ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে অনেক বড় বড় কথা ইতিহাসে পড়েছি | অনেক বড় বড় ব্যাপার জেনেছি | এমনভাবে সব লেখা হয়েছে যে মনে হয় হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল | কিন্তু সত্যি কি তাই ? দেখা যাক বাস্তব কি বলে ?
মহাবিদ্রোহ :
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রহে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে ব্রিটিশের বিরোধিতা করেছিল | এটাকে বিভিন্ন লোকেরা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে সগর্বে প্রচার করে | কিন্তু ঘটনাটা ঠিক কি ? গরু আর শুওরের চর্বিমিশ্রিত কার্তুজ দাঁতে কাটবার ফলে হিন্দু ও মুসলমানের ধর্মানুভুতি আহত হয়েছিল | অতএব সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হলো | সিপাহীরা ব্রিটিশ নারী পুরুষদের হত্যা করতে লাগলো | সামান্য গরু আর শুওরের দামের চেয়ে মানুষের প্রানের দাম অ-নে-ক কম কিনা | এই বিদ্রোহটা ভারতের একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলা চলে | প্রতিটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যেমন ধর্ম নিয়ে শুরু হয় , তেমনি এটাও শুরু হয়েছিল গরু-শুওর ধর্ম নিয়ে | দেশীয় রাজারা এই সুযোগে ঘোলাজলে মাছ ধরতে নেমে গেলেন | ঠিক আজকের পলিটিশিয়ানদের সাথে মিল পাওয়া যাবে | এই বিদ্রোহে বিদ্রোহী সিপাহীরা যে অমানবিক নির্দয়তার পরিচয় দিয়েছিল নিরীহ ইংরাজ নারী পুরুষদের হত্যার মাধ্যমে, তার সাথে ৪৭ এর দাঙ্গা, গুজরাটের গোধরার দাঙ্গা, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর মুম্বাইয়ের দাঙ্গার এবং বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগার হত্যার মিল পাওয়া যায় | মিলটা হলো ধর্মানুভুতি আহত হলেই নরহত্যা করে প্রতিশোধ নেয়া হবে | সিপাহিদের নিরীহ ইংরাজ নারী পুরুষ হত্যার কথাটা কিন্তু ফলাও করে কখনো বলা বা লেখা হয় না | বরং হলওয়েলের অন্ধকূপ হত্যার তত্ব যে বানানো কথা সেটা প্রমান করতে সবাই উঠেপড়ে লেগে যান | মঙ্গল পান্ডের ফাঁসির উপরে সিনেমা বানানো হয় |
আগেই বলেছি নানা সাহেব-তাতিয়া টুপি-রানী লক্ষীবাই, ইত্যাদি দেশীয় রাজন্যবর্গ নিজ নিজ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে তত্পর হলেন | রানী লক্ষী বাই তার ঝাঁসী দুর্গ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারান | তার দত্তক পুত্র গঙ্গাধর রাও-এর কোনো খোজ পাওয়া যায় নি | বাকি সমস্ত রাজারা তাদের নিজেদের সময় সুবিধা মাফিক ইংরেজদের দলে ভিড়ে গেলেন | ব্যাস, মহাবিদ্রোহের ঐখানেই শেষ |
পরাধীন ভারতের রাজনৈতিক পার্টি
পরাধীন ভারতে কয়েকটি পার্টি ছিল | প্রত্যেকের পৃথক পৃথক উদ্দেশ্য ছিল | আমি পার্টি গুলো আর তাদের উদ্দেশ্যকে পর পর সাজিয়ে দিচ্ছি |
১] প্রথমেই বলা চলে কংগ্রেসের কথা | এই দলটি অ্যালেন অক্টাভিয়ান হিউম নাম এক ব্রিটিশ তৈরী করেছিল | এর মূল উদ্দেশ্যটাই ছিল সেফটি ভালভের কাজ করা | অর্থাৎ দেশীয় জনতার যত রাগ বা ক্ষোভ আছে সব শান্তিপূর্ণ ভাবে বের করে দেয়াই এই দলটির কাজ | এর ফলে ১৮৫৭ মহাবিদ্রোহের মত পরিস্থিতি তৈরী হবে না | এইটি ধর্মনিরপেক্ষ দল |
২] এরপরে ১৯০৬ সালে তৈরী হয় মুসলিম লীগ | এই দলটির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের ধর্ম , ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির রক্ষা করা | এছাড়া এর দ্বিতীয় কোনো উদ্দেশ্য ছিল না | সম্ভবত এটি ভারতের প্রথম ধর্মীয় রাজনৈতিক দল | এই দলটিকে ইংরেজরা এসেম্বলির সদস্য করে | প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে এর উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনে মুসলিম যুবকদের বেশি করে ঢোকানো | তাই এরা বেশি বেশি মুসলিম যুবকদের প্রশাসনে ঢোকায় | ব্রিটিশদের সাথে এদের ভালো সম্পর্ক ছিল | ৮০% মুসলিম এর কথায় চলত | ব্রিটিশ বিরোধী সহিংস আন্দোলনে এরা অংশ নেয় নি |
৩] মুসলিম লীগের এইরকম আগ্রাসী মনোভাব হিন্দুদের ভীত করে তোলে | দেশটা আবার মুসলিমদের হাতে চলে যাবার ভয় যত না ছিল তার চেয়ে বেশি ধর্মের ভয় | সেই ভয় থেকে ১৯০৯ সালে জন্ম নেয় হিন্দু মহাসভা | এই দলটির উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু ধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করা | এই দ্বিতীয় ধর্মীয় রজনৈতিক দল | কংগ্রেসের সাথে এই দলটি প্রতিযোগিতা করতে শুরু করে | এর উদ্দেশ্য ছিল প্রশাসনে হিন্দু যুবকদের বেশি করে ঢোকানো | এরই একটা সাথী ছিল বা বলা যেতে পারে অ্যাকশন গ্রুপ ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ , যা ১৯২৫ সালে তৈরী হয় | এই হিন্দু মহাসভার সদস্য ডক্টর বি কে মুঞ্জে লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিতে যান | ফেরার পথে ইতালিতে মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপে আকৃষ্ট হন এবং হিন্দু যুবকদের সমরশিক্ষা দানের জন্য সেন্ট্রাল হিন্দু মিলিটারি একাডেমী তৈরী করেন | এছাড়া আর এস এসের গুরু সদাশিব গোলওয়াল্কর হিটলারের আর্য রক্তের কনসেপ্টকে খুব পছন্দ করেন | হিন্দু মহাসভার সাভার্কারের নেতৃত্বে অহিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয় |
হিন্দু মহাসভা পাঞ্জাব ও উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে মুসলমানদের ও শিখদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করে যা পরে দেশভাগের জমি প্রস্তুত করে | এরাও ব্রিটিশ সরকারের সাথে সহযোগিতাই করেছিল | ব্রিটিশ এদেরকেও এসেম্বলির সদস্য করে |ব্রিটিশ বিরোধী সহিংস আন্দোলনে এরা অংশ নেয় নি | প্রায় ৮০% হিন্দু এদের কথায় চলত |
৪] এই দুই দলের কার্যকলাপ একটা বিষয় পরিস্কার করে যে কেন ভারতে সহিংস বিপ্লবীর সংখ্যা এত কম ছিল | ধর্মই আমাদের ব্রিটিশের বিরোধিতা করতে দেয় নি | যদি দিত তাহলে আমরা আরো আগে স্বাধীন হতাম | ভেলা রে ধর্ম, বেঁচে থাক চিরকাল |
হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগের ছেলেদের ব্রিটিশ প্রশাসনে অনুপ্রবেশ দেশভাগে সহায়তা করেছিল |
৫] এই রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে হাস্যকর রকমের প্রতিযোগিতা ছিল | কংগ্রেসের ভারত ছাড় আন্দোলনে হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগ কেউই অংশ নেই নি | কংগ্রেসের তেরঙ্গা ঝান্ডা হিন্দু মহাসভা সমর্থন করে নি, তারা চেয়েছিল গেরুয়া ঝান্ডা | কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানও হিন্দু মহাসভা পছন্দ করে নি | তারা চেয়েছিল মনুসংহিতার আদলে সংবিধান |আর এস এসের সদস্য নাথুরাম গডসে তো কংগ্রেসের গান্ধীকে হত্যাই করলো | মুসলিম লীগ খিলাফত আন্দোলনেও অংশ নেয় নি , যেহেতু সেটা ব্রিটিশ বিরোধী ছিল | তারা এর বিরোধিতা করে | কংগ্রেস অখন্ড ভারত চাইলে মুসলিম লীগ পাকিস্তান চায় | আবার হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগের উগ্র ধর্মীয় কার্যকলাপের বিরোধিতা করে কংগ্রেস | সব মিলিয়ে আজকের রাজনৈতিক পার্টিদের কোন্দলের মতই পরিস্থিতি | স্বদেশপ্রেম, স্বাধীনতা ইত্যাদির কোনো গল্পই ছিল না |
ভারতের সহিংস আন্দোলন :
১] এইটা কেমন ছিল দেখা যাক | ভারতের সহিংস আন্দোলন শুরু হয় ১৮৫৭র মহাযুদ্ধ দিয়ে | সেটা যে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক কারণে হয়েছিল সেটা তো আগেই বলেছি | এরপরে সহিংস আন্দোলনে বাংলার বিপ্লবীদের কথা আসে | ১৯০৫ সালে অনুশীলন সমিতি ঢাকায় তৈরী হয় ৮০ জন হিন্দু যুবককে নিয়ে | এই সমিতির সদস্যরা ব্রিটিশদের উপর সহিংস হামলা করত |
২] চাপেকার ভাইরা মহারাষ্ট্রে রান্ড আর আয়ার্স্ট নাম দুই ইংরাজকে মেরেছিল |
৩] ভগত সিং এন্ড কোং পাঞ্জাবে পার্লামেন্ট-এ বোম মেরেছিল ? এরা হিন্দুস্তান রিপাবলিকান এসোসিয়েশন-এর সদস্য ছিল |
৪] বিনয়-বাদল-দিনেশ নেতাজীর বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স গ্রুপের সদস্য ছিল | তারা লোমান নামে এক ইংরাজ অফিসার আর রাইটার্স-এ সিম্পসন নামে এক অফিসারকে মারে |
৫ ] সহিংস আন্দোলনে নেতাজীর ভূমিকার কথা না বললে অন্যায় হয় | নেতাজিই একমাত্র ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব | তিনিই আঞ্চলিক-ধর্মীয়-গোষ্ঠী স্বার্থ-এর মত সংকীর্ণ বিষয়ের উর্ধ্বে সর্বভারতীয় ভাব আনতে পেরেছিলেন | তার আজাদ হিন্দ ফৌজে সব জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লোক যোগদান করেছিল | অথচ তিনিই স্বাধীন ভারতে পাত্তা পেলেন না | এর পিছনে নেহেরুর কংগ্রেসী রাজনীতি কাজ করছিল | এখন অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলি তাঁকে নিয়ে খুব ব্যস্ত |
এছাড়াও বহু সহিংস আন্দোলন হয়েছিল যা বিচ্ছিন্ন ও অসংগঠিত হবার দরুন আরামসে দমন করা গেছিল |
তবে এই বিপ্লবীদের কয়েকটি কাজ একদম সমর্থনযোগ্য নয় | ক্ষুদিরাম কিংসলি সাহেবের বউ ও মেয়েকে মারে | ভগত সিং লালাজির হত্যাকারী হিসেবে সন্ডার্স নাম নির্দোষ ইংরাজকে মারে ,বিনয়-বাদল-দিনেশ রাইটার্স-এ সিম্পসনের পাশাপাশি বহু নির্দোষ ইংরাজ অফিসারকে মারে |গোটা আন্দোলনটাই ছিল বিচ্ছিন্ন | কোনো সুসংগঠিত ভাব ছিল না | সর্বভারতীয় ভাব একমাত্র নেতাজি ছাড়া কথাও ছিল না |
তবে ওদের এই সহিংস আক্রমনে ব্রিটিশ সরকার মোটেই ভয় পায় নি |
দেশীয় ব্যবসায়ীদের লাভ :
দেশীয় ব্যবসায়ীরা কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেননি | তারা ব্যবসায়িক ফায়দা লুটছিলেন | যেমন কংগ্রেস-এর ভারত ছাড় আন্দোলনের সময় খদ্দরের চাহিদা বেড়েছিল | সেই সময় আগুন দরে খদ্দর বেচে বস্ত্র ব্যবসায়ীরা লাভ করেছিলেন | দুদুটো মহাযুদ্ধে ব্রিটিশকে নানা জিনিসের যোগান দিয়ে দেশীয় ব্যবসায়ী টাটা-বিড়লারা খুবই লাভ করেছিল | স্বাধীনতা আন্দোলনের চুলকুনি ওদের ছিল না |
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে সর্বভারতীয় স্তরে শুধু এক নেতাজি ছাড়া কেউই আন্দোলন করেনি | তাহলে ভারত কিকরে স্বাধীন হলো ? এটা সম্পূর্ণ পরিস্থিতির কারণে হয়েছে | দুদুটো মহাযুদ্ধে ব্রিটেন সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় | তার অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে | এই বিশাল সাম্রাজ্য রক্ষার ব্যয়ভার আর সে বহন করতে পারেনি | তাই বাধ্য হয়ে ভারতকে স্বাধীন করে |
উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনো পলিটিকাল পার্টিই কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ করেনি | কাউকেই ব্রিটিশরা পাত্তা দেয় নি | সহিংস বিপ্লবীরাও ব্রিটিশদের ভয় পাওয়াতে পারে নি | সংখ্যাগুরু হিন্দু মহাসভা-মুসলিম লীগ-কংগ্রেস ব্রিটিশ বিরোধী ছিল না | সংখ্যালঘু অসংগঠিত সহিংস বিপ্লবীদের আরামসে মারা গেছিল | সুতরাং স্বাধীনতার যুদ্ধে ব্রিটিশদের সেরকম কঠোর প্রতিপক্ষ কেউ ছিল না | ব্রিটিশরা ভারত ছেড়েছে সম্পূর্ণ অন্য কারণে | দুদুটো মহাযুদ্ধে আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হবার পর তারা ভারত ছেড়েছে নইলে ছাড়ত না | এখন অবশ্য পলিটিকাল পার্টিরা স্বাধীনতা যুদ্ধের ক্রেডিট দাবি করে | কিন্তু তাদেরকে ব্রিটিশরা গ্রাহ্য করে নি |
চারিদিকে এখন যা দুর্নীতি মৌলবাদ , এর চেয়ে ব্রিটিশ রাজত্ব অনেক ভাল ছিল।
এই মন্তব্যটা দয়া করে দেখবেন | ইংরেজরা যে যুদ্ধে সর্বস্বান্ত হয়ে ভারত ছেড়েছিল আর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভয়ে ছাড়ে নি তার প্রমান : বিবিসির আর্কাইভ থেকে জানা যাচ্ছে :
অর্থাত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এশিয়া ও ইউরোপে বৃটেনের শোচনীয় পরাজয় তার আর্থিক ক্ষমতা ধংস করে দিয়েছিল | এই আর্থিক ক্ষমতাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মেরুদন্ড ছিল |
যুদ্ধে ব্রিটেন যদিও জিতে যায় তার সম্মান ও কর্তৃত্ব অনেকটাই কমে যায় | আর্থিক অবস্থার কথা ছেড়েই দিলাম |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা ভারতের সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করেছিল | তারা গান্ধীর ভারত ছাড় আন্দোলন ধ্বংস করে দিয়েছিল | তাহলে বুঝা যাচ্ছে পাঠকগণ যে অহিংস বিপ্লবীদের ব্রিটিশরা ঠিক কতটা ভয় করত ?
এইসব না জেনে দয়া করে বোকা বোকা চ্যাচাবেন না যে ব্রিটিশরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভয়ে ভারত ছেড়েছে | ইটা হাস্যকর ব্যাপার |
লিঙ্কটা দেখুন : বিবিসি আর্কাইভ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা, ইংল্যান্ড কে সাহায্য করার আগে কিছু শর্ত দেয়। শর্ত না মানলে সহায়তা করা হবে নাহ। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল ব্রিটিশদের যত কলোনি আছে সেসবের দখল ছাড়তে হবে। এই কারনেই ব্রিটিশরা ভারত এর স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
আপনার স্নমান রক্ষা ক্রেই বলছি, এটা আপনার ভুল ব্যাখ্যা। কলোনির দখল ছাড়লে আমেরিকার কি লাভ- যদি ব্লেন খুব উপকৃত হবো। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে আমেরিকা ব্রিটিশ সরকারের জন্য লড়েছিল, না নিজের স্বার্থের তাগিদে লড়েছিল? মিত্রশক্তির এজেন্ডা কি ছিল, সেটা জানআবেন কি?
কলোনি ছাড়লে ব্রিটিশরা দুর্বল হয়ে পড়ত | তারা আমেরিকার ঋণ কখনই শোধ করার মত অবস্থায় পৌছোত না | এভাবে তারা ঋণের জালে পরে যেত | এটাই লাভ আমেরিকার |
আর আমেরিকার কাছে শোষনের আরো উন্নত পদ্ধতি রয়েছে | কলোনি বানিয়ে শোষণ চালালে কলোনি রক্ষার জন্য অর্ধেক টাকা বেরিয়ে যাবে | ১০০ টাকা শোষণ করলে ৫০ টাকা কলোনি রক্ষার খরচা | লাভ ৫০ টাকা | আর পেটোয়া সরকার বসিয়ে শোষণ চালালে ( এটাই আমেরিকার কৌশল যা আজও বিদ্যমান ) পুরো ১০০ তাকায় লাভ | কলোনির দেখভাল করার দরকার নেই | আমেরিকা আরো বেশি বানিয়া আর চতুর | অন্তত ব্রিটিশদের তুলনায় |
যুক্তিবাদী লেখকের লেখা পড়ে মনে হল ভারতবর্ষের ইতিহাস পাল্টানো দরকার। মনে হয় ইতিহাসবিদরা ভালো করে গবেষণা না করে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস লিখেছেন। এতদিন ধরে তাহলে পাক-ভারত-বাংলাদেশের মানুষেরা ভুল ইতিহাস পড়েছে। যুক্তিবাদীকে আমার জিজ্ঞাসা, ব্রিটিশরা কি দুইটি মহাযুদ্ধে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার জন্য ভারত ছেড়ে চলে যায়? তাহলে কি স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের কোন রুপ ভূমিকা ছিলনা ? তাদের আন্দোলনকে ব্রিটিশরা কি আদৌ ভয় পায়নি?
আর নেতাজী সুভাষ বোসের কারয্যক্রম কি ব্রিটিশদের ভীত করেনি? ভারতবর্ষ থেকে ওরা যে ভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে, আর অন্য কোন দেশ থেকে তত লাভবান হয়নি। দেশ ব্যাপী বিচ্ছিন্ন ভাবে যত আন্দোলন হয়েছে, তার ও গুরূতব অনেক। এতে ইংরেজ সরকারকে সব সময় ভীত থাকতে হয়েছে। ইংরেজ দেখেছে যে, দিন দিন স্বাধীনতা আন্দোলন যেভাবে সংগঠিত হচ্ছে, ভবিষতে তা দমন করা খুব কঠিন। আর বিশব্ব্যপী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের চারিদিকে স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলন, ব্রিটিশ সরকারকে ভীত করেছিল। ইংরেজ্রা চেয়েছিল হিন্দু মুস্লমাদের মধ্যে বিভেদ এনে তাদের রাজত্বকে পোক্ত করা, কিন্তু এই দুই সম্প্রদায় ইংরেজদের ফাঁদে পা দিয়ে ও ইংরেজদের মনে শান্তি দেয়নি। যার ফল হল দেশ দুভাগ হওয়া। তবে ইংরেজরা মনে একটা শান্তি নিয়ে গেছে যে, হিন্দু মুস্লমানরা এখনো ধর্মের ধ্বজা নিয়ে হানাহানি করে যাচ্ছে।
আকাশদ্বীপের কথা শুনে মনে হলো যে সে এখনো স্কুলের ইতিহাসকারদের লেখা থেকে বেরোতে পারে নি | তার লেখাটা হুবহু স্কুলের ইতিহাসের লেখা বলে মনে হচ্ছে | সে এখনো ঘটনাগুলিকে বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখতে অভ্যস্ত | ঘটনাগুলিকে তার পারিপার্শিকতার সঙ্গে যুক্ত করে দেখতে পারে না |
ইংরেজরা যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভয়ে এদেশ ছেড়ে চলে গেছে তার প্রমান কি ? কেউ কি ইংরেজদের মনের মধ্যে ঢুকে দেখেছে যে তারা ভয় পেয়েছে কিনা ? এক বিপ্লবী বোম মারলো আর ইংরেজরা ভারত ছেড়ে চলে গেল : দুটো ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র কোথায় ?
বিপ্লবীদের মধ্যে সহিংস বিপ্লবীদের কাজকে গেরিলা যুদ্ধ বলা চলে | তা গেরিলাদের ভয়ে এক সুসংগঠিত সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে : এটা কি একটু বেশিরকম কষ্টকল্পনা হয়ে যাচ্ছে না আকাশদ্বীপ ভাই ?
অহিংস বিপ্লবীরা কি করেছিল ? অসহযোগ আন্দোলন | ঠিক কি রকমের অসহযোগিতা ছিল সেটায় ? প্রশাসন অচল হয়ে গেছিল ? সমাজ অচল হয়ে গেছিল ? না কি অচল হয়ে গেছিল ? কে কার সাথে অসহযোগিতা করছিল ? যাই হোক , আকাশদ্বীপ ভাইই সেটা ভালো জানেন |
এছাড়া অহিংস বিপ্লবীরা বড়জোর অনশন করত \ তো তাতে ব্রিটিশরা আর কত ভয় পেত ? আজকের সরকার কি পায় ?
আকাশদ্বীপ ভাই ইতিহাসে লিখা থাকলেই কোনো কিছু সত্যি হয়ে যায় না | সেগুলোকে একটু বাজিয়ে নিতে হয় | মনে রাখবেন ইতিহাস শাসকে লেখে | সেখানে শাসকের গুনগান আর শাসিতের দোষ কির্তন হয় | ব্রিটিশ আমলের ইতিহাসে ব্রিটিশদের এত দোষারোপ করা হয় নি | সেইজন্য ইতিহাসে কিছু লিখা থাকলেই তা সত্যি হয়ে যায় না |
আর ইতিহাসের নতুন করে লিখার কথা বলছেন? ইতিহাস একটি বিজ্ঞান | আর বিজ্ঞান ক্রমশ পাল্টাতে পাল্টাতে যায় | নতুন নতুন দৃষ্টিকোণ যত আসে , বিজ্ঞান তত পাল্টে যায় | ইতিহাসও যায় |
লেখক যুক্তিবাদী ঠিক বলেছেন বলে মনে হয়। স্কুলের ইতিহাস লেখকদের লেখার গণ্ডী থেকে এখনো বেরোতে পারিনি। কারন এইগুলিতো রাতদিন মুখোস্ত করে কোন রক্মে পরীক্ষার গণ্ডী পেরিয়েছি। তা কি অত তাড়াতাড়ি ভূলা যায়; ঐ সব লেখকরা শাসকদের গুণগান করেই স্বাধীনতার পূর্বে লিখেছিল, যা স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে আজ অবধি স্কুলের ছাত্ররা তোতা পাখীর মত মুখস্ত করে চলেছে। বর্তমান শাসকদল ব্রিটিশ সরকারের প্রতিভূ, তাই এরা সেই ভুল ইতিহাসকে সংশোধন করতে আগ্রহী নয়।
ইংরেজরা যে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভয়ে এদেশ ছেড়ে চলে গেছে তার প্রমানইতো স্বাধীনতা আন্দোলন। সে যেই ভাবেই সংগঠিত হউক, আহিংস বা সহিংস। সবদিক থেকেই ইংরেজ সরকার চাপে ছিল। কখন কারো মনের ভিতর ঢুকে দেখতে হয়না, সে ভীত হয়েছে কি হয়নি। তাদের কারয্য কলাপ ও আচার আচরণে বুঝা যায়। সারা ভারতবর্ষে কি একজন বাঃ দুইজন বোমা মেরেছিল? আপনি তো শিক্ষানবীশদের মত দুইটির যোগসূত্র খুজে বেড়াচ্ছেন। আপনার কথায় বলতে হয় গেরিলা যুদ্ধের ভয়ে শেষ প্রয্যন্ত আমেরিকা ভিয়েতনাম ছাড়তে বাধ্য হয়ে ছিল। বিশবের ইতিহাস দেখলে বুঝা যায়, অনেক সংগঠিত ও শক্তিশালী শাসক স্বাধীনতা আন্নদোলঙ্কারীদের ভয়ে রাজ্যপাট ফেলে পালিয়েছে বা মৃত্যু বরন করেছে। আশাকরি এর সংজ্ঞা দিতে হবেনা।
সব আন্দোলনকারীরা এক পথে চলবে, সেটা ভাবা উচিত নয়। কারন বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসীরা এক হতে পারেনা। তবে কোন একটি ইস্যুতে একসাথে কাজ করতে পারে, তাও নিজ নিজ মতবাদের ভিত্তিতে। আহিংস ও সহিংসদের দ্বারা সরকার বাঃ সমাজ কতখানি অচল হয়েছিল তা ইতিহাস বলবে। কেউ কিছু জোর করে বললে হবেনা। তবে মধ্যযুগের অনেক লেখক শাসকের মনোরঞ্জনের জন্য অনেক কিছু লিখে গেছেন যা ইতিহাস নয়। ইতিহাস তাকে বলে, যাহা স্ত্যের উপর ভিত্তি করে ঘটনাকে লেখা হয়। ইতিহাস কিসের উপর ভিত্তি করে পাল্টায়? ইতিহাস গভেষকদের মতবাদ কতখানি পরিবর্তন হয়েছে, তা জানতে পারলে খুশি হতাম।
অহিংস আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারই পরিচালনা করেছিল সহিংস আন্দোলন দমাতে | আজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার কোনো একটা সরকারবিরোধী আন্দোলনকে নষ্ট করতে চাইলে আগে তার মতই আরেকটা ভিন্ন ধারার আন্দোলন চালু করে যাতে জনসাধারণের কাছে আন্দোলন সম্বন্ধে ভুল বার্তা পৌছায় | ব্রিটিশদের অহিংস আন্দোলনে বেশি সংখ্যক লোককে টেনেছিল বলেই সহিংস আন্দোলনকারী অনেক কম ছিল | কোনটা লোকদেখানো আর কোনটা আসল তা বিচারের মাধ্যমে বুঝতে হয় |
আজও একই টেকনিক ব্যবহার করা হয় | ভারতে বাবা রামদেব কালো টাকা আনার জন্য আন্দোলন করেছিল ২০০৯ সালে | সেইটা থেকে জনতার নজর ঘোরাবার জন্য তত্কালীন কংগ্রেস সরকার আন্না হাজারেকে দিয়ে ভ্রষ্টাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করে | দুইটা আন্দোলনের লক্ষ্য একই : ক্ষমতায় আসীন কংগ্রেস সরকার কিন্তু পথ আলাদা : কালো টাকা আর ভ্রষ্টাচার | এর ফলে রামদেবের পাল থেকে হাওয়া চলে গেল | কংগ্রেস সরকারও বেঁচে গেল | ঠিক এইরকম স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য একটাই : ব্রিটিশ শাসকের উচ্ছেদ | কিন্তু পথ আলাদা : অহিংস আর সহিংস | এইসব ব্যাপার বুঝার চেষ্টা করতে হয় |
বেশ তো আপনি বলুন ব্রিটিশদের কোন কাজটা দেখে আপনি বুঝলেন যে তারা ভয় পেয়েছে ? ১৯১৪ সালের আগে ব্রিটিশরা ভয় পেয়েছে , তাদের কোন কাজটা দেখে বুঝা গেল ?
দুই একটা উদাহরণ দিন প্লিজ | বিনা উদাহরণে এমন দাবি মানা যায় না |
কথাটা আংশিক সত্য | কিন্তু কোন তথ্যটি নেয়া হবে আর কোনটি নেয়া হবে না তা ঠিক করে শাসক গোষ্ঠী |
আপনাদের পড়ে ভালো লাগলেই আমার সাধনা সিদ্ধ হয়েছে বুঝব |
ইতিহাস কে তো পাতিহাস বানালেন দেখছি, নতুন জিনিস পেলাম, ভালো লাগলো
ইতিহাসে লেখা থাকলেই তা বিশ্বাস করতে হবে এমন কথাটা কে বলল ? ইতিহাসে তো ঈশ্বরের কথাটাও লিখা আছে , তা বলে কি তা বিশ্বাস করা যায় ?
অসাধারন লিখেছেন। অনেক নতুন চিন্তার জিনিস যোগালেন অার বললেন অামার শ্রদ্ধার পুরুষ সম্বন্ধে সত্য কথা। খুব অানন্দ পেলাম। ধন্যবাদ।
ভালো প্রচেষ্টা, তবে অভিনিবেশে একটু ভুল রয়ে গেল। এটা সত্য যে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ বা হিন্দু মহাসভা – কেউই দেশের জন্য নিঃস্বার্থ সংগ্রাম এ বিশ্বাস করেনি বা সেটা আশা করাও ভুল। কাক যেমন কাকের মাংস খায় না – ঠিক তেমনই খয়েরি শোষক, শাদা বা পাঁশুটে রঙ এর শাসক এর কোন আসুবিধা সৃষ্টি করবে না। উপমহাদেশের ইতিহাস একটু মনযোগ সহকারে দেখলেই বোঝা যায়, কোন কালেই এখানে অখন্ড ভারতবর্ষ বা অন্য কোন অখন্ড সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে নাই। নানা সময়ে, বিভিন্ন শাসক, নিজেদের সুবিধার্থে এই ভুখন্ডে ভাঙ্গা-গড়া খেলে গিয়েছেন – ব্রাত্য রয়ে গিয়েছে কেবল সাধারন অধিবাসীরা। ধর্ম এর একটি প্রভাবশালী মাধ্যম বলা যেতে পারে – কিন্তু ধর্মকে পুরো দোষ দিলে এটা অনেকটা আনাড়ি নাচিয়ের বাঁকা উঠোনকে দোষ দেওয়ার মত শোনাবে না!! কি বলেন??
লালসা, ভয়, ক্ষুধা, অস্পৃশ্যতা, নির্বোধ সমর্পণ – এইগুলিও নিতান্ত কম দায়ী নয়, আমাদের আজকের বাতাবরনের বিষাক্ত আমেজের জন্য !!!
এই জিনিসগুলি কি ধর্ম থেকে আসে না ? বিশেষ করে অস্পৃশ্যতা, নির্বোধ সমর্পণ ? ধর্মই তো আমাদের এইসব শিখিয়েছে , তাই নয় কি ?
তবে হ্যা ধর্মের সম্পূর্ণ দোষ নেই | ভারতের জনতার একটা বিরাট অংশকে ধর্ম স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে দুরে রেখেছিল এবং মহাবিদ্রহে নির্দোষ ইউরোপীয়দের হত্যার মত পাপ করতে উত্সাহ দিয়েছিল : এইটুকু মাত্র ধর্মের প্রভাব | কিন্তু ফলটা তার কত ব্যাপক |
বাকিটা কিছু অপরিনত মস্তিস্কের যুবকদের দাপাদাপি | এইই ….. আর কিছু না |
তবে শাসকেরা ধর্মের জুজু দেখিয়েই শোষণ করেছেন মানব বাবু | আবার সেই ধর্মই এসে গেল |
আপনি এই তথ্যগুলো কোথায় পেয়েছেন জানলে জাতি কৃতজ্ঞ থাকত । ভেরিফায়েবিলিটি ছাড়া তথ্যের কোন দাম নেই ।
আপনার লেখার আসল উদ্দেশ্যটা কি ছিল ? ‘নির্দোষ’ ইংরেজদের কাজ জাস্টিফাই করা ?
কয় ছিলিম টেনেছেন ? সূর্য সেনদের কথা আপনি শুনেননি বোধহয় কখনো ।
আর আপনি বেশ কিছু জায়গায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট বাদ দিয়ে অতিরিক্ত জেনারেলাইজেশন করেছেন । কেও কোন সম্পদ হারাতে চায়না, সাম্রাজ্য তো নয়ই ।
এই তথ্যগুলি আমি উইকিপিডিয়াতে পেয়েছি অনিকিন ভাই | প্রতিটি পার্টির নাম করে খোঁজ করুন, পাবেন |
ইংরেজরা নির্দোষ ছিল | ভারতবর্ষকে বহু রাজারা ভোগ করেছে | শুধু শুধু ইংরেজদের দোষ হতে যাবে কেন ? তাহলে তো যে দোষে ইংরেজরা দোষী সে একই দোষে মুসলমান শাসকরাও দোষী | তাদের তো কেউ দোষী বলে না | কেউ তো বলে না ভারতবর্ষকে মুঘলেরা শোষণ করেছে | মুঘল আমলে মধ্য এশিয়া থেকে বহু জাতি এসেছিল ভারতে | তারা ভারতের সম্পদ লুট করে মধ্য এশিয়াতে নিয়ে গেছে : একথা কি কেউ বলে ? সবাই বলে ইংরেজরা ভারতের সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে |
এছাড়া ইংরেজরা যেমন শোষণ করেছে তেমনি শাসনও করেছে অনিকিন ভাই | বহু চোর ডাকাত দস্যু তারা দমন করেছে | সতীদাহ , বাল্যবিবাহ , আদি বহু কুপ্রথা তারা বন্ধ করেছে | নরবলি তাদের আসার আগে গোটা ভারতে, বিশেষ করে বাংলায় চালু ছিল | সেই জঘন্য কুপ্রথা তারাই বন্ধ করেছে | তারা যে সম্পদ ভারত থেকে লুট করে নিয়ে গেছে , সেই সম্পদ দিয়ে ভারতের মত বিরাট সাম্রাজ্যও চালিয়েছে | নতুবা এই সাম্রাজ্যের ব্যয়ভার কে বহন করেছিল ?
এছাড়াও তারাই ভারতে প্রথম বিজ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছে | রেল-টেলিগ্রাফ-মোটর গাড়ি ইত্যাদি সবই তাদের দান | এগুলি কিভাবে অস্বীকার করি ? এবিষয়ে তাদের যেটুকু ধন্যবাদ প্রাপ্য তা আমি তাদেরকে অবশ্যই দেব |
এক ছিলিমও টানিনি | সূর্য্য সেনদের আক্রমনে ব্রিটিশদের কিছুই হয়নি | সূর্য সেনদের আক্রমন একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র | এটা আজকের যুগে মাওবাদী কি ইসলামিক স্টেটের হানার মত ঘটনা | যুদ্ধের পরিভাষায় সূর্যসেনের আক্রমনকে গেরিলা কায়দায় লড়াই বলে | তা আপনিই বিচার করুন না অনিকিন ভাই যে একটা বিছিন্ন গেরিলা আক্রমনে কি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাবে ?
কোথায় কি ফ্যাক্ট বাদ দিয়েছি জানালে অশেষ কৃতজ্ঞ থাকব |
স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্যে যেসব আন্দোলনের কথা ইতিহাসের বইয়ে লেখা আছে তার একটাতেও আন্দোলন পরবর্তি বৃটিশ সরকারের কোন কমনীয় ভাব দেখা যায় নি। তারা শাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল তাদের ইচ্ছা মত।
এমন সময়ে তারা চলে গেল, যখন বড় আন্দোলনের নাম গন্ধই পাওয়া যায় না। এতেই তো বুঝা যায় যে বৃটিশরা ভারতীয়দের বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারণে লেজে গুবরে হয়ে পালিয়ে যায় নি। তারা চলে গেছে নিজেদের ইচ্ছায়।
🙂 আসলেও তাই ব্রিটিশদের মধ্যে ভারত ছাড়ার সময় “আর পোষায়না বাবা” এরকম ভাব সত্যিই দেখা যাচ্ছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে ইতিহাসটা পড়তে গিয়ে আমারও মনে হয়েছে ব্রিটিশদের নিজেদের স্বার্থেই তারা ভারত ছেড়েছিল। সময়টাও পাল্টে যাচ্ছিল তখন, মনে হয় কেেএম পানিকরের কোন লেখায় দেখেছি, উপনিবেশ রেখে শোষনের চেয়ে মুক্ত বানিজ্যের ধ্বজা তুলে ধরাই তখন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ব্রিটিশরা ঠিক পড়ি মরি করে পালিয়েছিল সেটা মনে হয় বলা যাবেনা। আমার মনে হয় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এই দিকটা নিয়ে একটা ভালো গবেষনা চলতে পারে। যুক্তিাবাদী ভাই একটা বড় লেখা লিখতে পারেন এ বিষয়ে।
ঠিক আছে লেখা দেবার চেষ্টা করব |