[লেখক পরিচিতিঃ আবুল মনসুর আহমদ ১৮৯৮ সালে ময়মনসিংহের ধানীখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের প্রথম ভাগে তিনি সাংবাদিকতায় মন দিয়েছিলেন, পরে রাজনীতিজ্ঞ হিসেবেও খ্যাতিমান হন। তিনি ১৯৭৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
আবুল মনসুর আহমদের “আয়না” ও “ফুড কনফারেন্স” গল্পগ্রন্থ হিসাবে বিশেষ সমাদৃত হয়েছে। “আয়না”” গ্রন্থভুক্ত “”হুজুর কেবলা”” গল্পে গল্পকারের বেদনাদীর্ণ হৃদয়ের পরিচয় লক্ষণীয়।
খুবই ভাল লাগা এ গল্পটিকে সকলের সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যে আমার নিজ ব্লগে প্রকাশ করলাম–]
এক
এমদাদ তার সবগুলি বিলাতি ফিনফিনে ধুতি,সিল্কের জামা পোড়াইয়া ফেলিল; ফ্লেক্সের ব্রাউন রঙের পাম্প সুগুলি বাবুর্চিখানার বঁটি দিয়া কোপাইয়া ইলশা-কাটা করিল। চশমা ও রিস্টওয়াচ মাটিতে আছড়াইয়া ভাঙ্গিয়া ফেলিল; ক্ষুর স্ট্রপ,শেভিংস্টিক ও ব্রাশ অনেকখানি রাস্তা হাঁটিয়া নদীতে ফেলিয়া দিয়া আসিল;বিলাসিতার মস্তকে কঠোর পদাঘাত করিয়া পাথর-বসানো সোনার আংটিটা এক অন্ধ ভিক্ষুককে দান করিয়া এবং টুথক্রিম ও টুথব্রাস পায়খানার টবের মধ্যে ফেলিয়া দিয়া দাঁত ঘষিতে লাগিল।
অর্থাৎ এমদাদ অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করিল! সে কলেজ ছাড়িয়া দিল।
তারপর সে কোরা খদ্দের কল্লিদার কোর্তা ও সাদা লুঙ্গি পরিয়া মুখে দেড় ইঞ্চি পরিমাণ ঝাঁকড়া দাড়ি লইয়া সামনে-পিছনে সমান-করিয়া চুলকাটা মাথায় গোল নেকড়ার মতো টুপি কান পর্যন্ত পরিয়া চটিজুতা পায়ে দিয়া যেদিন বাড়িমুখে রওনা হইল,সে দিন রাস্তার বহুলোক তাকে সালাম দিল।
সে মনে মনে বুঝিল, কলিযুগেও দুনিয়ায় ধর্ম আছে।
কলেজে এমদাদের দর্শনে অনার্স ছিল।
কাজেই সে ধর্ম,খোদা,রসূল কিছুই মানিত না। সে খোদার আরশ,ফেরেশতা,ওহী,হযরতের মেরাজ লইয়া সর্বদা হাসিঠাট্টা করিত।
কলেজ ম্যাগাজিনে সে মিল,হিউম,স্পেন্সার,কোমতের ভাব চুরি করিয়া অনেকবার খোদার অস্তিত্বের অসারতা প্রমাণ করিয়াছিল।
কিন্তু খেলাফৎ আন্দোলনে যোগদান করিয়া এমদাদ একেবারে বদলাইয়া গেল।
সে ভয়ানক নামাজ পড়িতে লাগিল। বিশেষ করিয়া নফল নামাজ সে একেবারে তন্ময় হইয়া পড়িল।
গোল-গাল করিয়া বাঁশের কঞ্চি কাটিয়া সে নিজ হাতে একছড়া তসবিহ তৈরি করিল। সেই তসবির উপর দিয়া অষ্টপ্রহর অঙ্গুলি চালনা করিয়া সে দুইটা আঙ্গুলের মাথা ছিঁড়িয়া ফেলিল।
কিন্তু এমদাদ টলিল না। সে নিজের নধর দেহের দিকে চাহিয়া বলিল : হে দেহ,তুমি আমার আত্মাকে ছোট করিয়া নিজেই বড় হইতে চাহিয়াছিলে! কিন্তু আর নয়।
সে আবার দ্বিগুণ উৎসাহে তসবিহ চালাইতে লাগিল।
দুই
দিন যাইতে লাগিল।
ক্রমে এমদাদ একটা অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিল।
বহু চেষ্টা করিয়াও সে এবাদতে তেমন নিষ্ঠা আনিতে পারিতেছিল না। নিজেকে বহু শাসাইল,বহু প্রক্রিয়া অবলম্বন করিল;কিন্তু তথাপি পোড়া ঘুম তাকে তাহাজ্জতের নামাজ তরক্ করিতে বাধ্য করিতে লাগিল।
অগত্যা সে নামাজে বসিয়া খোদার নিকট হাত তুলিয়া কাঁদিবার বহু চেষ্টা করিল। চোখের পানির অপেক্ষায় আগে হইতে কান্নার মতো মুখ বিকৃত করিয়া রাখিল। কিন্তু পোড়া চোখের পানি কোন মতেই আসিল না।
সে স্থানীয় কংগ্রেস ও খেলাফৎ কমিটির সেক্রেটারি ছিল।
সেখানে প্রত্যহ সকাল-বিকালে চারিপাশের বহু মওলানা মৌলবী সমবেত হইয়া কাবুলের আমিরের ভারত আক্রমণের কতদিন বাকি আছে তার হিসাব করিতেন এবং খেলাফত নোট-বিক্রয় লব্ধ পয়সায় প্রত্যহ পান ও র্জদা এবং সময়-সময় নাশতা খাইতেন।
ইহাদের একজনের সুফী বলিয়া খ্যাতি ছিল। তিনি এক পীর সাহেবের স্থানীয় খলিফা ছিলেন এবং অনেক রাত পর্যন্ত ‘এলহু’ ‘এলহু’ করিতেন।
অল্পদিন পূর্বে ‘এস্তেখারা’ করিয়া তিনি দেখিয়াছিলেন যে,চারি বৎসরের মধ্যে কাবুলের আমির হিন্দুস্থান দখল করিবেন।
তাঁহার কথায় সকলেই বিশ্বাস করিয়াছিলো;কারণ মেয়েলোকের উপর জিনের আসর হইলে তিনি জিন ছাড়াইতে পারিতেন।
এই সুফী সাহেবের নিকট এমদাদ তার প্রাণের বেদনা জানাইল।
সুফী সাহেব দাড়িতে হাত বুলাইয়া মৃদু হাসিয়া ইংরাজী-শিক্ষিতদের উদ্দেশ্য করিয়া অনেক বাঁকা বাঁকা কথা বলিয়া উপসংহারে বলিলেন : হকিকতান যদি আপনি রুহের তরক্কী হাসেল করিতে চান,তবে আপনাকে আমার কথা রাখিতে হইবে। আচ্ছা;মাস্টার সাহেব,আপনি কার মুরিদ?
এমদাদ অপ্রতিভভাবে বলিল : আমি ত কারো মুরিদ হই নাই।
সুফী সাহেব যেন রোগ নির্ণয় করিয়া ফেলিয়াছিলেন এইভাবে মাথা নাড়িতে নাড়িতে বলিলেন : হ-ম্,তাই বলুন। গোড়াতেই গলদ। পীর না ধরিয়া কি কেহ রুহানিয়ৎ হাসেল করিতে পারে? হাদীস শরীফে আসিয়াছে : [এইখানে সুফী সাহেব বিশুদ্ধরূপে আইন-গাইনের উচ্চারণ করিয়া কিছু আরবী আবৃত্তি করিলেন এবং উর্দুতে তার মানে-মতলব বয়ান করিয়া অবশেষে বাংলায় বলিলেন] : জযবা ও সলুক খতম করিয়া ফানা ও বাকা লাভে সমর্থ হইয়াছেন এরূপ কামেল ও মোকাম্মেল,সালেক ও মজযুব পীরের দামন না ধরিয়া কেহ জমিরের রওশনী ও রুহের তরক্কী হাসেল করিতে পারে না।
হাদীসের এই সুস্পষ্ট নির্দেশের কথা শুনিয়া এমদাদ নিতান্ত ঘাবড়াইয়া গেল।
সে ধরা-গলায় বলিল : কি হইবে আমার তাহা হইলে সুফী সাহেব?
সুফী সাহেব এমদাদের কাঁধে হাত রাখিয়া বলিলেন : ঘাবড়াইবার কোন কারণ নাই। কামেল পীরের কাছে গেলে একদিনে তিনি সব ঠিক করিয়া দিবেন।
স্বস্তিতে এমদাদের মুখ উজ্জ্বল হইয়া উঠিল।
সে আগ্রহাতিশয্যে সুফী সাহেবের হাত চাপিয়া ধরিয়া বলিল : কোথায় পাইব কামেল পীর? আপনার সন্ধানে আছে?
উত্তরে সুফী সাহেব সুর করিয়া একটি ফরাসী বয়েত আবৃত্তি করিয়া তার অর্থ বলিলেন : জওহরের তালাশে যারা জীবন কাটাইয়াছে,তারা ব্যতীত আর কে জওহরের খবর দিতে পারে? হাজার শোকর খোদার দরগায়,বহু তালাশের পর তিনি জওহর মিলাইয়াছেন।
সুফী সাহেবের হাত তখনও এমদাদের মুঠার মধ্যে ছিল। সে তা আরো জোরে চাপিয়া ধরিয়া বলিল : আমাকে লইয়া যাইবেন না সেখানে?
সুফী সাহেব বলিলেন : কেন লইয়া যাইব না? হাদীস শরীফে আসিয়াছে : (আরবী ও উর্দু) যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় আসিতে চায়, তার সাহায্য কর।
সংসারে একমাত্র বন্ধন এবং অভিভাবক বৃদ্ধা ফুফুকে কাঁদাইয়া একদিন এমদাদ সুফী সাহেবের সঙ্গে পীর-জিয়ারতে বাহির হইয়া পড়িল।
তিন
এমদাদ দেখিল : পীর সাহেবের একতলা পাকা বাড়ি। বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। অন্দরবাড়ির সব ক’খানা ঘর পাকা হইলেও বৈঠকখানাটি অতি পরিপাটি প্রকাণ্ড খড়ের আটচালা।
সে সুফী সাহেবের পিছনে পিছনে বৈঠকখানায় প্রবেশ করিল। দেখিল : ঘরে বহু লোক জানু পাতিয়া বসিয়া আছেন। বৈঠকখানার মাঝখানে দেওয়াল ঘেঁষিয়া অপেক্ষাকৃত উচ্চ আসনে মেহেদি-রঞ্জিত দাড়ি বিশিষ্ট একজন বৃদ্ধ লোক তাকিয়া হেলান দিয়ে আলবোলায় তামাক টানিতেছেন।
এমদাদ বুঝিল : ইনিই পীর সাহেব।
‘আসসালামু আলাইকুম’ বলিয়া সুফী সাহেব সোজা পীর সাহেবের নিকট উপস্থিত হইয়া হাঁটু পাতিয়া বসিলেন। পীর সাহেব সম্মুখস্থ তাকিয়ার উপর একটি পা তুলিয়া দিলেন। সুফী সাহেব সেই পায়ে হাত ঘষিয়া নিজের চোখে মুখে ও বুকে লাগাইলেন।
তৎপর পীর সাহেব তাঁর হাত বাড়াইয়া দিলেন। সুফী সাহেব তা চুম্বন করিয়া দাঁড়াইয়া উঠিলেন এবং পিছাইয়া-পিছাইয়া কিছু দূর গিয়া অন্যান্য সকলের ন্যায় জানু পাতিয়া বসিলেন।
পীর সাহেব এতক্ষণে কথা বলিলেন : কিরে বেটা,খবর কি? তুই কি এরই মধ্যে দায়েরায়ে হকিকতে মহব্বত ও জযবায়েযাতী-বনাম হোব্বে এশক হাসিল করিয়া ফেললি নাকি?
পীর সাহেবের এই ঠাট্টায় লজ্জা পাইয়া সুফী সাহেব মাথা নিচু করিয়া মাজা ঈষৎ উঁচু করিয়া বলিলেন,হযরত,বান্দাকে লজ্জা দিতেছেন!
পীর সাহেব তেমনি হাসিয়া বলিলেন : তা না হইলে নিজের চিন্তা ছাড়িয়া অপরের রুহের সুপারিশ করিতে আমার নিকট আসিলেন কেন? কই তোর সঙ্গী কোথায়? আহা! বেচারা বড়ই অশান্তিতে দিনপাত করিতেছে।
এই বলিয়া পীর সাহেব চক্ষু বুজিলেন এবং প্রায় এক মিনিট কাল ধ্যানস্থ থাকিয়া চক্ষু মেলিয়া বলিলেন: সে এই ঘরেই হাজির আছে দেখিতেছি।
উপস্থিত মুরিদগণের সকলে বিস্ময়ে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করিতে লাগিল। এমদাদ ভক্তি ও বিস্ময়ে স্তব্ধ হইয়া একদৃষ্টে পীর সাহেবের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। মেহেদি-রঞ্জিত দাড়ি-গোঁফের ভিতর দিয়া পীর সাহেবের মুখ হইতে এক প্রকার জ্যোতি বিকীর্ণ হইতে লাগিল।
সুফী সাহেব এমদাদকে আগাইয়া আসিতে ইশারা করিলেন। সে ধীরে ধীরে পীর সাহেবের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া সুফী সাহেবের ইঙ্গিতে অনভ্যস্ত হাতে কদম-বুসি করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া রহিল।
পীর সাহেব “বস বেটা,তোর ভাল হইবে। আহা,বড় গরীব!” বলিয়া আলবোলার নলে দম কষিলেন।
সুফী সাহেব আমতা-আমতা করিয়া বলিলেন : হযরত এর অবস্থা তত গরীব নয়। বেশ ভাল তালুক সম্পত্তি-
পীর সাহেব নলে খুব লম্বা টান কষিয়াছিলেন;কিন্তু মধ্যপথে দম ছাড়িয়া দিয়া মুখে ধোঁয়া লইয়াই বলিলেন : বেটা,তোরা আজিও দুনিয়ার ধন-দৌলত দিয়া ধনী-গরিব বিচার করিস। এটা তোদের বুঝিবার ভুল। আমি গরিব কথায় দুনিয়াবী গোরবৎ বুঝাই নাই। মুসলমানদের জন্য দুনিয়ার ধন-দৌলত হারাম। এই ধন-দৌলত এনসানের রুহানিয়ত হাসেলে বাধা জন্মায়,তার মধ্যে নফসানিয়ত পয়দা করে। আল্লাহতালা বলিয়াছেন : (আরবী ও উর্দু) বেশক দুনিয়ার ধন-দৌলত শয়তানের ওয়াস-ওয়াসা,ইহা হইতে দূরে পলায়ন কর। কিন্তু দুনিয়ার মায়া কাটান কি সহজ কথা? তোদের আমি দোষ দিই না। তোদের অনেকেই এখন যেকেরের দরজাতেই পড়িয়া আছিস। যেকরে জলী ও যেকরে খফী- এই দুই দরজার যেকের সারিয়া পরে ফেকেরের দরজায় পৌঁছিতে হয়। ফেকের হইতে যহুর এবং যহুর হইতে মোরাকেবা-মোশাহেদার কাবেলিয়ত হাসেল হয়। খোদার ফজলে আমি আরেফিন,সালেহীন ও সিদ্দিকিনের মোকামাতের বিভিন্ন দায়েরার ভিতর দিয়া যেভাবে এলমে-লাদুন্নির ফয়েজ হাসেল করিয়াছি,তোদের কলব অতটা কুশাদা হইতে অনেক দেরি অনেক-
-বলিয়া তিনি হুক্কার নলটা ছাড়িয়া দিয়া সোজা হইয়া বসিলেন এবং চোখ বুজিয়া ধ্যানস্থ হইলেন।
কিছুক্ষণ চোখ বুজিয়া থাকিয়া হাসিয়া উঠিলেন এবং চিৎকার করিয়া বলিলেন : কুদরতে-ইয্দানী,কুদরতে-ইয্দানী। মুরিদরা সব সে-চিৎকারে সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিলেন।
কিন্তু কেহ কোনও কথা জিজ্ঞাসা করিতে সাহস করিলেন না।
পীর সাহেব চিৎকার করিয়াই আবার চোখ বুজিয়াছিলেন। তিনি এবার ঈষৎ হাসিয়া চোখ মেলিয়া বলিলেন : আমরা কত বৎসর হইল এখানে বসিয়া আছি?
জনৈক মুরিদ বলিলেন : হযরত,বৎসর কোথায়? এই না কয়েক ঘণ্টা হইল।
পীর সাহেব হাসিলেন। বলিলেন : অনেক দেরি- অনেক দেরি। আহা বেচারারা চোখের বাহির আর কিছুই দেখিতে পায় না।
অপর মুরিদ বলিলেন : হুজুর কেবলা,আপনার কথা মোটেই বুঝিতে পারিলাম না।
পীর সাহেব মৃদু হাসিয়া বলিলেন : অত সহজে কি আর সব কথা বুঝা যায় রে বেটা? চেষ্টা কর,চেষ্টা কর।
মুরিদটি ছিলেন একটু আবদেরে রকমের। তিনি বায়না ধরিলেন : না কেবলা,আমাদিগকে বলিতেই হইবে। কেন আপনি বৎসরের কথা জিজ্ঞাসা করিলেন?
পীর সাহেব বলিলেন : ও-কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করিস না। তার চেয়ে অন্য কথা শোন। এই যে সাদুল্লাহ (সুফী সাহেবের নাম) একটি ছেলেকে আমার নিকট মুরিদ করিতে লইয়া আসিল,আমি সে-কথা কি করিয়া জানিতে পারিলাম? আজ তোমরা তাজ্জব হইতেছ। কিন্তু ইনশাআল্লাহ, যখন তোমরা মোরাকেবায়ে-নেসবতে-বায়নান্নাসে তালিম লইবে,তখন অপরের নেসবত সম্বন্ধে তোমাদের কলব আয়নার মতো রওশন হইয়া যাইবে। আলগরজ ইহাও খোদার এক শানে-আজিম। সাদুল্লাহ যখন আমার দস্ত-বুসি করে,তখন তার মুখের দিকে আমার নজর পড়িল এবং সঙ্গে সঙ্গে আমার রুহ সাদুল্লাহর রুহের দিকে মোতাওয়াজ্জাহ হইয়া গেল। সেখানে আমি দেখিলাম,সাদুল্লার রুহ আর একটা নূতন রুহের সঙ্গে আলাপ করিতেছে। উহাতেই আমি সব বুঝিয়া লইলাম। আল্লাহু আজিমুশশান।
বলিয়া পীর সাহেব একজন মুরিদকে হুক্কার দিকে ইঙ্গিত করিলেন।
মুরিদ হুক্কার মাথা হইতে চিলিম লইয়া তামাক সাজিতে বাহির হইয়া গেল।
পীর সাহেব বলিলেন : তোমরা আমার নিজের নুৎফার ছেলের মতো। তথাপি তোদের নিকট হইতে আমাকে অনেক গায়েবের কথা গোপন রাখিতে হয়। কারণ তোমরা সে-সমস্ত বাতেনি কথা বরদাশত করিতে পারিবে না। যেকের ও ফেকের দ্বারা কলব কুশাদা করিবার আগেই কোনও বড় রকমের নূরে তজল্লী তাতে ঢালিয়া দিলে তাতে কলব অনেক সময় ফাটিয়া যায়। এলমে-লাদুন্নি হাসেল করিবার আগেই আমি একবার লওহে-মাওফুযে উপস্থিত হইয়াছিলাম। তখন আমি মাত্র দায়েরায়ে-হকিকতে-লাতা আইউনে তালিম লইতেছিলাম। সায়েরে-নাযাবীর ফয়েজ তখনও আমার হাসেল হয় নাই। কাজেই আরশে-মওয়াল্লার পরদা আমার চোখের সামনে হইতে উঠিয়া যাইতেই আমি নূরে-ইয্দানী দেখিয়া বেহুশ হইয়া পড়িলাম। তারপর আমার জেসমের মধ্যে আমার রুহের সন্ধান না পাইয়া আমার মুর্শেদ-কেবলা- তোরা তো জানিস আমার ওয়ালেদ সাহেবই আমার মুর্শেদ -লওহে মাহফুজ হইতে আমার রুহ্ আনিয়া আমার জেসমের মধ্যে ভরিয়া দেন,এবং নিজের দায়রার বাহিরে যাওয়ার জন্য আমাকে বহুৎ তম্বিহু করেন। কাজেই দেখিতেছিস,কাবেলিয়ত হাসেল না করিয়া কোনও কাজে হাত দিতে নাই। খানিকক্ষণ আগে আমি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম : আমরা কত বৎসর যাবত এখানে বসিয়া আছি? শুনিয়া তোরা অবাক হইয়াছিলি। কিন্তু এর মধ্যে যে ঘটনা ঘটিয়াছে,তা শুনিলে তো আরো তাজ্জব হইয়া যাইবি। সে জন্যই সে কথা বলিতে চাই না। কিন্তু কিছু কিছু না বলিলে তোরা শিখবি কোথা হইতে? তাই সে কথা বলাই উচিত,মনে করিতেছি। সাদুল্লাহ এখানে আসিবার পর আমি আমার রুহকে ছাড়িয়া দিয়াছিলাম। সে তামাম দুনিয়া ঘুরিয়া সাত হাজার বৎসর কাটাইয়া তারপর আমার জেসমে পুনরায় প্রবেশ করিয়াছে। এই সাত হাজার বৎসরে কত বাদশাহ ওফাত করিয়াছে,কত সুলতানাৎ মেসমার হইয়াছে,কত লড়াই হইয়াছে;সব আমার সাফ-সাফ মনে আছে। সেরেফ এইটুকুই বলিলাম; ইহার বেশি শুনিলে তোদের কলব ফাটিয়া যাইবে।
ইতিমধ্যে তামাক আসিয়াছিল।
পীর সাহেব নল হাতে লইয়া ধীরে ধীরে টানিতে লাগিলেন।
সভা নিস্তব্ধ রহিল। কলব ফাটিয়া যাইবার ভয়ে কেহ কোনও কথা জিজ্ঞাসা করিল না।
এমদাদ পীর সাহেবের কথা কান পাতিয়া শুনিতেছিল। কৌতূহল ও বিস্ময়ে সে অস্থিরতা বোধ করিতে লাগিল।
সে স্থির করিল,ইহার কাছে মুরিদ হইবে।
চার
পীর সাহেব অনেক নিষেধ করিলেন। বলিলেন : বাবা,সংসার ছাড়িয়া থাকিতে পারবে না,তাসউওয়াফ বড় কঠিন জিনিস ইত্যাদি।
কিন্তু এমদাদ তাওয়াজ্জোহ লইল।
পীর সাহেব নিজের লতিফায় যেকের জারি করিয়া সেই যেকের এমদাদের লতিফায় নিক্ষেপ করিলেন।
এমদাদ প্রথম লতিফা যেকরে-জলী আরম্ভ করিল।
সে দিবানিশি দুই চোখ বুজিয়া পীর সাহেবের নির্দেশমত ‘এলহু’ ‘এলহু’ করিতে লাগিল।
পীর সাহেব বলিয়াছিলেন : খেলওয়াৎ-দর-অঞ্জুমান দ্বারা নিজের কলবকে স্বীয় লতিফার দিকে মুতাওয়াজ্জাহ করিতে পারিলে তার কলবে যাতে আহাদিয়াতের ফয়েজ হাসেল হইবে এবং তার রুহ ঘড়ির কাঁটার ন্যায় কাঁপিতে থাকিবে।
কিন্তু এমদাদ অনেক চেষ্টা করিয়াও তার কলবকে লতিফায় মুতাওয়াজ্জাহ করিতে পারিল না। তৎপরিবর্তে তার চোখের সামনে পীর সাহেবের মেহেদি-রঞ্জিত দাঁড়ি ও তার রূপা-বাঁধানো গড়গড়ার ছবি ভাসিয়া উঠিতে লাগিল।
ফলে তার কলবে যাতে-আহাদিয়তের ফয়েজ হাসেল হইয়া তার রুহকে ঘড়ির কাঁটার মতো কাঁপাইবার পরিবর্তে ফুফু-আম্মার স্মৃতি বাড়ি যাইবার জন্য তার মনকে উচাটন করিয়া তুলিতে লাগিল।
দিন যাইতে লাগিল।
অনাহারে অনিদ্রায় এমদাদের চোখ দুটি মস্তকের মধ্যে প্রবেশ করিল। তার শরীর নিতান্ত দুর্বল ও মন অত্যন্ত অস্থির হইয়া পড়িল।
সে বুঝিল,এইভাবে আরও কিছুদিন গেলে তার রুহু বস্তুতই জেসম হইতে আযাদ হইয়া আলমে-আমরে চলিয়া যাইবে।
সে স্থির করিল : পীর সাহেবের কাছে নিজের অক্ষমতার কথা নিবেদন করিয়া সে একদিন বিদায় হইবে।
কিন্তু বলি বলি করিয়াও কথাটা বলিতে পারিল না।
একটা নূতন ঘটনায় সে বিদায়ের কথাটা আপাতত চাপিয়া গেল! দূরবর্তী একস্থানে মুরিদগণ পীর সাহেবকে দাওয়াত করিল।
প্রকাণ্ড বজরায় একমণ ঘি,আড়াই মণ তেল,দশ মণ সরু চাউল,তিনশত মুরগী,সাত সের অম্বুরি তামাক এবং তেরজন শাগরেদ লইয়া পীর সাহেব ‘মুরিদানে’ রওয়ানা হইলেন।
পীর সাহেবের ভ্রমণ বৃত্তান্ত ইংরেজিতে লিখিয়া কলিকাতার সংবাদপত্রে পাঠাইবার জন্য এমদাদকেও সঙ্গে লওয়া হইল। নদীর সৌন্দর্য, নদীপারের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এমদাদের কাছে বেশ লাগিল।
পীর সাহেব গন্তব্যস্থানে উপস্থিত হইলেন।
তিনি মুরিদগণের নিকট যে অভ্যর্থনা পাইলেন,তাহা দেখিলে অনেক রাজা-বাদশাহ রাজত্ব ছাড়িয়া মোরাকেবা-মোশাহেদায় বসিতেন।
পীর সাহেব গ্রামের মোড়লের বাড়িতে আস্তানা করিলেন।
বিভিন্ন দিন বিভিন্ন মুরিদের বাড়িতে বিরাট ভোজ চলিতে লাগিল।
পীর সাহেবের একটু দূরে বসিয়া গুরুভোজ করিয়া এমদাদ এত দিনের কৃচ্ছ সাধনার প্রতিশোধ লইতে লাগিল। ইহাতে প্রথম প্রথম তার একটু পেটে পীড়া দেখা দিলেও শীঘ্রই সে সামলাইয়া উঠিল এবং তার শরীর হৃষ্টপুষ্ট ও চেহারা বেশ চিকনাই হইয়া উঠিতে লাগিল।
পীর সাহেবের ভাত ভাঙিবার কসরত দেখার সুযোগ ইতিপূর্বে এমদাদের হয় নাই। এইবার সে ভাগ্য লাভ করিয়া এমদাদ বুঝিল : পীর সাহেবের রুহানীশক্তি যত বেশিই থাকুক না কেন,তাঁর হজমশক্তি নিশ্চয়ই তার চেয়ে বেশি।
সন্ধ্যায় পুরুষদের জন্য মজলিশ বসিত।
রাতে এশার নামাজের পর অন্দর মহলে মেয়েদের জন্য ওয়াজ হইত। কারণ অন্য সময় মেয়েদের কাজে ব্যস্ত থাকিতে হয়।
সেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ ছিল।
স্ত্রীলোকদিগকে ধর্মকথা বুঝাইতে একটু দেরি হইত। কারণ মেয়েলোকের বুদ্ধিসুদ্ধি বড় কম- তারা নাকেস-আকেল।
কিন্তু বাড়িওয়ালার ছেলে রজবের সুন্দরী স্ত্রী কলিমন সম্বন্ধে পীর সাহেবের ধারণা ছিল অন্যরকম। মেয়ে-মজলিশে ওয়াজ করিবার সময় তিনি ইহারই দিকে ঘন-ঘন দৃষ্টিপাত করিতেন।
তিনি অনেক সময় বলিতেন : তাসাউওয়াফের বাতেনী কথা বুঝিবার ক্ষমতা এই মেয়েটার মধ্যেই কিছু আছে। ভাল করিয়া তাওয়াজ্জোহ দিলে তাকে আবেদা রাবেয়ার দরজায় পৌঁছাইয়া দেওয়া যাইতে পারে।
এশার নামাজের পর দাঁড়িয়ে চিরুনি ও কাপড়ে আতর লাগান সুন্নত এবং পীর সাহেব সুন্নাতের একজন বড় মো’তেকাদ ছিলেন।
ওয়াজ করিবার সময় পীর সাহেবের প্রায়ই জযবা আসিত।
সে জযবাকে মুরিদগণ ‘ফানাফিল্লাহ’ বলিত।
এই ফানাফিল্লাহ্র সময় পীর সাহেব ‘জ্বলিয়া গেলাম’ ‘পুড়িয়া গেলাম’ বলিয়া চিৎকার করিয়া চিৎ হইয়া শুইয়া পড়িতেন। এই সময় পীর সাহেবের রুহ আলমে-খালক হইতে আলমে-আমরে পৌঁছিয়া রুহে ইযদানির সঙ্গে ফানা হইয়া যাইত এবং নূরে ইয়াদানি তাঁর চোখের উপর আসিয়া পড়িত। কিন্তু সে নূরের জলওয়া পীর সাহেবের চক্ষে সহ্য হইত না বলিয়া তিনি এইরূপ চিৎকার করিতেন।
তাই জযবার সময় একখণ্ড কাল মখমল দিয়া পীর সাহেবের চোখ-মুখ ঢাকিয়া দিয়া তাঁর হাত-পা টিপিয়া দিবার ওসিয়ত ছিল।
এইরূপ জযবা পীর সাহেবের প্রায়ই হইত।
-এবং মেয়েদের সামনে ওয়াজ করিবার সময়েই একটু বেশি হইত।
এই সব ব্যাপারে এমদাদের মনে একটু খট্কার সৃষ্টি হইল।
কিন্তু সে জোর করিয়া মনকে ভক্তিমান রাখিবার চেষ্টা করিতে লাগিল।
সে চেষ্টায় সফল হইবার আগেই কিন্তু ও-পথে বাধা পড়িল। প্রধান খলিফা সুফী বদরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে পীর সাহেবকে প্রায়ই কানাকানি করিতে দেখিয়া এমদাদের মনের খট্কা বাড়িয়া গেল। তার মনে পীর সাহেবের প্রতি একটা দুর্নিবার সন্দেহের ছায়াপাত হইল।
এমন সময় পীর সাহেব অত্যন্ত অকস্মাৎ একদিন ঘোষণা করিলেন : তিনি আর দু-এক দিনের বেশি সে অঞ্চলে তশরিফ রাখিবেন না।
এই গভীর শোক সংবাদে শাগরেদ-মুরিদগণের সকলেই নিতান্ত গমগিন হইয়া পড়িল।
জনৈক শাগরেদ সুফী সাহেবের ইশারায় বলিলেন : হুজুর কেবলা আপনি একদিন বলিয়াছিলেন;এবার এ-অঞ্চলের মুসলমানগণকে কেরামতে-নেসবতে বায়নান্নাস দেখাইবেন? তা না দেখাইয়াই কি হুজুর এখান হইতে তশরিফ লইয়া যাইবেন? এখানকার মুরিদগণের অনেকেই বলিতেছেন : হুজুর মাঝে মাঝে কেরামত দেখান না বলিয়া উম্মী মুরিদগণের অনেকেই গোমরাহ হইয়া যাইতেছে। মওলানা লকবধারী ঐ ভণ্ডটা ও-পাড়ার অনেক মুরিদকে ভাগাইয়া নিতেছে; সে নাকি বৎসর বৎসর একবার আসিয়া কেরামত দেখাইয়া যান।
পীর সাহেব গম্ভীর মুখে বলিলেন : (আরবী ও উর্দু) আল্লাহ্ই কেরামতের একমাত্র মালিক,মানুষের সাধ্য কি কেরামত দেখায়? ও-সব শয়তানের চেলাদের কথা আমার সামনে বলিও না। তবে হ্যাঁ,মোরাকেবায়ে-নেসবতে বায়নান্নাস-এর তরকিব দেখাইব বলিয়াছিলাম বটে, কিন্তু তার আর সময় কোথায়?
সমস্ত সাগরেদ ও মুরিদগণ সমস্বরে বলিয়া উঠিলেন : না হুজুর,সময় করিতেই হইবে,এবার উহা না দেখিয়া ছাড়িব না।
অগত্যা পীর সাহেব রাজি হইলেন।
স্থির হইল,সেই রাত্রেই মোরাকেবা বসিবে।
সারাদিন আয়োজন চলিল।
রাত্রে মৌলুদের মহফেল বসিল। হযরত পয়গম্বর সাহেবের অনেক অনেক মোওয়াজেযাত বর্ণিত হইল।
মৌলুদ শেষে খাওয়া-দাওয়া হইল এবং তৎপর মোরাকেবার বৈঠক বসিল।
পাঁচ
পীর সাহেব বলিলেন : আজ তোমাদের আমি যে মোরাকেবার তরকিব দেখাইব,ইহা দ্বারা যে-কোনও লোকের রুহের সঙ্গে কথা বলিতে পারি। আমি যদি নিজে মোরাকেবায় বসি,তবে সেই রুহ গোপনে আমার সঙ্গে কথা বলিয়া চলিয়া যাইবে। তোমরা কিছুই দেখিতে পাইবে না। তোমাদের মধ্যে একজন মোরাকেবায় বস,আমি তার রুহের দিকে তোমরা যার কথা বলিবে তার রুহের তাওয়াজ্জোহ দেখাইয়া তারই রুহের ফয়েজ হাসিল করিব। তৎপর তোমরা যে-কেহ তার সঙ্গে কথা বলিতে পারিবে।
সকলে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করিতে লাগিল।
কেহই কোন কথা বলিল না, মোরাকেবায় বসিতে কেহই অগ্রসর হইল না।
এমদাদ দাঁড়াইয়া বলিল : আমি বসিব।
পীর সাহেব একটু হাসিলেন।
বলিলেন : বাবা,মোরাকেবা অত সোজা নয়,তুই আজিও যেকরে খফী আমল করিস নাই,মোরাকেবায় বসিতে চাস?
বলিয়া তিনি হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন।
দেখাদেখি উপস্থিত সকলেই হাসিয়া উঠিল।
লজ্জায় এমদাদের রাগ হইল। সে বসিয়া পড়িল।
পীর সাহেব আবার বললেন : কি,আমরে মুরিদগণের মধ্যে আজও কারও এতদূর রুহানী তরক্কী হাসেল হয় নাই, যে মোরাকেবায় বসিতে পারে? আমার খলিফাদের মধ্যেও কেহ নাই?
বলিয়া তিনি শাগরেদদের দিকে দৃষ্টি ফিরাইলেন।
প্রধান খলিফা সুফী সাহেব উঠিয়া বলিলেন : হুজুর কেবলা কি তবে বান্দাকে হুকুম করিতেছেন? আমি ত আপনার আদেশে কতবার মোরাকেবায়-নেসবতে-বায়নান্নাসে বসিয়াছি। কোনও নূতন লোককে বসাইলে হইত না?
সুফী সাহেব আরও অনেকবার বসিয়াছেন শুনিয়া মুরিদগণের অন্তরে একটু সাহসের উদ্রেক হইল।
তারা সকলে সমস্বরে বলিল : আপনিই বসুন,আপনিই বসুন।
অগত্যা পীর সাহেবের আদেশে সুফী সাহেব মোরাকেবায় বসিলেন।
পীর সাহেব উপস্থিত দর্শকদের দিকে চাহিয়া বলিলেন : কার রুহের ফয়েজ হাসিল করিব?
মুরিদগণের মুখের কথা যোগাইবার আগেই জনৈক সাগরেদ বলিলেন : এই মাত্র মৌলুদ-শরীফ হইয়াছে;হযরত পয়গম্বর সাহেবের মোয়াজেযা বয়ান হইয়াছে। তাঁরই রুহ আনা হোক।
সকলেই খুশী হইয়া বলিলেন : তাই হউক,তাই হউক।
তাই হইল।
সুফী সাহেব আতর-সিক্ত মুখমলের গালিচায় তাকিয়া হেলান দিয়া বসিলেন। চারিদিকে আগরবাতি জ্বালাইয়া দেওয়া হইল। মেশক্ যাফরান ও আতরের গন্ধে ঘর ভরিয়া গেল।
পীর সাহেব তাঁর প্রধান খলিফার রুহে শেষ পয়গম্বর হযরত মোহাম্মদের রুহ-মোবারক নাযেল করিবার জন্যে ঠিক তাঁর সামনে বসিলেন।
শাগরেদরা চারিদিক ঘিরিয়া বসিয়া মিলিত-কণ্ঠে সুর করিয়া দরুদ পাঠ করিতে লাগলেন। পীর সাহেব কখনও জোরে কখনও বা আস্তে নানা প্রকার দোওয়া কালাম পড়িয়া সুফী সাহেবের চোখে-মুখে ফুঁকিতে লাগিলেন।
কিছুক্ষণ ফুঁকিবার পর শাগরেদগণকে চুপ করিতে ইঙ্গিত করিয়া পীর সাহেব বুকে হাত বাঁধিয়া একদৃষ্টে সুফী সাহেবের বুকের দিকে চাহিয়া রহিলেন।
সুফী সাহেবের বুকের দুইটা বোতাম খুলিয়া তাঁর বুকের খানিকটা অংশ ফাঁক করিয়া দেওয়া হইয়াছিল। পীর সাহেব তাঁর দৃষ্টি সেইখানেই নিবদ্ধ করিলেন।
অল্পক্ষণ মধ্যেই সুফী সাহেবের শরীর কাঁপিতে লাগিল। কম্পন ক্রমেই বাড়িয়া গেল। সুফী সাহেব ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলিতে লাগিলেন এবং হাত পা ছুঁড়িতে ছুঁড়িতে মূর্ছিতের ন্যায় বিছানায় লুটাইয়া পড়িলেন।
পীর সাহেব মুরিদগণের দিকে চাহিয়া বলিলেন : বদর বাবাজীর একটু তকলিফ হইল!
কি করিব? পরের রুহের উপর অন্য রুহের ফয়েজ হাসেল আসানির সঙ্গে করে বেলকুল না-মোমকেন। যা হউক,হযরতের রুহ তশরিফ আনিয়াছেন। তোমরা সকলে উঠিয়া কেয়াম কর।
-বলিয়া তিনি স্বয়ং উঠিয়া পড়িলেন। সকলেই দাঁড়াইয়া সমন্বরে পড়িতে লাগিল : ইয়া নবী সালাম আলায় কা ইত্যাদি।
কেয়াম ও দরুদ শেষ হইলে অভ্যাসমত অনেকেই বসিয়া পড়িল।
পীর সাহেব ধমক দিয়া বলিলেন : হযরতের রুহে পাক এখনও এই মজলিশে হাজির আছেন,তোমরা কেহ বসিতে পারিবে না। কার কি সওয়াল করিবার আছে করিতে পার।
এমদাদ একটা বিষয় ধাঁধায় পড়িয়া গেল। সে ইহাকে কিছুতেই সত্য বলিয়া মানিয়া লইতে পারিল না।
-মাথায় এক ফন্দি আঁটিয়া অগ্রসর হইয়া বলিল : কেবলা আমি কোন সওয়াল করিতে পারি?
পীর সাহেব চোখ গরম করিয়া বলিলেন : যাও না,জিজ্ঞাসা কর না গিয়া!
-বলিয়া কণ্ঠস্বর অপেক্ষাকৃত মোলায়েম করিয়া আবার বলিলেন : বাবা সকলের কথাই যদি রুহে পাকের কাছে পৌঁছিত,তবে দুনিয়ার সব মানুষই ওলি-আল্লাহ হইয়া যাইত।
এমদাদ তথাপি সুফী সাহেবের দিকে চাহিয়া বলিল : আপনি যদি হযরত পয়গম্বর সাহেবের রুহ হন,তবে আমার দরুদ-সালাম জানিবেন।
হযরতের রুহ কোন জবাব দিলো না।
পীর সাহেব এমদাদের কাঁধে হাত দিয়ে তাকে একদিকে ঠেলিয়া দিয়া বলিলেন : অধিকক্ষণ রুহে পাককে রাখা বে-আদবি হইবে। তোমাদের যদি কাহারও সিনা সাফ হইয়া থাকে, তবে আসিয়া যে কোন সওয়াল করিতে পার।
-বলিতেই পীর সাহেবের অন্যতম খলিফা মওলানা বেলায়েতপুরী সাহেব আসর হইয়া ‘আসসালামো আলায়কুম ইয়া রসূলুল্লাহ’ বলিয়া সুফী সাহেবের সামনে দাঁড়াইলেন।
সকলে বিস্মিত হইয়া শুনিল সুফী সাহেবের মুখ দিয়া বাহির হইল : ওয়া আলায়কুমস্ সালাম,ইয়া উম্মতী।
মওলানা সাহেব বলিলেন : হে রেসালাত-পনা, সৈয়দুল কাওনায়েন,আমি আপনার খেদমতে একটা আরজ করিতে চাই।
আওয়াজ হইল : শীগগির বল,আমার আর দেরী করিবার উপায় নাই।
মওলানা : আমাদের পীর দস্তগির কেবলা সাহেব নূরে-ইযদানির জলওয়া সহ্য করিতে পারেন না,ইহার কারণ কি? তার আমলে কি কোনও গলদ আছে?
কঠোর সুরে উত্তর হইল : হ্যাঁ,আছে।
পীর সাহেব শিহরিয়া উঠিলেন। তিনি কাঁদ-কাঁদ সুরে নিজেই বলিলেন : কি গলদ আছে,‘ইয়া রসূলুল্লাহ? আমার পঞ্চাশ বৎসরের রঞ্জকশি কি তবে সব পণ্ড হইয়াছে?- বলিয়া পীর সাহেব কাঁদিয়া ফেলিলেন।
সুফী সাহেবের অচেতন দেহের মধ্যে হইতে আওয়াজ হইল : হে আমার পিয়ারা উম্মত, ঘাবড়াইও না। তোমার উপর আল্লাহর রহমত হইবে। তুমি মারফত খুঁজিতেছ। কিন্তু শরীয়ত ত্যাগ করিয়া কি মারফত হয়?
পীর সাহেব হাত কচলাইয়া বলিলেন : হুজুর, আমি কবে শরীয়ত অবহেলা করিলাম?
উত্তর হইল : অবহেলা কর নাই, কিন্তু পালনও কর নাই। আমি শরিয়তে চার বিবি হালাল করিয়াছি। কিন্তু তোমার মাত্র তিন বিবি। যারা সাধারণ দুনিয়াদার মানুষ তাদের এক বিবি হইলেও চলিতে পারে। কিন্তু যারা রুহানী ফয়েজ হাসিল করিতে চায়,তাদের চার বিবি ছাড়া উপায় নাই! আমি চার বিবির ব্যবস্থা কেন করিয়াছি,তোমরা কিছু বুঝিয়াছ? চার দিয়াই এ দুনিয়া,চার দিয়াই আখেরাত। চারদিকে যা দেখ সবই খোদা চার চিজ দিয়া পয়দা করিয়াছেন। চার চিজ দিয়া খোদাতা’লা আদম সৃষ্টি করিয়া তার হেদায়েতের জন্য চার কেতাব পাঠাইয়াছেন। সেই হেদায়েত পাইতে হইলে মানুষকে চার এমামের চার তরিকা মানিয়া চলিতে হয়। এইভাবে মানুষকে চারের ফাঁদে ফেলিয়া খোদাতা’লা চার কুরসির অন্তরালে লুকাইয়া আছেন। এই চারের পরদা ঠেলিয়া আলমে-আমরে নূরে-ইয্দানিতে ফানা হইতে হইবে, দুনিয়াতে চার বিবির ভজনা করিতে হইবে।
পীর সাহেব সকলকে শুনাইয়া হযরতের রুহের দিকে চহিয়া বলিলেন : এই বৃদ্ধ বয়সে আবার বিবাহ করিব?
-তুমি বৃদ্ধ? আমি ষাট বৎসর বয়সে নবম বার বিবাহ করিয়াছিলাম।
পীর সাহেব মিনতি ভরা কণ্ঠে বলিলেন : না রেসালাত-পানা আমি আর বিবাহ করিব না।
-না কর,ভালই। কিন্তু তোমার রুহানী কামালিয়ত হাসেল হইবে না, তুমি নূরে- ইযদানির জলওয়া বরদাশত করিতে পারিবে না। তোমার মুরিদানের কেহই নফসানিয়তের হাত এড়াইতে পারিবে না।
পীর সাহেব হাঁটু গাড়িয়া বসিয়া বলিলেন : আমি নিজের জন্য ভাবি না ইয়া রসূলুল্লাহ; কিন্তু যখন আমার মুরদিগণের অনিষ্ট হইবে,তখন বিবাহ করিতে রাজি হইলাম। কিন্তু আমি এক বুড়িকে বিবাহ করিব।
-তুমি তওবা আসতাগফার পড়। তুমি খোদার কলম রদ করিতে চাও? তোমার বিবাহ ঠিক হইয়া আছে। বেহেশতে আমি তার ছবি দেখিয়া আসিয়াছ।
-সে কে,ইয়া রসূলুল্লাহ?
-এই বাড়ির তোমার মুরিদের ছোট ছেলে রজবের স্ত্রী কলিমন।
-ইয়া রসূলুল্লাহ,আমি মুরিদের স্ত্রীকে বিবাহ করিব? সে যে আমার বেটার বউ-এর শামিল।
-ইয়া উম্মতি,আমি আমার পালিত পুত্র যায়েদের স্ত্রীকে নিকাহ্ করিয়াছিলাম,আর তুমি একজন মুরিদের স্ত্রীকে নিকাহ্ করিতে পারিবে না?
ইয়া রসূল্লাহ,সে যে সধবা।
রজবকে বল স্ত্রীকে তালাক দিতে। কলিমন তোমার জন্যই হালাল। এ মারফতি নিকায় ইদ্দত পালনের প্রয়োজন হইবে না। আমি আর থাকিতে পারি না। চলিলাম। অররহহুমাতুল্লাহ আলায়কুম,ইয়া উম্মতি।
মূর্ছিত সুফী সাহেব একটা বিকট চিৎকার করিলেন। পীর সাহেবের অপর অপর শাগরেদরা তাঁকে সজোরে পাখার বাতাস করিতে লাগিলেন।
মুরিদগণের সনির্বন্ধ অনুরোধ সত্ত্বেও পীর সাহেব মাথা নাড়িয়া বলিতে লাগিলেন : চাই না আমি রুহানী কামালিয়ত। আমি মুরিদের বউকে বিবাহ করিতে পারিব না।
গ্রাম্য মুরিদগণ আখেরাতের ভয়ে পীর সাহেবের অনেক হাতে-পায়ে ধরিল। পীর সাহেব অটল।
এই সময় প্রধান খলিফা সুফী সাহেব স্মরণ করাইয়া দিলেন : এই নিকাহ না করিলে কেবল পীর সাহেবের একারই রুহানী লোকসান হইবে না, তাঁর মুরিদগণের সকলের রুহের উপরও বহুত মুসিবত পড়িবে। তখন পীর সাহেব অগত্যা নিজের রেজামন্দী জানাইয়া দাঁড়িতে হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিতে লাগিলেনঃ ছোবহান আল্লাহ! এ সবই কুদরতে এলাহী! তাঁরই শানে-আজিম! আল্লাহ্ পাক নিজেই কোরান-মজিদ ফরমাইয়াছেন (আরবী ও উর্দু)…।
বাপ-চাচা পাড়া-পড়শীর অনুরোধে,আদেশে,তিরস্কারে ও অবশেষে উৎপীড়নে তিষ্ঠিতে না পারিয়া রজব তার এক বছর আগে বিয়া-করা আদরের স্ত্রীকে তালাক দিল এবং কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছিতে মুছিতে বাড়ির বাহির হইয়া গেল।
কলিমনের ঘন-ঘন মূর্ছার মধ্যে অতিশয় ত্রস্ততার সঙ্গে শুভকার্য সমাধান হইয়া গেল।
এমদাদ স্তম্ভিত হইয়া বর বেশে সজ্জিত পীর সাহেবের দিকে চাহিয়া ছিল। তার চোখ হইতে আগুন ঠিকরাইয়া বাহির হইতেছিল।
এইবার তার চেতনা ফিরিয়া আসিল। সে এক লাফে বরাসনে-উপবিষ্ট পীর সাহেবের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া তাঁর মেহেদি-রঞ্জিত দাড়ি ধরিয়া হেচকা টান মারিয়া বলিল : রে ভণ্ড শয়তান! নিজের পাপ-বাসনা পূর্ণ করিবার জন্য দুইটা তরুণ প্রাণ এমন দুঃখময় করিয়া দিতে তোর বুকে বাজিল না?
আর বলিতে পারিল না। শাগরেদ-মুরিদরা সকলে মার মার করিয়া আসিয়া এমদাদকে ধরিয়া ফেলিল এবং চড়-চাপড় মারিতে লাগিল।
এমদাদ গ্রামের মাতব্বর সাহেবের দিকে চাহিয়া বলিল : তোমরা নিতান্ত মূর্খ। এই ভণ্ডের চালাকি বুঝিতে পারিতেছ না? নিজে শখ মিটাইবার জন্য যে হযরত পয়গম্বর সাহেবকে লইয়া তামাসা করিয়া তাঁর অপমান করিতেছে। তোমরা এই শয়তানকে পুলিশে দাও।
পীর সাহেবের প্রতি এমদাদের বেয়াদবিতে মুরিদরা ইতিপূর্বে একটু অসন্তুষ্ট হইয়া ছিল। এবার তার মস্তিষ্ক বিকৃতি সম্বন্ধে তারা নিঃসন্দেহ হইল। মাতব্বর সাহেব হুকুম করিলেন : এই পাগলটা আমাদের হুজুর কেবলার অপমান করিতেছে। তোমরা কয়েকজন ইহাকে কান ধরিয়া গ্রামের বাহির করিয়া দিয়া আস।
ভূলুণ্ঠিত পীর সাহেব ইতিমধ্যে উঠিয়া ‘আস্তাগফেরুল্লাহ’ পড়িতে পড়িতে তাঁর আলুলায়িত দাঁড়িতে আঙ্গুল দিয়া চিরুনি করিতেছিলেন। মাতব্বর সাহেবের হুকুমের পিঠে তিনি হুকুম করিলেন : দেখিস বাবারা,ওকে বেশি মারপিঠ করিস না। ও পাগল। ওর মাথা খারাপ। ওর বাপ ওকে আমার হাতে সঁপিয়া দিয়াছিল। অনেক তাবিজ দিলাম। কিন্তু কোনও ফল হইল না। খোদা যাকে সাফা না দেন,তাকে কে ভালো করিতে পারে? (আরবী ও উর্দু)।
এই গল্পটির নাট্যায়ন কেন্দ্র করে না বছর দেড়েক আগে সাতক্ষীরায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ভয়াবহ হামলা হল? নাকি আমার ভুল হচ্ছে?
এই গল্প নিঃসন্দেহে আজকের বাংলাদেশে প্রকাশ করলে বেজায় মুশকিল হত। তেমনি লাল সালু, আবদুল্লাহ (আমরা মেট্রিকে পড়েছি) এসব প্রকাশ করলেও ব্লাস্ফেমির অভিযোগে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল।
আবুল মনসুর আহমেদের আরেকটি বিখ্যাত সুখপাঠ্য বই আছে, “গালিভরের সফরনামা”।
ভদ্রলোকে বেশ উদারচেতা হলেও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার মনে হয়েছে কিছুটা কনফিউজিং।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যা, লেখকের মধ্যে বিস্তর সমস্যা ছিল। তবে যা লেখেছেন সেগুলোর যে কোনো তুলনা নেই!
গল্পটিকে নাট্যায়ন করতে গিয়ে একাধিকবার গণ্ডগোলের খবর শুনেছি। ওয়ালীউল্লাহ এর ‘লালসালু’ নিয়েও তাই।
@আদিল মাহমুদ, নাটকটিতে অনেক কাটাছিঁড়া করতে হয়েছে। আমি অনেক দিন দেশের বাইরে। নোমানের (বন্ধু) খবর পেয়েছিলাম নাটকটি মঞ্চস্ত হয়েছে। তবে আমি আরেকটু বিশদ জেনে আপনাকে জানাবো। অর্থাৎ কোন দলের নাটক, কবে হয়েছে, ইত্যাদি।
ভাই সৈকত, এই গল্পটি আমার অনেক স্মৃতির মূল ধরে টানাটানি করে। ১৯৯৮ সালের দিকে আমরা মতিঝিল এজিবি কলোনিতে থাকতাম। খুব সম্ভব ডিগ্রির বাংলা বইয়ে এই গল্পটি ছিল। একদিন গল্পটি পড়ে আমি আর নোমান নামে এক বন্ধু অভিভূত হয়ে যাই। আমরা টুকটাক মহল্লা কেন্দ্রিক নাটক করতাম। কলোনির ছোট ভাইদের নিয়ে হুজুর কেবলা নাটকটি মঞ্চস্ত করবার পরিকল্পনা করলাম। নাট্যরুপও দিলাম। আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে টানা এক মাস কলোনির ছাদে রিহারসেল করেও নাটকটিকে দাঁড় করাতে পারিনি। আমি বিদেশ চলে এলাম। বন্ধু নোমান এখনও দেশে থাকে এবং একটি নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত। ঐ নাট্যদলটি বছর দুয়েক আগে আমার আর নোমানের নাট্যরূপ দেওয়া হুজুর কেবলা নাটকটি মঞ্চস্ত করেছে।
অনেক প্যাচাল পাড়লাম। একটু নস্টালজিক হয়ে গিয়েছি পোস্টটা পড়ে।
ভাল লাগলো।
[…] কথায় আসি। মূল গল্পটি সৈকত চৌধুরীর নিজস্ব পাতায় আছে। লেখাটি প্রকাশের […]
এখানে স্বার্থগত কারনে ধর্মীয় ঘটনার অপব্যাখ্যার জিনিসটা দেখানো হয়েছে। এই আবুল মনসুর আহমদই ইসলামের প্রচারপদ্ধতির উপর বই লিখেছেন। মনকে মুক্ত করে গল্প পড়া উচিৎ নইলে গল্প বুঝতে ভুল হওয়া স্বাভাবিক।
ধর্মের নামে ভন্ডামীর প্রকৃষ্ঠ উদাহরন এই গল্পটি। এই ধরনের গল্প বা সত্যিকারের ঘটনা (এরুপ ঘটনা বাংলাদেশে অহরহ এখনো ঘটছে) আরো বেশি বেশি মানুষের গোচরে আনা উচিৎ। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে , ইসলামে /কোরানে পীর , ফকির ও প্রচলিত আউলিয়া সুফীদের কোন স্থান নেই। এরা সকলেই ভন্ড ও এরা ভ্ন্ডামী করে তাদেরি রচিত হাদীস ও বিকৃত ইসলামের ইতিহাসের দোহাই দিয়ে।
লেখককে ধন্যবাদ , এমন একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য।
@ফারুক, দুদিন ধরে সামুতে আপনার কিছু পোস্টেও হাদিস নিয়ে এই ধরনের কথা দেখছি। তাহলে কেন যে বলা হয় কোরআনের অর্থ বুঝতে গেলে ঐসবের দরকার!
কিছুটা কনফিউজ হয়ে যাচ্ছি।
@শ্রাবণ আকাশ,
যারা কোরানকে আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করে , তাদের কনফিউজ হওয়ার সুযোগ নেই। কারন কোরানেই বলা হয়েছে , কোরান সবিস্তারে ব্যাখ্যাসহ অবতীর্ণ হয়েছে। কোরানের কোথাও বলা হয়নি , রসূল কোরানের ব্যাখ্যাকারী।
এখন যারা বলে থাকে কোরান বুঝতে হলে রসূলের হাদীসে প্রয়োজন , তারা কি কোরানে লিখিত আল্লাহর বাণী/দাবীকেই অস্বীকার করছে না?
সুরা আল-হাদীদ(৫৭) আয়াত ১৭ – আল্লাহ এই আয়াতে দাবী করেছেন যে তিনি কোরানকে পরিস্কার সহজ (clear) করে দিয়েছেন , যাতে সকলেই বুঝতে পারে।
“তোমরা জেনে রাখ , আল্লাহ্ই ভূ-ভাগকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। আমি পরিস্কারভাবে তোমাদের জন্য আয়াতগুলো ব্যক্ত করেছি , যাতে তোমরা বোঝ।“
@ফারুক,
কোরানেই বলা হয়েছে , কোরান সবিস্তারে ব্যাখ্যাসহ অবতীর্ণ হয়েছে। তাই আর কনফিউজ হওয়ার সুযোগ নাই। যুক্তির বলিহারি!!!
কোরানের চেয়ে অনেক হাদিসকেই আমার কাছে অধিক বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। হাদিসের তো অন্তত সাক্ষ্য আছে যেমন কেউ মুহাম্মদকে কিছু করতে দেখেছেন বা শুনেছেন পরে অন্যের কাছে তা বলেছেন এভাবে। কিন্তু কোরানের তো একেবারেই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। মুহাম্মদ এসে বললেন ওটা তার উপর নাজিল হয়েছে আর অমনিই যাচাই-বাছাই ছাড়াই তা গ্রহণ করো- এটা একটা কথা হল?
মোহাম্মদের আদর্শকে সর্বোত্তম আদর্শ বলা হয়েছে কোরানে, এখন মোহাম্মদের জীবন-আদর্শ সম্পর্কে না জানলে চলবে কিভাবে? আর মুহাম্মদ সম্পর্কিত সকল তথ্য, তার জীবনী, এমনকি মুহাম্মদ নামক একজন লোক যে আদৌ ছিল তাও আমরা জানতে পারছি হাদিস থেকে।
হাদিসের সত্যতা/ গ্রহণযোগ্যতার পক্ষেও অনেক আর্গুমেন্ট আছে কিন্তু আমি এগুলো নিয়ে আর বিতর্কে যাচ্ছি না।
@সৈকত চৌধুরী,
যুক্তির বলিহারি তো দেখাচ্ছেন আপনি , আমার বক্তব্য থেকে “যারা কোরানকে আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করে , তাদের কনফিউজ হওয়ার সুযোগ নেই” এই কথাটি বাদ দিয়ে। আমি নির্দিষ্ট করেই বলেছি কাদের কনফিউজ হওয়ার সুযোগ নাই। আপনার কাছে কোরান থেকে হাদীস বেশি বিশ্বাসযোগ্য হতেই পারে , সেটা আপনার বিষয় বা সেটা ভিন্ন বিতর্ক। আপনি যে কনফিউজ হবেন , সেটা স্বতঃস্বীদ্ধ। কারন আপনার কোরানে বিশ্বাস নেই। আপনার কনফিউজ হওয়াটাই প্রমান করে , আমার যুক্তি সঠিক।
@ফারুক,
আমি বলতে চেয়েছিলাম একজন মানুষ বিশ্বাস করে ফেললে সে কি আর এটার উপর কোনো সংশয় পোষণ করবে না, যাচাই-বাছাই করবে না? নাকি বিশ্বাস করেছে বলেই শপথ নিবে যে সে আর কনফিউজড(!!)
হবে না কারণ তার সে সুযোগই নাই(?)।
আচ্ছা, বিশ্বাসটা আনা যায় কিভাবে। আমাকে আন্তরিক ভাবে কিছু উপায় বাতলে দেন।
@সৈকত চৌধুরী,
কেন নয়? অবশ্যই সংশয় পোষণ করবে , যাচাই-বাছাই করবে। সত্যি কথা বলতে কোরানে এটাই করতেই বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় , আলেম উলামারা কোরানের নির্দেশের বরখেলাপ করে মানুষকে এর উল্টোটাই শিক্ষা দিয়ে থাকে।
আগে ঠিক করুন , আপনার বিশ্বাস আনার কোন প্রয়োজন আছে কিনা? আপনি যদি বিশ্বাস ছাড়াই মানসিক শান্তিতে থাকেন , তাহলে কি দরকার খামাকা কষ্ট করার। কষ্ট ছাড়া কোন শর্টকাট রাস্তা নেই বিশ্বাস আনার। কষ্ট বলতে কোন পীরের মুরীদ হওয়াকে বোঝায় না। যাচাই বাছাই করে সংশয় মুক্ত না হয়ে যারা বলে থাকে বিশ্বাস করি , তারা আসলে নিজেকেই ধোঁকা দেয়। যেমন টি এই গল্পের নায়ক এমদাদের বিশ্বাসের পরিবর্তন , কোন যাচাই বাছাইর ফল নয় , বরং খেলাফত আন্দোলন। ফলে বহু চেষ্টা করিয়াও সে এবাদতে তেমন নিষ্ঠা আনিতে পারিতেছিল না।
@ফারুক,
ও মা, বিশ্বাস করতে আবার কষ্ট করতে হয় নাকি?
আচ্ছা!
“আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ”। সুরা আরাফ(৭) আয়াত ১৭৯।
তো জ্বিন যাচাই বাছাই করলেন কী ভাবে?
এরচেয়ে তো বরং তারাই সত্যবাদী, যারা বলেন আমরা যাচাই বাছাই বিহীন, যুক্তি প্রমাণহীন, অন্ধভাবে বিশ্বাস করি অদৃশ্য বস্তুর উপর। কোরান তাদের জন্যে – আল্লাজিনা ইয়ুমিনুনা বিল-গায়িব যারা বিশ্বাস করে অদৃশ্য বস্তুর উপর।
@আকাশ মালিক,
কষ্ট ছাড়া বিশ্বাসের কি পরিনতি হয় , তার বড় প্রমাণ আপনি নিজেই। জন্মসুত্রে কপিপেষ্ট বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছিলেন বলেই না , আজ আপনি অবিশ্বাসীর খাতায় নাম লিখে বিশ্বাসের বিরুদ্ধে জেহাদে নেমেছেন। কষ্ট করে যদি বিশ্বাস আনতেন , তাহলে হয়তো আপনার এ দূর্মতি/সুমতি হতো না।
প্রতিটি মানুষের ব্রেণ আছে , যার যার যাচাই বাছাইয়ের কাজটা তার নিজেকেই করতে হবে। এখানেই এসেছে কষ্টের ব্যাপারটি। প্রতিটি মানুষের যাচাই বাছাইয়ের পদ্ধতি ভিন্ন ও সন্তুষ্ট হওয়ার ক্রাইটেরিয়াও ভিন্ন। তা যদি না হতো , তাহলে পৃথিবীতে ভিন্ন মত , পথ বা দলাদলিও থাকতনা। আপনার মনে যখন জ্বিন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে , তখন যাচাই বাছাই করে সংশয় মুক্ত হতে হবে আপনাকেই। আমি সেটা করে দিতে পারব না বা করে দিলেও সেটা আপনার মনঃপুত হবে তার কোন গ্যারান্টি ও নেই । তদুপরি আপনি সেটা মানবেনি বা কেন? একারনেই বলেছিলাম বিশ্বাস আনতে হলে যাচাই বাছাইয়ের কষ্ট করতে হয় , কোন শর্টকাট রাস্তা নেই।
১মত- অন্ধভাবে বিশ্বাস করার কথা কোরানের কোথাও বলা হয় নাই।
২য়ত- সত্যবাদী কিনা জানি না , তবে কোরানে বলা হয়েছে -“যাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, যাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর যাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না, তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।”
ঠিক কথা। এখানে কিন্তু বলা হয়নি বিশ্বাস টা কিভাবে আনতে হবে। কোথাও কি বলা হয়েছে অন্ধভাবে বিশ্বাস আন? এখানেই আসে ব্যাক্তির স্বাধীন ইচ্ছার ব্যাপারটি। যারা বিশ্বাস আনতে পারবে , কেবল তারাই কোরান থেকে দিগনির্দেশনা পাবে।
@ফারুক,
আমার বিশ্বাস নাই। কিন্তু সুন্দরী পরনারী আর কচি মাইয়া দেখলে মনে যে কি অশান্তি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। কি যে মানসিক অশান্তিতে থাকি, তা না দেখলে বুঝবেন না। মনে হয় জীবনটাই বৃথা!
তো এখন কি করব? বিশ্বাস আনবো? এই পীর সাহেবের মত নবীজীর পথ অনুসরন করবো?
@শ্রাবণ আকাশ,
আগে জানুন , বিশ্বাস আনা বলতে কি বোঝায় , তারপরে না বিশ্বাস আনবেন। পীর সাহেবের মত নবীজীর পথ অনুসরন করা কি অতটা সহজ মনে হচ্ছে আপনার কাছে? পীর সাহেবের মত মুরীদ ও অনুসারী জোগাড় করতে পারবেন তো? না পারলে মার কিন্তু একটাও মাটিতে পড়বে না। তখন আবার আমাকে দূষেন না , কেন আপনাকে আগেভাগে সাবধান করিনি।
ওহ! হাসতে হাসতে পেট ধরার জোগাড়! :lotpot:
গল্পটা মিস করে গিয়েছিলাম। ‘শ্রাবণ আকাশ’ ভাইকে ধন্যবাদ যে আপনি কমেন্ট করেছেন! সাম্প্রতিক কমেন্টের ওখানে আপনার কমেন্টের পাশে গল্পের নামটা দেখেই পড়ার ইচ্ছা হল। নাইলে পড়া হতো না।
সবই তার ইচ্ছা!! আহা! :hahahee:
এই গল্প নিয়ে আলোচনা না হওয়ার কারণটা ঠিক বুঝলাম না! নাকি ঐ “মাথা চাওয়া”র ভয়তে কেউ কিছু বলেন নি! :guli:
@শ্রাবণ আকাশ,
আলোচনা না হবার কারণ সম্ভবতঃ এই যে, লেখাটি সৈকত প্রথম পাতায় প্রকাশ করেনি, করেছে নিজ ব্লগে। তার ভূমিকার শেষ লাইনটি দেখুন –
খুবই ভাল লাগা এ গল্পটিকে সকলের সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যে আমার নিজ ব্লগে প্রকাশ করলাম–
ঠিক সেকারণেই গল্পটি অনেকের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো। আমিও এই প্রথমবারের মতোই পড়লাম। খুবই মজার! আবুল মনসুর আহমদ নিঃসন্দেহে তার সময়ে খুব সাহাসী ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
@অভিজিৎ, ঐ নিজ ব্লগের ব্যাপারটা ধরতে পারিনি। সবাই যেখানে প্রথম পাতায় যাওয়ার জন্য ব্যস্ত, সেখানে ইচ্ছে করে দূরে থাকাটা বোঝা মুশকিল।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার পড়তে পড়তে “লালসালু”র কথা মনে পড়ছিল।
@শ্রাবণ আকাশ,
আরে বুঝলেন না, ধর্মীয় ক্যাচাল থেইক্যা বাচোনোর লাইগ্যা এই তরিকায় পদার্পন।
আরেকটা কারণও হইতে পারে-
অন্যের লেখা এইভাবে দেয়াতে কেউ যদি কপি রাইট সত্ত্বের হামলা চালায়। সেই হামলা থেইক্যা বাচোনোর জন্যে।
আশা করি এইবার ব্যাপারটা নিশ্চয়ই ফিলিপস বাত্তির আলোর মত ক্লিয়ার হইছে…. (I)
গল্পটি কবে প্রকাশিত? গল্পপ্রকাশের পর মনসুর সাহেবকে মুরতাদ ঘোষনা করে তার মা্থা চাওয়া হয়নি?
@মিথুন,
আমিও গল্পটি পড়ার সময় তাই ভেবেছি 🙂 ।
গল্পটি কবে প্রকাশিত হয়েছে তা ঠিক এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।
@সৈকত চৌধুরী,
অনেকেই বলেন, এই গল্পটি ডিগ্রীর বাংলা বইতে আছে, কিছু কিছু লাইব্রেরিতেও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে মৌলবাদিরা বোধ হয়, বাংলায় লেখা দুইটা গল্প পুরোপুরি না বুঝে পড়ে। হুমায়ুন আযাদের ‘সুভ্রত সমাচার’ আর আবুল মনসুরের ‘হুজুর কেবলা’। দুটোতেই অদৃশ্য নায়ক নবী মুহাম্মদ।
গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে সৈকত ভাইকে ধন্যবাদ। (Y)
@আকাশ মালিক,
একটা খবর পড়েন-
মেয়েটির জন্য কারও মায়া হলো না!
তারিখ: ০২-০২-২০১১, প্রথম আলো।
(লিংক আজকের পরে কাজ না করলে সার্চ করে বের করতে হবে)
@সৈকত চৌধুরী,
মেয়েটির প্রতি মায়া দেখালে ঈমানদারদের ঈমান দূর্বল হবে, এটা তারা জানে। তাই দুনিয়া জুড়ে এরকম নৃশংস ঘটনায় কোনদিনই মাদ্রাসার ছাত্র সংগঠন, ইসলামী রাজনৈতিক দল, উলামা-মুফতি সমাজ জিহাদের ডাক দেয় না, প্রতিবাদ করেনা, মুখ বন্ধ করে নিশ্চুপ থেকে ঘটনার প্রতি সমর্থন জানায়। এদিকে কিছু মডার্ণ ভন্ড ইসলাম না জানা আধুনিক ইসলামিষ্টরা পত্রিকায় খবর আসার পরে (শুধুমাত্র যখন জানাজানি হয়ে যায়) ঘরের কোণে ভেজা বিড়ালের মত মিনমিন করে বলে- ইসলাম এ সব সমর্থন করেনা। তারা বিজ্ঞানের বিরোদ্ধে লিখে যত সময় নষ্ট করে, ইসলামের অমানবিক দিক, বা সমাজের কুসংস্কার নিয়ে একটি বাক্য লিখতেও কষ্ট পায়। সেদিন এক ব্লগে দেখলাম, এক আধুনিক মুসলিম গর্ব ভরে ঘোষণা দিলেন- ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কে বা’দ।
ইসলামের স্বার্থেই এরকম কারবালা ঘটবে, নুরজাহান, হেনারা মরবে।
@মিথুন,
আবুল মনসুর আহমদ ‘আয়না’ বইটি লেখেন ১৯৩৬-১৯৩৭ সালে। আর ‘ফুড কনফারেন্স’ লেখেন ১৯৪৪ সালে।
তার এই দুটি বই হচ্ছে- হাস্য রসাত্মক অথচ শানিত বিদ্রুপাত্মক লেখা। মূলত তিনি সাহিত্য অঙ্গনে হাস্যরসাত্মক লেখক হিসেবেই সমধিক পরিচিত।
গল্পের কারণে তার মাথা চাওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক কারণে একবার কারারুদ্ধ হন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনীতি দলে যোগ দিয়েছেন। সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে কংগ্রেস আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর মুসলীম লীগের সক্রিয় সদস্য হন। ১৯৪০ সালে পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এরপর ১৯৫৬-৫৭ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ এর প্রতিষ্ঠিাতা সম্পাদক ছিলেন। আয়ুবের সামরিক শাসন জারীর পর কারারুদ্ধ হন ১৯৫৮ সালে। মুক্তি পান ১৯৬২ সালে।
তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন কৃষক, নবযুগ, ইত্তেহাদ সোলতান এবং মোহাম্মদী পত্রিকায়।
হুজুর কেবলা গল্পটি এক সময় ডিগ্রীতে পাঠ্য বইয়ের ‘গল্প সংকলন’-এর অন্তর্ভূক্ত ছিল।