লেখকঃ মেঘবতী রাজকন্যা
ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন এবং হঠাৎ দেখলেন ফুটপাথে একজন কৃষ্ণবর্ণের তরুণী ভিক্ষা করছে বসে, তার শরীর অনেক রোগা এবং পাতলা। আপনি কি ঐ তরুণীর সঙ্গে প্রেম করতে চাইবেন? বা ধরুন একজন পুরুষ কুষ্ঠ রোগীকে একজন ফর্সা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণী রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখলো, এক্ষেত্রে তরুণীটি কি পুরুষটির সঙ্গে প্রেম করতে চাইবে? দুটি প্রশ্নের উত্তরই একই, না; না একজন সফল ছেলে ভিখারিনীর সঙ্গে প্রেম করতে চাইবে, আবার না একজন সফল মেয়ে পুরুষ ভিক্ষুকের সঙ্গে প্রেম করতে চাইবে; এটার কারণ কি?
উত্তর খুঁজতে গিয়ে পেয়ে যাবেন যে, আর্থসামাজিক কারণেই এমনটা হয়েছে, হ্যাঁ, কারণটা আর্থসামাজিকই। অন্য দিকে বাংলাদেশের সমাজে ভালো পরিবারের ব্যর্থ ছেলেরাও মেয়েদের সঙ্গ পায়না কেন? এর কারণ কি হ’তে পারে? এখানে রয়েছে পুরুষতান্ত্রিকতা, এছাড়া রক্ষণশীলতা এবং ধর্মীয় অনুশাসন তো রয়েছেই। বাংলাদেশের সমাজে কখনো দেখেছেন, যে, মেয়েদের কর্ম আর ছেলেদের বেকারত্বের মিলন অর্থাৎ একটি বেকার ছেলেকে একটি কর্মজীবী মেয়ে বিয়ে করেছে, এমনটি দেখেছেন কখনো? দেখলেও সেটা অনেক কম দেখবেন, আমাদের দেশ বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামো অনেক ঋণাত্মকভাবে তৈরি করা, সামান্য ম্যাট্রিক পাশ ছেলে কখনো স্নাতক পাশ তরুণীর সঙ্গ পেতে পারেনা আমাদের সমাজে, পায়ও না; নারীতন্ত্র যদি থাকতো আমাদের সমাজে যে, নারীরা সব দিক দিয়ে স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র্য তখন বেকার ছেলেরা ঠিকই নারীসঙ্গ পেতো। স্নাতক পাশ তরুণ, বড়ো চাকরি করে এরকম অনেক আছে আমাদের দেশে যারা কিন্তু অল্প শিক্ষিত তরুণীকে বিয়ে করে, আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক বলেই এমনটা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক প্রেমযুগল দেখা যায়, এইসব প্রেমযুগলদের প্রেমের মধ্যে কি শর্ত থাকে? তাদের প্রেমের মধ্যে কি বিনিময়মূল্য থাকে? হ্যাঁ, শর্ত থাকে, বিনিময় মূল্য থাকে, সব ধরণের ঋণাত্মক জিনিসই থাকে, সত্যিকারের প্রেমই শুধু থাকেনা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণীদের সঙ্গ না পাওয়া তরুণদের সংখ্যা প্রেমযুগলদের চেয়ে কম কি না? না, কম না, প্রেমযুগলদের চেয়ে তরুণীদের সঙ্গ না পাওয়া তরুণদের সংখ্যাই বেশি। অথচ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশের গর্ব, আমাদের বাঙালি জাতির জন্য একটি গর্ব, একটি খ্যাতিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠান তরুণ-তরুণীদের মেলামেশার ক্ষেত্রে রক্ষণশীলতা অবলম্বন করে। প্রতিষ্ঠানটিতে তরুণরা তরুণীদের সঙ্গে মিশতে পারলেও তরুণদের মনে থেকে যায় অনেক অশান্তি কারণ তারা তরুণীদের সঙ্গে ভালো করে মিশতে পারেনা, আজকাল আবার দেখা দিচ্ছে প্রেমের সম্পর্কে ফাটল যা তরুণ এবং তরুণী উভয়ের জীবনেই মারাত্মক অশান্তি ডেকে আনছে।
আমরা বাংলাদেশের যে কোনো প্রেম-ভালোবাসার দিকেই তাকাই না কেন, যদি ভালো করে ভেতরটা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখা যাবে যে, ঐ প্রেমের ক্ষেত্রে তরুণীটি তার প্রেমিকের কোনো না কোনো সফলতা দেখেই তার সঙ্গে প্রেম করেছে, মেয়েদের অবচেতন মন আমাদের দেশে এমনভাবে তৈরি হয়ে গেছে যে এখন চাইলেও কোনো মেয়ের মন-মানসিকতা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, মেয়েরা তাদের মনস্তত্ত্ব আমাদের দেশের পরিবার এবং সমাজ থেকে শিখেই তৈরি করে নেয়। একটি মধ্যবিত্ত তরুণীর লক্ষ্য থাকে কোনো একটি সফল তরুণ বা পুরুষের সঙ্গে প্রেম করার বা বিয়ে করার, সে নিজে শিক্ষিত হয়ে চাকরি করলেও তার পুরুষসঙ্গীটিকে সে কোনোভাবেই বেকার হিসেবে চাবেনা, আমাদের দেশের সামাজিক শিক্ষা হচ্ছে এটাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ ‘একটি খুনের স্বপ্ন’ নামের একটি উপন্যাস লিখেছিলেন, উপন্যাসটির প্রধান নায়ক তার প্রিয়তমা সুফিয়াকে অনেক ভালোবাসে, তাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে, কিন্তু তরুণী সুফিয়া উপন্যাসটির সর্বশেষে একজন সফল পুরুষের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, কেন তরুণীটি একজন কর্মজীবী পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হলো, এখানে হুমায়ুন আজাদও পাঠকদেরকে একভাবে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে, পুরুষদের সফলতা সত্যিই নারীদেরকে আকর্ষণ না করে পারেনা, উপন্যাসটির প্রধান নায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকে, আর সুফিয়া থাকে তারই সহপাঠিনী। আমাদের বাঙালি তরুণীরা পুরোনো রক্ষণশীলতা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি এখনো, আবার তরুণরাও অধিকাংশই পুরুষতান্ত্রিক, উল্টোদিকে তরুণীরাও পুরুষতন্ত্রবাদে দীক্ষিত।
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন, আমাদের বাংলাদেশের সমাজে এই শিক্ষাটাই দেওয়া হয়; ছেলেরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে তাদের উপরে সামাজিক চাপ আসে যে বিয়ে করতে হবে, এটা মেয়েদের উপরেও আসে, অথচ বাংলাদেশের সমাজে বিয়ে করা কঠিন, শুধু কঠিন না বলে অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ বলা ভালো কারণ ছেলেরা কর্মজীবী না হতে পারলে তাদের জীবনে বিয়ে বা প্রেম কোনোটাই আসেনা বলা যায়, আবার মেয়েদের জীবনে ঠিকই এগুলো আসে, তাদের বিয়ে বা প্রেম করার ক্ষেত্রে সফলতার দরকার পড়েনা শুধু দরকার পড়ে চেহারার সৌন্দর্য, এটাই তো রক্ষণশীলতা এবং পুরুষতান্ত্রিকতা; আমাদের সমাজে আবার শরীর-সর্বস্বতাও আছে, নারীরা কম যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের শিকার হয়নি আমাদের সমাজে, সব কিছুর জন্য দায়ী রক্ষণশীলতা এবং পুরুষতান্ত্রিকতাই। আমাদের সমাজে প্রেম তো একভাবে নিষিদ্ধ এবং প্রেম করার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য বিয়ে করে একটি রক্ষণশীল পরিবার তৈরি করা, সমাজে মাত্র হাতে গোণা কয়েকটি প্রেম সফল হয়, অধিকাংশ মানুষের জীবনেই বাংলাদেশের সমাজে প্রেমের ছোঁয়া লাগেনা, বাংলাদেশের অধিকাংশ তরুণ এবং তরুণী সত্যিকারের প্রেমের স্বাদ পায়না।
আপনি দেখেছেন না, যে, আমাদের দেশের প্রেমিক এবং স্বামীরা অধিকাংশই কৃষ্ণ বর্ণের হয়, এবং প্রেমিকা আর পত্নীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফর্সা হয়, ফর্সা হচ্ছে আমাদের সামাজিক আদর্শ অনুযায়ী সুন্দরী এবং টাকা-পয়সা ওয়ালা পুরুষ হচ্ছে সামাজিক আদর্শ অনুযায়ী ‘ভালো পুরুষ’। এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের সমাজে সব মেয়ের কি ফর্সা শরীর-চেহারা থাকে? বা সব ছেলে কি সফলতা অর্জন করতে পারে? প্রশ্ন করুন নিজেকে, না, পারেনা, না সব মেয়ে জন্মগতভাবে ফর্সা হয়, না সব ছেলে বড়ো হয়ে সফলতা অর্জন করতে পারে, কিন্তু তাও আমাদের অন্ধ-বদ্ধ সমাজ ছেলেমেয়ের উপর অনেক ধরণের রক্ষণশীল নিয়ম চাপিয়ে দেয়, যদিও কালো মেয়েদের বিয়ে হয় কিন্তু বেকার ছেলেদের কি বিয়ে হয়? রক্ষণশীলতা এবং পুরুষতান্ত্রিকতাবাদে ছেলেরাই বেশি বিপদে পড়ে। ফর্সা ছেলেরাও বেকার থাকলে মেয়েদের সঙ্গ পায়না আমাদের দেশে।
প্রাকৃতিকভাবে নারীসঙ্গ পাবার কামনা পুরুষদের জাগবেই, জাগাটা অস্বাভাবিক কিছুনা; কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব রক্ষণশীলতাবাদ, পুরুষতান্ত্রিকতাবাদ এবং শরীর-সর্বস্ব মতবাদ আর নারী-পরাধীনতাবাদ বাংলাদেশের সমাজে সব পুরুষকে নারীসঙ্গ দিতে পারেনা, পারছেনা, এর জন্য নারী এবং পুরুষ উভয়কেই মিলে বাংলাদেশের সমাজ থেকে সব ধরণের রক্ষণশীলতা মুছতে হবে, মুছতে হবে পুরুষতান্ত্রিক মতবাদ এবং শরীর-সর্বস্বতাবাদী মতবাদ; নারীদের সত্যিকারের স্বাধীনতা এবং স্বাতন্ত্র্যতা বাংলাদেশের সমাজে আনতেই হবে, নারীরা সত্যিকারের অর্থে স্বাধীন হলে তখন আর পুরুষদের নারীসঙ্গ পাবার ক্ষেত্রে সফলতা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হিসেবে কাজ করবেনা।
সব কিছুরই একটি ধারাবাহিকতা থাকে । একটি বেকার ছেলেকে একটি মেয়ে বিয়ে করে চাইবেনা এটাই স্বাভাবিক। কেননা যদি কোন স্বাবলম্বী নারী একটি বেকার ছেলেকে বিয়ে করে এর পরিনাম কখনই ভালো ফল দেয়না। বিয়ের পর এতে সবথেকে বেশি মানসিক সমস্যায় ভোগেন ছেলেরাই। কারণ একটি ছেলে তখন হীনমন্যতা অনুভব করেন । এটার পেছনে কারণ হিসেবে লেখকের মতামত অনুযায়ী আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক এটি কিছুটা যুক্তিযুক্ত হলেও ভিন্ন আরও কারণ থাকায় শুধুমাত্র পুরুষতান্ত্রিক সমাজ পরিবর্তন হলেও এর সমাধান হতোনা। আর যদি কোন বেকার ছেলেকে কোন কর্মজীবী মেয়ে বিয়ে করে তাহলে একটা সময় ডিভোর্সে গিয়ে ব্যাপারটা দাঁড়াবে । এইসব চিন্তা ভাবনা থেকেও একটি নারী চায়না তার জীবনসঙ্গী বেকার থাকুক। একটি বেকার ছেলেকে নিয়ে আমাদের সমাজেরও নাক ছিটকানো স্বভাব রয়েছে , তাই একটি মেয়ে শুরুতে বেকার ছেলেকে গ্রহণ করলেও সমাজের উস্কানিমূলক কথাকে এড়াতে না পেরে হয়তো একটা সময় বিচ্ছেদ ঘটায় ।
আমাদের সমাজেই কি শুধু নারীসঙ্গ পাবার জন্য পুরুষদের সফলতার দরকার পড়ে নাকি পশ্চিমি সমাজেও অনুরূপ জিনিস চলে; এটা নিয়ে বলা উচিৎ ছিলো।
আমাদের দেশের বেকার মেয়েরা কাজ না করলেও স্বামীর ঘর সামলায়,সারাদিন ধরে গৃহস্থালির সব কাজ করে,বাচ্চা লালন পালন করে, আর সেই ‘সো কল্ড’ বেকার তকমাটা গ্রহন করে। অন্য দিকে বেকার পুরুষরা শুধু শুধু আড্ডা দেয় অথবা সিগারেট ফুৎকিয়ে ডিপ্রেশন এর ভান করে।তাই একটা বেকার ছেলেকে কেউ বিয়ে করতে চায় না।
আপনি যথার্থ বলেছেন কিন্তু নারীকে স্বাধীনতা দেওয়ার মানসিকতা আমরা ধারণ করি না। এটার জন্য আমাদের হাজার বছর ধরে চলে আসা আবহমান কাল থেকে পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতিই দায়ী।
সাইন্টিফিকালি নারী পুরুষের সম্পর্কটাই তো নারী দেহের সাথে পুরুষের অর্থের বিনিময়ের সম্পর্ক। নারী এবং পুরুষ উভয়ের সেক্সুয়াল ডিজায়ার তৈরিকারী হরমোন টেস্টোস্টেরন পুরুষে অতিমাত্রায় বেশি থাকে। ফলে নারীদেহ পুরুষদের টার্ন অন করে কিন্তু পুরুষদেহ নারীদের এক বিন্দুও টার্ন অন করেনা। ফলে মেয়েরা সেক্সের চিন্তা কম করে অর্থ খোঁজে। এ ব্যাপারে সাম্প্রতিককালের মেরেডিথ শিভার্সের স্টাডিটা দেখা যেতে পারে। তাছাড়া, মেয়েরা পুরুষের চাইতে নারীর প্রতি অধিক আগ্রহী। শিভার্স স্টাডি, পর্ন স্টাডি সহ বিভিন্ন স্টাডিতে তা দেখা গেছে। সকল নারীই বাই সেক্সুয়াল অথবা লেসবিয়ান। যাইহোক, বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পুরুষকে টাকা দিয়েই নারীদেহ বা নারীসঙ্গ পেতে হবে। এটা উভয়ের জন্যই অবমাননাকর। ফলে, নারীর সাথে পুরুষের সম্পর্ক বর্জনীয় বলে মনে করি। বংশবৃদ্ধি জরুরি কিছু না। মানুষ না থাকলে তাতে কিছু যায় আসে না। আর, নারীরা নারীর সাথেই সেক্স করুক। এতে বিবর্তনের ধারায় পুরুষ বিলুপ্ত হয়ে নারী-নারী সেক্সের মাধ্যমে হয়ত বংশবৃদ্ধির নতুন কোন পদ্ধতির সূচনা হতে পারে।
নারীসঙ্গ পাবার জন্য পুরুষদের টাকা আয় করাটা জরুরি কেন? এটা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে অনেক বছর ধরে, আমি অনেক নারীবাদী পড়াশোনা করেছি, দেখেছি যে পুরুষতন্ত্রবাদ আমাদের সমাজে কি রকম শক্তিশালী যার কারণে আমাদের নারীরা সমকাম তো দূরের কথা একাকী জীবন যাপন করে কাটিয়ে দেবে সেই স্বাধীনতাটাই পায়না, রক্ষণশীল এবং পুরুষতন্ত্রবাদী বাংলাদেশী সমাজ মেয়েদেরকে ভোগ্যবস্তুর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে থাকে আবার পুরুষদেরকে ঐ দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সমাজে দেখা হয়না; বাংলাদেশের সমাজে ঋণাত্মকতা কোনোটাই মোছেনি, পশ্চিমি দেশগুলোতে কিন্তু নারীরা পুরুষদের সঙ্গ নিতে বাধ্য নয়, তাদেরকে বাধ্য করাও হয়না, তারা চাইলে পুরুষদের সঙ্গ নেয় আবার না চাইলে নেয়না, তারা সমকামের সম্পর্কে জড়াচ্ছে কোনো সমস্যা তো হচ্ছেনা; অনেক স্বাধীন পশ্চিমি নারীরা, আর আমাদের দেশের মেয়েরা রয়েছে এখনো পেছনে পড়ে যেখানে পুরুষকে বিয়ে করাই তাদের নিয়তি, তারা ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্বও করতে পারেনা সামাজিক নিষেধাজ্ঞার কারণে। আমাদের বাঙালি সমাজ এখনো ছেলেমেয়ের প্রেম-ভালোবাসা জিনিসটাকে সমর্থন করেনা ভালো করে।
বিবর্তন উন্নততর প্রজাতি সৃষ্টি করতে চায়।নিরাপত্তা প্রজাতির টিকে থাকা নিশ্চিত করে। বিবর্তন মেয়েদের উপর চাপ প্রয়োগ করার ফলে মেয়েরা নিরাপত্তা চায়। একজন আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছেলে নিরাপত্তা দিতে পারে যা মেয়েদের আকৃষ্ট করে।
আপনার কথা ঠিক আছে, আপনি বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছেন আর আমি বলেছি সামাজিক বিজ্ঞানের এবং নারীবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে।
আমি চাই না আমার প্রেমিকা অন্য পুরুষের সাথে মিশুক।আমার ইর্ষা হয়, খারাপ লাগে।এটা কোন প্রবৃত্তি?কেন এমন হয়?
আপনার মন্তব্যটি প্রাসঙ্গিক নয়; যাই হোক আপনি আপনার প্রেমিকা অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে না মিশুক এটা চাননা এরকম তো নারীরাও চিন্তা করেন যে তাদের প্রেমিকরা যেনো অন্য নারীর সঙ্গে না মেশে। আমার নিবন্ধটি এই বিষয়ে নয়।
কারো প্রেমিকা অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে মিশলে সেই প্রেমিক পুরুষটির ঈর্ষা হবেই, মনে অশান্তি সৃষ্টি হবেই, এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, সব কিছু আসলে নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা সম্ভব হয়ে উঠলেও মানুষের ব্যক্তিগত আবেগ অনেক ক্ষেত্রেই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আর নারীদেরও তাদের প্রেমিকদেরকে অন্য নারীদের সঙ্গে মিশতে দেখলে ধরুন শুধু কথা বলতে দেখলেও মনের ভেতর ঐ নারীর অশান্তি জাগবে যে আমার প্রেমিক অন্য নারীর সঙ্গে কথা বলে কেন, মানুষ হিসেবে এখানে পুরুষ এবং নারী উভয়েরই আসলে একই রকম প্রবৃত্তি থাকে। আশা করি আপনি উত্তরটি পেয়েছেন।
আপনার সবগুলো কথা মেনে নেয়া কঠিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা প্রেমিক যুগল, ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রেই তারা বিশেষত মেয়েরা ক্যারিয়ার সেন্ট্রিক। আপনার মত উন্মুক্ত মতামত বেশিরভাগেরই নাই। দিন যত যাচ্ছে, বিজ্ঞান যত বাড়ছে আমার দেখা ততই ধর্মান্ধতা বাড়ছে। সুন্দর মেয়ে ছাড়া বেশিরভাগ ছেলে যেমন মেয়েকে পছন্দ করে না, তেমনি সুদর্শন, টাকা ওয়ালা ছাড়া মেয়ে পাত্তা দেয় না। যদি এটা হিপোক্রেসি হয় হতে পারে।
ঢাবিতে মেয়েদের সিনিয়র অফিসার এটা ওটার সাথে বিয়ে হতে যেমন দেখেছি, তেমনি দেখেছি বড় ভাইয়ের জন্য ৪ টা বছর অপেক্ষা করতে, জবের পর তারা এই কিছুদিন হল বিয়ে করেছেন। আমার প্রশ্ন সবাই কি একটি সুন্দর মন নিয়ে প্রেমের হাত বাড়ায়? যদি বাড়াত তাহলে হয়ত ভাঙনের লিস্ট সুদীর্ঘ হত না। এখন যেটা হয় দেনা পাওনা ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে, সুন্দর মনের বা মানসিকতার চর্চা, উচ্চ প্রতিষ্ঠানের উচ্চমার্গীয় ধর্মীয় কুসংস্কারে নির্লিপ্ত হয়েই গেছে বলা যায়।
আচ্ছা এই বিষয়টা আমিও খেয়াল করেছি, বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে ধর্মান্ধতাও বাড়ছে , এর কারণ কি বলে আপনি মনে করেন? আমিও এই ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।
পুরুতন্ত্রবাদ যে সমাজে আছে সেই সমাজে ধর্ম শক্তিশালী অবস্থানে থাকবেই, আজ না হলে কাল আসবে এরকম, বাংলাদেশের সমাজে ধর্ম যদিও এখনো অতো কট্টরভাবে আসেনি, ইসলামের আইন এখনো বাংলাদেশে চালু হয়নি তবে সমাজে বোরকা পরিহিত নারী এবং দাড়িওয়ালা হুজুর পুরুষের সংখ্যা বেড়েছে এবং বাড়ছে; বাঙ্গালিত্ব সমাজ থেকে মুছে যাচ্ছে আসলে এর সঠিক কারণ আমার নিজেরও জানা নেই।
বাঙালি সমাজ সত্যিকারের উদারপন্থী বিজ্ঞান মনস্ক না, প্রগতিবাদী না। আমি সব প্রশ্নের উত্তর নিজেও জানিনা।
কিন্তু আগে ১৯৮০-৯০ এর দশকে কিন্তু বাংলাদেশে বিয়ে করা সহজ ছিল। তখনও পুরুষতান্ত্রিকতা আরও বেশি ছিল। এটার কারণ কি বলে মনে করেন? শুধু পুরুষতান্ত্রিকতা দায়ী বলে তো মনে হয় না।
আশির দশকে নব্বইয়ের দশকে বেকার ছেলেদের বিয়ে হতো ? আমি বলবো হতোনা। হয়েছে এমন উদাহরণ জানিওনা আমি।
আপনি কি মনে করে পুরুষতান্ত্রিকতা বেকার ছেলেদের বিয়ে না হওয়ার জন্য দায়ী? মেয়েরাই কখনো বেকার ছেলেদের বিয়ে করতে আগ্রহী নয়। সেটা নারীতান্ত্রিক সমাজ হলেও বেকার ছেলেদের মেয়েরা বিয়ে করবেনা। মেয়েরা ছেলেদের আর্থিক সক্ষমতাকে গুণ হিসেবে দেখে। আমার আজ পর্যন্ত জানা নেই কোন চাকরিজীবী মেয়ে কোন বেকার ছেলেকে বিয়ে করেছে কিনা, কিংবা সেই ছেলেটি আজীবন গৃহস্বামী হিসেবে থেকেছে কিনা। আপনি চাইলে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী David M. Buss এর লেখা “Evolution of Desires- Strategies of Human Mating” বইটি পড়ে দেখতে পারেন। লেখক সেখানে এক জরিপের ফলফলে দেখিয়েছেন যে আমেরিকায় মেয়েরা তাঁদের স্বামীর ইনকাম কম হলে অসন্তুষ্টিতে ভোগে এবং কর্মজীবী নারীদের পদোন্নতি ও আয় যদি স্বামীর তুলানায় বেশি হয়, তখন নারীরা বেশি ডিভোর্স করে থাকেন।
আমি কোনো পশ্চিমি সমাজের অনুকরণ করতে চাইনা, ওরকমটা আমি পছন্দও করিনা; আপনার কথা ঠিক আছে, আমি মূলত একটি ‘উদারপন্থী বাঙালি সমাজ’ কল্পনা করেছি; আপনি বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ পড়েছেন নিশ্চয়ই, এখানে নারীরা সমাজে সব ধরণের বাইরের কাজ করে আর পুরুষেরা প্রায় গৃহবন্দী, আমি যদিও পুরুষদের গৃহবন্দীত্ব সমর্থন করিনা, আমি নারী ও পুরুষের সমতা চাই।