লেখক : প্রীতম চৌধুরী
”নেতা বলে বিষহরী, হেথা রহিয়া কি বা করি
মর্তভূবনে চল যাই।
মর্তভূবনে গিয়া, ছাগ-মহিষ বলি খাইয়া,
সেবকেরে বর দিতে চাই…… ”
কবি বিজয় গুপ্তের লেখা আখ্যানধর্মী কাব্য মনসামঙ্গল বা পদ্মপুরাণ এর সূচনা হয়েছে এই চরণদুটির মাধ্যমে।
ধারণা করা হয় এই কাব্যের অর্থাৎ মনসামঙ্গলের আদি কবি কানা হরিদত্ত। সম্ভবত ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ বা চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে তিনি ছিলেন।
তার রচিত কোন কাব্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তার পরিচয়খানা পাওয়া যায় কবি বিজয় গুপ্তের কাাব্যে। তবে সুনাম নয়, বদনাম করার কারনে তার পরিচয় পাওয়া যায়।
“মুর্খে রচিল গীত, না জানে বৃত্তান্ত।
প্রথমে রচিল গীত, কানাহরি দত্ত।”
এখানে গীত মানে মনসামঙ্গল কাব্য।
কবি বিজয় গুপ্ত নিজের আত্মপরিচয় দিয়েছেন ‘পদ্মাপুরাণ’ তথা ‘মনসা মঙ্গলের’ পদে। ফতেয়াবাদ মুলুকের বাঙ্গজোড়া তকসিমের অন্তর্গত ঘাগর নদীর পূর্ব, গন্ডেশ্বর নদীর পশ্চিমে ফুল্লশ্রী গ্রামে তাঁর নিবাস ছিল ( বর্তমান নাম গৈলা, বরিশাল জেলা ) । গ্রামটি ছিল শিক্ষা দীক্ষায় বেশ উন্নত। ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য জাতির আবাস এই গ্রামে শাস্ত্র চর্চার প্রাবল্য ছিল। বিজয় গুপ্ত নিজে বৈদ্য ছিলেন। তাঁর পিতা সনাতন গুপ্ত, মাতা ছিলেন রুক্মিনী । বিজয়ের ভাষ্য :–
“সনাতন তনয় রুক্মিনী গর্ভজাত
সেই বিজয় গুপ্তরে রাখ জগন্নাথ।। ”
মনসামঙ্গল একটি আখ্যানকাব্য। এই কাব্যের প্রধান আখ্যানটিও আবর্তিত হয়েছে মর্ত্যলোকে মনসার নিজ পূজা প্রচারের প্রয়াসকে কেন্দ্র করে। কাব্যের মূল উপজীব্য চাঁদ সদাগরের উপর দেবী মনসার অত্যাচার, চাঁদের পুত্র লখিন্দরের সর্পাঘাতে মৃত্যু ও পুত্রবধূ বেহুলার আত্মত্যাগের উপাখ্যান নিয়ে। এই কাব্যে সেযুগের হিন্দু বাঙালি সমাজের সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি সম্পর্কে নানা অনুপূঙ্খ বর্ণনা পাওয়া যায়। চাঁদ সদাগর শুধুমাত্র এই কাব্যেরই নয়, বরং সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বলিষ্ঠ চরিত্র; বেহুলা-লখিন্দরের করুণ উপাখ্যানটিও তার মানবিক আবেদনের কারণে আজও বাঙালি সমাজে জনপ্রিয়।
মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধান দেবতা সর্পদেবী মনসা।
মনসা মূলগতভাবে অনার্য দেবী। প্রাচীন ভারতের আদিবাসী ও অন্ত্যজ সমাজে সর্পদেবী মনসার পূজা সুপ্রচলিত। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, খ্রিষ্টীয় দশম-একাদশ শতাব্দীতে বাংলায় মনসার পূজা প্রবর্তিত হয়। পদ্মপুরাণ, দেবীভাগবত পুরাণ বা মার্কেন্ডেয় পুরান ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-এর মতো কয়েকটি উপপুরাণ গ্রন্থে দেবী মনসার উল্লেখ পাওয়া যায়; এই গ্রন্থগুলি অবশ্য খ্রিষ্টীয় একাদশ- দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্বে রচিত হয়নি।
লৌকিক দেবী হলেও কালক্রমে মনসা ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক হিন্দুসমাজেও প্রতিপত্তি অর্জন করে; এমনকি চৈতন্যদেবের সমসাময়িক কালে শিক্ষিত বাঙালি সমাজেও মনসার পূজা প্রচলিত হয়।
মনসার জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে মার্কন্ডেয় পুরাণ (পদ্মপুরাণ আবার যার অন্তর্গত) হতে জানা যায় :-
বাসুকীর মা একটি ছোটো মেয়ের মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন। শিবের বীর্য এই মূর্তি স্পর্শ করলে মনসার জন্ম হয়। বাসুকী তাঁকে নিজ ভগিনীরূপে গ্রহণ করেন। রাজা পৃথু পৃথিবীকে গাভীর ন্যায় দোহন করলে উদগত বিষের দায়িত্বও বাসুকী মনসাকে দেন। শিব মনসাকে দেখে কামার্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু মনসা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে তিনি শিবেরই কন্যা। শিব তখন মনসাকে স্বগৃহে আনয়ন করেন। শিবের পত্নী পার্বতী মনসাকে শিবের উপপত্নী মনে করেন। তিনি মনসাকে অপমান করেন এবং ক্রোধবশত তাঁর একটি চোখ দগ্ধ করেন। পরে শিব একদা বিষের জ্বালায় কাতর হলে মনসা তাঁকে রক্ষা করেন। একবার পার্বতী তাঁকে পদাঘাত করলে তিনি তাঁর বিষদৃষ্টি হেনে পার্বতীকে অজ্ঞান করে দেন। শেষে মনসা ও পার্বতীর কলহে হতাশ হয়ে শিব মনসাকে পরিত্যাগ করেন। দুঃখে শিবের চোখ থেকে যে জল পড়ে সেই জলে জন্ম হয় মনসার সহচরী নেতার। পরে মুনি জরৎকারুর সঙ্গে মনসার বিবাহ হয়। কিন্তু পার্বতী মনসার ফুলশয্যার রাতটিকে ব্যর্থ করে দেন। তিনি মনসাকে উপদেশ দিয়েছিলেন সাপের অলঙ্কার পরতে আর বাসরঘরে ব্যাঙ ছেড়ে রাখতে যাতে সাপেরা আকর্ষিত হয়ে তাঁর বাসরঘরে উপস্থিত হয়। এর ফলে, ভয় পেয়ে জরৎকারু পালিয়ে যান। পরে অবশ্য নানা অনুনয়ে তিনি ফিরে আসেন এবং তাঁদের পুত্র আস্তিকের জন্ম হয়।
ওইদিকে আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে :-
মনসা ঋষি কশ্যপের কন্যা। একদা সর্প ও অন্যান্য সরীসৃপগণ পৃথিবীতে কলহ শুরু করলে কশ্যপ তাঁর মন থেকে মনসার জন্ম দেন। ব্রহ্মা তাঁকে সর্প ও সরীসৃপদের দেবী করে দেন। মনসা মন্ত্রবলে বিশ্বের উপর নিজ কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। এরপর মনসা শিবের সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করেন। শিব তাঁকে কৃষ্ণ-আরাধনার উপদেশ দেন। মনসা কৃষ্ণের আরাধনা করলে কৃষ্ণ তুষ্ট হয়ে তাঁকে সিদ্ধি প্রদান করেন এবং প্রথামতে তাঁর পূজা করে মর্ত্যলোকে তাঁর দেবীত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
ঋষি কশ্যপ, মুনি জরুৎকারুর সঙ্গে মনসার বিবাহের প্রস্তাব দেন। মনসা তাঁর অবাধ্যতা করলে, তিনি মনসাকে ত্যাগ করবেন – এই শর্তে জরুৎকারুমনসাকে বিবাহ করেন। একদা মনসা তার ঘুম ভাঙাতে দেরী করলে তাঁর পূজায় বিঘ্ন ঘটে। এই অপরাধে জরুৎকারু মনসাকে ত্যাগ করেন। পরে দেবতাদের অনুরোধে তিনি মনসার কাছে ফিরে আসেন এবং আস্তিক নামে তাঁদের একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।
মনসামঙ্গল মতে, মনসা তাঁর সহচরী নেতার সঙ্গে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন মানব ভক্ত সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে, নতুবা তার দেবীত্ব প্রতিষ্ঠিত হবেনা । প্রথম দিকে লোকেরা তাঁকে ব্যঙ্গ করে। কিন্তু যারাই তাকে পূজা করতে অস্বীকার করে, তাদের চরম দুরবস্থা সৃষ্টি করে তাদের পূজা আদায় করেন মনসা। তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের পূজা লাভে সক্ষম হন। এমনকি মুসলমান শাসক হাসানও তাঁর পূজা করেন। কিন্তু শিব ও পার্বতীর পরমভক্ত চাঁদ সদাগর তাঁর পূজা করতে অস্বীকার করেন। পূর্বজন্মে চাঁদকে মনসা একটি অভিশাপ দিয়েছিলেন। তার পাল্টা অভিশাপে মনসার ভক্ত সংগ্রহে অসুবিধা হতে থাকে। কারণ এই শাপে বলা হয়েছিল, চাঁদ মনসার পূজা না করলে মর্ত্যে মনসার পূজা প্রচলন লাভ করবে না। চাঁদের পূজা আদায়ের জন্য মনসা চাঁদের ছয় পুত্রকে হত্যা করেন এবং তাঁর বাণিজ্যতরী ডুবিয়ে তাকে নিঃস্ব করে দেন। পরে আবার চাঁদের ঘরে পুত্র সন্তান দিয়ে তিনি চাঁদের সেই কনিষ্ঠ পুত্র লখিন্দরকে হত্যা করলে, তাঁর বিধবা পুত্রবধূ বেহুলা চাঁদকে মনসা পূজায় রাজি করাতে সক্ষম হন। চাঁদ মনসার দিকে পেছন ফিরে বাম হাতে তাঁকে ফুল ছুঁড়ে দেন। মনসা তাতেই খুশি হয়ে চাঁদের ছয় পুত্রকে জীবিত করেন এবং তাঁর সকল সম্পত্তি ফিরিয়ে দেন। এরপরই মনসা পূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
[বেহুলা-লখিন্দরের এ ঘটনা প্রায় প্রতিটা বাঙালির জানা। ]
বর্ষাকালে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। তাছাড়া জলবদ্ধতা দেখা দেয়। শ্রাবণ, এই একমাস ধরে মনসামঙ্গল কাব্যগ্রন্থটি আসরে বসে সুর করে পাঠ করা হয়। এর নাম রয়ানী গান। অতঃপর শ্রাবণের নাগপঞ্চমী তিথিতে মনসার পূজা করা হয়।
আমার মতে মনসামঙ্গল কোন ধর্মীয়গ্রন্থের চেয়েও বড় এক মহাকাব্য। শওকত ওসমানের আদমজী পুরষ্কার প্রাপ্ত ‘ক্রীতদাসের হাসি’ বইটার শুরুতে যেমন কৌশলে কিছু লাইন লেখা হয়েছে যেন পাকিস্তান সরকার বইটি ব্যান করে না দেয়, সেরকম মনসামঙ্গলেও মব সাইকোলজি নিয়ে খেলা হয়েছে এবং সর্বোপরি দেবি মনসার চেয়ে মর্তের মানুষ চাঁদ সদাগরএর গুণকীর্তন বেশি করা হয়েছে।
আর আমাদের গ্রামের বাড়ির দিকে এত চমৎকারভাবে সুর করে পাঠ করা হয় যে মনসামঙ্গল আমার অতীব প্রিয় এক গীত কাব্য। মনসা দেবীর প্রভাবতো নেই ই, কালের পরিক্রমায় সেই রয়ানী গানও হারিয়ে যাচ্ছে।
চাঁদ সওদাগর, লখিন্দর বেহুলা’র গল্প যে আমাদের মাটির নিবিড় গন্ধ মাখা তা যেন বাঙালি ভুলেই গেছে। অতি চমৎকার একখানা লেখা। মুক্তমনা ব্লগ আপনাদের লেখায় ও আলোচনায় সবসময় ঝলমল করুক। অনেক ধন্যবাদ।
বিজয়গুপ্তের বাড়ি বলে যে জায়গাটা দাবি করা হয় সেখানে আমি গেছি। ওখানে তার একটা ছোট মূর্তিও আছে। মূর্তির ছবি তোলা ছিল আমার; কিন্তু কোথায় আছে আর খুজেঁ পাচ্ছি না…
০২
আমার দ্বিমত আছে চাঁদ সদাগরের উপর মনসার অত্যাচার কথাটায়; বরং উল্টাই অনেকটা। সব কিছুর পেছনে বরং চাদেঁর ঘিন্নাই দায়ী…
যে দেবদেবীর কোনো পূজা হয় না সে কোনোদিন স্বর্গে প্রবেশ করতে পারে না; এজন্য মনসা পূজারিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে তাকে একটু অর্ঘ্য দেবার জন্য। চাঁদ শিব পূজারি। মনসার প্রস্তাবে প্রচণ্ড ঘিন্না প্রকাশ করে চাঁদ; তার যুক্তি ছিল- যার সন্তানেরা (সাপ) ব্যাঙএর মতো নিকৃষ্ট জিনিস খায় তাকে সে পূজা করতে পারে না…
মনসার পূজা প্রতিষ্ঠার পেছনে তিন নারীর একটা চক্র আছে। মনসা-নেতাই-বেহুলা। মূলত বেহুলাই মনসার পূজা প্রতিষ্ঠা করে। মনসাকে পূজা দিতে অবশেষে চাঁদকে রাজি করায় বেহুলা; মনসাকে গাইড করে নেতাই ধোবানি। আমার জানামতে একমাত্র নারী ওঝা চরিত্রও এই নেতাই ধোবানি…
০৩
বগুড়া অঞ্চলে এই কাহিনির অন্য একটা ভার্সন আছে। যেখানে দেখা যায় সর্বশেষ চাদ সদাগার বাম হাতে জবা ফুল নিয়ে দুই পায়ের ফাক দিয়ে পেছন দিকে ফুলটা ছুড়ে দেয় মনসাকে- এতেই তার পূজা প্রতিষ্ঠা হয়
০৪
চাদপুর অঞ্চলে বেহুলার পাটা নামে একটা জায়গা আছে। দাবি করা হয় এটাই বেহুলার আদি নিবাস। যদিও বেহুলার বাসরঘর নামে একটা স্থান আছে বগুড়ায়; কিন্তু ওই স্থানটা কোনাভাবেই কাহিনির সাথে মিলে না
বটেই তো। …… তবে দেব দেবী কাহিনী 🙂
আজকের মানুষদের জন্য এসব নিয়ে সহজ করে লিখে দেওয়া একটা খুব ভালো কাজ বলে মনে হয়; স্থানটি যেহেতু বাঙালি সংস্কৃতির আঙিনায়, তাই।
আমি যা বুঝেছি তাতে আমার ধারণা:
সেন রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় যখন শঙ্করাচার্যের শিষ্য চ্যালারা এখানে ব্রাম্মণ্য ধর্ম পরিচিত বা প্রবর্তন করলো সাধারণ মানুষ, অনেকটা আজকের মতই মেনে নেবার আনুগত্য দেখালো। রাজশক্তির বিরোধিতা বলে কথা; এ’কি সোজা কথা নাকি? চাঁদ সদাগর তো ছিলো সহজ সরল নাগরিকের পক্ষে দেবতাকে পূজা ভেট দেবার মানুষ। শাসক ও শোষকদের শিকার মাত্র।
২. নাগরিক প্রায় সব সময়েই অত্যাচার এড়াতে শাসকদের কথার অবাধ্য না হবার চেষ্টা করেছে। ধরেই নেওয়া যায় যে, মনসা’কে প্রতিষ্ঠিত করেছে সেকালের ধর্মীয় পান্ডারা। ওদিকে বলিষ্ঠ কিন্তু রাজ-পৃস্ঠপোষকতাহীন শিবভক্ত নাগরিক চাদ সদাগর বেচারা মনসাভক্ত পান্ডাদের পূজা চাঁদা ও আনুগত্য না দেওয়ায় ওদের সহজ টার্গেট হয়ে গেলো; আজকেও যে সব হয় আরকি? মনসা চরিত্র দাঁড়িয়ে গেলো।
৩. জোর করে আনুগত্য, মানে পূজা নিয়েই ছাড়লো মনসা বা মনসাপন্হী পান্ডারা। পশ্চাৎদেশে উল্টে ছোঁড়া যে জবা ফুলই হোক, পূজার ফুল তো 🙂
আমাদের জন্মভূমির নাগরিক এমন জবা ছুঁড়বে আর কত কাল? কবে ছুঁড়বে আলোর মশাল?
.
.
.
.
.
ওহ,
এইডা কুনু কাম করলেন?
লেখাটা শুরু করে ধুম করে ছেড়ে দিলেন মনে হয়…
০২
বৈদিক সমাজে অনার্য মানুষেরা স্থান পেয়েছে নিজেদের দেবদেবীদের স্থান নিশ্চিত করার পর। যদিও বৈদিকেরা অনার্যদের দেবদেবীরে ভালো স্থান দিয়ে মানুষকে আবার রেখে দিয়েছেন পায়ের তলায়। কিন্তু দেবদবীদের স্থান পাওয়াও যে খুব একটা সহজ ছিল না; বরং বহুত কঠিন পরীক্ষা দিয়ে তারা সেখানে গেছেন তার একটা অনন্য আখ্যান এই মনসা মঙ্গল…
০৩
ঘর বানাইও বিশ্বকর্মা/আমার নিষেধ নাই/কিন্তু লখার বাসরঘরে একখান/ ছেন্দা রাখন চাই’ এরকম মৌখিক গীতগুলা বরং আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয় লাগে। যদিও পদ্মপুরাণের ছত্রিশ ব্যাঞ্জন রান্ধার বর্ণনায় রীতিমতো জিবে পানি আসে…
০৪
একখান বিস্তারিত লেখা দেন।
মাহবুব লীলেন ভাই, আপনার মন্তব্যটা আমার কেন এতোদিন চোখে পড়লো না! আপনার যেকোন মন্তব্য আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া৷
আমারো মনে হইছে ধুম করেই ছেড়ে দিছি। সম্ভবত, এই কারনে যে গুঁছিয়ে বলে উঠতে পারতেছিলাম না বা আমার মনে হচ্ছিলো আমার স্বভাবগত ভাবে আমি অপ্রাসঙ্গিক আলাপে কিনা ঢুকে যাই, সেই ভয়েই হয়তোবা তাড়াতাড়ি সমাপ্তি টানতে চাচ্ছিলাম।
(২) তাতো বটেই৷ তবে আমার মনে হয় মনসার ক্ষেত্রে আদি কবি হরি দত্ত কিংবা বিপ্রদাস পিপলাই পদ্মপুরাণ থেকে মনসা নামটা রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে তার চরিত্রের আলোকে ১৩০০-১৪০০ শতকে কাব্য রচনা করেছে নিজের মাটির উপাদান থেকেই৷
(৩)
শুধু তাই নয়, মৌখিক গীত গুলো অঞ্চলভেদে কথা উচ্চারণতো বটেই, সুরেও অনেক অনেক বৈচিত্র্যময়। তাছাড়া অঞ্চলভেদে অনেক রিচুয়ালও এড হয়েছে৷ যেমন, বরিশালের এইদিকেই যখন মনসামঙ্গল পুঁথি পাঠ করা হয় তখন যে অংশে লক্ষ্মীন্দরের প্রাণদান করা হয় সেই পর্বে মূল গাতক তার শাড়ির আঁচল সামনে ফেলে দেয় কাল্পনিক লক্ষ্মীন্দরের লজ্জা নিবারণে৷ (এইখানে কি পুরুষ নারীর নয় বরং নারী পুরুষের লজ্জা নিবারণ করছে?) তারপর ওই পালা শেষে আসরেই নতুন বস্ত্র দান করা হয় গাতককে৷
০৪.
শুভ কামনা রাখবেন যেন নিজের আলসেমিকে জয় করতে পারি….
প্রীতম দা ,আমিও এই মঙ্গল কাব্যের সুরে বহুবার অভিভূত হয়েছি।তবে সাথে সাথে একটা ভয় কাজ করত,সাপের ভয়,তার দেবীর ভয়।কিন্তু এখন তো জানি যে এটি নিছক একটি গীতি কাব্য ছাড়া আর কিছুই নয়। এগুলো যদিও সঠিক ইতিহাস হিসাবে সাক্ষ্য দেয় না তা সত্ত্বেও একটু সন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে তাকালে অতীতের ব্যাপারে অনেক কিছু অনুমান করা যেতে পারে।রামায়ন,মহাভারত প্রভৃতি অলৌকিক কাহিনীর গ্রন্হ সম্পর্কে ঐ একই কথা প্রযোজ্য।