শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পায়তারায় চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন !
সমরেশ বৈদ্য
ছোট ছোট কোমলমতি শিশু বালিকারা মাথায় ঝুটি বেঁধে, কেউ বা বেনী দুলিয়ে কাঁধে বা হাতে ব্যাগ নিয়ে তাদের প্রিয় স্কুল প্রাঙ্গনে যায়। জীবনের মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহনের জন্য। চট্টগ্রাম নগরীর প্রানকেন্দ্র ব্যস্ততম এলাকা নন্দনকাননে অপর্নাচরন বালিকা বিদ্যালয় ও কৃষ্ণকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার দৃশ্য। স্কুল দুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ঐতিহ্যবাহী স্কুল দুটির উপর সম্প্রতি যেন শ্যেণ দৃষ্টি পড়েছে চট্টগ্রামের নির্বাচিত হ্যাট্রিক মেয়র এ বিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টিকে শিক্ষাঙ্গণ হিসেবে না দেখে বাণিজ্যিকভাবে দেখতে শুরু করেছেন। এখানেই তিনি সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে বহুতলবিশিষ্ট বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু করে দিয়েছেন। যতটুকু জানা গেছে, এখানে সিটি কর্পোরেশনের ১৬তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে একটি নকশা জমা দিয়েছিল ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর। কিন্তু সেই নকশায় ৬টি ত্র“টি দেখিয়ে অনুমোদন না দিয়ে তা সিটি কর্পোরেশনের কাছে ফেরত পাঠানো হয়।
সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির সাথে আলাপ করে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে যা জানা গেল তার জন্য সাধারণ সচেতন নাগরিক সমাজ, নগর পরিকল্পনাবিদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের ভবনে কোমলমতি বালিকা শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হবে তা ভাবা যায় এ সভ্য সমাজে? বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের ভেতরে কি শিক্ষার্থীরা প্রাণবন্ত ও স্বর্ত:স্ফূর্তভাবে খোলামাঠে ছোটাছুটি আর কানামাছি খেলতে পারবে? শিক্ষকরাও কি পারবেন (?) সঠিকভাবে শিক্ষাদান করতে।
অথচ, চট্টগ্রামের নগরপিতা মহিউদ্দিন চৌধুরী তাই যেন করাতে বাধ্য করাবেন এমনই মস্তিস্কপ্রসূত পরিকল্পনা তার। কিন্তু কেন তা ভেবে পাই না। এ কথা ঠিক যে, তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে তার নিজের সুপরিকল্পনায়, সদিচ্ছায় সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে নগরজুড়ে বেশকয়েকটি স্কুল, কলেজ এমনকি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছেন। পরিচালনাও করেছেন সুষ্ঠুভাবে। পাশাপাশি গরিব ও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য বেশকিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল ও মাতৃসদনও স্থাপন করে অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন। যার সুফল ভোগ করছে চট্টগ্রামবাসি। যা বাংলাদেশের অন্যকোন সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এত সুচারুভাবে করতে পেরেছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। অন্য নগরীর মেয়রগণ এসব ক্ষেত্রে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে অনেক সময় পরামর্শ নিয়েছেন বলেও জানি। এসব সেবামূলক কর্মকান্ডের জন্য স্বাভাবিকভাবেই পৌরপিতা হিসেবে তিনি নন্দিত, প্রশংসিত, অভিনন্দিত ও অনুকরণীয় হয়ে আছেন। তার যারা শত্র“ তারাও এ ব্যাপারে প্রশংসা করতে পিছ পা হননি।
কিন্তু তৃতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর হঠাৎ করে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে অত্যন্ত পোড় খাওয়া, এক সময়কার জনপ্রিয় ও মানুষের বিপদে আপদে ছুটে যাওয়া এ মানুষটির কি হলো? তিনি কেন কার বা কাদের প্ররোচনায় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ৮২ বছরের প্রাচীনতম এ স্কুল দু’টি ভেঙ্গে সেখানে আকাশচুম্বি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণে উঠে পড়ে লেগেছেন? তার সেই বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের মধ্যেই কিনা তিনি ছাত্রীদের আরো আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত পাঠদানের (তার ভাষায়) ব্যবস্থা করতে চান !
বৃটিশ সামাজ্যবাদী আমলে ৩০ এর দশকে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের প্রধান নায়ক বিপ্লবী মাস্টারদা সুর্যসেনের অন্যতম যোগ্য সহযোদ্ধা ছিলেন বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। মাস্টারদার বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে একদিকে বৃটিশ রাজকে খেদানোর সংগ্রামে নেমেছিলেন, তেমনি আবার এই অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে নারী শিক্ষার মাধ্যমে দেশের নারী জাতিকে জাগানোর ব্রত নিয়েছিলেন। এ দায়িত্ব পালনকালেই তিনি মাস্টারদার নির্দেশে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপীয়ান ক্লাবে দু:সাহসিক হামলা চালানোর নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে যুদ্ধের একপর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিজেই পটাশিয়াম সায়ানাইড পানে শহীদের পদ বরণ করেন। সেদিক থেকে চিন্তা করলেও এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
অথচ, আমরা এই বাংলাদেশের নাগরিক জাতি হিসেবে কি এতটাই অকৃতজ্ঞ, অপরিণামদর্শী, অবিবেচক, বিস্মৃতপ্রবণ যে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও গৌরবময় অধ্যায়কে ‘অর্থ’ বা ‘বাণিজ্য’র কাছে বিকিয়ে দেবো না দেয়া উচিত। না, এখনো বোধয় অতোটা পচন ধরেনি এমনটিই বিশ্বাস করতে চাই। না হলে গতক’দিন ধরে চট্টগ্রামের অন্তত কিছু সচেতন বোদ্ধা নাগরিক ‘হ্যাট্রিক মেয়র’র এ ধরনের বাণিজ্যলোভী মনোবৃত্তির প্রতিবাদ করতেন না। শতবর্ষ পূর্তির আর মাত্র একটি বছর বাকি তরুণ বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী অসুস্থ শরীর নিয়ে (প্রচন্ড মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে) সেই শিক্ষা প্রাঙ্গণে ছুটে যেতেন না প্রতীক অনশন আর প্রতিবাদ জানাতে। বেশকিছু সচেতন প্রতিবাদী তরুণ সংস্কৃতিকর্মী, সংবাদকর্মী ও ছাত্রকর্মীরাও ছুটে গেছেন সেখানে তাদের প্রতিবাদ আর ক্ষোভ জানাতে। তবে এর পাশাপাশি চট্টগ্রামের বেশক’জন বুদ্ধিজীবী যারা আমাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন তারা একটি বিবৃতি দিয়ে মেয়রকে ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যাকে উদ্দেশ্য করে এতসব কিছু তিনি যেন বধির হয়ে আছেন এখনো।
বেশক’দিন তো হয়ে গেলো অন্তত ১০ দিনের বেশি হয়েছে। স্কুলের জায়গায় বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের খবরটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখ আর পরিতাপের বিষয়, সুসংগঠিত, পরিকল্পিতভাবে সুশীল সমাজ বা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা পৌর পিতাকে তার ‘বাণিজ্যিক পরিকল্পনা’ থেকে সরিয়ে আনা বা বিরত রাখার জন্য তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা। আশাকরি আমাদের সমাজের শ্রদ্ধেয় নাগরিক নেতৃবৃন্দ শিক্ষার্থী , অভিভাবক ও নাগরিকদের হতাশ করবেন না।
পাঠকদের সদয় অবগতির জন্য অপর্নাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় দু’টির ব্যাপারে সর্বশেষ অবস্থা সংবাদ আকারে (৩১ জানুয়ারি ২০০৯, দুপুর পর্যন্ত) তুলে ধরছি
“চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ৮২ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী স্কুল ক্যাম্পাসে সিটি কর্পোরেশনের বাণিজ্যিক ভবন নির্মান প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে অনশন কর্মসূচী পালন করেছেন মাস্টারদা সুর্যসেনের সহযোগী বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। তার সাথে স্বতস্ফুর্তভাবে চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিক সমাজ অংশগ্রহন করেন। নিজের সহযোদ্ধা প্রীতিলতার স্মৃতিধন্য বিদ্যালয় রক্ষায় আন্দোলনের ডাক দেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের এই মহান যোদ্ধা। তার সাথে অনশনে অংশগ্রহন করেন শহীদজায়া বিশিষ্ট লেখিকা বেগম মুশতারী শফি।
উল্লেখ্য, সিটি কর্পোরেশন প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক ভবন নির্মানের জন্য যে নক্সাটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছিলো তা সিডিএ পরিকল্পনাবিদগণ অনুমোদন করেননি। প্রসঙ্গত, গত ২০০৮ সালের ২৮ মার্চ স্কুল ক্যাম্পাসে পাঁচতলা প্রীতিলতা ভবন নির্মানের জন্য একটি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি প্রীতিলতার স্মৃতি রক্ষার্থে ভবনটি নির্মানের জন্য দ্রুত ৬ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব একনেক কমিটিতে অনুমোদনের পর অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়। বর্তমানে তা শিক্ষা সচিবের দপ্তরে রয়েছে। স্কুল পরিচালনা কমিটি আবেদন করলেই উক্ত টাকা বরাদ্দ পাওয়া যাবে। উপরোক্ত ভবন নির্মান নক্সাটি সিডিএ কর্তৃক অনুমোদিত। কিন্তু মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী, উক্ত অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করে উল্টো জনমত উপেক্ষা করে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছেন।
শনিবার (৩১ জানুয়ারি ২০০৯) অনুষ্ঠিত প্রতীকী অনশন সমাবেশে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী বলেন, ঐতিহ্যবাহী স্কুল ভবনে বহুতলা বাণিজ্যিক ভবন প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অপর্ণাচরন ও কৃষ্ণকুমারী ক্যাম্পাসে বাণিজ্যিক ভবন নির্মান যে কোন কিছুর বিনিময়ে প্রতিরোধ করা হবে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। নতুন শিক্ষা মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মান যদি যুক্তিযুক্ত মনে করেন তাহলে আমার বলার কিছুই নাই। তিনি আজকের এই অনশন ধর্মঘটের মাধ্যমে স্কুল ভবনে বাণিজ্যিক ভবন নির্মান বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার উপর বাণিজ্যিক ভবন নির্মান সিটি কর্পোরেশনের একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর সিটি কর্পোরেশন মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর কুদৃষ্টি পড়েছে। আমরা যে কোন কিছুর বিনিময়ে এই অন্যায় প্রচেষ্টা প্রতিহত করবো। সহযোদ্ধা প্রীতিলতার স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, অপর্ণাচরণ স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সহযোদ্ধা শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ১৯৩২ সালে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা থাকা অবস্থায় প্রীতিলতা মাস্টারদা সুর্যসেনের নির্দেশে আত্মগোপনে গিয়ে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমন করেন। সেই বীরোত্ত্বপূর্ণ বৃটিশ বিরোধী যুদ্ধে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার শহীদ হন। মহান সেই বিপ্লবীর স্মৃতিধন্য বালিকা বিদ্যালয়ে বানিজ্যিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার চক্রান্ত প্রতিহত করতে তিনি চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবন্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।
এ প্রকল্প সম্পর্কে চট্টগ্রামের মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী জনদাবীকে উপেক্ষা করে বলেন, “এই উদ্যোগকে কেউ কেউ ঈর্ষাপরায়ন বশতঃ বাধাগ্রস্থ করার জন্য উদ্দেশ্যমূলক ভাবে কল্পনাপ্রসুত ও মনগড়া বিভ্রান্তী ছড়াচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষা বান্ধব আধুনিক বলয় নির্মানের এই মহতী উদ্যোগকে যারা ভিন্ন চোখে দেখেন, তারা শিক্ষা ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দেশ বিদেশে প্রশংসিত ও স্বীকৃত সাফল্যকে নস্যাৎ করার জন্য ন্যক্কারজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন- যা শিক্ষানুরাগী মহলের কাম্য নয়। তাই আমি দৃঢ়তার সাথে জানাতে চাই অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী স্কুলের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষাবান্ধব বহুতল ভবন ও কমপ্লেক্স নির্মিত হবেই।”
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নকশার অনুমোদন না দিলেও সিটি কর্পোরেশন ইতিমধ্যে ভবন নিমার্ণের জন্য এম আমিন এন্ড সন্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোনপ্রকার দরপত্র আহবান ছাড়াই কার্যাদেশ দিয়েছে। সিডিএ’র মতে, শহীদ মিনার সংলগ্ন ব্যস্ততম আমতল মোড়ে কখনোই বহুতল বাণিজ্িযক ভবন হতে পারে না। এ কারণেই সিডিএ সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত নকশা অনুমোদন দেয়নি। সিডিএ’র উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, নগর পরিকল্পনার কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই আমতলা এলাকার এ স্থানে হাইরাইজ বিল্ডিং হতে পারে না। এছাড়া ঐ এলাকায় দুটি বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে। তিনি বলেন, আমতল মোড়ে সিটি কর্পোরেশন প্রস্তাবিত নকশার স্থানটিতে একটি আইল্যান্ড। এটির তিনপাশেই রাস্তা রয়েছে। এজন্য নগর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কোন ভবন হতে পারে না। এছাড়া অনেক আগে থেকেই স্কুল ভবন দুটি রয়েছে। সে বিবেচনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ বাড়াতে চাইলে তা বিবেচনা করা যায়। কিন্তু নতুন করে কোন হাইরাইজ ভবন নয়। পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর আমতল এলাকায় দুটি স্কুল ভবন ভেঙ্গে একটি ১৬ তলা ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য সিডিএ বরাবরে পাঠিয়েছে। কিন্তু নকশায় ছয়টি ত্র“টি দেখিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নকশা ফেরত পাঠানো হয় বলে তিনি জানান। নকশায় ভবনের নিচতলায় পার্কিং স্পেস, ২য় তলায় মার্কেট, তৃতীয় তলায় শিক্ষার্থীদের জন্য এসেম্বলী হল এবং ষ্ষ্ঠ তলা পর্যন্ত বিদ্যালয় দুটির শ্রেণী কক্ষ হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
স্কুল ভবন ভেঙ্গে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাসুদ্দোহা বলেন, একটি ভবন নির্মাণের নকশার অনুমোদন চেয়ে সিডিএ তে পাঠানো হয়েছ্।ে অনুমোদনের পর তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে সিডিএ’র অনাপত্তির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে উল্লে¬খ করেন। একইসাথে স্কুল ও মার্কেট রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত নকশায় দুটিই সম্পূর্ণ পৃথকভাবে রাখা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়াই একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রসঙ্গে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দুটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল ভেঙ্গে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ প্রসঙ্গে সিডিএ’র চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আখতার উদ্দিন বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনেই যেকোন ধরণের ভবন তৈরি করতে হবে। জনগণের দাবি, এ দুটি পুরোপুরি স্কুলই থাকুক। একইসাথে মার্কেট ও স্কুল থাকা কখনোই উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী স্কুল ভেঙ্গে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ পরিকল্পনা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন। এজন্য তারা মানববন্ধন, মিছিল সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে ছাত্র ইউনিয়ন স্কুল ভবন ভেঙ্গে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন ও মেয়র বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে। সংগঠনের জেলা শ্খাার সাধারণ সম্পাদক জাভেদুর রহমান চৌধুরী জানান, যেকোনভাবেই স্কুল দুটি ভেঙ্গে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ রুখে দেয়া হবে।তিনি বলেন, এর প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ধারাবাহিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনও সিটি কর্পোরেশনের এ পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে তা বন্ধ করার দাবি জানান।
বক্তব্যে শহীদজায়া মুশতারী শফি বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে একটি দুঃসংবাদ দেখছি। চট্টগ্রামের বুকের মাঝখানে স্থাপিত অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত ৮ দশক ধরে এদেশের মানুষ গঠনের কাজ করে যাচ্ছে। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মানের যে পায়তারা করা হচ্ছে তা চট্টগ্রামবাসী প্রতিহত করবে। সিটি মেয়র শুধু চারিদিকে বাণিজ্য, বাণিজ্য আর বাণিজ্য দেখছেন। মেয়রের আর কত বাণিজ্য দরকার? বাণিজ্যিক ভবনের উপর কোমলমতি বালিকাদের স্কুল হলে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে। শিক্ষার পরিবেশ বলতে কিছুই থাকবে না। মেয়র কি চান ছাত্রীদের অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিক। ”
যে পুরণো ঘটনাগুলো অবতারণা করার কোন ইচ্ছেই ছিল না আমার, তা অনেকটা বাধ্য হয়েই বলছি পাঠকদের অবগতির জন্য। চট্টগ্রামবাসি নিশ্চয়ই বিস্মৃত হয়ে যাননি যে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত (২৯ ডিসেম্বর ২০০৮) নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায় থেকে অভ্যন্তরীণ দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নাম পাঠাতে বলেছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির কাছে। তখন চট্টগ্রাম মহানগরীর মোমিন রোডের প্রিয়া কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের প্রদত্ত ভোটের ব্যালেট বাক্স নিয়ে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী অজ্ঞাত স্থানে চলে গিয়ে ভোটের ফলাফল পাল্টে দিয়েছিলেন বলে তার দলের নেতারাই প্রচন্ডভাবে অভিযোগ করেছেন। যা সেই সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। গত সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক নয় এমন কাউকে কাউকে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার জন্য এক ধরনের ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ও করেছেন বলে জনশ্র“তি রয়েছে। তবে তা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না।
এক্ষেত্রে স্বনামধন্য এই পৌরপিতার আর একটি বিতর্কিত ভূমিকা উল্লেখ না করে পারছি না। তা হলো মাত্র কয়েকবছর আগে নগরীর ও আর নিজাম রোডস্থ গোলপাহাড় মোড়ে হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ‘পশুরক্ষক সমিতি’র মালিকানাধীন প্রায় ৪০ কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি জাল দলিল তৈরি করে সিটি কর্পোরেশনের নাম ভাঙ্গিয়ে ও কর্পোরেশনকে ব্যবহার করে দখলের অপচেষ্টা করেছিলেন। আর তখন তিনি বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিপ্নবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী (যিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’সহ বিভিন্ন সংগঠনের সম্মাননা পদকে ভূষিত হয়েছেন) সম্পর্কে নানা ধরনের অশ্রাব্য কটুক্তি করতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু সচেতন জনতার প্রতিরোধ ও আইনী লড়াইয়ের কারণে চট্টগ্রামের ‘প্রতিবাদী রাজনীতিবিদ মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী’ দখলদারিত্ব ও আগ্রাসী অবস্থান থেকে পশ্চাদোপসারণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
তাহলে আবারো কি এই বীর চট্টলার ‘এক সময়কার অবিসংবাদিত জনপ্রিয় নেতা’ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ঐতিহ্যবাহী অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় দু’টি নিয়ে একই ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চান? বিগত ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়েই কিন্তু এই প্রতিবাদী, জনদরদী, চট্টগ্রামদরদী, কথিত আপোষহীন রাজনীতিক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের স্বার্থ ও তার ভাষায় বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী এসএসএ টার্মিনাল চট্টগ্রামে স্থাপন করতে দেননি। শুধু চট্টগ্রামবাসিই নয়, দেশের অধিকাংশ নাগরিক তখন তার এই আন্দোলনকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিলো রাজপথে- আদালতে। সেই সংগ্রামকে নিজেদের সংগ্রাম মনে করে তার সংগ্রামের সাথী হয়েছিলো। কিন্তু সেই জননেতা এখন কেন এমনতরো আচরণ শুরু করলেন? তিনি কি এখন শিক্ষার চেয়ে ‘বাণিজ্য’কে বেশি প্রাধান্য দিতে শুরু করেছেন- কার বা কোন গোষ্ঠীর প্ররোচনায়, না তার নিজের ক্ষমতার দম্ভে? বড় জানতে ইচ্ছে করে।
আশা করি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী এবং দিনবদলের সরকারের উপদেষ্টারা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টিকে বাঁচানোর আশু উদ্যোগ নেবেন। সেই সাথে মেয়র মহোদয়ও জনমতকে উপেক্ষা করবেন না সেই প্রত্যাশা করি কায়-মনো-বাক্যে। পাশাপাশি এও প্রত্যাশা-পৌর পিতার আশপাশে যেসব তোষামোদকারী রয়েছেন, যারা তার জনপ্রিয়তাকে অপব্যবহার করে তাদের স্বার্থ হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদের তিনি প্রশয় দেবেন না এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
সমরেশ বৈদ্য, চট্টগ্রাম থেকে
সংবাদকর্মী লেখক.৩১.০১.২০০৯
তিনি কোন অসৎ মানুষের প্ররোচনায় হয়ত এমন উদ্যোগটা নিয়েছিলেন।রাজনৈতিক ভাবে কাজ করতে গিয়ে তার সংস্পর্শ যতটুকু পেয়েছি তাতে মনে হয়েছে তিনি জননেতা হলেও পৃথিবীর সব সৃষ্টির পেছনে তিনি চিন্তা করেন।কোরবানী বা অনুষঠান ছাড়া ভোগবিলাসে পশু জবাই করাকে তিনি পশু হত্যা বলছেন।যাই হউক নিউজটি ভাল লাগল।তথ্য ভিত্তিক নিউজ ছিল।প্রিয় লেখক সমরেশ দাদাকে মনে করিয়ে দিয়ে বলছি…
দাদা চট্টগ্রাম ঘুণে ধরা শহর নয়।অন্যায় চিরকাল এখানে বাসা বাঁধতে পারেনি।কাজেম আলী স্কুল যখন ব্যাবসা কেন্দ্র পরিনিত হল যখন হাডুডু র। পরিবর্তে স্পা সেন্টার করা হল তখন ছাত্রলীগ আন্দোলনে নামলাম আর তার পরিচালনায় দায়িত্ব থাকা এক অসৎ সংবাদ পত্রিকার সম্পাদকের রোষানলে পড়লাম অতপর দেখছি মাঠ টি এখন দখল করে দোকান ঘর নির্মান হয়ে গেল।এই অন্যায়ের স্থাপনা আর কতদিন বৃদ্ধাআঙ্গুলি দেখালে আমাদের বীরের শহরের বীর সেনাদের ঘুম ভাঙ্গবে?
Mayor Mohiuddin will keep on trying to grab more historical Hindu properties as revenge to boost his ego after his previous failure in confiscating the go-shala property. He will keep on trying again and again to grab other Hindu properties.
To people like him, there is no meaning of historical importance of any of these sites. History is their enemy, and should be erased to write a fake one. This was one of the policies of the Pakistani regime, and many still subscribe to it. Mayor is one of those people. Bangladesh could benefit so much by preserving old historic sites, and promoting them as tourist attractions. Who cares about Bangladesh! It’s the ego, stupid.
JR
প্রিয় বৈদ্য বাবু, এমনতর ঘটনার সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস আষ্টে-পাষ্টে জড়িত।শষ্যের ভেতর ভূত থাকলে যা হয়। মন্দিরের সম্পপতিতে মাদ্রাসা স্থাপন, স্বরস্বতী মূর্তি ভাঙ্গা, ঐতিহ্যবাহী আপর্নাচরন স্কুল, রমনার কালীবাড়ী, এসব কিছুর পেছনে একটিই উদ্দেশ্য!
সরকার পক্ষ আর বিরোধী পক্ষ দুয়ে দুয়ে চার। হিসেবে নির্ভূল প্রানপ্রিয় দেশ।সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহারে যাই থাকুক না কেনো অলিখিত ইস্তেহারের ব্যত্যান্তর হবার সুযোগ নেই। মানুষের বিশ্বাস ও ঐতিহ্য রক্ষার উদার ইতিহাস তাদের নাই। তার ঢের প্রমান প্রতিদিনের প্রত্রিকার পাতায় পাতায়। সাংবাদিকরা খবর দিয়ে খালস। পুলিশ ধংশের নেশায় ভেনে নিদ্রায় মগ্নো। আইওয়াস তদন্ত!
মিঃ বৈদ্য,
ধন্যবাদ আপনাকে। সংবাদ পত্রে যখন দেখলাম খবরটা তখনই মনে হচ্ছিল গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে বলি এখনি এই উদ্যোগ বন্দের ব্যবস্হা নিন। পর দিন তাঁর (মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর) এই উদ্যোগে বিরক্তি প্রকাশের খবরে যে কি স্বস্তি পেয়েছি ভাষায় প্রকাশ যোগ্য নয়। না ভেঙ্গে স্কুল দুটিকে ব্যপক সংস্কারে আধুনীকায়নের উদ্যোগ নিলে আমার মতো গোটা দেশ সত্যিই খুশী হবে।