ইতিহাসের গাল-গল্প: দেশ নিয়ে আমার আশা

মোকছেদ আলী*

ইতিহাস কাহাকে বলে? ইতিহাস কি নিরপেক্ষ হয়? ইতিহাস কি সম্পূর্ণ সত্য হয়? এর মধ্যে কি কোনই গলদ থাকে না? এর মধ্যে কি রাজনৈতিক দলীয় প্রভাব থাকে না? এসব প্রশ্ন আমার মত সাধারণ মানুষকে ভাবিয়া তুলে। নিচের ইতিহাস পড়িয়া দেখুন। সবগুলোকে কি সত্য বলিয়া মানিয়া লইবেন? নাকি আপনিও দলীয় প্রভাবের বলয়ে আবদ্ধ হইবেন? ইতিহাসের সত্য মিথ্যা যাচাই করা আমার মত নাদান মামুলী মানুষের পক্ষে খুবই কঠিন। নতুন প্রজন্মের কাছে আপনি কোন ইতিহাস তুলিয়া দিতেছেন? কাহার ইতিহাস একটু ভাবিয়া দেখা দরকার। কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা তাহা পাঠক কিভাবে যাচাই করিবে? মুসলিম লীগের ইতিহাস লেখা হইবে একভাবে, আওয়ামী লীগের ইতিহাস লেখা হইবে আরেকভাবে? মৌলবাদীদের লেখা হইবে একভাবে, প্রগতিমনাদের লেখা হইবে আরেকভাবে। আমরা সাধারণ মানুষ বড়ই দ্বন্ধের মধ্যে পড়ি। পড়ুন নিচের ইতিহাস। কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা বাহির করুন। কতটুকু সত্য কতটুকু গালগপ্প খুজিয়া বাহির করিতে পারিবেন কি? ইতিহাস কি বিকৃত হয় না? ইতিহাসে কি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাদ পড়ে না? ভাবিয়া দেখুন।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালেই উগ্র সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন হিন্দুগণ ইহার প্রবল বিরোধিতা করে। স্যার আশুতোষ মুখার্জীর পুত্র শ্যামাপ্রশাদ মুখার্জী হিন্দু মহাসভা নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করিয়া মুসলিম নিধনের উস্কানী দেয়। তখনই হিন্দুগণ মুসলমানদের উপর ঝাঁপাইয়া পড়ে এবং তাহাদের বাড়ী ঘরে অগ্নি সংযোগ করে এবং নির্মমভাবে মুসলমান আবালবৃদ্ধবনিদের হত্যা করিতে থাকে। সোহরাওয়ার্দী সাহেব তখন মুসলমানদের জানমাল রক্ষার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে জোর দাবী জানায়। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার হিন্দুদের কিছুই বলে না। বাধ্য হইয়া সোহরাওয়ার্দী সাহেব মুসলমানদের প্রতিশোধ লইবার নির্দেশ দেন। ফলে মুসলমান প্রধান এলাকার হিন্দুগণও মুসলমানদের হাতে নিহত হইতে থাকে। দেখিতে দেখিতে সেই দাঙ্গা সমগ্র ভারতব্যাপী ছড়াইয়া পড়ে। দুনিয়ার অপরাপর রাষ্ট্রগুলি ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ দিতে থাকে। হিন্দুগণ এমন কি কংগ্রেসও মুসলমানদের দায়ী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় প্রবল বাধা সৃষ্টি করে।

অবশেষে রাজা গোপাল আচারীর পরামর্শে, দেশে শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধি এই পাকিস্তান দাবী মানিয়া লন। কিন্তু কায়েদে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহ যে পরিমাণ ভূমি লইয়া পাকিস্তান দাবী করিয়াছিলেন, সেই পরিমাণ ভূমি, কংগ্রেস দিতে নারাজ। কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেবের দাবী ছিল, গোটা বাংলা ও আসাম প্রদেশ এবং মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ণিয়া জেলা লইয়া পূর্ব পাকিস্তান ও পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশ, বেলুচিস্তান, ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স ও কাস্মীর রাজ্য লইয়া পশ্চিম পাকিস্তান গঠিত হইবে।

১৯৪০ সালে লাহোরে মুসলীম লীগের অধিবেশনে ভারতীয় মুসলীম নেতাগণ সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব সমর্থন করে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেব এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সকল নেতাই এই প্রস্তাব সমর্থন করে। বাংলাদেশের নেতাকে ঐদিন শেরে বাংলা উপাধী দেওয়া হয়। মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট কায়েদে আজম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ সভায় উপস্থিত সকলকে সম্বোধন করিয়া কৌতুক বাক্য কহিলেন- আপনারা সকলে সতর্ক থাকিবেন, এবার আপনাদের সামনে শেরে বাংলা আসিবেন।

যখন ফজলুল হক সাহেব তাহার বিশাল বপু লইয়া দাঁড়াইলেন। তখন সভায় খুব জোরে জোরে হাত তালি পড়িল। শেরে বাংলা ফজলুল হক কি জয় ধ্বনিতে সভাস্থল প্রকম্পিত করিয়া তুলিল। তখনও জিন্দাবাদ শব্দ আবিস্কার হয় নাই। ঐদিনই কায়েদে আজম হিন্দুদের অনুকরণে মহাত্মা গান্ধি কি জয়ের মত না বলিয়া শেরে বাংলা ফজলুল হক জিন্দাবাদ বলিলেন। তখন মঞ্চের উপর হইতে সোহরাওয়ার্দী সাহেব শ্লোগান দিলেন- শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক জিন্দাবাদ। সকলে তখন গলা ফাটাইয়া জিন্দাবাদ ধ্বনিতে সভাস্থল আকাশ পাতাল প্রকম্পিত করিয়া তুলিল। ৫ বার সোহরাওয়ার্দী সাহেব এই শেরে বাংলা ফজলুল হক জিন্দাবাদ বলিলেন।

তৎপর কায়েদে আজম স্বয়ং তাহার সহিত কোলাকুলি করিয়া হ্যান্ডশেক করিলেন। কায়েদে আজমের দেখাদেখি নাজিম উদ্দীন, ভাষানী মুহম্মদ আলী, রহমতুল্লাহ চৌধুরী প্রভৃতি ভারতী প্রায় সকল মুসলিম নেতাই ঈদের দিনের কোলাকুলির মত কোলাকুলি করিলেন। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। পরদিন আজাদ পত্রিকায় বড় বড় হেডিং দিয়া কায়েদে আজম ও শেরে বাংলার কোলাকুলির ছবি ফাস্ট পেজে ছাপাইয়াছিল। সে কথা আমার খুব ভালো মনে আছে। যুদ্ধ তখন প্রায় সারা দুনিয়ায় ছড়াইয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছে। হিটলার তখন ইংল্যান্ড আক্রমণ করি করি করিতেছে। উগ্র হিন্দুগণ, রাষ্ট্রিয় স্বয়ং সেবক সংঘ সংক্ষেপে আর এস এস পার্টি তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা করিল, আমরা রাম রাজত্ব স্থাপন করিব। মুসলমানগণ খেজুর তলার লোক খেজুর তলায় ফিরিয়া যাইতে হইবে। নচেৎ আমাদের সঙ্গে রামের ভজন গাহিতে হইবে। রঘুপতি রাঘব রাজারাম, পতিত পাবন সীতারাম গাহিতে হইবে।

কায়েদে আজমের বাড়ি তখন বোম্বাইতে, মালাবার হিলে। বোম্বাইয়ের মুসলমানগণ মিছিল করিয়া গান্ধি পার্কে গিয়া প্রতিবাদ সভা করে। ঐদিন বৃটিশ সরকার আর এস এস পার্টির নেতাদের গ্রেফতার করে।

১৯৪৫ সনে আমেরিকা জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহর দুইটির উপর আনবিক বোমা, বহুল প্রচলিত এটম বোমা বর্ষণ করে। ফলে দুইটি শহর ধ্বংস হইয়া যায়। এবং জাপান বাধ্য হইয়া আত্ম সমর্পন করে। ১৯৪৫ সনে জাপান ও জার্মানীর আত্মসমর্পনের পর যুদ্ধ থামিয়া যায়। আমেরিকা জাপান দখল করে। জেনারেল ম্যাক আর্থার জাপানের প্রশাসক নিযুক্ত হন। জাপানের সম্রাট সিকাডোর পুত্রকে আমেরিকা সিংহাসনে বসায়। আর বিচারে জাপানের সম্রাট শাস্তিস্বরূপ জেনারেল ম্যাক আর্থারের সিগারেট ধরাইয়া দেন। জাপানের প্রধান মন্ত্রী জেনারেল হিদেকি তোজোর ফাঁসির হুকুম হয়।

ফাঁসির পূর্ব মুহুর্তে হিদেকী তোজো জাপানের কৃষকদের প্রধান খাদ্য ডালভাত খাইবার অভিলাষ ব্যক্ত করেন। সামরিক আদালতের বিচারকগণ তোজোর অভিলাষ পূর্ণ করেন। জাপানীগণ তোজোর প্রতি আজো শ্রদ্ধা নিবেদন করে। আর জার্মানীকে এলায়েড পাওয়ারের দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও আমেরিকা ভাগ করিয়া লয়। জার্মানীর ডিকটের হের হিটলার পরাজয়ের অপমানে সায়ানাইট বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

এদিকে ভারতের হিন্দু মুসলীম নেতাদের চাপে ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দান করে।

১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট ভারতবর্ষ দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। একটি স্বাধীন ভারত। অন্যটি স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র। পাকিস্তান দুটি খণ্ডে বিভক্ত হয়। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও আসামের সিলেট জেলা লইয়া পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের উত্তর পশ্চিম অঞ্চল সিন্ধু, বেলুচিস্তান পাঞ্জাবের প্রদেশ লইয়া পশ্চিম পাকিস্তান গঠিত হয়। কিন্তু তখনও ভারত ও পাকিস্তান রাজ্য দুইটিকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হয় নাই। ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাচে রাখা হয়। পরে পাকিস্তান ২৩ মার্চ তারিখে ইসলামিক রিপাবলিক হিসাবে ঘোষণা করিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। আর পরের বছর ২৬ জানুয়ারী ভারত ডোমিনিয়ন পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

১৯৪৮ সনের ১১ সেপ্টেম্বর কায়েদে আজম ইন্তেকাল করেন। তিনি রফিক শাবির মাজাংভি কর্তৃক নিহত হন। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিম উদ্দীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন। লিয়াকত আলী প্রধান মন্ত্রী পদেই বহাল থাকেন। লিয়াকত আলী সাহেব তখন অর্থ মন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করেন। ঐ বৎসর তিনি যে বাজেট পেশ করেন ইতিহাসে তাহাকে পুয়রম্যান বাজেট নামে অভিহিত করেন। তাহার এই বাজেটের ফলে দুনিয়ার সব মুসলিম রাষ্ট্রগুলি পাকিস্তানকে শিল্পোন্নত করার মানসে কোটি কোটি টাকা অনুদান দিতে থাকে। ফলে পাকিস্তান পাট শিল্পে খুবই উন্নত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে গোপালপুর চিনি কল আর দর্শনা চিনিকল, মোহিনী মিল কাপড়ের কল আর ঢাকেশ্বরী কাপড়ের কল ছাড়া আর কোন কল কারখানা ছিল না। হিন্দুগণ পাকিস্তানকে পঙ্গু করিবার জন্য হিন্দু মালিকানাধীন ঢাকেশ্বরী ও মোহিনী মিলের বিদ্যুৎ উৎপাদন টারবাইন বার্স্ট করাইয়া দিয়া মিল দুইটির উৎপাদন বন্ধ করিয়া দেয়।

কিন্তু পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তানে ৭৭ টি জুট মিল ১১ টি চিনির মিল, ৫৫ টি কাপড়ের মিল এশিয়ার বৃহত্তম কাগজের কল কর্ণফুলি পেপার মিল, খুলনা কাগজের মিল, আখের ছোবড়া দিয়া কাগজ তৈরীর জন্য পাকসী পেপার মিল, চট্টগ্রামে স্টিল মিল, তেল শোধনাগার, ঔষধ কারখানা, জাহাজ নির্মানের জন্য খুলনা ও নারায়নগঞ্জ শিপ শিপ বিল্টিং শিপ ইয়ার্ড ও ডক ইয়ার্ড, সিলেটে নলখাগড়া হইতে কাগজ উৎপাদনের জন্য সিলেট পাল্প মিল এবং আরো নানান ধরনের মিল কলকারখানা স্থাপিত করিয়া বিশ্বের বাজার দখল করে। আর হিন্দুস্থান বিশ্বের বাজরে চরমভাবে মার খাইতে থাকে।

পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানে রেল পথ নির্মাণ, সড়ক পথ নির্মাণ, স্কুল কলেজ প্রভৃতি অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষকের উন্নতির জন্য বিনামূল্যে সার, কীট নাশক ওষধ বিতরণ করিয়া কৃষির উন্নতি, গমের আবাদ করিয়া ইরি ধানের আবাদ করিয়া খাদ্যে প্রায় স্বয়ং সম্পূর্ণ হইতে থাকে।

পাকিস্তানের উন্নতি দেখিয়া ভারত হিংসায় জ্বলিয়া উঠে। তখন তাহারা তাহাদের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পাবনার ছেলে জয়ন্ত নাথ চৌধুরী সংক্ষেপে, জেনারেল জে এন চৌধুরীর পরামর্শে ও নেহেরুর স্থলাভিষিক্ত প্রধান মন্ত্রী খর্বকায় ধুর্ত্ত লাল বাহাদুর শাস্ত্রী মহাশয়ের চানক্যকুট বুদ্ধির পরামর্শে বিনা ঘোষণায় আমাবশ্যার রাত্রের আধারে আকস্মীকভাবে পাকিস্তানের প্রধান সেনানিবাস লাহোরে আক্রমণ করে। এবং গর্বভরে তার সদস্যদের বলে আমরা ভারতীয় নেতারা সকালে লাহোর ক্যন্টনমেন্টে বসিয়া চা কফি পান করিব।

কিন্তু লাল বাহাদুর শাস্ত্রি ও জে এন চৌধুরীর সেই আশায় ছাই দিল ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং সৈন্য বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আইয়ুব খান সকাল সাতটার সময় পাকিস্তানী জাতির প্রতি এক বেতার ভাষণ দিলেন- “আমরা মুসলমান, আমাদের ইমানী শক্তির বলে- নিলর্জ ভারতের বিষ দাঁত ভাঙ্গিয়া দিব। আল্লাহ আমাদের সহায়। হে পাকিস্তানী বীর সৈনিকেরা এই যুদ্ধে তোমরা মরিলে শহিদ, বাঁচিলে গাজী। আমরা শহিদী দরজা চাই না, আমরা গাজীর গৌরব চাই।”

মাত্র সাতদিনের মধ্যে ভারতের ২ হাজার বর্গমাইল এলাকা পাকিস্তানের বীর বাহিনী দখল করল। প্রায় ৩০০ শত সামুদ্রিক জাহাজ ও ১৫ হাজার সৈনিক পাকিস্তানের হাতে বন্দি হইল। লাল বাহাদুর শাস্ত্রির বাহাদুরী, চা খাওয়া দূরে থাক, নিজের দেশের মানুষ ফ্যান খাইতে লাগিল। অবশেষে ১৬ দিন যুদ্ধ চলিবার পর আরো জয় হাজার বর্গমাইল এলাকা পাকিস্তান দখল করিল।

লাল বাহাদুর শাস্ত্রি তখন দৌড়াইয়া রাশিয়ার কর্তাদের কাছে গেল। বলিল, আপনারা শিগগির আইয়ুব খানকে থামান। নচেৎ ২/৪ দিনের মধ্যেই দিল্লী দখল করিবে। আপনারা আমার একান্ত আপনজন। আমি পাকিস্তান আক্রমণ করিয়া যা ভুল করিয়াছি- তাহাতো ইতিহাসের পাতায় কালো কালিতে লেখা থাকিবে। আপনারা যদি সাহায্য না করেন, তবে, এই দেখেন বলিয়া ফুতুয়ার পাশ পকেট হইতে একটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের ছোট্ট শিশি বাহির করিয়া দেখাইল। ক্রশ্চেভ চশমাটা চোখে দিয়া শিশির গায়ে লেবেল পড়িয়া কহিল, সর্বনাশ, এ যে দেখছি স্ট্রং সায়ানাইড ভেনম। যে শিশিটা খাইয়া জার্মানীর হিটলার সামরিক বিচারের হাত হইতে নিস্কৃতি পাইয়াছিল। আপনিও কি হিটলারের মত।

লাল বাহাদুর শাস্ত্রি ক্রুশ্চেভের কথা শেষ করিতে দিলেন না। কান্দিয়া কহিলেন- হিটলার বেটা যে ভুল করিয়াছিল, ১৯৩৯ সানের ৩ রা সেপ্টেম্বর। আমিও তো দাদা সেই ভুলই করিয়াছি, তেশরা সেপ্টেম্বর চোরের মতন পাকিস্তান আক্রমণ করিয়া। আপনারা যদি সাহায্য না করেন, তবে দেন শিশিটা আমি আপনাদের সামনেই গিলিয়া হিটলারের সঙ্গে দেখা করি গা। ক্রুশ্চেভ খুব বুদ্ধিমান, তিনি স্ট্রং সায়ানাইডের শিশিটা তাহার নাতি জামাই গর্বাচেভের হাতে দিয়া কহিলেন, এটা তোমার কাছে রাখো।

আর খর্বাকৃতি শাস্ত্রির মাথায় সোহাগের হাত বুলাইয়া কহিল, তুমি চিন্তা করিও না। আইয়ুব খাঁ আমার পরম বন্ধু লোক। শাস্ত্রি তখন চীৎকার দিয়া নিজের মাথার টিকিটা টানিয়া ধরিয়া কহিল, আইয়ুব খাঁ আপনার পরম বন্ধু, তাহলে তো আপনি তাহাকে আরো এফ জঙ্গি বিমান দিবেন।

ক্রুশ্চেভ তাহার মোটা গলায় ধম দিয়া কহিল, কান্দিও না। আমি জানি ভারত বিশাল দেশ। তাহার সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করিলে আমার দেশের মোটা লাভ হইবে। আর পাকিস্তান তো আমার দেশের কোন জিনিসই কেনে না। সে তো নিজেই সব বানায়। তুমি চুপ কর। আমি এখনি আইয়ুব খার কাছে ফোন করি, দেখি সে কি বলে? বলিয়াই পার্শ্বে রক্ষিত টেবিলের উপর হইতে দুধের মতন সাদা রিসিভার তুলিয়া এক মুড়া কানের কাছে, আর এক মুড়া মুখের কাছে রাখিয়া কহিল, হ্যালো, হ্যাঁ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মহাবীর আইয়ুব খাঁর সাথে কথা বলব। সংযোগ করিয়া দাও।

শাস্ত্রি মহাশয় কহিলেন, দাদা ঠিকই বলিয়াছেন। আমাদের মহাবীর হনুমান মরিয়া পুনর্জন্ম লাভ করিয়াছে। সেই মহাবীরই তো আইয়ুব খান। নইলে তো আমার চা খাওয়া হইত লাহোরে। আমি কি জানি যে বীর হনুমান পুনর্জন্ম লাভ করিয়া আইয়ুব খাঁ হইয়াছে। জানিলে কি আর আমি পাকিস্তান আক্রমণ করিতাম। দাদা এই আইয়ুবের হাতে যদি আমার মৃত্যু হয়, তবে আমার স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত।

হ্যালো, ইয়েচ, আই এম ক্রুশ্চেভ, আই রিকোয়েস্ট ইউ, প্লিজ স্টপ দ্যা ওয়ার, বিকজ আই এ্যম ইউর ইন্টিমেন্ট ফ্রেন্ড। মেনি ইনোসেন্ট পিপল ডাইয়েজ এভরিডে। ও, ইয়েচ, ইয়েচ, থ্যাংক ইউ মেনি মেনি থ্যাংকস।

ক্রুশ্চেভ হাস্যমুখে রিসিভার নামাইয়া থুইয়া, শাস্ত্রির সহিত হাত আগাইয়া করমর্দন করিল। তারপর কহিল, চিন্তা করিও না। নাস্তা করিয়া বাড়ি যাও। আর আমি পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূতকে ডাকিয়া সব কথা খুলিয়া বলি।

শাস্ত্রি তখন ভীত কণ্ঠে কহিল, দাদা আমি যে আপনার কাছে আসিয়াছিলাম, সে কথা পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূতকে বলিবেন না। ক্রুশ্চেভ ভুড়ি দোলাইয়া হো হো করিয়া হাসিয়া কহিল, একেবারে ছেলে মানুষ, ও কথা বলিলে কি আপনার মান সম্মান থাকে। শাস্ত্রি হাসিয়া কহিল, ছেলে মানুষই, দেখেন তো আপনার কোমর সমানও লম্বা না। আইয়ুব খাঁ জয়ের নেশায় যুদ্ধ থামাইতে রাজী হইলেন না। কিন্তু জনগণের দুঃখ দূর্দশার কথা চিন্তা করিয়া রাজী হইলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ থামাইয়া দিলেন।

১৮ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার তাশখন্দ শহরে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠক হইল। অনাক্রম চুক্তি স্বাক্ষর হইল। পাকিস্তান তাহার দখলীকৃত জায়গা ও বন্দীকৃত সৈন্য জাহাজ সব ফেরত দিল। দলিলে স্বাক্ষর শেষে লাল বাহাদুর শাস্ত্রি আইয়ুব খানের সাথে করমর্দন করিলেন। আইয়ুব খাঁ সুযোগ পাইয়া মনে ঝাল মিটাইলেন। শাস্ত্রির হাতে এমনভাবে চাপ দিলেন যে তাহার চাপে শাস্ত্রির হাতের পাঞ্জা গুড়া হইয়া যাইবার উপক্রম হইল। উহু উহু করিতে করিতে নিজ কেবিনে গিয়া প্রাণত্যাগ করিলেন। মরবার পূর্বে ভাবিলেন- মহাবীর হনুমানের হাতেই মৃত্যুবরণ করিলাম। নির্ঘাত স্বর্গপ্রাপ্তি।

পাকিস্তান ৪০ দিন পাকিস্তানী পতাকা অর্ধনমিত করিয়া লাল বাহাদুর শাস্ত্রির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিল। তারপর নেহেরু তনয়া ইন্দিরা গান্ধি ভারত সাম্রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী হইলেন। প্রধান মন্ত্রি হইয়াই তিনি পাকিস্তানকে শব্দ করিবার নেশায় মাতিয়া উঠিলেন। তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা পূর্ব পাকিস্তানে গুপ্তচরদের মারফত পাঠাইয়া সব মিল কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ভিতর বিভেদ সৃষ্টি করিলেন, তারপর ছাত্রদের উস্কানী দিয়া বিহারী বাঙ্গালীদের মধ্যে দাঙ্গা বাধাইয়া দিলেন। তারপর জয় বাংলার শ্লোগান দিয়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাধাইয়া দিলেন। নয় মাস যুদ্ধ চলিবার পর পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র হইল। আর ভারতী সৈন্য বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের সোনাদানা মূল্যবান যন্ত্রপাতি সব লুট পাট করিয়া লইয়া গেল। তা যাক, আমরা তো স্বাধীন বাংলাদেশ লাভ করিলাম।

বাংলাদেশ দীর্ঘ ১৭ বৎসর পর আবার তাহাদের ঐতিহ্য ফিরিয়া পাইল। বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র হইল। আমরা এখন ইসলামী রাষ্ট্রের বাসিন্দা। এখন পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব হইয়াছে। দুই দেশের মধ্যে আবার ব্যবসা বাণিজ্য চালু হইয়াছে। পাকিস্তান বিপুল পরিমাণে সাহায্য বাংলাদেশকে দিতেছে।

যে কোনো দেশের উন্নতি অবনতি নির্ভর করে সেই দেশের রাষ্ট্র প্রধানের সততা ও অসততার উপর। রাষ্ট্র প্রধান যদি সততার সহিত নিঃস্বার্থভাবে দেশের জনগণের মঙ্গল কামনা করে দেশের উন্নতির চেষ্টা করে তবে সেই দেশ উন্নতি লাভ করে। জনগণ সুখে শান্তিতে বসবাস করে। রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যদি ন্যায়ের ভিত্তিতে রচিত হয় তবে সেই দেশের উন্নতি হইতে বেশি সময় লাগে না। দুনিয়ার ইতিহাসে ইহার ভুরি ভুরি নজীর রহিয়াছে। তুরস্ক দেশটি ইউরোপের পিড়ীত লোক বলিয়া অভিহিত ছিল। কামাল পাশার ন্যায়নীতির ফলে দূর্বল তুরস্ক কয়েক বৎসরের মধ্যেই শক্তিশালী জাতি ও রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠালাভ করে।

চীনের লোকদিগকে আফিং খোর জাতি বলিয়া দুনিয়ার লোক চীনাদিগকে ঘৃণা করিত। ডাক্তার সান ইয়াৎ সেনের সততায় এবং চেষ্টায় চীন আজ দুনিয়ার প্রথম শ্রেণীর শক্তিরূপে চিহ্নিত। রাশিয়ার লোকেরা নিতান্ত কষ্টে কালাতিপাত করিত। লেনিনের সততায় সেই রাশিয়া আজ প্রথম শ্রেণীর পরাশক্তিরূপে পরিচিত। চীন রাশিয়া তুরস্কের জণগণ পরম সুখে কালাতিপাত করিতেছে।

আমাদের বাংলাদেশের জনগণ প্রকৃত নেতার অভাবে- তলাহীন ঝুড়িরূপে জগতের কাছে নিন্দিত।

প্রেসিডেন্ট জিয়ার সততায় দেশ কিছুটা অগ্রগতির দিকে ধাবিত হইতেছিল, কিন্তু তাহাকে হত্যা করিয়া সেই অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করা হইল। দেশ পিছাইয়া গেল। গদি লইয়া কাড়াকাড়িতে দেশের জনগণ আবার কষ্টের সাগরে নিমজ্জিত হইল।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরশাদ দেশকে উন্নতির দিকে কষ্টের সাগর হইতে সুখের সাগরে ভাসাইবার চেষ্টা করিতেছেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক ক্ষমতা লোভী; স্বার্থ পরায়ণ ব্যক্তি তাহাকে গদিতে ঠিকমত স্থিতিশীল হইতে নানারকম প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়াছে।

বাংলাদেশেকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী করার মানসে প্রেসিডেন্ট এরশাদ যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছেন, তাহাকে বাস্তবায়িত করিবার সুযোগ দেওয়া হইতেছে না। হরতাল হরতাল করিয়া দেশটাকে গোল্লায় দিতে উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। তবে প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহসী বুদ্ধিমান। এবং ত্বড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমতাসম্পন্ন দক্ষ শাসক। দেশের দরিদ্র জনগণের পরম উপকারী বন্ধু। সর্বোপরি তিনি আল্লাহর উপর নির্ভরশীল মুত্তাকী, পরহেজগার ব্যক্তি। সুতরাং আমি আশা করি, তাহার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুনিয়ার বুকে একটি মর্যাদাশীল সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশরূপে স্থিতিশীল রাষ্ট্র হইবে। প্রেসিডেন্ট এরশাদ বাংলাদেশী মুসলমানদের প্রাণের দাবী, বাংলাদেশকে একটি ইসলামী রাষ্ট্ররূপে ঘোষণা করিয়া মুসলমানদের সেই দাবী পূরণ করিতে সক্ষম হইয়াছেন। হে মহান আল্লাহ, প্রেসিডেন্ট এরশাদকে দীর্ঘজীবি করুন। আমিন।

বাংলাদেশের ভূগর্ভের খনিজ পদার্থ উত্তোলিত হয় নাই। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের ভূগর্ভে অফুরন্ত খনিজ দ্রব্য মজুত আছে। পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের ভূগর্ভে জরিপ চালাইয়া মূল্যবান গ্যাস আবিস্কৃত হইয়াছে। আজ সেই গ্যাস উত্তোলন করিয়া দেশকে শিল্প সমৃদ্ধ করিবার যে প্রয়াস চালাইতেছেন- তাহাতে আমি আশা করি অচিরেই দেশ উন্নতমানের শিল্প কারখানা গড়িয়া উঠিবে। ইতোমধ্যেই গ্যাস হইতে সার প্রস্তুতের বিশাল বিশাল কারখানা গড়িয়া উঠিয়াছে। রাসায়নিক সার এখন আর বিদেশ হইতে আমদানী করিতে হয় না। দেশের কারখানায় উৎপাদিত ইউরিয়া সার এখন দেশের চাহিদা মিটাইয়া বিদেশে রপ্তানী করিয়া মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করা হইতেছে। বিদ্যুৎ কারখানারও উন্নয়ন করা হইতেছে। বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেশ পিছনে পড়িয়া থাকে। এরশাদ সরকার দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য বিদেশী বিশেষজ্ঞ দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে প্রকল্প হাতে নিয়াছে- আমি আশা করি আগামী কয়েক বৎসরের মধ্যেই দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করিয়া দেশের মোট চাহিদা পূরণে সমর্থ হইবে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য যে সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হইবার পথে, তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকার বুড়িগঙ্গা ব্রিজ অন্যতম। সড়ক যোগাযোগ, রেল যোগাযোগের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা হাতে লওয়া হইয়াছে। পাকসীতে ফেরী চলাচলের সময়, অর্থ ব্যয় হ্রাস করিয়া উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পাকসীতে বিশ্ববিখ্যাত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপর দিয়া মোটর চলাচলের জন্য পরিকল্পনার সব প্রাথমিক জরিপ কার্য সম্পন্ন হইয়াছে। আগামী ১৯৮৯ সনের জানুয়ারীতে কার্য শুরু হইবে। এবং ১৯৯১ সনে মোটর চলাচল শুরু হইবে। পাকসীর নিকটে রূপপুর আনবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বহিবিশ্ব হইতে যথেষ্ঠ সাহায্যের আশ্বাস পাওয়া গিয়াছে। ১৯৯২ সনের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হইবে।

আইয়ুব খার আমলে রূপপুর আনবিক বিদ্যুৎ কারখানার জন্য জমি হুকুম দখল করা হয়। এবং তথায় অফিসারদের ভবন নির্মিত হইয়াছে। এখন মেসিনারী শীঘ্রই আমদানী করিয়া স্থাপন করা হইবে। আনবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হইবে সূর্য রশ্মি হইতে। এই প্রকল্প চালু হইলে খুব সস্তা দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হইবে।

বিদ্যুৎ সহজলভ্য হইলে কৃষি উৎপাদনে শ্যালো মেসিনগুলি চালু করিয়া প্রচুর ইরিধান ও গম উৎপাদন সহজ হইবে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হইলে, বিদেশ হইতে খাদ্য আমদানী বন্ধ করিয়া ঐ অর্থে শিল্পে ব্যবহারের জন্য কলকব্জা ক্রয় করা সহজ হইবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থারও উন্নয়ন হইবে। ইতোমধ্যে বহু কলেজ স্থাপন হইয়াছে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে যে সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হইবার পথে, যমুনা বহুমুখী ব্রিজ তাহার অন্যতম। অত্যাধিক ব্যয়ে বহুল যমুনা ব্রিজের জন্য, বহিবিশ্বের দাতা দেশগুলির মধ্যে সৌদি আরব, চীন ও জাপান অর্থ সাহায্য প্রতিশ্র“তি প্রদান করিয়াছে। ব্রিজটির জন্য সিরাজগঞ্জ শহরের ৮ মাইল দক্ষিণে স্থান নির্বাচন করা হইয়াছে। সিরাজগঞ্জ হইতে একটি রেলপথ এই ব্রিজের উপর দিয়া ভুয়াপুর হইতে ঢাকার গাবতলী পর্যন্ত যাইবে। আর ব্রিজের উপর দিয়া সর্বক্ষণ চলচলের জন্য মোটর রাস্তা নির্মাণ করা হইবে। এবং ব্রিজের সাইড দিয়া গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন করিয়া তিতাস গ্যাস ফিল্ড হইতে যমুনার পশ্চিম পাড়ে গ্যাস সরবরাহ করা হইবে। এই সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হইলেই বাংলাদেশ উন্নতির পথে দ্রুত অগ্রসর হইতে থাকিবে।

আমি হয়তো তখন বাঁচিয়া থাকিব না, কিন্তু আমার সন্তান সন্ততিগণ ইহার সুফল ভোগ করিয়া পরম সুখময় জীবন যাপন করিতে সমর্থ হইবে। ইহাই আমার অন্তরের কামনা।

রচনাকাল: ১৯৮৮
*মোকছেদ আলী (১৯২২-২০০৯)। স্বশিক্ষিত। সিরাজগঞ্জ জেলার বেলতা গ্রামে জন্ম। গ্রামটি নদীগর্ভে বিলীন।