বাসুনকে, মা
পর্ব ৪৭
বাসুন,
এইতিহাসিক দিন, ক্ষণ, মুহুর্ত–এই আজকের দিন। পৃথিবীর শত শত কোটি কোটি মানুষ নিজেদের মতো করে আনন্দ করছে, নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে খুশির বন্যায়, আমিও পারলাম না এই আনন্দের মুহুর্তে নিজেকে প্রকাশ না করে। আজ বারাক হোসেইন ওবামা শপথ নিলেন, সকাল থেকেই আমি উৎসুক হয়ে আছি প্রোগ্রাম দেখবো, দরকার পড়লে আফিস থেকে আগেই বাড়ি চলে আসবো। আমার প্রোগ্রামের ম্যানেজার একজন কালো চামড়ার মানুষ, ক্রেগকে যতবারই দেখি ততবারই যেন পৃথিবীব্যাপি কালোদের নিয়ে নানান প্রচারণা ওর চলনে/বলনে, আচার/ আচরনে খুঁজতে চেষ্টা করি। আজকেই কেমন কেমন করে যেন ক্রেগ সকাল এগারোটায় মিটিং কল করেছে, তবুও মনের ভিতর আশা ছিলো ক্রেগ এর সাথে বসেই না হয় ওবামার প্রোগ্রাম দেখবো, অপেক্ষা আর উত্তেজনার একটি দিন। কি অদ্ভুত বাবু জানিস, মানুষ যা খোঁজে তাই পায়, আমি যেহেতু আজকে সকাল থেকে ওবামার এই প্রেসিডেন্ট হবার বিযয়টা নিয়ে বেশী বেশী ভাবছি তাই এতদিন পরে আজই বিষেশভাবে লক্ষ্য করলাম আমি যে বিশাল অফিসপাড়ায় কাজ করি সেটা সাদা অধ্যুষিত একটি সেন্টার, সেখানে সাউথ এশিয়ান বলতে শুধু আমি ও আমার সহকর্মী। সকাল থেকে কি আজকেই এগুলো বেশী চোখে পড়ছিলো কিনা বলতে পারবো না, তবে অন্য সবার মতো আমার জন্যও আজকের দিনটা সাধারণ দিনের চেয়ে বেশী অন্যরকম ছিলো। ম্যানেজার ক্রেগ এর আসার কথা ছিলো সকাল এগারোটায় ও আসলো দুপুর ২ টায়, ততক্ষনে আমার কাজ প্রায় সারা, ক্রেগ অফিসে ঢুকেই দেখতে পায় আমি কাজ বাদ দিয়ে ল্যাপটপে ওবামাকে গিলছি, বল বাবু এটা কি ঠিক হলো? চাকরির এই টালমাটাল বাজারে যদি মাসে চান্দে ম্যানেজার একবার এসে আমাকে কাজবিহীন দেখতে পায় তখন কেমন দেখায় বল? দেখলাম ক্রেগ বেশ আনন্দিত, চিৎকার করে বলল ”এভরিওয়ান উইথ ওবামা টুডে, রাইট গাইস?” আমি কালো কুচকুচে মানুষ ক্রেগ এর ভিতর ওবামাকে আবিস্কারের চেষ্টা করি।
অন্যদিনের চেয়ে আজকে ক্রেগকে বেশী আনন্দিত মনে হয়, কথার ফাঁকে ফাঁকে ক্রেগ জানান দেয় আজ রাতে পার্টি আছে, ওর নেইবার একজন কেনিয়া বংশোদ্ভুত কানাডিয়ান, ওবামার খুশিতে নাকি সেই কেনিয়ান আত্মহারা, কিভাবে আনন্দ আর ভালোবাসায় আপ্লুত হয় মানুষ। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো তুই স্কুল থেকে ফেরার পরে। তোর ক্লাস চিটার একজন সাদা মহিলা, কোন বিষেশ কারনে এই মহিলাকে আমি তেমন পছন্দ করি না কিন্তু সেকথা তো তোকে বলতেও পারি না সোনা, আজ ঠিক সেই কথাটাই তুই আমার মুখ থেকে বের করে নিয়ে এলি। প্রতিদিনই তুই স্কুল থেকে ফিরে দিনের সব গল্প আমাকে করিস, আজও তাইই করছিলি কিন্তু ব্যাতিক্রম ছিলো যে, আমি আমার ল্যপটপে ওবামার প্রোগ্রাম দেখছিলাম, পিছন থেকে তুই বললি,আম্মু টেল মি হোয়াই ওবামা ইজ ডিফরেন্ট? আমি নানান উত্তর দিচ্ছি, কিন্তু কোনটাই তোর মনপুত না। এবার বললি আসল কথা,তোর টিচার নাকি ক্লাসে বলেছেন ”ওবামার ফোরফাদার স্লেভ ছিলো, ওবামা এমন একটি জায়গায় জন্মগ্রহন করেছে যেখানে চারপাশে স্লেভরা বাস করতো, আর সেখান থেকেই ওবামা প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তাই ও ডিফরেন্ট”। আমি জানিনা বাবু, সত্যিই তোর টিচার এমন কোন কথা বলেছেন কিনা, বা তোরা এইটুকু বয়সেই বন্ধুরা বসে আলাপ করেছিস কিনা । তবে আমার মন বরাবরই ছিন্দ্রানেষী, মনের কোনায় সামান্য কালিমাও যেন আমার ভিতরে কঠিন হয়ে বাজে। ওবামা রাজপরিবারের না, ওবামার রক্তে শোষিত ও নিপেড়ীত হবার ইতিহাস আছে আর সেকারণেইে ওকে আমার ভালোলাগে। ওর জয়যাত্রায় আমি সক্রিয় অংশীদারিত্ব বোধ করি। তোর সাদা শিক্ষক হয়তো জানেন না নিজেকে তৈরী করার নাম কি, তবে পৃথিবীতে যে আজো অধিকাংশ মানুষ নিপীড়িতদের, বঞ্চিতদের পক্ষে তারই স্মারক বহন করছে ওবামা। তোর আজকের পথ তৈরী করতে আমাকে এবং আমার পুর্বসুরীদের কঠিন ত্যাগ করতে স্বীকার করতে হয়েছিলো। বাবু, কোন বিত্তবৈভবের জীবনই যেন তোকে এই কঠিন সত্য ভুলিয়ে না দেয়, কোনদিনও যেন তুই অতীত ভুলে না যাস সোনা, তোর আগামীসময়ের জন্য আমার এই প্রার্থনা ।
তোর মা,
২০ শে জানুয়ারী, ২০০৯
didnt understand that…kalo to bhaloi gilte paren…what is it realy…? to me its in bad taste…if we cant appreciate someone doesnt mean that we should lose our dignity nd make a bad comment..the person u dont know plz stay back..leave that person alone…learn to respect.
আমি ৪৭ টা ধাপে লুনা শিরিনকে চিনি।তার যথেচ্ছাচার জীবন থেকে আজকের এই জীবন পর্যন্ত
লুনা আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে নানাভাবে আর সেটা নির্ভর করবে প্রতেকটি মানুষের
নিজস্ব দৃষটিভংগীর উপর নন্দিনী বা লায়লার মন্তব্যর উপর নয়।
আপনি দেখছি ওবামাকে গিলতে গিয়ে আপনার ম্যানেজারকে শুদ্ধ গিলে ফেললেন।বাহ্ আপনিতো কালো ভালোই গিলতে জানেন।