প্রথম পর্ব; দ্বিতীয় পর্ব; তৃতীয় পর্ব; চতুর্থ পর্ব
(১)
আমার ক্লাস নাইন আর টেন- দুটো বছরই গেছে প্রচণ্ড দ্বিধায়, অস্থিরতায়। এই সময়কালটাকেই বলবো আমার ট্রানজিশন পিরিয়ড। ইসলাম ধর্মের অসংখ্য বিষয় নিয়ে প্রশ্ন চলে এসেছে- অন্যান্য প্রচলিত ধর্ম সম্পর্কে তো আগে থেকেই খারাপ ধারণা ছিল- গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে যতটুকু পড়েছি ভালোই লাগে- কিন্তু বৌদ্ধ মন্দিরে তো দেখি বুদ্ধ মূর্তি- তাকে কেন্দ্র করে পুজার মত অনুষ্ঠানও হয়- শুনলাম বৌদ্ধরা নাকি বুদ্ধরে ভগবানও বলে। কি করি?
ঈশ্বর/আল্লাহকে নিয়ে ভাবলাম, অনেক চিন্তা করলাম- অনেক সন্দেহ তৈরী হয়েছে- কিন্তু মন থেকে পুরো নাস্তিক হতে পারছি না। বিজ্ঞানকেই আকড়ে ধরে চিন্তাগুলোকে সাজাবার চেষ্টা করছি- এইট/নাইন পর্যন্ত বিজ্ঞানের বই-ই ভরসা- অনেক কিছুই জানি না; তবু সেই সময়ে বস্তু-শক্তির নিত্যতা সূত্র আর গণিতের সংখ্যা রেখা দিয়ে নিজের মত কিছু যুক্তি বানিয়ে নিলাম। ডিটেইলস না জেনেই বিজ্ঞানের বিবর্তনকেই সঠিক মনে হতে থাকে। ক্লাসের বই এ ছিল, অভিযোজন। সেটাকে কেন্দ্র করে নিজের মত করে বিবর্তনবাদকে সাজালাম (আজ বুঝি ল্যামার্কীয় ভুল ধারণার মধ্যে ছিলাম)। কিন্তু তারপরেও নাস্তিকতার ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চিত হতে পারিনা।
সে সময়ের ডায়েরী এখনো মাঝে মধ্যে উল্টে পাল্টে নাড়ি। সেখানকার তিনটি লেখা এখানে তুলে দিচ্ছি- এটাতে আমার ট্রানজিশন পিরিয়ডের চিন্তার গতি বুঝা যেতে পারে। লেখা তিনটি সম্ভবত আমার ক্লাস নাইন/টেনের দিককার লিখা। তবে মজার ব্যাপার হলো- এগুলোর কোনটি কোনটি আমি পরে (ঐ নাইন টেনেই) আবার কেটে দিয়ে পাশে লিখেছি- “আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি”, “আমার পুরা বিশ্বাস আছে”, “আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দাও”… ইত্যাদি।
প্রথমটি:
“আমার ধর্ম কি?”
আমার বাবা-মা দুজনই মুসলমান। সুতরাং জন্মের পর থেকেই আমিও মুসলমান ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে এই ধর্মের বেশ কয়েকটি ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করায় আমি কাফির। যেমন, খাবারের ব্যাপারেই ধরা যাক। কাছিম, কুচে বা যেকোন খাবার যা হিন্দুদের বা অন্য দেবদেবীর নামে উৎসর্গ করা হয়েছে, সবই হারাম করা হয়েছে এই ধর্মে। কিন্তু এটা আমি মানতে পারিনা। কাছিম-ব্যঙ-কুচে হয়তো আমি ঘৃণার কারণে খেতে পারবো না, কিন্তু ওটা খেলেই আমার ধর্ম আমাকে ত্যাগ করবে, এটা আমি মানতে পারছি না। যেখানে অন্য ধর্মের লোকেরা এসব খেতে পারছে সেখানে মুসলমানেরা এসব খাবার খেতে পারবে না কেন? আর, দেবদেবীর নামে উৎসর্গ করলে তা খাওয়া যাবে এই নিয়মকে বলতে গেলে আমি ঘৃণা করি। কেননা এভাবে আমাদের ধর্মে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। কোন খাবার দেবদেবী আর জাহান্নামের (নরক) নামেই উৎসর্গ করা হোক- তাতে খাবারটির গুনগত মানের কোন পার্থক্য হয় না, এটা যেকেউ ১০০% নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবে। তাহলে সেই খাবার খেতে অসুবিধা কোথায়? অবশ্য সকল ধর্মেই এ ধরণের কুসংষ্কার আছে। যেমন: হিন্দু ধর্মে গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। এটাও আমি মানতে পারিনা। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, বর্তমানে আমি কোন ধর্মেই নেই, অর্থাৎ আমি নাস্তিক। তবে ইসলাম ধর্মের বেশ কিছু জিনিস অবশ্য ভালোলাগে। তাই এই ধর্ম এখনো আমি পুরোপুরি ছাড়িনি।
সুতরাং আমি ৭০% নাস্তিক, এবং ২৯% মুসলমান, ০.৯% বৌদ্ধ ও ০.১% অন্যান্য।
দ্বিতীয়টি:
“এলেবেলে”
সৃষ্টিকর্তা আসলেই কি আছে? সৃষ্টিকর্তা আসলেই কি আছে? সৃষ্টিকর্তা আসলেই কি আছে? এই প্রশ্নটা প্রায়শই আমার মনে উদিত হয়। নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করি, যদিও এখনো সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি।
আচ্ছা, আমাদের এই পৃথিবীকেই নিয়ে শুরু করা যাক। এই পৃথিবীর জন্ম কিভাবে? সঠিক উত্তর পাওয়া না গেলেও অনেকে মনে করেন- সূর্যেরই একটা অংশ পৃথিবী। তাহলে সূর্যের জন্ম কোথা থেকে বা কিভাবে? হয়তো বলা যাবে- সূর্য জন্ম নিয়েছে বড় কোন ধুমকেতু বা জ্যোতিস্ক থেকে। কিন্তু সেই বড় জ্যোতিস্কই বা কোথা থেকে এসেছে? ….. আমরা বস্তুর নিত্যতা সূত্র থেকে জানতে পারি সৃষ্টির পর থেকে কোন বস্তুর বা বস্তুর ভরের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, এসব গ্রহ-উপগ্রহ কোন বিন্দু থেকে উৎপন্ন হয়নি। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে এসব উৎপন্ন করতে নিশ্চয়ই কারো হাত আছে, তিনিই সৃষ্টিকর্তা।
উপরের আলোচনা হতে বুঝা গেল যে, কোন জিনিসের সৃষ্টির জন্যই প্রয়োজন সৃষ্টিকর্তা। তাহলে আরেকটি প্রশ্ন জাগে এই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্তা কে, তার সৃষ্টিকর্তা কে? এক্ষেত্রেও আমরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছি। সুতরাং এতটুকু আলোচনা হতে আমরা যেমন নিশ্চিতভাবে বলতে পারবো না যে সৃষ্টিকর্তা নেই, তেমনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারবো না যে সৃষ্টিকর্তা আছে।
এবার আলোচনার একটু গভীরে প্রবেশ করি। সংখ্যারেখায় সবচেয়ে বড় সংখ্যা কত? আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারেনি সবচেয়ে বড় সংখ্যাটি কত, কেউ পারবেও না। তেমনি আমাদের মহাবিশ্বের বিস্তৃতি কত ব্যাপক তার শেষ কারও পক্ষে দেখা সম্ভব হবে না। একজন মানুষের মগজ তার তুলনায় নগন্য, মানুষটি আবার পৃথিবীর তুলনায় নগণ্য, পৃথিবী আবার সৌরজগতের তুলনায় নগন্য, সৌরজগৎ আবার আমাদের গ্যালাক্সির তুলনায় খুবই নগন্য। অসংখ্য গ্যালক্সির সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বজগতের তুলনায় সেই গ্যালাক্সি নগন্য, তেমনি অসংখ্য বিশ্বজগৎ নিয়ে তৈরী হয় আরেকটি জগৎ, তাদের নিয়ে তৈরী হয় আরো বিশাল একটি জগৎ……… আর বিশালতার মাঝে সৌরজগৎ বা পৃথিবীর সৃষ্টি কোন ঘটনাই না। বস্তুর নিত্যতা সূত্র থেকে জানি- বস্তুর রূপান্তর সম্ভব- সৃষ্টি বা ধংস হয় না। পৃথিবী বা সৌরজগৎ সৃষ্ট তেমনি একটি রূপান্তর। প্রকৃতপক্ষে এই ধরণের বিশ্বজগৎ অসীম-অনন্ত।
অনুরূপভাবে আমরা বিশ্বজগৎ সৃষ্টিকে অর্থাৎ এর সময়কালকেও আমরা অসীম বা অনন্ত বলতে পারি। অর্থাৎ অনন্তকাল ধরেই চলে আসছে এই প্রকৃতিজগৎ। সামগ্রিকভাবে (সম্পূর্ণ) বিশ্বজগৎ কিভাবে এবং কখনো সৃষ্টি হলো- তা ঐ সংখ্যারেখার সবচেয়ে বড় সংখ্যার মতই অসীম ও অনন্ত।
আবার সৃষ্টিকর্তা যদি সত্যিই থেকে থাকেন- তবে এক্ষেত্রেও প্রশ্ন রয়েছে, তিনি কে? তিনি কেমন? অর্থাৎ তার স্বরূপ কিরূপ? আমাদের পৃথিবীতে এতগুলো ধর্মের মধ্যে কোনটির প্রভু আসল সৃষ্টিকর্তা? সকল ধর্মের জন্ম ঘটনা থেকে জানা যায় যে, একজন রক্ত মাংসের মানুষ এসে সেই ধর্ম প্রবর্তন করেন। এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সেই ধর্মপ্রচারক তার নিজের সাথে প্রচারিত সৃষ্টিকর্তার যে একটা সম্পর্ক আছে তা প্রচার করেন। (যেমন মুহম্মদ সা আল্লাহর বন্ধু, যীশুখৃস্ট ঈশ্বরের পুত্র। কৃষ্ণ-দেবতা-দেবী তারা তো ভগবানেরই ভিন্ন রূপ)।
তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে প্রতিটা ধর্মেরই কেরামতি মৃত্যু বা মৃত্যু পরবর্তী জগৎ নিয়ে। কেননা মৃত্যু বা মৃত্যু পরর্বর্তী জগৎ সম্বন্ধে সবাই অজ্ঞ।
যাহোক, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে নেগেটিভ দিকে আছি ৬০%
এবং পজিটিভ দিকে ৪০%।
তৃতীয়টি (ঈষৎ সংক্ষেপিত)
“নাস্তিক বনাম গোঁড়া ধার্মিক”
আমার কেন জানি নাস্তিকদের একটা আলাদা টান রয়েছে, … গোড়া ধার্মিকদের প্রতি কেমন যেন একটা অবজ্ঞাভাব প্রকাশ করে। কারণ কি? কারণ সম্ভবত:
ক) নাস্তিকেরা সাহসী, গোড়া ধার্মিকেরা ভীতু। সাহস না থাকলে কেউ নাস্তিক হতে পারেনা।
খ)নাস্তিকদের চিন্তাশক্তি প্রখর। নাস্তিকেরা তীক্ষ্ণভাবে চিন্তা করতে পারে, যুক্তিতর্কের মাঝ্যমে তারা সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে। কিন্তু গোঁড়া ধার্মিকরা কোন রকম যুক্তিতর্ক ছাড়াই অন্ধভাবে সৃষ্টিকর্তাকে মনে করতো!!!!!!! এদের অনেকের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার ভয় এমনভাবে গাঁথা যে তারা কোন যুক্তিতর্কই মানতে চায় না, তাদের চিন্তাগত শক্তি ভোঁতা হয়ে থাকে। তারা যা বিশ্বাস করে তা কখনোই প্রমাণ করতে পারে না….
গ) নাস্তিকেরা পরোপকারী কিন্তু গোড়া ধার্মিক: যারা নাস্তিক- তারা পরোপকারী, তারা পরের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে। অপরপক্ষে ধর্মকর্ম সবসময়ই মানুষকে স্বার্থপর হতে শেখায়। একজন মুসলমান নামাজ, রোযা, হজ্জ পড়ে তার নিজের পূণ্য হাসিলের জন্য বা বেহেশত লাভের লোভে।
এগুলোকে একজন ক্লাস নাইন/টেনের ছেলের চিন্তাভাবনা হিসাবে দেখলেই বুঝা যাবে- কিভাবে কোন পদ্ধতিতে ঈশ্বর ভাবনার দীর্ঘদিনের জেঁকে বসা পাথরটি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে- নাস্তিকতার প্রতিই প্রধানত ঝোঁক- কিন্তু তারপরেও একটা ভয়: যদি শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর বলে কিছু থেকেই থাকে? ফলে আর পুরো নাস্তিক হওয়া হলো না। কোন দুর্বল মুহুর্তে- যেমন পরীক্ষার আগে আগে- যখন কোনভাবেই পড়ায় মন বসাতে পারছি না- তখন হয়তো ডায়েরীর এরকম নাস্তিক কথা কেটে তার পাশে বিশ্বাসের কথা লিখছি- এককথা অসংখ্যবার লিখছি (যেনবা জিকির করছি!), মাঝে মধ্যে ভালো করে নামাজ পড়া শুরু করছি…।
এমনই অস্থিরভাবে কেটেছে আমার এই ট্রানজিশন পিরিয়ডটা।
(২)
একদিন এক আস্তিক বন্ধুর সাথে তর্ক করছিলাম। আগেই বলেছি- এই তর্ক-বিতর্ক সবসময়ই আমার চিন্তাকে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করেছে, বিপরীত যুক্তি-মত-প্রশ্ন আমাকে নতুন ভাবনার খোরাকই দিয়েছে। তো- সেই বন্ধুর সাথে যুক্তি-তর্ক করছি, আমি একেক করে বিজ্ঞানের কথা বলছি- সবগুলোতেই সে আল্লাহর মহিমা খুঁজে পাচ্ছে। এমনি যুক্তি করতে করতে অনেকটা বিরক্ত হয়ে আল্লাহকেই চ্যালেঞ্জ জানাই।
পাশে একটা ইট ছিল- সেটা ধরে একটু উচুতে নিয়ে ফেলে দিলাম। দিয়ে বললাম- আল্লাহ তো শুধু “হও” বললেই সব হয়ে যায়, তাঁর তো অসীম ক্ষমতা- এখন দেখি আল্লাহ কেমনে পারে- এই ইটকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে চালিত করুক। নিজে আবার আমি ইটকে উপরে তুলে বললাম- এই যে আমি কিন্তু ঠিকই উপরে তুলতে পারছি- কিন্তু আল্লাহ পারলো না- আবার ছেড়ে দিয়ে বলি, কই আল্লাহর ক্ষমতা তো কিছু দেখছি না। বন্ধুটি কি বলবে- খুঁজে পাচ্ছিল না, এবং ধীরে ধীরে ক্ষেপে উঠছিল। স্বীকার করছি- তার এই যে অক্ষম ক্রোধ, এটাতে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। (নাস্তিকতার শুরুর দিকে- আস্তিকরা যুক্তিতে না পেরে যখন ক্ষেপে যেত- সেটা অনেকদিন পর্যন্ত খুব আনন্দ দিত; কিন্তু একটা সময় এই এপ্রোচের ভুল ধরতে পারি- কেননা আস্তিকদের খেপানোর মাধ্যমে শুধু দূরত্বই তৈরী হতো- আর কিছু হতো না। এপ্রোচের কথা যদি বলতেই হয় বলবো আরজ আলী মাতুব্বরের কথা। যার কাছ থেকে এপ্রোচের স্টাইল সম্পর্কে শিখেছি ও এখনো শিখছি- তিনি আরজ আলী মাতুব্বর।)
এই যে আল্লাহকে অক্ষম বলে প্রমাণ করে দেয়া- সেটা শুরুতে যুক্তি-পাল্টা যুক্তির ধারাবাহিকতায় বলেছিলাম- অনেকটা ঝোঁকের মাথায়। সেটা আমার জন্য তখনও সহজ ছিল না, কারণ আমি তখনও আল্লাহর অনস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত নই। ভয় ছিল যে, সত্যি আল্লাহ যদি থেকে থাকেন- এবং এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে হঠাৎ কোন গজব নামিয়ে দেন!! তো প্রথম চ্যালেঞ্জ এই জিতে যাওয়ার পরে যেন সাহস আরো বাড়তে থাকে- চ্যালেঞ্জ বাড়াতে বাড়াতে একসময় নিজেকে নিয়েও চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকি। বলি- আল্লাহ যদি সত্যি থেকে থাকেন, তবে চ্যালেঞ্জ জানানচ্ছি- আমাকে এই মুহুর্তে টুপ করে মেরে ফেলুক.. ইত্যাদি। আস্তিক বন্ধুদের কেউ আমার জন্যে ভয়ে তওবা করে, আবার কেউবা যথারীতি ক্ষেপে ভূত!!
তো, কেউ কেউ যুক্তি করতো – আল্লাহর তো আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই- যার তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে? আমি বুঝতে পারি – আল্লাহর খেয়েদেয়ে কোন কাজই আসলে নেই। আল্লাহ যদি থেকেই থাকেন, প্রচণ্ড অথর্ব টাইপের কেউ- কেননা প্রকৃতির কোন একটি নিয়ম ভাঙ্গার মতো সামর্থ বা ক্ষমতা তার নেই। (অনেক পরে দেখি আইনস্টাইনও একই রকমের কথা বলেছেন!!)
এগুলো- প্রশ্ন হিসাবেই ছিল- কিন্তু কেউ তো তার জবাব দিতে পারতো না, উল্টো যা দিতো তা প্রশ্নকেই বরং বাড়িয়ে তুলতো। এর মধ্যেই আস্তিকদের কাছ থেকে আরেক ধরণের যুক্তির সাথে পরিচিত হলাম। সবকিছুই কোরআন-হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেয়া। আল্লাহ আছেন কিনা- এটার জবাব আল্লাহ কোরআনে কি বলেছেন সেটা দিয়ে দেয়া!!
ক্লাস টেনে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত একটা স্যারের কাছে ব্যাচে পড়তে যেতাম- মাঝখানে এশার নামাজ পড়ার জন্য স্যার সবাইকে ধরে মসজিদে নিয়ে যেত। আমি আর একদুজন যথারীতি ফাকি দিতাম। তো একদিন ব্যাচেরই এক আস্তিক বন্ধু স্যার মসজিদে যাওয়ার পরে আমাকেও মসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করছিল। শেষে বলতেই হলো- আমার ধর্ম নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। সে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো- কি? আমার ইন্সট্যান্ট জবাব(মানে প্রশ্ন): “এই যে নামাজের আগে আমরা ওযু করি- ওযু ভঙ্গের অন্যতম কারণ বায়ু নির্গত করা ও ওযু ভেঙ্গে গেলে নিয়ম আবার ওযু করা। এখন, ধর- আমি মাত্রই ওযু করেছি- এখনও আমার হাত-পা-মুখ ভেজা, এমন সময় আমার বায়ু নির্গত হলো- আমাকে কেন ওযুর নাম করে আবার সেই ভেজা হাত-পাগুলোই ধুতে হবে? এমনতো নয় যে- আমি পশ্চাদ্দেশ পরিষ্কার করার মাধ্যমে ওযু করছি?” বেচারি জবাব দিতে না পেরে স্যারকে জানিয়ে দিল। পিঠে বেতের বাড়ি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম- কিন্তু সে পথে না গিয়ে স্যার জবাব দেয়ার চেষ্টা করলেন। স্যার কোরআন-হাদীস থেকে কোট করলেন- পুরো আরবীতে, মুখস্থ। বাংলায় জানালেন- আল্লাহ জানিয়েছেন- পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ, ফলে মুমীনদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, প্রতিদিন গোসল করা- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে ওযু করার মাধ্যমে মুসল্লীরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে…… ইত্যাদি। কিন্তু আমার জবাব আর পাওয়া হলো না। যাহোক- ততদিনে এধরণের যুক্তি শুনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম- কি আর করা….।
এভাবেই বিভিন্ন টুকরো টুকরো ঘটনায়-ভাবনায়-প্রশ্নে মোটাদাগে আমার নাস্তিকতার সূত্রপাত। অন্য অনেকের ক্ষেত্রে যেমন আরজ আলী, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ প্রমুখের বই পড়ে বিশ্বাসে আঘাত খাওয়া, প্রশ্ন তৈরী হওয়া- আমার ক্ষেত্রে তেমনটি নয়। এনারা আমার জীবনে এসেছেন- নাস্তিক হওয়ার অনেক পরে। এঁদের কাছেও আমার অবশ্যই অনেক ঋণ, তাঁদের কাছ থেকে আমি অনেক যুক্তি পেয়েছি। কিন্তু নাস্তিকতার প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁদের ভূমিকা নেই। ভূমিকা যদি কারও থেকেই থাকে- তবে এ মুহুর্তে তিনজনের নাম বলবো- কাজী নজরুল ইসলাম- হুমায়ুন আহমেদ ও তসলিমা নাসরিনের।
পরিচিত অধিকাংশ ছেলেমেয়েদের দেখেছি- প্রিয় কবি বা লেখকের কথা আসলেই যার যার ধর্ম অনুযায়ী প্রিয় নির্ধারিত হয়। মুসলমান বন্ধুর অবধারিত নজরুল, আর হিন্দু বন্ধুটি রবীন্দ্রনাথ বলতে অজ্ঞান। এটা প্রায় কমন। শুধু এতটুকু থাকলেই হতো- কিন্তু দেখা গেল, মুসলমান বন্ধুরা একটা বড় অংশই রবীন্দ্রনাথ বিরোধি আর হিন্দু বন্ধুদের বড় অংশ নজরুল বিরোধি। আমি ক্লাস এইট/নাইন/টেনের কথা বলছি। আমারও সে সময়ে প্রিয় কবি ছিল সুকান্ত আর নজরুল- বলাই বাহুল্য তেজী কবিতা সেসময়ে পছন্দ করতাম। নজরুল প্রিয় হলেও- ধর্মানুযায়ী এই ভালো লাগালাগিতে বিরক্তি তৈরি হতো। অনেকে নজরুলের হামদ-নাতের কথা, ইসলামী গানের কথা বলতো। মেলাতে পারতাম না। প্রিয় কবিতা “বিদ্রোহী”র কিছু লাইন খুব ভালো লাগতো- “ভয়ে হাবিয়া দোযখ নিভে নিভে যায় কাপিয়া”, “আমি জাহান্নামের আগুনে বসি হাসি পুষ্পের হাসি”, “ধরি জীব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি”, “ভগবান বুকে একে দেই পদচিহ্ন”। এলাইন কটি থেকে একটা ধারণা ছিল- তিনি অন্যরকম। পরে এক কাকুর (বাবার বন্ধু) কাছ থেকে শুনি- নজরুলের বিরুদ্ধেও মুরতাদ/কাফির ঘোষনা হয়েছিল। তিনি যেমন হামদ-নাত লিখেছেন- লিখেছেন রাধা-কৃষ্ণ কীর্তন। শুনে খুব ভালো লাগে।
হুমায়ুন আহমেদের “শ্রাবণ মেঘের দিন” বইটিতে দুটি বাক্য মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়েছি। “আল্লাহর অংক জ্ঞান কাঁচা” আর “ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেনি- ম্যান ক্রিয়েটেড গড”। সুরা নিসা মিলিয়ে দেখি আসলেই আল্লাহর (প্রকৃতপক্ষে নবীজীর) অংকজ্ঞান মারাত্মক কাঁচা। আর- দ্বিতীয় বাক্যটি দীর্ঘদিন আমার কানে বাজতো। এবং অনুরূপ বাক্য পরে পেয়েছি- নজরুলের কবিতায়- যার জন্য তাকে মুরতাদ ঘোষনার দাবি তুলেছিল মোল্লারা:
“মানুষ এনেছে গ্রন্থ; –
গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো!”
বা আরেক জায়গায় দেখেছিলাম- “পথ মানুষের সৃষ্টি- উল্টোটা নয়”। অর্থাৎ চালু একটা পথ অনেক পথিককে কাছে টানে ঠিকই- পথ আছে জন্যই সে পথ দিয়ে পথিক চলাচল করে বটেই- কিন্তু শুরুর কথা যদি আমরা দেখি- অবশ্যই একদম শুরুতে মানুষের দ্বারাই পথের সৃষ্টি হয়েছে। “মুহম্মদ সা:-ই ইসলাম- আল্লাহ- কোরআন প্রভৃতির স্রষ্টা” – এই ভাবনাটি অনেক বেশী যৌক্তিক মনে হতে লাগলো।
আমি যখন ক্লাস নাইনে- তখন সারাদেশে ঘাদানিক এর যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে ব্যাপক আন্দোলন চলছে। আমি আমার এলাকাতে বসেই সে আন্দোলনের তেজ টের পাচ্ছিলাম, ঘাদানিক এর সিগনেচার ক্যাম্পেইন আমার জীবনের প্রথম রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। জামাত উল্টোদিকে ব্লাসফেমী আইনের জন্য আন্দোলন করছে, তসলিমা নাসরিনকে মুরতাদ ঘোষণার জন্য আন্দোলন করছে। এসময়টিতে আমার অনেকের সাথে এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর তর্ক করতে হয়েছে এবং তসলিমাকে নিয়ে তর্ক করতে গিয়ে তার বই পড়া আরম্ভ করে দেই। তার নির্বাচিত কলাম বলতে গেলে গোগ্রাসে গিলি। এখান থেকে প্রচুর আয়াত-হাদীস টুকে রাখি, মুখস্থ করি। মুসলমান মাত্রেরই মুহম্মদ সা এর প্রতি দারুন শ্রদ্ধা ও ভক্তি থাকে, কলেমা তাইয়েবা থেকে সকল মুসলমান জানে শুধু আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আনলেই হবে না- নবীজীকেও রাসুল হিসাবে মানলে পরে ঈমান পূর্ণ হবে। সে হিসাবে আমার নিজেরও নবীজীর প্রতি ভক্তির জায়গা ছিল। মনে হতো- নবীজী যদি সত্যি থেকে থাকেন- তবে কোরআনও আছে। কোরআন থাকলে তো আল্লাহও আছে- কেননা নবীজী তো আর মিথ্যা কথা বলতে পারেন না। এই গদগদ ভক্তিভাব কাটাতে তসলিমা নাসরিন কিছুটা হলেও সাহায্য করেছেন। তার আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে ইসলাম-কোরআন-মোহাম্মদ সা কে উড়িয়ে দেয়া, বিশেষ করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে কোরআন-হাদীস দেখিয়ে নবীজীর একের পর এক বিয়ে করা, নারীদের প্রতি অবমাননাকর হাদীস-কোরআন লিপিবদ্ধ করা এসব আমার খুব কাজে দেয়।
এমন করে বলতে গেলে হয়তো আরো অনেক কিছুই বলা যেতে পারে। তবে মনে হয়- এরই মধ্যে যথেষ্ট বলেছি, পাঠকেরাও যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে কৃতজ্ঞ করেছেন। এই হলো আমার অবিশ্বাসের শুরুর গল্প। পুরোপুরি- দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠি বলা যায় এসএসসি পরীক্ষার পরে। এসময়টায় অনেক বই (গল্প-উপন্যাস) হাতে পাই, একাডেমিক পড়ার চাপবিহীন কিছু ফ্রি সময়ও পাই- ফলে চাপমুক্ত ভাবার অবকাশও তৈরী হয়। প্রথম ভাবনাটা আসে- পরীক্ষার আগে আগে ভয়ে অস্থিরতায় অনেকটা কুপোকাত হওয়ার জন্য একটা লজ্জাবোধ। সেখান থেকে আরেকটা চিন্তা মাথায় আসে- সেটা হলো: বুঝতে পারি- ঈশ্বর বিশ্বাস মানুষের দুর্বল মুহুর্তের সঙ্গী। অবলম্বনহীন অবস্থায় মানসিক শক্তি পাওয়ার একটা বায়বীয় অবলম্বন মাত্র। নিজেকে এমন দুর্বল ভাবতে ইচ্ছা করলো না। এই চিন্তাকে সাথে নিয়ে আল্লাহ বা ঈশ্বর, কোরআন-ইসলাম-মুহম্মদ সা সবকিছু নিয়ে আবার ভালো করে ভাবতে লাগলাম- শুরু শেষ পর্যন্ত। একসময় বুঝতে পারলাম- এতদিন অহেতুক ভয় পেয়েছি- দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সব ছুড়ে ফেলে ঝেড়ে কাশার সময় এসেছে।
ঝেড়ে কাশলাম।
সবাইকে ধন্যবাদ।
মুসলিম পরিবারে জন্মেছি বলে ছোট বেলা থেকে আমি ও মুসলমান ছিলাম। আমার বাবা একজন গোঁড়া মুসলিম,তাঁর কাছে ইসলাম এর উপরে কোন কিছুই নাই। ছোটবেলা থেকেই নামায পড়ার জন্যে বলতেন, না পরলে কঠিন বকা দিতেন । তবে বকা খাওয়ার ভয়ে আমি কখনও নামায পড়িনি , পড়েছিলাম আল্লার প্রতি প্রচণ্ড রকমের বিশ্বাস আর ভয় থেকে। নিয়মিত কুরআন পড়তাম ,আরবি কিছুই বুঝতাম না। হুজুরের কাছে শুনেছিলাম যে কুরআন এর একটি অক্ষর পাঠ করলে সত্তুর নেকি পাওয়া যায়, তাই না বুঝলে ও ভক্তি নিয়ে পড়তাম। জামাতে নামায পরলে বেশি সোওয়াব পাওয়া যায় তাই চেষ্টা করতাম জামাতে নামায পড়ার। রোজার মাসে রোজা রাখা নিয়ে যে ছেলে মানুষী গুলি সবাই করে সেগুলি ও করতাম। যা-ই করতাম প্রচণ্ড ভক্তি, ভয় আর বিশ্বাস থেকে করতাম। আমি যখন ক্লাস টেন এ পড়ি তখন অ্যামেরিকায় টুইন টাওয়ার এ হামলা হয়। আমাদের স্কুল এর ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক তখন ইসলাম এ জিহাদ এর গুরুত্ত পড়াচ্ছিলেন। তিনি আমাদের কে জানালেন অ্যামেরিকা ইসলামের শত্রু, তাই অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। আমি স্যার কে প্রশ্ন করলাম স্যার এই হামলায় কিছু নিরপরাধ মানুষ মারা গেছে যাদের মধ্যে কিছু মুসলমান ও আছে। এভাবে নিরপরাধ মানুষ মারা কি গুনাহ না?স্যার বললেন,ইসলাম কে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধকালে যদি কোন মুসলমান মারা যায় তবে সে শহিদের মর্যাদা লাভ করবে।আমার এক সহপাঠী জিজ্ঞেস করল ,মুক্তি যুদ্ধে যে সব মানুষ মারা গেছে তারা কি শহিদ এর মর্যাদা পাবে? স্যার বললেন, না শুধু মাত্র যারা ইসলামের জন্যে যুদ্ধ করে মারা যাবে তারাই শহিদের মর্যাদা পাবে। কুরআন এর বিভিন্ন আয়াত উল্লেখ করে স্যার আমাদের অনেকের মধ্যে জ্বিহাদী জোশ আনার চেষ্টা করলেন এবং অনেকের ক্ষেত্রে সফল ও হলেন। এমনকি আমিও সেই অনেকের দলে ছিলাম।কিন্তু পত্রিকায় বিভিন্ন লেখায় এই হামলার প্রতিবাদ পড়ে, যেখানে বলা হচ্ছে যে হামলাকারী রা ইসলামের নামে অপকর্ম করেছে,ইসলাম শান্তির ধর্ম,ইসলামে এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের কোন স্থান নেই, আমি বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম,বুঝতে পারছিলাম না কে সঠিক কথা বলছে।যেহেতু ছোটবেলা থেকেই হুজুরদের নানা বদনাম শুনে আসছি তাই শেষ পর্যন্ত ধরে নিয়েছিলাম যে আমার শিক্ষক ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আল্লাহ কখনই নিরপরাধ মানুষ হত্যার জন্যে বেহেশত দান করতে পারেন না।তখন থেকেই হুজুরদের প্রতি আমার একধরনের ঘৃণা জন্মাতে লাগল,কিন্তু আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অটুট ছিল। আমি কলেজে উঠার পর আমার একজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়,এমন একজনের সাথে যার সাথে বিয়ে করা ইসলাম সম্মত নয়।যেহেতু ইসলাম মতে এটা পাপ তাই আমি প্রতিনিয়ত অপরধবোধে ভুগতে থাকি ,কিন্তু কিছুতেই তার সাথে সম্পর্ক টা ভাঙতে পারি না।আমি প্রতিদিন নামায পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতাম,বলতাম ”আল্লাহ আমাদের এই ভালবাসা যদি পাপ হয় তাহলে কেন আমার মনে এই ভালবাসা দিলে। আমি তো সচেতন ভাবে ওকে ভালবাসিনি,হঠাৎ করে একদিন আমি উপলাব্ধি করলাম আমি ওকে ভীষণ ভালবাসি।আমি অনেক চেষ্টা করেছি ওকে ভুলে জেতে কিন্তু পারিনি।এখন আমি কি করব?” আমার মা আমাকে একটা বই দিয়েছিলেন যেটাতে কুরানের বিভিন্ন সুরা এবং সেগুলি পাঠের নানা ফজিলত দেয়া ছিল।কিছু সুরা ছিল যেগুলি নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ বান্দার মনের আশা পুরন করেন। আমি সেগুলি পাঠ করতাম আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম ”হে আল্লাহ আমার ভালবাসা যদি পাপ হয় তবে আমার মন থেকে এই ভালবাসা মুছে দাও।”আমি তার সাথে যোগাযোগ কিছুদিন বন্ধ রাখলাম, কিন্তু এতে করে মনে হল আকর্ষণ আরও বেড়ে গেছে।এর মধ্যে আমার আর তার ফ্যামিলী আমাদের সম্পর্কের বিষয়টা জেনে যায়।আমাদের জীবনটা নরকে পরিণত হয়।তার সাথে আমার যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।এক সময় আমি মানুষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি,আমাকে মন রোগ চিকিৎসকের কাছে জেতে হয়, প্রায় ছয় মাস চিকিৎসার পর আমি সুস্থ হই।কিন্তু তখনও আমি ওকে ভালবাসি।যদিও তার সাথে আমার তখন আর কোন যোগাযোগ ছিল না ।আমি আমার ভালবাসা হারিয়েছিলাম ধর্মের কারনে,তাই ধর্মটাকে ভাল ভাবে জানার আগ্রহ তৈরি হল।আমার আগ্রহ দেখে আমার এক চাচা আমাকে কুরআনের বাংলা অনুবাদ আর ধর্ম বিষয়ক বিভিন্ন বই জোগাড় করে দিলেন।যতই আমি ইসলাম কে জানছিলাম ততই নিঃসন্দেহ হচ্ছিলাম যে এটা ধর্মের নামে অধর্ম ছাড়া আর কিছুই নয়।আমার স্কুলের ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক জিহাদ সম্বন্ধে যা বলেছিলেন তা-ই যে সঠিক ইসলাম তা-ও আমি কুরআন পড়ে জানতে পারলাম।সেই থেকে আমার অবিশ্বাসের শুরু।বলা হয় ‘ কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয়’ আমি আমার ভালবাসা হারিয়ে অন্ধ বিশ্বাস থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম।
হুমায়ুন আহমেদের “শ্রাবণ মেঘের দিন” বইটিতে দুটি বাক্য মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়েছি। “আল্লাহর অংক জ্ঞান কাঁচা” আর “ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেনি- ম্যান ক্রিয়েটেড গড”। সুরা নিসা মিলিয়ে দেখি আসলেই আল্লাহর (প্রকৃতপক্ষে নবীজীর) অংকজ্ঞান মারাত্মক কাঁচা।
আমি এই দিকটা আগে দেখিনি। সত্যিই তো আল্লাহ্ অঙ্কে এতো কাঁচা।
Man created religion; religion did never create human being. And man created religion only for his dominating power in society and nothing else. I don’t know the existence of god, if any he should never response to any pathos of human being. So why question of god, religion, believe or not believe should come?
K Adhikary
Like ur article, it is similar to my life. when i was class 8, my math teacher helped to think out of the box and I still learning and felt what I had been taught by my family about religion.
i like ur some points such as things cannot be created or destroyed, it can only be changed to another format. and god has to follow the rules of this universe like us. he is not above the law.
good work, keep continue.
আমি নাস্তিক বলতে আসলে কি বোঝান হয় তা নিয়ে খুব বিপদে আছি আজ কাল। আইনস্টাইন বলতেন তিনি কোন মানবিক ইশ্বরে বিশ্বাস করেন না।গ্রন্থে বর্নিত ইশ্ব্ররে বিশ্বাস নাই কিন্তু তাদের নীজেদের ইশ্ব্রর নীজেরাই নিরমান করে নিয়েছেন এমন আনেকে আছেন, যাদেরকে আমি শ্রদ্ধা করি।
লালন যখন বলেন – আমি আপার হয়ে বসে আছি ওহে –দয়াময়–পারে লয়ে যাও আমায়।এই দয়াময়, লালনের নীজের দয়াময়। আমার মনে হয়, লালনের এই দয়াময়ের মধ্যে
কোন ক্ষতিকর উপাদান নেই।এই আস্তিকদের জন্য আমার মধ্যে শ্রদ্ধাবোধের কোন অভাব নেই।
বলতে দ্বিধা নেই যে, অনেক নাস্তিকের চাইতে আমার শ্রদ্ধবোধ উপরোক্ত টাইপের আস্তিকদের প্রতি বেশি।
আমার চিন্তা- ধ্রুব কারন বলতে- এখন পর্যন্ত , স্থান ও কাল কে খুঁজে পায়।আদি কারন বলতে ইশ্ব্ররের জায়গায় আমি স্থান ও কাল কেই বসিয়েছি। আধিকতর যৌক্তিক কিছু খুঁজে পেলে সেটা স্থান-কালের জায়গায় বসাব।
এখন আমি সবার সাহায্য চাই। আমাকে কেউ কি দয়া করে বলবেন- আমি আসলে, আস্তিক না নাস্তিক ?
@Atiq,
ভাইজান, লালনের গানের একটা বই আমার কাছে আছে, সেই বয়ৈর অধিকাংশ গানে আল্লা-নবি-কোরানের বন্দনা গাওয়া হয়েছে, গাওয়া হয়েছে বেহেস্ত-দোযখের। বর্ণিত আছে আল্লার হুকুমত ও তা মানার ফযিলত।
এই লালন আর ঐ কবি নজ্রুল আমার কাছে এক অপার রহস্য। আজও আমি এই দুই-য়েঁর সম্র্পকে ভেবে কোন কূল-কিনারা পাইনি।
লালনের ” আপন সুরাতে আদম বানালেন দয়াময়/নইলে কি আর ফেরেস্তারে ছেজদা দিতে কয়/আল্লায় আদম না হৈলে/পাপ হৈত ছেজদা দিলে/শেরেক পাপ যারে বলে/এ দিন-দুনিয়ায়” এমন গান য়েমন আছে তেমনি আল্লা-রসুলকে পূজা দেয়ার গানও আছে।
আর নজ্রুলের ব্যাপারে আমার বিস্ময় সীমাহীন, “গ্রন্থ পুজিছে ভন্ডের দল/মূর্খেরা সব শোনো/মানুষ এনেছে গ্রন্থ/গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো”-একথা যে বলে, সে কীভাবে আল্লা-নবির সিফত গেয়ে শত শত কবিতা-গান-নাত-হামদ লিখতে পারে!?
“আল্লাহর খেয়েদেয়ে কোন কাজই আসলে নেই। আল্লাহ যদি থেকেই থাকেন, প্রচণ্ড অথর্ব টাইপের কেউ- কেননা প্রকৃতির কোন একটি নিয়ম ভাঙ্গার মতো সামর্থ বা ক্ষমতা তার নেই।” —
Who has created this nature?
I know one day…you will come back to the light of religion like Kabi Al Mahmood….
May Allah Help you……..
May Allah forgive you……….
Ameen…..
Asraf
@Asraf,
“I know one day…you will come back to the light of religion like Kabi Al Mahmood….”
do you pls elucidate what u actually mean by the light of religion?? pls make out the following statement in Quran:
– “Till, when he (the traveller Zul-qarnain) reached the setting-place of the Sun, he found it going down into a muddy spring…” [Quran-18:86]
– “Till, when he reached the rising-place of the Sun, he found it rising on a people for whom We had appointed no shelter from it.” [Quran- 18:90]
– And the sun runneth on his course for a period determined for him; that is the decree of (Him). That is the measuring of the Mighty, the Wise. [Quran-36:38]
– And for the moon We have appointed mansions till she return like an old shriveled palm leaf. [Quran-36:39]
– “It is not for Sun to overtake the moon, nor doth the night outstrip the day. They float each in an orbit.” (This they clearly meant for the Sun and Moon only). [Quran-36:40]
– Quran-67:5: And We have (from of old) adorned the lowest heaven (sky) with lamps, and We have made such (Lamps as) missiles to drive away Satans (Evils)…
– Quran-37:6-8: We have indeed decorated the lower heaven (sky) with (in) the stars, (for beauty) and for guard against all obstinate rebellious Satans. So they should not strain their ears in the direction of the Exalted Assembly but be cast away from every side.
– And We have set on earth firm mountains, lest it should shake with them. [Quran- 21:31]
– And he has cast the earth firm mountains lest it shake with you… [Quran-16:15]
-He created the heavens without supports that you can see, and has cast onto the earth firm mountains lest it shake with you… [Quran-31:10]
Now my question to you that what kind of light do u unearth from these verses?? As u believe in Allah so must u believe in these verses and u also deem that u r bleached with this mostly ridiculous and spurious verses. If this is mulled over as light of knowledge, then i really feel humiliated about you and also about your hilarious almighty allah.
I m sorry brother…but i m seriously anxious thinking about the intensity of the light of your religion as it is gradually demolishing your ability to sense. U fool all r fed lies from the very of ur early age and practiced to worship Allah in such a way that speech from Allah is factual, whether it is logical or illogical. U all are threatened to be punished enormously by your Great Allah for flouting him or disparaging his erroneous and fallacious verses. So now a days while science is divulging the fact then u all r trying to be bleached by the light of your religion, concealing the legitimacy, just because of the fear to your loutish and boorish Allah.U all become so blind that u r not able to catch the simple and apparent logic against the specious verses…rather u like yourselves to shore up the irrational, incongruous and phony verses and venerate Allah for his incongruous verses.
What a shame!!!!
If this is the pattern of your light of religion, then i have no craving to be blanched by this light.
Thank You.
আপনার লেখা পড়ে কষ্ঠ পেলাম। আপনি আপনার মত চিন্তা করেছেন । আপনার মতই সিদ্ধান্তে এসেছেন ।
আপনার চিন্তা গুলি আরও এগিয়ে নেন, হয়ত ভিন্ন কিছু পেলেও পেতে পারেন । এখানে দুঃখ করা ছাড়া, কিছুই করার নাই ।
“রক্তাক্ত প্রান্তরে” পড়েছিলাম মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেচে থাকলে বদলায় ,কারনে অকারনে বদলায়
দারুন লেখা। নিজের সাথে মিল পেয়েছি বেশ কিছু জায়গায়। তবে আমার নাস্তিক হওয়ার প্যাটার্ন আরেকটু আলাদা। সংশয় মনে হয় সব মানুষের অবচেতনে বিস্তার করে থাকে, যথাযত প্রক্রিয়ায় গেলেই তা প্রকাশিত হওয়ার সাহস লাভ করে। আমনার মতো আমিও মুক্তজগতে প্রবেশের ক্ষেত্রে এই পর্যন্ত অনেকের কাছে ঋনী- সম্পূর্ন গোড়া মানুষজনও আমাকে তাদের অজান্তেই সাহায্য করে ফেলেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।
@একুশ তাপাদার,
লিখুন না আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে। আমি খুবই কৌতুহলী। আপনার কমেন্ট মাঝে মধ্যেই দেখি এখানে। আমাদের সাইটে মাঝে মধ্যে লিখুন না – প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, যেটা ইচ্ছে। আমাদের ভাল লাগবে।
লেখাটি দারুন লেগেছে। মাঝে-মাঝেই মনে হয়েছে এগুলো যেন আমারই কথা।
একজন মুসলমানের তুলনায় একজন হিন্দুর নাস্তিক হয়ে উঠা অনেক সহজ। হিন্দু একটি প্রাচীন ধর্ম। এর কোন নির্দিষ্ট প্রচারক নেই। প্রাচীন কাল থেকেই নানাজন নানা রকম সংযোজন করেছেন। ফলে ভারতে যখন জনসংখ্যা তিরিশ লাখও ছিলনা, দেবতার সংখ্যা ছিল তিরিশ কোটি। ২০০১ সালে দেশে গেছি। মাত্র সাড়ে বার বছরের ব্যবধান। গিয়ে দেখি নতুন এক ভগবানের সৃষ্টি হয়ে গেছে। তেনার নাম, “লোকনাথ বাবা।” এই বাবাটি বল্টু ওয়ালা খড়ম পায়ে দিয়ে প্রথমে মক্কা, তারপর আফগানিস্তান, ওখান থেকে ইরাক গিয়েছিলেন মুসলিম পন্ডিতদের সাথে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতে। লক্ষ্য করুন, তেনার ভুগোল বিষয়ে কি রকম জ্ঞান ছিল! তেনার এক কথা – “জলে, স্থলে, বনে-জংগলে, যেখানেই আমাকে স্মরণ করিবে, আমি উদ্ধার করিব।”
বাংলাদেশীরা ভারতের অনেক ভগবানদের নামই শোনে নাই। রাম-লক্ষ্মনের নাম জানে সবাই। কিন্তু আমি যত টুকু জানি, বাংলাদেশে রামের কোন মন্দির নেই। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের হিন্দুরা শুধু শুধুই মার খেল।
অন্যদিকে, মুসলিম ধর্ম শক্ত কাঠামোর উপর নির্মিত। হযরত মুহম্মদ অত্যন্ত বিচক্ষন ও কৌশলী ছিলেন। নিজের কথা না বলে দোহাই দিয়েছেন এমন কাউকে যিনি কখনোই ছিলেন না। (নজরুল যথার্থই বলেছেন – মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন) এক হাতে তিলে তিলে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ধর্মটি। ফলে ত্রুটি-বিচ্যুতি সহজে বোধগোম্য নয়। এখান থেকে বেরিয়ে আসা চাট্টিখানি কথা নয়।
স্কুল জীবনেই আমি আমার পৈত্রিক ধর্মের প্রতি আস্থা হারাই। এক সময় মুসলিম ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হই। কোরান পড়ার পর আমার জ্ঞানবুদ্ধির প্রসার ঘটে। আমার মোহ কেটে যায়। আমি তখন একই ভাবে ঝেড়ে কেশে সব কিছু থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হই।
এক কথায় চমৎকার লেখা।যারা এখনো অতিমানবীয় স্বওার মাঝামাঝি বিশ্বাসের অবস্হানে আছেন তাদের জন্য ” নাস্তিকের ধর্মকথা ” লেখার সিরিজটি খুব কাজে লাগবে।পড়ে দেখুন।
মামুন।