স্নিগ্ধা আমার প্রাচীন ব্লগ জীবনের বন্ধু। আমি তখন থাকি অ্যাটলান্টায় যেখানে তাঁর বন্ধু বন্যাও থাকেন। স্নিগ্ধার সাথে বেশি যোগাযোগ হত জি-টকে, লিখিত মাধ্যমে, সেখানেই ওঁর বন্ধুর কথা শুনি। তো সেখানেই বহুদিন অবধি আমার ধারণা ছিলো বন্যা হলো বন্যা, আর বন্যার পতিদেবের নাম রাফিদা, অর্থাৎ রাফি-দাদা। অনেক দিন লেগেছিলো সে ভুল ভাঙতে।
ভুলটুল ভাঙার পর একদিন আলাপও হলো। প্রথমে ব্লগের মাধ্যমে, অভির এক লেখায় মন্তব্য করেছিলাম তার উত্তর থেকে। তারপর কবে কীভাবে দেখা হলো সে সব আর কিচ্ছু মনে নেই। দোষ আমার স্মৃতিশক্তির নয়, সে আলাপের পর থেকে পাঁচ লক্ষ সাতাত্তর হাজার বার দেখা হলে ভুলে যাওয়ারই কথা। স্নিগ্ধার বন্ধু বলে বন্যাকেও একটু সমঝে চলতাম, বাঙালি নারীর মধ্যে মায়াবতী রূপ দেখে যিনি দিস্তা দিস্তা গপ্পো ফেঁদেছেন, তিনি এই দুজনকে দেখেননি নিশ্চিত। তো এই সবের মধ্যে কোনখানে অভির সাথে আলাপ হলো সে টেরও পাই নি। এ দোষ আমার অনবধানের নয়, যাঁরা অভিকে চেনেন তাঁরা বুঝবেন আমি কী বলতে চাইছি। একঘর লোকের মাঝে সে আছে না নেই বোঝার উপায় নেই, এমন নিশ্চুপ হয়ে থাকতে জানে সে। এমন নয় যে আড্ডা মারতে তার আপত্তি আছে কিছু, কিন্তু আমরা যারা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে সদাব্যগ্র, অভি পড়ে না সে দলে। এখন সেটা তার স্বভাববশতঃ নাকি আলস্যের কারণে, সে নিয়ে বন্যা আর আমার অনেক আলোচনা হয়েছে কিন্তু সিদ্ধান্ত এখনো হয় নি। যেমন ওদের বাড়ির বাজনযন্ত্রে রোজ সকাল এগারটা দশে সুমনের গান বেজে ওঠে। অভি সুমনের বেজায় ভক্ত, সুমনের গানের একটা চাকতি সে যন্ত্রে ভরাই থাকে, আর এমন আয়োজন করা আছে যে ঐ ঠিক এগারোটা দশে তিনি গিটার নিয়ে গলা সাধতে বসবেন। এবার এই ব্যাপারটাকে সুমনভক্তির বাড়াবাড়ি বলে মনে করা যায় নিশ্চিত। আবার এও হতে পারে যে এ হলো নেহাত আলস্যের ফল, একদা যা একবার করা হয়েছে তা আর বদলানো হয়ে ওঠে নি। রোববারের ঝকঝকে সকালে গুছিয়ে পিকান প্যানকেক আর উৎকৃষ্ট রুটি (যা বন্যার আর আমার প্রিয় আর অভি একটু পরেই নাক সিঁটকে বলবে পাঁউরুটি একটা খাওয়ার জিনিস হলো?) সাজিয়ে খেতে বসা হবে, বন্যা স্পিনাচটিনাচ আরো কী সব হাবিজাবি দিয়ে পাশবালিশের মাপে অমলেট বানাচ্ছে আর অভি ক্যাপুচিনো, তৃষা এক আলোচনায় নিয়ে আসা অসম্ভব এমন অসংখ্য বিষয় একই বাক্যে ঢুকিয়ে কলকল করে বকে চলেছে আর আমি সঙ্গত করছি তাতে, এমন সময় গাঁ-গাঁ করে সুমন গেয়ে উঠবে ‘ও গানওলা!’ সে এক অদ্ভুত আতঙ্কজনক অভিজ্ঞতা।
ওদের বাড়ির পেছনে একটা খাড়াই জমি, তাতে লম্বা লম্বা গাছ, আর ঢালটা পাইন নিডল বিছানো। যে কোনো সুস্থমস্তিষ্কের লোক বুঝবে সে ঢাল দিয়ে হেঁটে ওঠা কতো দুরূহ। আমি পিছলে পুছলে নেমে এলাম, অভি আরেক কাঠি সরেস, নিচ থেকেই এক গাল হেসে প্যাভিলিয়ানে। অতএব বন্যা বীরত্ব দেখিয়ে তরতর করে, তাও আবার সৌখিন চটি পরে, ঢাল বেয়ে উঠে কিছু একটা প্রমাণ করে ফেললো। এইসব দুর্গম জিনিসপত্র নিয়ে অভির কোনো বাজে উৎসাহ নেই, আমারও না। তো সেই অভি একদিন ঢালের পাশের সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলো দেখে বন্যার মনে আশা জাগলো বোধ হয় বাড়ির কাজকম্ম নিয়ে অবশেষে অভির আগ্রহ হচ্ছে, খুবই সুলক্ষণ। এইবার বুঝি প্রতিবেশি ভদ্রলোকের দেখাদেখি লন-মোয়ার নিয়ে সে মাঠে নামবে, কিন্তু হা হতোস্মি! তিনি টংযের ওপর থেকেই জানালেন কেন চড়েছেন, একটু প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ হচ্ছে। তবে কাজ কিচ্ছুটি করে না এমন কথা শত্তুরেও বলবে না। মাঝে মাঝেই ঝকঝকে শনিবার কি রোববার দেখে গামা মাপের স্টেক এনে বার্বিকিউ করতে কোনো ক্লান্তি নেই। তার সাথে অ্যামেরিকান বিউটি নামক একটি ককটেল, তার সাপ্লাই করে চলবে সারাক্ষণ, আমরা যে চেয়ারে বসে গুলতানি মারছি তা নিয়েও কোনো ক্ষোভ নেই। অতএব আমাদের পোয়া বারো।
খাওয়াদাওয়ার কথা উঠলে অভি এক্কেবারে খাঁটি বাঙালি, ঘন্টাখানেক ড্রাইভ করে গিয়ে বিশেষ কোনো দোকানের কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে আসবে ছুটে। আমি আসবো শুনলেই বেজায় খুশি, অতিথি আপ্যায়নের নামে ঠেসে ভূরিভোজ করা যাবে একপ্রস্থ। আর বলতে নেই, খাওয়া নিয়ে আমারও আগ্রহ কম নেই, খাওয়া ছাড়া আছেটা কী জীবনে! তারপর বাজার হবে থলে ভরে ভরে, কাটাধোয়ারাঁধা শুরু হয়ে যাবে যজ্ঞিবাড়ির মতো। বন্যা একদিকে কোরমা রাঁধছে তো অভি ঘচঘচ করে পেঁয়াজ কেটে চলেছে পর্বতপ্রমাণ। তৃষা ভীতুভীতু মুখে মাঝে মাঝে ঘুরে যাচ্ছে বোঝার জন্য যে হচ্ছেটা কী। তারপর কিছুদিন গোরুটোরু খেয়ে খুব অরুচি হলে আমার বাড়িতে নিরামিষ খাওয়ার বরাত আসতো। অভি ‘ডালটা খুব মজা হয়েছে’ বলে তা দিয়েই খেয়ে নেবে একপেট আর বন্যা কিছুতেই ডাল খেয়ে পেটের জায়গা নষ্ট করবে না, বাকি ছত্রিশ পদ তা হলে বাদ চলে যাবে যে! তবে শুধু বাড়িতে খেলেই তো হবে না, দেশের ইকোনমিকেও তো মদত দিতে হবে, অতএব ডিমসাম চলো ছুটির সকালে। কিম্বা বন্যার জাপানি সহকর্মীর উপদেশমতো খাঁটি সুশি রেস্তোঁরা। বা মেক্সিকান, যেখানে গিয়েই অভি সবচে’ বড়ো মার্গারিটা অর্ডার করে তারপর বসবে চেয়ারে।
খাওয়া ছাড়া আমরা আর কী করতাম এইটে মনে করা দুষ্কর। হ্যাঁ, সিনেমা দেখতাম খুব, শুক্কুরবার সন্ধে হলেই আমি পৌঁছে যেতাম, অভি অনলাইনে টিকিট কেটে রাখতো, তারপর গিয়ে জঘন্য কিছু একটা দেখা হতো, মাঝে আমি ঘুমিয়ে পড়বোই বার দুয়েক, আর বন্যা পারলে কান মুলে তুলে দেবে ‘সিনেমা হলে এসে নাক অব্দি ডাকিয়ে ঘুমোনো কেমন অস্বৈরণ কাণ্ড’ সেটা মনে করাতে করাতে। অথবা বাড়িতেই রাত্তির জেগে সিনেমা, এমনকি হিন্দি ছবি সে অভি একবর্ণ হিন্দি বুঝুক আর নাই বুঝুক (বন্যার মতে সেটা, অভি আদৌ মানবে না সে কথা)। সিনেমা দেখতে গিয়ে বন্যার হাজারো বক্তব্য আর অভি একেবারে মনোযোগ দিয়ে দেখবে পারলে টিভির ভেতরে ঢুকে গিয়ে, আর আমার সাধারণত আগেই দেখা বলে আমি রিভিশন দেবো। মাঝপথে বন্যা ‘এইসব ছাতামাথা মানুষে দেখে!’ বলে উঠে যাবে, বেশি ককটেল খাওয়া হয়ে গেলে একটু পরেই অভি ঘুমিয়ে পড়বে সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে, আর তৃষা থাকলে সে ফেসবুকটুক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। তো এই দম্পতি বড়োই খবরপ্রেমী, সন্ধেবেলা সারাক্ষণ সিএনএন চলে আর আমি মূর্খ মানুষ বিল মারের বেশি কিছু বুঝি না তাও তাতে ফাজলামি আছে বলেই দেখি। অভি সে খবরও দেখে প্রায় টিভির ভেতর ঢুকে গিয়ে, আর না হলে দেখবে ন্যাটজিও কি ডিসকভারি! শেষমেশ লজ্জার মাথা খেয়ে বলতেই হলো, তোমরা বড়ো বোরিং বাপু, সারা সন্ধ্যা খবর দেখো! শুনে তারপর আজেবাজে চ্যানেল চালানো শুরু হলো, তবে গিয়ে মানুষ হলো বেচারারা। হাতে ধরে না শেখালে জানতো নাকি হানি বুবু কী জিনিস!
তবে এ সবের মধ্যেও মাঝে মাঝেই অভি গায়েব! কোথায় গেলো, এই তো ছিলো এখানে, খোঁজ করে বেরোলো তিনি গুহায় বসে লিখছেন! আর যা নিয়ে হাসিঠাট্টা করি, এইটে নিয়ে করতে সাহস হতো না। যে মানুষ আলমারি-ভর্তি বই দাগিয়ে দাগিয়ে পড়ে, আবার ধারে ধারে ফুটনোট লেখে, তাকে আর কী বলি! আমার নিজের তো স্কুলের পাঠ্যবই অব্দি তকতকে সাফ থাকতো, পরের বছর নতুন বলে বেচেও দেয়া যেতো দিব্বি। অভিকে ‘কী এতো লেখো সারাদিন’ জিজ্ঞেস করাও বিপদজনক, সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রুফ ধরিয়ে দিয়ে বলবে নাও রিডিং করো! সে আরেক হ্যাপা, আমি খুঁতখুঁতে মানুষ, শুধু বানান দেখলেই তো হয় না। এদিকে লেখার স্টাইল নিয়ে অভির সাথে আমার আদৌ বনতো না, আমার পছন্দ অভির বাবার লেখা বাঙালির ইতিহাসের শৈলী, আর অভি লিখবে জলবৎ করে, বনবে কী করে। আমাকে দিলো ওকাম্পোর চিঠি অনুবাদ করতে, তা মহিলার পেঁচানো পেঁচানো বাক্য পড়ে আমার মাথা খারাপ! কিন্তু সে সবের মধ্যে দিয়েও কোন ফাঁকে যে গোটা বইটা লিখে ফেললো সে এক রহস্য! আমি তো সাত খানা চিঠি অনুবাদ করেই গলদঘর্ম!
তো এই অব্দি লিখে দেখলাম বেশ লম্বা হয়েছে লেখাটা, কাজেই আর না লিখলেও হয়, নইলে আমাদের সম্মিলিত আনন্দদিনের গল্প তো ফুরোবার নয়। তার চেয়েও বড়ো কথা, অনেকেই এতোক্ষণে জেরবার হয়ে গেছেন, এই গল্প শোনানোর কারণ খুঁজে ক্ষান্তও দিয়েছেন হয়তো। শেষ করার আগে সে কারণটা বলে যাই বরং। পুরো দু মাস হলো সেই দিনের আজ। পৃথিবী ঘুরে চলেছে নিজের ছন্দে, বসন্ত এসে গাছে পাতা গজাচ্ছে যেমন গজায়, মানুষজন উইকেন্ডের প্ল্যান বানাচ্ছে। তার মধ্যে পৃথিবীর একখানে একজন অভিজিৎ রায় ফুটপাথে শুয়ে আছে ছায়াশরীর নিয়ে, লোকজন হেঁটে চলে যাচ্ছে না জেনে যে এইখানে একজন শুয়ে শুয়ে ফুটপাথের ধুলো মাখছে। আর যারা রয়ে গেছে তারা খাতা পেন্সিল নিয়ে ভাবছে হিসেব তো মেলে না! নাস্তিক আস্তিক হিন্দু বৌদ্ধর বাইরেও তো সে একটা আস্তো মানুষ ছিলো, চাকরি করতো, খেতো ঘুমোতো আর না হয় দিস্তা দিস্তা লিখতো, তো তার হিসাবটা কোনখান দিয়ে গলে পড়ে গেলো কে জানে!
আমাদের কলকাতার পাড়ায় নীহারদের বাড়িতে জোড়া শীতলা পুজো হতো। পরের দিন সে প্রতিমা বাইরে দাঁড় করিয়ে দিতো, রোদে জলে একটু একটু করে ধু্যে যেতো রঙ, ক্ষয়ে যেতো মাটির আস্তরণ, শেষে দেখতাম পড়ে আছে বিচালির কাঠামোটা। সময় তার নিজের ছন্দে অভিজিতের কথাও আমাদের ভুলিয়ে দেবে একদিন, আমি তাক থেকে পুরোনো টিশার্ট নামাতে গিয়ে ভাবব এইটা অভি দিয়েছিলো আমাকে অনেক কাল আগে। কিন্তু সে সব বিস্মরণের আগে আমার এই যৎকিঞ্চিৎ সাধ্য দিয়ে সেই ভবিষ্যতের জীর্ণ কাঠামোর গায়ে আরেকবার রঙ চড়াতে চাই, কোনো মহত্বের রঙ না, বাগ্মী জননেতার লার্জার-দ্যান-লাইফ ছবিও না, স্রেফ সাদামাটা মানুষের দৈনন্দিনতার আভাস, গেরস্থালির আবছায়াটুকু মাত্র। একজন মানুষ আমাদেরই মতো, যে পাজামা পরে সকাল বেলা চা বানাতো, রাত্তিরে একপেট খেয়ে খুব তৃপ্তি করে পানমশলা চিবোতো, রোববারের সকালে আধঘন্টা বেশি ঘুমোতে পেলে আর কিচ্ছু চাইতো না। আর এ সবের মধ্যে সে একমনে গেঁথে যেতো ভবিষ্যতের সিঁড়ি, নিজের জন্য না, যে কিশোর আজ নতুন চোখে অস্বীকার করছে অর্থহীন রীতিকে, যে কিশোরী ঘেরাটোপের বাঁধন ভাঙতে চাইছে প্রাণপণে, তাদের কথা ভেবে। আমি চাই তারা দেখুক মানুষকে সত্যিমিথ্যা চেনাতে গেলে দেবদূত হতে হয় না, আটপৌরে জীবনের চেনা সুরেই জন্মায় মুক্তির গান। সে যুদ্ধের কোল্যাটেরাল হিসেবে এইটুকু বলে গেলাম।
ব্লগার অভিজিৎ রায় একজন মুক্তচিন্তা একটি মুক্তমনের প্রতীক । যিনি চিন্তা দিয়ে জয় করেছেন অনেক কিছু কিন্তু জয় করতে পারেন নি ধর্মীয় গোড়া দের চিন্তা যাদের কে ধর্ম বানিয়েছে পুরোপুরি অন্ধ । ঠিক তাদের হাতেই জীবন দিতে হলো মুক্তচিন্তা ও মুক্তমনের প্রতীক মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ব্লগার অভিজিৎ রায়কে । মৃত্যু বা হত্যা কাউকে পারাজিত করতে পারেনি বরং এ ধরনের হত্যাকারীরা ই বার বার পরাজিত হয়েছে মুক্তচিন্তা মুক্ত বিবেকের কাছে । অভিজিৎ রায় খুন হয়েও মাথা নত করেনি ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্টির কাছে বরং অভিজিৎকে হত্যাকরে ওরা প্রমান করেছে ওরাই অপশক্তি । মরে গিয়েও অভিজিৎ আজীবন মাথা উঁচু করে বেঁচে থকবে দুনিয়ায় সমস্ত অপশক্তির উৎস মৌলবাদীদের লাথি মেরে মুক্তচিন্তা ও মুক্তমনের প্রতীক হয়ে । অভিজিৎ আপনাকে নিয়ে শোকর মাতম করবো না গর্বের উল্লাস করবো । অভিজিৎ আপনি আমাদের গর্ব ।
খুব জীবন্ত একজন মানুষের স্মৃতিচারণ পড়লে কেমন যেন লাগে, বিশ্বাস হয়না যে তিনি মৃত। কোনোভাবেই না।
আমাদের অভিজিৎ রায়ের ঘরোয়া দিকটা আমরা অনেকেই জানতাম না। ধন্যবাদ রাজর্ষি। আরো অনেক লেখা আশা করছি আপনার কাছ থেকে।
কলম চলুক।
সময়ের সাধ্য কি অভি দা’র কথা ভুলিয়ে দেয়? তাছাড়া আমরাই এখন অভিজিৎ।
আটপৌরে অভি দাকে খুব ভালো লাগলো। লেখাটি খুব মায়াবী।
অভিজিৎ রায় এক আবেগের নাম। যুক্তির নাম। লেখাটি পড়ে আবেগ সামলানো কঠিন। অভিজিৎ রায়ের এর সাথে আপনার স্মৃতিগুলো আরও জানানোর অনুরোধ রইল।
একদম সত্যি কথা বলেছেন…
আর গতকয়দিন কেবল অভিজিৎ কে স্বপ্ন দেখছি এবং ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠি । এরপর আর ঘুমাতে পারি না,শুধু কষ্টের বোঝা ভারী হয় এবং শূন্যতায় বুক ধড়পড়িয়ে মরে।
অভির সাথে অনেকবার টেলিফোনে কথা হলে শেষের দিকে মৃত্যুহুমকি যখন তার প্রতি বাড়ছিল এনিয়ে প্রশ্ন উঠালে বলত ভাই,” জেনে শুনে যখন সাগরে দিয়েছি ঝাপ তবে মরনের কি ডর “।এ বাক্যটিই গতদুমাস শুধু আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে এবং সে সেটা ক্ষনস্থায়ী এই জীবন মৌলবাদীদের অপঘাতে বলির পাঠা হয়ে আমাদের প্রত্যেকের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গেছে।
অভি বাংলার বিজ্ঞানমনস্কতার রেনেসান্সের সোনালী নক্ষত্র যার প্রভাব মৃদু মৃদু করে একদিন সোনালী আলোর আভা বাংলার সমাজে ছড়াবে একথা নির্দ্বিদায় বলা যায় যেমন কোপারনিকাস,গ্যালিলি ও ব্রুনোরা ইউরোপে ছড়িয়েছিল এবং যার সুফল আমরা পুরো মানবজাতি ভোগ করছি।
গত রাতে বার বার বন্যাকে স্বপ্ন দেখেছি।স্বপ্নগুলি তার সাথে সুখের ও দুখের দুটোই ছিল।বন্যা যেন শাররিক ও মানসিকভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে এ কামনাই করছি।
জয়তু মক্তমনা।
জয় বাংলা।
কলম যুদ্ধের দ্বারা আমাদের জংধরা ভোতা মাথা চূর্ন-বিচূর্ন হয়ে যাক……
রাজর্ষি দা,
কি যে অদ্ভূত সুন্দর একটা দিনলিপি তুলে ধরেছেন, চোখের কোণ ভিজে আসে! এই মুক্তমনার আ্যকাউন্টা এবং এর আইডি ও পাসওয়ার্ড ওনারই দেওয়া। মেইল করে বলেছিলেন পাসওয়ার্ডটা আপনি বদলে নিতে পারেন। বদলাইনি। আলস্যের কারণে নয়, মনে রাখতে সুবিধে সেই জন্যে! এর পরে তাঁর সাথে অনেক অনেকবার কথা হয়েছে। মেইল চালাচালি হয়েছে, কিচু কিছু বিষয়ে উপদেশ আর কিছু কিছু বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। এখন সব স্মৃতি! মুক্তমনার জন্যে লিখবো মনে হলেই আজকাল মনটা হু হু করে। অনেকবার লিখতে বসেও পারিনি। ফরিদ ভাই তাগাদার পর তাগাদা দিয়েছেন, শ্রদ্ধাসহই মনে মনে ক্ষমা চেয়ে নিয়েও চেষ্টা করেছি.. এখনো পারিনি। কিন্তু নিয়মিত এখানে আসি। আমার বড় আপন আড্ডাখানা এটি। কিন্তু কেমন যেনো শুন্যতায় ভরা এখন! তবে যে আলো তিনি জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, তা জ্বলবে অনন্ত পর্যন্ত সে জানি। এও জানি আজ যারা বড্ড অবহেলায় পাশে সরিয়ে রেখেছে অভিজিৎ নামের একটা ভীষন ভারী অথচ সুকোমল আলোর উৎস একদিন চোখের জলে তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে তাদের।
অভিদা নেই এখনও আমার বিশ্বাস হয় না দাদা। চায়ের কাপে করে মার্গারিটা খেতে খেতে মঙ্গলবার রাতেই কতো গল্প হলো। সেরাতেও হুমকি নিয়ে কথা হয়েছিলো। অভিদা “ধূরো, আমাকে কে কী করবে? কেন করবে?” উলটা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে টচ্ছে নাকি … অভিদার মতো আমিও দুঃস্বপ্নেও ভাবি নি আমাদের চারপাশের মানুষগুলো এভাবে পঁচে গেছে, এখনও আমার ঘোর কাটছে না।
আর এ সবের মধ্যে সে একমনে গেঁথে যেতো ভবিষ্যতের সিঁড়ি, নিজের জন্য না, যে কিশোর আজ নতুন চোখে অস্বীকার করছে অর্থহীন রীতিকে, যে কিশোরী ঘেরাটোপের বাঁধন ভাঙতে চাইছে প্রাণপণে, তাদের কথা ভেবে। আমি চাই তারা দেখুক মানুষকে সত্যিমিথ্যা চেনাতে গেলে দেবদূত হতে হয় না, আটপৌরে জীবনের চেনা সুরেই জন্মায় মুক্তির গান। (y)
আমার কাছে অভিজিৎ রায় একজন রূপকথা। প্রতিদিনের ঘুম ভাঙ্গার পরে যেমন মনে হয়, নতুন একটি দিন শুরু হল তেমন সারাদিনের নানা কাজের মাঝে ঘুরে ফিরে মনে হয় অভিজিৎ রায় কে ওরা মেরে ফেললো ! সন্তানকে খাওয়াচ্ছি, অফিসে কাজ করছি, বাসে বসে আছি, নানান চিন্তার মধ্যেই এই চিন্তাটিও ঘুরে ফিরে আসে প্রতিদিন। অথচ দুই মাস আগের সময়গুলি এমন ছিল না, উনার লেখা পড়তাম, মন্তব্যগুলি পড়তাম, কিন্তু এতটা আচ্ছন্ন হয়ে থাকতাম না। ফেইসবুকে উনার ফলোয়ার ছিলাম, কত কিছু যে জেনেছি উনার কল্যানে। আমাদের ঘরে উনার বইগুলি সারিবদ্ধ হয়ে আছে, পড়ি, অন্যদের পড়তে দিতাম। এখন যেটা করে করি, যেচে পড়ে মানুষকে উনার কথা বলি, উনার লেখা পড়তে দেই, লিঙ্ক দিই, বই দিই, দুই/চারদিন পরে আবার জানতে চাই, কেমন লাগলো, কোথায় খারাপ লেগেছে।
দুইমাসে পরিবর্তন এই, সামনে আরো হবে।
চাপাতির ধার যে দিতে চায় দিক, আমি শানিত করব আমার যুক্তি, নতুন প্রশ্ন, নতুন প্রশ্নকারী আসবে আরো। কত চাপাতি আসবে, আসুক না
অভি নেই। দু’মাস আগে খুন হয়ে গেছে বাংলাদেশের ফুটপাতে ইসলামিস্টদের হাতে। আমরা তার স্মৃতিচারণ করছি। হরর রূপকথার মতো মনে হয়। কিন্তু সত্যি। আমাদের সবার শোক ও বেদনা বিপুল শক্তিতে পরিণত হোক। বারুদ ঝরুক সবার কলম থেকে। এই হত্যার বিচার হতেই হবে। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
মুক্তমনায় স্বাগতম জানুন। নিয়মিত লিখুন।
অনেক দিন পর মুক্তমনায় ঢুকতে পারলাম। ঢুকেই আপনার লেখাটা পড়লাম। আমার বিজ্ঞান বিষয়ে জানা অভিজিৎ স্যারের বই পড়া দিয়েই বলা যায় শুরু হয়েছে। তার ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে জানলাম। স্যারের আর নতুন বই পড়া হবেনা ভাবতেই ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
গলার ভেতর আবার সেই অদ্ভুত গিঁট বাঁধা অনুভুতি ফিরে এলো। খুব যত্ন করে বলেছেন। ফের লিখলে সবগুলো অক্ষর পড়বো, খুব যত্ন করেই।