আমাদের দেশের সংস্কারপন্থী মানুষেরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরা অন্য মেয়েদের বিশেষ করে তাদের তুলনায় আপাত আধুনিক বা অগ্রসর মেয়েদের সমালোচনায় ব্যস্ত থাকে। কেমন করে কাপড় পরে, ওড়না কেন গলায় দেয় বুকে না, চুল কেন রঙ করে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিংবা কারো ডিভোর্স হয়ে গেলে কেন মেয়েটি তারপরও হাসিখুশী থাকে, সাজগোঁজ করে অফিসে যায় সবই তাদের আলোচনার কিংবা সমালোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, কোন মেয়ে যখন একটা আনওয়ান্টেড রিলেশানশীপ থেকে মুক্তি পায় তখন তার কী আনন্দ হওয়া অস্বাভাবিক? কোন মেয়েদের স্বামী মারা গেলেতো আরো দুর্বিসহ করে দেয় তার জীবন। তার পোশাক হতে হবে ম্লান, তার মুখে কেন হতাশার চিহ্ন নেই, কোন কারণে হাসাতো যাবেই না কিন্তু ছেলেটির বউ মারা গেলে তার সাজ পোষাক কিংবা ব্যবহার নিয়ে কোন আলোচনা হয় না। বউ মারা গেছে তারপরও সারাবেলা ফেসবুকে থেকে এত কীসের হি হি কিংবা এতো হাসি আনন্দ কীসের কোন পুরুষ সম্বন্ধে শুনেছি কীনা মনে করতে পারছি না।
লন্ডনের ভলতেয়ার লেকচারে বন্যা আপা কেন হেসে ছিলেন, কেন রাগে ফুঁসে উঠেননি তসলিমা নাসরিনের লেখা সেই স্ট্যাটাসটাকি অনেকটা সেই প্রাচীনপন্থী মানুষদের চিন্তা চেতনাই প্রকাশ করছে না? কে কোথায় কত টুকু হাসবে কিংবা হাসবে না সেটা কী তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা সিদ্ধান্ত নয়? অন্য কেউ ঠিক করে দেবে? স্বামী বলবো না, স্বামী কথাটি সম্পর্কে অনেক সীমাবদ্ধতা আনে, বলবো সাথী হারিয়ে বন্যা আপাকে কী রকম আচরন করলে মানাবে সেটা কী তসলিমা নাসরিন বা হিলারী ক্লিনটনের বলে দেয়ার কথা। নারী স্বাধীনতার পক্ষে এতো লেখালেখি করে, প্রায় অর্ধেক জীবন নির্বাসিত থেকে তসলিমা এই চিন্তা চেতনা ধারন করছেন? লজ্জাজনক। তার স্ট্যাটাসটি খুবই লঘু চালে কিছু ভারিক্কী কথা ছিলো যেগুলোকে ছাঁচে ফেললে অনেকটা মেয়েলীপনা কিংবা কিছুটা ইর্ষার গন্ধ পাওয়া যায়।
আজকে অভিজিৎ ভাই নেই তাই বন্যা আপাকে তাঁর জন্যে, তাঁর লড়াই আর আদর্শের জন্যে এই শারীরিক – মানসিক অবস্থার মধ্যেও এদিক ওদিকের ডাকে সাড়া দিতে হচ্ছে। তিনি চেষ্টা করছেন অভিজিৎ ভাইয়ের কথা সবাইকে জানাতে, তিনি যেনো হারিয়ে না যান। ঘটনাটা কিন্তু উলটো ঘটার সম্ভাবনাও ছিলো পুরোই ফিফটি ফিফটি। অভিজিৎ ভাই সারভাইভ করে যেতে পারতেন আর বন্যা আপা নাও সারভাইভ করতে পারতেন, আক্রান্ত তিনিও হয়েছিলেন। অভিজিৎ ভাই বেঁচে থাকলে এতো বড় ঘটনার পর তারও বহু জায়গায় স্পীচ দেয়ার জন্যে, ডিসকাশনের জন্যে ডাক আসতে পারতো। অভিজিৎ ভাই বন্যা আপার স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে যদি বলতেন, “বন্যা খুবই গোছানো ছিলো, ঘর অগোছালো থাকলে খুব বিরক্ত হত, নোংরা নিতে পারতো না” তাহলে কী ঠিক একই কায়দায় তসলিমা বিরক্ত হয়ে এরকম স্ট্যাটাস লিখতেন? আপনাদের কী মনে হয় লিখতেন? এই দুজন দুজনকে সবচেয়ে কাছে থেকে জানে, দুজন দুজনের সম্বন্ধে কী বলবে, কতোটুকু বলবে, কোনটা বলবে আর বলবে না সে কী তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপের আওতায় আসতে পারে?
তসলিমা আপনার কী মনে হয় না আপনি দুজন মানুষের খুব বেশী ব্যক্তিগত সীমানায় নাক ডুবাচ্ছেন। আপনি এতোদিন যে সমস্ত স্বভাব, সংস্কার বা রীতির সমালোচনা করেছেন, দু চারটে শব্ধ আগু-পিছু করে নিলে আপনিও ঠিক একই কাজ করছেন, একই কায়দায়। অনেক তর্ক বিতর্ক আপনাকে নিয়ে থাকলেও আমরা অনেকেই আপনার পিছনে খুব শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, আপনি অযথা বিতর্ক জন্ম দিয়ে আমাদেরকে হারিয়ে ফেলবেন না যেন। অভিজিৎ ভাইয়ের মৃত্যুর পর সবচেয়ে বেশী ভেবেছি আপনার কথা। দেশে ফিরতে পারেননি সেই কষ্ট আছে আপনার বুকে কিন্ত প্রাণে বেঁচে আছেন, নির্মল আকাশের নীচে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। দেশে ফিরে গেলে এই দিনগুলো নাও পেতে পারতেন। তাই বন্যা আপাকে বন্যা আপার মত থাকতে দিন, তাকে তার মত গুছিয়ে নিতে দিন। উলটোপালটা বকে নিজেকে হালকা করা আর পরশ্রীকাতরতা বের হওয়া ছাড়া আর কিছু লাভ হবে না। বরং দিন দিন নিজের স্ট্যান্ড থেকে কত দূরে সরে যাচ্ছেন তাই প্রমানিত হতে থাকবে।
তানবীরা
১৭/০৭/২০১৫
মন্তব্যের কী আছে ? অবরোধবাসিনীর প্রবক্তার বাসায় একদিন প্রিনসিপিপাল ইবরাহীম খাঁ গেলেন দেখা করতে। বললেন, খালাম্মা আপনাকে এক নজর দেখতে চাই ? তিনি দেখা দিলেন না ! এটাই ছিল তার ধার্মিকতা । আমরা কি তা জানি ?
এসব ফাইজলামি বাদ দিয়ে ভালো হোন।
আপনাদের কী ইসলামের বিরুদ্ধাচরন ছাড়া আর কোনো কাজ নেই? এগুলো করে কী লাভ হচ্ছে? বরং 100% ক্ষতি।
“তস্লিমা নাসরিনের মেয়েলিপনা ” নামক লেখাটি পড়ে মনে হল, লেখিকা সঠিক কথাই বলেছেন। কারো ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পেরে, কিন্তু সমালোচনা কখনই করা যেতে পারেনা। বন্যা আহমেদ কি করবেন, কি ভাবে চলবেন, কি ভাবে কথা ব্লবেন, কখন হাসবেন বা কখন কাঁদবেন এইগুলি কারো বলার আপেক্ষা রাখেনা। কারো এই সম্বন্ধে কিছু বলা উচিত নয় বলে মনে করি।
সাথে সাথে একটি কথা বলব যে, তিনি বলেছেন ‘ স্বামী বলবো না, স্বামী কথাটি সম্পর্কে অনেক সীমাবদ্ধতা আনে, বলবো সাথী ‘ । এই কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। কেননা, বন্যা আহমেদ তার প্রত্যেক কথায় অভিজিৎ’ রায়কে স্বামী বলেছেন। তিনি কখনো সাথী বলেননি। আশাকরি লেখিকা এইভুল শুধ্রাবেন।
আমি আপনার সাথে একমত তানবীরা | কে কোথায় হাসবে না রেগে যাবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার | কারো কিছু বলার নেই তা নিয়ে | তসলিমা হয়ত জানেন যে শুধু রাগ দিয়ে এসবের মোকাবিলা করতে হয় | বন্যা আপা হয়ত হাসি দিয়ে করেন | লড়াইয়ের পদ্ধতি আলাদা আলাদা |
একই পথের যাত্রীরা নিজেরা নিজেরা ছোট-খাট অহেতুক বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদে
জরিয়ে পড়লে ধর্মীয় কট্টর পন্থিদের বিরুদ্ধে কলম চালাবেন কি করে? একটা কথা সব সময় মনে রাখা জরুরি বলে আমি মনে করি- ধর্মীয় কট্টর পন্থিরা মিথ্যা কিংবা অন্ধবিশ্বাস যাই ধারণ করে চলুক না কেন- তারা অনেক সুসংগঠিত, তাদের ভিত্তি অনেক মজবুত! সেই তুলনায় Atheist Group অনেক দূর্বল, অনেক Scatter . কাজেই তসলিমা নাসরিনকে যেমন নিজেদের ব্যাপারে সংযত হয়ে কথা বলতে হবে কিংবা লিখতে হবে তেমনি আমাদের সবাইকেও একই মানসিকতা পোষণ করতে হবে। কারো ভুলত্রুটি থাকলে নিজেদের ভিতর পার্সোনালি যোগাযোগের দ্বারা যৌক্তিক সমাধানে আসতে হবে আলাপ-আলোচনার দ্বারা। সনমনা নিজেদের ভিতর পাবলিকলি আক্রমণাত্বক কথা বা লেখালেখি পরিহার করতে হবে!!
“একই পথের যাত্রীরা নিজেরা নিজেরা ছোট-খাট অহেতুক বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদে জরিয়ে পড়লে ধর্মীয় কট্টর পন্থিদের বিরুদ্ধে কলম চালাবেন কি করে? একটা কথা সব সময় মনে রাখা জরুরি বলে আমি মনে করি- ধর্মীয় কট্টর পন্থিরা মিথ্যা কিংবা অন্ধবিশ্বাস যাই ধারণ করে চলুক না কেন- তারা অনেক সুসংগঠিত, তাদের ভিত্তি অনেক মজবুত! সেই তুলনায় Atheist Group অনেক দূর্বল, অনেক Scatter . কাজেই তসলিমা নাসরিনকে যেমন নিজেদের ব্যাপারে সংযত হয়ে কথা বলতে হবে কিংবা লিখতে হবে তেমনি আমাদের সবাইকেও একই মানসিকতা পোষণ করতে হবে। কারো ভুলত্রুটি থাকলে নিজেদের ভিতর পার্সোনালি যোগাযোগের দ্বারা যৌক্তিক সমাধানে আসতে হবে আলাপ-আলোচনার দ্বারা। সনমনা নিজেদের ভিতর পাবলিকলি আক্রমণাত্বক কথা বা লেখালেখি পরিহার করতে হবে”!!
চমৎকার বলেছেন, ১০০% সহমত।
ধন্যবাদ ! আপনাকে – আকাশ মালিক।
তসলিমার লেখার লিংকটা কি পেতে পারি? আর তসলিমা এখনও শ্বেত পাথরের থালার যুগে আছে। বন্যা আহমেদ যদি হেসে থাকেন তাহলে আমি মহা খুশি। এটা স্বাভাবিক জীবন যাপনের লক্ষ্মণ। আমরা শুভাকাঙ্ক্ষীরা চাই উনি স্তব্ধতাকে কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে যাপনে অভ্যস্ত হোক। ধন্যবাদ তানবীরাকে বিষয়টিকে দৃষ্টিগোচর করার জন্য।
তসলিমার স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে পেয়ে যাবেন। উনি এটি ওনার ফেসবুকে লিখেছেন।
ভালো বলেছেন ।
কেবল “অভিজিৎ দা” কে “অভিজিৎ ভাই” বলাটা কেমন চোখে লাগল। কষ্ট পাবেননা, আমার obsessive compulsive disorder এর trend আছে, তাই বললাম!!
দাদা আর ভাইয়ে তফাৎ কী?
“দাদা আর ভাইয়ে তফাৎ কী”?
তফাৎ আছে। ‘ভাই’ মুসলমান আর ‘দাদা’ হিন্দু। পানি তো আর জল হতে পারেনা। পানি দিয়ে গোসল করা যায়, স্নান করতে জল লাগে। কলাপাতার যে পৃষ্ঠায় শিন্নি খাবেন সেই পৃষ্ঠায় প্রাসাদ খেতে নেই উল্টো পৃষ্টায় খেতে হবে।
তাইলে দুধরে উভয়পক্ষই দুধ, মধুকে মধু বলে ক্যান?
“তাইলে দুধরে উভয়পক্ষই দুধ, মধুকে মধু বলে ক্যান”?
প্রশ্নটা আমিও একজনকে করেছিলাম অনেক দিন আগে। কলাপাতার ব্যাপারটা জেনেছি বলতে গেলে এই সেদিন। আহমেদ শরিফের ‘স্বতন্ত্র ভাবনা’ মোস্তফা মীরের ‘উল্লেখ্য’ আর যতীন সরকারের ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন’ সিরিজ আকারে সাপ্তাহিক খবরের কাগজে প্রকাশিত হতো। সেই লেখাগুলো পড়ার নেশায় বাংলাদেশ থেকে ডাকযোগে কাগজ আনাতাম। সাপ্তাহিক খবরের কাগজের জন্যে সারা সপ্তাহ অনাহারি ভিক্ষুকের মত চেয়ে থাকতাম। যতীন সরকারের লেখায় প্রথম জানতে পারি কলাপাতার দুই পৃষ্ঠার ফজিলত। এর পর ধর্মগ্রন্থগুলো পড়ে জানতে পেরেছি, সাম্প্রদায়ীকতার ক্লাস সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল যেদিন থেকে ধর্মের জন্ম। সেই সবক আজও শেখানো হচ্ছে মানুষের ঘরে ঘরে।
অনেক ধরনের ডিসওর্ডার আমার মাঝেও আছে। কষ্ট পাইনি, নানা ধরনের ভুল ব্যখা নিজের সম্পর্কে শুনতে শুনতে এখন অনেক পাথর হয়ে এসেছি। “সবার ওপরে মানুষ সত্য” একথাটা মন থেকে মানার চেষ্টা করি বলে কারো সারনেম দিয়ে কিংবা নাম দিয়ে তার সম্বোধন আর ঠিক করতে চাই না। বাংলাদেশে সবাইকে যেহেতু ভাই বলি তাই “ভাই” আর “আপা” তিনি যে ধর্মের, বর্নের কিংবা গোত্রের হন না কেন। কোলকাতার হলে হয়তো সবাইকে দিদি=দাদা বলতাম। কাউকে মাসী, কাউকে খালা, কাউকে পিসি আর কাউকে ফুপু বলার থেকে সবাইকে আজকাল এক সম্বোধন করার চেষ্টা করি। আমি খুব আনন্দিত আপনি এই জিনিসটি লক্ষ্য করেছেন বলে।
তসলিমা কবিতা পড়েছি ঝাঁঝ আছে । কিন্তু দর্শন গত দিক থেকে ওঁর কাছ থেকে পাওয়ার কিছু দেখেনি । নারী সমাজ কেন অবহেলিত তার বৈজ্ঞানিক কারণ না খুঁজে পুরুষ বিদ্বেষী মানসিকতা নিয়ে চলছেন ,। বর্তমানে বন্ধ্যা সমাজ ব্যবস্থা পাল্টানোর কথা না ভেবে ধর্ম ও পুরুষের বিরুদ্ধে বলেন । বিজ্ঞানের মুক্তি , নারী মুক্তি , ব্যাক্তির মুক্তি , শ্রমিকের মুক্তি আসবে না , সমাজ ও শাসন ব্যাবস্থা বিপ্লবের মাধ্যমে পাল্টাতে না পারলে । যত গালাগালি দিই না কেন , ইতর স্বব্দ ব্যবহার করি না কেন এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে মুক্তি আসবে না ।
সহমত।
নিজের ভুল স্বীকার উচিত তসলিমার।
তাই কী কেউ করে?
তসলিমার মুরদিরা, তার অপরের পারসোনাল ব্যাপারে অযাচিত পাবলিক মন্তব্য করাটাকে ‘বাকস্বাধীনতা’ মনে করে!!
প্রথমত, অভিজিৎ রায়ের ব্যাপারে বন্যা আহমেদ কী ভাববেন, কোথায় কিভাবে তার মনের অবস্থা প্রকাশ করবেন, সেটা বলে দেবার অধিকার কোনো তৃতীয় ব্যক্তির থাকতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, সেই অনভিপ্রেত মন্তব্যের যে বক্তব্য সেটাও একজন ‘নারীবাদির’ মুখে কোনোভাবেই মানায় না।
এই দুইটা পয়েন্ট যত দ্রুত তৌহিদিজনতার মাথায় ঢুকবে ততই মঙ্গল।
তৌহিদিজনতা মাথায় স্ক্রু মেরে তালা বন্ধ রাখে,” তার খোলা হাওয়া” ঢোকা নিষেধ
//”আপনি এতোদিন যে সমস্ত স্বভাব, সংস্কার বা রীতির সমালোচনা করেছেন, দু চারটে শব্ধ আগু-পিছু করে নিলে আপনিও ঠিক একই কাজ করছেন, একই কায়দায়। অনেক তর্ক বিতর্ক আপনাকে নিয়ে থাকলেও আমরা অনেকেই আপনার পিছনে খুব শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, আপনি অযথা বিতর্ক জন্ম দিয়ে আমাদেরকে হারিয়ে ফেলবেন না যেন।”//
একজন মুক্তমনা নেতা মেনে কারও পেছনে দাঁড়াতে পারে না সামনের মানুষটির ‘কিছু’ ভুল-ক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। একজন মানুষ যদি যেকোনো একটা নির্দিষ্ট ঘটনাকে “ছাগু”দের মতো করে দেখেন, তাহলে আমি নিশ্চিত ভাবেই ধরে নেই সংশয়বাদীদৃষ্টি বা কোনো ঘটনার বিশ্লেষণের মেথোডোলজিই তার ভালো মতো জানা নেই। তাসলিমা নাসরিনকে আমার খুব অল্প সময়েই সত্যিকারের মুক্তমনা চেতনার মনে হয়েছে, বাদবাকি সবসময়ই তার লেখা/কর্মের মধ্যে আমি চিরায়ত লোভী, জনপ্রিয়তাপিয়াসী, রুচীহীন, অগভীর দৃষ্টিভঙ্গীর চরম উপস্থিতি দেখেছি। তার নির্বাচিত কলাম বইটাই একমাত্র ভালো লেগেছিলো একটু কিন্তু একসময় জানতে পেরেছি সেটাও কপি-পেস্ট।
এমন একজন মানুষ বন্যা আহমেদকে নিয়ে কিছু বললে তিনি আসলে বন্যা আহমেদকে বলেন না, বলেন নিজেকে, দেখান কতোটা নিচে তিনি নেমেছেন, কতোটা বুদ্ধিহীন তিনি হয়েছেন। এইসব কথাবার্তায় বন্যাপার কোনো ক্ষতি হবে না, উনাকে যতোটুকু চিনি উনি এসব পাত্তাও দেন না, তাসলিমার মতো হিট আর সহানুভূতি কামাতে তিনি নামেন নি ময়দানে। বড় বড় মঞ্চেও না, ফেসবুকে তো নাই। সত্যিকার কর্মের ময়দাতে তিনি আছেন আরও ত্রিশ বছর ধরে, তাসলিমার ধারনা অনুযায়ি তিনমাস ধরে না যে তার কারও কাছ থেকে শিখতে হবে কী করা উচিত আর কি করা উচিত না।
আমার পোস্টটাতে খুব ছোট করে আমার বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি তাতে কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। ” আমরা অনেকেই আপনার পিছনে খুব শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছি” বলতে আমি উনাকে নেতা/নেত্রী কিছুই আসলে বুঝাতে চাইনি। তিনি বহুদিন নির্বাসনে আছেন, দেশে ফেরার তীব্র বাসনা বুকে নিয়ে আর আমি মনে করি এটি তার জন্মগত অধিকার। তিনি যাই লেখুন না কেন তাতে আমরা অনেকেই দ্বিমত পোষন করতে পারি কিন্তু তাকে নির্বাসন দেয়ার কিংবা কাউকে কুপিয়ে ফেলার কোন অধিকার কারো নেই। তাকে অপছন্দ করলেও তার দাবী ন্যায্য আর তার সাথে যা হচ্ছে তা অন্যায় আমি মনে করি। এই দাবীর পিছনে আমি আছি, একজন মানুষকে তার মাতৃভূমি থেকে বের করে দেয়া আমি সমর্থন করি না। তিনি কোন অপরাধীও নন।
আমি স্কুলের শেষের দিকে প্রথম তার লেখা পড়ি। মেয়েরা নিজের নাম ব্যবহার না করে মিসেস অমুক তমুক বলে নিজেকে পরিচয় দেয়া, স্কুল-কলেজ থেকে মেয়েদের বের হতে দেয় না দারোয়ানরা কিন্তু ছেলেরা দিব্যি বেড়িয়ে যায়, অফিস ফেরতা স্বামী টিভি নিয়ে বসে আর বউ যায় রান্নাঘরে ইত্যাদি অনেক অভ্যস্ত জিনিসগুলো যে আসলে অন্যায়, আত্মমর্যাদার প্রশ্ন সেগুলো সেই বয়সে তার কারণেই জেনেছি, এখনো আমার সেই মুগ্ধতা কিছুটা রয়ে গেছে। আমার চোখ যে সমস্ত জিনিসে অভ্যস্ত ছিলো, যাকে স্বাভাবিক ভাবতাম সেটাতে তিনি প্রথম নাড়া দিয়ে ছিলেন।
ভালবাসাতো ফিরিয়ে নেয়া যায় না। এখন তিনি নিতান্তই নিঃসংগ, প্রবাসী। আজকালকার লেখা গুলো আসলে তার ব্যক্তিগত হতাশা আর নিস্ফল ক্রোধের প্রকাশ। অন্তত আমি সেই চোখেই দেখি। দেশে থাকলে কিংবা মনের মত কাউকে পাশে পেলে তার সাহিত্য হয়তো অন্যদিকে যেতে পারতো বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমি কেন যেন এই ভদ্রমহিলার প্রতি খুব সহানুভূতি অনুভব করি। ভাল কিছু হওয়ার সুযোগ ছিলো হয়তো যা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো
তাসলিমা শর্টকাট সল্যুশন চান যা বাস্তবে অসম্ভব। আশা করি ইতোমধ্যে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন।
এ জীবনে কে কার ভুল বুঝতে পারে?
অফ টপিক- ভাই আপনি এখন লেখেন না কেন?