একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে বিজ্ঞান শিক্ষার কারণে হেনস্থা করে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে। এই গুণী শিক্ষকের বিজ্ঞান-জ্ঞানের পরিধি দেখে আমি অভিভূত। আমি যখন স্কুলে পড়তাম সেই সময়ে আমার স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক ক্লাশের পাঠ্যসূচীর বাইরে খুব একটা কিছু জানতেন না। শুধু স্কুল কেনো, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষকদের মাঝেও জ্ঞানচর্চার আন্তরিকতা নিয়ে পাঠ্যসূচীর বাইরের আলোচনায় অভিভূত হবার মত তেমন কিছু মনে করতে পারছি না। অথচ শুধুমাত্র ভাল করে পড়ানোর কারণে প্রকৃত শিক্ষককে অপমানিত হয়ে জেলহাজতের বাসিন্দা হতে হয়েছে।

ছাত্রদের সাথে হৃদয় মণ্ডলের প্রায় ১৩ মিনিটের কথোপকথনের একটি ট্র্যান্সক্রিপ্ট ফেসবুকে বেরিয়েছে। ট্র্যান্সক্রিপ্টটা নীচে কপিপেস্ট করলাম। এই অল্প সময়ের মধ্যে হৃদয় মণ্ডল ছাত্রদেরকে অনেক মূল্যবান জ্ঞান দান করেছেন। এবং সেটা দিয়েছেন অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে। কোন একটা বাক্যে তাঁর প্রফেশনালিজমের ঘাটতি দেখা যায় না। তিনি একজন বিরল প্রতিভাবান শিক্ষক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ সরকার যদি কোন শ্রেষ্ঠ স্কুল শিক্ষককে এওয়ার্ড দিতে চায়, তবে হৃদয় মণ্ডলকেই বেছে নিতে হবে। অথচ হৃদয় মন্ডলের জায়গা হয়েছে জেল হাজতে। “এরই নাম বাংলাদেশ।”

কপিপেষ্টঃ

“মুন্সীগঞ্জের রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস টেনের ছাত্রদের সাথে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের কথোপকথনের ট্রান্সক্রিপ্ট। প্রায় ১৩ মিনিটের এই টেপটি ওই ক্লাসের ছাত্রদেরই রেকর্ড করা, যেটা পরে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। ছাত্র-শিক্ষকের এই আলাপটির বড় একটা অংশই মুন্সীগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় ছিলো, তাই ট্রান্সক্রিপশনের ক্ষেত্রে মুন্সীগঞ্জের লোকজনের সাহায্য নিয়ে প্রমিত বাংলায় এডিট করা হয়েছে। হৃদয় মণ্ডলকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক ও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।

[00:00]

স্যার: কেউ দেখেছে? কোন কিছুইতো কেউ দেখেনি। এটা তারা বিশ্বাসের উপর রেখেছে। তোমরা যখন বিজ্ঞান আরো পড়বে তখন দেখবে বিজ্ঞানে আরো কতকিছু আসছে। আসলে আমরা বুঝে উঠতে পারি না বা চাই না সত্য জানতে। দেখো উন্নত বিশ্ব ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে। আর আমরা ধর্মান্ধ হচ্ছি।

[00:35]

ছাত্র: বহু ধরনের কথা ও থিওরিতো ধর্ম থেকেই এসেছে। বিজ্ঞানীরা ধর্ম থেকে এসব আবিস্কার খুঁজে পেয়েছেন।

স্যার: কোন কথা ধর্ম থেকে নেয়া হয়নি। কোনভাবেই না। বরং বিজ্ঞান থেকে নিয়ে ধর্ম চলছে, ধর্ম বানানো হয়েছে।

[01:10]

ছাত্র: আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) বহু বিজ্ঞানের সকল উৎস দিয়ে গেছেন। সাড়ে চার হাজার বছর আগে আমাদের হযরত মোহাম্মদ (স:) এসব বিজ্ঞানের কথা বলে গেছেন।

স্যার: সাড়ে চার হাজার বছর আগে কীভাবে? হযরত মোহাম্মদ তো ছিলেন সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগে। বিজ্ঞানীরা আবিস্কার শুরু করেছেন বহু আগে থেকে। মানে হযরত মোহাম্মদের আমল থেকেই বিজ্ঞান শুরু হয়েছে এমনটা তো নয়।

[01:30]

ছাত্র: হ্যাঁ স্যার, হযরত মোহাম্মদ (স:) এর পূর্বে যারা বলে গিয়েছেন তাদেরটায় কোন যুক্তি পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) যা বলে গেছেন তা সব যুক্তিপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছে৷

স্যার: হযরত মোহাম্মদ এমন কী বলে গেছেন যার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা তার কাছ থেকেই পেয়েছেন? এমন কোন আবিস্কার ছিলো যা বিজ্ঞানীরা আগে করতে পারেননি?

এটা বিজ্ঞানের ক্লাস, ধর্মের ক্লাস নয়। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত। আর ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস।

[02:00]

ছাত্র: স্যার আছে, অনেক প্রমাণ আছে যে ধর্মই বিজ্ঞানসম্মত।

স্যার: ধর্মের কোন প্রমাণ নেই। শেষমেশ ধর্মের ব্যখ্যা কোথায় যায় জানো? শেষমেশ ওই ঈশ্বর দেখে, ঈশ্বর সমাধান দেবেন, পরকালে বিচার হবে। এসব বিশ্বাসের বিষয়। কোন প্রমাণ নেই৷

[02:15]

ছাত্র: একটি বই আছে, পড়বেন। নাম হচ্ছে ‘থিওরি অব এভরিথিং’। পাবেন ডিমের ভেতর কুসুম কীভাবে আছে তা আল্লাহ আগেই বলে দিয়েছে৷

স্যার: আমি সব পড়েছি। না পড়লে কি বিজ্ঞান পড়ানোর শিক্ষক এমনিই হয়েছি? এগুলো সব গোঁজামিল দাবী। ওই বইয়ে এমন কিছুই লেখা নেই। বস্তুত ধর্ম মানুষের লেখা৷ সব ধর্ম মানুষের লেখা।

[02:45]

ছাত্র: স্যার বিজ্ঞানও তো মানুষের লেখা৷

স্যার: হ্যাঁ বিজ্ঞান অবশ্যই মানুষের লেখা।

[02:55]

ছাত্র: স্যার, ধর্মের প্রমাণ আছে।

স্যার: ধর্মের কী প্রমাণ আছে আমাকে দেখাও।

[02:04]

ছাত্র: কী যে বলেন স্যার! সারা বিশ্বে মুসলিমদের নিয়ে গবেষণা হয়েছে। সবাই দেখে ইসলামই সত্য। এটাই সত্য ধর্ম আর বাকি সব মিথ্যা। এটা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছে।

স্যার: কোরআন যদি বিজ্ঞানের উৎস হয়ে থাকে তবে দেখাও কোরআন পড়ে কতজন বিজ্ঞানী হয়েছেন? পৃথিবীর ৯০% বিজ্ঞানী খ্রিষ্টান বা খ্রিষ্টান পরিবার থেকে আসা।

[03:24]

ছাত্র: স্যার আমরা যেটাকে ধর্ম বলছি, এটাকে যদি আমরা [বিজ্ঞানের] দিকে নিয়ে যাই তবে সেটাই বিজ্ঞান। আর যদি বিজ্ঞানকে ধর্মের দিকে নিয়ে যাই তবে ওটাই বিজ্ঞান। মূল কথা হচ্ছে দুটোই এক জিনিস।

স্যার: এই যে খ্রিষ্টানরা এতোকিছু আবিস্কার করে, তাদের ধর্মের নিয়ম সেভাবে কেউই মানে না। তারা কি ধর্ম ব্যবসা করতে পারে না? অবশ্যই পারে। তারা ধর্ম ব্যবসা করছে কি? তারা ধর্মের ধারেকাছেও নেই। তারা আছে আবিস্কার নিয়ে৷ এই মুসলমানরা এগিয়ে যেতে হলে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকতে হবে৷ ধর্মান্ধতা বাড়লে সেটা সম্ভব নয়৷ এই চৌদ্দ শত বছর আগে ইসলাম এসেছে। বিজ্ঞান উন্নত হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ বছরে৷ তাহলে এতোদিন হুজুররা কী করেছেন? কী আবিস্কার করেছেন তারা?

[04:40]

ছাত্র: শুরু থেকেই হুজুররা যা বলতেন তাই বিজ্ঞান হিসেবে মেনে নেয়া হতো।

স্যার: তোমাদের হুজুররা বিজ্ঞানের কী পড়েছেন? কী জানেন? তারাতো বিজ্ঞান পড়েইনি সে অর্থে। এই যে ডারউইনের কথা বললাম, ডারউইন কি ধর্ম পড়ে বিজ্ঞানী হয়েছেন?

[05:08]

ছাত্র: স্যার, ডারউইন যে ধর্ম পুস্তক পড়েনি তার প্রমাণ কী স্যার?

স্যার: আরেহ ধর্ম পুস্তক পড়েই না ওরা বেশিরভাগ।

[05:10]

ছাত্র: স্যার, নাস্তিক ঠিক আছে। কিন্তু ওরা ধর্মের পুস্তক পড়েই এসব আবিস্কার করেছে। ধর্মের প্রমাণ পেয়েছে ওরা।

স্যার: আরেহ আবিস্কারগুলো ধর্ম পুস্তক থেকে আসেইনি। কোন সুরা কোন হাদিসে আছে আবিস্কারের কথা? আবিস্কারের সূত্র? ধর্মটাতো কাল্পনিক বিশ্বাস। বাস্তবতার সাথে ওর সম্পর্ক কী? হ্যাঁ স্রষ্টা আছেই। স্রষ্টা না থাকলে গাছপালা কোথা থেকে এলো? এই গাছপালাগুলো তো মানুষ সৃষ্টি করেনি। মাটি মানুষ তৈরি করতে পারে না। মায়ের পেটে বাচ্চা মানুষ তৈরি করতে পারে না, ডিম থেকে বাচ্চা হওয়া। পাওয়ারতো থাকতে পারে। পাওয়ার থাকলে সেটা কার? সেটাই আল্লাহ, সেটাই ঈশ্বর। এই যে হযরত মোহাম্মদ। এরা কী? এরা হইলো মহাপুরুষ। এরা কেউ ঈশ্বর নন।

[06:15]

ছাত্র: এরা আমাদের জ্ঞান দিয়েছেন।

স্যার: নৈতিক জ্ঞান হয়ত। ধর্ম মানুষকে জীবনযাপন এর কিছু নিয়ম বলে দেয়। মানুষ সেটা পালন করে। এর বাহিরে কি কিছু নেই? অবশ্যই ধর্ম পুস্তকের বাহিরে অনেক কিছুই আছে৷ ধর্ম এসেছেই মানুষকে শৃঙ্খলায় রাখার জন্য। আর কোন কিছুর জন্য নয়।

এই যে স্রষ্টা আছে বলা হয়, আমরাতো দেখিনি। যে জিনিস দেখিনি সে জিনিস নিয়ে মারামারি কাটাকাটির কোন মানে আছে? তোমার বিশ্বাস তোমার বিশ্বাসের জায়গাতেই রাখো। বিজ্ঞান হচ্ছে প্রমাণ সাপেক্ষ। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়৷ আর ধর্মে অন্ধ হলে যা হয়, এই গরমে জোব্বা পরে থাকে। এটাতো বিজ্ঞানসম্মত নয়৷

এই যে তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাস হয়ে বাতি জ্বলে এটা বিজ্ঞান। এই যে A+B হোলস্কয়ারের সূত্র, এগুলো হিসেব করে মেলানো। এটাই বিজ্ঞান যা প্রমাণ সাপেক্ষ। এগুলো কি ধর্মগ্রন্থে আছে? আমরা অনেক সময় বিজ্ঞানকে ধর্মের সাথে মিলাই যা ঠিক নয়। হ্যাঁ ধর্ম মানুষকে সুশৃঙ্খল রাখে। বিজ্ঞান আলাদা কথা। বিজ্ঞান বিজ্ঞানই।

[08:27]

ছাত্র: ‘প্যারাডক্সিকাল সাজিদ’ বইটা পইড়েন স্যার। গুগল প্লে স্টোরে পাবেন।

স্যার: আমি পড়েছি। প্রতিনিয়ত আমি বিজ্ঞানের বই পড়ি। এসব গোঁজামিলের বইও আমার পড়া আছে। ওই বই থেকে বিজ্ঞান শিখতে হবেনা আমার৷ এই যে মুসলমানরা মুসলমানের মত ধর্ম প্রচার করে, হিন্দুরা হিন্দুদের মত আর খ্রিষ্টানরা তাদের মত করেই ধর্মের ব্যখ্যা করে। এই জাত আর ধর্ম নিয়েই দ্বন্দ্ব।

[09:00]

ছাত্র: আমরা যদি বলি, ধর্মের বিভিন্ন জিনিস যুক্ত করে বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের ক্রেডিট নিচ্ছে?

স্যার: আরেহ বিজ্ঞান তো প্রমাণ দিয়েই আসছে। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক কী? নেয়া দেয়ার প্রয়োজন কেন আসবে? বিজ্ঞান তো কোন বিশ্বাস নয়।

[09:12]

ছাত্র: আমরা যদি ১৪০০ বছর পেছনে যেতে পারতাম তবে তো আমরা দেখতেই পেতাম আমদের সামনে সব প্রমাণ চলে আসতো।

স্যার: ধর্ম পুস্তক ১৪০০ বছর আগের লেখা৷ তার আগে কোথায় ছিলো? এর আগে মানুষ ছিল না? সভ্যতা ছিল না? তবে?

[09:26]

ছাত্র: কোরানের আগেও ৩ টি বই ছিলো।

স্যার: যবুর ছিলো, ইঞ্জিল তো ২৫০০ বছর আগের। আর বৌদ্ধদের ছিলো। আমাদের হিন্দু ধর্মের বেদ ছিলো বড়জোর সাত হাজার বছর আগের। তাতে লাভ কী ? মানুষ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীতে। তখন এসব পুস্তক কোথায় ছিলো? তাহলে? এখন আমরা যতটুকু পাই সেটুকু নিয়েই ধর্মের কথা বলি৷ আমরা এখন ধর্ম নিয়ে গ্যাঞ্জাম করি! কেন করি? আমরা গ্যাঞ্জাম করব না। শিখব, জানব। কোনপ্রকার ঝামেলা করব না ধর্ম নিয়ে। অর্থাৎ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোন মানে নেই। জিনিসটা হচ্ছে তোমরা বুঝে কাজ করবে৷ ধর্ম একটা কথা বললেই ঝাঁপিয়ে পড়বে না। ধর্ম বলল কান নিয়েছে চিলে আর চিলের পেছনে দৌড়াতে হবে ব্যপারটা এমন নয়।

হনুমান নাকি সূর্যটাকে কানের ভেতর রেখেছে। আমাদের হিন্দু ধর্মের যারা বয়স্ক তারা খুব বিশ্বাস করে যে এই হনুমানের কানের মধ্যে সূর্য থাকে, এখন প্রশ্ন হচ্ছে হনুমান যদি কানের ভেতর সূর্য রাখে তবে পৃথিবীর ১৩ লক্ষ গুন বড় হচ্ছে সূর্য। এই পৃথিবী সূর্যের ১৩ লক্ষ গুন ছোট! এই ছোট পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে হনুমান কিভাবে তার কানের ভেতর সূর্য রাখে?

এই রকম গাঁজাখুরি গল্প যারা করে তাদের গল্প বিশ্বাস করতেই হবে? কেন আমরা এসব বিশ্বাস করব? কমবেশি সব ধর্মের মধ্যেই এরকম গাঁজাখুরি গল্প আছে। আমরা সচেতন থাকবো। এসব বলতে গেলেই বিতর্ক। যাক তোমাদের পড়ানো শুরু করি। এসব বিতর্কে যেয়ে লাভ নেই।

ধর্মের ভালো দিকও আছে খারাপ দিকও আছে। ভালো না থাকলে খারাপ এলো কোথা থেকে? এই যে দিন দেখতে পাচ্ছো, এই দিন কীভাবে এলো? রাত আছে বলেই তো আমরা দিন বলতে পারি।

এই যে কালো ব্যাগ, এটা কালো তুমি বুঝলে কীভাবে? এই যে লাল ব্যাগ, তোমরা সবাই কেন লাল দেখতে পাচ্ছো?

এই যে বিজ্ঞান, বিজ্ঞান এরকমই স্পষ্ট বিষয়। বিজ্ঞান হচ্ছে বাস্তবতা।

এই গাঁজাখুরি গল্প করে, এসব কারা করে? খারাপ মানুষেরা করে।

এই গাঁজাখুরি গল্প খারাপ মানুষগুলো করে তাদের ব্যবসা টেকানোর জন্য।

এই যে হনুমানের গল্প, হিন্দুদের মধ্যে যারা পড়াশোনা করে তারা কিন্তু এসব বিশ্বাস করে না। যারা মূর্খ লোক আছে তারাই এসব বিশ্বাস করে। কিছু লোক আছে ঘুরেফিরে খায়। সারাদিন কাজ করে না। এরে ওরে এটা সেটা বলে বাটপারি করে অন্ন যোগায়। ওরাই এই মূর্খদের শিষ্য বানায়। এরপর বসে বসে খায়। তারাই বলে হনুমানের কানে সূর্য আছে আর এসব শুনে মূর্খ লোকেরা তাদের টাকাপয়সা দেয়।

এই যে তোমরা লেখাপড়া শিখেছো, তোমরা ধর্মের পুস্তক পড়বে। অন্যের কথা শুনে লাফাবে কেন? তোমরা তো মূর্খ নও।

[12:50]

ছাত্র: স্যার আমরা তো কোরআন পড়েই এসব পাচ্ছি। তাছাড়া ওয়াজ শুনি, ওয়াজ শুনেও অনেক কিছুই শিখছি।

স্যার: ওয়াজ যে শোন, ওয়াজে কত ধরনের কথাই বকে, ভেবে দেখেছো? মানুষকে হত্যা করতে বলে, বাজে কথা বলে। হিংসা ছড়ানো হয় খেয়াল করেছো? শুনে ধর্ম মানতে হবে কেন? নিজে পড়েই ধর্ম মানো।

-তাসনিম খলিল”

কপিপেষ্ট শেষ।

মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং বিশালতা নিয়ে প্রচুর ইউটিউব ভিডিও বের হচ্ছে। আর বের হওয়া মাত্রই ইসলামিক ভুলবাল ব্যাখ্যা দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় রুপান্তরিত করে ইউটিউবে ছাড়া হচ্ছে। নীচের ভিডিওটি একটি নমূণা মাত্র – কোরাণের আলোকে মহাবিশ্ব কত বড়? ভুলবাল ব্যাখ্যাদানকারী জুড়ে দিচ্ছে – তাহলে ভেবে দেখুন এত মহাবিশ্বের সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ কত বড়!

ছোট মিথ্যা, বড় মিথ্যা এরকম মিথ্যার একটা পরিমাপ করা হয়। ধর্মের সাথে মিলাতে গিয়ে এসব ডাহা মিথ্যার পরিমাপ করি কীভাবে? যার জ্ঞানের পরিধি ১) প্রতিদিন সূর্য পশ্চিম দিকে এক ঘোলা পুকুরে ডুবে যায়, ২) পর্বত গুলো আকাশকে ঠেকা দিয়ে রেখেছে, ৩) পৃথিবীটা সমতল, তার কথাই বলে হচ্ছে – “তাহলে ভেবে দেখুন এত বড় মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত বড়!”

এসব বিকৃত ইউটিউব ভিডিও ইগ্নোর করতাম। কিন্তু এসব ইগ্নোর করার মত নয়। ধর্মের নামে যাদের মগজ ধোলাই হয়ে গেছে তাদের নিকট এসব বিকৃত ইউটিউব ভিডিও সঞ্জীবনী সুধার মত কাজ করে। তারা আসলেই বিশ্বাস করে বিজ্ঞানের সমস্ত জ্ঞান কোরাণ থেকেই এসেছে। আর এজন্যই হৃদয় মণ্ডলের মত জ্ঞানী এবং পেশাধারী শিক্ষকদেরকে হেনস্থা হতে হচ্ছে।

এরা বিশ্বাস করে Theory of Everythingএর সবই কোরাণে আছে। যদি থেকে থাকে আমাকে একটা সুরা এবং আয়াত দেখাও। আমি জানি দেখাতে পারবে না। এজন্যই আমি এই চ্যালেঞ্জ জানাই। বিকৃত এসব ইউটিউব ভিডিওগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা পর্য্যন্ত শেয়ার করছে। ফলে এসবের ক্ষতিকর কার্যকারিতা চুড়ান্ত মাত্রা পাচ্ছে। হৃদয় মণ্ডলদেরকে বলীর পাঠা হতে হচ্ছে।

সব চাইতে মুশকিল হলো এরা কেউ নিজেরা কোরাণ পড়বে না। কিন্তু সব কিছুই কোরাণে আছে বলে বিশ্বাস করবে। আমি খুশী হতাম যদি তেঁতুল হুজুররা বলতেন – প্রত্যেক মুসলমানকে কোরাণ পড়তে হবে। না পড়লে যত নামাজ-রোজাই করো না কেন জান্নাত মিলবে না।

কোরানের আলোকে মহাবিশ্ব কত বড়?

সব ধর্মেরই একই অবস্থা। ইদানীং “জাগো হিন্দু” ইত্যাদি নামে অনেক ইউটিইউব ভিডিও দেখছি। তাদের দাবী এবং ব্যাখ্যা হিন্দু ধর্ম, সনাতন ধর্ম, আসল ধর্ম। অন্যের কথা বা ব্যাখ্যায় কান না দিয়ে নিজের বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করুন। সব ধর্মই যে মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত এটা বুঝতে একটুও সময় লাগবে না। আমি মহাবিশ্বের ছাত্র। আকাশের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি, ভগবান বা আল্লাহর মত কোন কিছুরই অস্তিত্ব নাই। যার অস্তিত্বই নেই, তার আবার বড়ই কি ছোটই বা কী?

তথ্যসূত্রঃ ট্র্যান্সক্রিপ্টটা কপি-পেষ্ট করা হয়েছে Michael S D Costa এর ৩রা এপ্রিল ২০২২ এর ফেসবুক পেজ থেকে

https://www.facebook.com/michaelshuvo.dcosta