সেক্স অনেক আদিম। ডায়নোসর থেকেও বৃদ্ধ । প্রথম সেক্সের বিবর্তন ঘটেছিল বলে জানা যায় আনুমানিক ২ -২.৫ বিলিয়ন বছর অতীতে । এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেক মতভেদ থাকলেও আমরা আজ নিশ্চিত যে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর এ পৃথিবীতে ভালোবাসা নামক কোনো অনুভূতি ছিল না। এই গ্রহ জানতো না ভালোবাসা কাকে বলে! সেলফিশ জিন তখন অন্ধভাবে তার অনুলিপি তৈরি করে চলেছিল। এ বাস্তুতন্ত্র ছিল শুধুই ভালোবাসাহীন এক অন্ধ অ্যালগোরিদম। কিন্তু ঠিক কেন যৌন প্রজনন বিবর্তিত হয়েছিল? কেনো অ্যাম্পেন বৃক্ষের মতো আমরা অযৌন প্রজনন পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধি করি না অথবা গ্রীন ফ্লাইয়ের মতো কেন একটি জীবের গর্ভে সন্তানের ভ্রূণ ও আর সেই ভ্রূণের ভেতর নাতনির ভ্রূণ একই সাথে জন্ম হয় না? এটি বিভ্রান্তিকর এক প্রশ্ন। রেড কুইন হাইপোথিসিস অনুসারে, যৌন প্রজননের বিবর্তন ঘটেছে প্যারাসাইটদের প্রতিহত করার জন্য! করোনাভাইরাস যেমন সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে বছরের পর বছর অবরুদ্ধ করে রেখেছে ঠিক তেমনি আদিম প্যারাসাইটরা জীবদের শরীরের মধ্যে এমন এক প্রতিকূলতা তৈরি করেছিল যা থেকে মুক্তির জন্য যৌন প্রজনন জন্ম হয়েছে! আসলে প্যারাসাইটরা জীবদের দেহে সহ-বিবর্তিত হয়। অযৌন প্রজনন পদ্ধতিতে জিনপুলে যথেষ্ট ভেরিয়েশন তৈরি হয় না কিন্তু যৌন প্রজননের মাধ্যমে আপনার জিন অপেক্ষাকৃত ভালো জিনের সাথে মিশ্রিত হওয়ার (Recombination) সুযোগ পায় আর এ প্রক্রিয়ায় জীবদের মধ্যে নতুন জেনেটিক ডিফেন্স তৈরি হয়। দ্রুত বদলে যাওয়া সার্ভাইভাল মেশিনগুলো প্যারসাইটদের হয়তো ধোঁকা দিতে পারতো! বিলিয়ন বছর অতীতের আদিম প্যারাসাইটরা আমাদের পূর্বসূরিদের উপর যে বিবর্তনীয় চাপ জন্ম দিয়েছিল সেই চাপ থেকেই উদ্ভব যৌন প্রজনন! এই হাইপোথিসিস অনুসারে, সেক্স ও রিকম্বিনেশনের সুবিধা হলো এটি দুর্লভ ফেনোটাইপ উৎপাদন করতে পারে। আর এতে করে জীবের শরীরে সহ-বিবর্তিত বায়োলজিক্যাল এনিমিদের এটি খুব সহজেই এড়িয়ে যেতে পারে। সেক্স যেন প্যারাসাইটদের বিপক্ষে কোনো ভ্যাক্সিন অথবা এন্টিভাইরাস!
আমরা সেক্স পেয়েছি জীবাণুদের কাছ থেকে আর আমাদের যৌনবিজ্ঞানের আদি গুরু ছিলেন ব্যাক্টেরিয়া! কিন্তু তাদের মধ্যে তখনও ভালোবাসা আসেনি। এ পৃথিবী তার কক্ষপথে আসার পর থেকে আনুমানিক সাড়ে তিন বিলিয়ন বছর ভালোবাসা ঘুমিয়ে ছিল পৃথিবীর অণু-পরমাণু আর আমাদের আদিম পূর্বসূরিদের নিউরাল সিগনালে। ঘুমিয়ে ছিল কবিতা ও উপন্যাস ভালোবাসাহীন। ভালোবাসা এসেছে তারও অনেক অনেক পরে। আমাদের মস্তিষ্কের বর্তমান ভালোবাসার ব্রেন সার্কিট আনুমানিক ২০০,০০০ বছর অতীতের। আজ থেকে ৭০, ০০০ বছর পূর্বে একজন আদিম শিকারী সংগ্রাহক তার প্রেমিকাকে দেখলে তার মস্তিষ্কের ভেতর যে ভেসোপ্রেসিন, অক্সিটোসিন, ডোপামিন ও নরপাইনফ্রাইনের উন্মাদনা অনুভব করতো একুশ শতাব্দীর একজন আধুনিক সেপিয়েন্সও কোনো সেপি নারীর উপস্থিতিতে একই উন্মাদনা অনুভব করে। আর এজন্য আমাদের মনে হয় ভালোবাসা এত আদিম। ইন্টারনেট আমাদের ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে পাওয়ার পদ্ধতি পরিবর্তন করে দিয়েছে কিন্তু আমরা কি জিনগত দিক থেকে এ রোবটিক্স সভ্যতার দাপটে আদৌ পরিবর্তন হয়েছি?
আজ থেকে ৬ মিলিয়ন বছর পূর্বেও আমাদের পূর্বসূরিরা হারেম ও হর্ডে বাস করতো। একজন নারী অজস্র পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িত ছিল। সে সম্পর্কের মূল্য আজও মানব সভ্যতাকে দিতে হচ্ছে নারীর অর্গাজমের জটিলতার ভেতর দিয়ে। একগামী সম্পর্ক তখনও বিবর্তিত হয়নি। আমাদের মস্তিষ্কে রোম্যান্টিক ভালোবাসা ও একগামিতার আদিম ব্রেন সার্কিট বিবর্তিত হয়েছিল আজ থেকে ৪.৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে আর্ডিওপিথিকাসদের সময়ে। ঠিক সে সময়েই আমাদের পূর্বসূরি আর্ডির দাঁতের ফসিলে একগামী ভালোবাসার চিহ্ন পাওয়া যায়। ৩.৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে অস্ট্রোলোপিথের সময়ে লুসির ভালোবাসার প্যাটার্ন কেমন ছিল অথবা আজ থেকে ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে হোমো হ্যাবিয়েলসদের ভালোবাসা, বিরহ, বিচ্ছেদ অথবা বহুগামিতার প্যাটার্নই বা কেমন ছিল? গবেষণায় জানা যায় তাদের মধ্যেও সাময়িক একগামিতার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেটা ৪ বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি। কিন্তু কেন? জানা যায় নৈতিকতার বিবর্তন ঘটেছে আনুমানিক ৭ লাখ বছর পূর্বে। যদি আদিম সমাজ বহুগামীই হবে তবে কেন আমরা পার্মান্যান্ট একগামিতার যুগে প্রবেশ করেছি? কেন এর আগে নৈতিকতা বিবর্তিত হয়নি? এ সকল প্রশ্নের উত্তরের সাথে জড়িয়ে আছে তোমার, আমার এবং মানব সভ্যতার মনস্তাত্ত্বিক ইতিহাস। এ বইতে আমাদের কথা হবে পরকালে বিশ্বাসী নিয়ান্ডারথালদের ফসিলের সাথে। আমরা সাক্ষাৎ করব হোমো এরেক্টাসদের মস্তিষ্কের এনাটমির সাথে। আরও পড়ুনঃ পরকীয়া ও ডিভোর্সের জিন
একুশ শতাব্দীতে এসে আমাদের ভালোবাসার আদিম ব্রেন সার্কিট কতটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে? উপবিষ্ট সমাজব্যবস্থা নারী ও পুরুষের মাঝে যে বৈষম্যের জাল বিস্তার করেছে সেখান থেকে আমরা কি এখনো বেরিয়ে আসতে পেরেছি? এ বই আপনাদের ভালোবাসার ৩০ মিলিয়ন বছরের এলগোরিদম সম্পর্কে কথা বলবে। ভালোবাসার আদি বিবর্তন , একগামিতা, বহুগামিতা , রোমান্টিক ভালোবাসা, গেট টুগেদার, ট্রায়াল ম্যারিজ, নারীবাদ- পুরুষতন্ত্র, ডিভোর্স , ঈশ্বর, পরকাল ও মরালিটির প্রায় তের মিলিয়ন বছর সময়ের একটি সামষ্টিক ধারণা পাবেন এ বইতে। আর অবশেষে আমরা দেখতে পাবো কীভাবে ইন্টারনেট আমাদের ব্রেনকে ৩.৬ মিলিয়ন বছর অতীতের অস্ট্রোলোপিথিকাসদের আদি সেক্স লাইফ ফিরিয়ে দেবে যেটাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন ‘ট্রান্সপারেন্ট এইজ’। নিয়ান্ডারথাল থেকে শুরু করে হোমো এরেক্টাস , হোমো হ্যাবিয়েলস থেকে শুরু করে আদিম এনথ্রোপোডিয়ার সবার সাথে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দেবে এ বইটি। তারা বলবে, তাদের ভালোবাসার গল্প। এ গ্রন্থটি হবে আপনার জন্য একটি টাইম মেশিন যেখানে ভ্রমণ করে আপনি এক্সপ্লোর করবেন, মানব মনের এক একটি ফসিল। মনকে পড়ার জন্য টাইম মেশিন প্রয়োজন এটা ভাবতেই তো এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে তাই নয়? সক্রেটিস কি জানতেন এ টাইম মেশিন সম্পর্কে ?
বইয়ের নামঃ ভালোবাসার ফসিল
লেখকঃ এ এইচ লিহন
প্রকাশনীঃ গল্পীয়ান
প্রচ্ছদঃ সজল চোধুরী
বইটি পেতে যোগাযোগ করুন ”হাইপারস্পেসে” ।
পুরুষবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ এগুলো কি বিবর্তনের ফসল? আর পুরুষতন্ত্র এসেছিলো কিভাবে? বিবর্তনের মাধ্যমে? এগুলো নিয়ে বলতেন যদি।