ইতিহাসের গাল-গল্প: দেশ নিয়ে আমার আশা
মোকছেদ আলী*
ইতিহাস কাহাকে বলে? ইতিহাস কি নিরপেক্ষ হয়? ইতিহাস কি সম্পূর্ণ সত্য হয়? এর মধ্যে কি কোনই গলদ থাকে না? এর মধ্যে কি রাজনৈতিক দলীয় প্রভাব থাকে না? এসব প্রশ্ন আমার মত সাধারণ মানুষকে ভাবিয়া তুলে। নিচের ইতিহাস পড়িয়া দেখুন। সবগুলোকে কি সত্য বলিয়া মানিয়া লইবেন? নাকি আপনিও দলীয় প্রভাবের বলয়ে আবদ্ধ হইবেন? ইতিহাসের সত্য মিথ্যা যাচাই করা আমার মত নাদান মামুলী মানুষের পক্ষে খুবই কঠিন। নতুন প্রজন্মের কাছে আপনি কোন ইতিহাস তুলিয়া দিতেছেন? কাহার ইতিহাস একটু ভাবিয়া দেখা দরকার। কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা তাহা পাঠক কিভাবে যাচাই করিবে? মুসলিম লীগের ইতিহাস লেখা হইবে একভাবে, আওয়ামী লীগের ইতিহাস লেখা হইবে আরেকভাবে? মৌলবাদীদের লেখা হইবে একভাবে, প্রগতিমনাদের লেখা হইবে আরেকভাবে। আমরা সাধারণ মানুষ বড়ই দ্বন্ধের মধ্যে পড়ি। পড়ুন নিচের ইতিহাস। কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা বাহির করুন। কতটুকু সত্য কতটুকু গালগপ্প খুজিয়া বাহির করিতে পারিবেন কি? ইতিহাস কি বিকৃত হয় না? ইতিহাসে কি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাদ পড়ে না? ভাবিয়া দেখুন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালেই উগ্র সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন হিন্দুগণ ইহার প্রবল বিরোধিতা করে। স্যার আশুতোষ মুখার্জীর পুত্র শ্যামাপ্রশাদ মুখার্জী হিন্দু মহাসভা নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করিয়া মুসলিম নিধনের উস্কানী দেয়। তখনই হিন্দুগণ মুসলমানদের উপর ঝাঁপাইয়া পড়ে এবং তাহাদের বাড়ী ঘরে অগ্নি সংযোগ করে এবং নির্মমভাবে মুসলমান আবালবৃদ্ধবনিদের হত্যা করিতে থাকে। সোহরাওয়ার্দী সাহেব তখন মুসলমানদের জানমাল রক্ষার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে জোর দাবী জানায়। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার হিন্দুদের কিছুই বলে না। বাধ্য হইয়া সোহরাওয়ার্দী সাহেব মুসলমানদের প্রতিশোধ লইবার নির্দেশ দেন। ফলে মুসলমান প্রধান এলাকার হিন্দুগণও মুসলমানদের হাতে নিহত হইতে থাকে। দেখিতে দেখিতে সেই দাঙ্গা সমগ্র ভারতব্যাপী ছড়াইয়া পড়ে। দুনিয়ার অপরাপর রাষ্ট্রগুলি ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ দিতে থাকে। হিন্দুগণ এমন কি কংগ্রেসও মুসলমানদের দায়ী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় প্রবল বাধা সৃষ্টি করে।
অবশেষে রাজা গোপাল আচারীর পরামর্শে, দেশে শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধি এই পাকিস্তান দাবী মানিয়া লন। কিন্তু কায়েদে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহ যে পরিমাণ ভূমি লইয়া পাকিস্তান দাবী করিয়াছিলেন, সেই পরিমাণ ভূমি, কংগ্রেস দিতে নারাজ। কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেবের দাবী ছিল, গোটা বাংলা ও আসাম প্রদেশ এবং মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ণিয়া জেলা লইয়া পূর্ব পাকিস্তান ও পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশ, বেলুচিস্তান, ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স ও কাস্মীর রাজ্য লইয়া পশ্চিম পাকিস্তান গঠিত হইবে।
১৯৪০ সালে লাহোরে মুসলীম লীগের অধিবেশনে ভারতীয় মুসলীম নেতাগণ সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব সমর্থন করে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেব এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সকল নেতাই এই প্রস্তাব সমর্থন করে। বাংলাদেশের নেতাকে ঐদিন শেরে বাংলা উপাধী দেওয়া হয়। মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট কায়েদে আজম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ সভায় উপস্থিত সকলকে সম্বোধন করিয়া কৌতুক বাক্য কহিলেন- আপনারা সকলে সতর্ক থাকিবেন, এবার আপনাদের সামনে শেরে বাংলা আসিবেন।
যখন ফজলুল হক সাহেব তাহার বিশাল বপু লইয়া দাঁড়াইলেন। তখন সভায় খুব জোরে জোরে হাত তালি পড়িল। শেরে বাংলা ফজলুল হক কি জয় ধ্বনিতে সভাস্থল প্রকম্পিত করিয়া তুলিল। তখনও জিন্দাবাদ শব্দ আবিস্কার হয় নাই। ঐদিনই কায়েদে আজম হিন্দুদের অনুকরণে মহাত্মা গান্ধি কি জয়ের মত না বলিয়া শেরে বাংলা ফজলুল হক জিন্দাবাদ বলিলেন। তখন মঞ্চের উপর হইতে সোহরাওয়ার্দী সাহেব শ্লোগান দিলেন- শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক জিন্দাবাদ। সকলে তখন গলা ফাটাইয়া জিন্দাবাদ ধ্বনিতে সভাস্থল আকাশ পাতাল প্রকম্পিত করিয়া তুলিল। ৫ বার সোহরাওয়ার্দী সাহেব এই শেরে বাংলা ফজলুল হক জিন্দাবাদ বলিলেন।
তৎপর কায়েদে আজম স্বয়ং তাহার সহিত কোলাকুলি করিয়া হ্যান্ডশেক করিলেন। কায়েদে আজমের দেখাদেখি নাজিম উদ্দীন, ভাষানী মুহম্মদ আলী, রহমতুল্লাহ চৌধুরী প্রভৃতি ভারতী প্রায় সকল মুসলিম নেতাই ঈদের দিনের কোলাকুলির মত কোলাকুলি করিলেন। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। পরদিন আজাদ পত্রিকায় বড় বড় হেডিং দিয়া কায়েদে আজম ও শেরে বাংলার কোলাকুলির ছবি ফাস্ট পেজে ছাপাইয়াছিল। সে কথা আমার খুব ভালো মনে আছে। যুদ্ধ তখন প্রায় সারা দুনিয়ায় ছড়াইয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছে। হিটলার তখন ইংল্যান্ড আক্রমণ করি করি করিতেছে। উগ্র হিন্দুগণ, রাষ্ট্রিয় স্বয়ং সেবক সংঘ সংক্ষেপে আর এস এস পার্টি তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা করিল, আমরা রাম রাজত্ব স্থাপন করিব। মুসলমানগণ খেজুর তলার লোক খেজুর তলায় ফিরিয়া যাইতে হইবে। নচেৎ আমাদের সঙ্গে রামের ভজন গাহিতে হইবে। রঘুপতি রাঘব রাজারাম, পতিত পাবন সীতারাম গাহিতে হইবে।
কায়েদে আজমের বাড়ি তখন বোম্বাইতে, মালাবার হিলে। বোম্বাইয়ের মুসলমানগণ মিছিল করিয়া গান্ধি পার্কে গিয়া প্রতিবাদ সভা করে। ঐদিন বৃটিশ সরকার আর এস এস পার্টির নেতাদের গ্রেফতার করে।
১৯৪৫ সনে আমেরিকা জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহর দুইটির উপর আনবিক বোমা, বহুল প্রচলিত এটম বোমা বর্ষণ করে। ফলে দুইটি শহর ধ্বংস হইয়া যায়। এবং জাপান বাধ্য হইয়া আত্ম সমর্পন করে। ১৯৪৫ সনে জাপান ও জার্মানীর আত্মসমর্পনের পর যুদ্ধ থামিয়া যায়। আমেরিকা জাপান দখল করে। জেনারেল ম্যাক আর্থার জাপানের প্রশাসক নিযুক্ত হন। জাপানের সম্রাট সিকাডোর পুত্রকে আমেরিকা সিংহাসনে বসায়। আর বিচারে জাপানের সম্রাট শাস্তিস্বরূপ জেনারেল ম্যাক আর্থারের সিগারেট ধরাইয়া দেন। জাপানের প্রধান মন্ত্রী জেনারেল হিদেকি তোজোর ফাঁসির হুকুম হয়।
ফাঁসির পূর্ব মুহুর্তে হিদেকী তোজো জাপানের কৃষকদের প্রধান খাদ্য ডালভাত খাইবার অভিলাষ ব্যক্ত করেন। সামরিক আদালতের বিচারকগণ তোজোর অভিলাষ পূর্ণ করেন। জাপানীগণ তোজোর প্রতি আজো শ্রদ্ধা নিবেদন করে। আর জার্মানীকে এলায়েড পাওয়ারের দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও আমেরিকা ভাগ করিয়া লয়। জার্মানীর ডিকটের হের হিটলার পরাজয়ের অপমানে সায়ানাইট বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
এদিকে ভারতের হিন্দু মুসলীম নেতাদের চাপে ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দান করে।
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট ভারতবর্ষ দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। একটি স্বাধীন ভারত। অন্যটি স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র। পাকিস্তান দুটি খণ্ডে বিভক্ত হয়। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও আসামের সিলেট জেলা লইয়া পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের উত্তর পশ্চিম অঞ্চল সিন্ধু, বেলুচিস্তান পাঞ্জাবের প্রদেশ লইয়া পশ্চিম পাকিস্তান গঠিত হয়। কিন্তু তখনও ভারত ও পাকিস্তান রাজ্য দুইটিকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হয় নাই। ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাচে রাখা হয়। পরে পাকিস্তান ২৩ মার্চ তারিখে ইসলামিক রিপাবলিক হিসাবে ঘোষণা করিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। আর পরের বছর ২৬ জানুয়ারী ভারত ডোমিনিয়ন পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯৪৮ সনের ১১ সেপ্টেম্বর কায়েদে আজম ইন্তেকাল করেন। তিনি রফিক শাবির মাজাংভি কর্তৃক নিহত হন। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিম উদ্দীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন। লিয়াকত আলী প্রধান মন্ত্রী পদেই বহাল থাকেন। লিয়াকত আলী সাহেব তখন অর্থ মন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করেন। ঐ বৎসর তিনি যে বাজেট পেশ করেন ইতিহাসে তাহাকে পুয়রম্যান বাজেট নামে অভিহিত করেন। তাহার এই বাজেটের ফলে দুনিয়ার সব মুসলিম রাষ্ট্রগুলি পাকিস্তানকে শিল্পোন্নত করার মানসে কোটি কোটি টাকা অনুদান দিতে থাকে। ফলে পাকিস্তান পাট শিল্পে খুবই উন্নত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে গোপালপুর চিনি কল আর দর্শনা চিনিকল, মোহিনী মিল কাপড়ের কল আর ঢাকেশ্বরী কাপড়ের কল ছাড়া আর কোন কল কারখানা ছিল না। হিন্দুগণ পাকিস্তানকে পঙ্গু করিবার জন্য হিন্দু মালিকানাধীন ঢাকেশ্বরী ও মোহিনী মিলের বিদ্যুৎ উৎপাদন টারবাইন বার্স্ট করাইয়া দিয়া মিল দুইটির উৎপাদন বন্ধ করিয়া দেয়।
কিন্তু পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তানে ৭৭ টি জুট মিল ১১ টি চিনির মিল, ৫৫ টি কাপড়ের মিল এশিয়ার বৃহত্তম কাগজের কল কর্ণফুলি পেপার মিল, খুলনা কাগজের মিল, আখের ছোবড়া দিয়া কাগজ তৈরীর জন্য পাকসী পেপার মিল, চট্টগ্রামে স্টিল মিল, তেল শোধনাগার, ঔষধ কারখানা, জাহাজ নির্মানের জন্য খুলনা ও নারায়নগঞ্জ শিপ শিপ বিল্টিং শিপ ইয়ার্ড ও ডক ইয়ার্ড, সিলেটে নলখাগড়া হইতে কাগজ উৎপাদনের জন্য সিলেট পাল্প মিল এবং আরো নানান ধরনের মিল কলকারখানা স্থাপিত করিয়া বিশ্বের বাজার দখল করে। আর হিন্দুস্থান বিশ্বের বাজরে চরমভাবে মার খাইতে থাকে।
পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানে রেল পথ নির্মাণ, সড়ক পথ নির্মাণ, স্কুল কলেজ প্রভৃতি অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষকের উন্নতির জন্য বিনামূল্যে সার, কীট নাশক ওষধ বিতরণ করিয়া কৃষির উন্নতি, গমের আবাদ করিয়া ইরি ধানের আবাদ করিয়া খাদ্যে প্রায় স্বয়ং সম্পূর্ণ হইতে থাকে।
পাকিস্তানের উন্নতি দেখিয়া ভারত হিংসায় জ্বলিয়া উঠে। তখন তাহারা তাহাদের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পাবনার ছেলে জয়ন্ত নাথ চৌধুরী সংক্ষেপে, জেনারেল জে এন চৌধুরীর পরামর্শে ও নেহেরুর স্থলাভিষিক্ত প্রধান মন্ত্রী খর্বকায় ধুর্ত্ত লাল বাহাদুর শাস্ত্রী মহাশয়ের চানক্যকুট বুদ্ধির পরামর্শে বিনা ঘোষণায় আমাবশ্যার রাত্রের আধারে আকস্মীকভাবে পাকিস্তানের প্রধান সেনানিবাস লাহোরে আক্রমণ করে। এবং গর্বভরে তার সদস্যদের বলে আমরা ভারতীয় নেতারা সকালে লাহোর ক্যন্টনমেন্টে বসিয়া চা কফি পান করিব।
কিন্তু লাল বাহাদুর শাস্ত্রি ও জে এন চৌধুরীর সেই আশায় ছাই দিল ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং সৈন্য বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আইয়ুব খান সকাল সাতটার সময় পাকিস্তানী জাতির প্রতি এক বেতার ভাষণ দিলেন- “আমরা মুসলমান, আমাদের ইমানী শক্তির বলে- নিলর্জ ভারতের বিষ দাঁত ভাঙ্গিয়া দিব। আল্লাহ আমাদের সহায়। হে পাকিস্তানী বীর সৈনিকেরা এই যুদ্ধে তোমরা মরিলে শহিদ, বাঁচিলে গাজী। আমরা শহিদী দরজা চাই না, আমরা গাজীর গৌরব চাই।”
মাত্র সাতদিনের মধ্যে ভারতের ২ হাজার বর্গমাইল এলাকা পাকিস্তানের বীর বাহিনী দখল করল। প্রায় ৩০০ শত সামুদ্রিক জাহাজ ও ১৫ হাজার সৈনিক পাকিস্তানের হাতে বন্দি হইল। লাল বাহাদুর শাস্ত্রির বাহাদুরী, চা খাওয়া দূরে থাক, নিজের দেশের মানুষ ফ্যান খাইতে লাগিল। অবশেষে ১৬ দিন যুদ্ধ চলিবার পর আরো জয় হাজার বর্গমাইল এলাকা পাকিস্তান দখল করিল।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রি তখন দৌড়াইয়া রাশিয়ার কর্তাদের কাছে গেল। বলিল, আপনারা শিগগির আইয়ুব খানকে থামান। নচেৎ ২/৪ দিনের মধ্যেই দিল্লী দখল করিবে। আপনারা আমার একান্ত আপনজন। আমি পাকিস্তান আক্রমণ করিয়া যা ভুল করিয়াছি- তাহাতো ইতিহাসের পাতায় কালো কালিতে লেখা থাকিবে। আপনারা যদি সাহায্য না করেন, তবে, এই দেখেন বলিয়া ফুতুয়ার পাশ পকেট হইতে একটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের ছোট্ট শিশি বাহির করিয়া দেখাইল। ক্রশ্চেভ চশমাটা চোখে দিয়া শিশির গায়ে লেবেল পড়িয়া কহিল, সর্বনাশ, এ যে দেখছি স্ট্রং সায়ানাইড ভেনম। যে শিশিটা খাইয়া জার্মানীর হিটলার সামরিক বিচারের হাত হইতে নিস্কৃতি পাইয়াছিল। আপনিও কি হিটলারের মত।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রি ক্রুশ্চেভের কথা শেষ করিতে দিলেন না। কান্দিয়া কহিলেন- হিটলার বেটা যে ভুল করিয়াছিল, ১৯৩৯ সানের ৩ রা সেপ্টেম্বর। আমিও তো দাদা সেই ভুলই করিয়াছি, তেশরা সেপ্টেম্বর চোরের মতন পাকিস্তান আক্রমণ করিয়া। আপনারা যদি সাহায্য না করেন, তবে দেন শিশিটা আমি আপনাদের সামনেই গিলিয়া হিটলারের সঙ্গে দেখা করি গা। ক্রুশ্চেভ খুব বুদ্ধিমান, তিনি স্ট্রং সায়ানাইডের শিশিটা তাহার নাতি জামাই গর্বাচেভের হাতে দিয়া কহিলেন, এটা তোমার কাছে রাখো।
আর খর্বাকৃতি শাস্ত্রির মাথায় সোহাগের হাত বুলাইয়া কহিল, তুমি চিন্তা করিও না। আইয়ুব খাঁ আমার পরম বন্ধু লোক। শাস্ত্রি তখন চীৎকার দিয়া নিজের মাথার টিকিটা টানিয়া ধরিয়া কহিল, আইয়ুব খাঁ আপনার পরম বন্ধু, তাহলে তো আপনি তাহাকে আরো এফ জঙ্গি বিমান দিবেন।
ক্রুশ্চেভ তাহার মোটা গলায় ধম দিয়া কহিল, কান্দিও না। আমি জানি ভারত বিশাল দেশ। তাহার সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করিলে আমার দেশের মোটা লাভ হইবে। আর পাকিস্তান তো আমার দেশের কোন জিনিসই কেনে না। সে তো নিজেই সব বানায়। তুমি চুপ কর। আমি এখনি আইয়ুব খার কাছে ফোন করি, দেখি সে কি বলে? বলিয়াই পার্শ্বে রক্ষিত টেবিলের উপর হইতে দুধের মতন সাদা রিসিভার তুলিয়া এক মুড়া কানের কাছে, আর এক মুড়া মুখের কাছে রাখিয়া কহিল, হ্যালো, হ্যাঁ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মহাবীর আইয়ুব খাঁর সাথে কথা বলব। সংযোগ করিয়া দাও।
শাস্ত্রি মহাশয় কহিলেন, দাদা ঠিকই বলিয়াছেন। আমাদের মহাবীর হনুমান মরিয়া পুনর্জন্ম লাভ করিয়াছে। সেই মহাবীরই তো আইয়ুব খান। নইলে তো আমার চা খাওয়া হইত লাহোরে। আমি কি জানি যে বীর হনুমান পুনর্জন্ম লাভ করিয়া আইয়ুব খাঁ হইয়াছে। জানিলে কি আর আমি পাকিস্তান আক্রমণ করিতাম। দাদা এই আইয়ুবের হাতে যদি আমার মৃত্যু হয়, তবে আমার স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত।
হ্যালো, ইয়েচ, আই এম ক্রুশ্চেভ, আই রিকোয়েস্ট ইউ, প্লিজ স্টপ দ্যা ওয়ার, বিকজ আই এ্যম ইউর ইন্টিমেন্ট ফ্রেন্ড। মেনি ইনোসেন্ট পিপল ডাইয়েজ এভরিডে। ও, ইয়েচ, ইয়েচ, থ্যাংক ইউ মেনি মেনি থ্যাংকস।
ক্রুশ্চেভ হাস্যমুখে রিসিভার নামাইয়া থুইয়া, শাস্ত্রির সহিত হাত আগাইয়া করমর্দন করিল। তারপর কহিল, চিন্তা করিও না। নাস্তা করিয়া বাড়ি যাও। আর আমি পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূতকে ডাকিয়া সব কথা খুলিয়া বলি।
শাস্ত্রি তখন ভীত কণ্ঠে কহিল, দাদা আমি যে আপনার কাছে আসিয়াছিলাম, সে কথা পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূতকে বলিবেন না। ক্রুশ্চেভ ভুড়ি দোলাইয়া হো হো করিয়া হাসিয়া কহিল, একেবারে ছেলে মানুষ, ও কথা বলিলে কি আপনার মান সম্মান থাকে। শাস্ত্রি হাসিয়া কহিল, ছেলে মানুষই, দেখেন তো আপনার কোমর সমানও লম্বা না। আইয়ুব খাঁ জয়ের নেশায় যুদ্ধ থামাইতে রাজী হইলেন না। কিন্তু জনগণের দুঃখ দূর্দশার কথা চিন্তা করিয়া রাজী হইলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ থামাইয়া দিলেন।
১৮ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার তাশখন্দ শহরে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠক হইল। অনাক্রম চুক্তি স্বাক্ষর হইল। পাকিস্তান তাহার দখলীকৃত জায়গা ও বন্দীকৃত সৈন্য জাহাজ সব ফেরত দিল। দলিলে স্বাক্ষর শেষে লাল বাহাদুর শাস্ত্রি আইয়ুব খানের সাথে করমর্দন করিলেন। আইয়ুব খাঁ সুযোগ পাইয়া মনে ঝাল মিটাইলেন। শাস্ত্রির হাতে এমনভাবে চাপ দিলেন যে তাহার চাপে শাস্ত্রির হাতের পাঞ্জা গুড়া হইয়া যাইবার উপক্রম হইল। উহু উহু করিতে করিতে নিজ কেবিনে গিয়া প্রাণত্যাগ করিলেন। মরবার পূর্বে ভাবিলেন- মহাবীর হনুমানের হাতেই মৃত্যুবরণ করিলাম। নির্ঘাত স্বর্গপ্রাপ্তি।
পাকিস্তান ৪০ দিন পাকিস্তানী পতাকা অর্ধনমিত করিয়া লাল বাহাদুর শাস্ত্রির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিল। তারপর নেহেরু তনয়া ইন্দিরা গান্ধি ভারত সাম্রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী হইলেন। প্রধান মন্ত্রি হইয়াই তিনি পাকিস্তানকে শব্দ করিবার নেশায় মাতিয়া উঠিলেন। তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা পূর্ব পাকিস্তানে গুপ্তচরদের মারফত পাঠাইয়া সব মিল কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ভিতর বিভেদ সৃষ্টি করিলেন, তারপর ছাত্রদের উস্কানী দিয়া বিহারী বাঙ্গালীদের মধ্যে দাঙ্গা বাধাইয়া দিলেন। তারপর জয় বাংলার শ্লোগান দিয়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাধাইয়া দিলেন। নয় মাস যুদ্ধ চলিবার পর পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র হইল। আর ভারতী সৈন্য বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের সোনাদানা মূল্যবান যন্ত্রপাতি সব লুট পাট করিয়া লইয়া গেল। তা যাক, আমরা তো স্বাধীন বাংলাদেশ লাভ করিলাম।
বাংলাদেশ দীর্ঘ ১৭ বৎসর পর আবার তাহাদের ঐতিহ্য ফিরিয়া পাইল। বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র হইল। আমরা এখন ইসলামী রাষ্ট্রের বাসিন্দা। এখন পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব হইয়াছে। দুই দেশের মধ্যে আবার ব্যবসা বাণিজ্য চালু হইয়াছে। পাকিস্তান বিপুল পরিমাণে সাহায্য বাংলাদেশকে দিতেছে।
যে কোনো দেশের উন্নতি অবনতি নির্ভর করে সেই দেশের রাষ্ট্র প্রধানের সততা ও অসততার উপর। রাষ্ট্র প্রধান যদি সততার সহিত নিঃস্বার্থভাবে দেশের জনগণের মঙ্গল কামনা করে দেশের উন্নতির চেষ্টা করে তবে সেই দেশ উন্নতি লাভ করে। জনগণ সুখে শান্তিতে বসবাস করে। রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যদি ন্যায়ের ভিত্তিতে রচিত হয় তবে সেই দেশের উন্নতি হইতে বেশি সময় লাগে না। দুনিয়ার ইতিহাসে ইহার ভুরি ভুরি নজীর রহিয়াছে। তুরস্ক দেশটি ইউরোপের পিড়ীত লোক বলিয়া অভিহিত ছিল। কামাল পাশার ন্যায়নীতির ফলে দূর্বল তুরস্ক কয়েক বৎসরের মধ্যেই শক্তিশালী জাতি ও রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠালাভ করে।
চীনের লোকদিগকে আফিং খোর জাতি বলিয়া দুনিয়ার লোক চীনাদিগকে ঘৃণা করিত। ডাক্তার সান ইয়াৎ সেনের সততায় এবং চেষ্টায় চীন আজ দুনিয়ার প্রথম শ্রেণীর শক্তিরূপে চিহ্নিত। রাশিয়ার লোকেরা নিতান্ত কষ্টে কালাতিপাত করিত। লেনিনের সততায় সেই রাশিয়া আজ প্রথম শ্রেণীর পরাশক্তিরূপে পরিচিত। চীন রাশিয়া তুরস্কের জণগণ পরম সুখে কালাতিপাত করিতেছে।
আমাদের বাংলাদেশের জনগণ প্রকৃত নেতার অভাবে- তলাহীন ঝুড়িরূপে জগতের কাছে নিন্দিত।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার সততায় দেশ কিছুটা অগ্রগতির দিকে ধাবিত হইতেছিল, কিন্তু তাহাকে হত্যা করিয়া সেই অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করা হইল। দেশ পিছাইয়া গেল। গদি লইয়া কাড়াকাড়িতে দেশের জনগণ আবার কষ্টের সাগরে নিমজ্জিত হইল।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরশাদ দেশকে উন্নতির দিকে কষ্টের সাগর হইতে সুখের সাগরে ভাসাইবার চেষ্টা করিতেছেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক ক্ষমতা লোভী; স্বার্থ পরায়ণ ব্যক্তি তাহাকে গদিতে ঠিকমত স্থিতিশীল হইতে নানারকম প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়াছে।
বাংলাদেশেকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী করার মানসে প্রেসিডেন্ট এরশাদ যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছেন, তাহাকে বাস্তবায়িত করিবার সুযোগ দেওয়া হইতেছে না। হরতাল হরতাল করিয়া দেশটাকে গোল্লায় দিতে উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। তবে প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহসী বুদ্ধিমান। এবং ত্বড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমতাসম্পন্ন দক্ষ শাসক। দেশের দরিদ্র জনগণের পরম উপকারী বন্ধু। সর্বোপরি তিনি আল্লাহর উপর নির্ভরশীল মুত্তাকী, পরহেজগার ব্যক্তি। সুতরাং আমি আশা করি, তাহার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুনিয়ার বুকে একটি মর্যাদাশীল সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশরূপে স্থিতিশীল রাষ্ট্র হইবে। প্রেসিডেন্ট এরশাদ বাংলাদেশী মুসলমানদের প্রাণের দাবী, বাংলাদেশকে একটি ইসলামী রাষ্ট্ররূপে ঘোষণা করিয়া মুসলমানদের সেই দাবী পূরণ করিতে সক্ষম হইয়াছেন। হে মহান আল্লাহ, প্রেসিডেন্ট এরশাদকে দীর্ঘজীবি করুন। আমিন।
বাংলাদেশের ভূগর্ভের খনিজ পদার্থ উত্তোলিত হয় নাই। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের ভূগর্ভে অফুরন্ত খনিজ দ্রব্য মজুত আছে। পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের ভূগর্ভে জরিপ চালাইয়া মূল্যবান গ্যাস আবিস্কৃত হইয়াছে। আজ সেই গ্যাস উত্তোলন করিয়া দেশকে শিল্প সমৃদ্ধ করিবার যে প্রয়াস চালাইতেছেন- তাহাতে আমি আশা করি অচিরেই দেশ উন্নতমানের শিল্প কারখানা গড়িয়া উঠিবে। ইতোমধ্যেই গ্যাস হইতে সার প্রস্তুতের বিশাল বিশাল কারখানা গড়িয়া উঠিয়াছে। রাসায়নিক সার এখন আর বিদেশ হইতে আমদানী করিতে হয় না। দেশের কারখানায় উৎপাদিত ইউরিয়া সার এখন দেশের চাহিদা মিটাইয়া বিদেশে রপ্তানী করিয়া মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করা হইতেছে। বিদ্যুৎ কারখানারও উন্নয়ন করা হইতেছে। বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেশ পিছনে পড়িয়া থাকে। এরশাদ সরকার দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য বিদেশী বিশেষজ্ঞ দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে প্রকল্প হাতে নিয়াছে- আমি আশা করি আগামী কয়েক বৎসরের মধ্যেই দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করিয়া দেশের মোট চাহিদা পূরণে সমর্থ হইবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য যে সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হইবার পথে, তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকার বুড়িগঙ্গা ব্রিজ অন্যতম। সড়ক যোগাযোগ, রেল যোগাযোগের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা হাতে লওয়া হইয়াছে। পাকসীতে ফেরী চলাচলের সময়, অর্থ ব্যয় হ্রাস করিয়া উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পাকসীতে বিশ্ববিখ্যাত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপর দিয়া মোটর চলাচলের জন্য পরিকল্পনার সব প্রাথমিক জরিপ কার্য সম্পন্ন হইয়াছে। আগামী ১৯৮৯ সনের জানুয়ারীতে কার্য শুরু হইবে। এবং ১৯৯১ সনে মোটর চলাচল শুরু হইবে। পাকসীর নিকটে রূপপুর আনবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বহিবিশ্ব হইতে যথেষ্ঠ সাহায্যের আশ্বাস পাওয়া গিয়াছে। ১৯৯২ সনের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হইবে।
আইয়ুব খার আমলে রূপপুর আনবিক বিদ্যুৎ কারখানার জন্য জমি হুকুম দখল করা হয়। এবং তথায় অফিসারদের ভবন নির্মিত হইয়াছে। এখন মেসিনারী শীঘ্রই আমদানী করিয়া স্থাপন করা হইবে। আনবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হইবে সূর্য রশ্মি হইতে। এই প্রকল্প চালু হইলে খুব সস্তা দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হইবে।
বিদ্যুৎ সহজলভ্য হইলে কৃষি উৎপাদনে শ্যালো মেসিনগুলি চালু করিয়া প্রচুর ইরিধান ও গম উৎপাদন সহজ হইবে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হইলে, বিদেশ হইতে খাদ্য আমদানী বন্ধ করিয়া ঐ অর্থে শিল্পে ব্যবহারের জন্য কলকব্জা ক্রয় করা সহজ হইবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থারও উন্নয়ন হইবে। ইতোমধ্যে বহু কলেজ স্থাপন হইয়াছে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে যে সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হইবার পথে, যমুনা বহুমুখী ব্রিজ তাহার অন্যতম। অত্যাধিক ব্যয়ে বহুল যমুনা ব্রিজের জন্য, বহিবিশ্বের দাতা দেশগুলির মধ্যে সৌদি আরব, চীন ও জাপান অর্থ সাহায্য প্রতিশ্র“তি প্রদান করিয়াছে। ব্রিজটির জন্য সিরাজগঞ্জ শহরের ৮ মাইল দক্ষিণে স্থান নির্বাচন করা হইয়াছে। সিরাজগঞ্জ হইতে একটি রেলপথ এই ব্রিজের উপর দিয়া ভুয়াপুর হইতে ঢাকার গাবতলী পর্যন্ত যাইবে। আর ব্রিজের উপর দিয়া সর্বক্ষণ চলচলের জন্য মোটর রাস্তা নির্মাণ করা হইবে। এবং ব্রিজের সাইড দিয়া গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন করিয়া তিতাস গ্যাস ফিল্ড হইতে যমুনার পশ্চিম পাড়ে গ্যাস সরবরাহ করা হইবে। এই সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হইলেই বাংলাদেশ উন্নতির পথে দ্রুত অগ্রসর হইতে থাকিবে।
আমি হয়তো তখন বাঁচিয়া থাকিব না, কিন্তু আমার সন্তান সন্ততিগণ ইহার সুফল ভোগ করিয়া পরম সুখময় জীবন যাপন করিতে সমর্থ হইবে। ইহাই আমার অন্তরের কামনা।
রচনাকাল: ১৯৮৮
*মোকছেদ আলী (১৯২২-২০০৯)। স্বশিক্ষিত। সিরাজগঞ্জ জেলার বেলতা গ্রামে জন্ম। গ্রামটি নদীগর্ভে বিলীন।
একেলা পাইয়াছি হেথা, পলাইয়া যাবে কোথা ——–
আজ পাশা খেলবরে সামমমমমমমমম—————-
পাইয়াছি, পাইয়াছি, বানান ভুল পাইয়াছি——————– :rotfl:
ওষধ————ঔষধ
জয়————–ছয়
ধূর্ত্ত————–ধূর্ত
খুজিয়া———–খুঁজিয়া
ধম————–ধমক
মনে————–মনের
প্রতিশ্র“তি——–প্রতিশ্রুতি
ভাবিয়া———–ভাবিয়ে
অনেক সাধনার পরে আমি—————-
পেলাম আপনার ভুল———————-
ইহাতো গেল বানান প্রসঙ্গ, এইবারে দেখি প্রথম প্যারার ব্যাপারে নৃপেন দা কে আপনি যাহা বলিয়াছেন তাহার সানে নুজুল কি ? মোকছেদ আলী মহাশয়ের পূর্ববর্তী লেখা হইতে দেখা গিয়াছে যে তিনি একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। উপরের প্যারাটি বাদ দিলে বর্নিত ইতিহাসের যে হাল দেখিতে পাওয়া যায় তাহা কোন আলোকিত মানুষের হইতে পারে কি ? এই কথিত ইতিহাসের রক্ষা কবচই হইলো উপরের প্যারাখান। ইহাকে নিজের বলিয়া দাবি করিয়া মোকছেক আলীকে ভয়ানক অন্ধকারের পতিত করিয়া দিলেন।
আমি মোকছেল আলীকে চিনিতে পারিয়াছি। :rotfl: চলুক। :yes:
@আতিক রাঢ়ী,
আগে আপনার বানানে ভুল ধরেছি বলে এখন প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছেন তাই না?
শুনুন, জ্ঞানী লোকেরা বলেন- “যেভাবে তুমি অন্যের দোষ ধরিবে, সেইভাবে তোমারও দোষ ধরা হইবে।”
জ্ঞানী বাক্য বৃথা যায় না। আজ তার প্রমাণ পাওয়া গেলো।
আপনি মোকছেদ আলীকে ‘মোকছেক’ আবার ‘মোকছেল’ বলিয়াছেন। হ্যা, আপনি মোকছেল আলীকে চিনিতে পারিয়াছেন, কিন্তু মোকছেদ আলীকে এখনও চিনিতে পারেন নাই। মোকছেল আলী আর মোকছেদ আলী এক ব্যক্তি নয়।
@মাহফুজ,
নারে ভাই কোন প্রতিশোধ-টতিশোধের ব্যাপার না। আমার প্রতি লাইনে মিনিমাম একটা বানান ভুল হয়। অভিধান হাতে নিয়ে লেখার মত বিরক্তিকর ব্যাপার আর নাই। সময়ের বারটা বেজে যায়। মজা করলাম একটু।
আচ্ছা বলেনতো নত্ত্ব, সত্ত্ব বিধান আছে জত্ত্ব বিধান নাই কেন ? 😕
য়, য এদেরতো শব্দের অন্তে থাকার কথা, য়, সব সময় নিয়ম মেনে চলে কিন্তু ‘য’ প্রায়ই শব্দের সামনে চলে আসে কেন ? :-/
বিদেশি শব্দ লেখার সময় ‘ী’ ‘ূ’ লেখা ঠিক কিনা ?
আর নৃপন দা যাই বলুক, মোকছেদ আলীকে আমি মার্কিএ রাখছি। 😀
@আতিক রাঢ়ী,
এই সমস্ত প্রশ্ন আমাকে না করে যদি ফরিদ ভাইকে করতে তাহলে খুবই ভালো হতো। তারপরও যেহেতু প্রশ্ন করেছেন- উত্তর দেবার চেস্টা করি।
বাংলা ভাষায় বানানের ক্ষেত্রে ণ, ন এবং ষ, স এর ব্যবহার কিছুটা সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এই বিধানসমূহ জানা না থাকলে বানানে ভুল হয় এবং শব্দ ও বাক্যের অর্থ উদ্ঘাটন করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। সুতরাং পদ মধ্যস্থিত ণ, ন এবং ষ ও স এর সঠিক ব্যবহার জানার জন্য এবং শব্দের সঠিক অর্থ বুঝানোর জন্য ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান জানা জরুরী।
জ বা য এর ক্ষেত্রে নেই, কারণ ব্যাকরণ বইতে নাই। (সহজ কথা)
উত্তর: মাহবুবুল আলমের বাংলা বানানরীতি বই পড়ুন। পেয়ে যাবেন।
প্রমিত বানান রীতি অনুসারে বিদেশি শব্দে ী ূ লেখা ঠিক হবে না।
মার্কিএ শব্দের অর্থ বুঝতে পারছি না।
@মাহফুজ,
আমি ফরিদ ভাইরে ভয় পাই। আপনাকে আপন মনে হলো, তাই বললাম।
বুঝবেন কিভাবে ং বাদ গেছে যে ।
@আতিক রাঢ়ী,
আমার সাথে সাথে বলুন- এত সাহস যে আর ভয় করে না, ভয়ের ফ্যাকাসে মুখ কেমন অচেনা লাগে। (১০ বার পড়ুন)। দেখবেন ভয় কেটে গেছে। এটা কিন্তু পরীক্ষিত। এই ট্রিটমেন্টের নাম সাইকো থ্যারাপী। ভয় পেলে ঐ মন্ত্র ১০ বার জপতে হবে। যাহোক পরীক্ষা করে দেখেন। যদি কাজ হয়, তাহলে জানাবেন।
@আতিক রাঢ়ী,
আমি সবিনয়ে ভিন্ন মত পোষন করছি। এই ইতিহাসে গড়মিল আছে। সেই গড়মিলের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র নজর নেই। আমার নজর অন্য খানে। যেমনঃ
১) তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি
২) নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া শিখেছেন
৩) তারপরেও দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ঘটনা সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন
৪) তাই নিয়ে লিখেছেন নিজের স্টাইলে, ঢং এ
৫) ১৯৪০ সাল থেকে ইতিহাস রেকর্ড করে রেখেছেন। তিনি যা দেখেছেন, শুনেছেন তাই।
৬) তারপর এত বছর পেরিয়ে ১৯৮৮ সনে উনার নিজের জানা, দেখা ইতিহাস গুলো গেঁথেছেন একটি সুতোয়। এটি একটি বিরাট মহীরুহের সমতূল্য।
আমি মোকছেদ আলীকে আমার এই দৃষ্টিকোন দেখি এবং শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে যায়। কয়জন শিক্ষিত লোক তার নিজের উপলব্ধির কথা এভাবে লিখে ভবিষ্যত প্রজন্মের হাতে তুলে দিচ্ছে?
তাই মোকসেদ আলী আমার কাছে এক অসাধারণ, অসামান্য ব্যক্তিত্ব।
সবাই ভাল থাকবেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা, আসলে ইতিহাসে গড়মিল থাকতেই পারে, কিন্তু এটা পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক ইতিহাস। যে ইতিহাস আম জনতার মুখে মুখে ফেরে। স্বশিক্ষিৎ বলতেই আমার আরজ আলীর কথা মনে পড়ে যায়। নিজে নিজে লেখা পড়া শিক্ষে খোয়াবনামা লিখেছেন যারা, তারা অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন, কিন্তু শিক্ষিৎ বলতে পারি কি ?
আয়ুব খা, জিয়া, এরশাদ যার কাছে মহামানব, কারন তারা ইসলামের সেবক। এগুলি আসলে শিক্ষিৎ ব্যাক্তির মূল্যায়ন হতে পারে না। বরং প্রথম প্যারাটা মোকছেদ আলীর লেখা হলে ঠিক হতো। অর্থাৎ একজন ব্যাক্তি ইতিহাসের অসংগতির দিকে আমাদেরকে চোখ ফেরাতে বলছেন।
প্রথম প্যারানিয়ে প্রশ্নকরে আপনিই আসলে মোকছেদ আলীকে হত্যা করেছেন।
@আতিক রাঢ়ী,
এ নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।
আমি ব্যক্তি মোকসেদ আলীর অধ্যাবসায়ের (বানানটি ঠিক কিনা বলতে পারছি না) উপর আলোকপাত করেছি। এই একটি নিবন্ধ দিয়ে তাকে অধপাতিত করতে চাই না। স্কুলে পড়াশুনার কালচার নেই। তারপরও সারাজীবনের ঘটনাগুলোকে তিনি পর্যবেক্ষন করেছেন। মূল্যায়ন এবং লিপিবদ্ধ করেছেন। আমি তাঁর এই দিকটার কথা ভাবতে চেষ্টা করেছি মাত্র।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা, ডায়েরীর মত করে এই লেখাটি পেয়েছি।
১৯৭৫
বাংলা ১৩৮২ সনের ২৯ শে শ্রাবণ মোতাবেক ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সন রোজ শুক্রবার। সকালে মানে ভোরে মাঠে গিয়াছিলাম, ক্ষেতের আউশ ধান পাকিয়াছে কিনা দেখিতে। মাঠ হইতে বাড়ি আসিয়া হাতমুখ ধুইয়া দোকানে আসিয়া তালা খুলিব, এমন সময় আমাদের গলির ব্যবসায়ী কেবি, মানে খোদা বকস দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া আসিতেছে আর চীৎকার করিয়া বলিতেছে- “চরম খবর চরম খরব, শেখ মুজিব নিহত।”
আমার আর তালা খোলা হইল না। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে কে নিহত করিল শুনিবার জন্য তেমাথার দিকে রওনা দিলাম। পথে কে একজন কহিল, “শেখ মুজিব নিহত।”
আমার রেডিওর ব্যাটারী নাই। কাজেই তেমাথায় গিয়া কমলেশ ঠাকুরের দোকানে রেডিওতে খবরটা শুনেই আসি। ঠাকুরের দোকানে রেডিও বাজিতেছে। কোরান তেলাওয়াত হইতেছে। সবাই চুপ চাপ বসিয়া আছে। ঠাকুরের ভাইয়ের মুখ খুব বিমর্ষ। কোরান পাঠ শেষ হইল। ঘোষক ঘোষণা করিল, “শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যা করা হইয়াছে। খোন্দকার মোস্তাক আহমদের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী দেশের শাসনভার গ্রহণ করিয়াছে। মার্শাল ল’ জারী করা হইয়াছে। সমগ্র দেশে সান্ধ্য আইন বলবৎ করা হইয়াছে। জনগণকে ঘরের বাহির না হইতে নির্দেশ দেওয়া হইতেছে। স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটিয়াছে।”
স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটিয়াছে, শুনিয়াই বুঝিতে পারিলাম, শেখ মুজিবের জন্য শোক প্রকাশ করা যাইবে না। আর বাস্তবিকই তো, গত কয়েকদিন আগে গভর্নর প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে ভাষণ দিতে গিয়া যেসব ভাষা ব্যবহার করিয়াছেন, তাহাতে সেই দিনই আমার মনে হইতেছিল যে, মুজিব বোধ হয় আর বেশি দিন বাঁচিবেন না।
রেডিওর সামনে খুব ভীড়। মুজিবের হত্যার খবর শুনিয়া মনে হইতেছে, কেহই আ: উ: করিতেছে না। কেমন যেন সবার মনেই একটি স্বস্থির ভাব। মনে হইল জনগণ যেন খুশিই হইয়াছে।
কারফিউ জারী করিয়াছে। কিন্তু সেতো বড় বড় শহরের জন্য। আমাদের এই ছোট্ট গ্রাম্য শহর ভেড়ামারা। ভেড়ামারাতে কে আর কারফিউ মানাইবে বা মানিবে? রাস্তায় লোক চলাচল স্বাভাবিক। তবে মোটর চলাচল নাই।
টহ বাজারে রওনা দিলাম। বাজারে গিয়া দেখি- চাল, তরকারীর বাজার দর গতকালের চাইতে অনেক কম। সকলেই বলাবলি করিতেছে- এবার দেখো, সব জিনিসের দাম কমে যাবে। চোর ডাকাত ঘুষখোর জুয়াচোর শেখ মুজিবের মতই বেঘোরে প্রাণ দিবে।
সোমবার, ২ রা নভেম্বর ১৯৭৫। দোকানে বসিয়া আছি। পাশের শামছুলের দোকান হইতে কে একজন বলিল- “ঢাকা রেডিও সেন্টার বন্ধ। রাজশাহীতে শুধু বাজনা বাজছে।” আমি বললাম- “যান্ত্রিক গোলযোগ হতে পারে।” প্রতিবাদ করিয়া সেই ছেলেটি কহিল, না, যান্ত্রিক গোলযোগ নয়। ঢাকায় কোন গন্ডগোল হতে পারে। আমি তখন তাহার কথায় সায় দিয়া কহিলাম, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে গোলযোগ হওয়া মোটেই বিচিত্র নহে, তবে এ-বিষয়ে মন্তব্য করা এখনি ঠিক হবে না।”
ঢাকায় গোলযোগের কথা ও রেডিও সেন্টার বন্ধের কথায় পথ চলতি কে একজন মন্তব্য করিল, ঢাকায় এখন পাকিস্তান হইয়া গিয়াছে। ফটো স্টুডিওতে বসিয়া থাকা একজন যুবক কহিল, “ঢাকা পাকিস্তানও হতে পারে আবার ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গও হতে পারে। কিসের মধ্যে যে কি হচ্ছে, তা এখনি কিছুই বলা যাবে না।”
বিকাল বেলায় মানুষেরা এই রেডিও সেন্টার বন্ধ নিয়ে নানারূপ আলোচনা মন্তব্য করিতে লাগিল। সন্ধ্যার সময় হঠাৎ লাইট অফ হইয়া গেল। মানুষেরা আরো কিরূপ যেন আতঙ্কগ্রস্থ হইল।
তারপর সন্ধ্যার সময়, কে একজন কহিল, মোস্তাক খোনকার আর প্রেসিডেন্ট নাই। খালেদ মোশাররফ এখন প্রেসিডেন্ট। শেখের দল আবার পাওয়ারে গেল। দেশ এবার রক্ত গঙ্গায় বয়ে না যায়। জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হল। শেখ পন্থীরা উল্লাস করিতে লাগিল। খোনকার পন্থীরা ম্রিয়মান হইল।
শেষ রাত্রে চেতন পাইয়া রেডিওতে ভ্যলুম দিলাম। একি? ইসলামী সঙ্গীত বাজিতে লাগিল। হঠাৎ মনের মধ্যে নতুন চিন্তা উদয় হইল। তবে কি খোনকারের দল আবার পাওয়ারে গেল। চিন্তার অবশান ঘটাইয়া রেডিওর ঘোষক ঘোষণা করিল, এক্ষুনি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ভাষণ দিবেন।
রেডিওতে ঘোষিত হইল- আমি জিয়া বলছি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, বিডিআর, আনসার ও জনগণের সহযোগীতায় বিদ্রোহ দমন করা হইয়াছে। এখানে এখন সব ভাল।
এরপর আবার ৩ নভেম্বর শেখ মুজিবের লোকেরা এক ব্যর্থ অভ্যুত্থান ঘটাইয়া খালেদ মোশাররফকে গতিতে বসায়।
৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার পাল্টা আক্রমণে খালেদ মোশাররফ ঢাকা ক্যন্টনমেন্টে নিহত হন। কিন্তু ঘন্টাখানেক পরেই আবার জিয়ার নেতৃত্বে সাবেক খোন্দকারের দল আবার পাওয়ারে গেল। দেখা যাক এরা আবার কি করে? কেউ কেউ তো বলিতেছে- ‘সব রসুনের পুটকি এক’।
@মাহফুজ,
আমার কাছে এই দিন নামচা গুলো অসাধারণ লাগল। এই দিনগুলোতে আমি একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ। কিন্তু আমি কিছু লিখে রাখার কথা ভাবিও নাই। রাখলেও এত সুন্দর করে রাখতে পারতাম না। দিব্য চোখে মোকসেদ আলী এবং দেশের সেই করুণ অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। ঐ বিশেষ দিনটি নিজে অস্পষ্ট দেখেছি। উনার চোখ থেকে পরিষ্কার দেখলাম। ধন্যবাদ, মাহফুজ।
খুনের দিনটি বৃহস্পতিবার ছিল। সকাল সাতটা পঁয়তাল্লিশ। বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল আট ঘটিকায় যোগদান করব। লম্বা সাদা কাগজে আমার দরখাস্ত লেখা প্রায় শেষ। “আপনার বিশ্বস্ত ” লিখেছি। দস্তখত বাকী আছে। তখনই কে যেন ভীত-সন্ত্রস্ত গলায় রুমের সামনে দিয়ে বলে গেল – শেখ মুজিব ইজ কিল্লড।
সারা ছাত্রাবাসে চাপা নিঃস্তব্ধতা। কী হচ্ছে কেউ বুঝতে পারছি না।
মোকছেদ আলীর দিন নামচাটি একটি স্বতন্ত্র পোস্টিং হিসেবেও দিতে পারতে।
সংকলনটি কবে বের করছ আমাকে জানাইও প্লিজ।
@নৃপেন দাদা,
যদিও এটা মন্তব্যে প্রকাশ করা হলো। তারপরও সতন্ত্র পোষ্টিং হিসেবে পরে দেয়া যাবে কিনা বুঝতে পারছি না। এ ব্যাপারে মুক্তমনার নীতিমালায় কী বলে দেখতে হবে।
অবশ্যই জানাবো।
@আতিক রাঢ়ী,
লেখার শিরোনাম কিন্তু লেখকের নিজের দেয়া। লেখার কন্টেন্ট পড়লে বুঝা যায় অসংগতি। তিনি যা লিখেছেন তা যদি বিশ্বাসই করবেন তাহলে কেন গাল-গল্প বললেন। আমিও বুঝতে পারি না।
তার মৃত্যুকথা নামে একটি পাণ্ডুলিপি রয়েছে- সেখান থেকে একটি অংশ তুলে দিচ্ছি-
[মৃত্যুর এই উল্লাসের নৃত্য আমি দেখিয়াছি- ১৯৭৫ সনের ১৫ ই আগস্টে। সকালের রেডিওতে ঘোষণা দিল, স্বৈরাচারী শেখ মুজিবকে খতম করা হইয়াছে। বাংলাদেশের জনগণের বুকের উপর জগদ্দল পাথরের মত চাপিয়াছিল, সেই শেখ মুজিবকে খতম করা হইয়াছে। মার্শাল ল জারী করা হইয়াছে। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন খন্দকার মুস্তাক আহম্মদ। আপনারা কেহ বাড়ির বাহির হইবেন না। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কেহই ঘরের বাহির হইবেন না।
৭॥. কোটি বাংগালীর প্রিয় নেতা মুজিবকে কে বা কাহারা হত্যা করিল? যাহারা হত্যা করিল তাহাদের নিকট শেখ মুজিব স্বৈরাচারী নেতা হইয়া গেল। ‘স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটিয়াছে- শুনিয়াই বুঝিতে পারিলাম শেখ মুজিবের জন্য প্রকাশ্যে শোক প্রকাশ করা যাইবে না।
শেখ মুজিবের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর শুনিয়া কিছু মানুষ আনন্দ উল্লাসে নৃত্য করিতে লাগিল। যাহারা মুজিবের অনুসারী ছিল, মুজিবকে যাহারা ভালবাসিত তাহারা শোকে দুঃখে মূহ্যমান হইয়া আত্মগোপন করিল।]
এই লেখার আগে তার আরো দুটো লেখা পোষ্ট করেছি। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কথা । এই দুটো পড়লে কি অন্ধকারের মানুষ মনে হয়?
@আতিক রাঢ়ী,
সত্যি আমি মারাত্মক ভুল এবং অন্যায় করেছি। মাফ পাওয়ার সহজ অজুহাতটি ব্যবহার করা ছাড়া দ্বিতীয় রাস্তাটি খোলা নেই। সেটি হল। বয়স হয়েছে তাই অনেক কিছুই বিলম্বে বুঝি।
মাহফুজ তোমাকে :guli: করতে হবে। আমি ভুল করছি সেই ঈঙ্গিতটি না দিয়ে তুমি আমার সাথে মজা করেছ। আমি বুঝতে পারিনি :-Y :-X
তোমাকে আরও তিনটি :guli: :guli: :guli:
আর আমার জন্য তিনটি :-X :-X :-X
আতিক সাহেবের জন্য তিনটি :rose2: :rose2: :rose2:
@নৃপেন দাদা,
আসুন আপাতত মোকছেদ আলীকে আলোর মানুষ না ভেবে, অন্ধকারের মানুষ হিসেবে ভাবি। স্বশিক্ষিত না ভেবে অক্ষর-জ্ঞান-সম্পন্ন মানুষ হিসেবে ভাবি। তাকে জীবিত না করে হত্যা করি।
এরপর দেখি মোকছেদ আলী কী জবাব দেন তার লেখনী মারফত। তিনি নিজেকে নিয়ে কী ভাবেন- আলোর মানুষ নাকি অন্ধকারের মানুষ? শিক্ষিত মানুষ নাকি অক্ষর-জ্ঞান-সম্পন্ন মানুষ? জীবিত মানুষ নাকি মৃত মানুষ?
আমাদের শুধু ধৈর্য ধরতে হবে তার পরবর্তী লেখাগুলোর জন্য।
এ মুহূর্তে আমি ড. আহমদ শরীফের একটি উক্তি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি- “মানুষ ভালোও নয়, মন্দও নয়। মানুষ কখনো ভালো, কখনো মন্দ, কারুর প্রতি ভালো, কারুর প্রতি মন্দ, কারুর কাছে ভালো, কারুর কাছে মন্দ, কারুর জন্যে ভালো, কারুর জন্যে মন্দ।”
@মাহফুজ,
তুমি আগেও ধৈর্য ধারণ করতে বলেছিলে। শুনি নাই। দন্ড পেয়েছি। বেলতলায় আর যাচ্ছি না।
@নৃপেন দাদা,
আগের আমলের মানুষ আর এ আমলের মানুষে মধ্যে তথাৎ দেখুন:
আগের আমলের মানুষ একবারই বেলতলায় যেত।
আধুনিক যুগের মানুষ বার বার বেলতলায় যায়, তবে মাথায় হেলমেট দিয়ে।
এখন ভাবুন, আপনি কোন আমলের মানুষ হতে চান?
@মাহফুজ, হেলমেট টার কথা মনে করানোর জন্য ধন্যবাদ।
@নৃপেন্দ্র সরকার, আমার মনে হয় মোকসেদ আলী একজন ‘লিজেন্ড’ (এস্পিওনাজ পরিভাষা)
@পথিক,
বুঝলাম। কিন্তু
গন্ডগোল লাগল।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রি আর ক্রুশ্চেভের সাক্ষাতকার খুবই
আনন্দ দিয়েছে!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
@লাইজু নাহার,
ধন্যবাদ মোকছেদ আলীকে দেন। আমি শুধু তার লেখা পোষ্টাই। পোষ্টানোর জন্য সামান্য ধন্যবাদ দিতে পারেন। পিয়ন যখন কোন চিঠি নিয়ে আপনার সামনে হাজির হয় তখন কি তাকে ধন্যবাদ দেন? যদি দিয়ে থাকেন, তাহলে ততটুকু দিলেই আমার চলবে।
এত তথ্য কীভাবে রাখতেন মোকসেক আলী সাহেব। মনে হয় বিরাট তথ্য ডাটাবেস ছিল। উপদেষ্টা সহ বিরাট অফিস ছিল তাঁর। এত নাম ধাম, জায়গা কীভাবে গুছিয়ে রেখেছিলেন তিনি? ১৯৪০ থেকে সমস্ত ঘটনা লিখলেন ১৯৮৮। সমস্ত ঘটনা গুলো যেন এক নজর দেখে নিয়ে তারপর এক বসায় লিখে ফেললেন। যতই মোকসেদ আলীর লেখা পড়ছি ততই লোকটার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে আসছে। এই লোকটা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেলে এক বিপ্লব ঘটানোর সুযোগ পেতেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। আমি নিজেও অবাক হয়েছি তার স্মরণ শক্তি দেখে। তিনি যখন মাঠে যেতেন তখন একটা ব্যাগের মধ্যে খাতা আর কলম নিতেন। মাঠের কাজ শেষ করে গাছের নিচে বসে বসে আপন মনে লিখতেন।
আসলে নিজে তার সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। যা বলার তার লেখাই বলে দিবে। নিজে কিছু বলতে গেলে হয়তো তথ্য বিভ্রাট ঘটিয়ে ফেলতে পারি।
@মাহফুজ,
আমি শুধু ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম। দারুণ লেখার জন্য (যার লেখায় হোক) একটা :rose:
মাহফুজ,
এ লেখাটি পড়ে ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য পেলাম।
ইতিহাস কাগজ ছাড়াও মানুষের হদয়েও থাকে, তবে অপ্রকাশিত।
মোকছেদ আলীর লেখা প্রকাশ করে তা কাগজে আনলেও তা হৃদয়েরই কথা, দলিল নয়।
যাহোক, লেখাটি ভাল লেগেছে। সুখপাঠ্য্ লেখা।
আরও পোষ্টিং এর অপেক্ষায়, তবে মুক্ত-মনার নিয়ম মেনে এ লেখাটি প্রথম পাতায় থাকা পর্যন্ত নয়।
প্রিয় মুক্তমনা পাঠকবৃন্দ,
মোকছেদ আলীর এই লেখাটি পোষ্ট করার পেছনে একটি কারণ রয়েছে। রয়েছে এর শানে নজুল। যখন মুক্তমনার পাতায় কুলদা রায়ের একটি লেখা এলো, সেখানে শাহীন নামে এক নির্যাতিতা মেয়ের ছবি আছে। এই মেয়ে ছিল কৃষি ভার্সিটির এক কর্মচারীর মেয়ে। ছবিটি তুলেছেন নাইব ভাই।
এরপর এলো নৃপেন্দ্র সরকারের আরেকটি লেখা নাইব ভাই স্মরণে।
দুজনের লেখা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ফরিদ আহমেদ কুলদা রায়ের সমালোচনা করলেন, ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন করে দিলেন কুলদা রায়কে।
আমি নিজেও একটি বিষয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ি। তথ্য বিভ্রাটের মধ্যে জড়িয়ে পড়ি। শেষে আমি ঐ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকি।
নানা প্রশ্নও মাথায় এলো কুলদা রায়ের লেখা, নৃপেন্দ্র সরকারের লেখা, ফরিদ আহমেদের মন্তব্য পড়তে গিয়ে।
এমন অবস্থায় আমার মনে পড়লো- মোকছেদ আলীর লেখা ইতিহাসের গাল-গল্প প্রবন্ধটি।
ইতিহাসের কোন ঘটনা সত্য আর কোন ঘটনা আংশিক সত্য তা মাপার বা নিরূপন করার মাপকাঠি কী?
ইতিহাস কি শুধুমাত্র কাগজের পাতাতেই লেখা থাকে? নাকি মানুষের হৃদয়েও থাকে। হৃদয় থেকে কিম্বা স্মৃতির পাতা থেকে যখন কাগজের পাতায় এসে ভর করে তখন কতটুকু সত্য এসে স্থান পায়?
এই কারণেই মোকছেদ আলীর লেখাটি পোষ্ট করলাম।
@মাহফুজ,
আমি Confusionএ আছি। উপরের অংশটুকু কার?
@নৃপেন্দ্র সরকার,
মোকছেদ আলী নামটি প্রথম প্যারার পর থেকে হবে। প্রথম প্যারাটি আমার রচনা। এই ভুল সংশোধন করতে হবে।
কিন্তু আপনার মধ্যে এমন সন্দেহ বা কনফিউশন এলো কেন? আপনি কি সত্যি সত্যিই মোকছেদ আলীর লেখা আলাদা করতে পারেন?
@মাহফুজ,
এখন বুঝো, আলাদা করতে পারি কিনা।
:rotfl: :rotfl:
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা,
:guru:
@মাহফুজ,
ঠিক আছে। খুব হয়েছে।
এবারে বসতে পার। :coffee: খাও।
পোস্ট করার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন ” প্রবন্ধে মন্তব্য করতে দিন” অপশনে টিক দেয়া আছে কিনা। পোস্ট এডিট করার সময় টিক চিন্হটি উঠে যেতে পারে।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
সবকিছু দেখে অতি সাবধানে পোষ্ট করি। তারপরও যে কেন এমন হয় বুঝতে পারি না। এডিট করার পর দেখলাম মন্তব্য করতে দিন অপশনটি আর আসে নাই।
না আসে না আসুক, পুনরায় আর এডিট করতে পারবো না- এই মনোভাব এসেছে মনের মধ্যে। ভীষণ বিরক্ত আর ক্ষুব্ধ নেটের উপর। পোষ্ট করলাম- অর্ধেকের কম এল লেখা। আবার এডিট কর- গেলাম করতে। পুর্ণ লেখা এলো না। আবার এডিট- এবারও এলো না। শেষে ছেড়েই দিলাম। ভাবলাম- কর্তৃপক্ষ ঠিক করুক।
এখন তো দেখছি অপশনটা এসেছে। নিশ্চয়ই আপনি ঠিক করেছেন। এখন আমার বক্তব্য- সমস্ত প্রশংসা বা ক্রেডিট সেই ব্যক্তির, যিনি মন্তব্য করতে দিন অপশন ঠিক করেছেন। তাহাকে দিলাম :rose2: :rose2:
@মাহফুজ,
আমার যখন নেটের গতি কমে যায় তখন এধরনের সমস্যা হয়। কাল রাতে আমার এ সমস্যা হয়েছে এবং মন্তব্যের অপশন ঠিক করতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করতে হয়েছে 🙁 । আরেকটু দেখেশুনে পোস্ট করবেন তাহলেই এ ধরণের সমস্যা হবেনা আশা করা যায়।
সম্পূর্ণ পোস্ট হওয়ার আগেই ৩২ বার পড়া হয়ে গেছে।
মোকসেদ আলীর এটিও একটি দারূণ প্রবন্ধ হবে। অপেক্ষায় থাকছি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
তাজ্জোব ব্যাপার তো? পাঠকের কাছে না পৌছতেই ৩২ বার পড়া!!!! এটা কিভাবে সম্ভব? শুনেছি কোরান নাজিল হওয়ার আগে বেহেস্তের লাওহে মাহফুজে সেটা সংরক্ষিত ছিল। সেখানে ফেরেস্তারা কোরান পড়তো নাকি? এমন বিষয় তো কোনদিন শুনিনি।
ইন্টারনেটের মধ্যে কোনো ভূত টূত আছে নাকি যে তারা পড়ে ফেলবে। অবশ্য এডমিন সাহেব এডিটিং করতে ছিলেন এমন তথ্য পেয়েছি।
আমার মনে হয় কোন টেকটিক্যাল সমস্যা আছে এখানে। যার মাহাত্ম্যে ৩২ বার পঠিত লেখা উঠেছে। আমি তো এখন দেখছি ৯৬ বার। ঘটনার আড়ালে কোন ঘটনা আছে কিনা, কন তো?
যাহোক এখন পুরোটাই এসেছে। প্রবন্ধের মধ্যে কত % সত্য আর কত % বিকৃত তার হিসাব করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনি মুরুব্বী মানুষ! আপনিই পারবেন এর জবাব দিতে। অবশ্য স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে।
@মাহফুজ,
রহস্যের সমাধান করতে থাকুন। আমি কিন্তু কিছু জানিনা 🙂 ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমি রহস্যের সমাধান পাইলাম না। মনে হচ্ছে- নিশ্চয়ই আপনি জানেন। প্লিজ বলেন না।
@মাহফুজ,
চিন্তা করতে থাকেন 🙂 ।
@মাহফুজ,
তাজ্জব হওয়ার কিছুই নেই। ৩২ জন অর্ধেক পড়েছে যার মধ্যে আমি একজন। 🙂
@সৈকত চৌধুরী,
অর্ধেক পড়ার মধ্যে আপনি একজন। এবার পুরোটা পড়ার মধ্যে একজন হয়ে যান।
আপনার লেখাটি অর্ধেক পোস্ট হয়েছে। ইন্টারনেটে সমস্যার জন্য এটি হতে পারে। লেখাটি আবার ঠিকভাবে পোস্ট করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে অন্যথায় এটি মুছে দেয়া হবে।
@মুক্তমনা এডমিন,
আপনার উদ্দেশ্যে আগে একটা প্রশ্ন রেখেছিলাম- পোষ্ট করার পরও লেখা কেন পুরাটা আসে না? আজ জবাব পেলাম- ইন্টারনেটে সমস্যার জন্য এটি হতে পারে। নেট এত স্লো যে অন্যদের লেখায় মন্তব্য পর্যন্ত করা যায় না। কিছুক্ষণ পর পরই আসে the connection has timed out.
যাহোক অনেক চেষ্টার পর এডিট করেছি। কিন্তু তাতে দেখা গেল- অন্যকে মন্তব্য করতে দিন ঘরটি আর আসে নাই।