লেখক: মাসুদ সজীব

(১)

অনলাইন জগত থেকে শুরু করে অফলাইনের জগতের নানান আলোচনায় গত কয়েক বছর ইনিয়ে-বিনিয়ে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়েছে ’মুক্তমনাদের মুক্তজ্ঞান চর্চার নামে ধর্মান্ধদের উস্কে দেওয়া এবং সেই উস্কানীর ফলে তাদের কোপানোর যৌক্তিকতা’। ফেসবুক ছহি মুসলমান থেকে টেলিভিশন মডারেটর সুশীল কিংবা পুলিশ প্রধান থেকে সরকার প্রধান সবার কন্ঠে একি সুর, একি কোরাস। এবং সেই কোরাসে থাকে, কিভাব দেশের শান্তি রক্ষা করে কোপাকুপি থেকে নিজেকে বাঁচানো যায়, সমাজ তথা রাষ্ট্রকে বাঁচিয়ে ক্ষমতাধরদের পদ, ক্ষমতাকে কলঙ্কমুক্ত রাখা যায়। এমন উপদেশনামায় মুক্তমনাদের কোপানোর বিষয়ে সুশীল মডারেটরদের থেকে উস্কে দেওয়ার অভিযোগের সাথে সামঞ্জ্যপূর্ণ আরো যে কয়টি অভিযোগ আমরা শুনতে পাই তার মাঝে উল্লেখ যোগ্য হলো উগ্র নাস্তিকতা, মনোজাগতিক সন্ত্রাস, আর মুক্তমনা মানেই কি ধর্মকে আক্রমণ প্রভৃতি।

এই যে চারিদিকে এত আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক তার সব কিন্তু পরস্পর বিরোধী দুটো দল কিংবা বিশ্বাসী মানুষদের নিয়ে। আর দু পক্ষ নিয়ে আলোচনার মূল আলোচক হলো অপব্যাখার স্বপ্নপুরুষ সুশীলবৃন্দ। সুশীলবৃন্দের অভিযোগ গুলোতে দৃষ্টি রাখলে এ কথা সহজে অনুমিত হয়, অভিযোগ সব এক পক্ষের উপরে। অর্থাৎ এক দল(মুক্তমনা) উস্কে দিচ্ছে, মনোজাগতিক সন্ত্রাস করছে, বাক স্বাধীনতার নামে ধার্মিক মানুষকে আক্রমন করছে বলেই আরেক পক্ষ নানামুখী আক্রমনের শিকার হয়ে শুধু তার প্রতিক্রিয়া (কোপানো) দিচ্ছে। সুশীলীয় মডারেটরা সমাধান দিচ্ছে এই প্রতিক্রিয়া (কোপানো) বন্ধ করতে হলে, মুক্তমনাদের কে উগ্রতা পরিহার করতে হবে, নম্র হতে হবে, দেশে মুক্তচর্চার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি ইহা মাথায় রেখে লিখতে হবে প্রভৃতি। ধর্ষনের অভিযোগে নারীর পোষাক কে উগ্র প্রমাণ করিয়া তারপর ধর্ষনের জন্যে কেবল নারী কে যেমন এই দেশে দায়ী করা হয়, ঠিক তেমনি এখানেও মডারেটরা সব দোষ মুক্তমনাদের গাড়ে চাপিয়ে মৌলবাদীদের পিঠ প্রতিনিয়ত চাপড়ে দেয়।

মুক্তমনা (সুশীলীয় বিচারিক ভাষায় উগ্র নাস্তিক) দের কোপানোর পর যে আলোচনাটি মুখ্য হয়ে আসে সেটি হলো তিনি কোথায়, কখন, কিভাবে, কি লিখে কাকে কাকে উস্কে দিয়েছেন। এই কাজটি এখন অতি নিষ্ঠার সহিত করে যাচ্ছে অনলাইনে সরকারের নানান পেটোয়া বাহিনী তথা নানান কওমি গ্যাং। ইহাদের আলোচনা থেকে এটি বুঝা যায় যে, এই বঙ্গদেশে কাউকে উস্কে দেওয়ার ক্ষমতা শুধু মুক্তমনাদের আছে, আর কেউ কোথাও কাউকে উস্কে দেয় না, দিতে পারে না। মুক্তমনা-রা বাদে দেশের সব মতের মানুষ একে অপরের জন্যে দুধভাত। আর যেসব মুক্তমনারা, দুধভাতে থাকা আমজনতা কে উস্কে দেয় তারা উগ্র নাস্তিক। এদের মতে, যারা নিজ দায়িত্বে উস্কানী খেয়ে খুন-খারাবী করে ফেলে তার শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়ার ফল। নিউটন বলেছেন, ’প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে।’ সুতরাং বিজ্ঞান-ই বলছে বিপরীত প্রতিক্রিয়াতে কোন দোষ নেই। কুপানোর এমন সহি বৈজ্ঞানিক ব্যাখা আজকাল সবাই দিচ্ছে। দেশে ও জাতি বিজ্ঞানে মই বেয়ে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে ভেবে আপনি পুলকিত হতেই পারেন। কিন্তু এমন অপব্যাখায় মুক্তমনারা পুলকিত হয় না, কারণ তারা জানে নিউটনের সূত্র মতে ’দেয়ালের দিকে গোলাকার বল ছুঁড়ে মারলে দেয়াল প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সেই বলকে ছুরি তে পরিণত করে না, ফিরতি জিনিসটাও সেই গোলাকার বল-ই থাকে।।

(২)

আচ্ছা এই যে উস্কে দেওয়া, উস্কে দেওয়ার রব উঠেছে চারিদিকে, উস্কে দেওয়া বিষয়টা আসলে কি? আর উস্কে দিলেই তার প্রতিক্রিয়া কি হওয়া উচিত? উস্কে দেওয়া বলতে এখানে বুঝায় কারো ধর্মানুভূতি কে অশ্রদ্ধা করা, তার ধর্ম কে প্রশ্ন করা, তার ধর্মের পবিত্র পুরুষদের জীবনের নানান বিষয়ে প্রশ্ন সহ কার্টুন/ব্যঙ্গ চিত্র করা? আচ্ছা এই গুটিকয়েক পরিসরের মাঝেই কি উস্কে দেওয়ার পরিধি সীমাবদ্ধ আছে, ছিলো কোন কালে? আস্তিক আর নাস্তিক তথা মুক্তমনা আর ধর্মান্ধতার এই লড়াই টা আজকের নয়। যারা ভাবছেন ২০১৩ সালে রাজীব হায়দার কে হত্যার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাহলে তারা এতকাল ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। বাংলাদেশে ও এ যুদ্ধ, এ মত পার্থক্য বহু পুরানো। আর বিশ্ব ইতিহাসে তো সভ্যতার শুরু থেকে এ দ্বন্দ্ব বিরাজমান। তবে পার্থক্য হলো যুগের সাথে এই উস্কে দেওয়ার সীমা-পরিসীমা পরিবর্তিত হয়েছে। আর সেই সীমা পরীসামা আজকের মতো তখনও এক পক্ষই নির্ধারণ করেছে অর্থাৎ মডারেটর-রা। আজকে যারা বলছে ’আমার নবী কে ব্যঙ্গ করেছে বলেই তো কোপ টা খেয়েছে’, ঠিক এদের পূর্ব পুরুষরাই ব্রুনো কে আগুনে নিক্ষেপ করেছে শুধু পৃথিবীটা ঘুরে বলার অপরাধে ! সক্রেটিস কে বিষ দিয়ে হত্যা করেছিলো শুধু ন্যায় কি, অন্যায় কি এরূপ প্রশ্ন করার অপরাধে। সুতরাং এই যুগে মুক্তমনাদের দোষ বেশি কি কম তা নির্ধারণের কাজে নিয়োজিত বিচারকদের উন্নতি বলতে এইটুকু যে, একযুগে যারা পৃথিবী ঘুরছে বলা কে উস্কে দেওয়া মনে করতো, আর আজ তাদের বংশধর-রা ধর্মকে প্রশ্নের মুখোমুখি করাকে উস্কে দেওয়া বলছে।

সত্যিকার অর্থে উস্কে দেওয়ার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। ঠিক কতটুকু প্রশ্ন করলে, কত টুকু লিখলে/বললে কোন ধর্মের কোন মানুষে ভেতর কোন পশুত্ব কে উস্কে দেওয়া হবে এর কোন আদর্শ মান যেহেতু নেই সেহেতু উস্কে দেওয়ার মাত্রা দিয়ে মুক্তমনাদের উগ্র নাস্তিক-নম্র নাস্তিক এমন শ্রেণীভাগ করাও অযৌক্তিক এবং বালখিল্য।

আমার দাদা বেঁচে থাকা অবস্থায় আমাদের গ্রামের বাড়ীতে কেউ টেলিভিশন দেখতে পারতো না, কারণ টেলিভিশন আমার দাদার ধর্মানুভূতিতে আঘাত করতো অর্থাৎ সুশলীয় ভাষায় দাদা কে উস্কে দিতো। ফলে কেউ টেলিভিশন চালু করলে দাদা লাঠি নিয়ে আসতেন। তাহলে বলা যায় এখানে টেলিভিশন উগ্র নাস্তিকের ভূমিকা পালন করছে। আবার আমার বাবাও ধর্ম মানতো, ধার্মিক মানুষ ছিলেন কিন্তু তিনি টেলিভিশন দেখতেন, সেটা তাঁকে উস্কে দিতো না সুতরাং টেলিভিশন বাবার কাছে নম্র নাস্তিক ধরা যায়। বাবা পল্লীগীতি শুনতেন মনের সুখে অথচ ব্যান্ড সংগীত শুনলে মেজাজ খারাপ করতেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে বাবা আর দাদা তে উস্কে দেওয়ার বিষয়টার পরিবর্তন ঘটলো। এভাবে সময়ের সাথে প্রতিটি মানুষে-মানুষে উস্কে দেওয়ার বিষয়, সীমানা পরিবর্তন হয়, হচ্ছে। শুধু সময়ে নয়, একি সময়ে একি ঘটনা একজন কে উস্কে দিলেও আরেকজন কে উস্কে দিচ্ছে না। একজন মসজিদের ইমামের কাছে পাড়ায়-মহল্লায় যাত্রা, মঞ্চ নাটক উস্কানীমূলক কাজ এবং সেই পাড়ায়, সেই সমাজে তার মতের মানুষ বেশি হলে তিনি অবশ্যই সেই অনুষ্ঠান তার শক্তি বলে বন্ধ করে দিবেন। আবার একজন স্কুল শিক্ষকের কাছে সেটা স্বাভাবিক মনে হতেই পারে, এবং তার মতের মানুষ বেশি হলে পেশী শক্তি বলে সেই অনুষ্ঠান প্রতিবছর-ই হবে। ফলে দেখা যাচ্ছে কারো পক্ষে বলা সম্ভব না কোনটা কম উস্কানীমূলক আর কোনটা বেশি। আরেকটি বিষয় একটু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে অনুধাবন করা সম্ভব, কোন টা উস্কানী আর কোনটা উস্কানী না সেটা নির্ধারণ করছে পেশী শক্তি অর্থাৎ যে পক্ষের মানুষ বেশি সেই পক্ষই তার মতের বাহিরের কাজ কে উস্কানী বলে ঘোষনা দিচ্ছে। উস্কানীর বিষয়ে যেহেতু কোন সীমা-পরীসীমা টানা সম্ভব না তাই উগ্র-নম্র-মধ্য এমন বিশেষণ অপ্রোয়জনীয়।

আচ্ছা, উস্কানী টা কি শুধু মুক্তমনারাই দিয়ে থাকে? যদিও ধর্মান্ধ আর মুক্তমনা আলোচনায় অবশ্যই উস্কানীর পুরো দায়ভার টা মুক্তমনাদের উপর দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে দেখা যাবে কথিত উস্কানী ধর্মান্ধ পক্ষও দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের মফস্বলে, গ্রামে, শহরে পাড়ায় পাড়ায় যে ওয়াজ-মাহফিল গুলো হয় সেখানে কিভাবে ইসলাম ধর্মের বাহিরের মানুষদের কটাক্ষ করা হয়, বিদ্রুপ করা হয়? সেগুলো কি উস্কানীমূলক নয়? আচ্ছা যেমন এই ভিড়িও টার কথাই ধরুন, এখানে প্রথমে হিন্দু ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে তারপরে আমাদের অর্জনের অন্যতম ২১ শে ফেব্রেুয়ারীতে ফুল দেওয়া তে ফতোয়া দিয়ে অসম্মান জানানোর পাশাপাশি এই সম্মান জানানোর চেষ্টাকে বাতিল করা হয়েছে। চাইলে এমন হাজার হাজার ভিড়িও লিংক দেওয়া যাবে যেখানে ইসলাম ধর্মের বাহিরের মানুষ কে অশ্লীল নোংরা ভাষায় বিদ্রুপ করা হয়েছে, গালিগালাজ করা হয়েছে, ছোট করা হয়েছে। তাহলে এগুলো কেন উস্কানীমূলক হবে না? আর উস্কানী যদি হয়েই থাকে তাহলে মুক্তমনা সহ ভিনধর্মের মানুষরা কেন নিউটনের সূত্র মেনে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না? নাকি অনুভূতি কেবল তারাই ধারণ করে আর বাদ বাকী সবাই অনুভূতিহীন, লজ্জাহীন, ঘৃনাহীন, আক্রোশহীন, প্রতিবাদহীন?

(৩)

বুদ্ধিভিত্তিক নানান আলোচনায় নানান ছেলিব্রেটি বুদ্ধিজীবি উস্কানীর সাথে আরেকটি বিষয়ের উপর খুব গুরুত্ব আরোপ করেন। সেটি হলো মনোজগতে সন্ত্রাস এবং বলে থাকেন শারীরিক সন্ত্রাসের চেয়ে এটা কোন অংশে কম নয়। কোন প্রকার তর্কে না গিয়ে ধরে নিলাম মনোজগতেও সন্ত্রাস করা সম্ভব এবং এটা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটা কি শুধু মুক্তমনারাই করছে? কোকিলের মতো চোখ বন্ধ করে কাকের বাসায় যতই ডিম পাড়ুন সত্য হলো মনোজগতে সন্ত্রাস ধর্মান্ধরাও প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে নানান জায়গায়। পার্থক্য টা হলো সেই মনোজাগতিক সন্ত্রাসে উস্কে গিয়ে কোন মু্ক্তমনা কোন ধর্মান্ধকে কোপ দিচ্ছে না।

তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো? একপক্ষ সব কিছু কে সহ্য করে তার জবাব কলম দিয়ে দিচ্ছে আর আরেক পক্ষ চাপাতি দিয়ে দিচ্ছে। তারপরও মড়ারেটর-রা এসে চাপাতিওয়ালার ঘাড় থেকে দোষকে লাঘব করতে উস্কানী, মনোজাগতিক সন্ত্রাস (শারীরিক সন্ত্রাস অভিযোগটি আনতে পারে না, কারণ মুক্তমনারা শারীরিক আঘাতে বিশ্বাস করে না) সহ নানান বিশেষণ দিয়ে থাকে।

সারা বিশ্বে অসংখ্য ধর্মান্ধ মুসলমান জঙ্গি (আইএস, আল শামস, বোকা হারাম, আল কায়দা, লস্কর-ই তৈয়বা সহ অস্যংখ সংগঠন) সংগঠন খ্রিষ্টান, ইহুদি সহ নানান ধর্মের মানুষ হত্যা করছে। এমনকি মুসলমানদেরও হত্যা করছে। এখন এই হত্যাকান্ডে খ্রিষ্টান-ইহুদি রাষ্ট্রগুলো অনুভূতিতে আঘাতের দোহাই, উস্কানীর অভিয়োগ দিয়ে কি তাদের দেশে মুসলমান দের মেরে ফেলছে? নাকি তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে? তারাও তো মানুষ, তাদেরও তো অনুভূতি আছে? তাহলে তারা এসব করছে না কেন ভেবেছেন কখনো? নাকি ভাবেন সব অনুভূতি শুধু একটা ধর্মের মানুষদের আছে, অন্য কোন ধর্মের মানুষ দের কোন অনুভূতি নেই? নাকি নিউটন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সূত্র শুধু মুসলমানদের জন্যে আবিষ্কার করেছিলেন?

অনুভূতি, উস্কানী, মনোজাগতিক সন্ত্রাসের পরে আরো একটি শব্দ এখন বহুল প্রচলিত এমন বুদ্ধি বেশ্যাদের আলোচনায়। সেটি হলো মু্ক্তমনা মানেই কি ধর্ম বিরোধী?

এই প্রশ্নটি-ই সবচেয়ে অশ্লীল এবং উদ্দেশ্য প্রণীত। প্রথম কথা ধর্ম বিরোধী হলে সমস্যা কোথায়? কে বিশ্বাসী হবে আর কে অবিশ্বাসী হবে সেটা নিয়ে কথা বলার, প্রশ্ন রাখার অধিকার তো কারো নেই। এমন না যে বাংলাদেশে এমন কোন আইন আছে যে, ধর্ম অবিশ্বাসী হলে সে অপরাধী, তাকে হত্যা করতে হবে? তারপরও এই প্রশ্ন করে এমন একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে যে, ধর্মে বিশ্বাস না রাখা ভয়ংকর এক অপরাধ। এই প্রশ্নের মাঝেই রয়েছে ধর্মে অবিশ্বাসী হলেই তার সব ভালো কর্ম কে বাতিল করে দেওয়ার প্রাথমিক চেষ্টা।

মুক্তমনা ধর্ম বিশ্বাসী কি অবিশ্বাসী সেটা জানার আগে জানতে হবে মুক্তমনা কি? মুক্তমনার অর্থ হলো যারা যুক্তি, প্রমাণ আর প্রশ্ন ছাড়া কোন প্রথা-অন্ধ বিশ্বাস কে মেনে নেয় না, কোন কিছুর অন্ধ পূজো করে না। সেটা হতে পারে ধর্মে, সেটা হতে পারে রাজনৈতি বিশ্বাসে, সেটা হতে পারে শিল্প-সাহিত্য ভাবনায়। এখন কারো বিশ্বাসে যদি যুক্তি না থাকে, প্রমাণ না থাকে, প্রশ্নের উত্তর না থাকে, তাহলে মুক্তমনা মানুষ সেটা গ্রহণ করবে না। যেমন ধর্মান্ধরা আকাশের বুকে, গরুর শরীরে, মাছের শরীরে সৃষ্টিকর্তার নাম দেখতে পায়, মুক্তমনরা দেখে না। কারণ তারা জানে এগুলো বিভ্রান্ত মূলক ফটোশপ এবং নিজের মনের অতি কল্পনা। এখন এসবের বিরোধীতা মুক্তমনারা করবেই, আর করলে ধর্মান্ধদের বিচারে তারা অবশ্যই ধর্মবিরোধী। মুক্তমনারা যুক্তি প্রমাণের বাহিরে অলৌলিক কিছুতে বিশ্বাস করে না, প্রশ্ন ছাড়া কিছু মেনে নেয় না বলেই সিজদা ওয়ালা গাছের ছবি, কবরের ভেতর মৃত ব্যাক্তির কান্নার খবর বিশ্বাস করে না। কারণ স্বাভাবিক বিচ্যুতি কিংবা প্রাকৃতিক কোন কারণে একটি গাছ বাঁকা হয়ে থাকলে তার মানে এই না গাছটি সিজদা দিচ্ছে। গাছের যদি সৃষ্টিকর্তা কে এতই প্রার্থনা করা জরুরী হয়ে যেত তাহলে সব গাছ-ই সিজদা দিতো। প্রকৃতির নানা বিচ্যুতি কিংবা বৈচিত্র্যাতাকে যারা সৃষ্টিকর্তার অশেষ লীলা ভেবে প্রচার করে, মুক্তমনারা সেগুলো কে যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে বিচার করে বাতিল করে। তাই মুক্তমনা-রা ধর্ম বিশ্বাসী কি অবিশ্বাসী সে প্রশ্ন করার আগে নিজের বিশ্বাস কতটুকু যৌক্তিক সেটা বিচার করা বুদ্ধিমানের কাজ।

লেখালেখি কিংবা মত প্রকাশের জন্যে কাউকে হত্যা কখনোই কোন যুক্তিতে গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। মুক্তভাবে মত প্রকাশের জন্যে কাউকে খুন করা যেমন ঘণ্যৃ অপরাধ তেমনি হত্যার পরে সেই হত্যাকে নানান কু-যুক্তি ভরা অপব্যাখা দিয়ে বৈধতা দেওয়াও সমান ঘৃণ্যিত অপরাধ। আসুন এই দুই ধরনের অমানুষদের ঘৃণা জানাই, তাদের কৃতকর্মকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করি, অপব্যাখায় নিজে বিভ্রান্ত না হই এবং অন্যকে ও বিভ্রান্ত হওয়া থেকে সচেতন করি। সত্য ও সুন্দরের জয় হবেই।