আমাদের আক্রমণের পিছনে ফারসীম মান্নানের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন।
না না, ভুলেও ভাববেন না পুলিশ বা বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের কেউ করেছেন। বাংলাদেশের সরকার, পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনদিন কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। তবে অগুনতি সোশ্যাল মিডিয়াবাসী করেছেন। গতবছর আক্রমণের পরপর তো করেছেনই আবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতেও করেছেন। এবারের গুলশানের জঙ্গি হামলার ঘটনার পর এবং বিশেষ করে হাসনাত করিমের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ ওঠার পর আবার নতুন করে প্রশ্নের সুনামি শুরু হয়েছে। অনেকে আমাকে কোট করে বিভিন্ন কথাও বলছেন। তাই ভাবছি আমাদের ‘জাতীয় সংবাদ মাধ্যম’ ফেসবুকেই পরিষ্কার করে আমার ‘বিজ্ঞ’ মতামতটা না হয় একবার জানিয়ে দেই।
তখন আমরা টুটুলের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে যোগ দেই যেটা ফারসীমদের আড্ডার পরে হওয়ার কথা ছিল। তারপর সন্ধ্যে হয়ে আসলে ফারসীমরা আসে এবং তাদের অনুষ্ঠান শুরু হয় মাটিতে চাদর না কী যেন বিছিয়ে। ওই অনুষ্ঠানে যারা ছিল তাদের অনেকেই আমি চিনতাম না, দুই একজন ছাড়া অন্যদের চেনারও চেষ্টা করিনি কারণ অভির চেনা বেশিরভাগ মানুষকেই আমি সাধারণত চিনতাম না। আমাদের পাশে তারেক অণু আর তার ভাই বসেছিল, তাদের সাথে কথা হয়েছিল অনেক কিছু নিয়ে। ওখানে একটা রেকর্ডিংও করা হয়েছিল সবার বক্তব্যের। নাহ, সেদিন আমাদের ফারসীমরা ডিনার খেতে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেনি, অনুষ্ঠান শেষ হলে আমি আর অভি হেঁটে বেরিয়ে যাই। পরে শুনেছি ওরা নাকি আমাদের উপর আক্রমণের খবর শোনার পরেও বিরিয়ানি খেয়েছিলেন।
বিজ্ঞান আড্ডার ছবি
আমি এটুকুই জানি। বিশ্বাস করুন, এর বেশি কিছু জানি না। এর ভিত্তিতে কাউকে দোষী বলে নির্ধারণ করা যায় কিনা তা আমার জানা নেই। আমি যতদূর বুঝি যায় না। তবে যদি জিজ্ঞাসা করেন, এ-নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত কিনা, আমি বলবো হ্যাঁ, অবশ্যই হওয়া উচিত; দেশের গোয়েন্দা পুলিশের আমার কাছে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত ছিল কিনা, হ্যাঁ ছিল। উচিত তো অনেক কিছু ছিল…
হ্যাঁ, আমার সাথে ফেসবুকে ফারসীম এবং তার স্ত্রী যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁরা যে নির্দোষ সেটা প্রতিষ্ঠা করতে সহযোগিতা করার অনুরোধ করে। আমি উত্তর দেইনি। প্রথমত, আমার তখন উত্তর দেয়ার মত মানসিক এবং শারীরিক অবস্থা ছিল না, দ্বিতীয়ত আমি যেহেতু কিছুই জানি না, তাই তাদেরকে এদিক বা ওদিক কোনটাই বলতে চাইনি। আমি দেখেছিলাম অভির বাবা ড. অজয় রায় এ নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। এই মানুষটাকে আমি খুব কমই দেখেছি না জেনে বাজে বকতে। তাই ওনার কোন কথার সাথে না জেনে না শুনে কন্ট্রাডিক্ট করার চেয়ে চুপ করে থাকাকেই শ্রেয় মনে করেছি। না, বাবার সাথে আমার কোনদিন এ নিয়ে কোন কথা হয়নি।
হয়তো আপনারা এই ১৬ মাসে (এবং আগেও যারা আমাকে মুক্তমনায় দেখেছেন) খেয়াল করেছেন আমি ভালোভাবে কিছু না জেনে কথা বলতে পছন্দ করি না। অভিসহ অনেকেই অনেক অনুযোগ করতো আমি আরো বেশি লিখি না কেন। আমার উত্তর একটাই, আমি নিজেকে সব কিছু নিয়ে লেখার যোগ্য মনে করিনা। এখনো কিছু হলেই পত্রিকাগুলো লেখা চায়, সিএনএন, বিবিসিসহ বিভিন্ন নেটোয়ার্ক ইন্টারভিউ চায়, ৯৯ ভাগ সময়েই আমি না করে দেই। অযথাই ওদের ‘নিউজ’ হতে আমার ভাল লাগেনা। বিবর্তনের পথ ধরে বইটা লিখেছিলাম কারণ বিবর্তন নিয়ে ব্যক্তিগত এবং একাডেমিকভাবে অনেক পড়াশুনা করেছিলাম বহু বছর ধরে।
আমরা সন্ত্রাসের স্বীকার হয়েছি বলেই নিজেকে এ বিষয়ে একজন পণ্ডিত বলে মনে করিনা। এর পিছনে যে কতটা আন্তর্জাতিক এবং আভ্যন্তরীণ সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতি এবং অর্থনীতির পলিসি থেকে শুরু করে, ঐতিহাসিকভাবে সমাজে ধর্মের এভেইলিবিলিটি এবং ধর্মীয় মৌলবাদের আমদানি-রপ্তানি, জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে ধর্মের চাষ, একটা জাতির আইডেন্টিটি, শ্রেণী-সম্পর্ক, গ্লোবালাইজেশন এবং প্রযুক্তির সমন্বয়সহ কত জটিল ব্যাপার জড়িত হয়ে আছে সেগুলো নিয়ে জানতে শুরু করলে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। আরেকটু জেনে বুঝে দেখে পড়ে গবেষণা করে এ নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে আছে। যতটা না ইচ্ছা লেখার তার চেয়ে অনেক বেশী ইচ্ছা একটা ডায়ালগ শুরু করার। দেখি কতদূর কী হয়। দেশে বিদেশে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন দেখি সবাই কত সহজেই এক নিঃশ্বাসে এত বড় একটা সমস্যার সমাধান দিয়ে ফেলেন তখন বড্ড অসহায় লাগে।
অসহায় তো অনেক কিছুতেই লাগে, কী বা করার আছে!
আমি কাউকে সন্দেহপ্রকাশে বা মতপ্রকাশে বিরত রাখতে পারি না। শুধু এটুকু মনে করিয়ে দিতে পারি হয়ত, যে আমাদের কিছু ব্যাপারে, বিশেষত যেখানে অন্য মানুষের জীবন বা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যাপার জড়িত, আরো কিছু দায়িত্বশীলভাবে নিজের মতামত জানাতে। ড্রয়িংরুমের অনেককিছুই ফেসবুকে উঠে আসে, কিন্তু সেসব মুছে যায় না, প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সেসবের দায়িত্ব কি আমরা নিতে সক্ষম?
আমি তুলেছিলাম
অভি হত্যার বিচার জামাত করবে
কথাটা অন্য আরেকজন কমেন্টস করলেও আমি জানি মনের ভেতর টুপি পরে আছে যে বন্ধুরা। তাদের হাত থেকে কিভাবে বাঁঁচবো।
তবে নিজে আড্ডার দাওয়াত দিয়ে দেরি করে আসা আর আপনাদের এ্যাটাক করার পর তাদের বিরানি খাওয়ার সাথে হাসনাত করিমের গুলশান এ্যাটাকের অনেক সামজ্ঞস্য আছে। আপনি না বললেও আমার মনে হয় এই লোক বিজ্ঞান পরিষদের নাম করে জাকির নায়েকের মত ভ্রান্ত প্রচারক। অভিকে সরানোর পেছনের নীল নক্সা তারই রচনা করা।
০২/২৬ কী ঘটেছিল তা বন্যা আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া তদন্তের অপরিহার্য অংশ বলেই মনে করি।
ড. অভিজিৎ রায় নিহত হওয়ার আগে-পরের মি. ফারসীম মান্নানের আচরণই তাকে অন্যতম সন্দেহভাজন খুনি হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের দাবী রাখে।
বিদেশীরা খুন হয়েছে বলেই গুলশান হত্যাকাণ্ডের তদন্ত আন্তরিকতার সাথে ক্ষিপ্রগতিতে হচ্ছে। মুক্তমনারা খুন হলে সরকার উল্টো নিজেদের কারণেই নিজেরা খুন হচ্ছে বলে খুনিদের প্রশ্রয় দিচ্ছিল। আর বোকার স্বর্গে বসে ভাবছিলো শিয়ালগুলিকে খুশি করা গেলো, নাহলে শিয়ালগুলি ছাগলগুলিকে রাস্তায় নামিয়ে সরকারকে ঝামেলায় ফেলতে পারতো।
অথচ মুক্তমনাদের খুনের বিচার যদি দ্রুত হত তাহলে গুলশান হামলার মত ঘটনাই হয়তো ঘটতইনা। অঙ্কুরেই জঙ্গীরা বিনষ্ট হত। কারণ মুক্তমনা হত্যাকারী ও গুলশান হামলাকারীরা অভিন্ন।
বিলম্বে হলেও ড. অভিজিৎ রায়ের খুনিরা (পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী) চিহ্নিত হবে ও সাজা পাবে প্রত্যাশা করি।
এখনও অভি হত্যার কোনো বিচার হলনা ।আর কবে হবে? হয়তো জামাতের মত মৌলবাদী গ্রুপ যখন ক্ষমতায় আসবে তখন এসব হত্যার বিচার হবে ।
পুলিশ, গোয়েন্দা, সরকার, তদন্তকারী কেউই বন্যা’র কাছ থেকে তদন্তের জন্য আসলে কিছু জানতে চায়নি, অদ্ভুত নয় কি? ঠিকমত তদন্তেরই ইচ্ছা নাই; সত্য উদ্ঘাটন, ন্যায় বিচার এগুলো তো অনেক দূরের কথা, কল্পনাতেই থেকে যাচ্ছে। তবু, এই কথাগুলো মানুষের জানা দরকার, অন্তত, ফর দ্যা রেকর্ড।
মন্তব্য করবো কী? আমি তো ছবির অভি আর বন্যার চোখের দিকে চেয়েই রয়েছি বেশ অনেক্ষণ। বলার আর রয়েছেইবা কী?
আচ্ছা সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় রইলাম। সেদিন কিছু বলার থাকলে বলার চেষ্টা করবো।
ফারসীম মান্নান সন্ধ্যা ছয়টায় আড্ডা ডেকে কেনো এশার নামাজের পর অনুষ্ঠান নিয়ে গেলেন জানতে ইচ্ছা করছে। কেউই যখন ছিলো না তার মানে কি পরিকল্পনা করে আড্ডা পেছানো হয়েছিলো? জানি না। অভিদাকে ফিরিয়ে আনবে না কোনো কিছুই, তবে যে মানুষরূপী বিশ্বাসের ভাইরাসের বাহকগুলো অভিদাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলো তাদের মুখোশ উন্মোচন হোক এটাই চাওয়া।
তবে এ ঘটনায়ও একজন টাকলু হাসনাত আছে, নেই শুধু কোরীয় ভদ্রলোকের ভিডিও।
একজন শার্লক হোমসের অপেক্ষায় থাকলাম।