এক রাজপুত্রের অভিষেকের সাক্ষী

বিপ্লব পাল

 


ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান ব্রাড শারমনের সাথে-উনার দাক্ষিন্যেই টিকিট পেয়েছি



ওবামার ভাষন চলছে-লাখে লাখে লোক টিকিট সত্ত্বেও ঢুকতে পারে নি-হতভাগ্যের দল বাইরে থেকেই হাজার ফুট দূরে ফোকাস করছে

 


এই ভাবেই লাখে লাখে লোক বাইরে থেকে এক ঝলক দেখার চেষ্টায়

 


সুন্দর সোনালী রোদের সকাল-ঝলমলে কিন্ত তাপমাত্রা শুন্যের কিছু নীচে

 


ওয়াশিংটনের রাস্তা শুধুই লোকে লোকারন্য

 


ভীরের চাপ সামলাতে না পেরে টিকিট মেশিনই গেল ভেঙে

 


একদম সকালে এক গর্বিত আফ্রয়ামেরিকান নারী তার টিকিট দেখাচ্ছেন আমাকে-এদের ভাগ্যেও আজ ঢোকা ছিল না

 

বিদ্রঃ যাদের পড়ার ইচ্ছা নেই-তারা সোজা আমার বাংলা ভিডীও ব্লগটা দেখে নিন।
 
 
আজকের দিনটা অন্যরকম হবে সেটা কালকেই বুঝেছিলাম। তবুও গণতন্ত্রে লোকের আবেগের সাক্ষী হতে উত্তেজনায় কাল রাতে ঘুমটাও ঠিকঠাক হলো না। সকালে বাসে উঠে দেখি চারিদিকে শুধু কালো মানুষদের ভির। সবার মুখে হাসি। যেন আজকের দিনটার অপেক্ষাই ছিল সারা জ়ীবন। গ্রীনবেল্ট মেট্রো স্টেশনে ভীরের চোটে টিকিট মেশিনই গেল খারাপ হয়ে। হাজার হাজার লোক অপেক্ষা করছে-তবুও কোন ঠেলাঠেলি নেই। সবাই আসলে ওবামাকে দেখতে যাচ্ছে তা নয়-এই লাখে লাখে লোক এত খুশী মনে আনন্দ করছে-তার শরিক হওয়াটাই অন্যরকম মজা। অথবা গণতন্ত্রে বিশ্বাস ফিরে পাওয়া।
 
৭ম স্ট্রীটে যখন নামলাম-চারিদিকে শুধুই লোক। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ছিল ১ম স্ট্রীটে-প্যারেড হচ্ছিল ১০ম স্ট্রীটে। প্রথমে প্যারেডের কাছে গেলাম। সেখানেও লোক ঠেলে ঢুকতে পারলাম না। চারিদিকে ব্যান্ডের বাদ্য। “আরেস্ট বুশ” প্ল্যাকার্ড নিয়ে এখানের বামেরা দাঁড়িয়ে। [ভিডীওটা দেখুন]
 
-২ ডিগ্রী শীতে প্রায় কেঁপে যাচ্ছিলাম। ক্যাপিটল হিলে যখন পৌছালাম-চারিদিকে শুধু লোক আর লোক। টিকিটধারীদের ঢোকার জন্যে পাঁচটা গেট ছিল। কোন গেটের সামনে লাইনে ম্যানেজমেন্ট নেই। শুধু হাজারে হাজারে লোক ঠেলেঠুলে ঢোকার চেস্টা করছে। অধিকাংশ লোকই টিকিট থাকা সত্ত্বেও ঢুকতে পারে নি। আমাদের ব্লুগেটের সামনে কুড়ি হাজার লোক -মোটে তিনটে চেকিং লেন! এমন অব্যাবস্থা দেখি নি। ৪০,০০০ লোকের টিকিট ছিল ব্লুজোনে-তিন ঘন্টায় এত লোক ঢোকাতে গেলে, মিনিটে প্রতিটা লেনে ৮০ জনের সিকিউরিটি চেকিং দরকার। মিনিটে ৫ জনের চেকিং হচ্ছিল কিনা সন্দেহ। তবুও লোকজনের বিক্ষোভ দেখাই নি। কারন আজকের দিনটাই ছিল সুখী হওয়ার দিন। শেষে ওবামার ভাষন সবাইকে ভিডিও ফোন বা জায়ান্ট স্ক্রীনেই শুনতে হল। মাস হিস্টিরিয়া কি জিনিস-প্রত্যক্ষ করলাম।
 
ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি। আজকের দিনে রেবার্ন অফিস -যেখানে কংগ্রেসম্যানরা বসেন-খুলে দেওয়া হয়। কারন কংগ্রেসম্যানদের বিলানো টিকিটেই দূর দূড়ান্ত থেকে লোকেরা এই অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। আমাকে টিকিট দিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান ব্রাড শারমান। উনার অফিসে বসে একটু গরম হয়ে নিলাম-স্ন্যাক্সের ও ব্যাবস্থা ছিল। ব্রাডের সাথে ওবামার ফরেন পলিশি নিয়ে কিছুক্ষন কথা হল। ইন্টারভিউটা পরে তুলে দেব। উনি একটা ভাল কথা বলেছেন-এই বিশ্বায়নের দিনে আমেরিকা আর বিশ্বের স্বার্থ আলাদা হতে পারে না। যিনি গোটা বিশ্বের হৃদয় জিতবেন-তিনিও আমেরিকাতেও জনপ্রিয় হবেন। এটাই তার আশা।
 
ফেরার সময়ও দুঘন্টা লাইন দেওয়ার পর মেট্রো স্টেশনে ঢুকতে পারলাম। আসলে আজকের দিনটা ছিল জনগনের জন্য। রাস্তার সবার সাথেই কথা বলার চেস্টা করেছি। মোটামুটি হাবভাব এরকম
[১] গণতন্ত্রে বিশ্বাস ফিরেছে ওবামার জন্যে-তাই এসেছি আমরা
[২] কালোলোকেদের কাছে যুক্তি নেই-আজ শুধুই আনন্দে ভাসার দিন
[৩] বুশের মতন লোক যাতে আর প্রেসিডেন্ট না হতে পারে-তার জন্যে আরো বেশী গণতান্ত্রিক চেতনা দরকার। এরেস্ট বুশ প্ল্যাকার্ড আজ অনেকেই এনেছিলেন মানুষের মিছিলে।

ড. বিপ্লব পাল, আমেরিকাতে বসবাসরত পদার্থবিদ, গবেষক এবং লেখক। বর্তমানে www.fosaac.tv সম্পাদনার সাথে জড়িত।