-
এক.
এই পোস্টটি চর্বিত-চর্বন মনে হতে পারে। একটি অতি-পুরাতন বিতর্ককে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি। ইব্রাহিমীয় ধর্মের অনুসারীদের সাথে বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রায়শই কিছু বিষয় ঘুরে-ফিরে আসতে থাকে। অনেকবার অনেকভাবেই বিবর্তন-অজ্ঞদের এসকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, বিভ্রান্তি দূর করে সঠিক সত্যটি জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও তর্কগুলো শেষ হয় না। নতুন নতুন আঙ্গিকে পুরানো প্রশ্নই উত্থাপিত হতে থাকে। এজন্যই হয়তো কবীর সুমন গেয়েছেন, “প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা…”
সেদিকে যাচ্ছি না। সম্প্রতি ফেসবুকে মাশরুফ হোসেন বিবর্তন, বিজ্ঞান এবং ধর্ম সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে আলোচনা যখন সমাপ্ত হলো আর সবাই নিজ নিজ তালগাছ নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন, তখন পুরো আলোচনাটি আবার পড়লাম। পড়ে ভাবলাম একটু অন্য আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করা যায় কি না। প্রথমেই মূল লেখাটি পড়ে নেয়া যাক। স্ট্যাটাসদাতার অনুমতিসাপেক্ষে পাবলিক স্ট্যাটাসটি হুবহু নিচে তুলে দিচ্ছি।
দুহাজার পনের সালে এসে এই শিরোনামে একটি লেখা লিখবার মানে একটাই, এদেশের বিজ্ঞানমনস্কতার অবস্থা শোচনীয়। তাও লিখতে হচ্ছে, কারণ বিবর্তনবাদকে “শুধুমাত্র একটা থিওরি, এটা নিউটনের সূত্রের মত মেনে নেবার কোন কারণ নাই” বলার মত লোকের সংখ্যা অগণিত। প্রচন্ড লজ্জার বিষয়, এই কথাটা বলে মূলতঃ ছদ্মশিক্ষিতরা, সার্টিফিকেট থাকলেও জ্ঞান যাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। এদের মধ্যে মেডিকেল স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট করা সায়েন্স টিচারও আছে।
বাংলাদেশী আমেরিকান বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার ঋতু সরকার আমার ক্ষুদ্র জীবনে দেখা সবচাইতে আলোকিত মানুষদের একজন। অসামান্য ধীশক্তির অধিকারী এই তরুনী সম্প্রতি আমার একটি পোস্টে এই “থিওরি বনাম ল” ডিবেট এর একেবারে পরিপূর্ণভাবে সমাপ্তি টেনেছে। Sauropod Fossil এর উপর ভিত্তি করে সর্বপ্রথম ত্রিমাত্রিক প্রিন্টেড রবোটিক ডায়নোসর প্রজেক্টে কাজ করে আসা ঋতু যে ওর বিষয়ে প্রচন্ড দখল রাখে, তা ওর কথাতেই বোঝা যায়। ওর সুদীর্ঘ কমেন্টের কিছু অংশ বাদে বাকি সারসংক্ষেপই হচ্ছে আজকের স্বচ্ছচিন্তা:
নিউটনের সূত্র কাজ করে সীমিত পদার্থ সংক্রান্ত পরিবেশে। পরিবেশ যখন অসীম এবং আমরা যখন আলোর গতি নিয়ে পরীক্ষা করছি, তখন নিউটনের সূত্র(Law) কাজ করেনা, আইন্সটাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (Special Theory of Relativity) ব্যবহার করতে হয়। কাজেই , থিওরি আর সূত্র নিয়ে এত কচলাকচলির কিছু নেই। এই দ্বিধা ক্লাস সিক্সের বাচ্চার থাকতে পারে, ন্যূনতম বায়োলজি জানা কোন ধাড়ী খোকার নয়।
নিউটনের মত ডারউইনেরও সীমাবদ্ধতা আছে। ডারউইন তাঁর থিওরি দিয়েছিলেন গালাপাগোস দ্বীপের পর্যবেক্ষণ থেকে, সেখানের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তিনি কিছু নতুন ধারণার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেছিলেন তাঁর তত্ত্বের কিছু কিছু জিনিস মিলছেনা( যেটা নিয়ে ত্যানাবিদেরা ত্যানা প্যাঁচায়)। এর কারণ, ডারউইন Gene এবং Mutation সম্পর্কে জানতেন না। এ কারণে তিনি তাঁর তত্ত্ব পুরোপুরি প্রমাণ করে যেতে পারেননি, যেটা আমরা পারি। ডারউইনের সময় গুগল এবং ইমেইল থাকলে মেন্ডেল তাঁকে সহায়তা করতে পারতেন এবং দুজন মিলে ফাঁকগুলো ভরাট করতে পারতেন।
মেন্ডেলের জেনেটিক্স একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও স্টার্টিং পয়েন্ট হিসেবে দারুন। এ যুগে আমাদের হাতে অকাট্য সব প্রমাণ আছে, যা ক্ষুদ্র (জেনেটিক্স এবং বায়োকেমিকেল ডাটা) ও বৃহৎ (ফসিল এবং জীবন্ত প্রাণী) দুই ক্ষেত্রেই সন্দেহাতীতভাবে বিবর্তনবাদকে প্রমাণ করে এবং ক্রিয়েশনিস্ট থিওরিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
কাজেই, ধর্মকে এর স্পিরিচুয়াল জায়গায় রাখুন, আত্মিক উন্নতিতে এর সহায়তা নিন। বিজ্ঞানের নিক্তি দিয়ে ধর্মকে জায়েজ করতে গেলে শুধু নিজেকেই নন, যে ধর্মকে আপনি জায়েজ করতে যাচ্ছেন সেটাকেও হাসির খোরাক বানাবেন।
ঋতুর বক্তব্য এখানেই শেষ, আমাদের চিন্তার শুরু।
অন্ধকার কেটে যাক জ্ঞানের আলোয়!
এবারে আসি মন্তব্যের ঘরে। স্বভাবতই বিতর্কিত বিষয় বলে এই পোস্টে প্রায় তিনশতাধিক মন্তব্য হয়েছে। বাকি সমস্ত মন্তব্য বাদ দিয়ে আমি যে তর্কে অংশ নিয়েছি সেটুকুতে ফোকাস করবো। মূল পোস্টের কিছু পরেই একজন প্রশ্ন তুললেন, ধরি তার নাম “বিবর্তন-সন্দিহান“।
বিবর্তন-সন্দিহানঃ
১. আপনার পোস্টে কীভাবে ক্রিয়েশনিস্ট থিওরি বানচাল হলো? বিবর্তন সত্যি হলেও প্রথম প্রজাতিটা তো কোন না কোনভাবে সৃষ্টি হয়েইছিল, নাকি? সবকিছু শূন্য থেকে এসে, তাহলে শূন্যটা কোথা থেকে এলো?
২. ফসিল থেকে বিবর্তন তত্ত্বকে প্রমাণ করার কাজটা বিজ্ঞানের কোন প্রজেক্টে হয়েছে?
৩. এই তত্ত্বকে নিউটন আর আইনস্টাইনের সাথে মেলাবেন না, কারণ নিউটনের তত্ত্বের প্রমাণ আমরা দৈনন্দিন জীবনেই দেখতে পাই। আর আইনস্টাইনের তত্ত্বকেও আণবিক শক্তি তৈরির সময় ব্যবহার করে প্রমাণ করা গেছে।
৪. আপনি যে বললেন, “এই কথাটা বলে মূলত: ছদ্মশিক্ষিতরা” এটা আসলে ঠিক না। কারণ এমন অনেক বিজ্ঞানীই আছে যারা এর ব্যাপারে সন্দিহান, আর তারা আপনার চেয়ে বেশিই জানেন। আপনি তাদেরকে ছদ্মশিক্ষিত বলতে পারেন না।
৫. জিন এর কোডিং আর ফসিল কীভাবে বিবর্তন তত্ত্ব প্রমাণ করে সেটার লিংক দিবেন আশা করি।
এই প্রশ্নগুলো আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। অত্যন্ত “যুক্তিযুক্ত” প্রশ্ন। বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের সাধারণ জ্ঞান অতি সীমিত, প্রায় নেই বললেই চলে, আর সাথে আছে প্রচলিত ভুল- ও মিথ্যা-বয়ান। একজন এগিয়ে আসলেন উত্তর দিতে-
উত্তরদাতা১- “বিবর্তন-সন্দিহান, আমরা তো অহরহই বিবর্তনের প্রমাণ দেখছি। অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া অথবা কীটনাশক-রেজিস্ট্যান্ট কীটপতঙ্গের কথা শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই। এছাড়াও হালকা রঙের মথ পাওয়া যায়, যেগুলো শিল্পবিপ্লবের পরে ছাইরঙা হয়ে গেছে।”
বিবর্তন-সন্দিহানঃ “কিন্তু এই ঘটনাগুলো দিয়ে তো সৃষ্টির উৎপত্তিকে নাকচ করা যায় না। আর এগুলো প্রমাণ ঠিক শক্তপোক্ত নয়। কারণ নইলে এই “থিওরি” সবাই গ্রহণ করে নিতো। মথের রঙবদল শিল্পবিপ্লব থেকে তেজস্ক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘটতে পারে, যেমন তেজস্ক্রিয়তা থেকে অনেকের ক্যান্সার হয়।”
উত্তরদাতা১- “শক্তপোক্ত না কে বলেছে? বহু-প্রতিষেধক-রোধী যক্ষা একটা ভয়ানক রোগ, ভারতকে জিজ্ঞেস করে দেখেন। মথের রঙ তেজস্ক্রিয়তার কারণে বদলায় না। শিল্প-কারখানা থেকে আসা ছাইয়ের সাথে ক্যামোফ্ল্যাজ নিতে মথের জিন “নির্বাচন-চাপ” থেকে এই রঙ বেছে নেয়। মানুষ বিবর্তনকে মেনে নিতে পারে না কারণ ইব্রাহিমীয় ধর্মে আদম ও ইভকে প্রথম মানব-মানবী বলা হয়েছে। এরকম অনেক কিছুই যেমন সমকামীদের বিয়ের অধিকার মানুষ মেনে নিতে চায় না কারণ ধর্মে নিষেধ করেছে। কিন্তু তারপরও সমকামীরা ঠিকই বিয়ে করছে।”
বিবর্তন-সন্দিহানঃ “হাসালেন। আমি “মানুষ” নিয়ে কথা বলছি না, আমি বিজ্ঞানীদের কথা বলছি। গুগল করেই দেখেন কতজন বিজ্ঞানী এই “থিওরি”কে মেনে নিয়েছেন আর তাদের মধ্যে কতজন বিশ্বাসী। আর হ্যাঁ, এই পরিবর্তনগুলো ভৌগলিক কারণে হয়েছে নাকি বিবর্তনের কারণে, তা পরিষ্কার না। পরিবেশ বদল, তেজস্ক্রিয়তা এসব কারণেও এমন পরিবর্তন ঘটে। এটা বিবর্তন না। আর তারপরেও মোদ্দা কথা থেকেই যায় যে বিবর্তন সৃষ্টিতত্ত্বকে বাতিল করতে পারে না।”
এই পর্যায়ে আমি বিবর্তন-সন্দিহানের সাথে সরাসরি আলোচনায় যোগ দিলাম। খেয়াল করলাম, “থিওরি” বলতে তিনি বিজ্ঞানের ভাষাকে অনুসরণ করছেন না। বিজ্ঞানের ভাষায় থিওরি বা তত্ত্ব একটি পুনঃপুনঃপরীক্ষিত বিষয়, তিনি “থিওরি” বলতে “হাইপোথিসিস” বুঝাচ্ছেন, যা আদতে একটি প্রস্তাবনা যা এখনো সম্পূর্ণরূপে (তথ্য-উপাত্ত-পরীক্ষণ দ্বারা) প্রমাণিত হয় নি। এছাড়াও খেয়াল করলাম তিনি বিবর্তন বিষয়ে সন্দিহান, তাই প্রথমেই সেই সন্দেহের ভিত্তিটিকে বুঝে নিতে চাইলাম, “বিবর্তন-সন্দিহান, দয়া করে একজন বিজ্ঞানীর লিখিত পিয়ার-রিভিউড জার্নাল দেখাতে পারবেন যিনি বিবর্তনকে মিথ্যা/সঠিক না/ঘটে নি বলে দাবি করেছেন এবং প্রমাণ করে দেখিয়েছেন?”
উত্তরে বিবর্তন-সন্দিহান বললেন, “আপনি দয়া করে একজন বিজ্ঞানীর লিংক দেখান যিনি এটাকে সত্যি বলে প্রমাণ করেছেন”।
[স্বভাবতই, প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন আসলে কালক্ষেপণ ছাড়া কিছু না। তাই একটু বিরত হলাম।]
এরই ফাঁকে উত্তরদাতা১-এর সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে বিবর্তন-সন্দিহান এমন একটি কথা বললেন, যা থেকেই এই পোস্টের অবতারণা!
উত্তরদাতা১- “যিনি প্রাকৃতিক নির্বাচনই বুঝেন না, তার সাথে বিবর্তনের সত্যমিথ্যা নিয়ে আলাপ করা আমার পক্ষে সম্ভব না! হাল ছাড়ছি।”
বিবর্তন-সন্দিহানঃ “প্রাকৃতিক নির্বাচন তো বিবর্তনেরই একটি প্রক্রিয়া, আর আমি বিবর্তন নিয়েই সন্দিহান। তাই আমি প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়েও সন্দিহান। যা বলছিলাম, ওসব পরিবর্তনের পেছনে তেজস্ক্রিয়তা বা অন্য কোন কারণ যে নেই তা কেউ প্রমাণ করে দেখাতে পারে নি। আরেকটা বিষয় পরিষ্কার করি, বিবর্তন ইসলামের বিরুদ্ধে যায়, এজন্য কিন্তু আমি তর্ক করছি না। কারণ একটা সম্ভাবনা আছে যে ইসলাম বিবর্তনকে সমর্থন করে, এমনকি অনেক ইসলামী পণ্ডিতও এটা সমর্থন করেন। হতে পারে আদম ও হাওয়ার আগেও সৃষ্টি ছিল, হতে পারে আদম এবং হাওয়া পৃথিবীতে মিলিত হবার পর থেকেই বিবর্তন শুরু হয়েছে। আমি তর্ক করছি কারণ বিবর্তন তত্ত্বটি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।”
বোল্ড করা লাইনগুলো আজকে আবার পড়তেই একটু থমকে গেলাম। একটু চিন্তা করা দরকার এখানে। চলুন, বিবর্তন-সন্দিহানের কথার পেছনে উদ্দেশ্যকে সৎ ধরে নিয়েই এই অবস্থানটিকে একটু বিশ্লেষণ করি। তিনি আস্তিক, অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন, এবং ধার্মিক, অর্থাৎ ধর্মগ্রন্থের নিয়ম-কানুন মেনে চলেন বা চলার চেষ্টা করেন। আর দশজনের মতোই ধর্মের সকল বিষয়কেই তিনি সত্য ভাবেন, মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। এ নিয়ে আমার আসলেই কোন বিরোধিতা নেই। আমার মতে প্রত্যেক মানুষেরই অন্যের কোনরূপ ক্ষতি না করে নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস ও বিশ্বাস পালনের অধিকার আছে। এটাও পরিষ্কার যে বিবর্তন-সন্দিহান বিজ্ঞানের প্রতি অনুকূল ভাবনা পোষণ করেন। তিনি তাদের দলেও পড়েন না, যারা ধর্মের আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে বিজ্ঞানকে প্রতিপক্ষ ও ক্ষতিকর বিদ্যা হিসেবে গণ্য করে। বৈজ্ঞানিক সত্য যখন ধর্মীয় লিখিত রূপের সাথে অমিল বা বিরোধ সৃষ্টি করছে, তখন স্বভাবতই তিনি ধর্মের অনুকূলে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন, আবার একটি সেতু নির্মাণের চেষ্টা করছেন ধর্মীয় টেক্সট থেকে বিজ্ঞানের টেক্সট অবধি। যে সেতুটির মাধ্যমে তিনি সহজে ধর্মবিশ্বাস ও বৈজ্ঞানিক সত্যের মাঝে সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। “বিজ্ঞানময় কিতাব” ধরনের গ্রন্থ এবং অজস্য ওয়েবসাইটগুলো এই সেতুর প্রকৌশলী, রাজমিস্ত্রি, ও শ্রমিক। এগুলোরই উদয়াস্ত শ্রমে গড়ে ওঠে “নির্ভেজাল” ও “টেকসই” সেতুটি।
যারা এই সেতু নির্মাণ করেন, তারা দুটো বিষয় সবসময় খেয়াল রাখেন। এক. ধর্মগ্রন্থের বাণীর কাব্যময় ভাষা থেকে উৎপন্ন দ্ব্যর্থবোধকতা (ambiguity) এবং অনিশ্চিত অর্থ, এবং দুই. বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট ধারণার ব্যাপারে ভাসাভাসা জ্ঞান (popular knowledge)। এ যেন সেতুর সুদৃঢ় দুই থাম, দুই তীরের আছড়ে পড়া স্রোতকে বেঁধে রেখেছে। বিবর্তন তত্ত্বের ব্যাপারে এই বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সৃষ্টিবাদীরা (creationists) প্রধানত ইব্রাহিমীয় ধর্মগ্রন্থগুলোর কাব্যিক ও প্রাগৈতিহাসিক ভাষাকে আশ্রয় করে নিজের বক্তব্যের সমর্থনে বিভিন্ন টুকরো বাক্য ও অনুচ্ছেদ তুলে আনে। কিন্তু অপ্রামাণ্য এসব বাক্য জীববিজ্ঞান কিংবা জিনবিজ্ঞানে মূল্যহীন। প্রাণিজগতের বিভিন্ন খুঁত ও গরমিল দেখিয়ে আমরা “নিখুঁত” বলে দাবি করা এই সৃষ্টিবাদকে ভুল প্রমাণ করতে পারি। তাই পরবর্তী ধাপে অচিরেই এর পাল্টা-জবাব হিসেবে সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তন মিলিয়ে একটি জগাখিচুড়ি বানানোর প্রক্রিয়া চলে। সৃষ্টির পর স্রষ্টার আদেশে/নির্দেশেই বিবর্তন নাকি চালু হয়েছে। একটি ঘরানা দাবি করছে প্রাণিকূলে একমাত্র মানুষ ব্যতিরেকে বাকি সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ বিবর্তন মেনে চলছে। মানুষকে স্রষ্টার আদলে গড়া হয়েছে বিধায় তা বিবর্তনের উর্ধ্বে। আদিমানুষ প্রজাতিগুলোর ফসিল সেই দাবিকে বাতিল করে দেয়। সেক্ষেত্রে আবার বলা হচ্ছে, মানুষেরও ক্রমবিবর্তন ঘটেছে, তবে তা কেবলই উন্নতির দিকে। এই দাবিকেও বানচাল করে দেয়া যায়। কিন্তু দেখা যায় এই দাবি উত্থাপনকারীদের বিবর্তনের ব্যাপারে উচ্চতর জ্ঞান নেই। তারা শুধুই ধর্মগ্রন্থ পড়েছেন, বিবর্তনের খুঁটিনাটি বিষয়-আশয় তারা তেমন বোঝেন না। ফলিত জিনবিদ্যার বিভিন্ন গবেষণাপত্র তাদের মাথার দুই মাইল উপরে উড়তে থাকে। অনেকে বিবর্তন বলতে বোঝেন “বানর থেকে মানুষ এসেছে এই থিওরি”, অনেকে এটা দাবি না করলেও মানুষের বিবর্তনের আধুনিক আবিষ্কারগুলোর ব্যাপারে কিছুই জানেন না। সুতরাং ধর্মগ্রন্থের দ্ব্যর্থবোধক বাক্য এবং বিজ্ঞানে দুর্বল ভিত্তি – এই দুইয়ে মিলে গড়ে তোলে গ্রন্থময়-বিজ্ঞান কিংবা বিজ্ঞানময়-গ্রন্থের ধ্যানধারণা।
-
দুই.
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই একগুঁয়ে সেতুটিকে ভাঙার উপায় কী? সেই উত্তর-সন্ধানের আগেও প্রশ্ন হলো, আদৌ কি ধর্ম ও বিজ্ঞানের এই সেতুবন্ধন ভাঙার দরকার আছে? বিজ্ঞানের শনৈ শনৈ উন্নতির কালের বয়স খুব বেশি নয়, মোটের ওপর পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ বছর। এই অল্প সময়েই ধর্মের মত প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের অচলায়তন ভেঙে পড়েছে। মানুষের সম্মিলিত জ্ঞানের সমষ্টিকে মানুষই সংরক্ষণ করছে, এবং সেই জ্ঞান সহসা বিলুপ্ত হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। বরং মননশীলতার সুযোগ ও স্বাধীনতা পেয়ে মানুষ ক্রমেই নিজের জ্ঞান বাড়িয়ে চলেছে। এই তো, গতকালই মানুষের বানানো নভোযান প্লুটোবাবুর উঠোন দিয়ে “হাই! হ্যালো!” বলতে বলতে উড়ে গেল। আধুনিকতম যুগের মানুষ ধর্মের প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করা কমিয়ে দিয়েছে অনেকাংশেই। রোগবালাই হলে আধুনিক মানুষ দোয়া পড়ার আগে ডাক্তারের কাছে যায়, রাস্তাঘাটে বেরুনোর আগে গন্তব্য দেখে নেয় গুগল ম্যাপে। আবার এটাও ঠিক যে পৃথিবীর অনেক অংশেই এই জ্ঞানের আলো পৌঁছায় নি। এখনো সেখানে অন্ধত্ব ও অন্ধকার বাস করে। এই বৈপরীত্যের দূরত্বও যেন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি যে অমন অন্ধকারেই ধর্মীয় অন্ধত্ব ও গোঁড়ামি ঘাঁটি গেড়ে বসে। পাঁচশ’ বা এক হাজার বছর আগে যে অন্ধত্ব দূর করতে শিক্ষাদীক্ষার আলোই যথেষ্ট হতো, এখন সেখানে ভিন্ন উপায় প্রয়োজন হয়। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের জগদ্দল পাথরের প্রতিরোধক্ষমতা বেড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানও আধুনিক হয়ে উঠেছে। সাধারণ জনগোষ্ঠীর বিজ্ঞান-মূর্খতার কারণে ধর্ম ও বিজ্ঞানকে মিশিয়ে উপরে বর্ণিত একত্রীকরণ (amalgamation) ঘটেছে, সেতুতে সেতুতে ভরে উঠেছে মগজ। তাই আমার মতে, এই সেতুটিকে যুক্তির পথে ভেঙে দেয়াই যুক্তিযুক্ত। সেতুটি ভেঙে পড়লে উপকার ব্যক্তিমানুষেরই। আমরা যদি তা বুঝতে ও বোঝাতে সক্ষম হই, তাহলে হয়তো “ডেমোলিশন” দ্রুত ও সহজ হবে।
এবারে আসি সেই প্রশ্নে, এই সেতু ভাঙার উপায় কী? বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি আর বৈচিত্র্যময় মানুষের মতনই বহুবিধ উপায় থাকতে পারে। আর সত্যি বলতে কী, আমার নিজের মাথাও চাচা চৌধরির মতো প্রখর নয়, যে মুস্কিল আসান এক তুড়িতেই বাতলাতে পারবো। তবুও কিছু কিছু ভাবনা মাথায় এসেছে, যেগুলো গ্রহণ-বর্জন প্রক্রিয়ার ভেতরে আছে। ধাপে ধাপে বলি।
প্রথমত, আমার মনে হয় ধৈর্য আর সময়ের পরীক্ষা এটি। ধৈর্যের সাথে কাউকে এই সেতুবন্ধনের খারাপ দিকটি বুঝাতে পারলে বাকি পথটুকু তিনি নিজেই খুঁজে বের করে নিতে পারবেন। দ্বিতীয়ত এটা খুবই পরিষ্কারভাবে বলতে হবে যে কারো ব্যক্তিগত অধিকারকে খর্ব করার কোন প্রচেষ্টাই এখানে হচ্ছে না। স্রষ্টা মানা ও ধর্ম পালনের অধিকার ব্যক্তির প্রাপ্য, এবং সেখানে অন্যের নাক বা হাত বা অন্য কোন অঙ্গ গলানোর এখতিয়ার নেই। তৃতীয়ত, কাউকে ধর্ম ত্যাগ করতেও বলা হচ্ছে না, বরং ধর্ম এবং বিজ্ঞানের মাঝে গোঁজামিলের সেতুটি ভাঙতে বলা হচ্ছে। ধর্মপালনের সকল অধিকার যেমন তার আছে, তেমনি তার অধিকার আছে আধুনিক বিজ্ঞানে শিক্ষিত হওয়ার। চতুর্থত (এবং সবচেয়ে কঠিন ধাপ), বিজ্ঞানের বক্তব্য যেখানে ধর্মগ্রন্থের সাথে সাংঘর্ষিক, সেখানে তাকে বোঝাতে হবে যে অনেক ধর্মের অনেক পুরানো নিয়মই বাতিল হয়ে গেছে। তার কারণ উন্নত সমাজব্যবস্থায় নতুন নিয়মের দরকার হয়েছে। এখন এই ২০১৫ সালে তিনি যে নিয়মকানুন মেনে চলেন, সেগুলো মূলত এখনো সমাজের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক না বলেই তিনি মানছেন। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে ক্রমশ এসকল নিয়মও অচল হয়ে পড়বে এবং মানুষ উন্নততর সমাজ গড়ার নিমিত্তে নতুন নিয়ম বানিয়ে নিবে। কাকতালীয়ভাবে এটাও বিবর্তনের মতোই ধীর ও জটিল প্রক্রিয়া। তাই হাতে-নাতে প্রমাণ দেয়ার কিছু নেই। এখন তার কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কি পুরাতন আংশিক-অচল নিয়মকে আঁকড়ে ধরে থাকবেন, এবং ক্রমেই ধর্মগ্রন্থের দ্ব্যর্থবোধক বাক্যের সাথে বিজ্ঞানের সূত্রের ভাষা মেলাবেন? নাকি তিনি ধীরে ধীরে গ্রহণ করে নিবেন বৈজ্ঞানিক পন্থা আর যুক্তির শানিত অস্ত্র?
@আন্দালিব, প্রথমত আপনাকে অনেক ধন্যবাদ যে, আপনি ধৈর্য ধরে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন। আমাকে আপনি ভুল বুঝবেন না। আমি আসলে কোন তর্ক-বিতর্কে যেতে চাই না। আমি শুধু সত্যকে জানতে চাই। যাই হোক, আসল কথায় আসি।
১/ আপনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন যে, মহাবিশ্ব যে সমতল কাঠামোর উপর ভিত্তি করে প্রসারিত হচ্ছে তাঁর প্রমাণ কি? আপনি নিচের লিঙ্কে গেলেই উত্তর পেয়ে যাবেন।
https://www.youtube.com/watch?v=tbruPR3o0Zc
http://www.nasa.gov/mission_pages/planck/multimedia/pia16873.html#.VbxiGfmqqkp
আসলে, এখানে কাঠামো বলতে আমি কোন প্রসঙ্গ কাঠামো বোঝাচ্ছি না। আসলে আমাদের মহাবিশ্বের এই প্রসারণকে একটি ত্রিমাত্রিক কাঠামোতে আবদ্ধ করা যায়। এই কাঠামোর বাইরে প্রসারন হয় না।
আমি হয়তো আমার এই স্বল্প লেখায় আপনাকে বোঝাতে পারছি না। তবে আপনি ইউটিউব ও নাসার ওয়েবে ভ্রমণ করলেই আশা করি বুঝতে পারবেন।
২/ আমার নাম শাহারিয়ার। ধরুন আমি বিয়ে করলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার জেনেটিক কোড পরিবর্তন হয়ে গেল। জেনেটিক পরিবর্তনের ফলে আমার একটা সন্তান জন্ম নিল যার ৪ টি চোখ, আর ১ টি পা আর একটি ডানা আছে যার সাহায্যে সে উড়তে পারে। আমার সন্তান একসময় বড় হল। তাঁর বিয়ের বয়স হল। তাকে আমি একটা মানুষের মতো দেখতে মেয়ের সাথে বিয়ে দিলাম। এখন আমার ছেলে চিন্তা করলো যে, তাঁর তো ৪ টি চোখ আর ১ টি পা এবং একটি ডানা আছে। এখন তাঁর মতো প্রজাতি তো পৃথিবীতে একটাও নেই। এখন তাঁর প্রজাতি সে রক্ষা করতে চায়। অর্থাৎ সে চায় যে, তাঁর ছেলেও যেন তাঁর মতো ৪ চোখ, ১ পা আর ডানা বিশিষ্ট হয়। সে কি তাঁর এই প্রজাতি রক্ষা করতে পারবে? সে কি তাঁর বীর্যের কোড পরিবর্তন করে তাঁর প্রজাতি রক্ষা করতে পারবে? আপনার কি মত? বিবর্তনবাদ যদি একটি পরিক্ষিত বিজ্ঞান হয় তাহলে তো আমাকে উপরের উদাহরণটির বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে? আপনি মানবেন কি?
৩/ আপনি আরও বলেছেন যে, প্রত্যেক প্রজাতি তাঁর পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। আমি যদি এখন মেরু অঞ্চলের বরফাচ্ছন্ন এলাকায় যাই, এবং আমি যদি চাই যে আমি এই পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিব, তাহলে কি আমার দেহে বড় বড় লোম উৎপন্ন করতে পারবো? বিবর্তনবাদ মেনে নিলে তো আমাকে মানতেই হবে যে, আমি পারবো। আপনার কি মত?
১। লিংকগুলো দেখে বিস্তারিত জানাচ্ছি।
২। হঠাৎ করে আপনার শরীরের জেনেটিক কোড বদলে যাবে না। বিবর্তন তত্ত্ব এটা দাবিও করে না, কারণ এটা অবাস্তব। কখনো ঘটে নি।
৩। বিবর্তন অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া। এক প্রজন্মে এটার প্রভাব বোঝা কঠিন। হাজার হাজার বছর পর দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ থেকে এটি বুঝতে পারা সম্ভব। যেমন, আপনি যদি মেরু অঞ্চলে যান, আপনার দেহে বড় লোম উৎপন্ন হবে না। কিন্তু বিষুবের কাছাকাছি যেসব মানুষ অনেক বছর ধরে আছে, এবং খুব বেশি বাইরের মানুষের সাথে জিনের মিশ্রণ ঘটে নি, তাদের চামড়া কালো হয়। উদাহরণ – ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের জনগণ। সূর্যের অত্যাধিক আলো বছর জুড়ে তাদেরকে সইতে হয়, এজন্য চামড়ার মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে তাদেরকে রক্ষা করে। অপরদিকে যে মানুষরা অনেক আগে বিষুবরেখার অঞ্চল থেকে সরে মেরুর দিকে সরে গেছে, তাদের ত্বক অপেক্ষাকৃত ফ্যাকাশে হয়ে গেছে মেলানিনের অভাবে। যেমন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ইউরোপ কিংবা রাশিয়া অঞ্চলের মানুষ। তাদের ওখানে সূর্যের উপস্থিতি খুবই কম, তাই ত্বকের প্রতিরক্ষাও কম।
ভাই আমি কিন্ত আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। আপনারা মনে করেন যে, আমাদের এই মহাবিশ্ব শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক শূন্য থেকে নয়, অসীম ঘনত্তের একটি ক্ষুদ্র বিন্দু থেকে।
১/ যখন এই মহাবিশ্বের কোথাও কোন কিছু ছিল না, তখন এই ক্ষুদ্র বিন্দুটি কে সৃষ্টি করলো?
২/ সম্প্রতি নাসার গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, আমাদের এই মহাবিশ্ব সমতল। অর্থাৎ এটি একটি সমতল কাঠামোর মতো বিস্তৃত হচ্ছে। যদি ধরে নেই যে, আমাদের এই মহাবিশ্ব বিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে, তাহলে তো এটি বিক্ষিপ্ত ভাবে স্ফীত হবার কথা। কিন্ত এটি তো বিক্ষিপ্ত ভাবে স্ফিত হচ্ছে না। সমতল ভাবে স্ফীত হচ্ছে। তাহলে কি বিগ ব্যাঙ থিউরি ভুল? আমার তো তাই মনে হয়। আপনার মত কি?
৩/ মানুষের বীর্য থেকে কেন মানুষ সৃষ্টি হয়? বানর সৃষ্টি হয় না কেন? জোনাকি পোকার বীর্য থেকে কেন তাঁর দেহে আলো উথপাদিত হয়হ? মানুষ কেন নিজে নিজে তাঁর দেহে জোনাকি পোকার মতো আলো তৈরি করতে পারে না? মানুষ কেন তাঁর দেহে সাপের মতো বিষ তৈরি করতে পারে না। মানুষ কেন গাছের মতো বিজ দ্বারা বংশ বিস্তার করতে পারে না? মানুষ, কুকুর , বানর সবাই তো বীর্য দিয়েই তাদের বংশ বিস্তার করে, তাই না? তাহলে একই রকম বীর্য থেকে এতো প্রজাতির প্রানি সৃষ্টি হয় কিভাবে? এখানে একটা কথা বলে রাখি, আপনি কিন্তু আপনার বীর্যের গঠন পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু আমরা দেখি যে, বিভিন্ন প্রানির বীর্যের গঠন এক এক রকম। তাহলে কি সকল প্রানি তাদের বিরজের গঠন পরিবর্তন করে নিয়েছে? আমার মতে এটি অসম্ভব। আমি আপনাকে বলছি আপনি আপনার নিজের বিরজের গঠন পরিবর্তন করে নতুন প্রজাতির একটি প্রানি তৈরি করে দেখান, যার ১৫ টি পা থাকবে, ১০তি চোখ থাকবে, তবে কোন মস্তিষ্ক থাকবে না। কি পারবেন? জানি পারবেন না। অথচ আমাদের এই পৃথিবীতে এমন অনেক প্রানি আছে, যাদের মস্তিস্ক নেই। অথচ তারাও বিরজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। অথচ সেসব প্রানিরা নিজেই জানে না যে, তাদের বীর্য কিভাবে উৎপন্ন হয়, বা তাদের বিরজের গঠন কেমন? তাহলে তারা কিভাবে নিজে নিজে তাদের মতো দেখতে নতুন একটি প্রানির জন্ম দিতে পারে?
৪/ আপনি কি পারবেন আপনার বীর্যের গঠন পরিবর্তন করে এমন একটি মানুষ তৈরি করতে, যার কোন মস্তিস্ক থাকবে না! অথচ মস্তিস্ক ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারবে? যদি পারেন, তাহলে
আল্লাহ্র কসম আমি বিবর্তন বাদকে মেনে নেব।
আশা করি আপনি উপরের সবগুলো উত্তর দিবেন এবং আমাকে সত্যি পথের সন্ধান দিবেন।
@শাহরিয়ার,
সত্যি বলতে কি, মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে যে কয়টি প্রকল্প (hypothesis) আছে, সেগুলোকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা এখনো সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং গবেষণার গতি নির্দেশ করে যে অচিরেই সঠিক তত্ত্বটি প্রমাণিত হবে। আপনি কি cosmic microwave background (CMB) radiation সম্পর্কে কিছু জানেন? আমি পরামর্শ দিচ্ছি, এই বিষয়টা নিয়ে একটু পড়াশোনা করুন। বিগ ব্যাং সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় এই বিষয়টির গুরুত্ব অনেক। আমি এই বিষয়ে পড়ে কিছুটা জেনেছি, কিন্তু তা এত অপ্রতুল যে আপনাকে বোঝাতে অপারগ।
১। স্টিফেন হকিংয়ের প্রস্তাবনায় বিগ ব্যাং সংঘটনের জন্য আগে থেকে “কিছু” থাকার প্রয়োজন নেই। অন্য কোন স্রষ্টারও প্রয়োজন নেই। স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হতে পারে। সেই প্রস্তাবনাটি বিস্তারিত তিনি ‘দ্যা গ্র্যান্ড ডিজাইন’ বইটিতে বর্ণনা করেছেন। আপনাকে অনুরোধ করবো বইটি পড়ুন। যদি ইংরেজি বইটি হাতের কাছে না থাকে বা সংগ্রহ করতে না পারেন, তাহলে বাংলা পড়ুন। মুক্তমনাতেই আছে, তানভীর সম্পূর্ণ বইটি অনুবাদ করেছেন।
২। “সম্প্রতি নাসার গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, আমাদের এই মহাবিশ্ব সমতল।” – এ বিষয়ে আমি অজ্ঞাত। কোন সূত্র দিন। বিস্তারিত পড়ে দেখি। আপনার মন্তব্যে স্পষ্ট নয় আপনি ‘সমতল কাঠামো’ বলতে কী বুঝাচ্ছেন। আমি মূল টেক্সটটি পড়তে চাই।
আর বিগ ব্যাং থিওরি ভুল প্রমাণের মতো ঘটনাটি আমার গোচরে আসে নি। আপনি সেই সূত্রটিও দিবেন, আশা রইলো।
৩। এই প্রশ্নটা বিবর্তন তত্ত্ব দিয়ে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায়। প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতিটি সম্পর্কে পড়াশোনা করলেই আপনি উত্তর পাবেন। বীর্য মূলত জেনেটিক কোডের সমষ্টি, যে কোড পরবর্তী প্রজন্ম সৃষ্টি করে। যেহেতু বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী একে অপরের চেয়ে আলাদা জেনেটিক কোড ধারণ করে, সেহেতু তাদের বীর্যও আলাদা। সকল প্রজাতি আবার যৌন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে এমনও না। অযৌন তথা অঙ্গজ বংশবিস্তার করে এমন অজস্র প্রজাতি আছে। তাদের দেহের জেনেটিক কোডও সন্তানের দেহ গঠন করে।
জেনেটিক কোডের বদলের পেছনে বেশ কিছু প্রভাবক কাজ করে। প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়ার জন্য সংকেত বদলে যেতে থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। এই পরিবর্তন এতটাই ধীর যে কয়েক প্রজন্মে ধরা পড়ে না। যখন দ্রুত কোন পরিবর্তন ঘটে, সেটাকে মিউটেশন বলা হয়। মানুষের জীবদ্দশায় মিউটেশন পর্যবেক্ষণ করা যায়। কিন্তু বিবর্তনের স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো এভাবে দেখা সম্ভব না। বরং ফসিল পরীক্ষা করে গঠনগত ও জিনগত পার্থক্যগুলো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। কৃত্রিম উপায়ে এসকল পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব না, কারণ “প্রডাক্ট”টি স্টেবল কিছু হবে না। এই প্রকৃতিতে তা টিকে থাকতে পারবে না। জেনেটিক কোডের ভেতরে সংরক্ষণের সংকেতও থাকে, যা প্রজাতিকে রক্ষা করে। এজন্যই আপনি ১৫ পা কিংবা ১০ চোখের প্রাণী দেখবেন না যদি না সেটা তাকে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে সাহায্য করবে। গেস হোয়াট, এরকম প্রাণী আছে যাদের অসংখ্য চোখ (আমরা যাকে পুঞ্জাক্ষি বলি), যেমন মাছি। এমনও প্রাণী আছে যার ১৫ কেন, ১০০টি পা আছে, যেমন সেন্টিপিড। সেটাও পরিবেশের প্রয়োজনে বিবর্তিত হয়েই সৃষ্টি হয়েছে।
৪। আপনার এই এপ্রোচটি সম্পূর্ণ ভুল। আপনি বিজ্ঞান বা প্রকৃতির কাছে অলৌকিক বা অবাস্তব কিছু আশা করছেন। সত্য হলো, প্রকৃতিতে অলৌকিক বলে কিছু নেই। আমরা যে বিষয়ের কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে পারি না, তাকে অলৌকিক বলি। পরবর্তীতে ব্যাখ্যা করা গেলে সেটি আর অলৌকিক থাকে না। বিবর্তন একটি সুসংহত তত্ত্ব, যাকে নানাভাবে বিস্তারিত প্রমাণাদি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক সকল উপাত্তই প্রকাশিত, তাই সেগুলোর ভিত্তিতে আপনি যাচাই করতে পারেন তত্ত্বটি সঠিক নাকি ভুল। অলৌকিক বা অবাস্তব নমুনা দিয়ে বিজ্ঞানের কোন তত্ত্ব আজ পর্যন্ত প্রমাণ করা যায় নি বলেই জানি। সুতরাং সে আশা না করাই ভাল।
আর আপনি বা আমি বিবর্তন মেনে না নিলেও কিছু যায় আসে না। আমি ফ্যান্টাসিতে বিশ্বাস করলেও বাস্তব পৃথিবী তার নিজের নিয়মেই চলবে।
ভাই, বিগ ব্যাং থিউরি বলে যে, সবকিছু নাকি শূন্য থেকে সৃষ্টি।কিভাবে এটি সম্ভব? ব্যাখ্যা দিন। তাহলে শূন্য কে সৃষ্টি করলো? জবাব দিন। তাহলে আমি আপনাদের মতবাদ মেনে নেব।
@শাহরিয়ার,
আসলেও কি মেনে নিবেন?…
আপনার প্রশ্নটি পড়ে কিছুক্ষণ ভাবলাম। ছোট মস্তিষ্কে উত্তর পেলাম না। ইন্টারনেটে কিছুক্ষণ (মিনিট দশেক) খুঁজলাম। দুইটি ব্লগও পড়ে ফেললাম। সেগুলো পড়ে আমি প্রশ্নটির একটি উত্তর পেয়েছি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই উত্তরটি কি আমি আপনার সাথে ভাগ-বাটোয়ারা করবো কি না। দ্বিধায় ভুগছি, কারণ আপনি সম্ভবত জানার উদ্দেশ্যে মন্তব্যটি করেননি। যদি ভুল বুঝে থাকি, তাহলে দুঃখিত, কিন্তু আপনার মন্তব্যের ভাষায় এমন মনে হয়েছে।
হ্যাঁ। “শূন্য” থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে স্টিফেন হকিংয়ের “দ্যা গ্র্যান্ড ডিজাইন” বইটি পড়তে পারেন। “শূন্য” কেউ “তৈরি” করেনি। আলোর অনুপস্থিতিতে অন্ধকার বলে। অন্ধকার আলাদা করে নির্মাণ করতে হয় না।
“শূন্যতা” সৃষ্টি করা লাগে না। বরং সৃষ্টির অভাব বা অনস্তিত্বই শূন্যতা।
শূন্য যদি সৃষ্টি করতে হয় তবে শূন্য যে সৃষ্টি করবে তাকে কে সৃষ্টি করবে? নাকি শূন্য সৃষ্টিকারী আপনা আপনি তৈরী হবে? কোন কারণ ছাড়াই কার্য কীভাবে হবে? আপনার জবাবটি পেলে আমিও অনেক কিছু আপনার মত ভাবার চেষ্টা করবো?
-: নবীর সীমাবদ্ধ জ্ঞানে পরিপূর্ণ সৃষ্টিকর্তার কিতাব :-
শবে কদর আরবিতে লাইলাতুল কদর। এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা।
এই দিনে প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরীল) প্রত্যেক কাজে কখন অবতীর্ণ হবে ।
কিন্তু কোন রাতে আমাদের গুনাহ মাফ হবে? আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ কোন রাতে হবে? প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরীল) প্রত্যেক কাজে কখন অবতীর্ণ হবে? শেষ দশ রোজার বেজোড় রাতে নাকি জোড় রাতে? এই রাত কি এক বারই ২৭ রোজায় হবে নাকি ২৭ এবং ২৮ রোজার দুইটি রাতে হবে?
যদি উত্তর দুইরাত শবে কদর হবে তাহলে জটিলতা দূর হয়ে যায়। যদি উত্তর হয় একটিমাত্র রাত সেটা ২৭ রোজার রাতে তাহলে ধাঁধায় পড়ে যায়।
কারণ সৌদিআরবে গত ১৩ জুলাই যখন ২৭ রোজা বাংলাদেশে তখন ২৬ রোজা। তাই যদি ১৩ জুলাই সৌদিআরবে ২৭ রোজার রাতে শবে কদর হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশে ১৪ জুলাই ২৭ রোজার রাতে (সৌদিআরবে ১৪ জুলাই যখন ২৮ রোজার রাত) শবে কদর পালন করার অর্থ কি? কারণ ভাগ্য নির্ধারণ সৌদিআরবে ২৭ রোজার রাতে করা হয়ে গেছে এবং ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরীল) প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাজ গত কাল রাতে শেষ করে গত সকালেই চলে গেছে।
আজ যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে চাঁদ দেখা যায় তাহলে আরেকটি কোরআনের আয়াত নাজিল হত। সেখানে উল্লেখ থাকত শবে কদর হবে সৌদিআরবে ২৭ (বেজোড়) রোজার রাতে এবং বাংলাদেশে ২৬ (জোড়) রোজার রাতে।
মজার বিষয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন না এবং উনার ধারনার বাইরে যে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে চাঁদ দেখা যায় জানলে নিশ্চয় সেটা মীমাংসা করে যেতেন। এবং কোরআনে উল্লেখ করে যেতেন।
কিন্তু মানুষ বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তা জীবরাইলের মাধ্যমে নবির কাছে কোরআনের আয়াত নাজিল করেছেন। মানুষকে যদি বুঝানো যায় যে সৃষ্টিকর্তা জীবরাইলের মাধ্যমে নবির কাছে কোন কোরআনের আয়াত নাজিল করেনি তাহলে হয়ত সেতুটি ভাঙ্গতে পারে।
আমার মনে হয় এই পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করার মতো বিপক্ষের “যুক্তি” আছে, আমি অনেককেই বলতে শুনেছি। বলা হতে পারে যে এটা স্থানিকভাবে কার্যকর হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের ২৭ রোজার রাতে (কিংবা বেজোড় যে কোন রাত) লাইলাতুল কদর হবে, সেটা শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্যই প্রযোজ্য। নামাজ পড়ার বেলায়ও দিন-রাতের দ্বিধা এভাবে কাটিয়ে নেয়া হয়েছে।
“সৃষ্টিকর্তা জীবরাইলের মাধ্যমে নবির কাছে কোন কোরআনের আয়াত নাজিল করেনি” – এটা বুঝানোর জন্য যে ধরণের মাইন্ডসেট প্রয়োজন, সেটাতে কাউকে আনাই তো দুরূহ ব্যাপার।
এটা স্থানিকভাবে কার্যকর হবে সেটা এ সময়ের মৌলবিরা বলতেছে। কিন্তু নবি কেন মীমাংসা করে গেলেননা ?
নিশ্চয় উনি জানেননা যে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে চাঁদ দেখা যায়। যদি সৃষ্টিকর্তা জীবরাইলের মাধ্যমে নবির কাছে কোন কোরআনের আয়াত নাজিল করতেন সেটা নবীকে বলে যেতেন যে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে চাঁদ দেখা যাবে। তাই শবে কদর দুই দিন হবে। কিন্তু আছে একদিন অবস্থানের কথা ।
আর কোরআন যদি সৃষ্টিকর্তার কিতাব হয় উনি কোরআনে দুনিয়ার সবকিছু উল্লেখ করে যেতেন কারন সৃষ্টিকর্তা সবকিছু জানার ক্ষমতা রাখে। এরকম আরও অসামঞ্জস্যতা আছে কোরআনে।
আর যেহেতু সৃষ্টিকর্তা সবকিছু জানার ক্ষমতা রাখে। তাই মানুষ নবীকে অবিশ্বাস করতে পারে কারন উনিও একজন আমাদের মত মানুষ এবং বিচরন করেছেন কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে না।
তবে এখন যাদের মাইন্ড সেট হবেনা তারা নষ্ট হয়ে গেছে ধরেই চলতে হবে। আমাদের দরকার পরের জেনারেশনকে ঠিক করা। তাই আমাদের কোরআনের অসামঞ্জস্য গুলো তুলে ধরতে হবে যুক্তিসঙ্গত ভাবে । যাতে পরের জেনারেশনে মধ্যে থেকে গোড়ামি দুর হয়ে যায়।
শুরু থেকেই নতুন প্রজন্মের একজন মানুষকে গড়ে তোলা গেলে তো আর সমস্যাই হতো না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ধর্ম একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এর বিভিন্ন প্রথা ও রীতির বাইরে গিয়ে অনেকেই সন্তান মানুষ করেন না বা করতে চান না। সেক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা একজন মানুষকে কীভাবে বিজ্ঞানমনস্কতার দিকে আনা যায়, এটাই এই পোস্টে ভাবতে চেয়েছি। আপনি যে পন্থাটি বলছেন, সেটা অবশ্যই একটা কার্যকর পন্থা। এমন অসংগতি নির্দেশ করে এই বইটি (বা যে কোন ধর্মের বই) কোন অলৌকিক কিছু নয় বরং অন্যান্য বইয়ের মতই লেখা হয়েছে। অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃতিক তকমা সরিয়ে দিতে পারলে কেউ কেউ এটাকে ক্রিটিক্যালি পড়া শুরু করবে। ক্রমেই বিশ্বাস ও যুক্তির জায়গা তার কাছে আলাদা হয়ে যাবে।
“রোগবালাই হলে আধুনিক মানুষ দোয়া পড়ার আগে ডাক্তারের কাছে যায়, রাস্তাঘাটে বেরুনোর আগে গন্তব্য দেখে নেয় গুগল ম্যাপে। আবার এটাও ঠিক যে পৃথিবীর অনেক অংশেই এই জ্ঞানের আলো পৌঁছায় নি। এখনো সেখানে অন্ধত্ব ও অন্ধকার বাস করে। এই বৈপরীত্যের দূরত্বও যেন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।”
পুরোটা লেখার মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে চৌম্বক অংশ হচ্ছে এটি। আমি অনেককেই চিনি যারা গুগল ব্যবহার করে ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন অংশের ব্যাখা খুঁজে। মোবাইলে কোরান তেলাওয়াত শোনা কী গুনাহ কীনা, এই নিয়ে ফেবুতে প্রচুর আলোচনা হয় বিভিন্ন গ্রুপে কারণ সব সময় ওজু থাকে না। ত্রিশ মিনিটে মোবাইলে পুরো কোরান তেলাওয়াত শোনা যাওয়ার বিভিন্ন এ্যাপস নিয়ে আলোচনা, লিঙ্ক শেয়ার হয়, সাইন্টিফিক্যালি প্রুভেন যে কোরান তেলাওয়াত শুনলে শরীর ও মন অনেক বেশী সুস্থ থাকে দ্যান গান শোনা ইত্যাদি ইত্যাদি ………………… গুগল ম্যাপে রাস্তা খুঁজলেও অল রোডস আর নট লীডস টু রোম, রাস্তা যেখানে যাওয়ার সেখানেই যায় 😀 …… আমি লেখাটার লিঙ্ক শেয়ার করলাম
শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ, তানবীরা।
আমিও এমন অনেককেই দেখেছি ধর্মকর্মে প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। প্রশ্নগুলো দেখে কিছুদিন আগের একটি তর্ক বা আলোচনার কথা মনে পড়ে গেল। পর্দাপ্রথা নিয়ে এক থ্রেডে তর্ক হচ্ছিল। আমার বক্তব্য ছিল যে পর্দাপ্রথা একটি মেকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটাকে তিল থেকে তাল বানানো হয়েছে সমাজে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। পুরোটাই আরোপিত এবং একেবারেই নৈর্ব্যক্তিক কোন স্ট্যান্ডার্ড নেই। এর চেয়ে নীতিবান ও সৎ ধার্মিক হবার দিকে জোর দেয়া উচিত। আগে একজন ধার্মিকের উচিত সমাজের হিত করা, আদর্শ ও অনুকরণীয় নাগরিক হওয়া, মানুষের উপকার করা, এবং কোন অবস্থাতেই কারো ক্ষতি না করা। এগুলো ধর্মের মূলনীতি (কেতাবি যদিও), যা মানলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হতো না। এত এত ধার্মিক শুধু গুটনার উপরে কাপড় পরা আর মেয়েদের ঘোমটা টানায় ব্যস্ত, অথচ সার্বিক তাকওয়া নিয়ে কোন মাথাব্যথা নাই বলেই এই শোচনীয় হালত।
প্রযুক্তি দিয়ে ধর্ম পালনের উদাহরণগুলো সেই ট্রিভিয়াল জিনিসে মনোযোগ দেয়ার ঘটনাই মনে করিয়ে দিল।
আপনার কথার সূত্র ধরে বলছি, “দেশ ভরে গেছে ধার্মিক মানুষে, বিবেক আর নৈতিকতা পরে আছে বহু যোজন দূরে”
ভাই আমার ফেরাউন সম্পর্কে জানার খুব ইচ্ছে।ভাল ইংরেজি পারিনা তাই উইকিতেও পড়তে পারিনা। দয়া করে সাহায্য করুন।
শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার ব্যাখা করেছেন -অবতারবাদ এর সাথে বিবর্তন বাদ
বিজ্ঞান ধর্মকে নিয়ে নয় বরং ধর্মই বিজ্ঞানকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ কখনো ধার্মিক মানুষটির ধার্মিকতার জন্য তার জীবন নাস করে দেয় না কিন্তু ধার্মিকরা একজন বিজ্ঞানচর্চার সীমানা অঙ্কন করে দিয়েছে। এ সীমানার বাইরে গেলে মস্তক আর দেহ আলাদা হয়ে যায়।
আপনার মালাচারি খেলতে ইচ্ছে করেতো আপনি খেলেন; আমি কি খেলতেছি তা নিয়ে মাথা খাটিয়ে অজ্ঞতার পরিচয় নাইবা দিলেন।
এসব ফাজলামির শেষ হওয়া দরকার।
মালাচারি কী? আপনার মন্তব্যটা বুঝতে পারছি না। কোনটাকে ফাজলামি বলছেন?
মালাচারি হলো নোয়াখালী অঞ্চলের ছোট মেয়ে শিশুদের খেলা। এখানে মালা মুলত নারিকেলের মালা। যে সব ধর্মান্ধতা মানুষের বিজ্ঞানচর্চা ও মুক্তচিন্তার পথে অয়ৌক্তিক বাধার সৃষ্টি করছে সে সব ফাজলামির কথা বলছি।
আচ্ছা বুঝতে পেরেছি এবার। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। পুরোপুরি একমত আপনার সাথে।
আমার বিবর্তন বাদ মানতে কোন আপত্তি নেই, যদি আপনারা আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। আপনার বীর্য কি আপনি উৎপন্ন করেন? না। তাহলে আমাদের বীর্য কে উৎপন্ন করে? তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের আদি প্রাণীরা অনেক বুদ্ধিমান ছিল। কারণ তারা আণুবীক্ষণিক বীর্য সৃষ্টি করেছে কোন অণুবীক্ষণ জন্ত্র ছাড়াই? উত্তর দিন।
ভাইয়া, আমি চুনোপুঁটি মানুষ, বীর্য নিয়ে এতো গবেষণা করি নাই। ” যার যার বীর্য, তার তার কাছে থাক”, আমি এই মূলনীতিতে চলি।
না না, আন্দালিব, এভাবে এড়িয়ে গেলে হবে না। আপনি উত্তর দিন! ধৈর্য ও সময়ের পরীক্ষা দিন। 🙂
মজা নাও?
বিবর্তন নিয়ে পোস্ট দিলে ধৈর্যের মেগাপ্যাকেজ নিয়ে বসবো। 🙂
মজার ব্যাপার খেয়াল করলাম। ফেসবুকে শেয়ার না হলেও এই লেখাটা প্রচুর মানুষ পড়ছে। কয়েকদিন ধরেই, সর্বাধিক পঠিত তালিকায়!
আণুবীক্ষণিক এককোষী প্রাণীরা পুরুষাংগ দিয়ে বীর্য উৎপদন করে বংশ বিস্তার করে না। প্রক্রিয়াটা ভিন্ন। গুগল, উইকিপিডিয়া যদি আবিষ্কার না হত তাহলে এখানে আপনাকে বুঝিয়ে বলতাম ব্যাপারটা।
আপনি কি জানেন যে প্রাণী দেহ অসংখ্য ছোটো ছোটো কোষ দিয়ে গঠিত? বীর্য রক্ত এরকম সবই আসলে অসংখ্য কোষ দিয়ে গঠিত। শরীরের আর সব কোষ যেভাবে উৎপন্ন হয়, এগুলোও সেভাবেই হয়। কোষের মাইটোসিস বা মিওসিস বিভাজনের মাধ্যমে। কোনো অনুবীক্ষণ যন্ত্র লাগে না।
এখন বলুন, উত্তর তো পেয়ে গেছেন। বিবর্তনবাদ কি মেনে নিলেন?
আপনার প্রশ্নে অনেক বেশি অজ্ঞতার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। যেমনঃ “আমাদের বীর্য কে উৎপন্ন করে?”, “আণুবীক্ষণিক বীর্য সৃষ্টি করেছে কোন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়াই”।
বিষয় গুলো আলাদা আলাদা করে ব্যাখ্যা করা যাকঃ
১. হ্যাঁ আমার বীর্য আমি নিজেই তৈরি করি। শুধু আমি কেন, আপনি এবং যে কেউ অথবা যে কোন প্রাণি যারা যৌন প্রজনন করে তারা সকলেই তাদের বীর্য (sperm) উৎপন্ন করে। এটাকে শুক্রাণুও বলা হয়। আর শুক্রাণু উঠপন্ন হয় শুক্রাশয় থেকে যা পুংঃলিঙ্গধারী প্রাণিদের ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য করা যায়। পুংঃলিঙ্গের নিচে অবস্থিত অণ্ডকোষেই শুক্রাশয় অবস্থান করে এবং শুক্রাণু উৎপন্ন করে। প্রাণি দেহে দুই রকমের কোষ বিভাজন হয়। মাইটোসিস এবং মিউসিস। মাইটোসিস হয় দেহকোষে আর মিউসিস হয় শুক্রাণুতে। এই মিউসিস বিভাজনের ফলেই প্রাণি শুক্রাণু বা বীর্য উৎপন্ন করে কোন যন্ত্র নয় বরং শরীরে যে কোষ আছে তা বিভাজনের মাধ্যমেই।
২. বুদ্ধির প্রসঙ্গ আচসবে যখন এখানে মস্তিস্কের প্রশ্ন করা হবে। কারণ বুদ্ধিমত্তা তো আর হৃদপিণ্ড থেকে জন্মায় না, জন্মায় মস্তিস্ক থেকে। আণুবীক্ষণিক প্রাণির মস্তিস্ক থাকে না, তাই তাদের বুদ্ধিমত্তা নেই। আর শুক্রাণু উৎপন্ন করতে বুদ্ধিমত্তার দরকার হয় না কি দরকার হয় তা আগেই বলেছি।
আমার উদ্দ্যেশ্য আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নয় বরং আপনার জানার কোথায় গরমিল আছে তা দেখানো। আমার লিখা পড়ে আপনি বুঝবেন আপনি কি জানেন না। তাই দয়া করে না জেনে প্রশ্ন করা থেক বিরত থাকুন। আর জানার চেষ্টা করুন বওই পুস্তক পড়ে।
‘সেতু’ ভাঙা আসলেই অসম্ভব। যারা ধর্ম মানে তারা যুক্তির ধর্ম মানে না। ‘চারদিকের এতসব কোত্থেকে এল? সৃষ্টিকর্তা বানিয়েছেন’- যুক্তি জিনিসটা যে এভাবে কাজ করে না, এটা যে যুক্তির ধর্ম নয়, এই সাধারন ব্যাপারটাই তাদের বোঝানো যায় না। ঘুরেফিরে খালি প্রশ্ন করবে। আপনি বোঝাবেন; আবার প্রশ্ন করবে। এবং এসব প্রশ্ন কিন্তু করবে জানার জন্য না; তাদের ক্রিয়েশনিজম থিওরী (!) প্রমান করার জন্য। পর্যবেক্ষন- প্রশ্ন- এর পরেই যে ঠাস করে ‘সিদ্ধান্ত’ চলে আসে না এটাই তাদের মাথায় ঢোকানো যায় না।
তাই মনে হয় আলোচনা বা তর্কের পথে না গিয়ে নতুন করে দেখতে হবে। যারা ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে আসতে পেরেছে তারা কি কি কারনে পেরেছে সেটা সার্ভে করে দেখে ব্যাপকভাবে পুরো সমাজের জন্য সেই শর্তগুলো পূরণ করার চেষ্টা শুরু করতে হবে।
“যারা ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে আসতে পেরেছে তারা কি কি কারনে পেরেছে সেটা সার্ভে করে দেখে ব্যাপকভাবে পুরো সমাজের জন্য সেই শর্তগুলো পূরণ করার চেষ্টা শুরু করতে হবে।”
এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ স্টাডি হতে পারে। আমার ব্যক্তিগত মত-পরিবর্তন হয়েছিল বই পড়ে। অনেকেরই সেভাবে ঘটে। তাদের হাতে বেশি বেশি বই তুলে দিয়ে এই ঘটনার “সম্ভাবিলিটি” বাড়ানো যায় বটে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এই প্রক্রিয়া আবার নিষ্ফল। তর্কাতর্কি চলবেই, কিন্তু দুয়েকজন তালগাছবাদীকেও যদি হাতের তালগাছ ছুটিয়ে দেয়া যায়, তাহলে মন্দ হয় না। সেটা কীভাবে করা যায়, নাকি আদৌ করা যায় না?
ঠিক বলেছেন যারা ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে আসতে পেরেছে তারা কি কি কারনে পেরেছে সেটা সার্ভে করে দেখে ব্যাপকভাবে পুরো সমাজের জন্য সেই শর্তগুলো পূরণ করার চেষ্টা শুরু করতে হবে।
অনেকেই দাবী করেন- বিবর্তন সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত। এটি আসলে একটি ভুল দাবী। কারন বিবর্তন নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন আর অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। এটি ঠিক দুই অনু হাইড্রজেন আর এক অনু অক্সিজেন দিয়ে পানি তৈরী হয়েছে—এরকম কোন প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক নিয়ম নয়।
এটা ঠিক ফসীলের সাহায্যে প্রাণী জগতের মধ্যে সাদৃশ্য খুজে পাওয়া যায়। কিন্তু জেনেটিক্যালি বিষয়টা বেশ জটিল। প্রানী জগতের জেনেটিক মেকআপ অনেক স্পেসিফিক, আর জেনেটিক মেকআপের পরিবর্তন আর মিউটেশনের মাধ্যমে একটা স্পেসিস পরিবর্তন হয়ে সম্পুর্ন নতুন আরেকটি স্পেসিস তৈরী হবার ব্যাপারটাও অনেক প্রশ্ন সাপেক্ষ।
তাছাড়া এখন পর্যন্ত এক্সপেরিমেন্টালী ল্যাবরেটরীতে মিউটেশন ঘটিয়ে স্পেসিস পরিবর্তন করা যায় নি।
তাই বিবর্তনকে সন্দেহাতীত ভা্বে প্রমাণিত মনে করাটা ধার্মিকদের মত ঈশ্বরের অস্তিত্বকে সন্দেহাতীত ভাবে বিশ্বাস করার মতই।
এই পোস্টের আলোচনার কেন্দ্র “বিবর্তন সত্যি না মিথ্যা?” নয়। আপনি সম্পূর্ণ ভুল নম্বরে ডায়াল করেছেন। এই পোস্টের বিষয় নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ কিছু ইনপুট দেয়ার থাকলে দিতে পারেন। নইলে ভাল থাকেন।
আপনি যেসব প্রশ্ন ও ধারনা পোষণ করেছেন বিবর্তন নিয়ে। সেগুলোর প্রতিটির ব্যাপারে খুব সুন্দর করে সায়েন্টিফিক রেফারেন্স সহ লেখা আছে এই পাতায়। https://mukto-mona.com/evolution/
তানভীর ভাইয়া,
আপনার দেয়া লিংকেতো অনেকগুলো লিখা। সব এখন পড়ব কিভাবে। সামনে ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা।
মিউটেশন যদি বিবর্ত্নের পক্ষে একটি ফ্যক্টর হিসেবে কাজ করত তবে সেটি ল্যবরেটরীতে প্রমাণ করা খুব বেশী কঠিন নয়। কিন্তু সেটি কেন সম্ভব হল না , সেটি একটা বিরাট প্রশ্ন বটে।
ওগুলো সব আপনাকে পড়তে হবে না। একেকটা ভুল ধারনা ধরে ধরে সাজানো আছে আপনার মনে কোনো প্রশ্ন আসলে আপনি দেখে নিতেপারবেন সেই সম্পর্কে এই আর্কাইভে কী কী তথ্য সংগ্রহিত আছে।
আর মিউটেশন ল্যাবে দেখানো সম্ভব হয়নি ধারনাটা আপনার কেন হলো বুঝতে পারছি না। এটা অসংখ্যবার ল্যাবে প্রদর্শিত হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে নিউ সায়েন্টিস্টের এই ছোট্ট নিউজটা পড়ে দেখুন https://www.newscientist.com/article/dn14094-bacteria-make-major-evolutionary-shift-in-the-lab/
আপনার পরীক্ষা ভালো হোক… 🙂
একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা উঠে এসেছে এই পোস্টে। ছয়-সাত বছর হয়ে গেল এইসব বিতর্ক আলোচনা করছি অনলাইনে। এখনো এ থেকে উত্তরণের কোনো সাধারণ সমাধান পাইনি। তবে আমার কিছু অবজার্ভেশন আছে। যেগুলোকে ‘রিজনেবল হাইপোথিসিস’ ভেবে নেওয়া যেতে পারে। হয়তো কোনো নৃতাত্ত্বিক বা সমাজবিজ্ঞানী বা চৈতন্যবিজ্ঞানী তা পরে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
হাইপোথিসিসটা হচ্ছে, জীববৈচিত্রের মত মানুষের মননও বৈচিত্রময়। ফলে একেক মানুষের একেক ধরনের অন্তর্নিহিত প্রবণতা থাকে। এই প্রবণতা তারা জন্মগতভাবে (মানে জেনেটিক্যালি) অর্জন করে নাকি আর্লি এক্সপোজারের মাধ্যমে ইম্প্রিন্টেড হয় (যেমন আমরা মাতৃভাষায় ইম্প্রিন্ট হই আর্লি এক্সপোজারের মাধ্যমে, বাকিজীবন এই ভাষাকে ভালো না বেসে আর পারা যায় না) সেটাও গবেষণার বিষয়। জীবনের যে স্টেজেই এর উৎপত্তি হোক না কেন বিভিন্ন ব্যক্তির মননের গঠনে যে এক ধরনের ভিন্নতা থাকে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। (স্টিফেনপ পিঙ্কারের মতে এর পিছনে জিন ও পরিবেশ উভয়ের প্রভাব রয়েছে)
এখন, এই ভিন্নতার ফলে দেখা যায় এডাল্ট বা কিশোর বয়সীদের মধ্যে কারো কারো টেকনিক্যাল ব্যাপারে আগ্রহবেশি থাকে। কারো হয়ত কোনো ধারনার যৌক্তিক খুটিনাটি নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। আবার কেউ কেউ থাকে যারা যৌক্তিক বাছবিচারে যেতে চায় না। বরং কোনো ‘নেতাকে’ ফলো করার সহজাত প্রবণতা তাদের মধ্যে বেশি। নেতৃত্বের প্রতি ভক্তি বিবর্তনীয় ভাবেই উদ্ভুত, এবং মানব প্রজাতির বিবর্তনীয় সাফল্যের পিছনে এর ব্যাপক অবদান আছে। তো, কার কারো মাঝে এটা বেশি থাকে। এই অতিভক্তিসমৃদ্ধ লোকজন, একবার জাকির নায়েক, একবার মরিস বুকাইলি, একবার আইনস্টাইনের কাল্পনিক উদ্ধৃতি এসবকেই বেশি গুরুত্ব দেয়, উপস্থিত যুক্তিতর্ক, তথ্য-প্রমাণ গ্রহণ করার বদলে। এইটা একটা প্যাথলজিক্যাল অবস্থা যা থেকে আসলে উত্তরন ঘটা সম্ভব না। কারণ, ঐ ব্যক্তি ‘যুক্তি’ ব্যাপারটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। ফলে যুক্তি দিয়ে তাকে কিছু বোঝানো যাবে না। কিন্তু এ ধরনের হতাশাজনক অবস্থা সবার হয় না।
আগেই বলেছি মানুষের মন বৈচিত্রময়। ফলে দেখা যায়, এই যুক্তিমনস্কতা ও ভক্তিমনস্কতার মাঝে একটা কন্টিনিউয়াস স্প্রেকটাম আছে। যার বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন মানুষ পড়ে। এবং এ কারণেই কেউ মাত্র ১৩ বছর বয়সেই, ধর্মপুস্তক ঘেটে সম্পূর্ন নিজে নিজে এইসব পৌরানিক কাহিনির অসারতা উপলব্ধি করতে পারেন, আবার অনেক বুড়ো-ধাড়ি পিএইচডি করা ব্যক্তিও ধরে ধরে যুক্তি প্রদর্শন করলেও সেটা গ্রহণ করতে পারেন না। এর মাঝেও কিছু মানুষ থাকেন, যারা শুরুতে ভক্তি আকড়ে থাকলেও (আর্লি এক্সপোজারের কারণে), যথেষ্ট যুক্তিপ্রমাণের (একেক জনের ক্ষেত্রে একেক পরিমানে) সম্মুখে এক সময় সত্যটা উপলব্ধি করতে পারেন।
আমরা যদি মানুষের এই যুক্তিমনস্কতা – ভক্তিমনস্কতার বৈচিত্রকে মেনে নেই, তাহলে সহজেই বুঝতে পারব যে অনলাইন আলোচনায় এমন কিছু মানুষের সম্মুখীন এক সময় না এক সময় হতেই হবে যাদেরকে যুক্তি দিয়ে বোঝালে সহজে কাজ হবে না। এবং যে পরিমান, স্পুনফিডিন করতে হবে (যদিও সে সম্ভব উগরে দেবে) সেই সময় ও সামর্থ আমাদের থাকবে না।
এ গেল, বিবর্তন বা বিশ্বতত্ত্ব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারনা বনাম পৌরাণিক ধারণার দন্দ্ব। এছাড়া, ধর্মীয় মধ্যযুগীয় নৈতিকতার মধ্যে যে অসারতা, বর্বরতা সেটাও অনেকে দেখতে পারেন না। কারণ সেটা দেখতে যুক্তিবোধ অতটা প্রখরনা হলেও, স্রেফ সমানুভুতি বা এম্প্যাথির বোধটা থাকলেই চলে। একটা মানবতাবাদী সেক্যুলার সমাজ গড়ে তুলতে একটা বড় জনগোষ্ঠির মধ্যে এম্প্যাথির প্রবণতা ও চর্চা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় অনেক মহান তর্কবাগিশের মধ্যেও এম্প্যাথির চরম অভাব লক্ষ করা যায়। এরাও তাই বর্বরতার গন্ডি থেকে বের হতে পারে না। এবং নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি আকড়ে রাখার লোভে, যুক্তি বুঝতে পারলেও ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের বিতর্ক ক্ষমতা কাজেলাগিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করেন। আর এদেরকে ভক্তি করে আরো অনেক ভক্তিবাদিই আটকে থাকে একই আবর্তে, নিজেদের মধ্যে কিছুটা মানবিকতা বোধ, সমানুভূতি ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও।
সব মিলিয়ে মানব প্রকৃতির এই বৈচিত্রকে হিসাবে রাখলে, এই লেখায় উদ্ধৃত ‘বিবর্তন-সন্ধিহান’ ব্যক্তি কেন সকল তথ্যপ্রমান হতাকা সত্ত্বেও কিছুই আমলে নিচ্ছেন না, সে বিষয় ফ্রস্টেশন সামলানো সহজ হয়। এবং এটাও মেনে নিতে সহজ হয় যে কিছু কিছু মানুষের এই ‘সেতু’ ভাঙ্গা সম্ভব হলেও এক জীবনে ‘ফিজিবল’ না (কারণ সবারই টাইম কন্সট্রেইন্ট আছে)। অন্যভাবে বললে অসম্ভব।
“…কারণ, ঐ ব্যক্তি ‘যুক্তি’ ব্যাপারটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। ফলে যুক্তি দিয়ে তাকে কিছু বোঝানো যাবে না। কিন্তু এ ধরনের হতাশাজনক অবস্থা সবার হয় না।…”
এই কারণটা চিন্তা করেছি আগে। এটা হয়তো রাইট-ব্রেইন, লেফট-ব্রেইন সমন্বয়ের মতো কিছু একটা বৈশিষ্ট্য। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি অনেকে একেবারেই মেনে নিতে পারেন না। তাদের মতো অনেকের সাথে এরকম তর্ক করে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। দেখেছি তারা অবস্থান তো বদলানই নাই, উল্টো আরো বেশি গোঁড়া হয়ে গেছেন সময়ের সাথে সাথে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় নিজেকেও দুষেছি, হয়তো আমার বারবার খোঁচানোতেই তিনি পুরোপুরি একগুঁয়ে হয়ে গেলেন। হয়তো আমার অ্যাপ্রোচ ভিন্ন হলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো…
আবার আরেকটা পর্যবেক্ষণ হলো, অনেকেই তাৎক্ষণিকভাবে বিরোধিতা করেন, কিন্তু শান্তভাবে বুঝালে পরে হয়তো সেই থ্রেডটা পড়ে দেখেন। নিজে নিজে উত্তর খুঁজতে শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে আসা পয়েন্টগুলো আরো বিস্তারিত পড়ে দেখেন। অন্য পক্ষের দেয়া লিংকগুলোও ঘেঁটে দেখেন। বাইরে মুখে না বললেও, তাদের অন্তর্গত অবস্থান সরে আসে। এরকম টেস্ট কেস খুব বেশি না, একটা-দুইটা দেখেছি। তখন থেকে এসব তর্ককে খুবই নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান থেকে দেখি। অন্যপক্ষ কিছু বললেও গায়ে মাখি না। নিজের মাথা ঠাণ্ডা রেখে পয়েন্টগুলো বলে আসি, শুনলে শুনলো, না শুনলে নাই। পরে হয়তো এদের মতোই নিজে নিজে তারা বুঝতে পারবেন, এই আশায় থাকি। রাগ করে চূড়ান্ত কিছু বললে বা তাদেরকে মুখের উপরে রিডিকিউল বেশি করলে দেখা যায় তারা পুরোপুরি ক্লোজড-অফ হয়ে যান।