লিখেছেনঃ সাইফুল ইসলাম
মার্কিন নির্বাচন নিয়ে, মূলত ট্রাম্পকে ট্রল করা নিয়ে গত কয়েকমাস ফেসবুক এবং ব্লগে রীতিমতো ঝড় বয়ে গেছে । ইচ্ছাকৃতভাবেই পুরোটা সময় জুড়েই নিজেকে এই ঝড়ের বাইরে রেখেছিলাম । নির্বাচন শেষ, সব অনুমান-পরিসংখ্যানকে ভুল প্রমান করে জয়ী হয়েছে ট্রাম্প । ট্রাম্পের এই অভাবনীয় জয় নিয়েও সন্দেহ-অবিশ্বাস মিশ্রিত ট্রলিং হয়েছে বেশ । দুই দিন বাদে সেই ঝড় কিছুটা স্তিমিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে । এবার কিছু সিরিয়াস কথা বলা যাক ।
ট্রাম্প এবং আমাদের অনন্ত জলিলের মধ্যে একটা চমৎকার মিল আছে । তারা দুই জনেই মূলত ব্যবসায়ী এবং দুই জনেই তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল । নিজের গন্ডিতে পরিচিত হলেও পাবলিকলি তারা দুইজনেই পরিচিতি পেয়েছেন নিজের ক্ষেত্রের বাইরে এসে । একজন মিডিয়াতে এবং আরেকজন রাজনীতিতে । কিন্তু দুইজনেরই একটা জায়গায় অসম্ভব মিল আছে । কি মিল, সেটা খুঁজে বের করার চেস্টা করবো । এরপর সিদ্ধান্ত নেয়ার চেস্টা করবো, তারা আসলেই বোকা নাকি আমাদেরকেই বোকা বানাচ্ছে তারা ।
১) পারিবারিক সূত্রেই ট্রাম্পরা ব্যবসায়ী । তার বাবা মিলিয়নিয়ার ছিলেন, মারা গিয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি, ১৯৯৯ সালে । মারা যাওয়ার সময় তার সম্পত্তি ছিলো নিউ ইয়র্ক টাইমস এর হিসাবে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার । তবে ট্রাম্প পেয়েছিলেন এর ছোট্ট একটা অংশ । যদিও সঠিক পরিমানটা জানা যায়নি, তবে ধারণা করা হয়, ২০ মিলিয়নের আশেপাশেই হবে সেটা
২) অনন্ত জলিলের ট্রাম্পের মতো কোন প্রতিষ্ঠিত ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না । তার ভাষ্যমতে, ঢাকার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে “O” এবং “A” লেভেল এবং ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ [সূত্রঃ ৩] শেষ করার পর সে তার ক্যারিয়ার শুরু করে প্রোডাকশন জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে, ১৯৯৯ সালে [সূত্রঃ ৪] । কাকতালীয়ভাবে ট্রাম্পের বাবা মারা যাওয়ার সনও ১৯৯৯ । এরপর সময় গড়িয়েছে, একজন কর্মচারী থেকে সে নিজেই শুরু করেছে গার্মেন্টস ব্যবসা । আর বর্তমানে সে ১৫ টা প্রতিষ্ঠানের মালিক [সূত্রঃ ৫] । RMG(Ready Made Garments) সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সে একবার না, কয়েকবার CIP (Commercially Important Perseon) অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে । ব্যবসাক্ষেত্রের বাইরেও সে প্রচুর সমাজসেবামূলক কাজের সাথে জড়িত [সূত্রঃ ৬] । ২০০৮ এ যাত্রা শুরু হয় তার চলচিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান “মনসুন ফিল্মস” এর, যার ব্যানারে এখন পর্যন্ত বের হয়েছে ৬ টা সিনেমা এবং তার মধ্যে ৪ টাই ব্লকবাস্টার হিট । আর আপনারা মনে করেন সে বেকুব? সে আসলেই ইংরেজি বলতে পারে না? সে হাস্যকর কাজ করে এবং সে এটা নিজেও বুঝে না?
৩) অনন্ত জলিলের মতো একজন ব্যবসায়ী, যে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালেখা করছে, শুন্য থেকে শুরু করে ১৫ টা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হইছে, একের পর এক ব্লকবাস্টার হিট মুভি বানাইতেছে, তাকে আমরা মনে করি বেকুব, ইংলিশও ঠিক মতো কইতে পারে না, আউল ফাউল হাস্যকর সিন দিয়ে মুভি ভরিয়ে রাখে । যদি বলি যে, তার এই সব কিছুই ইচ্ছাকৃত? সে ভালোমতোই জানে বাংলাদেশের মানুষের কোন বিষয়ে আগ্রহ বেশি, কিভাবে সেই মানুষদেরকে নিজের সম্পর্কে আগ্রহী করা যাবে । এবং সে সেই কাজই করছে । নিজের পার্সোনালিটির বাইরে বেরিয়ে এসে সে নিজেকে মানুষের সামনে হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করছে । মানুষ মজা পাইছে, তাকে নিয়ে মজা করাটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে রীতিমতো, আর সেই মজা করাটাই হয়ে গেছে তার বিনামূল্যে বিজ্ঞাপণ । জাস্ট হাসার জন্য হলেও মানুষ তার সিনেমা দেখতে যায়, কমেডি সিনেও হাসে, সিরিয়াস সিনেও হাসে । ফলাফল মুভি বাম্পার হিট । একজন ব্যবসায়ীর চাওয়াটাইতো থাকে এইটা ।
৪) ট্রাম্পও একই, তার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নাই, যেটা হিলারির আছে । শুধু আছে বললে ভুল হবে, বেশ ভালোভাবেই আছে । সুতারাং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার দিক থেকে হিলারিকে টেক্কা দেয়া ট্রাম্পের জন্য রীতিমতো অসম্ভব বলা যায় এবং ট্রাম্প সেদিকে যায়ও নাই । সে সরাসরি মানুষের সেন্টিমেন্টের জায়গায় হাত দিছে । রাজনৈতিক প্যাঁচাল না, কোন সুশীলতার মুখোশ না, আমেরিকার মানুষ যা শুনতে চায়, সে সেগুলা শুনাইছে । যেহেতু সুশীলতার মুখোশে সেসব বলে নাই, তাই তার অনেক কথাই সাধারণ পাবলিকের কাছে ফালতু মনে হইছে, পাগলের প্রলাপ মনে হইছে । কিন্তু শুনতে খারাপ হোক বা ভালো, ব্যাপার হইলো, বিশাল একটা অংশের মানুষ সেই কথাগুলাই শুনতে চায়, সে কথাগুলা শুনে নিজেকে বক্তার সাথে কানেক্ট করতে পারে । এবং ট্রাম্পও দিনের পর দিন এটাই করে গেছে । যারা তার কথা পছন্দ করে নাই, তারা তার কঠিন সমালোচনা করতে লাগলো এবং সেইটাও রীতিমতো ট্রেন্ড হয়ে গেলো, যেটা আদতে হলো বিনামূল্যে ট্রাম্পেরই প্রচারণা । এর মধ্যে ফাঁস হলো হিলারির ইমেইল কেলেঙ্কারি, যেটার কারণে ভাসমান ভোটারদের বড় অংশ সরে এলো ট্রাম্পের দিকে । মানুষ দু’মুখো সাপ থেকে সোজাসাপটা পাগলকে বেশি পছন্দ করে । ফেসবুকে ট্রাম্পের অটো মেসেজ নিয়ে আমরা মজা করেছি না অনেক? যদি বলি, এই ধরণের ব্যাপারগুলা ট্রাম্পকে সাধারণ মানুষের আরও কাছে নিয়ে আসছে ! হোকনা সেটা অটো মেসেজ, কিন্তু কিছু মানুষের মধ্যে হলেও এই ধারণা আসবে যে, ট্রাম্প সাধারণ পাবলিকের মতামতকে গোনায় ধরে অন্তত । হিলারিকে মেসেজ দেয়ার কোন অপশন কিন্তু ছিলো না ! শুধুমাত্র উপরে বলা এসবের কারণে ট্রাম্প জিতছে, এটা বলা ভুল, শুধু ভুল না, বিরাট ভুল । কিন্তু এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাপারগুলো মিলে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে নির্বাচনে এটা নিঃসঙ্কোচে বলাই যায় ।
৫) ট্রাম্প এবং অনন্ত জলিল দুইজনের কেউই বোকা না । তারা কি ভালো মানুষ নাকি খারাপ, সেটা ব্যাপার না, ব্যাপার হলো, তারা দুজনেই প্রচন্ড চালাক এবং স্মার্ট । অন্য অনেক চালাক এবং সফল মানুষের মতোই তারাও মানুষের মনস্তত্ত্ব পড়তে পারে । আমরা আসলে তাদের সম্পর্কে ভাবি না, তারাই বরং ঠিক করে দেয়, আমরা তাদের সম্পর্কে কি ভাববো ! ১৯৯৮ সালেই পিপল ম্যাগাজিনের একটা সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিল,
“If I were to run, I’d run as a Republican. They’re the dumbest group of voters in the country. They believe anything on Fox News. I could lie and they’d still eat it up. I bet my numbers would be terrific.”
১৮ বছর আগে বলা তার কথাটা কি ভুল হলো? তবে উপরোক্ত কমেন্টের ব্যাপারটা তার বিপক্ষে করা প্রচারণাও হতে পারে [সূত্রঃ ৭] । সে যাই হোক, ট্রাম্প ভালোমতোই জানে তার টার্গেট পিপল কেমন, এবং সে সেভাবেই তার পুরা প্রচারণা চালিয়েছে এবং দিনশেষে সে সফল । শুধু সফল বললে ভুল হবে, গত ৯০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে সে তিন ডিপার্টমেন্টেই (প্রেসিডেন্সী, হাউজ এবং সিনেট) জয়ী হয়েছে । নির্বাচনের আগে দেয়া তার বক্তব্যের সাথে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার দেয়া বক্তব্য মিলিয়ে দেখে দ্বন্দে পড়ে গিয়েছিলেন? মানুষ কিন্তু রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যায় না, তাই না?
শার্লক সিরিজের প্রথম পর্বে (A Study in Pink) সিরিয়াল কিলার ক্যাব চালকের একটা ডায়ালগ আছে,
“I know how people think. I know how people think I think. I can see it all like a map inside my head. Everyone’s so stupid.”
ট্রাম্প এবং অনন্ত জলিল দুই জনের ক্ষেত্রেও এই কথাটা প্রযোজ্য । এখন নিজেই সিদ্ধান্ত নিন, ডাম্ব এবং স্টুপিড কে?
তারা?
নাকি তাদেরকে ডাম্ব এবং স্টুপিড ভাবা এই আমরা?
.
.
.
(এই লেখাটা আমি আমার ফেসবুক পেজে দিয়েছি: লেখক)
[সূত্রঃ ১]
[সূত্রঃ ২]
[সূত্রঃ ৩]
[সূত্রঃ ৪]
[সূত্রঃ ৫]
[সূত্রঃ ৬]
[সূত্রঃ ৭]
আমেরিকার এবারের নির্বাচনের ফলাফল দেখে মনে হচ্ছে, আমেরিকানরা যতটা না বর্ণবাদী তারচেয়ে বেশি লিঙ্গবাদী। একজন কৃষ্ণাঙ্গকে এরা দুবার প্রেসিডেন্ট হিসাবে চাইলেও একজন নারীকে কিন্তু একবারের জন্যও চাইলো না। একজন নারী মানুষের চেয়ে এদের কাছে একজন পুরুষ অমানুষ অনেক ভালো।
মুক্তমনায় স্বাগতম। নিয়মিত লিখুন প্লিজ।
আপনার পয়েন্টটা হয়তো কিছু মানুষের মনে কাজ করেছিল, তবে এতোটা জেনারালাইজ করে ফেলা ঠিক হবে কি? হিলারির দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আছে, তবে নারীদের নিয়ে তার কোন স্পষ্ট ভুমিকা আছে কি? আর মানুষ-অমানুষের প্রশ্নে, হিলারির দ্বৈত নীতির সংবাদ হয়তোবা পড়েছেন যেগুলা উইকিলিক্সের মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল । সে প্রচন্ডভাবে নিজের স্বার্থ দেখা একটা মানুষ (নারী-পুরুষ ব্যাপার না) । সে আইএস এর উপর বোমা হামলা সমর্থন করে, আবার সেই আইএসকে অর্থ-অস্ত্র সাপ্লাই দেয় । সে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, অথচ তার বেশিরভাগ ডোনেশন সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত সব অন্যান্য জঙ্গী অর্থায়নে সন্দেহভাজন দেশগুলা থেকে আসছে । সে টিপিক্যাল রাজনীতিবিদদের মতোই মুখে সাধু সেজেই ছিল, কিন্তু তার কাজ কর্ম চরম নোংরা । তাকে “মানুষ” মনে হওয়ার কারণটা কি বলতে পারেন? যদি বলি, একজন “পরীক্ষিত অমানুষ” থেকে আমেরিকার জনগন আসলে একজন “বোধহয় অমানুষ” কেই সুযোগটা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিছে, তাহলে কি ভুল বলা হবে?
আইএসকে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য দেবার ব্যাপারটা কি আসলেই সত্য? নাকি এটা শুধু শত্রুতা করে বলা একটা অসত্য কথা? কারণ আইসিস তো আমেরিকাকে ঘৃণা করে। তাছাড়া হিলারিরই বা লাভ কী ওদের সাহায্য করে? আমি ঠিক মেলাতে পারি না এই হিসাব। হিলারির সম্পর্কে আর বাকি যা বলেছেন তা মিথ্যা নয়। আমিও হিলারির তেমন সমর্থক নই। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ভোট দেবোই না কাউকে। কারণ এদের একজনও আমার কাছে প্রেসিডেন্ট হবার যোগ্য নয়। পরে ভাবলাম, কম খারাপটাকেই দিয়ে দিই।
কিন্তু যে লোক প্রকাশ্যে অসংখ্যবার বলেছে, ম্যাক্সিকোর সীমান্তে দেওয়াল বানাবে, ম্যাক্সিকানরা দেখতে শুয়োরের মত, এবং এরকম আরো অনেককিছু; তাকে লোকে ভোট দেয় কিভাবে?
সে অলরেডি ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে যে অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেবে অচিরে। লিগেল কাগজহীন পরিচিত সবাই ভয়ে অস্থির হয়ে পড়েছে।
আপু, আইএস কে অর্থ দেয়া এবং তার নির্বাচনী ফান্ডে জঙ্গীবাদ প্রচার এবং প্রসারকারী দেশগুলার টাকা নেয়া – এসব খবর তো কোন থার্ড ক্লাস খবরের কাগজে আসে নাই যে এগুলাকে কন্সপাইরেসি বলতে হবে । এগুলা তার ফাঁস হয়ে যাওয়া ইমেইল একাউন্ট থেকে বের হইছে ।
আমেরিকা এর আগে রাশিয়াকে চাপে ফেলার জন্য আল-কায়েদা এবং লাদেনকে সাপোর্ট দিছিলো, পরে তারা আমেরিকার বিরুদ্ধেই হামলা শুরু করছে । সিরিয়ায় বাশার আল আসাদকে চাপে ফেলার জন্য আমেরিকা আইএসকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছিল । এখন শক্তিশালী হওয়ার পর সেই আমেরিকার বিরুদ্ধেই আইএস হামলা শুরু করছে । আল কায়েদা, আইএস সব জঙ্গীগোষ্ঠীরই মূল টার্গেট একই, শরিয়া আইন কায়েম করা এবং বিধর্মীদের খেদানো । সো, তারা শক্তি সঞ্চয়ের জন্য আমেরিকার সাহায্য নিলেও মূল টার্গেটে তারা সবসময়ই অবিচল থাকে । আর, আমেরিকাও নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে পুরা বিশ্বকেই বিপদে ফেলে দিচ্ছে বারবার ।
আর যেটা বললেন যে, অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে, সেটা হইলো, ট্রাম্প বলছে যে, যাদের বৈধ কাগজ পত্র নেই এবং অপরাধ কার্যক্রমের সাথে জড়িত, তাদেরকে সে বের করে দিবে । তো, একটা দেশে যারা অবৈধভাবে বসবাস করতেছে এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হইতেছে, তাদেরকে বের করে দেয়ার ঘোষনার মধ্যে কি খারাপ কিছু আছে, সেটা আমি ঠিক বুঝতেছি না । যেকোন ভালো শাসকই কি তার দেশের জন্য এটা করবে না? নাকি এটা খারাপ কোন সিদ্ধান্ত? যারা বৈধ এবং সৎ নাগরিক, তাদেরতো এই ধরণের পদক্ষেপে খুশিই হওয়ার কথা, তাই না?
নির্মোহ পর্যবেক্ষনই বলবো এই লেখাটি। খুব সহজ কিছু অনেক সময় আমরা অনেকেই বড্ড জটিল করে দেখি এবং তা জটিলতর করে ফেলি। ভাঁড়ামো, ভান বা বোকার অভিনয় করাও যে অন্যদের বোকা বানিয়ে সাফল্যের একটি অসাধারণ চাবি হতে পারে তার প্রমানই এই ধরনের চরিত্রের উত্থান। মজা পেয়েছি পড়ে। আরো লিখুন। মুক্তমনায় স্বাগতম।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য । আমরা বেশিরভাগ সময়ই কোন মানুষকে এক দুইবার দেখেই তার সম্পর্কে একটা ধারণা করে ফেলি । এটা শুধু আমার বা দুই এক জনের না, এটা বেশিরভাগেরই চরিত্রগত বৈশিস্ট । মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটার চমৎকার একটা নামও আছে, “Anecdotal fallacy” । সুতারাং, এটা যেহেতু একটা জেনারেল ফেনোমেনা, সো, বুদ্ধিমান কেউ চাইলে এই ট্রেন্ডটাকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতেই পারে এবং অনেকেই করে অহরহ। তবে ট্রাম্প এবং জলিল, দুই জনের ক্ষেত্রেই আমার মনে হয়েছে যে, তারা ট্রেন্ডটা শুধু কাজেই লাগায় নি, বরং রীতিমতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মতো বৃহৎ পরিসরে নিয়ে গেছে । ট্রাম্পের ইদানিংকার কথা বার্তাগুলা শুনলে দেখবেন, তার কথা এবং ব্যবহার অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে, অথচ মানুষ একইটাই । প্রতিদিন সকাল বিকাল করার তার পাগলাটে ব্যবহারগুলা গেলো কোথায়?
মজার ব্যাপার হলেও তা সাঙ্ঘাতিক তাই না? ম্যাজিশিয়ানদের মত দেওয়া এই ভাঁওতা আমরাও গিলে যাচ্ছি অনায়াসে। কি ভয়ঙ্কর। মানুষের সারল্যই কি এর জন্য মূলতঃ দায়ী নয়?
এটা ঠিক সারল্যের দোষ বলা যায় না, এটা মানুষের কমন একটা বৈশিস্ট । বিবর্তনের ধারাতেই কাজের সুবিধার জন্য এই ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে চলে আসছে । একটু ব্যাখ্যা করা যাক, কি বলেন?
মানুষ অনিশ্চয়তা পছন্দ করে না । নিজের দরকারে বলেন বা নিরাপত্তার স্বার্থে বলেন, মানুষ সবসময় চায় যেকোন কিছু সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে, যেই ধারণাটা আমাদেরকে সেই ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে পরবর্তী স্টেপ নিতে সাহায্য করবে । কিন্তু প্রায় সময়ই যেটা হয়, তা হলো, আমাদের কাছে অকাট্য যুক্তি দাঁড় করানোর মতো পর্যাপ্ত তথ্য প্রমান থাকে না । ফলে আমরা আমাদের হাতে যতোটুকু তথ্য আছে, তার উপর ভিত্তি করেই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেস্টা করি । যেমন ধরেন, আমার সাথে দুই জন বরিশালের মানুষের দেখা হইলো এবং দুই জনের কাছ থেকেই আমার অভিজ্ঞতা খারাপ হইলো । ফলত, আমি ধরে নিবো যে বরিশালের মানুষরাই বোধ হয় এমন । এবং পরবর্তীতে বরিশালের কারও সাথে দেখা হলে সে যদি ভালোও হয়, তবু তার সাথে সাবধানে চলার চেস্টা করবো । ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য । আমরা সবাইই আমাদের জীবনে এই ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হইছি, এটা চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায় ।
তা, চালাক এবং ধুর্তরা যেটা করে তা হলো, মানুষ তাদের সম্পর্কে নিজ থেকে ভাবে না, বরং মানুষ তাদের সম্পর্কে কি ভাববে, সেটা তারাই মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেয় । এবং আপনি যদি বেশ চালাক হোন, তবে সঠিক সময় এবং পরিস্থিতিতে আপনি যেকাউকে যেকোন কিছু বিশ্বাস করাতে পারবেন ।
আর, লেখাটা সময় নিয়ে পড়ার জন্য এবং শুভকামনার জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । আপনাদের মতো পুরনো যাত্রীদের ভালোবাসা সবসময়ই প্রেরণা দেয় ।
দারুন বলেছেন। তা’হলে কি বলা চলে যে অপেক্ষাকৃত চালাক যারা তারা তাদের চেয়ে কম চালাক মানুষদেরকে ধূর্তামীর মাধ্যমে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে? অথবা এমন কি বলা চলে যে সহজ মানুষ যারা তাদের সঙ্গে ওই ধূর্ত’রা সাথে প্রতারণা করে? বলা যায় বলে মনে হয় কি বলেন? কিন্তু ট্রাম্প’রা ধূর্ত বলেই কি ওদেরকে সহজ সরল মানুষদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান বলা চলে? অথবা এর মানে কি বলা যায় যে সহজ সাধারণ মানুষেরা বোকা?
আপনার কথার সূত্র ধরেই বলি; এসব কিছুই কি একজন শান্তিপ্রিয় সহজ মানুষের অসচেতনতার জন্য ঘটছে না, যিনি কৌতহলী হতে; বা প্রশ্ন করতে অনাগ্রহী?
আপনাকেও ধন্যবাদ। মুক্তমনার ভয়াবহ শোকের সময়টায় পাশে ছিলেন এবং এখনো আছেন দেখে ভালো লাগছে। আমরা সম্ভবত সবাই কাছাকাছিই রয়েছি। কেউ হয়তো এখনো শোক বলয়ের ভেতর রয়ে গেছেন, কেউ বা আবার সেখান থেকে বেরিয়ে শক্তি বলয়ে। আপনি আমি আমরা সবাই এখানটায় থাকতে চাই সাধারণ মানুষদের সাথে।
আরো লিখুন। নিরাপদে থাকুন।
ট্রাম্পরা সাধারণ মানুষদের চেয়ে চালাক, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় । আর, চালাক মানেই খারাপ আর বোকা মানেই ভালো এভাবে ভাবাও বোধহয় ঠিক না । চালাক এবং স্মার্ট না হলে জীবনে উন্নতি করা যায় না । তবে ধুর্ততা এবং বুদ্ধিমান হওয়াকে এক কাতারে কি ফেলা যায়? আমার মনে হয়, না । অনেক বুদ্ধিমান আছে, যারা অন্যকে ঠকাতে চায় না । আর অনেক অল্প বুদ্ধিমান মানুষও আছে, যারা তাদের স্বল্প বুদ্ধি দিয়েই মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে । সহজ-সরল বা বোকা দুইটা আলাদা জিনিস । আমরা প্রায়শই বোধ হয় এই দুইটা শব্দকে এক করে ফেলি ।
আমরা সবাইই বিভিন্ন সময়ে অন্যকে ব্যবহার করি নিজের প্রয়োজনে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই । ব্যাপার হলো, অনেকে আছে যারা নিজের ভালো করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করতেও কুণ্ঠা বোধ করে না । এই ব্যাপারটা মূলত খারাপ । আর বাংলাদেশের গত বেশ কিছু বছরের ঘটনাপ্রবাহে “শান্তি-প্রিয়”, “সহজ-সরল” এই সব শব্দগুলার প্রতি ইদানিং এক ধরণের ঘেন্না কাজ করে । এই শব্দগুলো একান্তই আপেক্ষিক, যতক্ষন নিজের ঘাড়ে কোপ না এসে পড়ে ততক্ষন ।
হুমম লেখা তো দাদা ভালই লিখেছেন। জলিল ভায়ের সিনেমাগুলো ব্লক-বাস্টার হলেও আয়ের চেয়ে সিনেমা তৈরীতে খরচ কিন্তু বেশি করে ফেলেছেন।
আলমগীর ভাই, একটা ছবি হিট কিনা সেটাতো আয়ের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত হয় । আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে সেটাকেতো হিট বলা হবে না । আর অনন্ত জলিলের ঐ ছবিগুলা ছবির কোয়ালিটির তুলনায় অনেক বেশি ব্যবসা করছে, এটা অস্বীকার করা উপায় আছে কি?