কি ঘটনা? আতকা নারীর পরকীয়া লইয়া পড়লাম ক্যান? হেঃ হেঃ কারণ আছে। … পাঠকদের নিশ্চয় মনে আছে – একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে ‘কেন ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়?‘ নামে। লেখাটিতে প্রভাবশালী পুরুষদের মধ্যে কেন পরকীয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায় – মানে কেন ক্ষমতাশালী লুলপুরুষেরা বেশি পরনারীতে আসক্ত হয়, কেন অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি বাড়ার সাথে সাথে তাদের অনেকেরই বেলাল্লাপণা পাল্লা দিয়ে বাড়ে -এ প্রশ্নগুলোর একটা উত্তর খোঁজার চেষ্টা ছিল। লেখাটি নিয়ে নানা ধরণের আলোচনা হচ্ছিল, এর মাঝে মাহফুজ একটি গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন করেছিলেন – তাহলে নারীরা কেন পরকীয়ায় আসক্ত হয়? জৈবিক দিক থেকে নারী পরকীয়ার কি ব্যাখ্যা?
প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উত্তর এত সোজাসাপ্টা নয়। ভাবছি এ নিয়ে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করলে মন্দ হয় না, কী বলেন! আসলে নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই যেমন একগামিতা দৃশ্যমান, তেমনি দৃশ্যমান বহুগামিতাও। নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই লংটার্ম বা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক করার মনোবাসনা যেমন আছে, তেমনি সুযোগ এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় উঠে আসে শর্টটার্ম বা স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কের মনোবাঞ্ছাও। পুরুষের মধ্যে বহুগামিতা বেশি, কারণ অতীতের শিকারী-সংগ্রাহক সমাজে শক্তিশালী এবং প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরা যেভাবে নারীর দখল নিত, সেটার পর্যাক্রমিক ছাপ এখনো ক্ষমতাশালী পুরুষদের মধ্যে লক্ষ্য করলে পাওয়া যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে নারীরা পরকীয়া করে না, কিংবা তাদের মধ্যে বহুগামিতা নেই। প্রভাবশালী কিংবা ক্ষমতাশালী পুরুষেরা যেমন পরকীয়া করতে উন্মুখ থাকে, তেমনি, ক্ষমতাশালী কিংবা প্রভাবশালী পুরুষের স্ট্যাটাস আবার নারীর কাছে পছন্দনীয়। কোন নারীর বর্তমান সঙ্গির চেয়ে যদি তার প্রেমিকের পদমর্যাদা বা স্ট্যাটাস ভাল হয়, কিংবা প্রেমিক দেখতে শুনতে অধিকতর সুদর্শন হয়, কিংবা যে সমস্যাগুলো নিয়ে একটি নারী তার পার্টনার কিংবা স্বামীর সাথে অসুন্তুষ্ট, সেগুলোর সমাধান যদি তার প্রেমিকের মধ্যে খুঁজে পায়, নারী পরকীয়া করে। তাই আমেরিকায় আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, নিউট গিংরিচ, বিল ক্লিন্টন কিংবা বাংলাদেশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কিংবা হুমায়ূন আহমেদ যখন পরকীয়া করতে চেয়েছে, তারা সেটা করতে পেরেছে, কারণ নারীরাও তাদের মত যশস্বী কিংবা ‘হাই স্ট্যাটাসের’ কেউকেটাদের সাথে সম্পর্ক করতে প্রলুব্ধ হয়েছে। নারীর আগ্রহ, অনুগ্রহ কিংবা চাহিদা ছাড়া পুরুষের পক্ষে পরকীয়া করা সম্ভব নয়, এটা বলাই বাহুল্য। তাই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের চোখে নারীর একগামিতার ব্যাপারটি এক ধরণের ‘মিথ’ বই কিছু নয়, অনেকটা নীচের ছবিটার মতো –
ছবি– মিথ অব মনোগেমাস ফিমেইল, উৎস – Dylan Evans & Oscar Zarate, Introducing Evolutionary Psychology, Icon Books, p 123
আগেই বলেছি লং টার্ম এবং শর্ট টার্ম স্ট্র্যাটিজি নারী পুরুষ সবার মধ্যেই আছে। বহু কারণেই এটি নারী পরকীয়া করতে পারে, আগ্রহী হতে পারে বহুগামিতায়। নারীর পরকীয়ার এবং বহুগামিতার ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুকল্প বা হাইপোথিসিস প্রস্তাব করেছেন বিজ্ঞানীরা, এর মধ্যে রয়েছে – রিসোর্স হাইপোথিসিস, জেনেটিক হাইপোথিসিস, মেট সুইচিং হাইপোথিসিস, মেট স্কিল একুজেশন হাইপোথিসিস, মেট ম্যানুপুলেশন হাইপথিসিস ইত্যাদি[1]। দু একটি বিষয় এখানে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
জৈবিক কারণেই অসতর্ক কিংবা অপরিকল্পিত যৌনসম্পর্কের ক্ষেত্রে (casual sex) নারীরা পুরুষদের মত প্রজননগত উপযোগিতা পায় না (এ নিয়ে আগে আলোচনা করেছিলাম এখানে)। তারপরেও নারীরা পরকীয়া করে, কিংবা হতে পারে বহুগামী, কারণ নারীদের ক্ষেত্রে বহুগামিতার একটি অন্যতম উপযোগিতা হতে পারে, সম্পদের তাৎক্ষনিক যোগান। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, খাদ্যের বিনিময়ে তারা পুরুষ শিম্পাঞ্জিকে যৌনতা প্রদান করে থাকে। গবেষকেরা লক্ষ্য করেছেন, নারী শিম্পাঞ্জিরা সেই সব পুরুষ শিম্পাঞ্জিদের প্রতিই যৌনতার ব্যাপারে থাকে সর্বাধিক উদার যারা খাদ্য যোগানের ব্যাপারে কোন কৃপণতা করে না। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে কোন কিছু সত্য হলে মানব সমাজেও সেটা সত্য হবে, এমন কোন কথা নেই অবশ্য। কিন্তু তারপরেও বিজ্ঞানীরা আমাজনের মেহিনাকু (Mehinaku) কিংবা ট্রোব্রিয়াণ্ড দ্বীপপুঞ্জের (Trobriand Island) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, সেখানেও পুরুষেরা নারীদের জন্য (অনেকটা শিম্পাঞ্জিদের সমাজের মতোই) রকমারী খাদ্য, তামাক, বাদাম, শঙ্খের মালা, বাহুবন্ধনী প্রভৃতি উপঢৌকন সংগ্রহ করে নিয়ে আসে, আর বিনিময়ে নারীরা যৌনতার অধিকার বিনিময় করে। যদি কারো কাছ থেকে উপঢৌকনের যোগান বন্ধ হয়ে যায়, তবে নারীরাও সে সমস্ত পুরুষের সাথে যৌনসম্পর্ক বন্ধ করে দেয়[2]। সম্পদের যোগানের সাথে যে নারীর যৌনতা প্রদানের একটা অলিখিত সম্পর্ক আছে, তা জানার জন্য অবশ্য আদিম সমাজে যাওয়ার দরকার নেই। আধুনিক সমাজেও সেটা লক্ষ্য করলে পাওয়া যাবে। সবচেয়ে চরম উদাহরণটির কথা আমরা সবাই জানি -পতিতাবৃত্তি। নারী যৌনকর্মীরা অর্থসম্পদের বিনিময়ে যৌনতার সুযোগ করে দেয় পুরুষদের – এটা সব সমাজেই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা থেকে পুরুষদের বহুগামী চরিত্রটি যেমন স্পষ্ট হয়, তেমনি হয় আর্থিক লাভের জন্য নারীর যৌনতা বিক্রির সম্পর্কটিও[3]। যৌনকর্মী শুধু নয়, আমেরিকায় সাধারণ মেয়েদের মধ্যে গবেষণা করেও দেখা গেছে, যে সমস্ত নারীরা শর্ট টার্ম বা স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছুক, তারা আশা করে যে, তার প্রেমিক অর্থ কড়ির দিক থেকে কোন কৃপণতা দেখাবে না, অনেক ধরণের দামী উপহার সামগ্রী উপঢৌকন হিসেবে নিয়ে আসবে, বিলাসবহুল জীবন যাত্রায় অভ্যস্থ হবে, নিয়মিতভাবে ভাল ভাল রেস্টুরেন্টে তাকে আপ্যায়ন করবে, এবং সর্বোপরি যে কোন ধরণের সম্পদের বিনিয়োগে থাকবে উদার[4]। কৃপণ স্বামীকে যাও বা মেয়েরা কিছুটা হলেও সহ্য করে, অ্যাফেয়ার বা পরকীয়ায় আগ্রহী কৃপণ যৌনসঙ্গিকে কখনোই নয়। অ্যাফেয়ার বা পরকীয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের কৃপণতা মেয়েদের কাছে গ্রহণীয় কিংবা পছন্দনীয় নয়, কারণ তারা সঙ্কেত পেতে শুরু করে যে, তার সঙ্গিটি হয়তো ভবিষ্যতেও তার জন্য সম্পদ বিনিয়োগে সে রকমভাবে আগ্রহী নয়। এই মানসিক অভিরুচিগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, সম্পদের তাৎক্ষণিক আহরণ নারীদের ক্ষেত্রে এক ধরণের অভিযোজন জনিত উপযোগিতা দিয়েছে, যা নারীরা অনেক সময় পরকীয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চায়।
নারীদের পরকীয়ার ব্যাপারে আরো একটি লক্ষ্যনীয় প্যাটার্ন পাওয়া গিয়েছে, যেটা পুরুষদের থেকে কিছুটা আলাদা। বহুক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নতুন সঙ্গির সাথে অপরিকল্পিত যৌনসম্পর্কের (casual sex) মাধ্যমে নারীরা সঙ্গিটিকে ভবিষ্যৎ স্বামী হিসেবে মূল্যায়ন করে নিতে চায়। সে জন্যই এমনকি স্বল্পমেয়াদি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বহুগামী, বোহেমিয়ান ধরণের ছেলের সাথে সম্পর্ক করতে নারীরা প্রাথমিকভাবে অনিচ্ছুক থাকে; অতীতে যদি পুরুষটির বহু নারীর সাথে সম্পর্ক কিংবা আসক্তি থেকে থাকে, তা নারীটির কাছে তা এক ধরণের অনাকাংক্ষিত সংকেত নিয়ে উপস্থিত হয়। এর কারণ, স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কে জড়ালেও তার অবচেতন মনে থাকে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের আকাংক্ষা, যার নিরিখেই সে সাধারণতঃ উপরোক্ত বৈশিষ্টগুলো বিচার করে থাকে। তার সঙ্গির বহুগামিতা কিংবা অতীতে বহু নারীর প্রতি আসক্তির অর্থ তার চোখে হয়ে উঠে তার সাথে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ততার নিয়ামক। অর্থাৎ, সে ধরে নেয় এ ধরণের পুরুষেরা ‘ভবিষ্যৎ স্বামী’ হিসেবে উপযুক্ত নয়। মোটা দাগে, ভবিষ্যৎ স্বামীর মধ্যে যে গুণাবলীগুলো প্রত্যাশা করে, ঠিক সেগুলোই একটি নারী তার যৌনসঙ্গির মধ্যে খুঁজতে চায়[5]। দুটি ক্ষেত্রেই মেয়েরা চায় তার পুরুষ সঙ্গি হবে দয়ালু, রোমান্টিক, সমঝদার, দুর্দান্ত, স্বাস্থ্যবান, রসিক, বিশ্বস্ত এবং সম্পদের বিনয়গের ব্যাপারে থাকবে উদার। সেজন্যই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী ডেভিড বাস তার ‘বাসনার বিবর্তন’ (The Evolution Of Desire) বইয়ে বলেন[6],
উভয় ক্ষেত্রেই মেয়েদের অভিরুচির এই অপরিবর্তনীয়তা ইঙ্গিত করে যে, নারীরা অনিয়মিত যৌনসঙ্গিকে হবু স্বামী হিসবেই দেখে এবং সেজন্য দুইক্ষেত্রেই বেশি পদপর্যাদা আরোপ করে।
বহু সমাজে আবার দেখা গেছে, যে সমস্ত সমাজে সহিংসতা খুব বেশি, নারীরা বিবাহ-বহির্ভূত যৌনসম্পর্ক করে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারটা চিন্তা করে। স্বামীর বাইরে গোত্রের অন্য কোন পুরুষের সাথে যদি নারীর কোন ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’ গড়ে উঠে তবে সে স্বামী বাইরে থাকলে বা অন্য কোন সময়ে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে। এ ব্যাপারটা সাধারণভাবে প্রানীজগতের মধ্যে প্রচলিত আছে। যেমন, সাভানা বেবুনদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বারবারা স্মুটস সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে, এই ধরনের বেবুনদের সমাজে একটি নারী বেবুনের সাথে প্রাথমিক বা মূল সঙ্গির বাইরেও একজন বা দু’জন সঙ্গির সাথে ‘বিশেষ ধরনের’ সম্পর্ক গড়ে উঠে, এবং সেই সঙ্গি বা সঙ্গিরা অন্য বেবুনদের উত্যক্ত করার হাত থেকে নারী বেবুনটিকে রক্ষা করে[7]। ‘পর-পুরুষের’ সাথে যৌনতার বিনিময়ে মূলতঃ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নারী বেবুনটি। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী রবার্ট স্মিথ তার একটি গবেষণাপত্রে বলেন[8] –
‘প্রাথমিক সঙ্গিটি সবসময় নারী বেবুন কিংবা তার সন্তানের পাশে থেকে থেকে তাকে রক্ষা করতে পারে না। তার অনুপস্থিতিতে অন্য কোন পুরুষের সাথে নারীটির ‘বিশেষ কোন সম্পর্ক’ থাকলে তা তার বেঁচে থাকায় বাড়তি উপযোগিতা নিয়ে আসে। এভাবে নারীটি অন্য কোন পুরুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে নিজের এবং নিজের সঙ্গির জিন রক্ষা করার ক্ষেত্রে এক ধরণের স্ট্র্যাটিজি তৈরি করে’।
এ ধরণের স্ট্র্যাটিজি মানব সমাজে বর্তমানে খুব বেশি দৃশ্যমান না হলেও বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আদিম শিকারী সংগ্রাহক কিছু সমাজে যেখানে নারীদের উপর পুরুষালী সহিংসতা, আগ্রাসন, ধর্ষণ খুবই বেশি, সেখানে নারীরা এ ধরণের ‘অতিরিক্ত যুগল বন্ধনের’ মাধ্যমে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে[9]।
সঙ্গি রদবদল বা ‘মেট সুইচিং’ও হতে পারে আরেকটি বড় কারণ যার কারণে একটি নারী পরকীয়া করতে পারে। স্পটেড স্যাণ্ড পাইপার (বৈজ্ঞানিক নাম Actitis macularia) নামে আমেরিকার মিনেসোটার হ্রদে দৃশ্যমান এক ধরণের পাখিদের মধ্যে সঙ্গি রদবদলের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যমাত্রায় পাওয়া গিয়েছে। জীববিজ্ঞানী মার্ক কলওয়েল এবং লিউস ওরিং প্রায় চার হাজার ঘন্টা ধরে এই পাখিদের জীবনাচরণ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, এ ধরণের পাখিদের মধ্যে সঙ্গি রদবদল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা[10]। সঙ্গি রদবদলের মাধ্যমে বর্তমান সঙ্গির চেয়ে আরো আকর্ষণীয় সঙ্গিকে খুঁজে নেয় একটি নারী স্পটেড স্যাণ্ড পাইপার। মানব সমাজেও কিন্তু এ ব্যাপারটি লক্ষ্য করলে খুঁজে পাওয়া যাবে। বর্তমান সঙ্গির চেয়ে অন্য কাউকে অধিকতর আকর্ষণীয়, সুদর্শন কিংবা কাংক্ষিত মনে হলে, কিংবা বর্তমান সঙ্গির স্ট্যাটাসের চেয়ে উঁচু সামাজিক পদমর্যাদাসম্পন্ন কেউ তার সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠলে নারী তার সাথেও পরকীয়ায় জড়াতে করতে পারে। পরকীয়া করতে পারে যদি নারীর বর্তমান সঙ্গি যদি অসুস্থ হয়, পঙ্গু হয়, শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়, যুদ্ধাহত হয় কিংবা মুমুর্ষু হয়। বাংলাদেশে বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকের চাঞ্চল্যকর মুনীর-খুকুর পরকীয়া আর তাকে কেন্দ্র করে শহীদ সাংবাদিক কন্যা রীমা হত্যাকাণ্ডের কথা নিশ্চয় অনেকেরই মনে আছে। মধ্যবয়সী খুকু পরকীয়া প্রেম শুরু করেছিলেন ডঃ মেহেরুন্নেসার পুত্র মুনীরের সাথে। খুকুর স্বামী ছিলেন পক্ষাঘাতগ্রস্থ এবং অসুস্থ। স্বামীর এ শারীরিক পরিস্থিতি খুকুকে চালিত করেছিলো মুনীরের সাথে পরকীয়ায় জড়াতে, আর প্ররোচিত করেছিলো মুনীরকে রীমা হত্যায়। কাজেই নারী শুধু পরকীয়া করে না, প্রয়োজনে পরকীয়ার কারণে হত্যায় প্ররোচনা দেওয়া শুধু নয়, নিজ হাতে হত্যা পর্যন্ত করতে পারে। কিছুদিন আগে পরকীয়ার কারণে আয়শা হুমায়রা কীভাবে তার নিজের সন্তান সামিউলকে নির্দয়ভাবে হত্যা করে লাশ ফ্রিজবন্দি করে পর বাইরে ফেলে দিয়েছিলো, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিনের পর দিন ধরে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পরকীয়ার কারণে মায়ের নিজ সন্তান হত্যা হয়ত খুব চরম এবং ব্যতিক্রমী উদাহরণ, কিন্তু আকর্ষনীয় সঙ্গির জন্য বর্তমান সঙ্গিকে ত্যাগ, কিংবা স্বামীর তুলনায় আরো ‘উৎকৃষ্ট’ কারো সাথে লুকিয়ে ছাপিয়ে পরকীয়া তা নয়। এ ব্যাপারটা সব সময়ই এবং সব সমাজেই ছিল। পয়সাওয়ালা কিংবা সুদর্শন, স্বাস্থ্যবান, আকর্ষনীয়, মনোহর কিংবা উঁচু পদমর্যাদাসম্পন্ন সঙ্গির জন্য পুরাতন সঙ্গিকে ত্যাগ মেয়েদের মধ্যে এক সময় একধরনের অভিযোজনগত উপযোগিতা দিয়েছিলো, অন্ততঃ হেলেন ফিশারের মত নৃতত্ত্ববিদেরা তাই মনে করেন[11]। সেই আদিম শিকারী সংগ্রাহক সমাজের কথা চিন্তা করুন, যেখানে একটি নারীকে ‘বিয়ে করতে’ হয়েছিলো এক দুর্বল শিকারীকে যার চোখের দৃষ্টি ছিল ক্ষীণ, শিকারে অযোগ্য এবং স্বভাবে কাপুরুষ। এ ধরনের সম্পর্কে থাকা নারীরা মানসিক অতৃপ্তি মেটাতে হয়তো পরকীয়া শুরু করেছিলো সুস্থ সবল, স্বাস্থ্যবান তরুণ কোন সাহসী শিকারীর সাথে – ‘মিস্টার গুড জিন’ পাবার এবং ভবিষ্যত সন্তানের মধ্যে তা রেখে যাবার প্রত্যাশায়। ভাল জিনের জন্য সঙ্গিবদলের ব্যপারটি যদি আদিম শিকারী সংগ্রাহক পরিস্থিতিতে নারীদের একধরণের স্ট্র্যাটিজি হয়ে থাকে, তবে সেটি এখনকার সময়েরও বাস্তবতা হতে পারে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। র্যান্ডি থর্নহিলের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে এই ‘গুড জিন’ অনুকল্পের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে[12]। গবেষণায় দেখা গেছে নারীরা যখন পরকীয়া করে তখন প্রতিসম চেহারার প্রতি আকর্ষিত হয় বেশি[13]। প্রতিসম চেহারা সবসময়ই একটি ভাল ‘ফিটনেস মার্কার’ হিসেবে বিবেচিত। প্রেমিকের চেহারা প্রতিসম হওয়া মানে – তার প্রেমিকের চেহারা আকর্ষনীয়, তার শারীরের গঠন উন্নত, সে পুরুষালী, বুদ্ধিদীপ্ত, চৌকষ, স্বাস্থ্যবান এবং রোগজীবাণু থেকে মুক্ত[14]। তাই যে নারী স্বামীকে রেখে প্রতিসম বৈশিষ্ট্যের প্রেমিকের পেছনে ছুটছে, তার ‘প্রস্তর যুগের মস্তিস্ক’ আসলে প্রকারান্তরে ‘ভাল জিন’ নিজ সন্তানের জন্য নিশ্চিত করে রাখতে চাইছে।
ভাল জিনের জন্য প্রলুব্ধ হয়ে পরকীয়া করার এই জেনেটিক হাইপোথিসেরই আরেকটি প্রচলিত রূপ হচ্ছে ‘জোশিলা পোলা’ বা ‘সেক্সি সন’ অনুকল্প। এই অনুকল্পটি ১৯৭৯ সালে প্রস্তাব করেছিলেন কুইন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী প্যাট্রিক ওয়েদারহেড এবং রালি রবার্টসন। এই অনুকল্প অনুযায়ী মনে করা হয় যে, সুদর্শন পুরুষের সাথে নারী পরকীয়া করে কিংবা স্বল্পমেয়াদী যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে কারণ, অবচেতন মনেই তার মাথায় থাকে যে, তার সন্তানও হয়ে উঠবে ঠিক একই রকম মনোহারী গুণাবলীর অধিকারী। পরবর্তী প্রজন্মের নারীরা তার সন্তানের এই প্রীতিকর বৈশিষ্টগুলো দিয়ে অনেক বেশি পরিমাণে আকৃষ্ট হবে, ফলে যাদের মধ্যে এই গুণাবলীগুলোর অভাব রয়েছে তাদের তুলনায় তার সন্তান অনেক বেশি প্রজননগত সফলতা অর্জন করতে পারবে। বেশ কিছু সাম্প্রতিক জরিপে এই তত্ত্বের স্বপক্ষে কিছুটা হলেও সত্যতা মিলেছে। দেখা গেছে, নারীরা যখন পরকীয়ায় আসক্ত হয় তখন তাদের একটা বড় চাহিদা থাকে স্বামীর চেহারার চেয়ে প্রেমিকের চেহারা অনেক বেশি আকর্ষনীয় হতে হবে[15]।
শুধু ভাল জিন, ভাল চেহারা বা ভাল সন্তানের জন্যই নয়, নারীরা আরো বহু কারণেই পরকীয়া করতে পারে। সামাজিক স্ট্যাটাস তার মধ্যে একটি। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন বিবাহিত নারী যখন অন্য কোন পুরুষের সাথে পরকীয়া করে, সেই পুরুষের স্ট্যাটাস, প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান প্রভৃতি তার বর্তমান স্বামীর চেয়ে অনেক বেশি থাকে[16]। প্রখ্যাত ব্যবসায়ী এবং ২০১২ সালের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী (পরে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন থেকে সরে দাঁড়ানো ) ডোনাল্ড ট্রাম্প বছর খানেক আগে এক অপরিচিত মডেল মার্থা মেপেলের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে রাতারাতি মার্থা মেপল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। মিডিয়ার পাবলিসিটি তো ছিলোই, সাথে সাথে নানা ধরণের আর্থিক বিনিয়োগ, গনমান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রবেশের অধিকার সহ বিভিন্ন পদমর্যাদা ভোগ করতে থাকেন। বাংলাদেশেও এরশাদ সাহেব যখন রাস্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে জিনাত মোশারফ সহ বহু নারীর সাথে পকীয়ায় মত্ত ছিলেন, তখন সে সমস্ত নারীরাও রাতারাতি বহু রাজনৈতিক এবং সামাজিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে গিয়েছিলেন। এ সমস্ত নারীরা এমন সব মহলে, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কিংবা সভায় প্রবেশ করে যেতেন অবলীয়ায়, যেগুলোতে সাধারণ মানুষদের জন্য প্রবেশ ছিলো অকল্পনীয়। প্রেমের অর্থনীতির বাজারে কোন কেউকেটা বা বিখ্যাত লোক যখন কোন পরিচিত নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়, তখন সে যত অখ্যাতই আগে থাকুক না কেন, মানুষ ভেবে নেয় নারীটি নিশ্চয় ‘স্পেশাল’। সে রাতারাতি চলে আসে আলোচনা আর ক্ষমতার কেন্দ্রে। নারীটি পায় নতুন পরিচিতি, আর সামাজিক এবং বন্ধুমহলে ঘটে তার ‘স্ট্যাটাসের উত্তোরণ’।
যে কারণেই নারী পরকীয়া করুক না কেন, প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ সারা ব্ল্যাফার হার্ডি মনে করেন যে, নারী-পরকীয়ার ব্যাপারটা মানবেতিহাসের সূচনা থেকেই এমনভাবে জড়িত ছিলো যে, সেটাকে অস্বীকার করা বোকামিই[17]। অন্য প্রানীর ক্ষেত্রে যেমন, শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে আমরা জানি সেখানে নারীরা বহুগামী। হার্ডি তার গবেষণাপত্রে শিম্পাঞ্জিদের উদাহরণ হাজির করে দেখিয়েছেন যে, বহুগামিতার মাধ্যমে নারী শিম্পাজিরা ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করে -এক, অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করে সদ্যজাত সন্তানকে কেউ ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে হত্যা করবে না, আর দুই – সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে গোত্রে এক ধরণের ‘ধোঁয়াশা’ তৈরি করা; যার ফলে সকল পুরুষ শিম্পাঞ্জিই নিজেকে তার অনাগত সন্তানের পিতা ভেবে নারী এবং শিশুটিকে রক্ষা করে চলতে চেষ্টা করবে।
হার্ডি মনে করেন শিম্পাঞ্জির জন্য যে ব্যাপারটি সত্য, মানুষের বিবর্তনীয় পথ পরিক্রমাতেও সে ব্যাপারটা কিছুটা হলেও প্রায় একই রকমভাবে সত্য হতে পারে। আমি ‘সখি, ভালবাসা কারে কয়?’ সিরিজের শেষ পর্বে পুরুষের অণ্ডকোষ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দেখেছি, পুরুষের অপেক্ষাকৃত বড় শুক্রাশয় এটাই ইঙ্গিত করে যে, বিবর্তনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নারীরা একগামী নয়, বরং বহুগামীই ছিল। একই প্রবন্ধে নারী বহুগামিতার আরো একটিও বড় সাক্ষ্য আমরা পেয়েছি পুরুষের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ কীলকাকৃতি হওয়ার এবং সঙ্গমকালীন সময়ে উপর্যুপরী লিঙ্গাঘাতের মধ্যেও। সঙ্গির যদি একই সময়ে আর কারো সাথে সঙ্গমের সম্ভাবনা না থাকতো তবে এগুলো একটি পুরুষের পুরুষাঙ্গের বৈশিষ্ট্য হিসেবে শরীরে জায়গা করে নিতো না। বহু মানুষের শুক্রানুর প্রতিযোগিতায় সঙ্গির গর্ভে নিজের সন্তানের পিতৃত্ব নিশ্চিত করতেই এই শারীরিক বৈশিষ্ট্য আর প্রক্রিয়াগুলো পুরুষের দেহে তৈরি হয়েছে। সেখানে আমরা আরো দেখেছিলাম যে, দম্পতিদের দীর্ঘদিন আলাদা করে রেখে তারপর সঙ্গমের সুযোগ করে দিলে পুরুষের বীর্য প্রক্ষেপণের হার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন পৃথক থাকাকালীন সময়ে স্ত্রীর পরকীয়ার সম্ভাবনার থেকে যাবার কারণেই এ ব্যাপারটা ঘটে বলে মনে করা হয়। শুধু পুরুষের দেহে নয়, পরকীয়ার এবং বহুগামিতার বহু আলামত লুকিয়ে আছে নারীর নিজের দেহেও। অর্গাজম বা চরম পুলক এমনি একটি বৈশিষ্ট্য। রবিন বেকার এবং মার্ক বেলিসের যুগান্তকারী একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে সমস্ত নারীরা পরকীয়ায় জড়িত থাকে তারা চরম পুলক লাভ করে বেশি এবং তারা পরকীয়ার সময় তাদের স্বামী বা নিয়মিত সঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি শুক্রাণু যোনিতে ধারণ করে রাখে[18]। অর্গাজম সংক্রান্ত এ ব্যাপারটিও আমার আগেকার প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে।
এ তো গেল জীববিজ্ঞানের কথা। এর বাইরে ইতিহাস, ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য অনুসন্ধান করলেও আমরা দেখতে পাই মানব সমাজে নারীর কামস্পৃহা কখনোই কম ছিলো না। বরং নারীর কামস্পৃহা বেশি বলেই নারীকে ‘ছিনাল’, ‘মাগি’, ‘খানকি’, ‘বেশ্যা’, ‘কামুকী’, ‘কামার্ত’, ‘নটিনী’, ‘রাক্ষুসী’ প্রভৃতি নানা শব্দ তৈরি করতে হয়েছে পুরুষতন্ত্রকে, এবং কামুক নারীকে বশীভূত রাখতে তৈরি করেছে নানা ধর্মীয় এবং সামাজিক বিধি নিষেধের দেওয়াল। হিন্দু পুরাণ এবং সাহিত্যে আমরা দেখেছি কীভাবে সুপুরুষ রামচন্দ্রকে দেখে রাবণের বোন শূপর্ণখা কামার্ত হয়ে পড়েছিল, কিংবা মহাভারতে সুঠামদেহী অর্জুনকে দেখে কামার্ত হয়ে পড়েছিলো নাগ রাজকন্যা উলুপী, তাকে সরাসরি দিয়েছিলো দেহমিলনের প্রস্তাব[19] –
‘হে পুরুষশ্রেষ্ঠ! আমি তোমাকে অভিষেকার্থ গঙ্গায় অবতীর্ণ দেখিয়া কন্দর্পশরে জর্জরিত হইয়াছি। এক্ষণে তুমি আত্মপ্রদান দ্বারা এই অশরন্য অবলার মনোবাঞ্ছা পরিপূর্ণ কর।’
মহাভারতের বহু নারী চরিত্রই বহুচারিনী এবং বহুগামিনী। পাঁচ স্বামী নিয়ে ঘর করা দ্রৌপদী তো আছেনই, তার পাশাপাশি সত্যকামের মাতা জবালা, পাণ্ডব জননী কুন্তী থেকে শুরু করে স্বর্গের অপ্সরা উর্বসী, রম্ভা সকলেই ছিলেন বহুপুরুষাসক্ত। কামাসক্ত নারীর উদাহরণ এবং তাদেরকে অবদমনের নানা পদ্ধতি অন্য ধর্মগুলোতেও আছে। ইসলামে হিজাব এবং বোরখার ব্যবহার মুলতঃ কামাসক্ত নারীকে ‘পর্দানশীন’ রাখার জন্যই মনে করা হয়। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বহু মুসলিম দেশে আধুনিক যুগেও নারী খৎনা নামের একটি কুৎসিৎ রীতি প্রচলিত আছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারীর ভগাঙ্গুর কেটে ফেলা হয়, যাতে নারীর কাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে পুরুষেরা। খ্রীষ্ট ধর্মের প্রাথমিক উৎসগুলো অনুসন্ধান করলেও দেখা যায়, তালমুদিক লেখকেরা স্ত্রীকে কামাসক্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন, আর সদুপদেশ দিয়ে বলেছেন – আদর্শ স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে নিয়মিত সঙ্গমের মাধ্যমে স্ত্রীর কামকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
ইতিহাস এবং সভ্যতার এই বিশ্লেষণমূলক উদাহরণগুলো থেকে মনে হয়, নারীর কামাসক্তির ব্যাপারটা পুরুষদের জানা ছিলো কিংবা তাদের উদ্বিগ্ন করেছে সবসময়ই। নৃতাত্তিক সারা ব্ল্যাফার হার্ডি সেজন্যই মনে করেন, শিম্পাঞ্জিদের মত মানুষও যখন বনে জঙ্গলে থাকতো, মুলতঃ গাছ গাছালিই ছিলো বসতি, তখন আমাদের নারীরাও ছিলো বহুগামী। তারাও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা ভেবে বহু পুরুষের সাথে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ তৈরি করতো, তারাও সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করতে চাইতো বেঁচে থাকার এবং নিজ সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনেই। কিন্তু অরণ্য পর্বের পরে যখন মানুষ যখন প্রায় চার মিলিয়ন বছর আগে তৃণভূমিতে নেমে আসে, এবং যুগল বন্ধনের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনে অভ্যস্থ হয়ে যায়, তখন থেকেই নারীর যৌনতাকে অবদমিত করা হয়। আর ব্যাপারটা আরো ত্বরান্বিত হয় মানুষ যখন পৌঁছোয় কৃষিপর্বে, তখন সম্পদশালী হয়ে ওঠে বিভিন্ন গোত্র। একসময় ওই সম্পদ অধিকারে চলে আসে গোত্রপতিদের; তারা হয়ে ওঠে সম্পদশালী, উদ্ভাবন ঘটে ব্যক্তিগত মালিকানার। সম্পদ যত বাড়তে থাকে পরিবারে নারীদের থেকে গুরুত্ব বাড়তে থাকে পুরুষদের, পুরুষ সৃষ্টি করে পিতৃতন্ত্রের প্রথা, নারী পরিনত হয় পুরুষের সম্পত্তিতে। আগেই আমরা জেনেছি – যেহেতু পিতৃতন্ত্রের মূল লক্ষ্য থাকে ‘সুনিশ্চিত পিতৃত্বে সন্তান উৎপাদন’ সেজন্য, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে জৈবিক এবং সামাজিক কারণেই বহুগামী স্ত্রীকে ‘হুমকি’ হিসেবে দেখা হয়। স্ত্রী বহুগামী হলে তার প্রভাব পড়ে ভূ-স্বামীর জমি জমা, অর্জিত সম্পত্তিতে, তার সামাজিক পদপর্যাদায়। সনাতন কৃষিভিত্তিক সমাজে আসলে নারীকে যাচাই করা হয় দুটি বৈশিষ্টের নিরিখে – এক, নারী তার বাপের বাসা থেকে যৌতুক, দাউরি প্রভৃতি নিয়ে এসে স্বামীর সম্পত্তিতে কতটা মূল্যমান যোগ করতে পারবে, আর দুই, – তার শারীরিক সৌন্দর্য আর শরীর-স্বাস্থ্য (গর্ভ) স্বামী এবং তার পরিবারের বীজ বপন এবং তা বয়ে নিয়ে যাবার জন্য কতটা উপযুক্ত। তাই দেখা যায় বহু কৃষিভিত্তিক সমাজে পুরুষের বহুগামিতার ব্যাপারে আইন কানুন শিথিল হলেও নারী বহুগামিতাকে সব সময়ই অধিকতর নিন্দনীয়ভাবে দেখা হয়; এমনকি বহুগামী স্ত্রীকে শারিরীক নিগ্রহ এমনকি হত্যা করা হলেও খারাপ চোখে দেয়া হয় না। উদাহরণ হিসেবে প্রাচীন টাইগ্রিস ইউফ্রেটিস অববাহিকায় গড়ে উঠা কৃষিভিত্তিক সভ্যতা থেকে জানা যায়, সেখানে সাধারণভাবে মনে করা হত নারীরা স্বামীর ‘অনুগামী’ থাকবে, তারা চিরকাল থাকবে স্বামীর সাথে একগামী সম্পর্কে আস্থাশীল। পুরুষেরা কিন্তু তা নয়। তার ছিলো বহুগামী। আর পুরুষের বহুগামিতাকে ততটা খারাপ চোখে দেখা হত না। দেখা হত মেয়েদেরটাই। যে সসমস্ত স্ত্রীরা স্বামীর অনুগত না থেকে পরকীয়ায় মত্ত হতো, তাদের নাক কেটে ফেলা হত। চীন জাপান এবং ভারতের অনেক জায়গাতেই পুরুষের পতিতাবৃত্তি, রক্ষিতা রাখা কিংবা গণিকা সম্ভোগ প্রভৃতিকে ‘এডাল্ট্রি’ হিসেবে গন্য করা হয় না, কিন্তু বহু জায়গায় এখনো বহুগামী নারীকে বেত্রাঘাত আর পাথর ছুঁড়ে হত্যার বিধান প্রচলিত আছে। এমনকি পশ্চিমেও বিংশ শতাব্দীর আগে নারীদের বহুগামিতার কারণে স্বামীর বা পরিবারের আগ্রাসন থেকে তাকে রক্ষা করার কোন শক্ত রাষ্ট্রীয় আইন কানুন ছিলো না। বরং অবাধ্য, বহুগামী আর কামার্ত স্ত্রীকে নিগ্রহ, নির্যাতন আর হত্যাকে পরোক্ষভাবে উদযাপনই করা হতো সামাজিকভাবে। পরবর্তীকালের নারীবাদী আন্দোলন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক আইন কানুনের প্রবর্তন নারীদের এই নিগ্রহ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে।
বিবর্তনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, মানব প্রজাতি শতকরা একশ ভাগ একগামিতার জন্য কিংবা শতভাগ বহুগামিতা – কোনটির জন্যই বিবর্তনগত ভাবে অভিযোজ্য হয়নি। ইতিহাসের পরিক্রমায় আমরা যেমন গরিলাদের মতো হারেম করে চলা আকবর বাদশাহর সন্ধান পাই তেমনি আবার সন্ধান পাই একদ্বারপত্নিক বহু মানুষেরই। এরশাদের মত লুল পুরুষও আবার সমাজে কম নেই। নারীদের ক্ষেত্রেও মহাভারতের দৌপদি থেকে শুরু করে ক্লিওপেট্রা, কিংবা অধুনা ব্রিটনী স্পিয়ার্স, প্যারিস হিল্টন কিংবা লিজ টেলর পর্যন্ত বহুগামী নারীর সন্ধানও খুঁজলেই পাওয়া যাবে, যেমনি পাওয়া যাবে সীতার মত কেবল একস্বামী নিয়ে মত্ত কঠোর অনুরাগী স্ত্রীও। পাওয়া যাবে ছল চাতুরী প্রতারণাপ্রবণ কিংবা কামকাতুরা নারীর দৃষ্টান্তও। সেজন্যই হেলেন ফিশার তাঁর “প্রেমের বিশ্লেষণ” (Anatomy of Love) বই এ লিখেছেন[20] –
‘এমন কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নেই যে মেয়েরা যৌনতার ব্যাপারে লাজুক ছিলো কিংবা তারা গোপন যৌন অভিযান এড়িয়ে চলে। বরং পুরুষ ও নারী উভয়েই এক মিশ্র প্রজনন কৌশল প্রদর্শন করে; একগামিতা এবং বহুগামিতা দুটোই আমাদের স্বভাবজাত অভ্যাস’।
পাঠকেরা কি কহেন?
:line:
তথ্যসূত্র:
[1] D.M. Buss, Human Mating Strategies, Samfundsokonomen, 4, 47-58, 2002.
[2]Bronisław Malinowski, The Sexual Life of Savages in North-Western Melanesia, London, 1929
[3] N. Burley, & R. Symanski. Women without: an evolutionary and cross- cultural perspective on prostitution. In R. Symanski, The immoral landscape. Toronto: Butterworths, 1981.
[4] D. M. Buss, & D. P. Schmitt, Sexual strategies theory: An evolutionary perspective on human mating. Psychological Review, 100, p 204–232,1993.
[5] David Buss, The Evolution Of Desire – Revised 4th Edition, Basic Books , 2003
[6] “The constancy of women’s preferences in both scenarios is consistent with the theory that women see casual mates as potential husbands and thus impose high status for both”, quoted from David Buss, The Evolution Of Desire – Revised 4th Edition, Basic Books , 2003, p 88.
[7] Barbara B. Smuts, Sex and Friendship in Baboons, Harvard University Press, 1999
[8] R. L. Smith, (Ed.) Sperm Competition and the Evolution of Animal Mating Systems. Academic Press, New York. 688 pp, 1984.
[9] B. Smuts, Male aggression against women: An evolutionary perspective. Human Nature 3:1-44,1992.
[10] M.A. Colwell, & L.W. Oring. Extra-pair mating in the spotted sandpiper: A female mate acquisition tactic. Animal Behavior 38:675-684, 1989.
[11] Helen Fisher, Anatomy of Love: A Natural History of Mating, Marriage, and Why We Stray, Ballantine Books 1994
[12] S.W. Gangestad, R. Thornhill, The evolutionary psychology of extra-pair sex: The role of fluctuating asymmetry. Evolution and Human Behavior 18: 69—88, 1997.
[13] “Women choose symetrical men as affair partmers more than asymetrical men” – quoted on Randi Thornhil’s most important finding, (Ref. David Buss, The Evolution Of Desire – Revised 4th Edition, Basic Books , 2003)
[14] R. Thornhill and S.W. Gangestad, Do women have evolved adaptation for extra-pair copulation? Pp. 341-368 in Evolutionary Aesthetics, K. Grammer and E. Voland, eds. Springer-Verlag, Berlin, Germany, 2003.
[15] Douglas T Kenrick, Gary E Groth, Melanie R Trost and Edward K Sadalla, Integrating evolutionary and social exchange perspectives on relationships: Effects of gender, self-appraisal, and involvement level on mate selection criteria, Journal of Personality and Social Psychology, Vol 64(6), Jun 1993, 951-969.
[16] R. R. Baker, , & , M. A. Bellis, Human sperm competition: copulation, masturbation, and infidelity. London: Chapman & Hall,1995.
[17] Sarah Blaffer Hrdy, Empathy, Polyandry, and the Myth of the Coy Female, in Ruth Bleier, ed., Feminist Approaches to Science, New York: Pergamon, pp. 119-146, 1986
[18] R. R. Baker, & , M. A. Bellis, Human sperm competition: Ejaculate manipulation by females and a function for the female orgasm, Animal Behavior, 46, 887–909.
[19] মহাভারত, আদিপর্ব, ২১৪ অধ্যায়
[20] Helen Fisher, Anatomy of Love: A Natural History of Mating, Marriage, and Why We Stray, Ballantine Books, 1994
ব্যাপারটা নারী এবং পুরুষ উভয়েরই। আমরা আসলে যৌনতাকে নিজের মধ্যে পালন করি। আমরা চাই যা পাচ্ছি তার থেকে আরো বেশি কিছু পেতে নতুন ভাবে পেতেও আবার এক ধরনের আবেশীয় অনুভূতি কাজ করে।
পারিবারিক এবং অসম সম্পর্ক নিয়ে লিখা দরকার
অনেক ভাল লিখেছেন। তবে নারী পরকীয়া কেন করে? বিষয়টি তেমন জটিল বিষয় নয়। প্রেমের ভুবনে শোনা যায় মনুষ একজনেকই ভাল বাসেত পারে, প্রথম যাকে ভাল লাগে তাকে আর ভোলা যায় না , প্রেম মানিসক ব্যপার শারীরিক ব্যাপার নয়, এরকম আরো অনেক দ্বান্দিক ডায়লগ বিদ্যমান।
আম িমন েকর ি পরকীয়া/ প্রেম, আসলে বংশ রক্ষার মায়াজাল। একজন পুরুষ তার সঙ্গী নির্বাচন কর েতার সন্তান পরিস্ফুটনরে দেহ গত সবর্ত্তম আবহাওয়া বিচর করে। আর স্ত্রী তার সঙ্গী নিবর্াচন করে তার সন্তান সহ সবর্চ্চ নিরাপত্তা চিন্তা কর।ে মুগ্ধ যেৌনতার সাফল্য নিভর্র করে সন্তান উঃপাদনরে উপর। তবে য্যেন সূখ প্রাধন্য পেতে পারে বা উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে এবং সব অতৃপ্ততাই একজন কে টেনে নিয়ে যেতে পারে ২য় কারো কাছে।
নারীর পরকীয়ার একটা দিক পুরোপুরি অনুপস্থিত থেকে গেল মনে হয়। স্বামীর দুর্ব্যবহারের কারনে বহু নারী বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, হয়তো একটু স্বস্তি, কিংবা মমতা অথবা একটু মর্যাদা পাবার আশায়। প্রেমিকটিকে নরম মনের মানুষ হলেই চলে, বিত্ত বৈভব প্রতিপত্তির দিকে তাকায় না অনেকেই।
পশ্চিমা গবেষনায় সম্ভবত এটি বেশি গুরুত্ব পায় নি
@অঅসাধারন,
এটা একটা খুবই ভাল এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বলেছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা খুবই বাস্তব!
লেখক পেইড ব্লগার হইলেও লেখায় উত্তম জাঝা দিতে বাধ্য হইলাম 😛
@কৌস্তুভ,
জাঝার চেয়ে খাজা উত্তম। তাই খাজা ভালু পাই 🙂
নারীর পরকিয়া হয়ত এখন বাংলাদেশেও বেশ প্রাসঙ্গিক। কিন্তু পশ্চিমা দুনিয়ায় নারীপুরুষের বহুগামিতা বা পরকিয়া নতুন কিছু ত নয়ই বরং কৌতুকের ব্যাপারও বটে। বহুগামিতা বা পরকিয়ার উপর অনেক টি,ভি সিরিয়াল প্রচার হয় পশ্চিমে, অনেক মহিলা তার সন্তান বা সন্তানদের পিতা প্রমান এর জন্য অনেক পুরুষকে পাকড়াও করে আনেন জাদের ডি,এন,এ টেস্টও করা হয়। সবকিছুই বিবর্তন দিয়ে এখন ব্যাখ্যা করা যায় , অর্থাৎ বিবর্তনে নিহিত আছে কে খুন করবে,কে বিচার করবে। মানুষের জিনে ই নিহিত আছে কে কত উচ্চ মাত্রার অপরাধ প্রবণতা নিয়ে জন্মেছে। তাহলে মানুষের দোষটা কোথায়?। মানুষের দোষ মানুষ যদি বিচার না করতে পারে, ন্যায় বিচার মানুষের বিবর্তনের এমন একটা দিক যা ই কেবল মাত্র টিকিয়ে রেখেছে আমাদের এই সভ্যতা। যদি আমরা বিচারে বেরথতার পরিচয় দেই তাহলে বিবর্তনের ধারাতেই আমরা ধংস হব। মৃত্যুর পর কারো কোন বিচার আচার নেই। মানুষ খেকো বাঘের ও যা হবে মৃত্যুর পর মানুষেরও তাই হবে। প্রসঙ্গ যখন পরকীয়া তখন বিবর্তন খুব ই প্রাসঙ্গিক,এমন অনেক পুরুষ এবং নারী দেখা যায় যারা খুবই ভদ্র এবং মার্জিত , সাধারন ভাবে বিড়ি সিগারেট ও খান না কিন্তু যৌনাতার ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী। মানুষের যৌন জীবন সবচেয়ে বিচিত্র, ফ্রয়েড বলেছিলেন,”আমি অনেক ভুল করতে পারি কিন্তু যৌনাতা নিয়ে আমি যেসব কাজ করেছি সে ব্যাপারে আমার আত্মবিশ্বাস প্রচন্ড,কারন ্রাশান জাতিকে খোঁচালে যেমন তাতার জাতিকে পাওয়া যাবে ঠিক তেমনিভাবে মানুষের সভভতাকে খোঁচালে বীভৎস যৌনাতার রুপ বেরিয়ে আসবে। সমকামিতা নিয়েও অভিজিৎ এর চমৎকার একটা লেখা মুক্তমনায় প্রকাশ হয়েছিলো। হিজড়াদের নিয়ে লিখেছিলেন বানী বাবু। এসবের বাইরেও এখন দেখা যায় অনেকেই অল্প বয়সে স্বাভাবিক যৌন আচরন করলেও,জিবনের একটা সময় এ এসে সমকামি হয়ে যান। এর কারন হতে পারে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ঘৃণা, সেটা যে কারনেই হোক। বিবর্তনে আজ যা অস্বাভাবিক আগামীকাল তা স্বাভাবিক । এ কারনেই সভ্যতা টিকে যায়।
@সপ্তক, পশ্চিমা দুনিয়ায় নারীপুরুষের বহুগামিতা স্বাভাবিক কিন্তু ভাল করে খোঁজ নিয়ে দেখবেন যে যখন তারা একটা কমিটেড রিলেশনশিপ এ থাকে,তারা পরকিয়া করে না।করলেও খুব কম লোক করে থাকে, আর ধরা পড়ার পর সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে রিলেশন ব্রেক হয়ে যায়। সুতরাং ওইসব দেশেই পরকিয়ার হার অনেক কম । অবশ্যই পুরুষের কথা বলছি,কারন আমাদের দেশে বা অন্য মুসলিম দেশ গুলোতে ত বেশির ভাগ পুরুষ নিজের স্ত্রী কে বাক্সের ভেতর বন্দি করে রেখে অন্য মেয়েদের সাথে গোপন সম্পর্কে জড়িয়ে পরতে একেবারে চিংড়ি মাছের মতই ( লাফঝাঁপ) উৎসাহী। তাহলে কি দেখা যাচ্ছে এখানে? যে তারা স্ত্রী কে তো প্রতারনা করছেই, সেই সাথে সেই মেয়েগুলোকেও প্রতারনা করছে, যাদের সাথে তারা ( পুরুষরা) অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে প্রেম করে বেড়ায়।বাংলাদেশ অসংখ্য ছেলে ৪/৫ তা প্রেমিকা একসাথে সামলানোর অসামান্য দক্ষতার( ! ) পরিচয় দিয়ে থাকে, আর এদের কারনেই এই প্রতারিত মেয়ে গুলি পুরুষ জাতির উপরেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।যাহোক পরকিয়া যেন কোনদিন স্বাভাবিক ভাবে নেয়া হয় না সেটাই আমার কামনা। আচ্ছা যদি এতই শখ তবে তারা সহজেই সুইঙ্গার লাইফ বেছে নিতে পারে। এখানে স্পাউসে শেয়ারিঙ হলেও নিজেদের ইচ্ছেতেই হয়। ধোঁকার মাধ্যমে না। আর ধোঁকা যেন কোনদিনি মানব সমাজে বৈধতা লাভ করতে না পারে,এটাই আমার কামনা।
@অচেনা,
আগে আপনাকে উত্তর দেয়া হয়েছে এখানে।
আপনাকে অনুরোধ করব, এ বিষয়ে আমার আগেকার লেখা পড়ে নিতে। আমার লেখায় মানব প্রকৃতিতে বিদ্যমান প্যাটার্নের ব্যাখ্যা পাবেন বেশিরভাগ জায়গাতেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সেই প্যাটার্ণটিই আপনার আমার সবার জন্যই প্রযোজ্য, কিংবা সেটাই সর্বোত্তম। কেন সমাজ বা মানবপ্রকৃতির বড় একটা অংশ কোন একটা নির্দিষ্ট ছকে আবদ্ধ থাকে সেটা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়, সমাজ কিরকম হওয়া ‘উচিৎ’ তা নয়। আরো পরিস্কার করে বললে বিবর্তন কোন অথোরিটি দাবী করে না। কাজেই বিবর্তনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য কেউ ব্যক্তিগত জীবনে কিংবা সমাজে প্রয়োগ করার ঔচিত্যের আহ্বান জানালে সেটা নিঃসন্দেহে একটি ভ্রান্তি বা হেত্বাভাস হবে।
একটা ব্যাপারে একটু মন্তব্য করি। আপনি যে বলেছেন, যখন তারা একটা কমিটেড রিলেশনশিপ এ থাকে,তারা পরকীয়া করে না। করলেও খুব কম লোক করে থাকে, আর ধরা পড়ার পর সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে রিলেশন ব্রেক হয়ে যায়। সেটা অবশ্যই ঠিক। সেজন্যই তো সমাজে নৈতিকতার উদ্ভব হয়েছে। এবং সেটা হয়েছে বিবর্তনের পথেই (টিট ফর ট্যাট কিংবা রেসিপ্রোকাল অল্ট্রিউজম)। আমার এই প্রবন্ধের লিঙ্কগুলো দেখতে পারেন –
বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব -১
‘বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব -২
কিন্তু এই গেম থিওরীর ব্যাপারটা একপেশে নয়। প্রেম, ভালবাসা, সততা, কমিটেড রিলেশনশিপ যেমন আছে, তেমনি আবার আছে প্রতারণা, ঘৃণা, জিঘাংসাও। সবই সমাজের বাস্তবতা। আপনি পরকীয়া কিংবা প্রতারণাবিহীন আদর্শ সমাজের কথা যত ইচ্ছা চিন্তা করুন না কেন, গেম থিওরী এবং সেখান থেকে আসা বিবর্তনীয় স্থিতিশীল কৌশলের কারণেই (উপরে যে দুটো লিঙ্ক দেয়া হয়েছে তা আবারো পড়ে দেখতে অনুরোধ করছি) পরিপূর্ণ সত্যবাদী সমাজ যেমন আমরা পাই না, ঠিক তেমনি এমন সমাজও আমরা পাব না যেখানে সবাই মিথ্যা কথা বলছে। এমনকি একই মানুষের মধ্যেও দেখা যাবে কারো পক্ষেই জীবনের সবসময় সত্য কথা বলা যেমন সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি সম্ভব নয় সর্বদা মিথ্যে কথা বলাও। পদার্থবিদ হাইন্য পেগেল্স তাঁর ‘‘যুক্তির স্বপ্ন” বইয়ে এজন্যই বলেছেন –
“জটিলতার নতুন বিজ্ঞান আর কম্পিউটারের প্রতিরূপ (মডেল) তৈরির মাধ্যমে আমরা মূল্যবোধ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি, যা আগে কখনোই সম্ভব ছিলো না। নৈতিকতা নিয়ে বিতর্কের সুরাহা করতে না পারুক, বিজ্ঞান অন্ততঃ মডেলের সাহায্যে ব্যাপারগুলোর একটা যৌক্তিক কাঠামো তৈরি করতে পারে। একটা উদাহরণ নেয়া যাক। যেমন মিথ্যা বলা। আমরা সত্যবলাকে একটা পুণ্য বলে মনে করি আর মিথ্যা বলাকে পাপ হিসেবে গণ্য করি। এখন একটি সমাজ কল্পণা করি – যেখানে সবাই সর্বদা সত্য কথা বলছে। এখন সেই সমাজে কোন এক মিথ্যেবাদী এসে হাজির হল । এখন সত্যবাদী সমাজে এরকম একজন মিথ্যা বললে তার বিপুলভাবে লাভবান হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু এই সম্ভাবনা সামাজিক স্থিতাবস্থা রক্ষার জন্য সহায়ক নয়। অপরদিকে যে সমাজে সবাই সর্বদা মিথ্যা বলে, সেই সমাজও বেশিদিন স্থিতাবস্থায় থাকতে পারে না এবং একসময় ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। সবচেয়ে স্থিতাবস্থার দশা হল যখন সবাই অধিকাংশ সময় সত্য বলে কিন্তু মাঝে মধ্যে মিথ্যা বলে, যা বাস্তব জগতে দেখা যায়। এক অর্থে বলা যায় যে আমাদের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তারাই আমাদের বাকি সবাইকে সত্যবাদী ও সতর্ক থাকতে সহায়তা বা বাধ্য করে। মিথ্যাকথনের এই বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ আমরা কেন মিথ্যা বলি সেটা বুঝতে আমাদের সাহায্য করতে পারে।’’
পরকীয়াবিহীন আদর্শ সমাজের কথা চিন্তা করলেও দেখা যায় সম্পর্কে প্রতারণা হয়, এডাল্ট্রি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকায় শতকরা প্রায় ১৩ থেকে ২০ ভাগ পুরুষ অন্যের সন্তানকে ‘নিজ সন্তান’ ভেবে পরিবারে বড় করে। জার্মানীতে সেই সংখ্যা ৯ থেকে ১৭ ভাগ। সারা বিশ্বেই মোটামুটিভাবে নন-জেনেটিক সন্তানকে নিজ সন্তান হিসেবে বড় করার হার শতকরা ৯ থেকে ১৫ ভাগ বলে মনে করা হয় (MacIntyre S., A. Sooman., Non-paternity and prenatal genetic screening. Lancet 338:869-871, 1991; R.R. Baker & M.A. Bellis, Human Sperm Competition: Copulation, Masturbation and Infidelity, Springer,1999)। সারা বিশ্বেই এটা প্রায় একই রকমের।
আবারো বলছি এই পরিসংখ্যান দেয়ার অর্থ কোন কিছুর ‘জাস্টিফিকেশন’ নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে এর পেছনের কারণগুলো খুঁজে দেখবার চেষ্টা করা। আপনি যদি প্রতারণাবিহীন, পরকীয়াবিহীন সমাজ সত্যই কামনা করেন, তাহলে আপনাকে দেখতে হবে সমস্যার মূল ঠিক কোথায়। ব্যাপারগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝার চেষ্টা করতে হবে, কেবল -“এটা বিশ্বাসঘাতকতা”, “ওটা খারাপ” – এই ধরণের আপ্তবাক্য আউড়ে নয়। সমাজে যদি রোগ থাকে, তবে সিস্টেমেটিকালি রোগের কারণের অনুসন্ধানটাই করতে হবে আগে, তাই না? ডায়াবেটিস রোগী যখন তার রোগ সম্বন্ধে সচেতন হবে, তখনই সে সুচিকিৎসার দিকে যাবে, তার কোন রোগ নেই, কিংবা এটা খারাপ – বলে চোখ বুজিয়ে রাখলে নয়। আন্তন চেখভের একটা চমৎকার উক্তি আছে এ প্রসঙ্গে , উক্তিটা আমার খুব প্রিয় –
Man will become better when you show him what he is like.
চেখভের উক্তিটি আরো একবার পড়ুন। আমি এর চেয়ে ভালভাবে মনে হয় আপনাকে ব্যাপারটা বোঝাতে পারবো না।
@অভিজিৎ দা, থ্যাংকস আপনার লেখাগুলো পড়ে দেখব আমি। আসলে আমি আগে মাঝে মাঝে আসতাম এখানে ( কারন অসম্ভব ব্যস্ততা)। কিছুদিন হল নিয়মিত আসছি। আশা রাখি এখন থেকে সব লেখাই পড়তে পারব।
@অচেনা,
আমি শুধু পরকিয়ার কথা বলি নাই। বহুগামিতার কথাও বলেছি ভাই। বহুগামিতাই বলেন আর পরকিয়াই বলেন তা কখনো কোন সমাজেই বাহ্যত স্বীকৃতি পায়নি,বিল ক্লিন্টন এর উদাহরন,আরও অনেক আছে।অভিজিৎ এর লিখাটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর রচিত, বিবর্তন দিয়ে মানুষের পব্রিত্তি কে বুঝার চেষ্টা, এখানে অনেক স্যাটায়ার ও আছে ভাই, নারী পুরুষের সম্পর্কের চেয়ে জটিল বিষয় পৃথিবীতে খুব কমই আছে। কারন তাদের প্রস্পরের মনজগতে ভিন্নতা আছে। আর হা অবশ্যই পরকীয়া কে না বলব, কষ্টের সাথে হলেও কারন ভালবাসা,প্রেম ও ত বিবর্তনের ই অবদান।
@সপ্তক, হা ভাই আপনি হয়ত ঠিকি বলেছেন।আমি শুধু নিজেকে ব্যাখ্যা করেছি মাত্র।আর পশ্চিমা সমাজের অন্ধ অনুসারিও আমি না।পূর্বের সমাজের বেশি বাড়াবাড়ি তো আমার অসহ্য লাগে।আমি শুধু বলেছি যে প্রতারণাকে আমি কখনও সমর্থন করি না।এটা বাদ দিলে,কেউ একগামী হোক আর বহুগামী তাতে আমার কিছুই যায়আসে না।কারণ প্রত্যেক মানুষের ভিন্ন রুচি থাকতেই পারে,এতে আমি কথা বলার কেউ বলে মনে করি না। তাই সুইঙ্গার লাইফ এও যদি কেউ স্বচ্ছন্দ বোধ করে, আমার কোন সমস্যা নেই।কিন্তু আপনি দেখবেন যে ঐ লাইফ এ যা হয়, সবি কিন্তু ওপেন এ, কারো সাথে প্রতারনা করে না।অনেক ধর্মবিদ এটা নিজের সাথে এবং আত্মার সাথে প্রতারনা বলতে পারেন, কিন্তু আমি মনে করি নিজের সাথে কেউ কোনদিন প্রতারণা করতে পারে না, আর আত্মার অস্তিত্ব আছে কিনা আমার জানা নেই।কাজে যারা প্রতারক তারা সব সময়েই অন্যের সাথেই করে থাকে,নিজের সাথে না।যাক ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সাপোর্টএর জন্য।
@অচেনা,
পরকীয়া বলতে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে যখন কারো সাথে কমিটেড সম্পর্ক থাকে তখন দ্বিতীয় কারো সাথে আবেগ বা শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। এটা এখন পর্যন্ত মোটামুটি সব সমাজেই নিন্দিত। এখানে সম্মান এর প্রস্ন জড়িত তাই। আমার পার্টনার সে স্ত্রী হোক আর বান্ধবিই হোক অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কে জরালে আমার আত্মসম্মান এ বাঁধবে, এটা সবার জন্যই সত্য সব জায়গাতেই। এখন পর্যন্ত তাই আছে কিন্তু সমাজ বিজ্ঞান এবং মনবিজ্ঞান ত এতটা সরল ভাবে বিশ্লেসন করে না,সেখানে বিবর্তন কিভাবে নারী-পুরুস এর সম্পর্ক কে বিবর্তিত করছে তা নগ্ন ভাবে টেনে বের করে। একটা সময় কিন্তু আমাদের দেশেও বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রি যদি জানতে পারত যে বিবাহের পুরবে তার সঙ্গীর অন্য কোন ছেলে বা মেয়ের প্রেম ঘটিত সম্পর্ক ছিল তাহলে হুলুস্থুল বাধিয়ে বসত, এই বলে যে কেন তাকে আগে জানান হোল না ,তাহলে সে হয়ত বিয়েই করত না। এখন কি তা হয়?, হয় না, এখন যা মনে করা হয় তা হচ্ছে, আগে যাই হোক না কেন এখন আমার সাথে বিশস্ত থাকলেই যথেষ্ট। আর এটাই বিবরতন,এবং বটম লাইন। একসময় চল্লিশ এর দশকে ঢাকা বিশশবিধালয় এ কোন ছেলে কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে চাইলে বিভাগিয় অনুমতি নিতে হত ,তারপর একজন দারোয়ান এর উপস্থিতে কথা বলতে হত,আর এখন?।এটাই বিবর্তন। বিবর্তন মানে শুধু বানর থেকে মানুষ হওয়া না!!! সুতরাং ভবিষ্যৎ এ কমিটেদ সম্পর্কের সরূপ কেমন হবে তার চরিত্র এর নমুনা কিন্তু দেখা জাচ্ছে,আমদের সমর্থন করা বা না করার প্রশ্ন এখানে অবান্তর।
“পরকিয়া” পরের কায়া মানে অন্নের কায়া/বউএর সাথে প্রেম ঘটিত/শারিরিক সম্পরক কেই তো আমরা পরকিয়া বলি তাই না? অবিবাহিত কেও যখন একাধিক প্রেম করে তখন কিন্তু সেটাকে আমরা তেমন একটা ঘাটি না। তাহলে সব গিয়ে পরে ওই একটি জায়গাতেই, বিয়ে । আর বিয়ে নামক সামাজিক ব্যেধি টি যখন আর থাকবে না তখন কি হবে? পরকিয়ার বদলে এর প্রতিশব্দ এখন থেকেই খুজে বের করা দরকার।
বিজ্ঞান স্মমত আপ্নার এই লিখাটি অনেক ভাল লেগেছে। তবে পরকিয়া না করলে নাকি আসল প্রেমের সাধ অপুরন থেকে যায়। 🙂 শুভ কামনা রইল।
@dhushorprojapoti, সেক্ষেত্রে ডোমেস্টিক পার্টনারশিপ থাকতে পারে।যদি একান্ত কেউ বহুগামি হতেই চায় , পাশাপাশি একটা ডোমেস্টিক পার্টনারশিপ ধরে রাখতে চায়।তবে সুইঙ্গার লাইফ বেছে নিতে পারে।কিন্তু ধোঁকা, সেটা প্রেমিক বা প্রেমিকা, হাসবান্ড বা ওয়াইফ যাকেই দেয়া হোক না কেন, এতা সমর্থনযোগ্য নয়। আসলে কারো সাথেই ধোঁকা সুস্থ কাজ নয়।তবে আমি আশা করছি আপনিও মজাই করছেন।
@অচেনা,
আমি একমত আপনার সাথে। আমি কমিটমেন্ট এ বিশ্বাসী ।
@dhushorprojapoti,আপনার কথা শুনে ভাল লাগলো 🙂
বহুগামী কেউ হলে আমার আপত্তি নেই। সে কোন কমিটেড সম্পর্কে জড়াবে না,ঠিক আছে এতে আমার সমস্যা নাই।কিন্তু বহুগামিতা আর পরকিয়া এক জিনিস হতে পারে না। পরকিয়া হল বিশ্বাসঘাতকতা।
আসলে পরকীয়ার থেকে নিকৃষ্ট আর কিছুই হতে পারে না বলেই আমি বিশ্বাস করি। সেটা পুরুষ করুক বা নারী। (N) পোস্টটি ভাল লাগে নাই।
@অচেনা,
পরকীয়া করে কেও যদি সন্তান সংসার ত্যাগ করে নিশ্চয় তা খারাপ। সমর্থন করি না। কিন্ত একটু আধটু বিবাহবহির্ভুত নিরামিষ প্রেম করতে ক্ষতি কি? :-Y জীবন কি এতই নিরস হতে হবে? একটু সরস হলে হয় না?
@বিপ্লব পাল,দাদা আপনিও মজা করছেন আশা করি 😉 ।কিন্তু একটু আধটু বিবাহবহির্ভুত নিরামিষ প্রেম করতে ক্ষতি আছে, কারন বিয়ে বলুন আর যাই বলুন না কেন এটা কমিটমেন্ট,আর আমি বিশ্বাস করি যে এখানে পুরোপুরি বিশ্বস্ত থাকা জরুরি।অবশ্য কেউ যদি কমিটমেন্ট এ বিশ্বাস না করে তবে তারা ওপেন রিলেশনশিপ বেছে নিতে পারে নিজেদের ইচ্ছেতে।কিন্তু একগামী সম্পরকে এগুলো চলতে পারে বলে আমি মনে করি না। নর-নারী উভয়ের কথাই বলছি। 🙂
@অচেনা,
কেন একটু ব্যখ্যা কর। সে ত সংসার বা সন্তান ছাড়ছে না। তাহলে কার কি ক্ষতি হচ্ছে? এত নীরস একগামী জীবন অন্ধকূপে ব্যাঙের ক্রন্দন :-O
@বিপ্লব পাল, দুঃখিত আমার বলা কিছু নেই এখানে বিপ্লব দা।কিন্তু আমি এর ঘোর বিরোধী কারন এটা প্রতারণা।আর আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি জানতে চান তবে আমি বলব যে, এই ধরনের মানুষের সংসার ছেড়ে দেয়াই ভাল।অন্তত তাতে তার স্পাউস প্রতারিত হবে না।
@অচেনা,
তোমার বিরোধি হওয়ার বিরোধিতা আমি করছি না।
কিন্ত এখনো পরিস্কার হল না নিরামিষ পরকীয়া কেন খারাপ?
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে একটু আধটু পরকীয়া নারী পুরুষ উভয়ের জন্যে ভাল। মনের পরিধি বাড়ে, মানসিক চাপ হালকা হয়-আমার মতে হালকা পরকীয়া মানসিক সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। কেও তার স্বামী বা স্ত্রঈর প্রতি একদম ১০০% বিশ্বস্ত -এটা আমার কাছে একটা অস্বাভাবিক মানসিক রোগ। ৭০/৮০% লয়ালিটি ঠিক আছে-১০০% মানে মানসিক রুগী।
বিবাহিত, তাই সুন্দরী মেয়ে দেখলে ছুঁক ছুঁক করা যাবে না-ফ্লার্ট করা যাবে না-এমন হলে বিবাহিত == মৃত :-X
@বিপ্লব পাল, দাদা, আমি আপনার কিছু লেখা এবং অনেক কমেন্ট পরেছি। আমি মনে করিনা যে আপনার সাথে তর্ক যুদ্ধে জিতে যাবার মত যথেষ্ট যোগ্যতা এখনো আমার হয়েছে।ফ্লার্ট বলতে আপনি যদি মজা করা বুঝান তবে তা আপনার স্পাউস জানলেও তো ক্ষতি নাই তাই না?তাই এটাকে আমি প্রতারনা বলিনা যদি আপনার স্পাউসের তাতে আপত্তি না থাকে।একটা কমিটেড রিলেশন আমার কাছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, আর ভাল লাগা না লাগা। এটাকেই আমি কমিটমেন্ট বলে মনে করি, এবং আমি এটাই বিশ্বাস করি।আমি আপনার মত সুলেখক নই কিন্তু আমি হার্ডকোর নাস্তিক।ধর্মের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নেই, আর এই প্রতারণা না করার নীতিবোধ আমাকে কোন ধর্ম শেখায়নি, কারন আপনি জানেন যে ধর্মই আসলে সবথেকে বড় প্রতারক।যাহোক আমি নিজেও আপনার বিরোধিতা করছি না। আমি শুধু এটুকুই বলব যে ১০০% বিশ্বস্ত থাকাটা যদি মানসিক রোগ হয়, তবে আমি সেই মানসিক রোগী হয়েই থাকতে চাই।আর আমার মনে হয় না যে কোন ডাক্তার আমার এই রোগের চিকিৎসা করতে পারবে। আপনার যদি এটা মানসিক রোগ বলে মনে হয় তবে আপনি এটার ( ১০০% বিশ্বস্ততা)থেকে ৭০ % -৮০% বিশ্বস্ত থাকুন আপনার স্পাউসের প্রতি, আমি কোন সমস্যা দেখিনা, কারন এটা আপনার বা আপনার স্ত্রী/গার্লফ্রেন্ড/ডোমেস্টিক পার্টনার এর নিজস্ব ব্যপার :)।
@বিপ্লব পাল,
একটু আধটু পরকীয়া বা হালকা পরকীয়ার পরিমান নির্নয়ের বা মাপার কি কোন যন্ত্র আছে অর্থাৎ পরকীয়া কোন লেভেলে গেলে পরে মনে করা হবে যে আর বেশী এগুনো যাবেনা। একেকজনের বিচার করার ক্ষমতা একেকরকমই হওয়ার কথা আর সেক্ষেত্রে একটা নির্ধারক থাকা দরকার। নাকি এটা এমনভাবে নির্ধারন হবে যে যার যত ধন-সম্পদ, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি তার পরকীয়া করার যোগ্যতা তত বেশি। :-Y
@ব্রাইট স্মাইল্, হাহা ভাল বলেছেন ভাইয়া। 🙂
@অচেনা,
হ্যা, এটাকেতো প্রতারনা বলতে হবে যখন কমিটমেন্ট থাকে কারন ছোট বা বড় চুরি যেটাই হউকনা কেন চোরকে চোর না বলে উপায় কি। তবে একজনের কাজ-কারবার যদি অন্যের মানসিক আঘাতের কারন না ঘটায়, অর্থাৎ পারষ্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে পরকীয়াতে দোষের কিছু দেখিনা। এটা ঠিক যে এখনকার সামাজিক কাঠামোতে পারষ্পরিক সমঝোতা হওয়াটা কঠিন ব্যাপার, তাই এই সমস্যার কোন সমাধান আপাততঃ দেখছিনা।
@ব্রাইট স্মাইল্, আসলে সেটা আর পরকিয়া বোধহয় থাকেনা কি বলেন ভাইয়া?ওটাকে আমি সুইঙ্গার লাইফ স্টাইল বলব। আর তাছাড়াও সমাধান হয়ত অনেকে করতে চাইবে,অনেকে চাইবে না। তাই আমার মনে হয় যে, এটা কে যার যার রুচির ওপরেই ছেড়ে দেয়াটা ভাল। মানে আমি কাপল দের কথা বলছি।যাদের যেমন খুশি করুক না।শুধু যেন বেপারটা তার পার্টনারএর অজান্তে, বা আসম্মমতিতে না হয়। তবেই তো সেটা আর পরকিয়া থাকল না,অন্তত পরকিয়া বলতে আমরা যা বুঝিয়ে থাকি সেটা করা হল না।
@অচেনা,
আপনি যদি এ নিয়ে আমার আগেকার লেখাগুলো পড়তেন তাহলে বুঝতেন, কোনটা উৎকৃষ্ট বা কোনটা নিকৃষ্ট সেই বিবেচনা থেকে পোস্টগুলো লেখা হয়নি। আমার পোস্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব সমাজে যে প্যাটার্ণগুলোর অস্তিত্ব আমরা দেখি, সেগুলো কেন সমাজে রয়েছে তার একটা জৈবিক ব্যাখ্যা খুঁজে বের করা। ব্যাখ্যা দেয়া মানে ‘জাস্টিফাই’ নয়। আমি যদি সিংহ সমাজে বিদ্যমান ক্যানাবলিজমের বা শিশুহত্যার কিংবা কোকিলাচরণের (কাকের বাসায় কোকিলের ডিমপাড়ার এবং কোকিলের বাচ্চা জন্মেই কাকের অন্য ডিমগুলোকে ধ্বংস করে ফেলার) একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হাজির করি – তাহলে কি সেটা হয়ত অনেকের খারাপ লাগবে, কিন্তু সেটা বাস্তবতাকে লঙ্ঘণ করে না।
আপনার খারাপ লাগলেও মানব সমাজে সমাজে পরকীয়ার অস্তিত্ব প্রথম থেকেই ছিলো, এখনো আছে, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই এই ব্যাপারটি কেন টিকে আছে – এর একটা জৈববৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই কেবল হাজির করার চেষ্টা করা হয়েছে। আসলে এ ধরণের বৈজ্ঞানিক লেখার ক্ষেত্রে নৈতিক হেত্বাভাস (Moralistic fallacy), প্রাকৃতিক হেত্বাভাস (Naturalistic fallacy) এবং কী বনাম উচিৎ এর হেত্বাভাস (“Is” vs. “Ought” fallacy) গুলো এড়িয়ে চলতেই পছন্দবোধ করি আমি।
@অভিজিৎ, দেরিতে হলেও আমি আপনার কথাগুলো বুঝতে পেরেছি আমি অভিজিৎ দা। হা সমাজে এটা বিদ্যমান থাকতেই পারে, কিন্তু এটা আমার জন্য নয়। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন 🙂
নারী পুরুষ যে কেউ বহুগামী হতে পারে, কাজেই নারী এর ব্যতিক্রম হলেই অবাক হবার কথা।
অভিজিৎ রায়কে ধন্যবাদ বিষয়টিতে আলোকপাত করার জন্য। তবে নারী মাত্রই তার যে রূপে, গুণে, সম্পদে বা শক্তিতে বা মেধায় উর্ধতন কারও সাথে সম্পর্ক গড়ে তা কিন্তু নয়।
যাহোক, পরকীয়া শব্দটি নিয়েই আলোচনা করা প্রয়োজন। অভিজিৎ রায়কে এ নিয়ে আলোচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।
আর একটি চিন্তাজাগানিয়া লেখা।
(Y)
আচ্ছা,আমার পরিচিত এক মহিলা তার স্বামীর টাকা-পয়সা ও সামাজিক জস-প্রতিপত্তি থাকা সত্ত্বেও পরকীয়া প্রেম করে যেখানে প্রেমিকের অবস্থান ছিল নিজ স্বামীর বিপরীত এবং শেষতঃ দুই বাচ্চাকে ফেলে মহিলাটি প্রেমিকের সহিত পালিয়ে গিয়ে ঘর বাঁধে…………………………এটার জৈববৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে ব্যাখা কি হবে ?
এই প্রবন্ধটাতে বেশ কিছু জিনিস পরষ্কার হল না।
প্রথম সমস্যা লিঙ্গুইস্টীকে। পরকীয়ার সংজ্ঞা কি বহুগামিতা? লেখক মনে হচ্ছে এই দুটি ব্যপারের মধ্যে গুলিয়েছেন। বিবাহ বহির্ভূত প্রেমের সম্পর্ককে আমরা পরকীয়া বলি। সুতরাং বিবাহ বা “লয়াল সেক্সের” অস্তিত্ব না থাকলে পরকীয়ার অস্তিত্ব থাকে না। বিষয়টা বহুগামিতা না- এন্টি লয়াল সেক্সের অন্তর্ভূক্ত। কারন ওপেন ম্যারেজ বা সুইঙ্গার সোসাইটিতে পরকীয়ার সংজ্ঞাটাই থাকে না যেহেতু সেখানে বহুগামিতাই স্বীকৃত। সুতরাং লেখাটিতে আদ্যপান্ত পরকীয়া = বহুগামিতা -এটা গোলানো উচিত হয় নি।
দ্বিতীয় সমস্যা, লেখক পরকীয়াকে শর্ট টার্ম স্ট্রাটেজির সাথে গুলিয়েছেন। বাস্তবে আমরা ভূরি ভূরি উদাহরন দেখি, যেখানে অনেক নর নারী, অন্য কাওকে বিয়ে করা সত্ত্বেও আমৃত্যু প্রেম ঢেলেছে অন্যত্র। সেটা মোটেও শর্টটার্ম না -বিয়ের মতন লং টার্ম। ওয়ান নাইট স্টান্ড আর পরকীয়া কি এক জিনিস? বেশ্যা গমন আর পরকীয়া এক ? লেখক এক বানিয়ে দিয়েছেন-কিন্ত এগুলো পরকীয়ার “প্রচলিত ডিকনস্ট্রাকশনের” সাথে বেমানান।
তৃতীয় সমস্যা পরকীয়া বিজ্ঞান আবিস্কারের চেষ্টা এম্পিরিসিজমের মাধ্যমে করা। যা করতে গিয়ে মানুষের ব্যবহারের বিজ্ঞান অনেকটাই গোঁজামিল থাকে। এই সব ফিল্ডের গবেষণা বেশ হাস্যকর-আজ যা আবিস্কার হয়েছে কাল তার উলটোটা আবিস্কার হয়। মানুষের ব্যবহার একটি ভীষন কমপ্লেক্স সিস্টেম-তার মধ্যে বিবর্তন একটা ছোট্ট ফাক্টর-বাকি সমাজ, দেশ, কাল আবহাওয়া, পিতা-মাতা, ফামিলি, শিক্ষা সব কিছু মানুষের ব্যবহারকে প্রভাবিত করে এবং এই ধরনের জটিল সিস্টেমের জন্যে শুধু বিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে গড়া হিউরিস্টিক বৈজ্ঞানিক সূত্র ভীষন রকমের অকার্যকার। অর্থাৎ এই ধরনের বিজ্ঞানের গবেষণাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু না। কমপ্লেক্স সিস্টেমে কার্য-কারনের এম্পিরিক্যাল মডেল চলে না। রুল বেসড বা সূত্র নির্ভর বিজ্ঞান এখানে চলে না। এগুলো প্রমাণিত ফেইল্ড সায়েন্স। এসব ব্যাখ্যা করতে বিজ্ঞানের নতুন প্যারাডিম দরকার যা এম্পিরিসিজমের বাইরে।
পরকীয়ার বিজ্ঞানের থেকে পরকীয়া বরং অনেক বেশী সলিড। বিবাহিত বৌ হচ্ছে গ্রীষ্ণের তপ্ত গুমোট গরমে দ্বার রুদ্ধ গৃহ-আর পরনারী হচ্ছে খোলা জানালার দক্ষিন আলিন্দের বসন্ত বায়ু। এতে কি রিপ্রোডাক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট আছে জানি না- তবে গুমোট গরম থেকে বেড়িয়ে দখিনা বাসাতে মন মেজাজ ভাল থাকে।
@বিপ্লব পাল,
না পরকীয়া মানে বহুগামিতা নয়। যদিও ব্যাপারটাকে আরেকটু পরিস্কার করা উচিৎ ছিলো লেখাটায়। আমি পরকীয়া বলেছি জীববিজ্ঞানের টার্ম EPC অর্থে, যাকে বলে ‘এক্সট্রাপেয়ার কপুলেশন’ – প্রানীজগতে যা হরহামেশাই দেখা যায়, বিশেষতঃ তথাকথিত ‘মনোগোমাস’ পাখিদের ক্ষেত্রে। মানব সমাজে এটিকে নাম দেয়া হয়েছে ‘এডাল্ট্রি’ বা পরকীয়া। কিন্তু EPC হোক আর ‘এডাল্ট্রি’ হোক – যাহা লাউ তাহা কদুই।
তোমার মন মেজাজ যে ইদানিং খুব ভাল আছে, তা বুঝতে পারছি! 🙂
@অভিজিৎ,
আরে মিয়া, সেই জন্যেই ত বলছি-বৃথা এই সময় নষ্ট পরকীয়ার বিজ্ঞান খুঁজতে গিয়ে। এই টাইমটা বরং গার্লফ্রেইন্ড খোঁজার জন্যে দাও-সেটা অনেক কাজের :lotpot: শুধু কথায় কথায় হুমায়ুন আহমেদ কে নিয়ে হিংসা :-X তার থেকে বরং একটি অষ্টাদশীর সাথে প্রেম কর-হুমায়ুন আহমেদকে বুঝতে সুবিধা হবে :rotfl:
@বিপ্লব পাল,
বিবাহিত স্বামী আর পরনর (পরনারীর বিপরীত?) কিভাবে সঞ্জায়িত হবে জানতে মঞ্চায়। 😕
@ব্রাইট স্মাইল্,
এটা কোন মেয়ে লিখে যাক :guru:
@বিপ্লব পাল,
মেয়েকেই লিখতে হবে কেন, সাহিত্য যাঁরা করেন বা সাহিত্যের রসবোধ থাকলে ছেলে-মেয়ে উভয় ক্ষেত্রেই তাঁরা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে সক্ষম।
প্রথমেই ‘পরকীয়া’ প্রেমকে বৈজ্ঞানিক নয় বরং একটা দার্শনিক বিষয় হিসেবেই চিন্হিত করতে হয়। বহুগামিতার শেকড় যদি গ্রোথিত থাকে প্রকৃতিতে , তবে একগামীতার শেকড় মানবসৃষ্ঠ ধর্মীয় দর্শনে। আমাদের একদিকে দুর্বার প্রাকৃতিক শক্তি এবং অনদিকে মানবসৃষ্ট ভঙ্গুর নৈতিক বল যার শেকড় ধর্মে। প্রকৃতি ও মানবসৃষ্ট নিয়ম এ দুয়ের মাঝে কে অধিকতর শক্তিশালী – এমন বিতর্কই বৃথা। বিজ্ঞান তো বটেই দার্শনিকেরাও এক্ষেত্রে প্রকৃতিকেই এগিয়ে রাখছেন অনেক উদার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে ।
ফ্রিদরিখ নীচে শুধু উপরের বক্তব্যেই থেমে থাকেননি , বরং আরো এক কাঠি এগিয়ে গিয়ে বলেছেন :
সবশেষে আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন নারী ব্যক্তিত্বের একটা উদ্ধৃতি দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।
:lotpot: :lotpot: :lotpot: :lotpot: :lotpot: :lotpot: হা হা হা :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl:
আচ্ছা, একই কথা কি রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রেও সত্য? শিলং পাহাড়ে ৬২ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ যখন বেড়াতে গিয়েছিলেন, তখন সপ্তদশী রাণুর সাথে তার যে প্রেমের সম্পর্কের কথা শোনা যায় (যার ভিত্তিতে ‘শেষের কবিতা’ রচিত হয়েছিল), তাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? মৈত্রেয়ী দেবী, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো এরাই বা বুড়ো রবীন্দ্রনাথে এত আকৃষ্ট হলেন কেন? অভিজিৎ-দা, আমার মনে হয় না, এ সম্পর্কগুলোকে এত সহজে ব্যাখ্যা করা সম্ভব!
এই আলোচনাতেই পেয়েছি, নারীর পরকীয়ার পেছনেও জিন রক্ষার একটা তাগিদ থাকে (সঙ্গীর মধ্যে হবু স্বামীকে খোঁজা বা মূল সঙ্গীর বাইরেও একজন বা দুজন আলাদা সঙ্গীর সাথে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ যারা স্বামীর অবর্তমানে বিপদ থেকে রক্ষা করবে)! তাহলে, উপরের ঘটনাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, যেখানে কার্যত জিনকে হত্যাকে করা হয়েছে!
অথচ, মানব সমাজে এর উল্টো চিত্র দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে, সন্তানটিকে হয়ত এতিমখানায় বড় হতে হবে!
তার মানে নারী আন্দোলন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও রোধ করা ”নারি বহুগামিতা” আবার ফিরিয়ে আনবে? 🙂
@কাজি মামুন,
“ব্যাখ্যা” জিনিসটা কি? কিভাবে বুঝবেন, একটা বিশেষ “ব্যাখ্যা” সঠিক?
@রৌরব,
ভাইয়া, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যেটুকু বুঝি, তা হলো, ব্যাখ্যা জিনিসটা আপেক্ষিক এবং তাই কখনই বোঝা সম্ভব না কোন একটা বিশেষ ”ব্যাখ্যা” সঠিক কি বেঠিক। তবে এমন কোন ব্যাখ্যা যদি পাওয়া যায়, যা খুবই যৌক্তিক মনে হয়, তাহলে মনে একটা প্রশান্তি লাভ করি; কারণ, মনটা সর্বদাই প্রশ্নের চাপে জর্জরিত হয়ে থাকে; তা থেকে একটা ‘রিলিফ’ পাওয়া যায়!
@কাজি মামুন,
কেন সম্ভব নয়? শাওনের মত সুদর্শনা কৈশোরোত্তীর্ণ তরুনী যেভাবে পঞ্চাশোর্ধ হুমায়ূন আহমেদের প্রেমে পড়ে ঠিক সেভাবেই রবীন্দ্রনাথেরও প্রেমে পড়েছে অনেক নারীই। সমস্যা কোথায়? ভাল জিন মানে কেবল তরুণ ছেলে নয়। আমি বুঝিয়েছি ‘ফিটনেস মার্কার’। এ নিয়ে আমার আগের লেখাগুলোতে বলেছি। শুনতে হয়তো খারাপ লাগবে – সংস্কৃতি নির্বিশেষে পুরুষদের টাকা পয়সা, স্ট্যাটাস ইত্যাদর মাপকাঠিতে বিচার করা হয়, আর মেয়েদের সৌন্দর্যের। আসলে ক্ষমতাবান পুরুষেরা যে সুন্দরী তরুনীদের প্রতি বেশি লালায়িত হয়, আর সুন্দরীরা পয়সা আর স্ট্যাটাসওয়ালা পুরুষের প্রতি – এটা সব সমাজেই এত প্রকট যে এটা নিয়ে গবেষণা করার কেউ প্রয়োজনই বোধ করেননি কখনো। এজন্যই ন্যান্সি থর্নহিল বলেন,
‘Surely no one has ever seriously doubted that men desire young, beautiful women, and that women desire wealthy high status men’.
হুমায়ূন আহমেদের সৃজনশীলতা তো আছেই সেই সাথে স্ট্যাটাস, প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থানের কারণে তিনি পঞ্চাশোর্ধ বয়স অতিক্রম করেও ঢের বেশি তরুনীকে আকর্ষণ করতে পারেন সমসাময়িক তরুণদের তুলনায়, সেজন্যই শাওন তার প্রতি আকর্ষিত হয়েছে এমনকি হুমায়ুন আহমেদ বিবাহিত জেনেও। ঠিক একইভাবে ক্ষমতাবান পুরুষেরা যে সুন্দরী তরুনীদের প্রতি বেশি লালায়িত হয়, সেটার প্রমাণ হিসেবে হুমায়ুন আহমেদ আকর্ষিত হয়েছেন শাওনের প্রতি। এ ব্যাপারটা রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারেই বা বোঝা যাবে না কেন? বাংলা সাহিত্যে নোবেল পাওয়া একমাত্র কবি তিনি, তার সামাজিক প্রতিপত্তি সে সময় বিশাল, জমিদারী এবং লেখালিখির কারণে অর্থকড়িরও অভাব তার নেই, নানা দেশ ভ্রমণ করে পরিশীলিত এক সাংস্কৃতিক মনন। তার প্রতি রাণু, মৈত্রেয়ী দেবী, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোরা আকর্ষণ বোধ করেছেন, এটি আর বিচিত্র কী?
এ ব্যাপারটা ব্যতিক্রমী, কিন্তু বিরল নয়। প্রানী জগতেও এটা দেখা যায়। আফ্রিকার বণভূমিতে সিংহদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন, সেখানে একটি পুরুষ সিংহ যখন অন্য সিংহকে লড়াইয়ে পরাজিত করে গোত্রের সিংহীর দখল নেয়, তখন প্রথমেই যে কাজটি করে তা হল সে সিংহীর আগের বাচ্চাগুলোকে মেরে ফেলে। আফ্রিকার সেরেঙ্গিটি প্লেইনে গবেষকদের হিসেব অনুযায়ী প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ সিংহসাবক তার বৈপিত্রের খপ্পরে পড়ে মারা যায় । একই ধরণের ব্যবহার দৃশ্যমান গরিলা, বাঘ, চিতাবাঘ, বেবুন প্রভৃতি প্রাণীর মধ্যেও। এখন মানুষও যেহেতু অন্য প্রানীদের মতো বিবর্তনের বন্ধুর পথেই উদ্ভুত হয়েছে, তাই তার মধ্যেও সেই ‘পশুবৃত্তি’র কিছুটা ছিটেফোঁটা থাকার কথা। অনেক গবেষকই মনে করেন, প্রচ্ছন্নভাবে হলেও তা পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্যই কিন্তু জৈব অভিভাবকের তুলনায় সৎ বাবা মার অত্যাচার শিশুর উপর বেশি হয়। সামিউল হত্যার মূল প্ররোচনাটা এসেছে আমার ধারণা সামিউলের মা নয়, তার প্রেমিকের কাছ থেকে, যদিও তার মা এখানে সহায়তা করেছিল। এই ব্যাপারটাও ব্যতিক্রমী সন্দেহ নেই, কিন্তু এ ধরণের ঘটনা যে ঘটে না যে তা তো নয়। য়ামেরিকায় কিছুদিন আগেও কেসি এন্সথনি মার্ডার ট্রায়াল হয়ে গেল, মাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল শিশু সন্তান হত্যার জন্য। নতুন সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে মা অনেক সময় (অবশ্যই বিরল ক্ষেত্রে) সন্তানকে বোঝা মনে করে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাকে সরিয়ে দিলেই সে বেশি প্রজননগত উপযোগিতা অর্জন করে (স্ট্যাটাসওয়ালা সুদর্শন বয়ফ্রেন্ড অর্জন, সিঙ্গেল অবস্থায় কেউকেটাদের দৃষ্টি আকর্ষণ ইত্যাদি)। কাজেই সেটা যে সেই দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করা যাবে না, তা কিন্তু নয়।
ব্ল্যাফার হার্ডি যে অনুকল্পের কথা বলেছেন সেটা শিম্পাঞ্জীদের সমাজ প্রত্যক্ষ করে, সব কিছু যে মানুষের জন্য প্রযোজ্য হবে তা নয়। এ ধরণের প্যাটার্ণ আসলে বিভিন্ন সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সেটি নির্ধারিত হয় ।
সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখা দরকার। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান জৈববৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমাজের প্যাটার্ণ অনুসন্ধান করে, কিন্তু সামাজিক জীবনে এর প্রয়োগের ‘ঔচিত্য ’নিয়ে কখনোই মাথা ঘামায় না। ভবিষ্যতে কী হবে কিংবা কী হওয়া উচিৎ এগুলোর ক্ষেত্র বোধ হয় বাইরে।
@অভিজিৎ-দা,
আপনার অন্যান্য লেখার মত এ লেখাটিও মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়েছি এবং বিবর্তনের চমক দেখে শিহরিত হয়েছি! কিন্তু আমি কিছুতেই মানতে পারছি না যে রাণু, মৈত্রেয়ী বা ভিক্টোরিয়া রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তি, জমিদারী, অর্থকড়ি, প্রতিপত্তি ইত্যাদি দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে হ্যাঁ, ‘পরিশীলিত এক সাংস্কৃতিক মনন’ (যা নানা দেশ ভ্রমণ ছাড়াই রবীন্দ্রনাথের প্রাপ্ত বলে আমার ধারণা) অবশ্যই একটা ব্যাখ্যা হতে পারে!
কিন্তু ‘সাংস্কৃতিক মনন’ তো অনেক অনেক কিছুর সমষ্টি এবং একটা ব্যাপক ও আধুনিক ধারনা! একে ‘প্রজনন-গত উপযোগিতা’র সাথে কিভাবে মেলানো যাবে, তা জানতে কৌতূহল হচ্ছে! অর্থাৎ, যেখানে শক্ত-সামর্থ্য-বান আর টাকাওয়ালা পুরুষের মাধ্যমে শক্তিশালী, নীরোগ ও টেকসই জিনের নিশ্চয়তা-প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা নারীকে বহুগামি করে (এবং যা আদিম নারীর জীবন-বৈশিষ্ট্য হতে আধুনিক নারীর অবচেতন মনে দৃঢ়ভাবে গ্রথিত), সেখানে অনেক ‘শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল কিন্তু আধুনিক ও উন্নত সাংস্কৃতিক মনন’-এর অধিকারী পুরুষের প্রতি অনেক বহুগামি/পরকীয়ায় রত নারীর আকৃষ্ট হওয়ার পেছনে কি বিবর্তনিয় যুক্তি কাজ করে, তা জানতে খুবই ইচ্ছে করছে!
@কাজি মামুন, “তার মানে নারী আন্দোলন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও রোধ করা ”নারি বহুগামিতা” আবার ফিরিয়ে আনবে?”
না তা ফিরিয়ে আনবে না কারন এটা এখনো আছেই। বরং নারী আন্দোলন এটাকে রোধ করবে।পুরুষের বদ স্বভাবের জন্যই, নারী নিজেকে বঞ্চিত অনুভব করে, কখনও বিদ্রোহী ( পুরুষ তন্ত্রের বিরুদ্ধে)। তাই এগুলো হয়। আর পুরুষ পরকিয়া করে কারন ধর্ম এটা তাকে শিখিয়েছে।কাজেই ধর্ম নামের ওই আবর্জনা, যা মানুষের
মুক্তবুদ্ধি কে হরণ করে, ওটার বিরুদ্ধেই আমার যত ক্ষোভ।
আসলে পাশ্চাত্তের বিজ্ঞানীরা এই সব তথ্ব্য পেয়েছে কোরান থেকে। কিন্তু তা চেপে গেছে।
আল্লাপাক কোরানে বহুগামীতা জায়েজ করে দিয়েছেন অনেক অনেক আগে।
আর নারীদের যে অদম্য যৌনক্ষুধা রয়েছে তা দমন করার জন্য জন্য বুরকা, হিজাব, নিকাব-ই নয় তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছে ঘরের কোনে চুপচাপ বসে থাকার জন্য।
আরও আদেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন তাদের স্বামীকে যৌন সঙ্গমের যখন তখন ত্যাক্ত-বিরক্ত না করে। স্বামীর যখন মর্জি বা অভিপ্রায় হবে তখনই সে রতিলীলা করবে যার সাথে খুশী।
সব কিছুই ইসলাম আবিষ্কার করেছে। কাজেই এই রচনাটা কোরান-হাদিসের কপি পেস্ট।
এই রচনা পড়ে আমার বহুগামীতা করার ইচ্ছে যেগে গেল। এতদিন কোরান অমাণ্য করে গিয়েছি। এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি–আল্লা পাকের নির্দেশ না মেনে।
আর আমি এখন বহুগামী নারীদেরও সন্ধান করছি। হায়! তারা কোথায়?
@আবুল কাশেম,
বোঝা যাচ্ছে আপনি মুহম্মদকে আগা গোড়া অনুসরণ করতে চাইলেও পুরোপুরি মুহম্মদ হতে পারেননি। হতে পারলে ঠিক ঠিক জয়নবের মত কাউকে পেয়ে যেতেন। :))
বিয়েই করব না।
নারী জাতিকে বিশ্বাস করাই কঠিন।
@রানা, ভাই, আপনিও যে লুলপুরুষ হবেন না এমন গ্যারান্টি নাই। :))
@অভিজিৎ দা,
আপনার সব লিখায় আমি নিয়মিত পড়ি। মজার মজার বিষয়ের উপর লিখা আপনার প্রবন্ধগুলো থেকে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
নিঃসন্দেহে “পরকীয়া” নারী ও পুরুষ উভয়েরই সন্মিলিত আকাংখার ফল, একা একা তো আর পরকীয়া হবে না । সামাজিক বাস্তবতায় “কাল এবং স্থানভেদে” পুরুষ এবং নারীর পরকীয়ার প্রেম/যৌনতার প্রেক্ষিত বা কারন আলাদা হলেও সময়ের প্রেক্ষিতে ‘ঘটনাটি’ একই সময়ে শুরু হয়েছিল বলেই ধারনা করা যায়। আপনি শিম্পান্জী সহ অন্যান্য প্রানীদের উদাহরন দিয়েছেন। একটা ছোট্ট প্রশ্ন, “প্রকিৃতিতে এমন কোন প্রানী আছে কি যে “এক গামী /গামিনী (Monogamy)”, বিশেষ করে কোন স্তন্যপ্রায়ী প্রানী (Mammal)?
@গোলাপ,
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
মনোগামী প্রানী এমনিতেই কম, স্তন্যপায়ী প্রানীদের মধ্যে আরো কম। তবে একেবারে যে নেই, তা নয়। প্রেইরি ভোলস নামে একধরণের ইঁদুর আছে, যে ইঁদুরগুলো নিজের মধ্যে একগামী সম্পর্ক গড়ে তুলে, যৌনসঙ্গির প্রতি আজীবন বিশ্বস্ত থাকে বলে দাবী করা হয়। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া ইঁদুর, গিবন, ডিক ডিক এন্টিলোপ এগুলো প্রজাতিকে কিছুটা হলেও একগামী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাখিদের মধ্যে আছে কিছু প্রজাতির রাজহাঁস, বাল্ড ঈগল, কালো শকুন, প্রিয়ন প্রভৃতি। কিন্তু যে উদাহরণগুলো দিলাম সেগুলো সত্যিকারের মনোগেমাস কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে সন্দেহ আছে। যেমন, যে সব পাখিদের একসময় মনোগোমাস ভাবা হত, দীর্ঘ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে তারা সবাই পার্টনারকে কোন না কোন সময় প্রতারণা করে, যেটাকে বলে ‘extra-pair copulation’। ম্যাট রিডলী তার রেড কুইন বইয়ে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন –
In 1980s when it became possible for the first time to do genetic blood testing of birds, an enormous surprise was in store for zoologists. They discovered that birds in average nest were not their ostensible father’s offspring. Male birds were cuckolding one another at a tremendous rate. In the indigo bunting, a pretty little blue bird from North America that seemed to be faithfully monogamous, about 40 percent of the babies the avarage male feeds in the nest are bastards … … It goes under the abbreviation EPC, for extra-pair copulation, but I will call it adultery, for that it what it is. Most birds are indeed monogamous, but they are not by any means faithful 🙂
তবে একটা সতর্কতা। পাখিদের ক্ষেত্রে কিছু হলে সেটা মানুষের সমাজের জন্যও একইভাবে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। এভাবে ওয়ান টু ওয়ান কো রিলেশনের দিকে গেলে ন্যাচারলিস্টিক ফ্যালাসিতে আচ্ছন্ন হবার সম্ভাবনা থাকবে…
@অভিজিৎ,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (F)
পোলাপান সুযোগ পাইলেই ফেসবুকে কেন “স্ট্যাটাস” দেয়- এই বার বুঝলাম! :-s
আমার নিজেও ফেসবুক স্ট্যাটাস ছাড়া আর কোনো স্ট্যাটাস নেই। আমার যে কি হপে রে!! 😛
কি আর করিব বয়ান
সম্পদ ক্ষুধা ইন্দ্রিয় ভোগে
কেউ কাহারে নাহি ছাড়ে
দু’জনে সমানে সমান।
@রাজেশ তালুকদার,
দুর্দান্ত! (Y)
অভি দা’ই পারেন, এমন করে সামাজিক আবেগগুলোকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বাক্যবদ্ধ করতে। আরো একটি প্রিয় পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ।
—
তবে একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকষর্ণ করছি:
দুঃখিত। এই তথ্যটি সঠিক নয়। ওই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার রীমা ছিলেন শহীদ সাংবাদিক নিজামুদ্দিন আহমেদে মেয়ে। লেখায় সংশোধনী আশা করছি। (Y)
* পুনশ্চ: শহীদ সাংবাদিক নিজামুদ্দিন আহমেদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এইখানে। ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
অনেক ধন্যবাদ, বিপ্লব। আমি জানতাম রীমা সংবাদিক নন, বরং শহীদ সাংবাদিকের মেয়ে। সাংবাদিক কন্যা লিখতে চেয়েছিলাম। এখন দেখি কন্যা বাদ গিয়া রীমারেই সাংবাদিক বানায় দিছে। বয়স হইসে। লিখতে গিয়া মাঝখানের শব্দ টব্দ সব বাদ পড়ে যায়। এনিওয়ে, ঠিক করে দিচ্ছি। বিষয়টি নজরে আনার জন্য ধন্যবাদ।
আর শহীদ সাংবাদিক নিজামুদ্দিন আহমেদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতির লিঙ্কটির জন্যও অসংখ্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
হ্যা,আমারো ধারণা আপনার বয়স হইসে :))
পরাকিয়ার ব্যাপারটা কি মানুষ এর বয়সের উপরও নির্ভর করে?
নারীরা একগামী, এই মিথটিকেই তো একটা মিথ মনে হচ্ছে আমার। আপনি লেখার নিচে যে ধর্মীয়/ঐতিহাসিক উদাহরণ গুলি দিয়েছেন, সেখান থেকেই তো দেখা যায় যে নারী স্বভাবত বহুগামী এটা জানা আছে বলেই তাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এত চেষ্টা।
অভিজিৎ রায়ের আরেকটি দারুণ মৌলিক প্রবন্ধ।
একটা প্রশ্ন আমার প্রায় সময় মনে হয় – তা হলো এই যে মহাভারতের চরিত্রগুলো থেকে আমরা উদাহরণ দিই (যেমন দ্রৌপদী), এগুলো তো সব ছিল মানুষের কল্পনা। বলা যায় পুরুষ মানুষের কল্পনা। যে নারী চরিত্রগুলো মহাকাব্যে সৃষ্টি করা হয়েছে সেগুলো কি পুরুষের ইচ্ছের প্রতিফলন নয়?
@প্রদীপ দেব,
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার শেষ লাইনটি আসলেই চিন্তার খোরাক যোগায়।
আচ্ছা সমস্যাটা কি,আপনি কি প্রেম+পরকিয়ার উপর আরেকটা পিএইচডি করার প্ল্যান করসেন নাকি??? 😛 😛 😛 । যাই হোক লেখাটা পড়ে ভয় পাইসি :-[ ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ভয় নাই। ছোট বেলায় অনেক ভয় ডর থাকে। বড় হও, ভয় কেটে যাবে! :))
ইসলামে জয়নব উপাখ্যানও মনে হয় নারী পরকীয়ার আর একটা ভাল উদাহরন। সামাজিক প্রতিপত্তি, ধন ঐশ্বর্য, ক্ষমতা, গাত্রবর্ণ সব দিক থেকেই মুহাম্মদ তাঁর পালিত পুত্র জায়েদের চেয়ে শ্রেয়তর অবস্থানে ছিল।
প্রজনন সুবিধে পাবার জিনগত বৈশিষ্ট্যই হয়ত জয়নবকে উবুদ্ধ করেছিল তাঁর আংশিক উন্মীলিত পৃষ্ঠ সৌন্দর্যের বাধনে তাকে বেধে ফেলতে!
তবে কি নারীও শিকারী?
@মুরশেদ,
হাঃ হাঃ, এ পৃথিবীতে নারী পুরুষ সবাই শিকারী, আবার তারাই কখনো বা হয়ে যায় ভাগ্যবিরম্বিত শিকার।
আপনার ইমেইল চেক কইরেন।
ভালা পাইছি।
[img|http://gullee.com/smilies/15.gif]
আমিতো একজন ঘোষিত পুরুষবাদী। এই ব্যাটাতো দেখি এতদিন নারীবাদী সাইজা থাইকা এখন নারীর বিরুদ্ধে কলম ধরছে। ভণ্ড আর কারে বলে। অভিজিৎ রায় বধের মহাকাব্য লিখবো আমি এইবার ফেসবুকের দেয়ালে দেয়ালে।
@ফরিদ আহমেদ,
লিখে লাভ নেই ফরিদ ভাই, অভিজিৎ রায় যা বলেছেন আমি যতটুকু বুঝি সম্পূর্ন ঠিক। আর এজন্যে নারীকে দোষারোপের জায়গা নেই। বিষয়টা বিবর্তনবাদের মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলা সামাজিক অভিযোজনেরই ফলাফল। আগে যা জানা ছিলো আর এইপ্রবন্ধে নতুন অহরিত যা তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে তার আলোকে আমার তাইই মনে হয়!
খুবই সুন্দর তথ্যবহুল প্রবন্ধ! তবে একটা কথা আমার হৃদয়ঙ্গম হচ্ছে না। প্রবন্ধে অভিজিৎ যা বলেছেন,
এখানে ‘প্রস্তর যুগের মস্তিস্ক’ কথাটি বুঝতে পারিনি। তাহলে কি বলতে হবে যে কেবল প্রস্তর যুগেই ভাল জিন অনুসন্ধানের তাগিদ ছিলো বা শুরু হয়েছিলো? আগে ছিলো না ? কিঙবা (অনুস্বর টাইপ হচ্ছেনা) এ আকাঙ্খা বা অভিযোজন প্রকৃয়া বর্তমানে নেই?
@কেশব অধিকারী,
এই ‘প্রস্তরযুগের মস্তিস্ক’ ব্যাপারটি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের একটা বড় হাইপওথিসিস। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান মনে করে প্রায় ৬ মিলিয়ন বছর আগে শিম্পাঞ্জি থেকে আলাদা হওয়ার পর সেখান থেকে শুরু করে আজ থেকে দশ হাজার পর্যন্ত আমরা – মানুষেরা মূলতঃ বনে জঙ্গলেই কাটিয়েছি। সেই সময় থেকে শুরু করে আধুনিক সময়কাল বিবর্তনের পঞ্জিকায় হিসেব করলে খুবই ক্ষুদ্র একটা সময়। আর কৃষি কাজের উদ্ভব কিংবা তারো পরে শিল্প বিপ্লব ইত্যাদি তো আরো তুচ্ছ। সঠিকভাবে বলতে গেলে, মানুষ শিকারী-সংগ্রাহক ছিল প্লাইস্টোসিন যুগের পুরো সময়টাতে: ২৫ লক্ষ বছর পূর্ব থেকে ১২,০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত। “হোমো” গণ এর উদ্ভবের সময়কালটাও ২৫ লক্ষ বছর পূর্বের দিকে। তার মানে মানুষের ২৫ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ইতিহাসে ৯৯% সময়ই তারা ছিল শিকারী-সংগ্রাহক। অর্থাৎ, ইভল্যুশনারী স্কেলে মানুষেরা “মানব সভ্যতার” শতকরা নিরানব্বই ভাগ সময়টাই বনে জঙ্গলে আর ফলমূল শিকার করে কাটিয়েছে। কাজেই আমাদের মস্তিস্কের মূল নিয়ামকগুলো হয়তো তৈরি হয়ে গিয়েছিলো তখনই, সে সময়কার বিশেষ কিছু সমস্যা মোকাবেলার জন্য – আজকের দিনের অত্যাধুনিক সমস্যাগুলোর জন্য নয়। এখনো অনেকেই মাকড়শা, তেলাপোকা কিংবা টিকটিকি দেখলে আঁতকে উঠে, কিন্তু বাস ট্রাক দেখে সেরকম ভয় পায় না। অথচ কে না জানে, প্রতি বছর তেলাপোকার আক্রমণে যত মানুষ না মারা যায়, তার চেয়ে ঢের বেশি মানুষ মরে ট্রাকের তলায় পড়ে। অথচ ট্রাককে ভয় না পেয়ে আমরা ভয় পাই নিরীহ তেলাপোকাকে। এটা বিবর্তনের কারণেই ঘটে বলে মনে করা হয়। বনে –জঙ্গলে দীর্ঘদিন কাটানোর কারণে বিষধর কীটপতংগকে ভয় পাবার স্মৃতি আমরা নিজেদের মধ্যে অজানতেই বহন করি।
এ ধরণের আরো উদাহরণ আছে। মিস্টিযুক্ত কিংবা চর্বিযুক্ত খাবার আমাদের শরীরের জন্য খারাপ, কিন্তু এটা জানার পরও আমরা এ ধরনের খাবারের প্রতি লালায়িত হই। সমাজ- সংস্কৃতি নির্বিষেশেই এটা ঘটতে দেখা যায়। কেন? বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, একটা সময় মানুষ জঙ্গলে থাকত, খুব কষ্ট করে খাবার দাবার সংগ্রহ করতে হত। শর্করা এবং স্নেহজাতীয় খাবার এখনকার মত এত সহজলভ্য ছিলো না। শরীরকে কর্মক্ষম রাখার প্রয়োজনেই এ ধরণের খাবারের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। সেটি আমাদের মধ্যে এখনো রয়ে গেছে। আজকের যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে শর্করা এবং স্নেহ জাতীয় খাবারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হয়ে উঠেছে তাদের জন্য মরণ-বিষ। কিন্তু এগুলো জেনেও আমরা আমাদের লোভকে সম্বরণ করতে প্রায়শঃই পারি না; পোলাও বিরিয়ানি কিংবা চকলেট বা আইসক্রিম দেখলেই হামলে পড়ি। আমাদের শরীরে আর মনে বিবর্তনের ছাপ থেকে যাবার কারণেই এটি ঘটে।
সেজন্যই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের পথিকৃত লিডা কসমাইডস এবং জন টুবি আধুনিক মানুষকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেন – “Our modern skulls house a stone age mind”, যার বাংলা করে আমি বলেছি – আমাদের আধুনিক করোটির ভিতরে বাস করে আদিম প্রস্তরযুগের মস্তিস্ক (দেখুন এখানে )। আমি সেটাকেইীই প্রবন্ধে ‘প্রস্তর যুগের মস্তিস্ক’ বলেছি, যদিও খুব বেশি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যাই নি (যাওয়া উচিৎ ছিলো। আসলে ভেবছিলাম, এটা বোধ হয় জানা কথাই। এই সজ্ঞাত অনিমিতিটাই করেছে যাবতীয় সমস্যা)। আসলে আমরা আধুনিক যান্ত্রিক পরিবেশে বাস করেলেও আমাদের জৈবিক চাহিদা, কামনা, বাসনা অনেক কিছুই আসলে সেই প্লেইস্টোসিন যুগে তৈরি হওয়া বিভিন্ন মডিউলগুলোর মিথস্ক্রিয়ার ফসল।
@অভিজিৎ,
আমরা কি শিম্পাঞ্জি থেকে আলাদা হয়েছি নাকি একই প্রাৈগতিহাসিক ape-এর বংশধর আমরা ও আধুনিক শিম্পাঞ্জিরা? অর্থাৎ যে আদিম এপ এই বিভাজনের কেন্দ্রে ছিল তারা তো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেই শাখার দুটো প্রশাখা হল হোমো সেপিয়ান্স আর শিম্পাঞ্জিরা, তাইতো?
@অভিজিৎ,
একদম ঠিক, আমিও তাই মনে করি।
এইটাই আসল কথা। ধন্যবাদ অভিজিৎ ব্রপারটা ব্যাক্ষ্যা করার জন্যে ।
@ফরিদ ভাই, আপনার কী হইছে? সবাইরে বধ করার ইচ্ছা প্রকাশ কইরতেছেন? তবে আপনার মহাকাব্যটা পইড়তে মঞ্চায়।
@প্রদীপ দেব,
হ আমারো একই প্রশ্ন। উনার হরমোন লেভেল মনে হয় হাই ইদানিং, সবাইরে বধ করে ফার্দাফাই করে ফেলার ইচ্ছা জাগে ক্যান জানি।
@প্রদীপ দেব,
বধের সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হইছি। 🙂
@ফরিদ আহমেদ, ঠিক বলেছেন ভাইয়া, পোস্ট তা পড়ে আমি মর্মাহত। বহুগামী পুরুষ বা নারী নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই,কিন্তু পরকিয়া কে সাপোর্ট করে এই পোস্ট আমার ভাল লাগে নি।এতে মৌলবাদীরা উৎসাহ পাবে এই মনে করে যে,নাস্তিক রা পরকিয়া কে উৎসাহিত করছে। আর কোন নারী কি এই পোস্ট কে ভালভাবে নিবেন? আমার তা মনে হয় না। পরকিয়া ত আসলে বিশ্বাস ঘাতকতা 🙁
@অচেনা,
ওটা একটা দুষ্টুমি মন্তব্য ছিল। সিরিয়াসলি নেবেন না প্লিজ। এই লেখাটাই অভি লিখেছে কৌতুকের ঢঙে, হালকা চালে। ফলে, আমার মত এরকম দুষ্টুমি অনেকেই করেছে এখানে। এর কারণে ভাববেন না যে তাঁরা আসলে পরকিয়ার পক্ষে বা বিপক্ষে। অভি তার লেখায় পরকিয়ার জৈববৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে মাত্র। পরকিয়াকে সমর্থন করে নি, উৎসাহ দেওয়াতো অনেক দূরের ব্যাপার। কাজেই, মর্মাহত হবার কিছু নেই। ভালো থাকুন।
@ফরিদ আহমেদ, ওহ আচ্ছা ভাইয়া! তাহলে আমি ভুল বুঝেছিলাম! 🙂 ।সরি অভিজিৎ দা, আমি আপনার কৌতুক তা ধরতে পারিনি ।ভাল থাকবেন(F)
নারী ও বাদ গেলো না :-O পরে ভালো করে পড়তে হবে। তবে মজার হবে সন্দেহ নাই 🙂
@আফরোজা আলম,
ধন্যবাদ।