১
তিন পাগলে হইল মেলা
“তিন পাগলে হইল মেলা নদে এসে!!
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে!!!”
তিন পাগল। পৃথিবী বদলে দেয়া তিন পাগল, ইতিহাস আর সভ্যতার ভিত্তি কাঁপিয়ে দেয়া তিন পাগল! হ্যাঁ, সেই তিন পাগল-চার্লস রবার্ট ডারউইন, কার্ল মার্ক্স এবং সিগমুন্ড ফ্রয়েড। তারা তিনজনই তাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে ইতিহাস বদলে দিয়েছেন। মানুষকে নাড়িয়ে দিয়ছেন। এই তিন পাগলের সর্দার হলেন ডারউইন যার কাজের ব্যপ্তি ও চিন্তাধারা সুদূর বিস্তৃত। মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব থেকে অর্থহীন প্রানীদের স্তরে নামিয়ে আনার মাধ্যমে এ পাগলামীর শুরু। এরপরের দৃশ্যপটে আসলেন মার্ক্স তিনি মানব সমাজেই উচুতলা আর নিচুতলাকে সমানে মিশিয়ে দেবার খেলা খেললেন যার পেছনে বড় পাগলের তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে। ৩য় পাগল হলেন ফ্রয়েড যিনি পাগল সর্দারের তত্ত্বকেই মনস্তাত্বিকতার দিক থেকে যেন নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করলেন। মানুষের মনের অভ্যন্তরীণ পাশবিকতা ও উন্মত্ততা ও বাহ্যিক জীবনে তার ফলাফল উঠে আসল ফ্রয়েডের কাজে। মানুষ যে সভ্যতা সৃষ্টি করেও বন্য পাশবিকতা হতে মুক্ত হতে পারেনি তাইই ফ্রয়েড হাতে কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন। ডারউইন আর মার্ক্স কে নিয়ে ব্লগ কমিউনিটি তে লেখা লেখি হয়েছে অনেক। সে তুলনায় ফ্রয়েড গুরুত্ব অনুসারে তেমন একটা স্থান পাননি। যে কারনে আমি ফ্রয়েডের কাজ নিয়েই কিছু লিখতে যাচ্ছি।
ফ্রয়েডকে(সিগমুন্ড ফ্রয়েড)নিয়ে আমার আগ্রহ অনেক দিনের। তার কথা অনেক শুনেছি, বড় বোনের অনার্সের মনবিজ্ঞান বইয়ে কিছু কিছু পড়েছিও। কিন্তু ব্লগ কমিউনিটি তে ফ্রয়েড নিয়ে খুব একটা লেখা পাইনি। এক প্রকার নেইই বলা চলে। আমাদের মুক্তমনাতেও আমার জানামতে তেমন কিছু নেই,থাকলেও আমি মিস করে গেছি। যাই হোক, ফ্রয়েড নিয়ে আমার আগ্রহের কারন অনেক। নিজের মনের অভ্যন্তরীণ ব্যপার স্যপার কি হতে পারে এটা নিয়ে কল্পনা করতে গেলে একটা ফ্যন্টাসির সৃষ্টি হয়। মনের অভ্যন্তরীণ জগৎটা শুধুই মানুষের নিজের। এখানে আর কারোই প্রবেশাধিকার নেই। তাই এই নিষিদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশের ফলাফলটা আসলে কী হতে পারে তা নিয়েই আমার আগ্রহ। অনেকটা নিষিদ্ধ ফলের প্রতি আকর্ষণের গল্প যেন!! আর ফ্রয়েড করল কি, সে মানুষের পুরো মনটাকেই ন্যাংটো করে ছেড়ে দিল। আসলে ফ্রয়েডের কাজের মজা এই যে মানুষের জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে তার মনের অভ্যন্তরে যেসব গোপন ব্যপার স্যপার চলছে ফ্রয়েড সেগুলো সবার সামনে খুলে দিয়েছেন। যেসব কথা আমরা চক্ষুলজ্জা বা সামাজিকতার জন্য বলতে চাই না বা প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করি সেই কথা গুলোকে তিনি গবেষণা আকারে জনসম্মুক্ষে ফাস করে দিয়েছেন! সোফির জগৎ বই থেকে পাই,
“ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কথা হিসাবে শোনা যাচ্ছিল প্রকৃতি, পরিবেশ, ইতিহাস, বিবর্তন আর ক্রমবিকাশ, এই শব্দগুলো। মার্ক্স আগেই দেখিয়েছিলেন যে মানব আদর্শগুলো মূলত সমাজের ভিত্তিরই সৃষ্টি। ডারউইন দেখালেন যে মানবজাতি একটি ধীর জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত বিবর্তনের ফল, আর মনের নির্জ্ঞান স্তর সম্পর্কে ফ্রয়েডের পর্যবেক্ষন জানালো যে- মানুষের কাজকর্ম প্রায়শই “জান্তব” উদ্দীপনা বা সহজাত প্রবৃত্তির ফল।”
২
মন কেন এত কথা বলে……
“একজনে ছবি আঁকে একমনে
আরেকজনে বসে বসে রঙ মাখে…
আবার সেই ছবিখান নষ্ট করে কোন জনা কোন জনা
তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা!!”
মানুষ। বিবর্তনের ধারায় পরিবর্তিত ও গঠিত এক আজব প্রাণী। যে কিনা তার এই ছোট খাট শারীরিক গঠন নিয়ে সামান্য বুদ্ধি আর অসীম সাহসের কারনে আজ বিশ্ব জয় করে নিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যপার হচ্ছে এই যে, মানুষ অসীম ও সসীম জগতের অনেক কিছু সম্পর্কেই জ্ঞান রাখলেও তার মন মন্দিরের অনেক খবরই এখনো তার অজানা। মানুষ নাকি তার মস্তিস্কের সম্পুর্ন সদ্বব্যবহার করতে পারে না। যে সামান্য অংশটুকু ব্যবহারের ক্ষমতা সে রাখে, তাতেই সে বিশ্বজয় করে নিল! পুরোটা ব্যবহারের ফল কি হবে কে জানে!মানুষ তার মনের অভ্যন্তরীন খবরাখবর সম্পর্কেই এখনো সম্পুর্ন ওয়াকিবহাল নয়। এমনকি আরো মজার ব্যপার হচ্ছে যে মানুষ এখনো নিজের মনের গতিপ্রকৃতিকেই নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা রাখে না! মানব মনের এসকল বন্ধনহীন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যপার স্যপার নিয়েই মনোবিজ্ঞানের কাজ কারবার। আমার ঘরে আমি ছাড়া আর কে বাস করে, আমার কাজের মাঝে কে বাগড়া দেয়। আমার মনে ডঃ জেকিল আর মিঃ হাইডের আনাগোনা আর সেই খবর আমিই জানি না! আমার অজ্ঞাতে আমাকে না জানিয়ে আমার মন তার লাগাম খুলে দিচ্ছে এটা যেন কল্পনা করতেও অবিশ্বাস্য ঠেকে! এসব নিয়েই মনোবিজ্ঞানের খেলা। নিজের মন সম্পর্কে নিজেকেই এক জটিল ভাবনায় ফেলে দেয় এই মনোবিজ্ঞান। আর এখানেই ফ্রয়েডের মজা।
৩
আমার ভেতর আরেক আমি
ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণের(psycho-analysis) প্রধান সূত্র দুইটি। আসুন প্রথমে প্রথম সূত্রটা নিয়ে কাজ করা যাক।
সূত্রটা জানার আগে আসুন একবারের জন্য আমরা আমাদের নিজ নিজ মনের জানালায় উঁকি দেয়ার চেষ্টা চালাই। কি দেখা যায় একটু নেড়েচেড়ে দেখি। আমাদের প্রতিদিনকার সব ভাবনা গুলোর কতটুকু গোছালো আর কতটুকু অগোছালো, কতটুকু যৌক্তিক আর কতটা অযৌক্তিক, কতটুকু বাস্তব আর কতটুকু অবাস্তব, কতটুকু আমাদের সচেতনেই হচ্ছে আর কতটুকু আমাদের অচেতন বা অবচেতনে হচ্ছে। যৌক্তিকতা আমাদের জীবনের কতটা অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে? প্রায়ই মানুষ বলে যে,”সব কিছুর মধ্যে যুক্তি খুঁজতে যেও না”। এর কারন কি? মানুষ কি জীবনের সব কাজ যুক্তি দিয়েই বা যৌক্তিক কারনেই করে?
এসব প্রশ্ন নিজেকে করতে করতে আসুন উত্তরটা ভেতর থেকে আসার আগেই আমরা ফ্রয়েডের প্রথম সূত্রটা জেনে নেই।
প্রথম সূত্র =
মানসিক প্রক্রিয়াগুলো অবশ্যই ‘অচেতন'(নির্জ্ঞান)। আর যেসব প্রক্রিয়াগুলো ‘সচেতন’ সেগুলো হচ্ছে বিচ্ছিন্ন কিছু কার্যকলাপ,যা সম্পূর্ন মানসিক সত্তার ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।
অর্থাৎ আমরা যে মনে করি ‘মানসিক’ প্রক্রিয়া বলতেই সেটাকে ‘সচেতন’ প্রক্রিয়া বোঝায়, এব্যপারটা পুরোপুরি ভুল ধারনা। আমাদের সচেতন মনের বাইরেও একটা বিরাট অংশ জুড়ে আমাদের ‘নির্জ্ঞান’ বা ‘অচেতন’ মন কাজ করে। অর্থাৎ স্বাভাবিক অর্থে আমরা যাকে চেতনা বলি এবং যে অংশটুকু আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রন করে বলে মনে করি তার বাইরে আমাদের চেতনার অজান্তেও আমাদের মন আমাদের ইচ্ছার বাইরে কাজ করে যাচ্ছে। সোফির জগৎ বই থেকে একটা অংশ তুলে দেই,
আমাদের কাজকর্ম যে সবসময় প্রজ্ঞা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তা কিন্তু নয়। অষ্টাদশ শতকের বুদ্ধিবাদীরা যেমনটা মনে করতেন, মানুষ কিন্তু আসলে ততোটা বুদ্ধিবাদী প্রাণী নয়। আমরা যা ভাবি, যা স্বপ্ন দেখি আর যা করি তার অনেকটাই নির্ধারন করে অযৌক্তিক আবেগ বা প্রেরণা। এধরনের অযৌক্তিক আবেগ বা প্রেরণা কিন্তু মৌলিক তাড়না বা প্রয়োজনের একটা প্রকাশ হতে পারে।
আবার আমাদের মনের সচেতন অংশটাও অচেতন অংশের উপর কড়াকড়ি(সেন্সরশিপ)আরোপ করে। কারন অচেতন মন প্রায়ই লাগামছাড়া হয়ে যায়, এবং অচেতন মনের কারনেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারন কাজগুলোতেও ভুল হয়ে যায়। এজন্য সচেতন অংশটুকু জোড় করে অচেতন অংশটুকুকে দমিয়ে দিতে চায়। অর্থাৎ স্কুলের মাস্টাররা যেমন মেরে মেরে ছাত্রদের পড়া মুখস্ত করান এবং এর ফলে ছাত্রদের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। আসলেই কিন্তু মানুষের সৃজনশীলতার পিছনে এই নির্জ্ঞান বা অচেতন মনের প্রভাবই বেশি। স্বাভাবিক যুক্তিবোধ, সামাজিক রীতিনীতি, নিয়ম কানুন , এসব ব্যপার এই অচেতন অংশকে বার বার দমিয়ে দেয়। এজন্য সমাজের অধিকাংশ মানুষ সাধারন জীবন যাপন করে এবং কবি সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানীরা হয় একটু পাগল গোছের। কারন তাদেরকে কাজ করতে হয় সামাজিক রীতি নীতির উর্ধ্বে উঠে। এ নিয়ে বার্নাড ‘শ এর একটা উক্তি মনে পড়ছে,-
সাধারন মানুষরা বেঁচে থাকার জন্য নিজেকে পৃথিবীর মত করে নেয়, আর অসাধারন মানুষরা পৃথিবীকেই নিজের মত করে নেয়।
এসকল সৃজনশীলতার উপর যুক্তির প্রয়োগ ঘটালে বা সৃজনশীলতাকে নিয়মের মধ্যে বেধে ফেললে মানুষের সৃষ্টি করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। সোফির জগৎ থেকে একটা গল্প একটু সংক্ষেপে তুলে দেই,
এক বনে একটি শত পা ওয়ালা আজব প্রাণী থাকত, যে কিনা তার ১০০ পা দিয়ে খুব দারুন নাচ করতে পারত। সারা বনের সব প্রানী তার নাচ দেখে মুগ্ধ হত। কিন্তু একটা কচ্ছপ হিংসার কারনে কিছুতেই ঐ শতপদীকে সহ্য করতে পারত না। তাই কচ্ছপটা একটা ফন্দি করল। সে শতপদীর কাছে একটা চিঠি দিয়ে লিখল,”তোমার নাচের আমি খুব ভক্ত। আমাকে একটু শেখাও না। শুধু এইটুকু বলযে তুমি কিভাবে কোন পা আগে পরে ফেল। তুমি কি তোমার ২৮ নম্বর বাম পা উঠানোর পর ৩৯ নম্বর ডান পা ঊঠাও? নাকি ৪৪ নম্বর বামপা ঊঠানোর আগে ১৭ নম্বর ডান পা টা উঠিয়ে নাচ শুরু কর? আমি তোমার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। তোমার বিশ্বস্ত কচ্ছপ।” এই চিঠি পড়ে শতপদীর মাথা গেল খারাপ হয়ে। সে কোন পা আগে কোন পা পরে এই চিন্তা করতে করতে তার মাথা নষ্ট করে ফেলল। ফলাফলে সে নাচতেই ভুলে গেল।
কিন্তু মজার ব্যপার হচ্ছে এইযে সচেতন মন চাইলেও এই অচেতন অংশের উপর পুরোপুরি সেন্সরশীপ আরোপ করতে পারে না। এই অচেতন মনের অদ্ভুত চিন্তাভাবনা গুলো কিন্তু আমাদের অজান্তেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেরিয়ে পরে এবং আমাদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। এই নির্জ্ঞান বা অসচেতন চিন্তা গুলো স্বপ্নের মধ্যদিয়ে, কথার ফাঁকে ভুল করে, লেখার সময় অসচেতনে, কাজের ফাঁকে নানা ভাবে বেরিয়ে যায়। অর্থাৎ এ যেন বাগানে করা এক ইঁদুরের গর্ত যা আমরা যেদিক থেকেই মাটি দিয়ে বুজিয়ে দেই না কেন, ইঁদুরটা ঠিকই বাগানের অন্যপাশ দিয়ে গর্ত খুঁড়ে বেরিয়ে পরবেই। আবার সোফির জগৎ থেকে মজার একটা উদাহরন তুলে দিয়ে প্রথম সুত্রের ক্যাচাল শেষ করছি। সোফিকে উদাহরন দিতে গিয়ে দার্শনিক এই গল্পের অবতারনা করেন। –
একবার এক বিশপের চা খেতে আসার কথা এক স্থানীয় ধর্মযাজকের বাসায়; সেই ধর্মযাজকের আবার বেশ কিছু ছোট্ট ছোট্ট ভদ্র-নম্র মেয়ে নিয়ে এক বিরাট পরিবার। এদিকে বিশপের নাকটা ছিল বেখাপ্পা রকমের বড় আকারের। ছোট্ট মেয়েগুলোকে পইপই করে বলে দেয়া হল তারা যেন কোন অবস্থাতেই বিশপের নাক নিয়ে কিছু না বলে, কারন বাচ্চাদের মনের মধ্যে দমনকারী মেকানিজম তখনো পুরোপুরি গড়ে না ওঠায় বড় দের সম্পর্কে অনেক সময় তারা মুখ ফসকে অনেক বেফাঁস কথা বলে ফেলে। যাই হোক, বিশপ এলেন, উল্লাসিত কন্যারা প্রাণ পণে নিজেদের সংযত করে রাখল তাঁর নাক নিয়ে কোন মন্তব্য না করার জন্য। চেষ্টা করল ঐ নাকের দিকে যেন তাদের নজরই না পড়ে, চেষ্টা করল ওটার কথা ভুলে যেতে। কিন্তু তারপরেও সারাক্ষনই তাদের ওটার কথা মনে পড়তে লাগল। তো,একসময় তাদের একজন কে বলা হল বিশপকে চিনিটা এগিয়ে দিতে। বিশিষ্ট বিশপের দিকে তাকিয়ে তখন মেয়েটা বলে উঠল,”আপনি কি আপনার নাকে চিনি নেন” (!!!)
৪
ডঃ জেকিল এ্যান্ড মিঃ হাইড
রাতের অন্ধকারে মিঃ জেকিলের জেগে ওঠা, ভয়ানক রূপ ধরে পথে প্রান্তরে অপকর্ম ঘটানো এবং ডঃ হাইডের মিঃ জেকিলকে ঠেকিয়ে দেয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা। সেই চিরচেনা গল্প, সেই মুগ্ধ করা চরিত্রের খেল। শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনী। এই গল্প কমবেশি আমাদের সবার জানা। এবার শুনব সত্যি গল্প, নিজের গল্প, নিজেদের গল্প। নিজেদের কাহিনী নিয়ে আবার গল্প হয় নাকি?! হ্যাঁ, হয়, মানুষের মত আজব বস্তুর সব কিছু নিয়েই গল্প হয়। আমাদের মত ছা-পোষা মানুষের আবার গল্প কিসের!! বাস্তবতা বলে, আমাদের ছা-পোষা মানুষের গল্পই ভয়ানক শ্বাসরুদ্ধকর হয়। শুধু শ্বাসরুদ্ধকর বললেও কম বলা হয়। কারন নিজেদের চিন্তা ভাবনা কে আমরা এমন ভাবে সেন্সরড বা শিকলাবদ্ধ করে ফেলেছি যে সত্যি সত্যি সেগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়লে সেগুলো দেখে আমাদের বিস্মিত হতে হয়, অভিভূত হতে হয়, শিহরিত হতে হয়, এমনকি ভীতও হতে হয়!! নিজের মনের গোপন কক্ষের রুদ্ধদ্বার যদি একবার প্রকাশিত হয়ে যায়, তাহলে তখন আমাদের লজ্জার আর শেষ থাকেনা। আমরা সংকোচে কুঞ্চিত হয়ে যাই। নিজেরই ভয় লাগে- আমার চিন্তা ভাবনা এত নীচ!! তবে হাজার হলেও মানুষ তো! শেষ পর্যন্ত সব সামলে নেয়! এরপর আবার নতুন করে চিন্তা মাথাচাড়া দেয়, আবার অপরাধবোধ কুড়ে খায়, আবার তারপর স্বাভাবিক!
যা নিয়ে এত লম্বা ভূমিকা সেটা হল ফ্রয়েডের দ্বিতীয় সূত্র। আসুন দ্বিতীয় সূত্রে যাই।
দ্বিতীয় সূত্র =
স্নায়ূরোগ এবং মানসিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে- সংকীর্ণ এবং ব্যপক এই দুই অর্থেই-আমাদের যৌন আবেগের বিশাল ভূমিকা আছে যা আগে কখনো যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি। না,শুধু তাই নয়,তার চেয়েও ঢের বেশি হবে এই যৌন আবেগের অমূল্য অবদান- শিল্প-সংস্কৃতিতে,মানব মনের সামাজিক বিপুল অগ্রগমনের পেছনে।
এর ব্যখ্যা দিতে গিয়ে ফ্রয়েড বলেছেন,
আমরা বিশ্বাস করি সভ্যতার আবির্ভাব হয়েছে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামের তীব্র চাপের মধ্য থেকে আদিম প্রবৃত্তি গুলোর তৃপ্তিসাধন বিসর্জন দিয়ে এবং এই জিনিস ব্যপকভাবে ব্যক্তির জীবনেও পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন সে সমাজে অংশগ্রহন করে ও তার প্রবৃত্তিগত সুখ বিসর্জন দেয় সমষ্টিগত মঙ্গলের স্বার্থে। এই সব দমিত প্রবৃত্তিগত শক্তির মধ্যে যৌনশক্তিই প্রধান, যা এইভাবে ব্যবহৃত হয়, কিংবা বলা যাক, যা এইভাবে উত্তরণের পথে এগোয় বা উদ্গতি(sublimation) লাভ করে। অর্থাৎ যৌনশক্তি, তার যৌনলক্ষ্য হতে সরে গিয়ে অন্য লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হয়,যা যৌন নয়,এবং সামাজিক দিক থেকে আরো মূল্যবান কিছু। কিন্তু এইভাবে যে গঠন কাঠামো নির্মিত হয়, তা খুব দৃঢ নয়, কারন যৌন আবেগকে নিয়ন্ত্রনে রাখা খুব কঠিন। প্রতিটি ব্যক্তি, যিনিই সভ্যতা গঠনে অংশগ্রহন করবেন, তাদের প্রত্যেকেরই এই বিপদ আছে যে অবরুদ্ধ যৌনশক্তি তার লক্ষ্য পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসতে পারে। বাঁধন ছাড়া উদ্দাম যৌন আবেগ তার আদিম লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগিয়ে চলেছে সমাজ ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে- এর চেয়ে বড় কোন বাধা বা শত্রুকে সমাজ তার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কল্পনাও করতে পারে না। কাজেই সমাজ চায় না তার বিকাশের স্তরে এই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়টি কেউ স্পর্শ করুক, চায় না যে যৌন প্রবৃত্তির শক্তি কত ভীষণ তা কেউ চিনিয়ে দিক, অথবা ব্যক্তির যৌন জীবনের তাৎপর্য কেউ উদঘাটিত করে দিক।; এটাও তার স্বার্থবিরোধী কাজ। সমাজে শৃংখলা বজায় রাখার জন্য বরং এই গোটা ক্ষেত্রটি থেকে সে নজর ঘুরিয়ে দেয়ার পক্ষপাতি।
অর্থাৎ যৌন আবেগ আমাদের জীবনে একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে,যার বেশিরভাগ অংশই আমরা সেন্সরড করে রাখি বা চাপা দিয়ে রাখি। সামাজিক জ়ীব হয়ে ওঠার তাগিদে সভ্যতার প্রয়োজনে আমরা আমাদের আদিমতাকে পোশাকী আবরনে ঢেকে নেই। আসলে সমাজ ও সভ্যতার ভেতর থাকতে থাকতে এটা নিজে থেকেই চাপা পড়ে যায়। ফলে কেউ যখন এই ব্যপারগুলো আমাদের সামনে নিয়ে আসে বা কোন ভাবে এসব চাপা পড়ে যাওয়া ব্যপার আমাদের চোখের সামনে উঠে আসে তখন তা আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয় বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে সকল মানুষের ভেতরেই এই ব্যপার গুলো কাজ করে,যা আমরা সযতনে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা চালাই এবং ব্যর্থ হই। উপর থেকে সরিয়ে রাখতে পারলেও সত্যি বলতে মনের ভেতরে ব্যপারগুলো প্রায়ই মাথাচাড়া দেয়। সচেতন মনে আমরা এগুলো এড়িয়ে গেলেও আমাদের মনের ভেতরে ফাঁক তৈরি করে এগুলো বাগানের ইঁদুরের মতই বারবার বেড়িয়ে আসে। এগুলো উঠে আসে বাস্তবে আমাদের চিন্তার মধ্যে দিয়ে যেগুলোকে আমরা মাথা থেকে বারবার সরিয়ে দিতে চাই যার ফলে সেগুলো মাথায় আরো জেঁকে বসে অথবা বাস্তবে জোড় করে সরিয়ে দেয়া সম্ভব হলেও ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন (নাকি দুঃস্বপ্ন??) হয়ে আমাদের ভিত্তি কাঁপিয়ে দেয়, এবং মাঝে মাঝে মানসিক অসুস্থতা ও বিসন্নতার সৃষ্টি করে। সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, যেসব সম্পর্ক চরমভাবে নিষিদ্ধ সেগুলোই মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করে এবং তা ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ফ্রয়েড থেকে পাই,
সুখের তাড়না বা কামেচ্ছা(libido) তার ভোগ্যবস্তু পছন্দ করার ব্যপারে কোন রকম লজ্জাশরমের তোয়াক্কা করে না, বরং তাকেই বেশি পছন্দ করে যা নিষিদ্ধ : শুধু মাত্র পরস্ত্রীই নয়, বরং অজাচারের অন্তর্ভূক্ত যে কেউ, যেমন পুরুষদের ক্ষেত্রে মা,বোন এবং নারীদের ক্ষেত্রে বাবা বা ভাই- অর্থাৎ যেসব সম্পর্ক মানবসমাজে সর্বসম্মতিক্রমে পবিত্র বলে গৃহিত মানুষ তাদেরই কলংকিত করতে চায়। …………যেসব কামেচ্ছা আমরা মানবস্বভাবের বিরুদ্ধ বলে মনে করি,তারা দেখা যাবে স্বপ্নে উঠে আসার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে। দেখা যাবে তুমুল ঘৃণার ঝড় বয়ে চলেছে : যারা সবচেয়ে কাছের ও প্রিয়, সেই বাপ মা ভাই বোন স্বামী স্ত্রী নিজের সন্তান- এদের খুন করার কিংবা এদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ইচ্ছাও এখানে বিরল ব্যপার নয়। সেন্সর ব্যবস্থায় নিষিদ্ধ এই ইচ্ছাগুলি যেন বাস্তবিক অর্থেই নরক থেকে উঠে আসে। যখন আমরা এদের মর্ম উদ্ধার করতে পারি তখন জেগে উঠে মনে হয় পৃথিবীর কোন সেন্সর ব্যবস্থাই যেন যথেষ্ট কঠোর নয়।
এই ধরনের পরিস্থিতির পর মানুষ প্রচন্ড অপরাধবোধে ভোগে। কিন্তু তারপরও এসকল চিন্তা ঘুরে ফিরে বার বার মানব মনে ফিরে আসে।
বাস্তবিক অর্থে শিশুকাল হতেই মানুষ বা বাচ্চারাও ইন্দ্রিয় তাড়িত হয় বা যৌনকামনার বোধ তাদের ভেতর কাজ করে। পরিবার ও সমাজ শিশুদের উপর নিয়ম কানুনের বেড়াজাল দিয়ে দেয়, যার ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে মানুষের মন থেকে এসব কামনা দূরে সরে যায়। কিন্তু এই সেন্সরশীপ মানুষকে পরবর্তী জীবনে তাড়িত করে এবং তা মানসিক অপরাধ বোধের সৃষ্টি করে। ছোটবেলা হতেই দেখা যায় যে বাচ্চারা তাদের জননেন্দ্রিয় ছুতে পছন্দ করে। কিন্তু পিতা মাতা ও পরিবারের ‘এটা কোরোনা”ওটা ভালোনা”দুষ্টু কোথাকার’ এসব কথাবার্তা এবং এর সাথে ছোট খাট শাস্তি এগুলো থেকে শিশুদের দূরে সরিয়ে দেয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, শহরের শিশুদের সম্পর্কে পিতামাতা বেশি মাত্রায় সচেতন হবার কারনে তাদের মধ্যে লজ্জা বোধ গড়ে উঠে খুব তাড়াতাড়ি, কিন্তু এদিক থেকে গ্রামের শিশুদের উপর বিধিনিষেধের কড়াকড়ি কম হওয়ায় তাদের লজ্জাবোধ গড়ে উঠতে সময় লাগে। তবে এই বিধিনিষেধের খারাপ দিকটা হচ্ছে যে যৌনাঙ্গ ও যৌনতা সম্পর্কিত সবকিছু সম্পর্কে অপরাধবোধের সূচনাও হয় ঐ সেন্সরশীপ থেকে। এই অপরাধবোধটি যেহেতু অতি অহমের স্থানে থাকে তাই ফ্রয়েডের মতে বেশিরভাগ মানুষই সারাজীবন যৌনতা বিষয়ে একপ্রকার অপরাধবোধে ভোগে, যা পরবর্তিতে মানসিক দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। সামাজিক যৌনঘটিত অপরাধের পেছনেও অনেক ক্ষেত্রে এই কড়াকড়ি সেন্সরশীপের ভূমিকা রয়েছে। সেনাদের মধ্যে যুদ্ধকালীন যে যৌনপীড়নের ইচ্ছা জেগে ওঠে বা সেনারা যে যুদ্ধকালীন সময়ে ভয়ানক যৌন অত্যাচার চালায় তার পেছনে তাদের সৈনিক জ়ীবনের প্রচণ্ড রকমের কড়াকড়িই একপ্রকার দায়ী।
(চলুক…) )
তথ্যসূত্রঃ-
১-মনঃসমীক্ষণের ভূমিকা (স্বপ্ন)। সিগমুন্ড ফ্রয়েড। অনুবাদ- অরূপ রতন বসু। দীপায়ন প্রকাশন, কলকাতা
২- সোফির জগৎ। ইয়স্তেন গার্ডার। অনুবাদ- জি,এইচ,হাবিব। সন্দেশ প্রকাশন,ঢাকা
ভালো লাগলো তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি পড়ে। তবে কিছু দ্বিমত আছে।
হুমায়ুন আজাদের ‘নারী’ বইটি নিশ্চয়ই পড়েছেন? বইটিতে তিনি ফ্রয়েডের তীব্র সমালোচনা করেছেন। নারীদের নিয়ে ফ্রয়েড যেসব বিশ্লেষণ দাড় করেছেন, যেসব ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা অনেক আগেই ভুল প্রমানিত হয়েছে। আর তাছাড়া ফ্রয়েডের পর মনোবিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। তার অনেক তত্ত্বই আধুনিক মনোবিগজ্ঞানীরা বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছেন।
আশা করি আগামী পর্বে এসব বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি থাকবে। :rose2:
@নিটোল,
অউক!! আমি “নারী” এখনো পড়ি নাই! তবে ফ্রয়েড নিয়ে আরো পড়তে হবে। নাইলে পরের পর্বে হাত দেয়া টা রিস্কি হয়ে যাবে দেখছি!!!
নিজের ই খুব ভালো লাগছে।একে বারেই সোজা।ঃ) আমাকে একটূ সাহায্য করবেন কি?আমি জানতে চাই যে কি করে আমি লগ ইন করতে পারি ?এবং এই ব্লগ এর কি কোন facebook একাউন্ট আছে কি?অথবা এমন কোথাও যেখানে chat সম্ভব।
খুব ই ভাল লাগছে প্রথম বারের মতন বাংলা লিখে।আবার ধন্যবাদ। 🙂
@আনোয়ার রানা,
না ভাইয়া। আমার জানা মতে এই ব্লগের ফেসবুক একাউন্ট নেই। তবে নিয়মিত হন, কমেন্ট করতে থাকুন। আপনার কথাবার্তা, কমেন্ট ও শিষ্টাচারের উপর ভিত্তি করে মডারেটররা আপনাকে যেকোন একসময় লগইন এর তথ্যাবলি মেইলের মাধ্যমে আপনার এড্রেসে পাঠিয়ে দেবেন।
প্রথম কথা হল নিয়মিত হতে হবে, এবং অতিথি হিসাবে কমেন্ট করে যেতে হবে। তারপরই আপনি নিয়মিত সদস্যদের একজন হতে পারবেন।
এ ব্লগের নামে হয়ত আপনি ফেসবুক গ্রুপ পাবেন, কিন্তু বাস্তবে তার সাথে এই ব্লগের সদস্যদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আরেকটা গ্রুপ আছে যেখানে এই ব্লগের অনেক সদস্যের আনাগোনা আছে। তবে আমি সেই গ্রুপের এডমিন না হওয়ার কারনে আপনাকে সেটা সম্পর্কে তথ্য দেয়ার অধিকার রাখি না।
নামটা বাংলায় লেখার জন্য আবার অনেক অনেক ধন্যবাদ। এবার আপনি দশে দশ পেতে পারেন। তবে বানানের ব্যপারে সদাসর্বদা সতর্ক থাকবেন। :rose2: :yes:
@তানভী, ধন্যবাদ।আপনার কথা সব ভাল লাগলো।তথ্য সমূহের জন্য আবার ধন্যবাদ। :yes:
@আনোয়ার রানা, তানভী ফেসবুকের যে গ্রুপের কথা বলছে সেটা হচ্ছে ‘Atheist Bangladesh’। মুক্তমনার প্রথম সারির লেখকদের কাউকেই ওখানে পাবেন না, শুধু আমাদের মত কতিপয় চুঁনোপুটিদের পাবেন। 😀 😀 😀
এইতো হয়ে আসছে ।পরের বার হতে বাংলায় দেব সব মন্তব্য। :rotfl: ধন্যবাদ
@anwar rana,
খুবইই ভালো লাগল। আমি এখন যাকে পাই তাকেই বাংলা টাইপিং শিখাই!!
এইবার কষ্ট করে নামটাও বাংলায় দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তাইলে একদম দশে দশ!! 😀
sorry bangla type korte pari nahh.. :-Y …ami apnader lekha sobshomoy porii asole kokhono montobbo kora hoie uthe ni.
@ tanvi..lekhata besh valo vabeii agache…chalie jan..r dhonnobad apnake je topic ta tule dhorechen… :clap2:
@anwar rana,
ধন্যবাদ, আর বাংলা টাইপ করাটা এখন মোটেও কঠিন কিছু না। তাই সামান্য চেষ্টা করেন, হয়ে যাবে।
@তানভী,
লেখাটির তীব্র প্রশংসা করে আর আমার স্বভাবসুলভ ভাবে বেশ কিছু উপদেশ দিয়ে একটি মন্তব্য লিখেছিলাম গতরাতে। কিন্তু যেই না লেখা শেষ করেছি অমনি কারেন্ট :-X
@সৈকত চৌধুরী,
এইগুলান হবে না, হবে না। লোডশেডিঙ্গের নাম দিয়া ফাঁকি মারা চলবেনা!
দরকার হইলে আবার পুরোটা লিখে দেন! 🙂
@anwar rana,
http://www.omicronlab.com/avro-keyboard.html
এখান থেকে অভ্র ডাউনলোড করে বাংলা লেখা শুরু করেন। মুক্ত-মনায় সাধারণত ইংরেজি হরফে বাংলা লেখা গ্রহণ করা হয়না।
এই ফ্রয়েড লোকটা তো দুনিয়ার সবকিছুতেই ‘লিবিডো’ দেখছে! আমার জানা মতে তার লিবিডো তত্ব অনেক আগেই বাতিল হয়ে গিয়েছে। মনঃসমীক্ষণে তার অবদান অনস্বীকার্য, কিন্তু লিবিডো নামে এরকম ফাউল একটা তত্ব এই ব্যাটা কেন দিল? :rotfl:
@র্সূয,
ইয়ে ভাইয়া, দিলেনতো বারোটা বাজায়া!! একধাক্কায় বাতিলের খাতায় ফেইলা দিলেন! যাই হোক,ব্যপারটা নিয়ে আমার আরো আরো কিছু পড়াশোনার দরকার আছে। দেখি কি হয়!!
@তানভী, বাতিলের খাতায় কই ফেললাম রে ভাই? আমি তো বললামই মনঃসমীক্ষণ নিয়ে ফ্রয়েডের গবেষণাগুলো খুবই গুরূত্বপূর্ণ। ফ্রয়েডের কিন্তু অনেকগুলো তত্ব আছে, অনেকগুলো বাতিল হয়ে গিয়েছে, আবার অনেকগুলো টিকে গেছে। মনঃসমীক্ষণ টিকাদের দলে।
পারলে মনঃসমীক্ষণের উপর আরো পড়ে আরো কতগুলো লেখা দিয়ে দাও। ব্যাপারটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক, কি বল?
@র্সূয,
হ্যাঁ, ব্যপারটা আসলেই কৌতূহলোদ্দীপক। কিন্তু আপাতত হাতের কাছে আর বই নাই। বই জোগাড় করে পড়ে তারপর লেখার চিন্তা। তাই বেশি ভরসা করে লাভ নাই। 🙁
@র্সূয, হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছে একটা প্রবচন এরকম ছিল যে সমাজতন্ত্র ফ্রয়েডীয়দের মু্গ্ধ করতে পারে না কারণ সমাজতন্ত্রের যৌন আবেদন নেই :lotpot:
@পৃথিবী,
ঠিক বলেছেন। :yes: :lotpot:
হুমম, ফ্রয়েড!!!
ফ্রয়েড পরার সাথে সাথে তার লেখাগুলোর সমালোচনা এবং রিফিউটেশনগুলাও পইড়ো। ফ্রয়েডের অনেক কিছুই ভুল প্রমাণিত হয়েছে বা ঠিক করে বলতে গেলে বলতে হয়, অনেকেই ফ্রয়েডের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে একমত নন।
… টিন এজেই ফ্রয়েড এর সব ভূত চেপে বসলে ফলাফল কি হবে কে জানে 🙂 ।
লেখাটা ভালো হচ্ছে, মাঝখানে থামায় দিও না, চালায় যাও, খুবই মজার একটা বিষয়।
@বন্যা আহমেদ,
দিলেন তো ভেজালে ফালায়া। আমি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছি! তাই ফ্রয়েডের সব পরার পরই তার ভূলের দিকে যেতে হবে। সে অনেক দূরের কাহিনী!! দেখা যাক কি হয়! 😀
টিনএজে ফ্রয়েডের ভূত চাপাটা ভালো না হলেও টিনএজে ফ্রয়েডের কাজ সম্পর্কে আসলে জানা উচিত বলে আমি মনে করি। কারন টিনএজ লাইফে এসব ব্যপার নিয়ে অনেক ফ্রাস্ট্রেশন কাজ করে। তাই আসলে যে এগুলো শুধু টিনএজ প্রবলেম না, কমবেশি সবারই সমস্যাগুলো কাজ করে তা জানলে মনের ভার অনেক নেমে যায়।
বিষয়টা মজার, পড়েও মজা পাচ্ছি। তবে আরো অনেক অনেক বই লাগবে। পাঠ্যপুস্তক গুলা ঘাটতে হবে। তাইলে সহজেই সবধরনের মতামত গুলো জানা যাবে। অনার্স, মাস্টার্সের মনোবিজ্ঞান বই ভাড়া আনতে হবে মনে হয়!!
চলুক…
দেখি হালায় দাইড়া কী কয়… 😉
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
একটা মজার ব্যপার টের পাইসেন? তিন পাগলের তিনটাই হালার দাইড়া!!!! :hahahee:
দারুন হয়েছে। আরো পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। সেই সাথে ভাল লেখার জন্য একটা :rose2:
ওওও! লেখাটা খুবই ভালু হইছে। আগ্রহ নিয়া পড়লাম। আরও দাও।
খাইছে!
@পৃথিবী,
খাইলো ক্যান!!? 😕
তানভী,
বেশ ইন্টারেষ্টিং লাগল!
ফ্রয়েডের ঝাঁপি খুলে বস আমরা পড়ি।
লেখাটা বেশ ভাল হয়েছে।
ফ্রয়েড নাকি পরাবাস্তব ধারার চিত্রশিল্পী সালভাদর দালিকে বলতেন-
তার “অস্বাভাবিক ছবির স্বাভাবিকতাই” তাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে।
এসব বড় অদ্ভুত মনে হয়।
হয়তো মানুষের মনের কানাগলির খোঁজ কেউ জানেনা!
তোমারে দেখি ফ্রয়েডে পাইছে। ঘটনা কি? মেয়ে সংক্রান্ত জটিলতায় পড়সো নাকি? 🙂
আর সিরিয়াস নোট – লেখাটা ভাল হয়েছে। চালায় যাও। মুক্তমনায় আসলেই ফ্রয়েড নিয়ে বিশ্লেষণমূলক কিছু নাই। তুমিই শুরু কর…
@অভিজিৎ,
মেয়ে সংক্রান্ত জটিলতা আমার না হইলেও অন্যদের ঘটনা চার দিক থেকে এমন ভাবে ঘিরে রাখসে যে এখন আমি এসব নিয়া ভাবার সাহস পাইনা!! 🙁
তার উপর আপনের মত চান কপাইল্যা হইলে একটা কথা ছিল!! আপনি তো টেনশন ছাড়াই আমাদের বন্যপুরে পেয়ে গেলেন!! এরকম একজনরে খুইজা বাইর করতে তো আমার জীবন শ্যাষ হয়া যাইবো!! সব কিছু একেবারে ‘পয়েন্টে পয়েন্টে মিল’ এমুন পাব্লিক পাই কই!!? আপনেরা হেল্পান!! 😛
@তানভী, আমি এই মন্তব্যটা পড়ে নিশ্চিত হইলাম যে, খুব তাড়াতাড়ি তোমার ক্লাস শুরু না হইলে সবার খবরাছে। আউলানির মাত্রা যে হারে এক্সপোনেনশিয়ালি বাড়তাসে……
@বন্যা আহমেদ,
আসলেই তাই। কারন ক্লাস শুরু হলে তখন মনে হয় না টানা ৩/৪মাস মুক্তমনায় আসতে পারব। তাই এখন ফাজলামী যা করার করে নেই! তাই আপাতত আরো এক মাস আপনাদের কে এগুলা হজম করতে হবে!!! 😀
(তোরা কেউ জাইসনে উ ফাগলের কাছে!!) 😀
এটা আসলে আমার ফ্রয়েডের “মনঃসমীক্ষণের ভূমিকা (স্বপ্ন)” বইটা পড়ার প্রতি্ক্রিয়া বলা যায়। অনেকটা নিজেকে প্রবোধ দেয়ার মতও বটে!! অর্থাৎ আমার ভেতরে যে মিঃ হাইডটা প্রতিনিয়ত আমায় জ্বালায়, তার জ্বলুনি কমানোর একটা উপায় হিসাবেই এই লেখা। টিনেজ লাইফে এসব যন্ত্রণা মারত্নক রকমের জ্বালাতন করে। তাই এই লেখা দিয়ে ঐ হাইডকে গুল্লি মারলাম :guli:
এর পরের পর্বে আমি বইটার ভিতরে ঢূকে স্বপ্নের বিশ্লেষণ গুলো নিয়ে লেখার আশা রাখছি(যদি ততদিন আবার ধৈর্য থাকে!!)।
@তানভী,
আল্লায় যে তোমাকে ফ্রয়েড পয়গাম্বরের সাথে মোলাকাত করাইলো, এইটাই আমি গোনাহগার রোমান্টিক হুজুরের দোয়া কবুল হওয়ার লক্ষন।
আসলেই কিন্তু মানব জীবনের একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছো। আমি আশা করি তোমার লেখায় ফোটে উঠবে, লজ্জা শব্দের উৎপত্তি কোথায়, কখন, কী ভাবে এবং কেন? আর যৌন শিক্ষা পশ্চিমে, ঘর থেকে স্কুল পর্যন্ত চালু হয়ে গেছে অথচ পূর্বে বিশেষ করে মুসলিম দেশ সমুহে প্রায় সর্বত্রই নিষিদ্ধ, কারণটা কী এবং সমাজে এর সুফল ও কুফল।
@আকাশ মালিক,
এত কিছুর উত্তর আপাতত আমার কাছ থেকে খোঁজ করাটা ইকটু বৃথা। আমি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। শুধুমাত্র তত্ত্বগুলো পড়েছি, এমন কি এর বিপরীতের কথা গুলোও পড়া হয় নাই এখনো। তাই এটা লম্বা সময়ের ব্যপার। আপনার দাবী মেটাতে হলে আরো অনেক পড়াশোনা করে তারপর মাঠে নামতে হবে। :rose2: