বাসুনকে, মা

 

লুনা শীরিন

 

পর্ব ৪ 

 

বাসুন,

বাংলাভাষার শক্তিশালী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের  প্রিয়তমাসু  কবিতার কয়েকটা লাইন এরকম,

 

সীমান্তে আজ আমি প্রহরী

অনেক রক্তাক্ত পথ  অতিক্রম করে

আজ এখানে এসে থমকে দাড়িয়েছি

স্বদেশের সীমানায়

 

হ্যাঁ বাবু, আমিও আজ সারাদিন অনেকটা নিজের সাথে নিজেই থমকে ছিলামভেবেছিলাম আজকের এই বিশেষ দিনটার কথা শুধু নিজের ব্যক্তিগত  ডাইরীতে তুলে রাখবো, কিন্তু পারলাম নাদিনশেষে মনটা কেমন শুন্য হয়ে এলো, ভাবলাম তোকেও বলে যাই কিছু কথাসেই যে ভোর সাতটায় তোর আর আমার ঘুম ভেঙে গেলো প্রতিদিনের মতো আর তুই  আমাকে কেমন অবাক করে দিয়ে জোরে জড়িয়ে ধরে বললি হ্যাপি বার্থডে আম্মু আমার  পৃথিবী মুহুর্তেই উজ্জল হয়ে উঠলোকি আনন্দ চারপাশে, কতসুখ আমার, তোর মতো একটা ছেলে আমার ঘর আলো করে থাকে, আমার নিজের হাতে গড়া এই  জীবনে কোথাও কোন কষ্ট খুঁজে পাই না সোনাসেই সকাল থেকেই তুই আর আমি  বাড়িতেই কাটিয়ে দিলাম গোটা দিন  এমন আনন্দের একটা জন্মদিন যে আমার জীবনে আসবে তা কি কখনো ভেবেছিলাম সোনা? আমরা চারবোন, ছোট দুইবোনের জন্মদিন একই মাসে তাই ছোটবেলা থেকেই ওদের জন্মদিন যে কোন একটা তারিখ ধরে করা হতো, বড়পা বাবা/মায়ের দুই পরিবারের ভিতরেই বড়মেয়ে তাই না চাইলেও ওর জন্মদিনে মেহমান আসবেই, মাঝখানে পড়ে গেলাম আমিবাবা সরকারী  চাকরি করতেন, মাসের শেষে আমার জন্মদিন, এইদিনটাতে মা কেবলই অপেক্ষা করতো কবে ১ তারিখ আসবে, তাই ৩১ তারিখটা সবচেয়ে বেশী লম্বা মনে হতোআরো পরে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে আতলামি করা শিখলাম তখন জন্মদিন/টন্মদিনকে খুব খেলো মনে হতোএরপর একদিন যখন  পড়া শেষে চাকরিতে জয়েন করেছি, মা বললেন এই মাসে তোর জন্মদিনে কিছু মানুষকে বলি আমি তখনো অনেক বেশী ভাবের পৃথিবীতে বাস করি, মাকে বললাম না না তোমার জন্মদিন করতে হবে না জাতি আমার জন্মদিন করবেকতটা আবেগ দিয়ে আমি জীবনকে ভালোবাসতাম এখন মনে পড়লে শুধু নিজে নিজেই হাসি পায় আজও  সারাদিন বাড়িতে আমি সোনা, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দিনগুলো, কত জন্মদিনে নিজে নিজে থাকবো বলে ঘরে দরোজা বন্ধ করে দিয়েছিলামতেমনি তুই যখন আজ ঘুম থেকে উঠেই বললি, আমাদের কি আজকে কোন প্রোগ্রাম আছে? আমি বলেছি, না বাবু, আমি সারাদিন তোর সাথে বাড়িতেই থাকবো তোর  সাথেই জন্মদিন আমার তুই আবার আমাকে হাগ দিয়ে বললি দ্যাটস গ্রেটবল বাবু, তোর সাথে ছুটির একটা দিন কি আনন্দে কাটছে     তুই খেলছিস, পড়ছিস, ছবি আঁকছিস, টিভি দেখছিস আর আমি সারাদিন সুকান্তের কবিতা, আমার পুরোন ডাইরি, আমার অতীতের সময় আর ভালোবাসার কফি দিয়ে কটিয়ে দিলাম জন্মদিনের আনন্দময় দিনসত্যিই  সোনা, আমার জন্মদিনের এরকম একটা দিন আমি আজীবন ফিরে ফিরে চাই, তুই যেন আজীবন আমাকে এই  জন্মের সার্থকতা দিয়ে ভরিয়ে রাখতে পারিসআরো অনেক রক্তাক্ত পথ পাড়ি দেবার শক্তি যেন তোর শিশুমুখের দিকে তাকিয়ে আমি অর্জন করতে পারি বাসুনআমার জন্মদিনে তোকে অনেক অনেক চুমু সোনা, অনেক আদর বাসুন

তোর মা

৩১ শে জানুয়ারী ২০০৯