এ পর্যন্ত আমি ধার্মিকদের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো অপমান ও নির্যাতনের স্বীকার হইনি, আমাকে সর্বোচ্চ নির্যাতন এবং অপমান করেছে বিজ্ঞানমনস্ক, নাস্তিক ও একাডেমিক বুদ্ধিজীবীর দল। পিঁপড়া কোনো সিংহের সাথে প্রতিযোগিতা করে না, কারণ তাদের দুজনের দৈহিক ডিমান্ড সম্পূর্ণ আলাদা। একটি ডায়নোসর অন্য ডায়নোসরের সাথে সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা করতে পারে কারণ তাদের লড়াইয়ের ক্ষেত্র একই। কিন্তু ডায়নোসরের সাথে কোনোদিন সরাসরি কোনো ক্ষুদ্র পতঙ্গের প্রতিযোগিতা হবে না। একজন বুদ্ধিমানের শত্রু অন্য আর একজন বুদ্ধিমানই হয়, কোনো নির্বোধ মানুষ নয়। নির্বোধের সাথে প্রতিযোগিতা আরও পরোক্ষ ও দূরবর্তী রেঞ্জে হতে পারে, প্রত্যক্ষ ও কাছাকাছি রেঞ্জ থেকে নয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার জঙ্গলে একটি রেডউড বৃক্ষ আর একটি রেডউডের সাথে প্রতিযোগিতা করে সূর্যের আলোকে স্পর্শ করার জন্য। কারণ একটি রেডউডের উচ্চতা যদি অন্য রেডউড থেকে বিশাল হয়ে যায়, তবে তার ছায়ায় প্রতিযোগী রেডউড বৃক্ষটির মৃত্যু হয়। আর তাই রেডউড বৃক্ষ একে অন্যের সাথে সিংহ, হায়েনা অথবা ডায়নোসর থেকেও তীব্র প্রতিযোগিতা করে, তারা নিজেদের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে করতে ৩৮০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আজকের বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মানুষ যেমন হিলিয়ামের ওপর অ্যাকসেস নেয়ার জন্য চন্দ্রে নভোযান প্রেরণ করছে, ঠিক তেমনি রেডউড বৃক্ষও সূর্যের আলোর ওপর সর্বোচ্চ অ্যাকসেস পেতে লড়াই করে। মাঝে মাঝে তারা এতটাই উচ্চতাসম্পন্ন হয় যে, তাদের শিকড় থেকে সর্বোচ্চ শিখরে রাসায়নিক সিগন্যাল পৌঁছাতে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় চলে যায়। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে প্রায় ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় লাগে কিন্তু ৩৮০ ফুট লম্বা একটি রেড উডের শিকড়ে যদি কোনো পোকা-মাকড় আক্রমণ করে( অথবা পানির সংকট দেখা দেয়), সেই সিগন্যাল রেডউডের অন্যান্য শাখা প্রশাখায় পৌঁছাতে ১০-১২ মিনিট সময় লেগে যায়। আর একটা সময় যোগাযোগের অভাবে গাছটির মৃত্যু হয়!
আপনি যখনই ইন্টেলেকচুয়াল হয়ে উঠবেন, তখন আপনার প্রধান শত্রু হবে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক ও আন্তর্জাতিক এজেন্ট। কারণ কোনো সাধারণ মানুষের আপনাকে বোঝার সেই ক্যাপাসিটি নেই, আপনার বিপক্ষে ইন্টেলেকচুয়ালি যুদ্ধ করবে। যখনই আপনি বুদ্ধিমান ও জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন, তখন আপনার প্রতিযোগিরা দাউ দাউ করে পুড়বে, তাদের মধ্যে ডিফেন্স মেকানিজম সক্রিয় হবে, আর চারপাশ থেকে আপনার সমালোচনা ও নিন্দা শুরু হবে। আপনি দেখবেন, আপনার বিপক্ষে হাজার হাজার স্ক্যাম। আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, আপনি কয়টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর কত, সাইটেশন কয়টি, আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড কী। তারা কোনোভাবে কোনোকিছুতেই আপনাকে লজিক্যালি চিন্তা করতে চাইবে না, আর এরা হলো একাডেমিক। তারা আপনার কাজ থেকে হাজার হাজার ত্রুটি বের করবে, সমাজের সামনে আপনাকে ল্যাংটা করে ধর্ষণ করে দেবে, আর অন্যান্যরা সবাই মজা নেবে। কারণ তারাও আপনার প্রতিযোগী। এরা এতদিন আপনার কাছ থেকে জেনেছিল, আপনার কাছ থেকে বুঝেছিল কিন্তু আজ তারা আপনার অপমানে খুবই উত্তেজিত, কারণ তারা এটাও দেখছে যে চিন্তার একটি ডায়নোসরের কীভাবে পতন হচ্ছে! তারা মনে মনে বিরাট খুশি। আপনার পতন হওয়ার মানেই হলো একজন জেনেটিক্যাল প্রতিযোগী হ্রাস পাওয়া, সে আপনার কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান দিয়ে, আপনার থেকেও উচ্চতাসম্পন্ন একটি বৃক্ষে পরিণত হবে! আপনাকে তার চোদার কোনো টাইম নাই।
আমি মনে করি অভিজিৎ ও অনন্ত এমনই একটি ইকুয়েশনের স্বীকার। তাদের সাথে ইন্টেলেকচুয়ালি ফাইট করার যোগ্যতা ইন্টেলেকচুয়ালদের ছিল না, তাদের ডিল করার ক্ষমতা একাডেমিকদের ছিল না, তারা পুড়তে পুড়তে একসময় নিজের মস্তিষ্কের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, খুন করে ফেলে এই ছেলেগুলোকে। আমি মনে করি না, অভিকে কোনো সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে, তাকে হত্যা করেছে একদল দুষ্ট ডায়নোসর। ওদের বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চতার ছায়ায়, যখন একদল রেডউড মানব অস্তিত্বগত সংশয় অনুভব করেছিল, তখনই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এবার ওদের সরিয়ে দিতে হবে। অভিদার মৃত্যুতে এদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী চিন্তাশীলদের মধ্যেও আমি নীরবতা দেখেছি, আর আমি মনে করি, এদেশের বুদ্ধিমানরা তার মৃত্যুতে মোটেও অসন্তুষ্ট নয়। তারা বেশ ভালোভাবেই নিজেদের সম্প্রসারণ করে চলছে, তারা অভিজিৎ-রায়ের মৃত্যুতে রিল্যাক্স অনুভব করেছে। এমনকি আমরা অভির আশেপাশে এমন কোনো মানুষকে দেখি না, যারা আন্তরিকভাবে এই ছেলেটিকে মনে রেখেছে, তাদের মিশন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছে। আমরা অভিজিৎ-রায়কে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের একটি থ্রেট হিসেবে নিয়েছি, আজও এদেশের হাজার হাজার বুদ্ধিজীবী চেষ্টা করছে অভিকে স্পর্শ করার, তার মতো হওয়ার, তার মতো করে লেখার, তার মতো করে কথা বলার কিন্তু ভেতরেই যদি জিনিস না থাকে, যতই গবেষণাপত্র পড়, সম্ভব?
আমি এদেশে নাস্তিকতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে উন্মুক্তভাবে লেখার কারণে কোনো আস্তিকের পক্ষ থেকে আমাকে বড় মাপের কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি। আমাকে হাজার হাজার উপায়ে অসম্মান ও অপমান করার চেষ্টা করেছে, তথাকথিত পিএইচডিধারী বুদ্ধিমানরাই। কিন্তু আপনি একবার গবেষণা করে দেখুন, এদেশের সাধারণ মানুষের চিন্তার জগত পরিবর্তনের জন্য এদের সত্যিকার অবদান আসলে কী! এরা স্পঞ্জের মতো খায় আর পায়খানা করে, এটাই তাদের একমাত্র সাধনা। এত বিশাল বিশাল ইউনিভার্সিটি আর সার্টিফিকেটের অধিকারী হয়েও, তারা একজন অভির সামগ্রিক কাজের ১০০ ভাগের ১ ভাগ করে দেখাতে পারলো না, একজন অনন্তকে অতিক্রম করতে পারলো না, আজ পর্যন্ত মৃত্যুভয়ে উন্মুক্তমঞ্চে স্পষ্টভাবে দুটা কথা পর্যন্ত বলতে পারলো না!
আর যে সকল মানুষ রাতদিন একাকার করে মানুষের মাঝে সূক্ষ্মচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতা বিস্তার করতে চাইছে। তাদের শেয়াল কুকুরের মতো নির্লজ্জ আক্রমণ করছে__ এটা খুবই হাস্যকর ।
অভি!
আমরা তোমার মৃত্যুতে বিশ্বাস করি না!
৪১৫ বছর পর পর ব্রুনোরা ফিরে আসে!
অ্যান্ড্রোমিডার কসম!
আমার ডান হাতের পরমাণু আর মিলিয়ন কিলোমিটার দূরের কেপলার যদি একই ফিজিক্স শাসিত হয়, তোমার মৃত্যু হয়নি !
যদি শক্তির নিত্যতা সূত্র সত্য হয়, তোমার শক্তি মহাবিশ্বে প্রবেশ অথবা প্রত্যাবর্তন করেনি,
সম্ভবত, তোমার দেহের একটি পরমাণু পৃথিবীর সকল মাইক্রোস্কোপ ফাঁকি দিয়ে
নৃত্য করছে ভিন্ন কোনো সভ্যতার মস্তিষ্কের নিউরনে!
তুমি কী কোয়ান্টাম শূন্যতায় কাল্পনিক কণা আর প্রতিকণার প্যাটার্ন হয়ে এখনো জেগে আছো?
উন্নত সভ্যতা একদিন কোয়ান্টাম ফোম থেকে তোমায় উদ্ধার করবে?
ব্ল্যাকহোল কী তার দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠে সংরক্ষণ করেছে তোমার জীবনী?
মহাবিশ্ব কী তার অনাবিষ্কৃত কোনো এক অন্তিম সমীকরণে খোদাই করেছে তোমার নাম?
তুমি কী কোয়ান্টাম বাউন্সের মধ্য দিয়ে নব নব মহাবিশ্বে উদিত হও?
কোয়াড্রিলিয়ন বছর পর, প্রকৃতির অন্ধ অনু-পরমাণুর অদলবদল ও বিন্যাস প্রক্রিয়ায় !
জানি না।
আমি টেবিলে রাখা ক্ষুদ্র ভিনাস ফ্লাই গাছটির দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে থাকি
আবিষ্কার করি, তুমি একটি ভিনাস ফ্লাই ট্র্যাপ হয়ে শিকার করে চলেছ এক একটি কীটপতঙ্গের শরীর।
তোমার পাশে আমি বসে আছি ডারউইন হয়ে।
মহাবিশ্ব আজও পালন করে যাচ্ছে তোমার জন্মদিন।
শূন্য শক্তি উপহার নিয়ে।
অসাধারণ!
অভি ও অনন্ত-রা বেঁচে থাকে মানুষের চেতন-অবচেতন মনে। তাঁদের মৃত্যু নেই,যেমন মৃত্যু হয় না জিয়োর দানো ব্রুনোর।
আজ অভি’র জন্মদিনের এক ফুলেল শুভেচ্ছা রলো। আর কোয়াড্রিলিয়ন বছর পর ফিরে বেড়াক মহাবিশ্বের এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে।
আপনার এমন শক্তিশালী কবিতার চয়ন, আর শব্দের নিখুঁত কারিগরী বিন্যাস যেন খুব উচ্চ মার্গের বৈজ্ঞানিক দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি।