একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম। শৈশব থেকেই নানাবিধ ধর্মীয় , সামাজিক ও পারিবারিক অত্যন্ত কঠোর কিছু নিয়ম-কানুন ও আচার-আচরণের মধ্যে আমাকে দিনাতিপাত করতে হয়েছে। তারমধ্যে ধর্মীয় রীতিনীতিগুলোই ছিল কঠোরতম। আমার বাবা-মা ধর্মপ্রাণ মুসলিম। বাবা নিয়মিত এবাদত করতেন না। কিন্তু ধর্মীয় আইন-কানুন আমার উপর কঠিনভাবে প্রয়োগ করতেন। মা অতিরিক্ত ধর্মপ্রাণ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সাথে আরো কয়েক ওয়াক্ত যোগ করে পড়েন। রোজা ৩০টার সাথে আরো বেশ কয়েকটা যোগ করেন। নিয়মিত কোরান তেলাওয়াত ত আছেই। ওঁরা দুজনই খুব কড়াকড়িভাবে ধর্মীয় নিয়মনিষ্ঠ হলেও বিদ্যাশিক্ষার বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। চাইতেন আমারা ভাই-বোনেরা যাতে অনেক অনেক পড়াশোনা শিখি। ছোটবেলা থেকেই আমার উপর কিছু আইন পাশ করানো হয়েছিল। যেমন; ১। উচ্চৈঃস্বরে হাসা বা কথা বলা যাবেনা। ২। খেলাধুলা করা যাবেনা ৩। বিপরীত লিঙ্গের কারো দিকে তাকানো যাবেনা ও তাদের সাথে কথা বলা যাবেনা। ৪। এবাদত বন্দেগী করত হবে নিয়মিত ৫। ভূপৃষ্ঠের দিকে তাকিয়ে পথ চলতে হবে। ৬। ভুলেও মনে কখনো প্রেম ভালবাসা উঁকিঝুঁকি মারতে পারবেনা। ইত্যাদি। কারণ এসব ইসলাম বিরোধী নিষিদ্ধ পাপকর্ম এবং বিশেষ করে মেয়েদের ওগুলো করতে নেই। আমার স্বভাব-চরিত্র ও জীবনযাত্রা ধর্মীয় বিবেচনায় নিষ্কলুষ রাখতে আমার বাবা-মা সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। আমাকে কীকরে সম্পূর্ণরূপে ইসলামজীবী করে তোলা যায় সেজন্য নানারূপ উপায় ও পদ্ধতি উদ্ভাবনে চিন্তিত থাকতেন। যেমন আমি স্কুল থেকে ফিরে এলে জিজ্ঞেস করা হত, ভূপৃষ্ঠ ব্যতীত অন্য কোন দিকে তাকিয়েছিস, কোন ছেলের সাথে কথা বলেছিস, কোন ছেলে তোর দিকে তাকিয়েছে? মাঝে মাঝে আমার পড়ার টেবিল ও বইখাতার উপর তল্লাসির চিরুনি অভিযান চালানো হত। দৈবাৎ যদি কোন কিশোরের লেখা পত্র টত্র পাওয়া যায়! অবশ্য একাজে ওঁরা সর্বদা নিরাশ হতেননা কালে ভাদ্রে যে কোন ছেলের লেখা পত্র পাওয়া যেতনা তা কিন্তু নয়। তারপর শুরু হত ভর্ৎসনা, বেধড়ক মারধোরের কথা ত বলাই বাহুল্য।
আমি স্বাভাবিকভাবেই জন্মসূত্রে মুসলিম ছিলাম। মানে বাবা-মা কর্তৃক মগজধোলাইকৃত ও বাধ্যতামূলক মুসলিম। মা দিবানিশি এবাদত নিয়েই থাকতেন। যখন-তখন প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে ধর্মীয় ঔচিত্য-অনৌচিত্যের কথা বলতেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এরকম নূরানি বেষ্টনীর ভেতরে থেকেও আমার মনের গহীনে ইসলামী নূর তেমন একটা প্রবেশ করতে পারেনি। বিশ্বাসী ত ছিলাম কিন্তু ধর্ম-কর্ম মোটেই করতে চাইতাম না। মা আমায় আরবী পড়তে বলতেন। আর আমি ছিপারা সামনে নিয়ে হাউ মাউ কাউ করে কাঁদতে থাকতাম। কাজেই নিয়মিতভাবেই আমার উপর হালকা, মাঝারি ও তীব্র বেগে উত্তম-মধ্যম চলতে থাকত এবং বিভিন্ন ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ভর্ৎসনা বর্ষণও চলত। যেমন; মরলে কোথায় যাবি, অনন্ত অনলে কীকরে জ্বলবি, যে পরকালে নিশ্চিত দোজখে যাবে ইহকালের তার কী মূল্য, নিজে দোজখে যাবি আমাদেরও পাঠাবি নাকি প্রভৃতি। আমি শেষরাতে অতি আরামের ঘুম হারাম করে কখনো নামাজ পড়তে শয্যাত্যাগ করতাম না। তাই ধর্মীয় উপদ্রবের মধ্য দিয়েই দিনের শুরু হত। একইভাবে দিনের শেষ হত। কারণ আমি এশার নামাজও পড়তাম না। আমি শুয়ে শুয়ে দোজখের ভয়াবহ ছবি কল্পনা করে কাঁদতাম তবুও নামাজ পড়তাম না।
নামাজ একেবারেই যে পড়তাম না তা কিন্তু নয়। মাঝে মাঝে পড়তাম। কখনো দোযখের ভয়ে, কখনো মারের চোটে বাধ্য হয়ে পড়তাম। কখনো পড়ার ভান করতাম। তবে বেশির ভাগ সময়ই পড়তাম না। আমার আস্তিক-জীবনে আমি কোনদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়িনি। বড়জোড় ২-৩ ওয়াক্ত। রোজা রাখতাম কয়েকটা। আমি বেনামাজি হলেও আল্লার কাছে মনে মনে সারাদিন প্রার্থনা করতাম। আল্লা এটা দাও, ওটা দিওনা। এটা কর, ওটা করোনা। এটা যেন হয়, ওটা যেন না হয় ইত্যাদি। আমার কাছে ১০-২০ টাকা যা-ই থাকত তার সিংহভাগই সওয়াব বা কোন কাজ হাসিলের উদ্দেশ্যে মসজিদ বা মাদ্রাসায় দিয়ে দিতাম। এবং আল্লাকে প্রলোভন দেখাতাম যে,”আল্লাহ যদি অমুক কাজটা করে দাও তাহলে কষ্ট করে জোগাড় করে আরো ১০ টাকা দেব। কাজ হলে মনে করতাম ঘুষের সুফল। আর না হলে মনে করতাম, এত কম টাকায় কীকরে হবে। স্কুলজীবনে আমার গণিতাতঙ্ক ছিল। অংক বই দেখামাত্র ভয়ে শিউড়ে উঠতাম। বাসায় কখনো অংক করতাম না। সযতনে বইটি লুকিয়ে রাখতাম যাতে ওটা দেখে ভয় পেতে না হয়। অংক পরীক্ষার আগে আল্লার দরবারে খাস দিলে প্রার্থনা করতাম যাতে অকস্মাৎ ঝড় তুফান এসে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়, যাতে অংক পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়। প্রার্থনা কখনো কবুল হয়নি। কারণ আমার অংক পরীক্ষা কখনো বাতিল হয়নি। অনন্যোপায় হয়ে দুরুদুরু বক্ষে, কম্পিত হস্তে পরীক্ষা দিতে যেতাম। যতটুকু পারতাম ভয়ের চোটে তাও ভুল করে দিয় আসতাম। অন্যান্য বিষয়ে মোটামুটি ভাল নম্বর পেতাম। অংকে পেতাম ৩৫-৪০। আমার স্যাররা বলতেন, অংকে লেটারমার্ক। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক লুৎফর কবীর স্যার তাঁর একনিষ্ঠ পরিশ্রমে গণিতশাস্রকে আমার কাছে কিছুটা সহজবোধ্য ক’রে তুলেছিলেন। আমার গণিতভীতি কিঞ্চিত কমিয়ে দিয়েছিলেন। অংক করতে বসে বিদঘুটে বিদঘুটে প্রশ্ন করে সর্বদা স্যারকে অস্থির করে তুলতাম। তিনি কখনো বিরক্তি প্রকাশ করতেন না। আমার সব অর্থহীন বিরক্তিকর প্রশ্নের জবাব দিতেন চরম ধর্য্যের সাথে। আজ আমার এই সামান্য লেখার মাধ্যমে স্যারকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। জানিনা এই লেখা কভু উনার দৃষ্টি গোচর হবে কিনা।
এভাবে কেটে গেল অনেক বছর। আমার মেট্রিক পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এল। আমার এখনো ছিপারা শেষ হলনা। পরীক্ষার আগে পাঠ্য বইয়ের চেয়ে বেশি দোয়াদরুদ পড়েছিলাম। যাতে সুস্থ শরীরে সহিসালামতে পরীক্ষা দিতে পাড়ি। আমার একটা অসুখ ছিল। আল্লার দরবারে বেশি করে প্রার্থনা করেছিলাম যাতে পরীক্ষার সময় আমি সুস্থ থাকি। আমার মাও রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়ে বিভিন্ন রকমের এবাদত করতে লাগলেন। মসজিদে দোয়া ও মিলাদ পড়ালেন, আল্লার ঘরে কিছু টাকা দিয়ে আল্লাকে ঘুষ দিলেন। আমাদের সমবেত তোষামোদ ও ঘুষ তিনি গ্রহণ করলেন ঠিকই (কারণ সেগুলো আজ পর্যন্ত ফেরত আসেনি) তবে বিনিময়ে কাজের কাজ কিছুই হলনা। আমি প্রচণ্ডভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আমি পরীক্ষার চিন্তায় ছটফট করতে করতে আরো বেশি অসুস্থ হলাম। কোন পড়াশোনা করতে পারলাম না। কোন রিভিশন করতে পারলাম না। তবুও বিসমিল্লাহ বলে কোন রকমে পরীক্ষা দিয়ে দিলাম। আমার পরীক্ষা শেষ হল। কিন্তু হায় তখনো আমার ছিপারা খতম হলনা!
এবার বাবা-মা আমায় নিয়ে কোমর বেঁধে লাগলেন নূরানি শিক্ষা দিতে। প্রতিদিনই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে লাগল। ছিপারা পড়তে বসে মুখ গোমরা করে চুপ করে থাকা, কান্নাকাটি করা, তারপরে চুলটানা-কানটানা-গালটানা-কাঠির বাড়ি খাওয়া; আরো চড়া গলায় কান্না। এভাবে কয়েক ঘণ্টা। আমাদের বাড়িতে কেউ বেড়াতে আসলে মাকে জিজ্ঞেস করত,’ঝুমু কোরান খতম কয়বার করেছে?’ মা ইতস্তত করে আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে, দাঁত কড়মড় করে বলতেন,’ করেছে ত কয়েকবার।‘ আমি সাময়িকভাবে খুব লজ্জা পেতাম। নিজের উপর ধিক্কার জন্মাত। মনে মনে পণ করতাম,” যেকোন ভাবেই কোরান খতম করবই করবই।“ কিছুক্ষণ পরেই লজ্জা ও পণ উবে যেত। বাবা-মা আদা-জল খেয়ে লেগে রইলেন। অবিরত বলে যাচ্ছেন, “নামাজ পড় কোরান পড়। নাহলে সমাজে মুখ দেখানো যাবেনা। তোমার বিয়ে শাদী হবেনা। আর বলাই বাহুল্য যে নরকেও জায়গা হবেনা।“ আমি শুধু বলতাম, কালকে থেকে শুরু করব ইনশাল্লাহ। এদিকে লুকিয়ে রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের উপন্যাস পড়তাম। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ভয়-ভীতি প্রদর্শনে তেমন কার্যকরী ফল দেখা যাচ্ছিলোনা দেখে বাবা খুবই মর্মাহত হয়ে ঘোষণা দিলেন, “ তোমাকে নিয়ে আর পারছিনা। তোমাকে দ্বীনী শিক্ষা প্রদানের নিমিত্তে মৌলবি নিযুক্ত করা হয়েছে।“ আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। পরদিন বিকেলে দেখলাম চিবুকে স্বল্পসংখ্যক দাড়িযুক্ত, গোল পাঞ্জাবী পরিহিত এক মৌলবি সত্যিই আমাকে পড়াতে হাজির। আমি ওজু করে নাক পর্যন্ত ঘোমটা টেনে তার সামনে ছিপারা নিয়ে হাজির হলাম। অজানা কারণে অবিলম্বে উচ্চৈঃস্বরে কান্না জুড়ে দিলাম। মৌলবি কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও দিশেহারা। বাবা-মা লজ্জিত ও দিশেহারা। আমার কান্না শুনে আমাদের প্রতিবেশীরা চারদিক হতে একে অপরকে ডেকে জনস্রোতের মত ছুটে এসে জানালায় উঁকিঝুঁকি দিতে লাগল এবং এক অভূতপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে লাগল। ওরা কানাকানি করতে লাগল, ছি ঝুমু এখনো কোরান খতম করেনি! তাদের দেখে আমার কান্নার স্বর সপ্তম ছেড়ে নবম দশমে পৌঁছে গেল। বয়েসে আমার চেয়ে অনেক ছোট যারা তারাও কোনার খতম করেছে আমি করতে পারিনি। এই লজ্জা রাখি কোথায়? এই লজ্জাজনক গোপন ব্যাপারটি অনেকেই জানত না। আজকে সবাই জেনে গেল! জনসমাজে আমার এত অপমান! মনে মনে বলতে লাগলাম ধরণী দ্বিধা হও। মৌলবি আমাকে কয়েকটা সুরা জিজ্ঞেস করলেন। আমি দুই একটা পেরেছিলাম, বেশির ভাগই পারিনি। বাবামা লজ্জায় ভূমিসাৎ হলেন এবং বেদ্বীন কন্যার কারণে আখেরাতে অনন্ত দোজখবাস সম্বন্ধে সুনিশ্চিত হলেন। মা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন,’ আলেমের ঘরে জালেম।‘ বাবা বললেন, ওকে কোন নেককার দ্বীনী ছেলের হাতে তুলে দিতে হবে। আমরা ত ব্যর্থ।‘ মৌলবি বাবা-মাকে আশ্বস্ত করলেন। বললেন, আমাদের নবিজী ৪০ বছরে নবুয়ত পেয়েছেন। বৃদ্ধ বয়েসে ইসলাম গ্রহণ করেও অনেকে সুরা কেরাত শিখে আল্লার পথে চলছে। আল্লার রহমতের কোন শেষ নেই।“ আমাকে পড়াতে তিনি কয়েকদিন এসেছিলেন। আমার অনাগ্রহ ও কান্নাকাটি দেখে ব্যর্থমনোরথ হয়ে শেষ পর্যন্ত আশা বন্ধ করলেন। আমাকে প্রকাশ্যে ও আড়ালে অনেকেই টিটকারি করতে লাগল। মৌলবি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দ্বীনী বাবা-মায়ের বেদ্বীন কন্যার কুৎসা রটিয়ে সওয়াব হাসিল করতে লাগলেন। ক’টি মাস কাটল চরম দুর্বিসহ ধর্মীয় আজাবে। তারপরে আমার পরীক্ষার ফলাফল বের হল। আমি কলেজে ভর্তি হলাম ও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার গ্লানিবোধের পরেও নিজের দ্বীনী অবস্থার উন্নতি সাধনের কোন চেষ্টাই করলাম না। ১৫-১৬ বছরের একটি মেয়ে ছিপারাও শেষ করেনি এটা ধার্মিকদের কাছে হাস্যকর ও লজ্জাজনক মনে হবে। আমারও তাই মনে হত। এখন মনে হয় না পড়ে ভাল করেছিলাম। শুধু শুধু দুর্বোধ্য কিছু বুলি আউড়ে সময় নষ্ট।
শৈশবে ইসলামী পরিমণ্ডলে আবদ্ধ ছিলাম। আস্তিক ছিলাম। আমার এক নাস্তিক ফুপাত ভাই বলত, “আল্লা মানুষকে বানায়নি। মানুষই আল্লাকে বানিয়েছে।“ আমি কানে আঙুল দিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালাতাম।ধার্মিক মানুষদেরকে ফুলের মত পবিত্র মনে করতাম। যারা ধর্ম-কর্ম কম করে তাদের মন্দ মনে করতাম। তারপরেও ধর্ম পালনে আমার এত অনীহা ছিল কেন জানিনা। আরবী ভাষায় আজ পর্যন্ত আমার কোরান খতম হয়নি। বড় হয়ে নিজের ভাষায় যখন পড়লাম তখন আজন্মলালিত ধর্ম ছাড়তে বাধ্য হলাম। আমার ধর্ম ছেড়ে যুক্তিবাদী নাস্তিক হবার ব্যাপারে একমাত্র অবদান হচ্ছে নবি মুহাম্মদের। তার রচিত কোরান যদি এতটা জঘন্যতম ও বর্বরতম না হত তাহলে হয়ত আমার ধর্মবিশ্বাস এত তাড়াতাড়ি উবে যেতনা। ফরিদ দাদা যেমন বলেছেন, ধর্ম ছাড়তে উনাকে বিজ্ঞান, দর্শন পড়তে হয়নি। তেমনি আমাকেও পড়তে হয়নি বিজ্ঞান, দর্শন বা নাস্তিকতার জ্ঞানগর্ভ কোন বই বা আস্তিকতার অসাড়তা সম্পর্কে কোন কিছুই। কোরানের কয়েক পৃষ্ঠা পড়েই বুঝে গিয়েছিলাম এসব বানোয়াট। মুহাম্মদের প্রতি বেশিরভাগ নাস্তিকই ঘৃণা প্রদর্শন করে থাকেন। আমিও করি। কিন্তু আমার নাস্তিক হবার ব্যাপারে যেহেতু পুরো কৃতিত্বটাই তার সেহেতু একটা ধন্যবাদ অন্তত আমার কাছ থেকে তার প্রাপ্য আছে। কী বলেন পাঠক?
কোরানের কয়েক লাইন পড়েই আমার মনে সন্দেহ ও প্রশ্ন দানা বেঁধে উঠেছিল। কিন্তু এ নিয়ে কার সাথে কথা বলব, কাকে প্রশ্ন করব। যার সাথেই কথা বলতে চাই সে-ই আসতাগফেরুল্লাহ পড়তে শুরু করে, আর বলে, এসব বাজে কথা কোরানে নেই এগুলো তোমার বানানো কথা। মনে অশান্তি নিয়ে প্রশ্নের হিমালয় নিয়ে পড়া বন্ধ করে দিলাম। আবার কৌতূহলবশতঃ দুই এক লাইন পড়ি। প্রশ্নের হিমালয়ের উচ্চতা বাড়তে থাকে, অস্থিরতা আরো বেশি। আবার পড়া বন্ধ। এভাবে দীর্ঘ সাত বছর লেগে গিয়েছিল আমার কোরান শেষ করতে। তারপর ত পড়েছি অসংখ্যবার। এই মূল্যহীন, বর্বর বইটি পড়ে ও একে নিয়ে ভেবে ভেবে আমি যে সময় নষ্ট করেছি সে সময়ে অন্তত এক’শ ভাল বই পড়তে পারতাম। কোরান শেষ করে যখন আমি ক্ষোভ ও প্রশ্ন ভারাক্রান্ত তখন আমার ছোট ভাইয়ের কাছে সন্ধান পেলাম মুক্তমনার। দিনরাত নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে মুক্তমনা পড়তে লাগলাম। এর সাথে একাত্ন হয়ে গেলাম। এক সময় স্বপ্ন জাগল মনে, ইস আমিও যদি মুক্তমনায় লিখতে পারতাম! একদিন সে অসম্ভব স্বপ্ন পূরণ হল। এখন মুক্তমনা আমার আশ্রয়, আমার প্লাটফর্ম। এখানে আমি মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি, আলোচনা করতে পারি, প্রশ্ন করতে পারি, মনের ভার লাঘব করতে পারি। মুক্তমনা থেকে আমি পেয়েছি অনেক, শিখেছি অনেক। মুক্তমনা আমার নাস্তিকতাকে যুক্তিপূর্ণ করেছে, সমৃদ্ধ করেছে। তাই মুহাম্মদের সাথে সাথে মুক্তমনাকেও অজস্র ধন্যবাদ। ধন্যবাদ অভিদাকে এ রকম অসাধারণ একটি ক্ষেত্র তৈরির জন্যে।
কাটায়ে উঠেছি ধর্ম আফিম নেশা
ধ্বংস করেছি ধর্ম যাজকী পেশা
ভাঙ্গি মন্দির ভাঙ্গি মসজিদ
ভাঙ্গিয়া গীর্জা গাহি সংগীত। কাজী নজরুল ইসলাম
মানুষ সকল অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার ভেঙে বেরিয়ে আসুক আলোর পথে। সৎ, সুবিবেচক ও মুক্তমনের মানুষ গ’ড়ে উঠুক। মুক্তমনা প্রসারিত হোক নিখিলে। বেঁচে থাকুক অনন্তকাল, আমাদের পরে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মে; তারও পরে ,তারও পরে, তারও পরে—————
ছোটবেলায় ব্যাপকহারে ব্রেনওয়াশ না করা হলে মুসলিমের সংখ্যা এতো বেশী হতো না ।
আপনারা আছেন বোলে বাংলাদেশ এখোনো সজীব |আপনারা আছেন বোলে এখোনো আসা বাচিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে | তোমরা নাথাকলে হয়তো বাংলা আফগান হোয়ে যেতো | ধন্যবাদ লেখাটা ভালো হোয়েছে |
ভালো লাগলো। একটা কৌতূহল – আপনার নাস্তিক পরিচয় প্রকাশিত হবার পর আপনার বাসায় প্রতিক্রিয়া কীরকম?
@প্রদীপ দেব,
প্রতিক্রিয়া প্রথম প্রথম খুবই ভয়াবহ ছিল। আমার আত্নীয় স্বজনেরা যারা জানতে পেরেছিল একজনের কাছ থেকে আরেকজন তারা সবাই তারস্বরে ছিঃছিঃ করেছিল। আমিও লজ্জায়,ভয়ে কুঁকড়ে থাকতাম। যেন নাস্তিকতা একটি বিশাল অপরাধ! ইদানিং ছিঃছিঃ এর মাত্রা কিছুটা কমেছে। আমিও যুক্তি এবং পাল্টা প্রশ্ন করতে শিখেছি।
চার ধরনের অর্থ সহ ৩৭ বার কুরআন খতম দিয়েছি আমি। আমি কেন নাস্তিক নই?@তামান্না ঝুমু বোন ধর্মে কোন বাড়াবাড়ি নেই আপনি ছোটবেলা থেকেই যে সমস্ত সংস্কার লাভ করেছেন সেটারই প্রতিফলন দেখেছেন কুরআনে।কুরআন একটা আয়নার মত আপনি যা দেখতে চান তাই পাবেন সেখানে। আর যদি মনে করেন জান্নাতের লোভে ধর্ম ছারিনি তাহলে বলব অই ল্যাঠা আগেই চুকিয়ে দিয়েছি।জান্নাতের কোন লভ আমার মধ্যে নেই। (*)
@ইমরান হাসান,
কোরানে আমি কোন কিছুর প্রতিফলন দেখতে চাইনি। কোরানের অর্থ জানারও আমার কোন আগ্রহ ছিলনা। আমি আরবী পড়তে জানিনা তাই বাংলাতে পড়েছিলাম। আর কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে পড়েছে। আপনি অনেকবার কোরান পড়েছেন তারপরও বিশ্বাসী আছেন। তার মানে হচ্ছে আপনি কোরানের প্রতিটি ব্যাপার সমর্থন করছেন যা ছাড়া মুসলিম হওয়া মোটেই সম্ভব নয়। আপনি কি শিশুবিবাহ, বহুবিবাহ, হাতকাটা, দোররা মারা,দসী ও যুদ্ধবন্দনী সম্ভোগ, পত্নী-প্রহার, সম্পদে কন্যাসন্তানের অর্ধেক অধিকার এই ব্যাপারগুলো সমর্থন করেন? কোরান পড়ার আগে আমি জানতাম না এই জিনিসগুলো কোরনে আছে। তাহলে আমি কিকরে এসব কুরানে দেখতে পেলাম? নাকি এসব আপনার পঠিত কুরানে নেই?
@তামান্না ঝুমু, বোন বাংলা অনুবাদে অনেক ভুল আছে আর এটা তেমন উন্নত মানের অনুবাদ নয়,বাদ দেন সে কথা উন্নত না হলেও মূলভাব টাতো আপনি জানেন।সেটাতেই চলবে।কুরআনে বহুবিবাহ সংক্রান্ত সরাসরি কোন আয়াত নেই যা আছে টা হল
Sahih International
And if you fear that you will not deal justly with the orphan girls, then marry those that please you of [other] women, two or three or four. But if you fear that you will not be just, then [marry only] one or those your right hand possesses. That is more suitable that you may not incline [to injustice].
আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা। এখানে এতিম মেয়েদের বেলাতেই শুধু বহুবিবাহ বৈধ করা হয়েছে আর কোন ক্ষেত্রে না আর এমনকি এটাও বলা হয়েছে যে যদি ঠিক ভাবে বিচার না করতে পার তবে একটিতেই সুখি থাক।আর এটাও বলা হয়েছে যে তোমরা ব্যাপারে ন্যায় বিচার করতে পারবেনা কখনই সেজন্য একজনকেই বিবাহ কর। আর কেউ তা করে ফেল্লে(এতিম দের বহুবিবাহ) তাঁদের যেন ছেড়ে না দেয়। এটা কি খুব খারাপ ?এটা তো বিশেষ এক নিয়ম বা অবস্থার কথা বুঝিয়েছে যা কোন বান্দা মুমিন হলে তার উপরে আসবেই না।আর যে পেটের দায়/অসুস্থতার কারনে চুরি করে তার হাত কাটা সম্পূর্ণ নাযায়েজ কাটা একেবারেই যাবেনা। আর উদাহারন দিতে গেলে বলব বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের যদি হাত কাটা হয় অসমর্থন করবেন? এরকম মানুষদেরই হাত আগে কাটা উচিত ইসলাম এর চোখে।আর দোররা? আপনার উপরে কেউ চরিত্রহীনতার মিথ্যা অপবাদ আনলে তার কি অবস্থা হওয়া উচিত বলে মনে করেন? আমাদের দেশের মোল্লা সমাজ একে নারীর বিপক্ষে একটা অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করে মহাপাপ করছে আর ব্যাভিচার এর ক্ষেত্রে একজন নারি শুধু চারবার আল্লাহর কসম খেয়ে বেঁচে যেতে পারবেন একজন পুরুষ কে বেতের বাড়ি খেতেই হবে।আর হযরত আয়েশার বয়স বিয়ের সময় ৬ না ১৬ ছিল কিছু উমাইয়া খলিফার ছোট শিশুদের প্রতি বিকৃত রুচি কে সমর্থন দেবার জন্য এমন করা হয়েছিল লেখার শেষে কিছু কিঙ্ক দিচ্ছি দেখে নিয়েন। আর পত্নিপ্রহার একেবারেই বৈধ নয় এটা অরথের ভুল এ ব্যাপারে আমার একটা ই-বুক ছিল সিস্টেম ক্রাশ করার জন্য এখন না দিতে পারলেও খুব তারাতারি দিব আর দাসী সম্ভোগ এর ব্যাপারটা আপাতত নিউট্রাল এটা আসলেই আমার কাছে কোন ভাল ব্যাখা নেই। আর এটা দেখেন
(প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে হাইসাম থেকে জানা যায় হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) এর বেশ আগে ইসলাম গ্রহন করেন। (উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) ৬১৬ খৃষ্টাব্দে ইসলাম গ্রহন করেন)। আবার হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন ৬১০ খৃষ্টাব্দে। সুতরাং হযরত আয়েশা (রাঃ) ও ৬১০ এর কাছাকাছি সময়েই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তার অর্থ আবারো দাঁড়ায় যে তিনি ৬১০ খৃষ্টাব্দের আগেই জন্মগ্রহন করেছিলেন এবং কোন ধর্ম গ্রহন করবার নূন্যতম বয়স (৬/৭ হলেও) তাঁর ছিল। তাহলে ৬২৩-৬২৪ সালে তার বয়স প্রায় ১৮-২০ হয়।
(Al-Sirah al-Nabawiyyah, Ibn Hisham, vol 1, Pg 227 – 234 and 295, Arabic, Maktabah al-Riyadh al-hadithah, Al-Riyadh))
হাম্বলি মাযহাবের ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন বিবি খাদিযাহ (রাঃ) র মৃত্যুর পরে (৬২০ খৃষ্টাব্দ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্য খাউলাহ নামের একজন ২টা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। যার মধ্যে হযরত আয়েশার (রাঃ) র কথা উল্লেখ করবার সময় একজন পূর্ণবয়স্ক যুবতী হিসেবেই উল্লেখ করেন কোন ছোট্ট শিশু হিসেবে নয়।
আবার ইবনে হাযর আল আসকালানি র মতে হযরত ফাতেমা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) র থেকে ৫ বছর বড় ছিলেন। আর ফাতেম (রাঃ) র জন্মের সময় রাসুল (সাঃ) এর বয়স ছিল ৩৫ বছর। সে হিসেবে আয়েষা (রাঃ) র জন্মের সময় মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স ৪০ হবার কথা। আর তাঁদের বিয়ের সময় আয়েশা (রাঃ) ৬/৯ না বরং ১৪-১৫ বছর বয়স হবার কথা।
(Al-isabah fi tamyizi’l-sahabah, Ibn Hajar al-Asqalani, Vol 4, Pg 377, Arabic, Maktabatu’l-Riyadh al-haditha, al-Riyadh,1978)
(Musnad, Ahmad ibn Hanbal, Vol 6, Pg 210, Arabic, Dar Ihya al-turath al-`arabi, Beirut).
and for domestic violence http://www.apiidv.org/files/Islamic.Perspective.DV-alHibri-2000.pdf
তেমন কিছু বলতে পারলাম না পরে আরও বলব আশা রাখি। আর আপনার নাস্তিক হবার পিছনে আমাদেরই দোষ সবথেকে বেশি।
আপনি ত আজকে অনেক সাধিন কিন্তু আমি নিজে নাস্তিক হয়েও সাধিন হতে পারলাম না আজু বাবার ভয়ে মাঝে মাঝে নামাজ পড়তে যাই তবে অজু না করেই। কি করব নিজেকে নাস্তিক বলে ঘোশ না দিলে কল্লা টা যায়। কারন আমাদের এখনকার পরিবেশ জাহেলি জুগের মত মোর বাপ ত এক খান আবু জাহেল। আর মোর বড় ভাই ত এক খান আবু সুফিয়ান।
@মাসুদ রানা,
আপনার বাবা ও ভাইদের সাথে কোরান-হাদিস পড়তে চেষ্টা করতে পারেন। অনেক বাধা আসবে। অতিক্রমের চেষ্টাও করতে হবে সময় ও সাধ্যমত ।
লাদেন যদি কোরান পড়ে ভুল বোঝে সে দোষ লাদেন এর।
@বেয়াদপ পোলা,
মুহাম্মদও কি কোরান পড়ে ভুল বুঝেছিল? সে ত লাদেনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি নৃশংস ছিল। আমার ত মনে হয় আপনিও ভুল বুঝেছেন। কোরানে দুই একটি সরল ভাল কথা আছে যার চেয়ে ঢের বাশি ভাল কথা যেকেউ বলতে পারে। আর সব ত জঘন্যতম।
@বেয়াদপ পোলা ভাইজানতো মনে লয় কুরআন পইড়া বেয়াদপ পোলা হইছেন 😛 আফসুস 😀
@ডেথনাইট,
আপনার ইমেইল চেক করুন। সব ঠিক আছে কিনা জানাবেন। লগ ইন করে মন্তব্য করতে পারেন।
@মুক্তমনা এডমিন,ধন্যবাদ।সব ঠিকঠাক আছে।মুক্তমনার সদস্য হতে পেরে গর্বিত। (F) :rotfl:
আপনার বিবর্তনের ইতিহাস পড়ে ভালো লাগল।কুরআনের ৬০০০+ আয়াতের সবই আদতে বৃত্তকার যুক্তি।কুরআনের বাংলা অনুবাদগুলাতো ফারসি থেকে করা এগুলাতে অনেক আয়াতের ভাবানুবাদ করা যাতে স্ববিরোধিতা ধরা না যায়।ইউসুফ আলি বা পিকথাল বা শাকিরের অনুবাদ পড়লে বুঝা কি হাস্যকর স্ববিরোধিতায় ভরপুর কুরআন।হালের কাসিরের ভাবানুবাদ এমনভাবে করা যে কুরআনে মানবিকতা বিরোধি কিছুই নাই হা হা।২:১ আর ৩৬:১ এরতো অনুবাদই হয় না।এখনতো কুরআনে কি আছে এর চেয়ে জরুরী কোন আলেম (জোকার নায়ক) কি বলে ! 😀
@ডেথনাইট,
বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের সাথে সাথে এবং মানুষের মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন হবার সাথে সাথে কুরানের অর্থ ও ব্যাখ্যা দিনেদিনে বদলে এসেছে ,বদলে যাচ্ছে। মুমিনরা নজেরাই কুরানকে বিকৃত করে ফেলছে।
@তামান্না ঝুমু
লেখাটি ভালো লাগল, ধন্যবাদ।
@আহমেদ সায়েম,ধন্যবাদ।
লেবু বেশি চিপ্লে যেমন তিতা হইয়া যাই তেমনি আপনার পরিবারের সদস্যরা আপনার উপর বেশি ধর্ম প্রয়োগ করে আপনাকে ধর্ম প্রান মুসলিম বানাতে যাইয়া আপনারে নাস্তিক বানাইয়া ফালাইসে।
@বেয়াদপ পোলা,
একদম সত্য কথা বলেছেন ভাই। উনার বাবা মা যদি উনাকে ধর্মের ব্যাপারে এত ত্যাক্ত করে না তুলতেন বা ধর্ম পালনে এত জোরাজুরি না করতেন তাহলে কিন্তু উনি কোরান বা ছিপারা খতম না দিয়েও এতদিনে আস্তিকই থাকতেন। ধর্মকে ভালভাবে জানতে গিয়েই তার ধর্মের অসঙ্গতিগুলো চোখে পড়েছে। ধর্ম সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে জানার ফলশ্রুতিতেই নাস্তিকতা জন্মায়। বেশিরভাগ ধার্মিকেরই ধর্ম সম্পর্কে জানার বা প্রবলভাবে মানার আগ্রহ থাকে না। ফলে ধর্ম পালন না করেও তারা সারাজীবন ধর্মবিশ্বাসী বা আস্তিক থেকে যায়।
@আলোকের অভিযাত্রী,
এটা সত্যি যে কোরানের অনুবাদ না পড়লে আমি কখনো নাস্তিক হতাম না। তবে কোরানের অর্থ জানার কৌতূহল আমার কোনদিন ছিলনা। আমি আরবী ভাল পড়তে পারতাম না। তাই বাংলায় লেখা আরবী উচ্চারণের একটি কোরান কিনেছিলাম, সাথে অনুবাদও ছিল। আমি অনুবাদ পড়তাম না। শুধু বাংলাতে আরবী উচ্চারণ পড়তাম। তারপরে দুই এক লাইন করে অর্থ পড়া শুরু করলাম। শুধু আমার বাবা-মা নন যেকোন ধার্মিক বাবা-মাই তাদের সন্তানের উপর জোড় করে ধর্ম চাপিয়ে দেন। এটা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব। কোন এক জায়গায় পড়েছিলাম, সাত বছর বয়েস থেকে শিশুদের নামাজের শিক্ষা দিতে হয়; দশ বছর বয়েসের বাচ্চা নামাজ না পড়লে মারধোর করতে হয়।
@তামান্না ঝুমু, আমি কিন্তু রাতের পর রাত তাহাজ্জুত পরে যখন মোর খোদাকে পেলাম না শুধু চোখের জলে ভাসলাম তখন নাস্তিক হলাম। এক সাগর চোখের জলের বিনিময়ে মর নাস্তিক হওয়া। কোরান এর ত আরবি ইংরেজি বাংলা সব অনুবাদ পরে খতম দিলাম।আমার মনে হয় কোরান এমনি এক ভয়ংকর গ্রন্থ যার ছোয়ায় এক নিস্পাপ শিশু জন্ম নেবার পর হয়ে ওঠে এক একটা লাদেন, নিজামি,
@আলোকের অভিযাত্রী, বেশি জানতে গেলেই মানুষ নাস্তিক হয়ে যায়। বিষয়টা বুঝতে পারতেছি না।কেমন এমন হয়?
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
কারণ হচ্ছে, সত্য জানতে পারলে কেউ মিথ্যে আঁকড়ে থাকবে কেন? আলো ফেলে কে অন্ধকারে থাকতে চায়?
@বেয়াদপ পোলা,
আমি নাস্তিক হয়েছি কোরান পড়ে। আমার লেখাতেই বলেছি, আমার নাস্তিক হওয়ার পেছনে একমাত্র অবদান হচ্ছে নবি মুহাম্মদের। অনেকে বলে থাকে আমি মুক্তমনায় এসে নাস্তিক হয়েছি। আসলে তা নয়। আমি নাস্তিক হওয়ার পরেই মুক্তমনায় এসেছি। আমার বাবা-মা বা অন্য যে কেউই যেসব ধর্মীয় কড়া আচরণ করেন তার জন্য তারা দায়ী নন। দায়ী হচ্ছে ধর্ম ও গ্রন্থ। এমন কি লাদেন যা করেছে তার জন্য আমি তাকে দায়ী মনে করিনা। দায়ী হচ্ছে কোরান ও এর রচয়ীতা।
@তামান্না ঝুমু,
Wow, এটাকেই বুঝি বলে hit the bullseye
@আকাশ মালিক,
হ্যাঁ:-) কট্টর মৌলবাদীদেরও আমি কোন দোষ দেখিনি। তারা ভয়ে ও লোভে পড়ে একটা কিছু অনুসরণ করে যাচ্ছে। এতে করে ওরা যেসব নৃশংসতা ঘটাচ্ছে তার জন্যও কি তারা দায়ী? আমারা যারা ধর্মের কঠিন বলয় হতে বের হয়ে এসেছি, আমাদের জন্যও কি সে কাজ এত সহজ ছিল? তাই আমার মনে হয় ধর্মীয় সমালোচনার একমাত্র লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে গ্রন্থগুলো, ধার্মিকেরা নয়।
@আকাশ মালিক, 😀
@তামান্না ঝুমু, লাদেন যা করেছে তার জন্য আমি তাকে দায়ী মনে করিনা। দায়ী হচ্ছে কোরান ও এর রচয়ীতা।
@মাসুদ রানা,
কে, কখন, কোথায়, কীভাবে ধর্ম পালন করল সেটা দিয়ে ধর্মকে বিচার করা ঠিক নয়। মূল গ্রন্থে যা লেখা আছে তাই হচ্ছে বিচার্য। ওসমান যখন কোরান সংকলন করেছিল এবং আগের কোরান পুড়িয়ে ফেলেছিল কী জানি কি সংযোজন বা বিয়োজন করেছিল।
@বেয়াদপ পোলা, আমার মনে হয় বাপারটা তেমন নয়। এমন একদিন আসবে যে পৃথিবির সকল মানুশ নাস্তিক হয়ে যাবে । যেদিন সবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে জাবে।এখন যাদের যাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তারাই নাস্তিক হয়ে গেছে ধর্মের অসহ্য অত্যচার সহ্য করতে না পেরে।
আপনার সেই ছোটভাই (মুক্তমনার সংবাদ দাতা) আপনার কবিতা গুলো কি নিয়মিত পড়ে? কিংবা আপনার নাস্তিক ফুফাতো ভাই কি জানে আপনি এখন নাস্তিক কবিতে রূপান্তরিত?
দুঃখিত ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে অনধিকার চর্চা করে ফেললাম বোধহয়। একি মজলিসের সদস্য হিসাবে এই অধিকারটুকুকে নিশ্চই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা রাখি।
কবি মনতো একটু আধটু প্রমিক প্রকৃতির হবেই না কি বলেন 😛
@রাজেশ তালুকদার,
আমার ছোটভাই মুক্তমনার নিয়মিত পাঠক। ওর কয়েকজন বন্ধুও আছে নিয়মিত পাঠক। আত্নীয় স্বজনের মধ্যে এখন অনেকেই জানে আমি নাস্তিক। কারণ আমি ধর্মীয় সম্ভাষণ বিনিময় বন্ধ করেছি, ধর্মীয় উৎসব পালন বন্ধ করেছি। আমি ধর্ম থেকে পুরোপুরিভবে চ্যুত।
আমি ত কিছু মনে করিনি। বরং ভাল লাগছে আপনি জিজ্ঞেস করেছেন এজন্যে।
তখন অবশ্য কবি ছিলম না। তবে প্রেমের চিঠি পড়তে মন্দ লাগত না। কিন্তু আমি কখনো কাউকে চিঠি লিখতে পারিনি, ধরা পড়ে মার খাওয়ার ভয়ে। আমাকে লেখা চিঠি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া পর্যন্তই ছিল প্রেমের অভিজ্ঞতা।
@তামান্না ঝুমু,
বেশ ভালো লাগল লেখাটা। অনেক কিছু জানতে পারলাম। এমন ঘটনা বাংলাদেশের প্রতিটা মুসলিম পরিবারেই আছে মনে হয়। সত্যকে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
@আফরোজা আলম,
সত্যিকারের মুসলিম পরিবারে নেই কোন শৈশব-কৈশোর,নেই কোন বিনোদন, নেই কোন যৌবন, নেই কোন জীবন। শুধু আছে ভয়-ভীতি প্রদর্শনে জীবনকে সংকুচিত করে রাখা। জীবন্মৃত হয়ে পরকালের প্রহর গুনা। ধন্যবাদ পড়া ও মম্তব্যের জন্য।
আপনার লেখাটি পড়ে ভাল লাগলো।অনেক ধন্যবাদ আপনার অভিজ্ঞতার কথা জানাবার জন্য।আমার ব্যাপারটি একটু ভিন্ন।আমাকে এক হুযুর পড়াতে আসতেন।আমি তার দাড়ি কিম্বা টুপি ধরে টান দিতাম।মাঝে মাঝে আমকে এক দু ঘা বসিয়ে দিতেন।পরে আমি ওনার সাইকেল চুরি করে পুকুরে ফেলে দেই।উক্ত কাহিনি প্রকাশ পাবার পর এলাকার কোন হুযুর আমাকে পড়াতে আসতেন না।আমার বাবা মায়ের এ বেপারে অবশ্য কোন মাথাবেথা ছিল না।পরে আমি মসজিদে গেলাম ছিপারা পড়তে,একদম নিজের উৎসাহে।বলাই বাহুল্য আমার ঘুম বিহীন সকালগুলো কাজে দিল না এক ফোটাও।এর পর ভর্তি হলাম ক্যাডেট কলেজে,সেখানে ৭ ও ৮ম শ্রেণীর জন্য কুরান পাঠ বাধ্যতামূলক। যারা পড়তে পারতো হুযুর তাদের খুব আদর করতেন আর আমার কপালে জুটত কান মলা।পরে লুকিয়ে টয়লেটে চলে যেতাম বসে বসে কখনও মাসুদ রানা কখনও হুআ পড়তাম। কপাল আমার পোড়া,অভিবাবক দিবসে হুযুর নালিশ দিলেন আমার বাবার কাছে।অর্থহীন শব্দগুলো একসময় মুখস্থ করতে লাগলাম। তারপর আস্তে আস্তে বাদ দিলাম এই অর্থহীনের সমাদর এবং পঠন।যদি সদস্য হতে পারি লিখে জানাব পুরো কাহিনি।অনেক ভাল লাগলো লেখাটি পড়ে।
@তাওসীফ হামিম,
আপনি ত অনেক দুঃসাহসী ছিলেন। আপনার স্মৃতিগুলোও জানতে ইচ্ছে করছে। আলোচনা করতে থাকুন। সদস্য হয়ে যাবেন একসময়। ধন্যবাদ।
@তামান্না ঝুমু, বড্ড বেশি দুঃসাহসী বলেন। এক মাউলানা কে লুচ্চা মাউলানা বলার অপরাধে বা হাতে ডান হাতে ১৫ + ১৫ টা জোড়া বেতের বাড়ি খেয়েছিলাম।
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
মাউলানা আপনাকে ৩০টা বেতের বাড়ি মেরেছিল কোন আইনে তা ত বুঝলাম না। ইসলামে দোররা মারা, হাতকাটা, চোখ তোলা,পাথর ছোঁড়া, আজীবন গৃহবন্দি করে রাখা ইত্যাদি শাস্তির কথা আছে। ৩০ বেত মারার কথা ত কোথাও নেই।ইসলাম বহির্ভূত শাস্তি প্রদনের নিমিত্তে মাউলানা নিজেই ত ইসলাম লঙ্ঘন করার অপরাধে অপরাধী।
@তাওসীফ হামিম,
আপনি মুক্তমনার লেখা পাঠানোর নিয়ম অনুসরণ করে লেখাটা পাঠিয়ে দিন। লেখা ভালো হলে কতৃপক্ষ অবশ্যই তা ছাপাবে। আর আপনিও সদস্য পদ লাভে এক ধাপ এগিয়ে যাবেন।
আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে ভালো লাগলো, তামান্না ঝুমু। (Y)
@অবর্ণন রাইমস,
আমরা যারা ধর্ম ছেড়েছি তাদের সবার আলাদা আলাদা অভিজ্ঞতা রয়েছে। আবার কোন কোন জায়গায় মিলও রয়েছে। অতটা সহজ ব্যাপার নয় উত্তরাধিকারে পাওয়া জিনিস ত্যাগ করা। অনেক সংঘর্ষ করতে হয় নিজের মনের সাথেও। অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা ত আছেই। ধন্যবাদ।
আমি শৈশব হারিয়েছি ধর্মীয় নোংরামিতে। ধর্ম কি ফিরিয়ে দিবে আমার সে শৈশব?
@সৈকত চৌধুরী,
আমিও হারিয়েছি আমার শৈশব-কৈশোর এবং জীবনের অনেক সময় সেই নর্দমায়। আমাকে এক সময় আটা ময়দার মত বস্তাবন্দি হয়েও কাটাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত যে সেই পচা বস্তা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি এটাও অনেক বড় অর্জন। কে আমাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া সময়গুলো ফেরত দেবে, কে করবে জবাবদিহি?
আমিও “ইসলাম” শিখেছি কুরান পড়ে। প্রত্যেক মুসলমানের এই মহা-গ্রন্থটা তার নিজের ভাষায় বুঝে পড়া অত্যন্ত জরুরী।সাধারণ মুসলমানেরা কুরান তার নিজের ভাষায় পড়ে না, মৌলভী সাহেবদের কথায় তাদের অগাধ বিশ্বাস।তাই ইচ্ছামত প্রতারিত হন। যারা ‘ইসলাম’ সন্মন্ধে জানতে সত্যিই আগ্রহী তাদের সবাইকে আমি অনুরোধ করি “কস্মিনকালেও মৌলোভীদের দ্বারস্থ হবেন না”। কারণ,পরিবেশগত কারণেই তাদের চিন্তা-ভাবনা ও জ্ঞানের গভীরতা অন্যান্য পেশাজীবী মানুষের তুলনায় কম।কুরান পড়ে তারা যদি এটা বুঝতে পারে, যে কোন সাধারণ লোকই তা সহজেই বুঝতে পারবে।
আমাদের সবারই একই কামনা। সকল অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার ছেড়ে মানুষ ‘বুদ্ধি-বৃত্তির’ চর্চ্চা করুক। মা
@ তামান্না ঝুমু,
ধন্যবাদ আপনার শৈশবের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে শেয়ার করার জন্য। আমি ছিলাম কিছুটা বিপরীত। নামাজী ছিলাম, তাবলীগ জামাতে সময় লাগিয়েছি একাধারে পাক্কা ৪০ দিন (এক চিল্লা)। সেখান থেকে এসে
ঈমানের ‘তাগিদে’ গ্রামের মসজিদের ইমামতী করলাম কিছুদিন। সাথে বে-নামাজীদের আল্লাহর রাস্তায় ফিরানোর জন্য সপ্তাহে দুদিন ‘গাশত’ করতাম। তারা যে দোজখের আগুনে জ্বলবে এটা ভেবে খুব খারাপ লাগতো। ভ্রম ভাঙ্গল ইসলামের ইতিহাস আর কুরান পড়ে। কুরানের মুল শিক্ষা, “আল্লাহ+মুহাম্মদ সত্য, বাঁকি সব নাফরমান-কাফের – আল্লাহ/মুহাম্মদের শত্রু।” প্রথমবার কুরান শেষ করতে সময় লেগেছিল মাস ছয়েক। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না এমন এমন ‘হিংসাত্মক’ মানবতা বিরোধী কথা কুরানে লিখা থাকতে পারে। পড়ার সময় মনে পড়ছিলো ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী ও ‘জামাতে ইসলাম’ সহ অন্যান্য ইসলামী দলের কর্ম-কাণ্ডের কথা। মালামাল ও নারী-সম্পদ লুট ও ভোগ ইসলাম সম্মত: বলে তারা জারী করেছিল। আর মনে পড়ছিলো, আমার আব্বাকে দেয়া শহরের বিশিষ্ট ‘ক্বারি ও হাফেজ’ (খুবই পরহেজগার এবং “জান-নে-ওয়ালা’ ভাল মানুষ, রাজাকার বা আল-বদর নন) সাহেবের দেয়া ফতুয়া, ‘বিহারীদের মালামাল হল গনিমতের মাল – আর তা লুট করা ইসলাম-সম্মত’ – ‘বিজিতের হক’। তিনি এও বলেছিলেন নবী করিম সা: যুদ্ধের সময় এমনটিই করতেন। কুরান পড়েই প্রথম জানলাম তারা ১০০ ভাগ ঠিক ‘ইসলামী’ কাজটিই করেছিলেন। মুহাম্মদের জীবনী পড়ে জানলাম ক্বারি-সাহেব এক বিন্দুও বানিয়ে বলেন নাই।
@গোলাপ,
আপনার মন্তব্যগুলো আমার খুব ভাল লাগে। আপনার মতামত পড়ে বুঝতে পারি আপনি খুব ভালভাবে ইসলাম পড়েছেন ও পর্যবেক্ষণ করেছেন। আপনি তাবলীগে যাবার আগে কোরান পড়েন নি? তাবলীগে যাওয়া হল কেমন ক’রে। এমনি জানতে চাচ্ছি যদি কোন আপত্তি না থাকে। অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষকে তাবলীগে যেতে দেখি। অনেক মেধাবী ছেলে মেয়েকে শিবির করতে দেখি। মনটা কেবল দুঃখে ভরে যায়। জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রতিভার কী অপব্যবহার!আপনিও কিছু লিখুন। ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।
@তামান্না ঝুমু,
নারে ভাই, আপত্তি থাকবে কেন? তাবলীগে যাবার আগে কুরান পড়েছি, পড়েও পড়েছি। অবশ্যই তা ছিল আরবীতে। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানদেরই মত, পরম ভক্তি-ভড়ে। সুরা ইয়াসীন পুরোটা, ১ম পারার প্রায় এক-চতুর্থাংশ, সুরা হাশরের কিছু অংশ, কুরানের শেষের ২০ টার ও বেশী সুরা মুখস্থ ছিল। কিন্তু তার সবই তোতা পাখীর বুলি। অর্থ বুঝার চেয়ে ‘উচ্চারণ সহি’ করার গুরুত্বই ছিল বেশী – যেমনটি মৌলভী সাহেবরা প্রায়ই বলে থাকেন। “কুল” না বলে গলার ভিতর থেকে “কূ-ঊ-ল” বলতে হবে। উচ্চারণ সহি না হলে আরবী শব্দের মানে(Meaning) হয়ে যাবে আলাদা, এমনকি একদম ‘উল্টা মানেও’ হয়ে যেতে পারে। আর আল্লাহতো তা বরদাস্ত করতে পারেন না। মৃত্যু অবধি উচ্চারণ সহি করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হবে, তাতেও যদি না হয় – ‘তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। কিন্তু বান্দা যদি আল্লাহর পবিত্র ‘আরবী ভাষা’ উচ্চারণ শুদ্ধির চেষ্টায় না করেন তাহলে তো তিনি ন্যায়সংগত ভাবেই “ক্রোধান্বিত’ হবেন! পরিণাম অনন্ত দোজখ বাস। কোন ঈমানদার মুসলমানেরই তা কাম্য হতে পারে না। তাই “উচ্চারণ’ সহি করার গুরুত্বকে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। বাংলায় মানে বুঝে কুরান পড়ার তেমন কোন গুরুত্ব সে সময়ের কোন মৌলভী সাহেবের কাছ থেকে পাই নাই। পরিবর্তে জেনেছিলাম সুরা ইয়াসিন পড়ে ঘুমলে কি সওয়াব পাওয়া যায় – কত হাজার ফেরেশতা পাঠকারীর জন্যে দোয়া করবেন, তিনবার আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে ফুঁ দিলে বালা-মুসীবত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়- ইত্যাদি ইত্যাদি। এখনো কি সে ট্র্যাডিশনের কোন উন্নতি হয়েছ? মোটেও নয়। কারন, ধর্মের রাজত্ব হলো যাজক ও সম্রাটের হাতে। আগেও তা ছিলো, এখনো তাই আছে। টেলিভিশন চ্যানেল গুলোতে দেখি কিভাবে ছোট ছোট বাচ্চাদের আরবী কুরান গেলানো হচ্ছে, বার বার উচ্চারণ শুদ্ধির তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
সেই “কুল” আর “কূ-ঊ-ল” এর পাঁকেই মুসলমানেরা ঘুরপাক খাচ্ছে। কৃতিত্ব সম্পূর্ণটাই মৌলভী সাহেবদের পাওনা। জ্ঞানী-গুণী ডাক্তার-ইন্জিনিয়ার-প্রভাষক-ডক্টরেট তাদের কাছ থেকে ‘ধর্ম-জ্ঞান’ পেয়ে ধন্য হন। উনারা যা বলেন, ইনিরা তাইই বলেন। ধর্ম টিকে থাকে দুটি জিনিষের উপর ভর করে:
১) শিশুকালের ‘মগজ ধোলাই’ (Childhood indoctrination)
২) অজ্ঞতা (Ignorance)
কিভাবে গেলাম তাবলীগে?
মফস্বল শহর থেকে মাধ্যমিক এবং রাজশাহী পুরনো সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে খুব ভাল রেজাল্ট করলাম। দুটোতেই বোর্ডের ১ম ২০ জনের একজন। ঢাকায় গেলাম ভর্তি হতে। গ্রামের ছেলে, শৈশব মফস্বল শহরে। ঢাকায় পরিচিত কেউ নেই। পাশের গ্রামের এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় (আগে কখনো দেখি নাই) পড়েন ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে। ঠিকানা যোগার করে তার কাছে হাজির হলাম ভর্তি পরিক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য। তিনি থাকতেন আহসানুল্লাহ হলে। তাবলীগের বিরাট নেতা, কাকরাইল মসজিদের ‘মুরুব্বীদের’ সেই ছাত্র জীবনেই তার উঠাবসা। খুবই বিনয়ী, নম্র ও একান্ত ভালমানুষ। সে এবং তার আরেক তাবলিগী বন্ধু (থাকতেন নজরুল ইসলাম হলে) দুজন মিলে আমার পিছনে ‘তশকীল’ করলেন। যেহেতু আমিও ছিলাম ধর্ম-ভীরু, খুব সহজেই আমাকে প্রভাবিত করলেন। তখন ছিল রমজান মাস। ১ম ২০ দিন তাদের সাথে একই জামাতে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম, ঢাকা থেকে অনেক দূরের এক জেলা শহরে। পরের ২০ দিন অন্য এক জামাতে। প্রথম ২০ দিনেই ‘ঈমান’ বেশ শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই পরের ২০ দিন বন্ধু-বান্ধব-হীন পরিবেশে সম্পূর্ণ অপরিচিত তাবলিগী ভাইদের সাথে সময় কাটাতে একটু অসুবিধা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ঈমানের জোরে তা উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। আল্লাহর রাস্তায় যে বান্দা যত কষ্ট করবে, বেহেস্ত ততই নিকটবর্তী হবে। বেহেশতে যাওয়ার একমাত্র গ্যারান্টি “আল্লাহর রাস্তায় জেহাদে শহীদ হওয়া”। আফগানিস্তান- পাকিস্তান- বাংলাদশের জিহাদী ভাইয়েরা খুব ‘সাচ্চা’ ভাবেই তা জানেন। তবে তারা আদৌ বেহেশতে গিয়েছে কিনা তা জানার কোনই সুযোগ আল্লাহ পাক রাখেন নাই।মহাজ্ঞানী আল্লাহ পাকে পরীক্ষা এটি। কোন কিছু না দেখে, যাচাই-বাছাই না করে আল্লাহ-মুহাম্মাদের বানীকে যারা বিশ্বাস করে তারাই হল প্রকৃত ঈমানদার। এটাকে নাফরমানেরা নাম দিয়েছে ‘বেকুবী’। কিন্তু আল্লাহ-মুহাম্মদের চোখে এটাই হল ঈমানের “সর্ব-উচ্চ দরজা।” আল্লাহ-পাক পবিত্র কুরানে এরশাদ ফরমাইয়াছেনঃ
ভাল থাকুন। লিখতে থাকুন।
@গোলাপ,
আরবী উচ্চারণ আমার কখনোই শুদ্ধ ছিলনা। কখনো চেষ্টাও করিনি। আমার এক ধার্মিক ফুপুকে বলতে শুনেছি,”আরবী পড়লে গলা চুলকায়।” আপনি ত অনেকগুলো সুরা মুখস্ত পারতেন। আমি পারতাম ৪-৫টা। নামাজ পড়তাম খুবই দায়সারাভাবে। শুধু ফরজ। তাও পড়ার সময় ভুলে যেতাম কয় রাকাত পড়েছি। দোয়া কুনুত পারতাম না। ওটা ছাড়া নাকি এশার নামাজ হয়না। আমি ওটা ছাড়াই পড়তাম। এখন আমি আরবী পড়া ভুলেই গিয়েছি। আগেও বানান করে খুব কষ্ট করে পড়তে হতো। তখন এজন্য লজ্জা পেতাম। এখন আনন্দ লাগে।
আপনি ত অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এই রকম মেধাবী ছেলেরাই তাবলীগ আর জামাতের দিকে বেশি ঝুঁকে যায়। তাবলিগীরা আবার জামাতীদের মত রগকাটা হয়না। আমি কয়েকজন তাবলিগীকে চিনি যারা অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে ভুলিয়ে ভালিয়ে সবাইকে অন্তত একবার চিল্লায় নিয়ে যাওয়া। তাদের কেউই কি কোরানের অনুবাদ পড়েনি? ধন্যবাদ।
@তামান্না ঝুমু,
:lotpot:
@নির্মিতব্য,
আর আমার ত আরো দুরাবস্থা। কাশতে কাশতে থুথু বের হয়ে যায়।
@গোলাপ,
“তাই পরের ২০ দিন বন্ধু-বান্ধব-হীন পরিবেশে সম্পূর্ণ অপরিচিত তাবলিগী ভাইদের সাথে সময় কাটাতে একটু অসুবিধা হয়েছিল ঠিকই”
আচ্ছা তাবলীগ ছাড়লেন কেন?। প্রশ্নটা করলাম এ জন্য যে আমার এক বন্ধু হটাত তাব্লিগ শুরু করে আবার হটাত বন্ধ করে দেয়।আমি যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন বন্ধ করল জবাব দিয়েছিল,খাবার ব্যবস্থার কারনে। তাব্লীগে এক পাতে ২/৩ জন নাকি খায়।এতে নাকি সৌহার্দ বাড়ে,আরবে নাকি এটা চালু আছে।বন্ধুর মতে আরবরা খায় শুকনা খাবার,আম্রা খাই নরম খাবার যেমন ভাত এর সাথে ডাল,ঝল আলা তরকারি।একজনের হাতের নীচ দিয়ে ঝোল অন্যের হাতের নীচে চলে যায়।তাও না হয় সহ্য হয় কিন্তু একদিন খেতে বসে একজনের হাতে চুল্কানি(খুজলি রগ),তার হাতের নীচ দিয়েও যখন ঝোল গড়িয়ে আসলো বন্ধু তাবলীগ ছাড়ল। তবে আপনি কিছুটা ভাগ্যবান কারন আপনার সম্পর্কের বন্ধুরা শিবির এর ছিল না,রগ নিয়ে সমস্যায় পড়েন নাই। তবে এক পর্যায়ে যেমন বাংলাদেশে বাম্পন্থিরা আওয়ামিলিগকে সমর্থন করে তেমনি ভাবে তাব্লিগিরা জামাত/শিবির কে সমরথন করে।
@সপ্তক,
ইসলামের ইতিহাস পড়ে লেগেছিল খটকা। ইসলামে কেন এত হানাহানি? চার খলিফার তিন জনই নৃশংষ ভাবে খুন। শ্বশুর জামাইয়ের (খোলাফায়ে রাশেদিন) রাজত্বকালে (৬৩২-৬৬১) ২২ টিরও বেশী বড় বড় যুদ্ধ তারা উপহার দিয়েছেন পৃথিবীকে। ছোট জামাই আলী খুন হন ৬৬১ সালে। তারই নিশংসতার হাত থেকে (নাহরাওয়ানের যুদ্ধ -৬৫৮ সাল) ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া এক খারেজীর হাতে।তারপর মুয়াবিয়ার রাজত্বকালের (৬৬২-৬৭৭) ১ম ১৫ বছরে যুদ্ধ করছেন মাত্র ২১ টা। আর ৬৮০ থেকে ৬৯২ (ইসলামের ২য় গৃহযুদ্ধ) সাচ্চা মুসলমানেরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেছেন মাত্র ১৪ টা। অর্থাৎ নবী পরবর্তী (৬৩২-৬৯২) এই ৬০ বছরে প্রাণ-প্রিয় সাহাবা এবং তাদের সন্তানরা ৫৭টি যুদ্ধ করেছেন! strong>ইসলাম বড়ই শান্তির ধর্ম, যদি ‘যুদ্ধ=শান্তি’ সমার্থক হয়। কিন্তু আমি তখনও অধিকাংশ ঈমানদার বান্দাদের মতই বিশ্বাস করতাম ‘ধর্মের কোন দোষ নেই, দোষ মানুষের’। ভুল ভাংগলো কুরান আর মুহাম্মাদের জীবনী পড়ে। জানলাম হুজুরে পাক তার মদীনার ১০ বছরে ৬৫ টিরও বেশী যুদ্ধ-হামলা-খুন খারাবীর সাথে যুক্ত ছিলেন। তাই তার সাহাবীদের ৬০ বছরে ৫৭টি যুদ্ধকে খুব কমই বলতে হবে!
একদম ঠিক কথা বলেছেন। আমার সেই তাবলীগী আত্মীয় এখন গোলাম আজমের ‘মুক্তিতে’ আলহামদুলিল্লাহ পড়েন। পৃথিবীতে শুধু একটাই ইসলাম। তা হল মুহাম্মাদের ইসলাম। ইসলামের একটিই সংবিধান, যার নাম হল কুরান। তাই তাবলীগ কিংবা জামাতে ইসলামী /ছাত্র শিবিরই শুধু নয়, যেখানেই ‘মুসলীম আর অমুসলীম’ ইস্যু -জগতের সকল ঈমানদার ইসলামী ভাইরা একই কাতারে। নিজেদের মধ্যে মারামারি করার সময়ই শুধু তারা আলাদা। মোডারেট আর মৌলবাদী – একই মুদ্রার এ পিঠ আর ঐ পিঠ। একপাশে আপাত ঠাণ্ডা মুখোশ, আরেক পাশে মুখোষহীন আসল চেহারা। একই সংবিধান পুরোপুরি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক হলে আলাদা চিন্তা-ভাবনার কোন অবকাশ নেই।
একটি ভিডিও ক্লিপ:
httpv://www.youtube.com/watch?v=Wkxf63NhFLs&feature=player_embedded
http://www.youtube.com/watch?v=Wkxf63NhFLs&feature=player_embedded
আচ্ছা নাস্তিক হবার পর আপনার বাবা মা জানার পর কি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? এই বিষয়ে পারলে একটা পোষ্ট দিন।
@অ বিষ শ্বাসী,
আমার বাবা আমি নাস্তিক হবার আগে মারা গিয়েছেন। মায়ের দুঃখের কোন অন্ত নেই। আল্লাপাকের কাছে ফরিয়াদ করে যাচ্ছেন আমার হৃয়য়ে আল্লা যে সীলমোহর লাগিয়ে দিয়েছেন সেটি তুলে নেবার জন্যে।
আপনি দেখলেন দুধ এর রঙ কালো, আর আমি দেখলাম দুধ এর রঙ সাদা, বলুন তো কেনও? কারন আপনি কালো চশমা চোখে দিয়ে দুধ দেখেসিলেন আর আমি চশমা ছাড়া দুধ দেখেসিলাম। :kiss:
@বেয়াদপ পোলা,
কালো দুধ আমি কখনো দেখিনি। আমার মনে হয় আপনি দেখেছেন আর সেটা আমার চোখে দেখেছেন মনে করছেন।
@বেয়াদপ পোলা,
আপনি খুব ভালোভাবে উপমা কপিকারক। তবে কিছুটা ভুল করে ফেলেছেন, ল্যাক্টোজের সাথে কোরানের তুলনা করেছেন। কোরান ল্যাক্টোজের মতো কোনো জৈব যৌগ নয়। এটি মুহম্মদ নামের এক স্বশিক্ষিত বর্বর আরবের সৃষ্ট সাহিত্যকর্ম মাত্র।
@অবর্ণন রাইমস, (W)