আমার বন্দিত্বে যদি মুম্বাইর রাজপথে নেমে আসে
ময়ুরের দল ; গোয়ার সমুদ্র উপকূলে
ডিম পেড়ে যায় লাখ লাখ সামুদ্রিক কচ্ছপ ; যদি
সাগরলতার নীল বেগুনি ফুলে ঢেকে যায়
কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত ; তাহলে
আমি স্বেচ্ছায় বন্দিই থাকি ঘরে।
আমার বন্দিত্বে যদি
হাত পা কেটে ফেলা অরণ্যের বিকলাঙ্গ শরীরে
আবার নতুন শাখা গজায়;
পত্রপল্লবে ঢেকে যায় অশ্বত্থের ন্যাড়া মাথা।
যদি রামপালের আততায়ী হাত
চেপে না ধরে সুন্দরবনের শ্বাসনালী।এবং কার্বণের
গাঢ় চাদর সরিয়ে
উঁকি দেয় আকাশের উজ্জ্বল নীল; তাহলে নাহয়
আমি বন্দিই থেকে যাই।
আমার বন্দিত্বে যদি
হোমোসেপিয়েন্সদের অজৈবিক অনাচারে ক্লান্ত
মুমূর্ষ বনভূমি সবুজ ডানা বিস্তার করে
আবার আমাদের আঙ্গিনাকে ছুঁয়ে ফেলে ;
যদি পৃথিবীর সকল
বুনোপ্রাণী জঙ্গল ছেড়ে নেমে আসে লোকালয়ে এবং
একে একে দখল করে নেয়
আমাদের ফসলের জমি
কলকারখানা
খেলারমাঠ, অর্থ আর উল্লাসে ঢাকা
নান্দনিক সব ইনডোর আউটডোর স্টেডিয়াম।
মুক্ত পাখির দল ঝাঁকে ঝাঁকে
নেমে এসে দখল করে নেয় প্রতিটি বাড়ির ছাদ,খলা
আর সমতল উঠান।
যদি ইটভাটার পোড়ামাটিকে ওরা মল বিষ্টায় ঢেকে দিয়ে
আবার তার উর্বরতা ফিরিয়ে দেয়
তবে আমি বন্দিই থাকি ঘরে।
আমার বন্দিত্বে যদি দূরতম কোনো নক্ষত্রলোকে বসে
ধ্যাণমগ্ন রবীন্দ্রনাথ
বার্তা পেয়ে যান- নগর সভ্যতাকে হটিয়ে দিয়ে
পৃথিবীতে এসে গেছে আবার অরণ্যদিন;
এবং সিসমোগ্রাফে নেমে যায়
পৃথিবীতে মানবসৃষ্ট কম্পনের মাত্রা ;
এন্টার্কটিকায় বরফের পাহাড় আবার জমাট বাঁধে
সাগর নেমে যায় স্বাভাবিক উচ্চতায় ;
তাহলে আমার
স্থায়ী হোক হোম কোয়ারেন্টাইন।
আমার বদ্ধ দুয়ারে একটি চড়ুই পাখি এসে প্রতিদিন ঠোঁট
টুকরাতে টুকরাতে জিগ্যেস করুক- আছ নাকি ঘরে
ওহে আশরাফুল মুখলুকাত?
আমি ঋণগ্রস্থ পলাতক কৃষকের মতো ভয় ত্রাস লজ্জায়
লুকিয়ে থাকব ঘরের অন্ধকার কোনে।
সপ্তাহ মাস বছর দশক
একটি শতক।
————
আহমেদ শাহাব,৫ এপ্রিল,২০২০
স্যার,আপনার কবিতাটি অসাধারণ লেগেছে।আমি কবিতাটি আবৃত্তি করতে চাই।আপনার অনুমতি থাকলে আবৃত্তিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার নাম সহ প্রকাশ করতে চাই।
এক কথায় অসাধারণ।একরাশ মুগ্ধতা।