে লেখা এক বন্দীর চিঠিগুলো পড়ে চমৎকৃত হোন এবং ঐ বন্দীকে মুক্ত করতে সাহায্য করেন। পরে ঐ বন্দীটি অনেক নামীদামী মহলে আপ্যায়িত হন। অথচ দু সপ্তাহ পরে সে এক রেস্তোরার বেয়ারাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে রেস্তোরার টয়লেট ব্যবহার নিয়ে কথা কাটাকাটির সময়। এই ঘটনায় লেখক স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে বললেন যে মানুষের কুস্বভাব পরিবর্তন করা যায় না। যা প্লেটো, অ্যারিষ্টোটলের তৎকালীন আধ্যাত্ববাদী দর্শনকেও হার মানায়।
যদি লেখকের ভাষ্যমতে মানুষের স্বভাব পরিবর্তন না হয় তাহলে মানব মস্তিষ্কে দ্বিতীয় সংকেততন্ত্র অথ্যাৎ পাওয়ার অভ্ ট্রানশ্লেশন কাজ করছে না। মস্তিষ্ক বিকৃতি ছাড়া তা হবার কথা নয়। আর তা যদি হয়ে থাকে (লেখকের ভাষ্যমতে) তবে তা ব্যাপক গবেষণার দাবি রাখে…
আবার অভিজিৎ রায়ের লেখা শুরুই হয়েছে এক পাগলের গল্প দিয়ে। মানসিক রোগী মানে যাদের মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের মত ক্রিয়াশীল নয়। তাই তাদের নিয়ে খুব বেশী আলোচনা করারও বোধ হয় প্রয়োজন নেই। যা হোক আমরা যদি ধরেও নিই লেখকের শরীরে ‘বিজ্ঞানী জিন’ থাকার জন্য তিনি মন্দিরের প্রসাদ না খেয়ে বিজ্ঞানী হতে পারলেন। কিন্তু আমাদের দেশে যে ৪০ লক্ষ শিশু স্কুলেই যেতে পারে না (ঝরে পড়া শিশুদের কথা না হয় বাদই দিলাম) তারা তো কখনোই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী হতে পারবে না। অথাৎ এই হতভাগারা ঐ ধরণের জিনের অধিকারী না। কিন্তু তাদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা যদি আমরা নিশ্চিত করতে পারতাম তাহলে কি হতো! লেখক হয়ত বলবেন তাদের মধ্যে ঐ ধরণের জিন লুকায়িত অবস্থায় ছিল পরিবেশ না পাওয়ায় বিকশিত হতে পারলো না। এই পরিবেশ না পাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে ‘নধফ ষঁপশ জিন’ আছে কি না তা হয়তো লেখকেরা বলতে পারবেন। আর যদি না থাকে তাহলে কৃষক পরিবারে এই ধরণের জিন আসবেই বা কোথা থেকে। আদিম মানুষের মধ্যেও এ জিনগুলো ছিল। বা বিবর্তনের ঠিক কোন সময় এই জিন গুলোর তৈরী তাও জানাটা জরুরী। আবার লেখক বলেছেন, ‘ছলেটো বাপরে মতই বদরাগী হয়ছে’ে, কংিবা বলি ময়েে হয়ছেে মার মতই সুন্দরী। চোখগুলো দখেছে কি রকম টানা টানা? এগুলো কন্তিু আমরা এমনি এমনি বলি না। বহুদনিরে অভজ্ঞিতা থকেইে এগুলো বল,ি আর সজেন্যই এই উপমাগুলো আমাদরে সংস্কৃততিে এমনভিাবে মশিে গছে।ে কবেল শারীরকি সৌর্ন্দয নয়, আবগে, অনুরাগ, হংিসাত্মক কংিবা বদরাগী মনোভাব এমনকি ডায়াবটেসি কংিবা হৃদরোগরে ঝুঁকি র্পযন্ত আমরা বংশপরম্পরায় বহন করি জনেটেকি তথ্য হসিবে আমাদরে অজান্তইে।’ লেখক না বুঝেই কতটা সরলীকরণ করে ব্যাখ্যা করলেন। মেয়েটা মার মতো সুন্দরী বা টানা টানা চোখ বা বিভিন্ন রোগ এগুলো যে জিনগত তা সবাই জানে। কিন্তু রাগ, হিংসা! বাবার বদরাগী চরিত্র জন্মের পর থেকে দেখে দেখে বড় হওয়া একজন বদরাগী হতেই পারে। কিন্তু লেখক কি এমন কথা শোনেননি যে, বাবা বদমেজাজী কিন্তু ছেলেটা কত শান্ত!
লেখক উল্লেখ করেছেন, “সইে ধারণাকে উইলসন আরো বস্তিৃত করনে তার পরর্বতী বই ‘ঙহ ঐঁসধহ ঘধঃঁৎব‘(১৯৭৮)-এ। তনিি বলনে আজকে আমরা যাদরে আজ মানুষ নামে অভহিতি কর,ি সইে হোমোস্যাপয়িন্সে প্রজাতটিরি মূল মানসপটরে বর্নিমিান আসলে ঘটছেলিো অনকে আগে – যখন তারা বনে জঙ্গলে শকিার করে জীবন যাপন করত। একটু লক্ষ্য করলইে দখো যাব,ে সইে আদি স্বভাবরে অনকে কছিুই কছিুই এখনো আমরা আমাদরে স্বভাবচরত্রিে বহন করি – যমেন বপিদে পড়লে ভয় পাওয়া, দল বধেে বপিদ মোকাবলো করা, অন্য জাত/িগোত্ররে সাথে যুদ্ধে জড়য়িে পড়া, সবার আগে নজিরে পরবিাররে বা গোত্ররে নরিাপত্তা নয়িে চন্তিতি হওয়া ইত্যাদ।ি” বিপদে পড়লে ভয়ে শরীরে কাটা দেয়া বা ভালো খাবার দেখলে জিভে জল আসার কারণের ব্যাখ্যা আমরা জানি। এটা মানুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। ‘অন্য জাতি বা গোত্রের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া’- সাম্প্রতিক সময়ের বিবেচনায় আমেরিকার উদাহরণটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক। আজ সকলের কাছে স্পষ্ট বুশ প্রশাসন মূলত তেলের জন্য ইরাকে অন্যায় যুদ্ধ করে শিশু-বৃদ্ধসহ লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। তাহলে দায়টা পুরো জাতির কাধে চাপিয়ে লেখক কি বুশ প্রশাসনকে আড়াল করতে চাচ্ছেন। আর এ যুদ্ধের বিরুদ্ধে যে খোদ আমেরিকাতেই লক্ষ লক্ষ মানুষ বিরোধিতা করলো! আবার ‘ সবার আগে নিজের পরিবারের বা গোত্রের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়া’- একটু খেয়াল করুন! মুক্তিযুদ্ধে পরিবারের বিপদের কথা চিন্তা না করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো কোন স্বভাবের টানে। বা পরিবার, জাতি, গোত্রের উর্দ্ধে যে মানুষেরা মানবমুক্তির জন্য লড়াই করছেন তাদের ব্যাখ্যাই বা কি?
তাই জমজের ক্ষেত্রেও ‘একই নামের মেয়েকে বিয়ে করার জিন’ ‘একই নামে সন্তান রাখার জিন’ ‘কমোডে একই ভাবে বসার জিন’ ‘কুকুরের নাম একই রাখার জিন’ ‘একই সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের জিন’- এগুলো আবিস্কার করে অহেতুক সময় নষ্ট না করে কার্য-কারণ সম্পর্ক খুজে বের করাটায় শ্রেয় বলে মনে হয়।
যা হোক লেখকদের আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা করা যেত। সময় স্বল্পতার জন্য সম্ভব হচ্ছে বলে দুঃখিত। লেখক একটা গল্প দিয়ে শুরু করেছিলেন, আমি একটা একটা গল্প দিয়ে শেষ করছি।
‘সূর্য কোথা থেকে প্রতিদিন সকালে উদিত হয় এবং সন্ধ্যায় কোথায় হারিয়ে যায় তা নিয়ে মানুষ ভাবছে কিন্তু কোন সুরাহা করতে পারছে না। অনেকেই তখন এই বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তিত। হঠাৎ এ সময় আবিষ্কার হলো, সূর্যটা গভীর সমুদ্র বক্ষে প্রতি সন্ধ্যায় ডুবে যায়। টকটকে লাল গরম সূর্য সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় ‘ছ্যাঁ’ (পানিতে গরম কিছু পড়লে যে শব্দ হয়) করে শব্দ হয়। আর শুধু মাত্র জ্ঞানীরাই এই শব্দ শুনতে পায়। প্রতিদিন সমুদ্র উপকুলে প্রচুর মানুষ আসত। সূর্য ডোবার সময় সবাই চুপচাপ কান খাড়া করে রাখত এ শব্দ শোনার জন্য। সূর্য ডোবার পর সমাজ অধিপতিরা গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বলত ‘হু, শব্দটা শুনতে পেয়েছি’। আর সাধারণ মানুষেরা শব্দ শুনতে না পেয়ে নিজেদের খুব মূর্খ ও বোকা মনে করত। আবার কিছু মানুষের মধ্যে প্রশ্নও তৈরী হত, আদৌও শব্দ শোনা যায় কি?
গল্পটা স্কুলের বিজ্ঞান স্যারের কাছে শোনা। যা হোক ‘ছ্যাঁ’ শব্দ শোনা জ্ঞান কোন বিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে না। বিজ্ঞান কোন ধরণের গুরুবাদী চর্চাকে প্রশ্রয় দেয় না। এমনকি কোন বিজ্ঞানীর কথাকেও গ্রহণ করতে হবে যুক্তির নিরিখে, তিনি জ্ঞানী বলেই অন্ধভাবে নয়। ব্লগের পাঠকদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রতিবছর লঞ্চ ডুবি আর নৌকা ডুবিতে শত শত মানুষ মারা গেলেই প্লাবতার সুত্র ভুল প্রমানিত হয় না। প্লেন দুর্ঘটনায় হাজার মানুষ মারা গেলেই অরৎ উুহধসরপং এর সুত্র ভুল প্রমানিত হয় না। কার্য-কারণ ব্যাখ্যা ছাড়া শুধুই কিছু উদাহরণ দিয়ে সিদ্ধান্তে আসাটাও কোন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়।
কি ব্যাপার বুঝলাম না, যে গল্পের নায়ক কে নিয়ে এতো কমেন্টস এই ব্লগে লেখালেখি হলো উনি কি মহাসমুদ্রে না-কি মহাশুন্যে পাড়ি দিয়েছেন ??? আশা করি আপনার লেখা নিয়ে ব্লগের মধ্যে যে সব প্রশ্নের উদয় হয়েছে তার জবাব দিলে তা আমাদের পাঠকের জানার ও বুঝার জন্য উপকার হয়।
মাথাটা আরো আউলাইয়া গেল।মনে হয় বুঝছি, আবার
মনে হয় বুঝি নাই।সোজা কথায় বুঝি, ঘুড়ি ক্রমাগত ডান দিকে বা বাম দিকে কান্নি খাইলে বুঝতে হয় ঘুড়ি তৈরিতে গন্ডগোল আছে।বাংলাদেশের অনেক তথাকথিত বামপন্হী ডান দিকে কান্নি খেতে খেতে চরম ডান
বি এন পিতে ল্যান্ড করে এখন ‘বেসমল্লাহ হের রাহমানের রাহিম ” বলে জামাতের ইমামতিতে নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলে দিয়েছে।বাকি বামেরা কোথায় ল্যান্ড করে তার অপেক্ষায় রইলাম।
আমাদের দিকের বামেদের দেখ নাই-দেখলে মাথার চুল ত বটেই দেহের সব চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে। এরা লেনিন পড়বে কিন্ত ডকিন্স পড়বে না।
@ অভিজিৎ,
এজন্যইতো ফরহাদকে আমার লেখার শেষে ছোট্ট একখানা প্রশ্ন করেছিলাম,”উত্তর সঠিক?”!!!
সহমত,সরলীকরণ করা ঠিক হচ্ছে না।
তবে এ লাইনের অনেককেই মানুষের প্রতি শেষপর্যন্ত কঠিন নিষ্টরতম,পাষাণ হতে দেখা যায়।এ চিন্তাটা মাথায় আসায় বোধয় ঐ কথাটা লিখা হলো।
রুমন সাহেব শুধু আধুনিক বিজ্ঞানকে নয় আধুনিক সমাজ পাঠকেও এরিয়ে গেলেন সেই সীমাবদ্ধতার সূত্র ধরেই।
@ফরহাদ,
এবং এদেরঁ স্বপ্ন এক সুতায় গাথাঁ,গণতণ্ত্রকে গিলে ফেলা।মনে হয় এ কারণটা অনেক বড়।
২।এরাঁ মূলত মানব বিদ্বেষী।মানুষের বিকাশে তাদের বড় ভয় ও ঘৃণা আছে।
৩।মানুষের খামার বানানোই তাদের অভিন্ন লক্ষ্য।
৪।এরারঁ স্বাধীন বা মুক্তচিন্তা করার ক্ষমতা নাই।
৫।এরাঁ মানুষের উপর সর্বদা নিম্নমানের ধারণা মনে জিয়ে রাখে।
৭।এরাঁ উভয়েরই বাস্তব দুনিয়ার সাথে সংযোগ নাই।
৬।সময় বদলায়,সমাজ বদলায়, কিন্ত্ত বাঙলাদেশের বামপন্হী ও মুসলিম মৌলবাদীরা বদলায় না,অন্যরেও বদলাতে দেয় না,এরাঁ উভয়ই মুলতঃ মৌলবাদী।
উত্তর সঠিক?
@সালাম,
আমার মনে হয় বেশি সরলীকরণ করে ফেলা হচ্ছে। আমরা কিন্তু কমরেড মনি সিং, ইলামিত্রদের মত নিঃস্বার্থ বাম নেতানেত্রী দেখেছি যারা মানুষের জন্য জেল খাটতে কিংবা জীবন বিলিয়ে দিতেও কার্পন্য করেননি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বহু প্রগতিশীল আন্দোলনেই উজ্জ্বল বাম ভূমিকা কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। ফুলবাড়ি আর কানসাটের জায়গায় বাম নেতৃত্ব আজও প্রাসঙ্গিক। এশিয়া এনার্জির মত রক্তলোলুপ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আজো কিন্তু বামেরাই রুখে দাঁড়ায়।
আমরা মনে হয় রুমন সাহেবের লেখাটির বহু বাইরে আমাদের ফোকাস নিয়ে যাচ্ছি। রুমনের লেখা নিয়েও আমার আপত্তি করার কিছু ছিলো না যদি তিনি আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষনাগুলো সম্বন্ধে নিজেকে আপডেট করে নিতেন। বহু প্রখ্যাত বাম তাত্ত্বিকেরাই কিন্তু আজ লাইসেঙ্কোর কুখ্যাত এপ্রোচকে ভুল মনে করেন (উদাহরণ স্বরূপ বব এভেকিয়ানের কথা বলা যায়)। রুমন সাহেব যদি সেই কষ্টতুকুও করতেন তাহলেও আমার কাছ থেকে শ্রদ্ধা পেতেন।
@৬।সময় বদলায়,সমাজ বদলায়, কিন্ত্ত বাঙলাদেশের বামপন্হী ও মুসলিম মৌলবাদীরা বদলায় না,অন্যরেও বদলাতে দেয় না,এরাঁ উভয়ই মুলতঃ মৌলবাদী।
উত্তর সঠিক?
UN:F [1.4.6_730]
সালাম, একদম ঠিক কথা—————–আমগো দেশের হেরাও বদলায় শুধু শরীর আর পোশাকে কিন্তু চিন্তার ক্ষেত্রে একদম না।ডান ও দক্ষিনদের কথা আর কি বলব তার চেয়ে বামদের অবস্হা হলো একদিকে চরম উন্নাসিক মানসিকতায় বাস করে, মনে করে মার্কস ও লেনিনের বই পড়ে আমরা হলাম পৃথিবীর সব জান্তা অন্যদিকে বাস্তব জীবনে,সমাজে ও পরিবারের ক্ষেত্রে স্টীম রোলার চালায় সামন্ততান্ত্রিক ধ্যান-ধারনার।ধর্মীয় মৌলবাদীরা মনে করে আলকোরান হলো তাদের জীবেনের একমাত্র পাথেয় আর সামাজতান্ত্রিক মৌলবাদীরা মনে করে ডাস-ক্যাপিটাল হলো তাদের জীবনের ধ্যান-ধারনায়,হাটতে ও চলতে ফিরতে একমাত্র পাথেয়।সব চাইতে বামেদের যে বিষয়টি কটুপূর্ন তা হলো মাকর্কবাদ কে বিজ্ঞান বলে চালিয়ে দেওয়া এবং তা বিশ্বাস করা। আর এই আদর্শের বাইরে গেলে আপনি হয়ে যাবেন বুর্জোয়া,আমেরিকার দালাল অথবা সমাজ বিচ্ছিন্ন বুদ্ধিজীবি সাম্রাজ্যবাদের দালাল।অনেক বাংলাদেশের বাম জাতীয় নেতাদের দেখেছি এরা ভারতের দেশ পত্রিকা,সুনীল ও সমরেশ নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু বিবর্তনবাদ বা বিজ্ঞানের নতুন নতুন প্রযুক্তি স্বম্নদ্ধে তাদের তেমন কোনো জানার, বুঝার ও লেখাপড়ার আগ্রহ একেবারেই নাই।কি আজব ব্যাপার।গত বার দেশের গিয়ে কয়েক বাম নেতার সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে হুমায়ন আজাদ,আহ্ মেদ শরীফ ও তসলিমার কথা উঠলে বলে ঐ সব আতেল বুদ্ধিজীবিরা না-কি আমাদের সমাজ বিচ্ছিন মানুষ এবং তাদের কারনে নাকি বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনীতির বারটা বাজছে আর তসলিমা হলো আমেরিকার দালাল এবং বেশ্যা। কি লজ্জা আমাদের মানব জাতির।
কেউ যদি মনে করে তার বা তাদের চিন্তা বা থিওরি ঠিক এবং চিরসত্য তা হলে সেটা-ই মৌলবাদের মধ্যে পড়ে।এবার সেটা আমাদের জীবনের ক্ষেত্রে স্হান,কাল এবং পাত্রভেদে আমরা যে যেখানেই অবস্হান করি না কেন ?আর আমাদের দেশে ডান ও বাম এবং দক্ষিন পণ্থীদের বিশেষ করে বামেদের অবস্হা হলো এরা শুধু ক্ষমতা ও সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে জীবন ও সমাজ কে বিবেচনা করে,অন্য কিছু দিয়ে নয়।সে জন্য এরা কখনো রাশিয়া আবার কখনো চায়না নিয়ে এতো মাতামাতি করেছিল এবং করছে।শুভ বুদ্ধি হউক আমাদের আম-জনতার বাম নেতাদের এই আশা করছি।
সালামের বেশ কতগুলো মন্তব্যের সাথেই দ্বিমত পোষণ করছি। বাংলাদেশের বামদের অবস্থা আজ অত্যন্ত শোচনীয় তা মেনে নিয়েই বলছি, আমার পরিচিত বেশ কয়েকজন বামই জীবন সম্পর্কে অত্যন্ত আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী ধারণ করেন (আমার নিজের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার হাতেখড়িও ওদের হাত ধরেই)।
রুমণের মত বামদের সংখ্যাই আজকে আমাদের দেশে বেশী, কিন্তু তাই বলে সবসময় তাই ছিল বা সবাই এরকম এটা ভাবাটা বোধ হয় ঠিক নয়।
লাইসেঙ্কোর ভুলকে আজকে আন্তর্জাতিকভাবে বহু বাম সংগঠনই সেই সময়ের একটা বেশ বড় ভুল বলে মেনে নিয়েছেন। একটু লেখাপড়া করলেই সেটা খুঁজে বের করা খুব কঠিণ কিছু নয়।
আচ্ছা একটা কথা, বাংলাদেশের বামপন্হী এবং মুসলিম মৌলবাদীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে এত মিল কেন?
@ফরহাদ,
কারন কমিনিউজম ইসলামেরন বস্তুবাদি ভার্সন। উভয় গরীব শোষিত মানুষকে স্বর্গের লোভ দেখাচ্ছে।
@ফরহাদ,
আমার হাইপোথিসিসটা হইল – ‘পৃথিবী গোল হাইপোথিসিস’। পৃথিবী যদি গোল হয় তবে, Too much east is west , জানেন তো?
কেউ কেউ বলেন, আপনি বাম দিকে বেশি সরতে থাকলে শেষ পর্যন্ত ডানে এসেই ল্যান্ড করবেন 😉
(এটা নিরেট ফাজলামো, কেউ আবার সিরিয়াসলি নেবেন না)
@অভিজিৎ,
নিরেট ফাজলামোর কিছু নেই। ইহা একটি নিরেট সত্য কথা (নিরেট সত্য কী সেই প্রশ্ন আবার যেন কেউ করে বসেন না। তাহলে আমাকে আবার বিপ্লবের উত্তর টুকলিফাই করতে হবে।) বামেরা যখন ডিগবাজী খায় (বাংলাদেশে হরহামেশাই তারা সেটা খায়, তবে সেনাশাসক দেখলে আনন্দে একটু বেশি বেশি খায় এই যা) তখন মাঝামাঝি কখনোই ল্যান্ড করে না তারা, একেবারে ডানে গিয়েই তবে থামে। :lotpot:
রুমন সাহেবের লেখায় কোন বিজ্ঞান নেই,ডিএনএ বিজ্ঞানতো অনেক দূরের কথা।যতবার তিনি উদাহরণ দিয়েছেন ততবারই তিনি নিজেই নিজের বিজ্ঞান শিক্ষাকে হাস্যকর করে ছেড়েছেন।বাঙলাদেশের রাজ.নেতারা (ডান+বাম) এরকমই হয়।তিনি আবারও প্রমান করলেন পরাশুনা না করে নেতা হওয়া যায়,বিজ্ঞান গবেষক হওয়া যায় না!
অভিজিত,আপনি উনাকে যে বইগুলো দিলেন,এসব কি
পড়ার তাহারঁ সময় আছে?
লেখকের আছে কিছু প্রশ্ন
[১] কোন বৈজ্ঞানিক গবেষনাতে দাবী করা হয়েছে মিল পাওয়া যাবে? ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে জেনেটি ফেনোটাইপের চেয়েও পরিবেশ এবং সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে সেটা জেনোম প্রজেক্টের অধিকর্তাই বলেছেন। কিন্ত তার মানেই জেনেটিক ফেনোটাইপের প্রভাব নেই, তাও সত্য না। ওই জমজ ভাইদের রোগভোগ, খাওয়ার অভ্যেস, গানের টাইপে অনেক মিল পাওয়া যাবে আলাদা পরিবেশে মানুষ করলেও।
[২] অমিল থাকা মানেই কি তাদের জ়ৈব প্রকৃতি আলাদা হবে? জৈব প্রকৃত্তির সংজ্ঞা কি লেখক জানেন?
লেখক বাঙালী বামপন্থার রোগে আক্রান্ত। সেটা হল সত্য দর্শনের বদলে আদর্শবাদের ভুত দর্শন।
@বিপ্লব পাল,
একদিন আপনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন সত্য আসলে কি ? আজ আমি আপনাকে প্রশ্ন করলাম সত্য আসলে কি ?
@ফুয়াদ,
“যা মিথ্যা নয় বা মিথ্যা দিয়ে প্রমান করা যায় না তাই সত্য”
– দার্শনিক আদিল মাহমুদ, (এবিসিডি….)
🙂
এ প্রবন্ধের লেখক জিন সংক্রান্ত জিনিসপত্র বাদ দিয়ে মানে এগুলো আবিস্কার করে অহেতুক সময় নষ্ট না করে কার্য-কারণ সম্পর্ক খুজে বের করাটাই শ্রেয় বলে মনে করেছেন (এজ ইফ জেনেটিক্স, বিহেভিয়ারাল জেনেটিক্স এবং এপিজেনেটিক্সের আধুনিক সব গবেষণা কার্যকারণ নিয়মের বাইরে 🙂 )।
যা হোক ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখলাম ভদ্রলোক সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের দপ্তর সম্পাদক। উনার কার্যকারণ নিয়মের আওতাতেই আমি এখন বুঝতে পারছি কেন উনি স্ট্যালিনীয় জামানার কুখ্যাত বিজ্ঞানী লাইসেঙ্কোকে নিয়ে মাথায় করে নাচছেন আর এ সমস্ত ভূতগ্রস্ত অপবৈজ্ঞানিক লেখা নির্বিচারে লিখে চলেছেন।
উনি ঠিকই বলেছেন জেনেটিক্স নিয়ে অহেতুক সময় নষ্ট না করে কার্য-কারণ সম্পর্ক খুজে বের করাটাই শ্রেয়। 😀
@ফুয়াদ,
সত্য দুই প্রকার। অভিজ্ঞতাবাদি আর বাস্তবাদি। এম্পিরিক্যাল আর রিয়ালিস্ট। পর্যবেক্ষন সাপেক্ষ আর পর্যবেক্ষন নিরেপেক্ষ। যেমন চাঁদ হচ্ছে গোল। এটা মানুষ হওয়ার আগেও গোলই ছিল। আবার পর্যবেক্ষন করেও মানুষ গোলই দেখছে। সমস্যা হচ্ছে তাহলে পর্যবেক্ষন সাপেক্ষ সত্যর আলাদা দরকার কেন? কারন সত্যটা বস্তুটার কিছুটা যেমন পর্যবেক্ষন নিরেপেক্ষ আবার কিছুটা ভীষন ভাবেই সাপেক্ষ। যেমন এই ‘গোল’-এটার যেমন জ্যামিতিক সংজ্ঞা আছে যা পর্যবেক্ষন নিরেপেক্ষ আবার এই ‘গোল’ বা গোলক অভিজ্ঞতার অংশও বটে।
কিন্ত এত আট-ভাট বকছি কেন? কারন অধিকাংশ সামাজিক সত্যি ভিষন ভাবে পর্যবেক্ষন সাপেক্ষ সত্য-নিরেপেক্ষ সত্য বার করা মুশকিল। এই জন্যে নিৎসে বলতেন
All credibility, all good conscience, all evidence of truth come only from the senses.
অর্থাৎ আমার চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ। সামাজিক সত্য ও মানুষের কাছে চেতনার রঙ। তাই ইসলামের রঙ ফুয়াদ ভাই এর কাছে সাদা-এবং সত্যের। আমাদের মতন নাস্তিকের কাছে তা অসত্যের। পুরোটাই আমাদের চেতনার রঙের খেলা।
@বিপ্লব পাল,
আসলেই তাই। সৌন্দর্যের মত সত্যও মানুষ ভেদে আপেক্ষিক,এবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এ কথা আরো বাস্তব। কারন বিজ্ঞানে আজ পর্যন্ত সত্য আগামিকাল তা সম্পুর্ন ভ্রান্ত হয়ে যেতে পারে।
@বিপ্লব পাল,
এ ব্যপার নিয়ে পুরো একটি পোষ্ট দেন । তাহলে , আরো গভীর অলোচনায় যাওয়া যেতে পারে ।
মুক্তমনার অনেকেই হয়তো রুমন সাহেবের লেখার সাথে পরিচিত নন। কিন্তু আমি ভুক্তভোগি হিসেবে কিছুটা হলেও পরিচিত। তিনি মুক্তমনায় একবার একটি লেখা পাঠিয়েছিলেন লাইসেঙ্কোর জয়গান করে। যারা জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তারা জানেন যে, লাইসেঙ্কো ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছেন এক ‘ঠগ’ বিজ্ঞানী হিসেবে, দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন রাজনৈতিক শক্তির অপব্যাবহারকারী এবং উগ্র কমিউনিস্ট ভাবাদর্শধারীদের দ্বারা চালিত রাষ্ট্রশক্তির এক পতিত ক্রীড়নক হিসেবে। তার উত্থান ছিলো স্ট্যালিনের কৃপাধন্য বিজ্ঞানী হিসেবে, এবং তার সময়ে লাইস্কোইজম নামে অপবিজ্ঞানের চর্চার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নে জেনেটিক্সের একেবারে বারোটা বেজে গিয়েছিলো। শুধু তাই নয়, লাইসেঙ্কোর বিপরীত মতের সমর্থক বিজ্ঞানী যারা ছিলে – যেমন এন আই ভাভিলভ, জি ডি কার্পেচেঙ্কো, সালোমন লেভিট, ম্যাক্স লেভিন, ইজ্রায়েল এগোল, এইচজ়ে মুলারের মত বিজ্ঞানীদের স্ট্যালিনীয় কায়দায় নির্যাতন করে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। স্ট্যালিনের সময় ভাবিলভের মত বিজ্ঞানীকে গুলাগে ঢুকিয়ে নির্যাতন করে কিভাবে হত্যা করা হয়, তা যে কোন ইতিহাসগ্রন্থ খুললেই পাওয়া যাবে। এগুলো যারা জীববিজ্ঞানের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তারাই জানেন। আজকের জীববিজ্ঞানের একজন সাধারণ ছাত্রও জানে যে, মেন্ডেলের বংশগতিবিদ্যার সাথে পরীক্ষা নীরিক্ষায় টিকতে না পেরে লাইসেঙ্কোইজম কিভাবে বাতিল হয়ে গেছে বহুদিন আগেই। সেজন্যই জীববিজ্ঞানের সব পাঠ্যপুস্তকে মেন্ডেলের সূত্রগুলোই পড়ানো হয়, লাইসেঙ্কোর নয়। অথচ ইমরান হাবিব রুমন এই একবিংশ শতকে এসে মেন্ডেলের প্রতিষ্ঠিত এবং প্রমাণিত তত্ত্বকে ‘ভাববাদী’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন মেন্ডেলের ভাববাদী তত্ত্বের মূলে নাকি কুঠারাঘাত করেছিলো তার দীক্ষাগুরু লাইসেঙ্কো। রুমন সাহেব সে লেখায় আরো বলেছিলেন, ‘বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য’ নাকি লাইসেঙ্কো খুবই জরুরী! বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিই বটে। যাহোক, তার ‘বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীর’ নামে বাম-আদর্শবাদের প্রোপাগান্ডার একটা উত্তর আমি আগে দিয়েছলাম, সেটা আছে এখানে।
আমি এ কথাগুলো এখনে বলে নিলাম একারণেই যে, রুমন সাহেবের লেখাটি পড়া শুরু করার আগে যেন পাঠকদের মাথায় থাকে তার আদর্শবাদের ভুতের কথা। নইলে বোঝা যাবে না কেন রুমন সাহেব হঠাৎ করেই আমার আর অপার্থিবের পুরোন লেখা নিয়ে পড়ে গেছেন। আমার লেখা ‘মানব প্রকৃতির জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা’ নামের সিরিজটির উদ্দেশ্য ছিলো আধুনিক জেনেটিক্সের এবং বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিইয়ে গবেষণার আলোকে মানব প্রকৃতির স্বরূপ পাঠকদের সামনে তুলে ধরা। আমি প্রতিষ্ঠিত জার্নাল থেকে এবং সেই সাথে সায়েন্টিফিক আমেরিকান, ডিস্কোভার, সায়েন্টিফিক আমেরিকান মাইন্ডের মত প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সাময়িকী থেকে গবেষকদের গবেষণার উল্লেখ করে আমার প্রবন্ধ লিখেছিলাম। শুধু তাই নয়, আমি রেফারেন্স হাজির করেছিলাম ডকিন্স, এডওয়ার্ড উইলসন, পিঙ্কার, জন টুবি এবং লিডা কসমাইডস, রবার্ট রাইট, ডোনাল্ড সিমন্স, ডেভিড বাস, নেপোলিয়ন চ্যাংনন, দেভ সিং, ম্যাট রিডলী প্রমুখ বিজ্ঞানীদের কাজের – যারা নির্মাণ করেছেন আধুনিক গবেষণার ক্ষেত্রে মাইলফলক। অথচ আদর্শবাদী রুমনের কাছে এ সমস্ত গবেষণা পুরোটাই অর্থহীন। অবশ্য যে ব্যক্তি মেন্ডেলের বংশগতিবিদ্যাকে ‘ভাববাদী’ মনে করে লাইসেঙ্কোইজম প্রমোট করতে চান, তিনি যে জেনেটিক্স এবং ইভলুশনারী সাইকোলজির আধুনিক গবেষণার কোন খোঁজ খবর না নিয়েই এর উপর খড়গ হস্ত হবেন, এ আর নতুন কি! আমি রুমনের লেখা থেকে তার মনোভাবের কিছু মজার উদাহরণ দেই (প্রথম পর্ব থেকে শুরু করছি)-
জেনেটিক্সের আধুনিক গবেষণা আর বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সকল গবেষণা যদি তার কাছে অ্যারিষ্টোটলের ক্রীতদাস প্রথার সমার্থক মনে হয়, তবে আসলেই লেখকের বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কোথায় এরিস্টটল আর কোথায় আজকের ডকিন্স, উইলসন পিঙ্কারেরা। অ্যারিষ্টোটল কি জেনেটিক্স পড়েছিলেন, তিনি কি জানতেন ডি এন এ-র মাধ্যমে কিভাবে তথ্য এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়? জানতেন না। আজকের দিনের বিজ্ঞানীরা প্রাণান্তকর গবেষণা করে প্রকৃতির যে সমস্ত রহস্য উদঘাটন করছেন, তাকে অ্যারিষ্টোটল ক্রীতদাস প্রথার সমার্থক মনে করা শুধু অজ্ঞানতার পরিচায়কই নয়, স্থুলও বটে। বোঝা যায় লেখক আদর্শবাদের যতটুকু চর্চা করেছেন, তার সিকিভাগও আধুনিক বিজ্ঞান পড়বার জন্য ব্যয় করেননি। তিনি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা কিংবা বিহেভিয়েরাল জেনেটিস্টেরা কি নিয়ে আর কিভাবে গবেষণা করছেন সেটা না জেনেই সেটা নিয়ে সমালোচনা করতে বসেছেন। তার প্রবন্ধের ধরণই বলে দেয় যে এ বিষয়ে রুমনের জ্ঞান হাস্যকর রকমের খেলো।
তার লেখায় আধুনিক বিজ্ঞানের কোন রেফারেন্স নেই। অরিস্টিটলের পর অনাবশ্যক এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে পাভলভের পরীক্ষার কথা বলেছেন, আর তারপর মস্তিস্ক কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে অর্থহীন কিছু বাগারম্বর করে প্রথম পর্ব টি শেষ করেছিলেন। তার বক্তব্যের সাথে আমার লেখার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক স্থাপন করতে আমি ছিলাম অক্ষম। ভেবেছিলাম তখনই একটি উত্তর দেই। কিন্তু তার প্রথম পর্বটি এতটাই অসংলগ্ন এবং অবান্তর যে সেটা নিয়ে অনর্থক আলোচনা করে সময় নষ্ট করার ইচ্ছেটুকুও আমার হয়নি।
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম রুমন সাহেবের অসংলগ্ন লেখাটির কথা। ইতঃবসরে বহুদিন পর রুম আবারো তার ২য় পর্বটি পাঠিয়েছেন (পাঠিয়েছেন আবার বিজয়ে, তাই সব কিছু ঠিকভাবে কনভার্টও হয়নি)। এ লেখাতেও সেই পুরোন কাসুন্দি ঘেটেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। আসুন প্রিয় পাঠক আমরা সেই রস আস্বাদন করি। তার আগে একটা জিনিস পরিস্কার করা প্রয়োজন। রুমন উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার এবং অপার্থিবের লেখাকে এক করে দিয়েছেন, যাতে তার উদ্দেশ্য হাসিলে সুবিধা হয়। অথচ, আমার এবং অপার্থিবের প্রবন্ধ দুটি এক নয়। অপার্থিব শুধু পিঙ্কারের ব্ল্যাঙ্ক স্লেটের উপরই জোর দিয়েছিলেন। আমি সেটার পাশাপাশি এপিজেনেটিক্সেরও নানা আধুনিক ফলাফলের কথা নিয়ে এসেছি। আমার প্রবন্ধের এপিজেনেটিক্স এবং নিউরোপ্লাস্টিসিটি নিয়ে লেখা অংশটিতে আমি দেখিয়েছি সব কিছু জিন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, জিনের পাশাপাশি পরিবেশকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। অথচ সে ব্যাপারটা রুমন সাহেব বেমালুম অস্বীকার করে আমাদের অ্যারিষ্টোটল ক্রীতদাস প্রথার সমর্থক বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। যেমন তিনি অপার্থিবের লেখার একটি অংশের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন –
অথচ রুমন ভাল করেই জানেন অপার্থিব উপরের উক্তিটি করেছিলেন সাইকোপ্যাথদের প্রসঙ্গে। বহু মনোবিজ্ঞানী এবং গবেষকেরাই মনে করেন যত চেষ্টাই করা হোক না কেন সাইকোপ্যাথ এবং সিরিয়াল কিলারদের খুব কমই স্বভাব পরিবর্তন করা যায়। দেখা গেছে অনেক সময় পরিবর্তনের চেষ্টা বরং হিতে বিপরীতই হয়। পিঙ্কার তার বইয়ে মনোবিজ্ঞানী ম্যারিন রাইসের গবেষনার উল্লেখ করে বলেছেন-
Psychopaths, as far we know, cannot be ‘cured’. Indeed, the psychologists Marine Rice has shown that has shown that certain harebrain ideas for therapy, such as boosting their self esteem and teaching them social skills, can even make more dangerous.
সাইকোপ্যাথদের কাজের অনেক কিছুই যে আবার পুনরাবৃত্ত হয়ে ফিরে আসে তা পিঙ্কার উদ্ধৃত করেছেন জ্যাক এবটের ঘটনা উল্লেখ করে। অথচ সাইকোপ্যাথরা যে সাধারণ নয়, বরং খুব চরম সীমার ছোট উদাহরণ তা কিন্তু আমিই বলেছি আমার প্রবন্ধে। আমি আমার প্রন্ধে বলেছি- ‘পিঙ্কারের উদাহরণে আরেকটিবার ফেরত যাই। সাইকোপ্যাথ জ্যাক এবটের অনমনীয় মনোভাবের যে উদাহরণ পিঙ্কার তার বইয়ে হাজির করেছেন তা হয়ত অত্যধিক ‘চরম মাত্রার’ উদাহরণ। আমাদের চারপাশের উদাহরণগুলো এমনতর চরম সীমায় অবস্থান করে না তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবেশ পরিবর্তন করে করে কিংবা কড়া সামাজিক নিয়ম নীতি প্রয়োগ করে মানুষের ব্যবহার যে পরিবর্তন করা যায়, তা কিন্তু পরীক্ষিত সত্য। তারপরে আমি আমার ড্রাইভিং এর টিকেট পাওয়ার উদাহরণ হাজির করেছি, হাজির করেছি আমার পরিচিত ভদ্রলোকের বৌ পেটানোর উদাহরণগুলো। আমি বলেছি, আইনের শাসন প্রইয়োগ করে বহু ক্ষেত্রেই ব্যবহারের পরিবর্তন করা সম্ভব। বহু দাগী আসামী যারা তারুন্যে সহিংস কিংবা জনবিরোধী কার্যকলাপের সাথে যুক্ত ছিলো, কিংবা পরিচিত ছিলো গ্যাংস্টার হিসেবে তাদের অনেককেই পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে তাদের ব্যাবহার পরিবর্তন করেই। এদের অনেকেই তাদের অতীতের কর্মকান্ড লিপিবদ্ধ করে বইও লিখেছেন, কেউ বা আজ এক্টিভিস্ট হিসবে কাজ করছেন; মানুষকে তাদের অতীত থেকে শিক্ষা নিতে অনুপ্রাণিত করেছেন। দাবী-দাওয়া পূরণ করে ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের কারখানায় ফিরিয়ে নেওয়া, সারের দাম কমিয়ে কৃষকদের শান্ত করার উদাহরণ আমরা প্রতিদিনের পত্রিকাতেই পড়ি। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় কার্ফু জারি করে উন্মত্ত জনতাকে স্বাভাবিক আর শৃঙ্খলিত জীবনে ফিরিয়ে আনা যায় তা আমরা বহুক্ষেত্রেই দেখেছি। আমি এতাও পরিস্কার ভাবে বলেছি – তাই জিন আমাদের মানসিক কাঠামোর বীজ বপন করলেও কখনোই আমাদের গন্তব্য নির্ধারণ করে না। আমি বিজ্ঞানের জার্নাল থেকে অধ্যাপক র্যান্ডি জার্টেল এর ইঁদুর নিয়ে গবেষণার উল্লেখ করেছি, দেখিয়েছি পরিবেশ থেকে সিগন্যাল নিয়ে কিভাবে দেহের জেনেটিক এক্সপ্রেশন বদলে যায়। আমি আরো দেখিয়েছি জোসেফাইন তেজাউরো এবং তার জমজ বোন – জেনেটিক প্রকৃতি এক হওয়া সত্ত্বেও তাদের দৈহিক অবস্থা একই রকম ছিলো না। তার মানে জিন দিয়েই সব কিছু ব্যাখ্যার প্রচেষ্টা ঠিক নয়। আমি জনপ্রিয় বিজ্ঞান পত্রিকা ডিস্কভার-এর প্রবন্ধ – DNA Is Not Destiny র কথাও আমার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলাম। তাতে কি কোন লাভ হল? রুমন সাহেবের মাথায় সেই প্লেটো, অ্যারিষ্টোটলের তৎকালীন আধ্যাত্ববাদী দর্শনই ঘুরছে। ঘুরার কারনটিও সহজেই বোধগম্য।
এবার রুমন সাহেব আমাকে উদ্ধৃত করে বলেছেন-
আহারে বেচারা রুমন, কি বিশাল আবিস্কার তিনি করলেন। বাবা বদমেজাজী কিন্তু ছেলেটা কত শান্ত এটা জানতে রুমনের প্রবন্ধ পড়তে হবে। আর রুমনের এই মহা আবিস্কার যেন জিনের প্রভাব বাতিল করে দিচ্ছে! আরে বদমেজাজী বাবার ছেলে কেন, একই আইডেন্টিকাল টুইনের ক্ষেত্রে একজন অটিস্টিক, এবং অন্যজন স্বাভাবিক হতে পারে। আমি আমার একটি লেখায় একটি ডকুমেন্টরী থেকে এধরণের বেশ কিছু উদাহরণ হাজির করেছগিলেম। কেন এটা হয় সেটা এপিজেনেটিক্সের গবেষণা থেকেই তো বেরিয়ে এসেছে। একই জিন একেকজনের দেহে একেকভাবে ক্রিয়া করে। সেজন্যই একই আইডেন্টিকাল টুইন (যারা ১০০% সদৃশ জিন দেহে বহন করে) হওয়া সত্ত্বেও , তাদের মধ্যে একজন খুব স্বাভাবিক, অন্যজন হয়েছে অটিস্টিক। সব কিছুই যদি জিনকেন্দ্রিক হত, তবে এটার আসলেই কোন ব্যাখ্যা নেই। সব কিছু আসলে জিনকেন্দ্রিক নয়, আসলে ঠিক করে বললে – একই জিন হয়ত একেক জনের দেহে একেক ভাবে ক্রিয়া করে – পরিবেশ থেকে পাওয়া সিগন্যালের উপর ভিত্তি করে। এপিসেনেটিক্স সেই রহস্যের দুয়ারই উন্মচন করছে ধীরে ধীরে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে – সদৃশ যমজ দুই ভাইয়ের ক্ষেত্রে কেনো একজন স্ট্রেট, আর অন্যজন আবার গে – এপিজেনেটিক্সের পরীক্ষাগুলো গোনায় না ধরলে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না, এ কথা তো আমি বার বারই বলি। কিন্তু এ কথা মনে রাখা প্রইয়োজন এপিজেনেটিক্সের গবেষনাগুলো কোনটাই জিনের প্রভাবকে বাতিল করে না, বরং পরিবেশ থেকে পাওয়া সিগন্যালের ভিত্তিতে কিভাবে জিনের অংশ বিশেষ কিভাবে টার্ন অন বা টার্ন অফ হয়ে যায় সেটাই ব্যাখ্যা করে। সেজন্যই ম্যাট রিডলী তার ‘এজাইল জিন’ বইয়ে পরিস্কার করেই বলেছেন –
“Let me once put my cards face up. I believe human behavior has to be explained by both nature and nurture. … The discovery of how genes actually influences human behavior, and how human behavior influences genes, is about to recast the debate entirely. No longer is it nature versus nurture, but nature via nurture. …Environmental and genetic influences seem to work together, to require each other, until it is impossible to say which is cause and which is effect. The dichotomy of nature and nurture must first confront the dichotomy of cause and effect.”
আমি নিশ্চিত, ম্যাট রিডলীও রুমনের সংগানুযায়ী প্লেটো, অ্যারিষ্টোটলের তৎকালীন আধ্যাত্ববাদী দর্শনের সমর্থক হয়ে যাবেন এখন।
রুমন আমাকে অ্যারিষ্টোটলের ক্রীতদাস প্রথার সমার্থক বানিয়েই ক্ষান্ত হননি, বানিয়েছেন বুশের দালালও। তিনি বলেন –
আমার বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বিষয়ক লেখার সাথে বুশের যুদ্ধ এবং ‘বুশ প্রশাসন’কে আড়াল করতে চাওয়ার কি সম্পর্ক তা আমি সুস্থ মস্তিস্কে সত্যই বুঝতে অক্ষম। আমি আমার বহু লেখায় বুশ প্রশাসনেরই তীব্র বিরোধিতা করেছি, এবং ইরাকের উপর মার্কিন বাহিনীর হামলাকে কখনো নৈতিক ভাবে সমর্থন করিনি (ঊদাহরণ হিসবে পড়ুন, মার্কিন সভ্যতার বীভৎস ছবি, অলস দিনের ভাবনা ইত্যাদি)। অথচ ইমরান হাবিব রুমনের কলমের চিপায় পড়ে আমি হয়ে গেলাম বুশের দালাল আর আমি নাকি ‘বুশ প্রশাসনকে আড়াল করতে চাচ্ছি’। লেখকের উর্বর মস্তিস্কের কল্পনার প্রশংসাই করতে হয়! বাংলাদেশের বাম আদর্শবাদীদের বিশ্লেষণের দৈন্যতা রুমনের মাধ্যমেই উৎকটভাবে প্রকটিত হয়। বিবর্তনের যাত্রাপথে হান্টার-গ্যাদারার সোসাইটিতে কিভাবে পুরুষদের মন মানসিকতা প্রতিযোগিতামূলক হিসেবে বেড়ে উঠেছিলো, কিভাবে শক্তি, সমরদক্ষ পুরুষেরা গোত্রের নিরাপত্তার কারণেই আদরনীয় হয়ে উঠেছিলো এবং এই সমস্ত বৈশিষ্টগুলো আমাদের জিনপুলে কিভাবে প্রভাব ফেলেছিলো, এটা বৈজ্ঞানিক উপাত্ত দিয়ে ব্যাখ্যা করা আর বুশের কর্মকান্ড সমর্থন করা কি এক হল? এটাই সমস্যা রুমন টাইপের লোকদের নিয়ে। এরা আদর্শ দিয়ে চালিত হন, বৈজ্ঞানিক মনন দিয়ে নন। আমি নৃতত্ত্ববিদ নেপোলিয়ন চ্যাংনন সহ আধুনিক নৃতত্ত্ববিদদের গবেষনাই লিপিবদ্ধ করেছি (বাংলাভাষায় যা আসলেই দুর্লভ), আর বিনিময়ে পেয়েছি রুমনের কাছ থেকে এই ধরনের উপমা। রুমন কি আসলেই জানেন, হান্টার- গ্যাদারার সোসাইটি নিয়ে আধুনিক গবেষণার ফলাফলগুলো? আমার সন্দেহ আছে। কাউকে ‘বুশের দলাল’ সাম্রাজ্যবাদের সেবক’, ‘বুশ প্রশাসনকে আড়াল করতে চাচ্ছেন’ বলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আসরে বাহবা কুরানো যতটা সহজ, পড়াশুনা করে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে বাস্তবতা বিশ্লেষন করা রুমনদের জন্য ততটাই কঠিন। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধে আমি বার বারই বলেছি – কোন কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা মানে কিন্তু সমাজ কিরকম হওয়া ‘উচিৎ’ তা বলা নয়। আরো পরিস্কার করে বললে – ‘Evolutionary psychology describes what human nature is like – it does not prescribe what humans should do’। ধরুন আমি বিবর্তনগত ভাবে ব্যাখ্যা করলাম কেন সিংহ নিজের বাচ্চাকে অনেক সময় খেয়ে ফেলে, কিংবা বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করলাম ব্রুস ইফেক্ট, তার মানে কি এই যে আমি সিংহের বাচ্চা খাওয়া কিংবা ব্রুস ইফেক্ট সমর্থন করি? রুমন সাহেবের নিরেট যুক্তিতে তাই দাঁড়াবে।
আবারো লেখক নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ‘কমোডে একই ভাবে বসার জিন’, কুকুরের নাম একই রাখার জিন’ এগুলো বলে অর্থহীন রসিকতা করার চেষ্টা করলেও আসলে তিনি জেনেটিক্স এবং বিহেভিয়েরাল জেনেটিক্স সম্বন্ধে পুরোপুরি অজ্ঞ। জেনেটিক্স কখনোই বলে না মানুষের প্রতিটি কার্যাবলীর পেছনে এক একটি করে জিন থাকবে। তাই ‘কমোডে একই ভাবে বসার জিন’, কুকুরের নাম একই রাখার জিন’ একেবারেই অন্তঃসারশুন্য কথা। ওগুলো রুমন সাহেব সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মিছিলে বললেই ভাল করবেন, মুক্তমনায় নয়। মানুষের কোন একটি ব্যবহারে জিনের প্রভাব থাকলেও এটি কখনই একটি জিনের প্রভাব নয়, বরং যে কোন জেনেটিস্টকে জিজ্ঞাসা করলেই তারা বলবেন – Behaviors, like all complex traits, involve multiple genes, a reality that complicates the search for genetic contributions, সেই সাথে আবার থাকে সুইচ টার্ন অন বা অফের ব্যাপার স্যাপার, যেটাকে বলে মিথাইলেশন। সেজন্যই ‘গে জিন’ বলে আলাদা করে কিছু পাওয়া যায়নি, যদিও সমকামিতাকে তরান্বিত করতে পারে এমন কিছু মার্কার পাওয়া গেছে। ব্যাপারগুলো এভাবেই কাজ করে। আমি আশা করব রুমন সাহেব চটকদার কথা না বলে আধুনিক গবেষণা গুলো সম্বন্ধে একটু খোঁজ খবর রাখবেন।
আমি রুমন সাহেবের উদ্দেশ্যে কিছু ভাল বইয়ের নাম দিচ্ছি। আমি আশা করব পরের লেখাটা লিখবার আগে তিনি বইগুলো সংগ্রহ করে একটু পড়ার চেষ্টা করবেন; তাতেই আমাদের বড্ড উপকার হবে।
The Red Queen: Sex and the Evolution of Human Nature, Matt Ridley, Penguin, 1995.
How the Mind Works, Steven Pinker, W.W. Norton & Co., 1999
The Agile Gene: How Nature Turns on Nurture, Matt Ridley, Harper Perennial, 2004.
The Selfish Gene, Richard Dawkins, Oxford University Press
The Ant and the Peacock ~ Helena Cronin, Cambridge University Press
The Adapted Mind: Evolutionary Psychology and the Generation of Culture, Leda Cosmides, and John Tooby
Introducing Evolutionary Psychology, Dylan Evans
পড়াশুনা না করে কিংবা না জেনে লিখলে একবিংশ শতাব্দীতে এসে লাইসেঙ্কোইজম প্রমোট করার মতোই হাস্যকর হবে আপনার প্রতিটি লেখা।
@অভিজিৎ,
এতদিন বিজ্ঞান ও ধর্মের সংঘাত নাকি সমন্বয় জাতীয় তর্কের সাথে পরিচিত ছিলাম, এবার মনে হয় ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক দেখা যাবে 🙂