সাতটি স্বর বা সুরকে একসাথে বলে সপ্তক। অর্থাৎ, সা রে গা মা পা ধা নি – এই সাতটি স্বর মিলে হচ্ছে সপ্তক। তবে, সপ্তকের সঠিক সংজ্ঞায় বলতে হবে – সাতটি শুদ্ধ স্বর বা সুর মিলে হচ্ছে সপ্তক। কেননা, সা রে গা মা পা ধা নি (আসলে হবেঃ স র গ ম প ধ ন) – এই সাতটি শুদ্ধ স্বরের ফাঁকে ফাঁকে আছে আরো পাঁচটি বিকৃত স্বর। র, গ, ধ ও ন এর আগে বসে কোমল স্বর, যেমনঃ কোমল-র (ঋ), কোমল-গ (জ্ঞ), কোমল-ধ (দ) ও কোমল-ন (ণ)। আর, ম এর পরে হচ্ছে তীব্র-ম (হ্ম)। এই পাঁচটি বিকৃত স্বর। সব মিলে ১২ টি স্বর বা সুর। সপ্তকের সুন্দর সাতটি নামও আছে (কয়েকটার অবশ্য একাধিক নাম আছে), যেমনঃ
সা = ষড়জ (/ খরজ)
রে = ঋষভ (/ রেখাব)
গা = গান্ধার
মা = মধ্যম
পা = পঞ্চম
ধা = ধৈবত
নি = নিষাদ (নিখাদ)
বিকৃত পাঁচটি স্বরেরও নাম আছে (শুদ্ধ স্বরের সাথে মিলিয়ে)। যেমনঃ
কোমল-র (ঋ) = কোমল ঋষভ
কোমল-গ (জ্ঞ) = কোমল গান্ধার
তীব্র-ম (হ্ম) = কড়ি মধ্যম বা তীব্র মধ্যম
কোমল-ধ (দ) = কোমল ধৈবত
কোমল-ন (ণ) = কোমল নিষাদ
১২ টি স্বর একসাথে হয়ঃ স ঋ র জ্ঞ গ ম হ্ম প দ ধ ণ ন, ১২ টি স্বরের নামঃ ষড়জ, কোমল ঋষভ, ঋষভ, কোমল গান্ধার, গান্ধার, মধ্যম, তীব্র মধ্যম, পঞ্চম, কোমল ধৈবত, ধৈবত, কোমল নিষাদ, নিষাদ। (কোমল স্বর শুদ্ধ স্বরটির আগে আর তীব্র স্বরটি শুদ্ধ স্বরের পরে বসে)
সপ্তক আবার স্বর বা সুরের স্কেল অনুযায়ী তিনরকম।
উদারা বা মন্দ্র সপ্তক
মুদারা বা মধ্য সপ্তক
তারা বা তার সপ্তক
একজন গায়ক হারমোনিয়ামে যে অংশে (সা থেকে নি পর্যন্ত) সাধারণভাবে রেওয়াজ করে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এই অংশটিই হচ্ছে মধ্যবর্তী বা মধ্য সপ্তক (মুদারা)। স্কেলে তার নীচের অংশ থেকে গাইলে, মানে নীচের-সা থেকে নীচের-নি পর্যন্ত অংশকে বলে মন্দ্র সপ্তক (উদারা), অর্থাৎ নিম্ন বা গম্ভীর স্বরের সপ্তক হচ্ছে উদারা। আর স্কেলে মুদারার উপরের অংশ থেকে গাইলে, অর্থাৎ উপরের-সা থেকে উপরের-নি পর্যন্ত অংশকে বলে তার সপ্তক (তারা), মানে চড়া বা উচ্চ স্বরের সপ্তক হচ্ছে তারা (প্রচলিত ভাষায় তারস্বরে কথা বলা মানে হচ্ছে চিৎকার করে কথা বলা)। উদারা শব্দটি এসেছে উদর বা পেট থেকে, মুদারা এসেছে মুখ থেকে, আর তারা এসেছে মাথা বা মস্তিস্ক থেকে। এই সপ্তকগুলো লেখার ক্ষেত্রে উদারায় প্রতিটি স্বরের নীচে হসন্ত দেয়া হয়, তারায় প্রতিটি স্বরের উপরে রেফ দেয়া হয়, আর মুদারার ক্ষেত্রে কেবল স্বরগুলোকেই লেখা হয়। যেমনঃ
উদারাঃ স্ র্ গ্ ম্ প্ ধ্ ন্
মুদারাঃ স র গ ম প ধ ন
তারাঃ র্স র্র র্গ র্ম র্প র্ধ র্ন
সপ্তক তিনটিকে অনেক সময়ে বিকৃত স্বরগুলোর সমন্বয়েও লেখা হয় (অনেকক্ষেত্রে স র গ ম প ধ ন এর বদলে সা রে গা মা পা ধা নি হিসেবেও লেখা হয়)। যেমনঃ
উদারাঃ সা্ ঋ্ রে্ জ্ঞ্ গা্ মা্ হ্ম্ পা্ দ্ ধা্ ণ্ নি্
মুদারাঃ সা ঋ রে জ্ঞ গা মা হ্ম পা দ ধা ণ নি
তারাঃ র্সা র্ঋ র্রে র্জ্ঞ র্গা র্মা র্হ্ম র্পা র্দ র্ধা র্ণ র্নি
এভাবে বিভিন্ন গানের সুরের স্বরবিন্যাস লিখে রাখার পদ্ধতিকে বলে স্বরলিপি। আ-কার (া) দিয়ে বুঝানো হয় তালের মাত্রা। ভারতবর্ষে এই আকারমাত্রিক স্বরলিপি পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপরে তার অনুজ (কবিগুরুর অগ্রজ) জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই আকারমাত্রিক স্বরলিপি পদ্ধতির উন্নয়ন করেন। দুই ভাইয়ের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সমস্ত গানের স্বরলিপি লিপিবদ্ধ করে রাখেন।
সপ্তকের সাত স্বর এর সাথে উচ্চ স্বরের র্সা মিলে যে ক্রমটা সম্পন্ন করা হয় সেটাকে বলা হয় অষ্টক। অর্থাৎ সা রে গা মা পা ধা নি র্সা হচ্ছে অষ্টক।
এই অষ্টককে আবার দুভাগে বা দুই অঙ্গে ভাগ করা হয়। তার মানে, প্রতি ভাগে পড়ে ৪ টি করে স্বর। প্রথম চারটি স্বরকে নিয়ে হয় পূর্বাঙ্গ ও পরের চারটি স্বরকে নিয়ে উত্তরাঙ্গ।
পূর্বাঙ্গ প্রধানঃ সা রে গা মা
উত্তরাঙ্গ প্রধানঃ পা ধা নি র্সা
এই অষ্টকের সা থেকে র্সা পর্যন্ত স্বর ক্রমে চড়া বা উচ্চ হতে থাকে। সে কারণে, কোন নির্দ্দিষ্ট স্বরকে সা ধরে ক্রমে উপরের দিকে বাজিয়ে বা গেয়ে ওঠাকে বলে আরোহণ। যেমনঃ সা রে গা মা ধা নি র্সা। আর এর উলটা দিকে, মানে কোন একটা স্বরকে উপরের র্সা ধরে নীচের দিকে গেয়ে বা বাজিয়ে নামাকে বলে অবরোহণ। যেমনঃ র্সা নি ধা পা মা গা রে সা।
লয়, মাত্রা ও তাল যেকোন সুরের জন্যে একদম প্রাথমিক, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা বা বিষয়। তালকে বলা যেতে পারে সঙ্গীত বা একটা সুরের যে ছন্দ থাকে, সেটি। আর লয় হচ্ছে তার গতি। যেমনঃ হাট্টি মাটিম টিম, তারা মাঠে পাড়ে ডিম – এই দুই লাইন দশবার করে পড়া হচ্ছে। এই দুটি লাইন কত দ্রুত বা কত ধীরে পড়া হবে (মানে দশবার পড়তে বিশ সেকেণ্ড সময় লাগলো, নাকি দশ সেকেণ্ড লাগলো, নাকি এক মিনিট সময় লাগলো, সেটাই হচ্ছে তার লয়)। গতির তারতম্যের জন্য লয়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
১। বিলম্বিত লয়,
২। দ্রুত লয় এবং
৩। মধ্য লয়।
নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে ধীরগতির সঙ্গীতের জন্য বিলম্বিত লয়, দ্রুতগতির সঙ্গীতের জন্য দ্রুত লয় এবং মধ্যগতির সঙ্গীতের জন্য মধ্য লয়। সাধারণতঃ মধ্য লয় বিলম্বিত লয়ের দ্বিগুণ ও দ্রুত লয়ের অর্ধেক গতির হয়ে থাকে।
মাত্রা সঙ্গীতের লয় বা গতির দুরত্ব মাপার জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রত্যেকটি মাত্রার মধ্যবর্তী ব্যবধান সমান হয়। কয়েকটি ছন্দোবদ্ধ মাত্রার সমষ্টি দিয়ে তৈরি হয় একটি তালতালের মোট সময়টিকে পরিমাপ করার জন্য যে ক্ষুদ্রতম একক ব্যবহার করে লয়কে নির্দিষ্ট করা হয়, এক কথায় তাই মাত্রা। আমরা গান শুনতে শুনতেই আনমনে অনেক সময় একটু পর পর হাতের আঙ্গুল দিয়ে কোথাও যে চাপড় দেই, বা পা টা ঝাঁকি দেই – সেটাই হচ্ছে তাল। অনেক সময়ে হাতে একটা ঝুনঝুনি থাকলে, সেটা দিয়েও এভাবে তালটা দেয়া যায়। অর্থাৎ মোটের উপরে – একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর যে ছন্দটা তৈরি হয়, সেটাই হচ্ছে তাল। এই তালটাই হচ্ছে প্রাণ, তাল কেটে গেলেই আর সেই ছন্দময়তা থাকে, সুরটা কেটে যায় বা বেখাপ্পা লাগে।
মাত্রা ভেদে বিভিন্ন রকম তাল রয়েছে। যেমনঃ
দাদরা : ৬ মাত্রা
কাহারবা : ৮ মাত্রা
তেওড়া : ৭ মাত্রা
রুপক : ৭ মাত্রা
ঝাঁপতাল : ১০ মাত্রা
ত্রিতাল : ১৬ মাত্রা
রাগরাগিণী হচ্ছে কতগুলো স্বর ও বর্ণের সমন্বয়ে নির্দিষ্ট কিছু সূত্র বা ফর্মুলা বিশেষ, যা বিশেষ সময়ে ও সুনির্দিষ্ট উল্লাসে বা স্বাদে গাওয়া বা বাজানো হয়। সপ্তকের বিভিন্ন স্বর পর পর বসে যে ধ্বনি বা সুর লহরী তৈরি করে, সেটাই যখন মানুষের মন বা চিত্তরঞ্জন করে- তাকে বলা হয় রাগ। অনেকটা শব্দের মত, কয়েকটা বর্ণ বা অক্ষর পাশাপাশি বসলেই হবে না- মনের ভাব প্রকাশের একটা অর্থ থাকলেই সেটা একটা শব্দ হবে। সে রকম, সপ্তকের বিভিন্ন স্বর সুনির্দিষ্ট কিছু সূত্রে পাশাপাশি বসে যখন মানুষের চিত্ত রঞ্জন করে, সেটাই হয়ে যায় রাগ।
রাগ হওয়ার জন্যে আবার কিছু নিয়ম আছে, যেমনঃ রাগ রচনায় অন্যুন পাঁচটি স্বর ব্যবহার করতে হবে, কোনো রাগেই ষড়জ স্বরটি বর্জিত হবে না, রাগের আরোহ এবং অবরোহ, পকড়, সময় ইত্যাদির নির্দেশ থাকবে, কোনো রাগেই মধ্যম এবং পঞ্চম স্বর একত্রে বর্জিত হবে না, কোন রাগেই একই স্বরের দুইটি রূপ (যেমন ঋা, রা; জ্ঞা, গা, দা, ধা, ণা, না) একই সঙ্গে প্রয়োগ হবে না (ব্যতিক্রম:মা, হ্মা), রাগে একটি বিশেষ রসের অভিব্যক্তি থাকবে, রাগের জাতি বিভাগ থাকবে – প্রভৃতি।
রাগকে তিনটি জাতিতে ভাগ করা যায়, যেমনঃ সম্পূর্ণ, ষাড়ব, ঔড়ব। সা রে গা মা পা ধা নি সাত স্বরযুক্ত রাগকে বলা হয় সম্পূর্ণ রাগষাড়ব রাগ হচ্ছে সা গা মা পা ধা নি ছয় স্বরযুক্ত রাগ, আর ঔড়ব রাগ হচ্ছে সা রে গা পা ধা পাঁচ স্বরযুক্ত রাগ। এগুলো কিন্তু রাগের নাম নয়, এগুলো হচ্ছে বিভিন্ন রাগের জাতি বা গোষ্ঠীর নাম।
রাগ ও রাগিণী – সবই হচ্ছে রাগ, কেবল বিভিন্ন রাগকে শ্রেণীবদ্ধ করার সুবিধার্তে এরকম রাগ ও রাগিণী নাম দেয়া হয়েছে। প্রাচীণ নারদ সংহিতায় ছয়টি রাগ এবং ছত্রিশটি রাগিণীর উল্লেখ রয়েছে, যেমনঃ
ভৈরবঃ ভৈরবী, রামকেলী, বঙ্গালী, কলিঙ্গা, মঙ্গলিকা, সিন্ধু
হিন্দোলঃ  পুরিয়া, জয়ন্তী, দেবগিরি, ককুতা, বেলাবলি, দেশকার
মালকোষঃ কৌশিকী, টঙ্কা, গর্জরী, বাগেশ্বরি, নাটিকা, মুদ্রাকী
দীপকঃ ললিতা, শোভনী, কামোদী, কাদারী, কল্যাণী, ভূপালী
মেঘঃ মল্লারী, সৌরটী, দেশাক্ষী, সারঙ্গী, বড়হংসিকা, মধুমাধবী
শ্রীঃ ধনাশ্রী, ত্রিবেণী, মালবী, মালবশ্রী, গৌরী, জয়তশ্রী
অর্থাৎ, ৬ টি রাগ ও ৩৬ টি রাগিণী মিলে মোট রাগের সংখ্যা হচ্ছে ৪২ টি। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে আরো অনেক রাগ রয়েছে। প্রায় ৮৩ টি রাগের সন্ধান পাওয়া যায়। এই রাগ ও রাগিণীর সাথে পরিবেশ ও প্রকৃতির বিশাল সম্বন্ধ আছে। দিনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের চারপাশের প্রকৃতি বদলে যায়, আর আমাদের মনের ভাবেরও পরিবর্তন ঘটে। সে অনুযায়ী দিনের বিভিন্ন সময়কালে গাওয়া বা বাজানোর জন্যেও আলাদা আলাদা রাগ রয়েছে। একটা দিনকে মোটামুটি আটটি ভাগে ভাগ করে সে সময় উপযোগী হিসেবে সমস্ত রাগকে ৮ টা সময়শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
প্রারম্ভিক সকালঃ রাগ কালিঙ্গড়া, রাগ যোগীয়া, রাগ রামকেলী, রাগ ভৈরব, রাগ গুনকলি
সকালঃ রাগ বিভাস, রাগ নট ভৈরব, রাগ আহির ভৈরব, রাগ তোড়ি, রাগ গুরজী তোড়ি, রাগ হিন্দোল, রাগ লীলাবতী, রাগ কোমল রিষাভ আশাবরী
বিলম্বিত সকালঃ রাগ দেব গান্ধার, রাগ দেশকার , রাগ আলাহিয়া বিলাবল , রাগ আশাবরী, রাগ জৌনপুরী , রাগ দেশী , রাগ ভৈরবী , রাগ বিলাসখনি টোডি , রাগ ভুপাল টোডি , রাগ ললিত
দুপুরঃ রাগ গৌড় সারং, রাগ বৃন্দাবনী সারং, রাগ শুদ্ধ সারং
বিলম্বিত দুপুরঃ রাগ ভীমপলশ্রী
গোধূলীঃ রাগ মারওয়া, রাগ শ্রী, রাগ পূর্বী, রাগ বারওয়া, রাগ পটদীপ, রাগ মুলতানী, রাগ মধুবন্তী, রাগ ধানি
সন্ধ্যাঃ রাগ পুরিয়া, রাগ পুরিয়া কল্যাণ, রাগ পুরিয়া ধনশ্রী, রাগ শুদ্ধ কল্যাণ, রাগ ইমন, রাগ হামীর, রাগ হংসধ্বনি, রাগ পিলু, রাগ শ্যাম কল্যাণ, রাগ ইমন কল্যাণ, রাগ মেঘ, রাগ গৌরী, রাগ লক্ষ্মী কল্যাণ
বিলম্বিত সন্ধ্যাঃ রাগ বসন্ত, রাগ মিয়াঁ মালহার, রাগ তিলক কামোদ, রাগ কালী, রাগ হেমকল্যাণ, রাগ নট বিহাগ, রাগ ভূপালী, রাগ কেদার, রাগ কামোদ, রাগ ছায়ানট, রাগ খাম্বাজ, রাগ দেশ, রাগ জয়জয়ন্তী, রাগ রাগেশ্রী, রাগ যোগ, রাগ গৌড় মালহার, রাগ কাফি, রাগ রামদাসী মাল্ল্হার, রাগ বাহার, রাগ গড়া, রাগ সুরদাসী মাল্ল্হার, রাগ নন্দ, রাগ ঝিঁঝোটি, রাগ তিলং, রাগ গোরখ কল্যাণ, রাগ স্রোত, রাগ চাঁদনী কেদার, রাগ কলাবতী, রাগ গাবতী
সঙ্গীত হচ্ছে এক ধরণের কলা, যা মানুষের চিত্ত বিনোদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। সাধারণভাবে আমরা সঙ্গীত বলতে গান বা কন্ঠসঙ্গীত বুঝে থাকি, কিন্তু প্রাচীণ শাস্ত্রানুযায়ী সঙ্গীত দ্বারা গীত, বাদ্য, নৃত্য এই তিনটি বিষয়ের সমাবেশকে বুঝানো হয়। সম + গীত = সঙ্গীত, অর্থাৎ গীতের সহিত বাদ্য ও নৃত্য যোগেই হয় সঙ্গীত। অর্থযুক্ত কথা, সুর ও তালের সমন্বয়ে গীত, যন্ত্রোৎপাদিত সুর ও তালের মিলিত ভাবে বাদ্য, আর তালের ছন্দে দেহ ভঙ্গিমার সাহায্যে হয় নৃত্য
গীত বা বাদ্য সঙ্গীত, বা উভয়ের সংমিশ্রণে যে সঙ্গীত, সেখানে থাকে শ্রুতি বা স্বর, নাদ, রাগ/ রাগিণী প্রভৃতি। নাদ হচ্ছে সঙ্গীতের জন্যে যে আওয়াজ বা শব্দ তৈরি হয়, সেটা। নাদ দুই রকমেরঃ আহত নাদ ও অনাহত নাদ। যে শব্দ শোনা যায়, সেটা আহত নাদ, যেটা শোনা যায় না, সেটা অনাহত নাদ। আহত নাদ আবার দুইরকমঃ বর্ণাত্মক না ও ধ্বন্যাত্মক নাদ। মানুষের বক্ষ, কন্ঠ, তালু অতিক্রম করে যে নাদ ধ্বনিত হয় তাই বর্ণাত্মক নাদ। আর, কোন বস্তুদ্ধারা আঘাত জনিত কারনে যে নাদ উৎপন্ন হয় তাকেই ধ্বন্যাত্মক নাদ বলে (যেমনঃ বাদ্য)।
ধ্রুপদাঙ্গের সঙ্গীতে সাধারণত পাঁচটি স্তোবক থাকে। যেমন:
১। স্থায়ী,
২। অন্তরা,
৩। সঞ্চারী,
৪। ভোগ, এবং
৫। আভোগ।
বাদ্য সঙ্গীত বা যন্ত্র সঙ্গীতে নানা রকম যন্ত্র অনুষঙ্গের সাহায্যে সুর তোলা হয়। যাবতীয় বাদ্যযন্ত্রকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়।
১। তত বা তার (তন্ত্রী) বিশিষ্ট যন্ত্রঃ বীণা, বেহালা, সরোদ, সেতার, একতারা, দোতারা, তানপুরা, এস্রাজ, সারেঙ্গি, সারিন্দা, ভায়োলিন, চেলো (বসে বাজানোর মন্দ্রস্বরী বৃহৎ বেহালা), ডাবল বেস (দাঁড়িয়ে বাজানোর অতিমন্দ্রস্বরী অতিবৃহৎ বেহালা), গিটার, ব্যাঞ্জো, ম্যান্ডোলিন, উকুলেলে, ইত্যাদি।
২। সুষির বা বায়ু চালিত যন্ত্রঃ বাঁশি, হারমোনিয়াম, নহবৎ/ শানাই, ভেঁপু, শিঙা, শঙ্খ/ শাঁখ, মাউথ অরগ্যান প্রভৃতি।
৩। ঘাতবাদ্য বা আঘাত দিয়ে শব্দ বের করা যন্ত্রঃ দুই রকমের হতে পারে।
ক) ঘনযন্ত্র (কেবল ধাতু বা কাষ্ঠনির্মিত ঘাতবাদ্য) : খঞ্জনি, করতাল, ঝাঁঝর, মন্দিরা প্রভৃতি।
খ) আনদ্ধযন্ত্র (চর্মাচ্ছদিত ঘাতযন্ত্র) : তবলা, মৃদঙ্গ, পাখোয়াজ, খোল, ঢাক, ঢোল, ডমরু, মাদল, ভেরী, কাড়া, নাকাড়া, দুন্দুভি, দামামা, ডিমডিম, টমটম, ড্রাম, বঙ্গো প্রভৃতি।
(সূত্রঃ উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেল, প্রভৃতি)