আজকের আনন্দবাজারে দেখলাম, তসলিমার ভারতীয় ভিসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন! মনমোহনজীর ওপর আমার ভরসা আছে-এর আগেও তিনি প্রকাশ্যেই তসলিমা ইস্যুতে মৌলবাদিদের সমালোচনা করেছিলেন। প্রণব বাবুও তসলিমাকে যথেষ্ঠই সাহায্য করেছেন। কিন্ত এই ইস্যুতেই যেসব বামপন্থীরা নিজেদেরকে ধর্ম নিরেপেক্ষ বলে বুকে বাজনা বাজিয়ে যান, তাদের মুখোশ খুব বাজে ভাবেই খুলেছে।
ধর্ম এবং ধর্মনিরেপেক্ষতার সহাবস্থান সোনার পাথরবাটি ত বটেই। কারন প্রতিটি ধর্মগ্রন্থই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে অন্যদের গালাগাল দিতে ওস্তাদ। এই ব্যাপারে একেশ্বরবাদি ধর্মগুলি আরো এককাঠি ওপরে। সেই অপ্রিয় সত্যকথনে তসলিমা দক্ষিনপূর্ব এশিয়াতে রাজনীতিবিদদের চক্ষ্যুশূল। বেসিক্যালি তসলিমা ইস্যুতে এটাই প্রমানিত ডান, বাম এইসব ব্যাপার গুলো আসলেই মুখোশ-আসল মুখটা হচ্ছে ভোটবাজি। নাম্বার গেম।
কোলকাতা থেকে তসলিমা বিতাড়িত। সিপিএম বা তৃণমূল কেওই মুসলিম ভোট হারানোর ভয়ে তাকে চাইছে না। বিজেপি তসলিমাকে নিয়ে সেই একই ভোটব্যাবসা করতেই ইচ্ছুক-শুধু মুদ্রার ওপিঠ মাত্র। বিজেপির কাছে মকবুল ফিসা হুসেন আর সিপিএম তৃণমুলের কাছে তসলিমা-ব্যাপারটা একই। ধর্মানুভুতি নামে এক অবুঝ মধ্যযুগীয় সুরসুরির ক্রীতদাস এরা। আবার রাজনীতি করার সময় মুখে বলবে আমরা প্রগতিশীলতার রাজনীতি করি। আমাদের রাজ্যে যারা প্রগতিশীলতার দাবিদার, তারা আসলেই প্রগতিশীলতার দেহব্যাবসা করেন। তসলিমা ইস্যুতে সেটা আরো পরিস্কার।
তসলিমা যেভাবে ধর্মকে সমালোচনা করেন-আমি সেই ভাবে ধর্মকে সমালোচনা করার পক্ষপাতি না। কারন ধর্মগুলি বিবর্তনের পথে মনুষ্য সমাজকে ” রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস” দিয়েছে। সমাজ এবং নৃতত্ববিজ্ঞানের চোখে, মনুষ্যসমাজের সেই বিবর্তন না বুঝলে এবং বোঝালে, শুধু শুধু ধর্মের সমালোচনা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কিন্ত তসলিমা বা অন্যকারোর সেই সমালোচনা করার অধিকার একটি লিব্যারাল ডেমোক্রাসিতে থাকবে-সেই জায়গাটা কেড়ে নিলে, কালকে আমরা যারা ধর্ম এবং সমাজের বিজ্ঞান সম্মত সমালোচনা করি-আঘাত এবং চাপটা আমাদের ওপর ও আসবে।
আমি বিশ্বাস করি পশ্চিম বঙ্গ এবং বাংলাদেশের এক বৃহৎ অংশের হিন্দু এবং মুসলিম ভাইরা আমার মতনই সত্যিকারের লিব্যারাল ডেমোক্রাসি-প্রগতিশীল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। এবং যেসব প্রগতিশীল রাজনীতিবিদরা, ( আমাদের রাজ্যে প্রায় সবাই, ঠগ বাছতে গাঁ উজার হবে) যারা মোল্লা এবং সব ধর্মের মৌলবাদিদের কাছে, প্রতিনিয়ত দেহ বেচে চলেছেন, তাদেরকে আমরা খুব ভাল ভাবেই চিনে গেছি। সমস্যা হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে আমরা কোন জোরালো জনমত গড়তে পারছি না। কারন আমাদের এই সেকশনটা সংগঠিত না। ভারত এবং বাংলাদেশের নাগরিক সমাজকে একত্রিত হয়েই এই সব প্রগতিশীল রাজনৈতিক বেশ্যাদের মুখোশ খোলা দরকার।
ধর্ম কি রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসবর্দ্ধক ছিল নাকি উপজাতমাত্র বা স্প্যান্ড্রেল ছিল, এটা তো আমার মনে হয় মীমাংসিত না। কিছু সূত্র থাকলে দেন।
এই লেখাটা এ প্রসঙ্গে পড়তে পারেন।
@ধ্রুব,
আমি একমত না লেখকের সাথে। ধর্মের সাথে রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসের ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ নিবিড় বলেই মনে হয়।
@বিপ্লব পাল,
হতেই পারে। আমি বলতে চাচ্ছি এটা কি নিশ্চিতভাবে বিজ্ঞান জেনেছে? বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা তো আমার শেষ জানা পর্যন্ত – বিশ্বাস কি সুবিধাদায়ক ট্রেইট না উপজাত মাত্র, তা নিয়ে তর্কে ছিল। কিন্তু আপনার রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস সংক্রান্ত কথাটা দেখে মনে হলো আপনি মীমাংসিত হিসাবে ধরে নিচ্ছেন। সে জন্য সূত্র চাচ্ছি। তা না হলে এটা এখনো আপনার মনে হওয়া পর্যন্তই এবং বিষয়টা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীদের চলমান গবেষণার বস্তু।
ওখানে আমি/লেখক কিন্তু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের বিশ্বাস-সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো নিজস্ব মতামত ছাড়া উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আপনি কোন কথার সাথে একমত না বোঝা গেল না। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের “ধর্ম হলো স্প্যাড্রেল” প্রকল্পের সাথে একমত না?
আপনার জন্য আরেকটি লিঙ্ক:
এগুলো বিচার্য, যাচাই-সাপেক্ষ প্রকল্প। আমি হুট করে বলে দিতে পারি না, বিশ্বাস হলো স্প্যাড্রেল বা বিশ্বাস হলো রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসবর্দ্ধক, এটাই আমার মনে হচ্ছিল।
এপাড়ের বিখ্যাত বামপন্থী বদরুদ্দিন উমরের “ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে” প্রবন্ধ সংকলনটা পড়ছিলাম। সেখানে তিনি বারবার দাবি করেছেন ভারতের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল অঞ্চলগুলো হল কম্যুনিস্ট শাসিত অংশ 😛
@পৃথিবী, সংশোধন- “প্রতিক্রিয়াশীলতা-বিবর্জিত অঞ্চল”
@পৃথিবী, হাস্যকর দাবি। সবাই ভোটের জন্যে ব্যাঙাচি লাফাচ্ছে।
লেখাটা ভাল লাগল । সমাধান মনে হয়না কোনো মন্ত্রী বা মিনিস্টার দিতে পারবে ।
সমাধান একমাত্র সচেতন নাগরিকগন হতে পারেন। কিন্তু ঐ ঠক বাছতে গাঁ উজাড় । যে এগিয়ে আসবে সেই পড়বে কোপানলে , আর একত্রীত জনগন কখোন পাওয়া যাবে না । সুতরাং
ফলাফল যে তিমিরে সেই তিমিরেই থাকবে । গনতন্ত্রের কথা আমরা মুখে বলি বটে , আসলে কী
দেশে গনতন্ত্র আছে ? থাকলে তসলিমা কেনো আজ দেশ থেকে বিতাড়িত ?
বিপ্লবদা, বানান টা মনে হয় ব্যবসা হবে। লেখার সাথে একমত।
ফুকোর এক্টা ক্ষমতার ত্ত্ত্ব আছে। যার অর্থই হচ্ছে ক্ষমতার একটা বড় উৎস জনগণের স্বীকৃতি। ইসলাম এবং কোরানকে স্বীকার করে সংস্কার করতে গেলে ভারতের মতন অবস্থা হবে। বিবেকানন্দ কি হিন্দুদের পালটাতে পেরেছেন? কিছুটা বদলেছেন-কিন্ত আসলে যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই পরে আছে দেশটা। ধর্ম সংস্কার মন্দের ভাল-কিন্ত আসলেই ইসলামের ক্ষমতা তা বাড়াবে কমাবে না। ভারতে বিবেকানন্দ হিন্দুত্বের ক্ষমতা বাড়িয়েছেন-কমান নি। কারন উদারপন্থী গণতন্ত্রের সাথে বিবেকানন্দের আদর্শের বিরোধ নেই-কিন্ত্ বাস্তবে বিবেকানন্দকে মাথায় রেখে হিন্দু ধর্মের সেই বেনোজল ই ঢুকছে। লাভ কিছু হয় নি।
বিপ্লব দা, অনেক দিন পরে আপনার লেখা দেখে ভাল লাগলো্, তবে আরেকটু বড় করে লিখলে ভাল হতো।
আমি একটা ব্যাপার নিয়ে খুব ভাবছি। ইদানিং আমাদের এখানকার বেশ কজন নামকরা মুক্তবুদ্ধির লোককে দেখছি, ধর্ম দিয়ে ধর্মের অপব্যাবহার বা অপ্রয়োজনীয় ব্যাবহার রোধ করার চেষ্টা করছেন।
যেমন আমাদের বাংলাদেশের সংবিধানের শুরুতে ” বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” আছে। এটাকে সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার জন্য উদাহরন হিসাবে মুহাম্মদের মদিনা সনদ ও হুদাইবিয়া সন্ধির উদাহরন টানা হচ্ছে। মানে রাষ্ট্রের যে কোন ধর্ম নেই মুহাম্মদ নাকিতা অগেই বুঝতে পেরেছিলেন। আমার কাছে এই কৌ্শলটাকে খুবই আত্মঘাতী মনে হয়। কারন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে মুহাম্মদের নির্দেশিত অমানবিক আচরনে বহু নজির আছে। যেমন জিজিয়া কর।
আওয়ামিলীগ ও একই কাজ করছে। বলছে ইসলামপন্থী দলগুলো প্রকৃ্ত ইসলামের অপব্যাখ্যা করছে। ইসলাম আসলে উদার ও মানবিক।
এর ফলাফল কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
@ বিপ্লব পাল,
এই সেকশনটা কেন সংগঠিত হতে পারছেনা না সে সম্পর্কে একটু আলোচনা করলে ভাল হয়।
@ব্রাইট স্মাইল্,
সংগঠনের মূল শিকড়-একটা উদ্দেশ্য-যা জীবিকার সাথে জড়িত-জীবনের সাথে জড়ি্ত। সেখানে ব্যাপারটা যাচ্ছে না।
@বিপ্লব পাল,
তা হলেতো প্রগতিশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সমাজ সংগঠিত হওয়ার বা জোরালো জনমত গড়ার সম্ভাবনাও খুব ক্ষীন মনে হচ্ছে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
যেকোন জিনিসের শক্তিশালী দিকটাই সব থেকে দুর্বল দিক। লিব্যারালরা সবাই নিজের স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে চাই-এটা যেমন ভাল-ঠিক তেমনই নিজেদের স্বাধীনতা স্পৃহাটাই সংগঠন গড়ে তোলার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এই সমস্যা, মানে রাজনীতিবিদদের ভন্ডামি দুর করার কি কোন সহজ সমাধান আছে?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী কি ইচ্ছে করলেই কাউকে নাগরিকত্ব দিতে পারেন?