Amen সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হচ্ছে ফন্টানা। যিনি একজন তরুণ ক্যাথলিক যাজক। নাৎসি এসএস-অফিসার কার্ট জারস্টাইন থেকে ইহুদি গণহত্যার তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে তিনি তথ্যটি ভ্যাটিকানের পোপকে জানানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কেউ তাকে সহযোগিতা করতে নারাজ কারণ অন্যরা নিরপেক্ষতার (অক্ষয় শক্তি বিপক্ষে বললে যদি তাদের মিত্রশক্তির লোক ভাবে) নামে গণহত্যা বন্ধের উদ্যোগ না নিয়ে পোপকে নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করেছে। অনেকে এটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। শুধু জার্মান নয় ইতালি থেকে শুরু করে সমগ্র ইউরোপের ইহুদিদের রক্ষার জন্যে যেন পোপ এগিয়ে আসে তার জন্যে এই তরুণ যাজক লড়ে গেছেন। শেষে ফন্টানা পোপকে রেল স্টেশনে উপস্থিত হয়ে জার্মান সৈন্যদের হাতে ইহুদিদের ক্যাম্পে নির্বাসন বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া আহবান জানান। কিন্তু পোপ জার্মানির ভয়ে বিভিন্ন অজুহাতে জার্মানদের থামাতেও রাজি রাজি হয়নি। তখন এই তরুণ যাজক এক আশ্চর্য কাজ করে বসলেন। তিনি ভ্যাটিকান সিটিতে পোপের সামনে ইহুদিদের ডেভিডের তারা যুক্ত কাপড় বুকে লাগিয়ে সভা ত্যাগ করলেন। তা দেখে অন্যরা ব্লাসফেমি ব্লাসফেমি বলে চিৎকার করে উঠল। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, তিনি ইহুদিদের সাথে সেই মালবাহী ট্রেনে চড়ে বসলেন, যার গন্তব্য ছিল কোন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প! কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যখন ট্রেন থেকে সবাইকে নামানো হচ্ছে তখন ইহুদিদের সাথে একজন ক্যাথলিক যাজককে দেখে নাৎসিরা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। পরবর্তীতে এই তরুণ যাজক ইহুদিদের সাথে নিজেকেও গ্যাসচেম্বারে উৎসর্গ করেন, আর সাথে ছিল ডেভিডের সেই স্টার চিহ্ন।
সিনেমা দেখার সময় বাংলাদেশের একজনের কথা মনে পড়ল তিনি হলেন মুজিবুর রহমান। যিনি পাকিস্তানীদের নির্মম অত্যাচার দেখে নিজের নাম বদলে রাখেন দেবদাস। ভারতে গো মাংসের ইস্যুতে অনেক হিন্দু প্রকাশ্যে গরু খাওয়া কর্মসূচী নিয়েছিল। আমাদের আশেপাশে যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে এগুলো বেশির ভাগই পুরোটাই দালান কোঠা ছাড়া কিছু নয়, আর এই কারণে আধ্যাত্মিকবাদীরা এগুলোকে কখনো ঈশ্বরের ঘর বলে নাই। আর এই কারণে সমাজের অন্যায়ে, মানুষের দুর্দশায় এদের কাছে পাওয়া যায় না। প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষায় এরা সত্যকেও করব দিয়ে দিয়ে। জঁ-জাক রুসো যখন কিশোর বয়সে ক্যাথলিক যাজক হতে চেয়েছিলেন তখন তিনি যৌন হয়রানির শিকার হোন। এবং এই অন্যায়ের বিচার চাওয়ায় এবং অন্য মানুষকে এই ঘটনা বলে প্রতিষ্ঠানের নাম খারাপ করায় হাতে ৫০ টাকা দিয়ে তাকে বের করে দেওয়া হয়।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মন্দির ভারতে। এই মন্দিরগুলো একেকটি প্রতিষ্ঠান কিংবা দপ্তর! যারা ঈশ্বর ও মানুষের সাথে তথাকথিত দেনা-পাওনার বেনিয়ান হিসেবে কাজ করে। এখানে চাওয়া-পাওয়ার বাহিরে মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই। আর এই কারণে জয় শ্রী রাম নিয়ে অন্য এক মানুষের উপর এরা ঝাঁপাই পড়ে। যে মানুষগুলো দেখতে একে অপরের মতন, যারা জন্মের পর থেকে একে অপরকে দেখে আসছে, তাহলে কীভাবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে এভাবে আক্রমণ করতে পারে? পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দার্শনিক মতবাদটি প্রায় সব ধর্মই কমবেশি একই রকম বলে গেছে তাহলো; “তাই অপরের কাছ থেকে তোমরা যে ব্যবহার প্রত্যাশা কর, তাদের প্রতিও তেমনি ব্যবহার কর৷ এটাই হল মোশির বিধি-ব্যবস্থা ও ভাববাদীদের শিক্ষার অর্থ৷”- মথি ৭:১২, বাইবেল
Leave A Comment