লেখক: সায়ন দেবনাথ
২০১৪ সাল থেকে পশ্চিম এশিয়ার ইরাকে ইয়েজিদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর পরিকল্পনামাফিক গণহত্যা, এই রহস্যাবৃত ধর্মীয় সম্প্রদায়কে বিশ্বের নজরে এনে দেয়।ইরাকে ইসলামের বিজয়রথ প্রবেশের পর থেকেই সুপ্রাচীন এই মূর্তিপূজক গোষ্ঠী অসংখ্য গণহত্যার শিকার হয়েছে। আসলে পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য পৌত্তলিক ধর্মগুলিকে ইসলাম সমূলে উৎপাটিত করতে সক্ষম হলেও, ইয়েজিদিরা সম্পূর্ণভাবে কোনদিন তাদের বশ্যতা স্বীকার করেনি আর এটাই ইসলামিক ইরাকের কাছে অত্যন্ত শ্লাঘার বিষয়।তাই বারবার ইয়েজিদিদের ওপর আঘাত নেমে এসেছে;কখনও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আবার কখনও ধর্মগুরুদের মাধ্যমে।
অটোমান সাম্রাজ্যের কাল থেকে হালফিলের সাদ্দাম হুসেনের আমল কখনই ইয়েজিদি নির্যাতনে ছেদ পড়েনি। সাদ্দাম হুসেনের সময়কালে ইয়েজিদিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। সাদ্দামের সময় কুর্দ জনজাতি স্বাধীন ‘কুর্দিস্তান’এর দাবীতে আন্দোলন শুরু করেছিল এবং বহু সংখ্যক ইয়েজিদির বাস ছিল এই কুর্দিস্তানে। তাই স্বাধীনতাকামী আন্দোলনকে প্রতিহত করার যুক্তিতে সাদ্দামের সরকার বিপুল সংখ্যক ইয়েজিদিদের উৎখাত করেছিল ও পরবর্তীতে তাদের সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘খাতানিয়া’ নামক হাউসিং কমপ্লেক্সে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। ফলে এই সম্প্রদায় সম্পূর্ণ ভাবে সরকারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে বাধ্য হয়। সবচেয়ে বিস্ময়কর দিকটি হল যে ইয়েজিদিরা কখনই নিজেদের কুর্দ রূপে পরিচয় দেয় না এবং প্রতিবেশী ইসলাম ধর্মালম্বী কুর্দদের থেকে তারা যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখে। সর্বোপরি এই বিচ্ছিন্নতাকামী আন্দোলনে ইয়েজিদিরা ছিল নিরপেক্ষ। আসলে ইয়েজিদিদের জীবন-যাপন সরকারী নিয়ন্ত্রনে আনার মাধ্যমে তাদেরকে ইসলামে দীক্ষিত করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল,যা একদমই ফলপ্রসূ হয়নি।
ইয়েজিদি ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে তার মোট বাহাত্তরটি গণহত্যার শিকার হয়েছে। তবে তীব্র ইসলামিক আগ্রাসন সত্ত্বেও ইয়েজিদিরা উত্তর ইরাক,সিরিয়া ও আর্মেনিয়ার কিছু অংশ এবং উত্তর পশ্চিম ইরানে নিজেদের স্বকীয়তা যুগ যুগ ধরে বজায় রেখেছে। সাম্প্রতিক কালে ইয়েজিদিদের প্রতি ইসলামিক স্টেটের নৃশংসতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।নীল চোখের ইয়েজিদি মেয়েদের যৌনদাসী হিসেবে আই এস মহলে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সম্প্রতি মসুলে প্রকাশ্য রাস্তায় উনিশ জন ইয়েজিদি কিশোরীকে লোহার খাঁচায় বন্দী অবস্থায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হল। তাদের অপরাধ ছিল যে তারা জঙ্গিদের সাথে যৌনসংগমে সম্মত হয়নি। বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপিংসে প্রকাশিত ইয়েজিদি কিশোরী-মহিলাদের আর্ত চিৎকার বুঝিয়ে দেয় সুপ্রাচীন এই ধর্মীয় গোষ্ঠী এক ভয়ঙ্কর অস্তিত্বের সংকটের সম্মুখীন হয়েছে।তাও ইয়েজিদিরা দলে দলে স্বভূমি পরিত্যাগ করে ইউরোপে পাড়ি জমায় নি।বরং নিজেদের জীবনের তোয়াক্কা না করেই ঐতিহ্যমণ্ডিত উপাসনাস্থল গুলিকে রক্ষা করা চলেছে।আর তাদের এই দৃঢ় মনোভাবই আই এস কে আরও নৃশংস করে তুলেছে। বন্দুকের নলের সামনে বসিয়ে আই এস তাদেরকে ইসলাম কবুল করাতে পারেনি, তাই সহস্রাধিক ইয়েজিদিকে গনকবরের গহীন অন্ধকারে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়তে হয়েছে।
ইয়েজিদিদের ইতিহাস আজও রহস্যাবৃত। তবে এ-বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে,তারা এক সুপ্রাচীন ধর্মীয় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। জার্মান গবেষক Philip Kreyenbroek এর মত অনেকেই মনে করেন যে, ইয়েজিদিদের ধর্মীয় বিশ্বাস অত্যন্ত প্রাচীন।তবে বহুকাল যাবত এই সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি ভুল ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে,তা হল ইয়েজিদিরা হচ্ছে ‘শয়তানের পূজারী’। ইসলামে শয়তানের ধারনা রয়েছে,যা ইবলিশ হিসেবে খ্যাত। ইসলামীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী ইবলিশ হল পতিত স্বর্গীয় পুরুষ,কারন সে আল্লাহের আদেশ অগ্রাহ্য করেছিল। একই ভাবে ইয়েজিদিদের ধর্মীয় বিশ্বাসে এক সর্ব শক্তিমানের কল্পনা করা হয়েছেএবং সমগ্র বিশ্বব্যাপী তাঁর অবস্থান।ইয়েজিদিদের শ্রুতি ঐতিহ্যে বিশ্ব সৃষ্টির যে বর্ণনা রয়েছে তা আবার বাইবেলের সাথেও সাযুজ্যপূর্ণ। তাঁরা বিশ্বাস করে যে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বিশ্ব সৃষ্টির পর তাঁর দূত রূপে ‘তাওসি মেলেক’কে প্রেরন করেন এবং পরবর্তীতে তাঁকে সহায়তা করার আরও ছয় জন দুতকে প্রেরন করা হয়। অধুনা উত্তর ইরাকের অন্তর্গত নিনেভ প্রদেশের সিঞ্জার পর্বতে ‘তাওসি মেলেক’ এক অপূর্ব সুন্দর ময়ূর রূপে অবতরণ করেন ও নিজের সাতটি রঙের রুপান্তর ঘটিয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের সৃষ্টি করেন।তবে এরপর তাওসি মেলেক ঈশ্বরের আদেশ অগ্রাহ্য করলে, ঈশ্বর তাঁকে নরকে নিক্ষেপ করে আগুনের কারাগারে বন্দী রাখেন। পরে তাওসি মেলেক গভীর অনুতপ্ত হন ও শেষ পর্যন্ত তাঁর অশ্রুবিসর্জনে আগুন নিভে যায়।পরবর্তীতে ঈশ্বর পুনরায় তাঁকে পৃথিবীতে বাকি ছয় দেবদূতের প্রধান রূপে প্রেরন করেন। ইয়েজিদিরা বিশ্বাস করে যে একজন মানুষের মধ্যে তাওসি মেলেকের মত শুভ-অশুভ এই দুই সত্ত্বারই অস্তিত্ব থাকে।আসলে মানুষকে প্রকৃত শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যেই সে দুই প্রকার রূপ ধারন করেছিল। তবে বিধর্মী মুসলিমরা সর্বশক্তিমানের আদেশ অমান্য করায় তাওসি মেলেক’কে শয়তান বলেই গণ্য করে আর এই কারনেই ইয়েজিদিরা শয়তানের পূজারী।
ইয়েজিদিদের শ্রুতি ঐতিহ্যের সাথে বাইবেলের বেশ কিছু সামঞ্জস্য রয়েছে।যেমন ইয়েজিদি লোকগাঁথায় এডেন উদ্যানের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আদম ও ইভের প্রসঙ্গ দুই ধর্মেই রয়েছে।সর্বোপরি পতিত দেবদূতের কথাও উভয় দর্শনে রয়েছে। একসময় খৃষ্টান মিশনারিরাও ইয়েজিদিদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেই প্রয়াসও খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। এরপরই মিশনারিরা ইয়েজিদিদের মতাদর্শকে কার্যত নস্যাৎ করে দিয়ে খ্রিস্টীয় মতের অংশ রূপে অভিহিত করেন। পাশাপাশি মুসলিমদের ন্যায় তাঁরাও ইয়েজিদিদের শয়তানের পূজারী রূপে অভিহিত করতে শুরু করে এবং খৃস্ট ধর্মের পতিত দেবদূত লুসিফারের সাথে তাওসি মেলেকের তুলনা করা হয়। এই সংকীর্ণ মানসিকতাই পরবর্তীকালে পশ্চিমী ঐতিহাসিকদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। কারন তাঁরা ইয়েজিদি ইতিহাস রচনার প্রেক্ষিতে খ্রিস্টীয় চেতনায় অনুপ্রানিত হয়ে প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে ফেলছেন। এদের মধ্যে অনেকেই আবার নিজেদের মন মত করে দুই খণ্ডে বিভক্ত ইয়েজিদি ধর্মগ্রন্থ সংকলন করে ফেলেন, যেখানে পদে পদে এই স্বকীয় বিশ্বাসকে হেয় করে বাইবেলের শ্রেষ্ঠত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে জার্মান ঐতিহাসিকরা প্রায় নিরপেক্ষভাবেই এই প্রাচীন মূর্তিপূজারী গোষ্ঠীর ইতিহাস তুলে ধরেছেন,তা স্বীকার করতেই হবে।
দীর্ঘকাল ব্যাপী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ইয়েজিদিরা নিজদের অতীত ঐতিহ্যকে তেমনভবে ক্ষুণ্ণ হতে দেয়নি।ইয়েজিদি শ্রুতি অনুযায়ী তাঁরাই সর্বপ্রথম এডেন উদ্যানে আবির্ভূত হয়েছিল। উত্তর ইরাকের লালিশ নামক এক সুন্দর পাহাড়ঘেরা গ্রামে ইয়েজিদিদের প্রধান মন্দির অবস্থিত। তাঁরা বিশ্বাস করে যে লালিশ ও তাঁর সন্নিবিষ্ট অঞ্চলেই একসময় এডেন উদ্যানের অস্তিত্ব ছিল। লালিশের মন্দির নিয়েও প্রচুর ধোঁয়াশা রয়েছে। দ্বাদশ শতকের প্রাক্কালে শেখ আদি বিন মুসাফির নামক একজন সুফি সন্ত ইয়েজিদি দর্শনকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। অনেকের মতে,তিনি আবার ছিলেন উম্মায়েদ খলিফা মারওয়ান ইবন আল হাকামের বংশধর। মুসাফির ইয়েজিদিদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তিনি ইয়েজিদিদের ধর্মীয় পরিকাঠামোর বেশ কিছু সংস্কার সাধন করেছিলেন।তাই তাঁকে তাওসি মেলেকের অবতার হিসেবে গণ্য করা হয় এবং লালিশের মন্দিরে মুসাফিরের সমাধি রয়েছে। এবার সমস্যা শুরু হল এখান থেকে,কারন ইসলামীয় ধর্মগুরুরা লালিশের মন্দিরের প্রাচীনত্ব নস্যাৎ করে দেন এবং এই মতাদর্শকে ইসলামের বিপথগামী শাখা রূপে উল্লেখ করতে থাকেন।অস্বীকার করার উপায় নেই যে ইয়েজিদি মতাদর্শে সুফি মতের কিছুটা প্রভাব রয়েছে। তবে কখনই ইয়েজিদিদের ইসলামের শাখা হিসেবে গণ্য করা যায় না এবং ইসলামের চেয়েও এই মতাদর্শ অনেক প্রাচীন। নিছক সাদৃশ্যের প্রেক্ষিতে যারা ইসলাম ও ইয়েজিদি দর্শনকে সমজাতীয় রূপে গণ্য করেন,তাদের আদতে পশ্চিম এশিয়ার প্রাচীন ধর্মমত গুলি সম্পর্কে তেমন ধারনা নেই। কারন খ্রিস্টীয় মতাদর্শের ন্যায় ইসলামও তাঁর প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কালে, আরব অঞ্চলের প্রাচীন বহু দেব-দেবী কেন্দ্রিক ধর্মগুলিকে যেমন বলপূর্বক উৎখাত করেছিল তেমনই সেগুলি থেকে বেশ কিছু উপাদান সংগ্রহ করেছিল। বর্তমানে ইসলামে রোজা পালনের যে রীতি রয়েছে, ঠিক প্রায় একই প্রকার উপবাস পদ্ধতি ইসলামের আবির্ভাবের বহুকাল আগে থেকেই মূর্তিপূজারী প্রাচীন আরবীয়দের মধ্যে প্রচলিত ছিল।তাই ইয়েজিদি মতের বেশ কিছু যে ইসলাম অনুকরণ করেছে এমনও হতে পারে। কারন ইয়েজিদিরা দিনে মোট পাঁচবার প্রার্থনা করে।এর মধ্যে চারবার সূর্যের প্রতি ও মধ্যাহ্নকালীন প্রার্থনা লালিশের দিকে মুখ করে সম্পন্ন হয়।সর্বোপরি তাঁরা যেখানেই থাকুন না কেন,জীবনে অন্তত একবার লালিশে তীর্থ করতে আসতেই হয়। এখানেই ইসলাম বর্ণিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ,মক্কার প্রতি মুখ করে প্রার্থনা ও জীবনে একবার হজে যাওয়ার বিষয়টির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। তবে পশ্চিম এশিয়ায় ইসলাম বিজয়ের পর নতুন কোন মূর্তি পূজক গোষ্ঠীর উদ্ভব হবে, একথা কল্পনাতেও আনতে বেশ কষ্ট হয়। সুতরাং ইসলামের চেয়ে ইয়েজিদিদের প্রাচীনত্বের বিষয়ে কোন সন্দেহই নেই।
ইয়েজিদি ধর্মীয় দর্শন যূথবদ্ধ হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলামের কোন প্রভাবই ছিল না বরং প্রাচীন মেসোপটেমীয় ও ইরানীয় ধর্মের অনেকখানি প্রভাব ছিল।কারন মেসোপটেমিয়ার এরেডু নগরীর মুখ্য দেবতা ‘এনকি’র সাথেও ময়ূরের সংযোগ লক্ষ্য করা যায়।এছাড়া প্রাচীন মেসোপটেমীয় ধর্মের বেশ কিছু রীতি আজও ইয়েজিদিদের মধ্যে প্রচলিত আছে প্রায় অপরিবর্তিত রূপে। অনেকেই মনে করেন যে ইরানীয় ‘ইয়াজাতা’(স্বর্গীয় সত্ত্বা) শব্দ থেকে ‘ইয়েজিদি’ শব্দের উতপত্তি হয়েছে।তাঁরা বিশ্বাস করে যে পূর্বে সমস্ত কুর্দরা ইয়েজিদি ছিল। তবে কুরমাঞ্জি উপভাষা ব্যবহারকারী ইয়েজিদিরা কত প্রাচীন- এই প্রশ্নের সমাধান আজও হয়নি।তবে এই বিষয়ে বেশ কিছু যৌক্তিক অনুমান করা যেতে পারে।বেশিরভাগ গবেষকই ইয়েজিদিদের সাথে খৃষ্টান ও মুসলিমদের সাদৃশ্য সন্ধান করতে গিয়ে একটি বিশেষ দিক তাঁরা এড়িয়ে গেছেন।সেটা হল,ইয়েজিদিরা তাওসি মেলেকের প্রতিরুপ হিসেবে যে ময়ূরের উপাসনা করে তা আদৌ প্রাকৃতিক ভাবে ইরাকে কেন, পশ্চিম এশিয়াতেই পাওয়া যায় না। এমন এক পক্ষী যা ওই অঞ্চলে পাওয়াই যায় না,তা কি ভাবে সেখানকার এক ধর্মীয়গোষ্ঠীর প্রধান উপাস্যে পরিণত হল, এর সমাধান কেউ করেননি। এবার যদি প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার ওপর নজর দেওয়া যায়, তাহলে বোধহয় এই ময়ূর সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। হরপ্পার সাথে যে ইরাক তথা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সংযোগ ছিল, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। মেসোপটেমিয়ার অক্কাদীয় রাজা সারগনের সময় মেলুহের সাথে বানিজ্য চলত এবং বিভিন্ন মূল্যবান দ্রব্যাদির পাশাপাশি ময়ূর আমদানি করা হত। এই মেলুহ হল নিম্ন সিন্ধ উপত্যকা ও সিন্ধ বদ্বীপ অঞ্চল।আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় ময়ূরের যে বিপুল কদর ছিল,তাঁর প্রমান পরবর্তীতেও পাওয়া যায়।ভারতে আগমনের পর গ্রিক রাজা আলেকজান্ডার ময়ূরের সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছিলেন এবং তিনি ভারতীয় ময়ূর ম্যাসিডোনিয়ায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।গ্রিক দেবী হেরার সাথে ময়ূরের যে সম্পৃক্তকরন লক্ষ্য করা যায়,তা আসলে ভারত থেকে গ্রিসে ময়ূর আমদানীর প্রমান বহন করে। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট অধ্যায় থেকেও ভারতীয় ময়ূরের চাহিদার কথা জানা যায় এবং রাজা সলোমন ভারতীয় ময়ূরের বিশেষ ভক্ত ছিলেন- এই তথ্যও পাওয়া যায়। সুতরাং প্রাচীন ভারতের সাথে ইয়েজিদি সম্প্রদায়ের যোগাযোগের বিষয়টি বেশ স্পষ্ট। হরপ্পার বেশ কিছু মৃৎপাত্রে ময়ূরের চিত্র পাওয়া গেছে।এর মধ্যে একটিতে দেখা যায় যে,একটি ময়ূর এক ক্ষুদ্র মনুষ্য দেহকে সাথে নিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে উড়ে যাচ্ছে।আপাত সাধারণ এই ছবিটির ধর্মীয় প্রেক্ষিতে ব্যাপক ব্যঞ্জনা আছে। ময়ূরকে এখানে স্বর্গে উত্তরণের মাধ্যম হিসেবে দেখানো হয়েছে বলাই যেতে পারে। যদি ‘আলোকময় জগৎ’কে স্বর্গ রূপে অভিহিত করার বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত থাকে,তাহলে একে জ্ঞানের প্রতীক রূপে অভিহিত করাই যেতে পারে। অন্যদিকে ইয়েজিদিরা তো বিশ্বাস করে যে ময়ূররুপী তাওসি মেলেক মানুষের মন থেকে অজ্ঞানতা দূরীভূত করে তাকে জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত করে।পুনরায় ভারত-ইয়েজিদি সম্পর্কের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হচ্ছে বলেই মনে হয়।
প্রাচীন ভারতের সাথে পশ্চিম এশীয় এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর সংযোগকে উস্কে দেয় তাদের শ্রুতি ঐতিহ্য। এরা বিশ্বাস করে যে,তাদের আধ্যাত্মিক অবক্ষয়ের কারনে বিশ্বে কয়েকটি ভয়ঙ্কর প্লাবন সংগঠিত হয় এবং শেষ প্লাবনটি হয়েছিল আজ থেকে ছয় হাজার বছর পূর্বে ও তার ফলে তাঁরা ইরাক পরিত্যাগ করে অধুনা আফগানিস্তান,ভারত ও উত্তর আফ্রিকায় এসে বসতি স্থাপন করে। এরপর প্রায় দু হাজার বছর পূর্বে তারা পুনরায় নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করে মেসোপটেমীয় সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।অর্থাৎ এখান থেকে ভারতের সাথে তাদের যোগাযোগের বিষয়টি আবার সামনে চলে আসছে।ইয়েজিদি ক্যালেন্ডারের হিসবে বর্তমানে পৃথিবীতে ৬৭৬৫ সাল চলছে।ইয়েজিদি শ্রুতির সাথে যদি এই ক্যালেন্ডারের সামঞ্জস্য বিধান করি,তাহলে দেখা যায় ভারত থেকে তাঁরা ৪০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ নাগাদ চলে গিয়েছিল অর্থাৎ তখনও হরপ্পা সভ্যতা প্রাথমিক স্তরে রয়েছে।তাহলে হয়ত হরপ্পা সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ের বিকাশে এই গোষ্ঠীর কোন অবদান থাকতে পারে।কারন হরপ্পা ও মেসোপটেমিয়ার বস্তুগত প্রেক্ষিতে বেশ সাযুজ্য রয়েছে। মনে রাখতে হবে যে মেহেড়গর সভ্যতার দ্বিতীয় পর্বে প্রায় ৫০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে কুমোরের চাকায় নির্মিত যে মৃৎপাত্রের অবশেষ পাওয়া গেছে,সেই প্রযুক্তি নিশ্চিত ভাবে পশ্চিম এশিয়া থেকেই এসেছিল।সুতরাং প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার বিকাশে পশ্চিম এশিয়ার অবদান বেশ স্পষ্ট।
ভারতীয় ইতিহাসের অঙ্গনে ‘অশ্ব’ কে কেন্দ্র করে যে পরিমাণ বিতর্ক হয়েছে,আর অন্য কোন প্রাণীকে নিয়ে এত কাঁটাছেঁড়া হয়নি।হরপ্পাবাসীরা আর্য না দ্রাবিড়ীয় তা নিয়ে বিতর্ক করতে গিয়ে,হরপ্পায় অশ্বের অবশেষ পাওয়া গেছে কিনা বা তা কত প্রাচীন এই নিয়েই আমরা ব্যস্ত থেকেছি। যদিও ময়ূর যে প্রাচীন ভারতীয় ধর্মীয় কাঠামোয় সর্বদা সম্পৃক্ত ছিল এবং কেন ময়ূরের এই সার্বজনীন জনপ্রিয়তা তা নিয়ে বিশেষ আলোকপাত হয়নি। অন্যদিকে হরপ্পা সভ্যতার সময়কাল,সেখানকার অধিবাসী,ধর্ম সমস্ত কিছু নিয়েই বিতর্ক আছে এবং এই সব বিষয়ে কোন দৃঢ় সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় নি।সুদূর দক্ষিন ভারতের তামিল ভাষার উপভাষা ব্রাহুই কি ভাবে অধুনা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে প্রচলিত রয়েছে ,সে সম্পর্কে প্রবল ধোঁয়াশা রয়েছে।এই কারনেই অনেকে আবার হরপ্পার অধিবাসীদের তামিলদের পূর্বপুরুষ রূপে মনে করেন।এখানে আবার একটা গোলমেলে বিষয় আছে, তা হল তামিলদের প্রধান দেবতা মুরুগান-এর উৎপত্তি কাল আজও অজানা।তবে মুরুগানের উপাসনা যে বহু প্রাচীন তা মেনে নিতেই হয়। মুরুগানের বাহন হল ময়ূর এবং মুরুগান কেন্দ্রিক প্রত্নকথায় ময়ূরের বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাহলে ইয়েজিদিদের তাওসি মেলেকের প্রভাব কি ভারতীয় মুরুগানের ওপর পড়েছিল না মুরগান ইয়েজিদি ধর্মবিশ্বাসকে প্রভাবিত করেছিল-এই বিষয়টিও তেমন স্পষ্ট নয়।বিষয়টি আরও জটিল হয়ে যাবে যদি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের চিত্রল জেলার পার্বত্য উপত্যকায় ‘কলশ’ উপজাতির প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ করা হয়।কলশ-রা বহুদিন দিন ধরে দাবী করত যে তাঁরা আলেকজান্ডারের সময় ভারতে আগত গ্রিক সেনাদের বংশধর।যদিও সাম্প্রতিক জিনগত গবেষণা বিষয়টিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে।সর্বোপরি সুন্নি প্রধান পাকিস্তানে হাজার চারেক জনসমষ্টির এই উপজাতি যে ধর্মীয় পদ্ধতি অনুসরণ করে,তা বৈদিক ক্রিয়াকলাপের সাথে সমজাতীয়।দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে এই উপজাতির যে কাষ্ঠ নির্মিত মন্দির রয়েছে,সেখানে মন্দির গাত্রের সম্মুখে ময়ূরের প্রতিকৃতি খোদাই করা রয়েছে।কলশদের প্রাচীনত্ব নির্ণয় এখনও সম্ভব হয়নি।তবে তাঁরা যে রীতি-নীতি অনুসরণ করে তা যে বহু পুরনো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।সর্বোপরি কলশদের গাত্রবর্ণের সাথে ইয়েজিদিদের বেশ মিল রয়েছে।তামিলদের মধ্যে মুরুগানের বিপুল জনপ্রিয়তা ও তাঁর সাথে ময়ূরের সংযোগ এবং ইয়েজিদিদের সাথে ভারতের সম্পর্ক ও তাঁদের ধর্মীয় দর্শনে ময়ূরের উচ্চ অবস্থান এই দুই জাতির মধ্যে এক আপাত সামঞ্জস্যের ইঙ্গিত বহন করে।তবে এদেশীয় তামিলদের পূর্ব পুরুষরাই প্রাচীন ইরাকে বসতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইয়েজিদি বিশ্বাসের সৃষ্টি করেছিল কিনা,তা নিয়ে এখনই কোন নির্ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে না।
ইয়েজিদিদের উৎস সংক্রান্ত বিতর্ক আরও জটিল হয়ে যায় যখন আর্যদের ধর্মীয় কাঠামোয় ময়ূরের গুরুত্বের প্রতিফলন পাওয়া যায়।হিত্তি ও মিত্তানিদের মধ্যে সম্পাদিত যে চুক্তির উল্লেখ আনাতোলিয়া বা তুরস্ক থেকে প্রাপ্ত ভোগসকাই লেখতে পাওয়া যায় সেখানে বৈদিক দেবতা ইন্দ্র,ব্রুন,মিত্র ও নাসাত্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই নাসাত্য হল ঋগ্বেদীয় দুই যমজ ভাই অশ্বিন, যাদের উদ্দেশ্যে অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় ময়ূর উৎসর্গ করা হত।এছাড়া দেবরাজ ইন্দ্রের সবচেয়ে প্রিয় পাখি ছিল ময়ূর। হিত্তি ও মিত্তিদের যাদেরকে ভারতে আগত বৈদিক আর্যদের পূর্বপুরুষ রূপে গণ্য করা হয় তাঁদের মধ্যেও আবার ময়ূরের মোটিফ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।আবার হিত্তিরা মেসোপটেমিয়া থেকে লিখন পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল।১৯৯৪ সাল নাগাদ তুরস্কের গোবেকেলি টেপে অঞ্চলে জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লস স্মিথের নেতৃত্বে প্রায় আট হাজার বছরের প্রাচীন এক মন্দিরের সন্ধান পাওয়া গেছে।এই মন্দিরটি আবার তুরস্কের সানলিউরফা অঞ্চলের নিকটেই অবস্থিত এবং এই অঞ্চলে একদা ইয়েজিদিদের সংখ্যাধিক্য ছিল।প্রাচীন এই মন্দিরে সাপের প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে।একই ভাবে লালিশে স্থিত ইয়েজিদি মন্দিরের প্রধান প্রবেশপথে সাপের প্রতিকৃতি উৎকীর্ণ রয়েছে।আবার বৈদিক দর্শন অনুসারে ময়ূর ও সাপের সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে ‘কালচক্র’ বোঝানো হয়।বর্তমান তুরস্ক বা প্রাচীন আনাতোলিয়ার সংস্কৃতি অনেকাংশেই ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃতির সাথে সাযুজ্যপূর্ণ ছিল। তাই অনেকেই বৈদিক আর্যদের প্রাচীন বসতিস্থল রূপে তুরস্ককে অভিহিত করেন।সামগ্রিকভাবে দেখা যায় যে,ইয়েজিদিদের সাথে প্রাচীন তুরস্কের সম্পর্কের বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।সুতরাং বৈদিক আর্যদের সাথে ইয়েজিদিদের সংযোগের ক্ষেত্রেও কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়।
ইয়েজিদিদের ধর্মীয় আচার পদ্ধতির সাথে বর্তমান হিন্দু সংস্কৃতির বেশ সামঞ্জস্য রয়েছে।উভয়েই পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাসী এবং পবিত্র আগুনে আহূতি প্রদান করে।ইয়েজিদি মন্দির ও হিন্দু মন্দিরের গঠনগত কোন তফাতই প্রায় নেই। তাঁরা ময়ূর প্রতিকৃতি সম্বলিত যে প্রদীপ প্রজ্বলন করে তাঁর সাথেও হিন্দু বিশেষত তামিলদের মিল রয়েছে।ইয়েজিদি মন্দিরের দেওয়ালে এই ধরনের প্রদীপ প্রজ্বলন রত নারীর চিত্র অঙ্কিত রয়েছে,যিনি শাড়ী পরিহিতা।তবে এই চিত্র অনেক পরবর্তীকালীন বলেই মনে হয়।ইয়েজিদিদের ধর্মবিশ্বাস কার্যত বৈদিক ধর্ম ও আব্রাহামিক ধর্মগুলির মধ্যে এক সেতুবন্ধের ভূমিকা পালন করছে।ভারতীয় প্রেক্ষিতে বৈদিক আর্য ও দ্রাবিড়ীয় ধর্মমতের সাথে ইয়েজিদি দর্শনের উপাদানগত সাযুজ্য অত্যন্ত বিস্ময়কর।এছাড়া বৈদিক দেবতা কার্তিকেয় ও দ্রাবিড়ীয় দেবতা মুরুগানের সাথে ময়ূরের সম্পৃক্তকরণের বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।যদিও কার্তিকেয় ও মুরুগান দুজনেই সমজাতীয়,শুধুমাত্র অভিব্যক্তিজনিত পার্থক্য লক্ষণীয়।দর্শনগত প্রেক্ষিতে ইয়েজিদি ও প্রাচীন ভারতের সামঞ্জস্য নিয়ে কোন সন্দেহর অবকাশ নেই।অন্যদিকে কিছু কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগত মিলও উভয়ের রয়েছে।যদিও এই বিষয়ে এখনও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন আছে। তবে একথা জোর দিয়েই বলা যায়, পশ্চিম এশীয় এই প্রাচীন মূর্তিপূজক গোষ্ঠীর উৎস সন্ধান করতে গেলে প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপটের বিশ্লেষণ একান্ত প্রয়োজনীয় এবং প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতির মধ্যে এদের উপস্থিতি নিশ্চয়ই আছে।সর্বোপরি ইয়েজিদিদের উৎস সংক্রান্ত প্রশ্নের সমাধান হলে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের বহু অমীমাংসিত প্রশ্নের যে সমাধান হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না;বিশেষত দীর্ঘকাল অব্যাহত আর্য-অনার্য বিতর্কের প্রেক্ষিতে যুক্তিগ্রাহ্য দিশা পাওয়াও সম্ভব হবে।
সায়ন দেবনাথ,এম ফিল,প্রথম বর্ষ,
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
যোগাযোগ-৭৮৯০৮৫৮২৪০
ই মেল- [email protected]
.
.
.
তথ্যসূত্রঃ
1. The Peacock Cult in Asia(Article)- P.Thankappan Nair
2. Devil worship; the sacred books and traditions of the Yezidiz-Isya Josep
3. Heirs to Forgotten Kingdoms: Journeys Into the Disappearing Religions of the Middle East- Gerard Russell
4.Land of seven rivers: History of India’s Geography- Sanjeev Sanyal
5.Peacock-Christine E. Jackson
6. Peacock in Indian Art Thought & Literature- Krishna Lal
অনেক কিছুই জানলাম আর বর্তমানে পাকিস্তানে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের কথা মনে পড়ছে।হেফাজতিরা বাংলাদেশে অনুরুপ করার চেস্টা করছে।
ইয়েজিদিদের সম্বন্ধে আমার কিছুই জানা ছিল না, এটাই তাদের ওপর আমার প্রথম পাঠ। নতুন কিছু জানার আনন্দ পেলাম – খুব ভালো লেগেছে। আরো পড়ার চেস্টা করবো।
আমি ইয়েজিদীদের পার্সী, অর্থাৎ জেরোস্ট্রিয়ানদের শাখা ভাবতাম। পরে কিছু লেখাতে এদের হিন্দু বলেও উল্লেখ করতে দেখেছি। এই লেখাটা পড়ে প্রথম একটা স্ট্যান্ডার্ড ধারনা হল। আমি এরকম একটা তত্বও দেখেছিলাম যাতে ইয়েজিদীদের অশ্বত্থামার বংশধর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তত্ত্বের প্রবর্তকরা মহাভারতের রেফারেন্স দিয়ে দেখাচ্ছেন যে অশ্বত্থামাকে ইরাকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। তিনিই সেখানে ভারতীয় দর্শন প্রচার করেন। এরকম কি কোন ক্লু আছে?
ব্লগে লেখার নিয়ম। এবং সদস্য হওয়ার নিয়োম জানালে উপকৃত হবো
ইয়েজিদিদের সম্পর্কে আমার ধারনা ছিল যে এরা ইসলামী উপগোষ্ঠী। জানতে পারলাম নতুন কিছু। ধন্যবাদ লেখক কে , নতুন লেখার আশায় রইলাম।
:good:
মুক্তমনায় স্বাগতম …
1. The Peacock Cult in Asia(Article)- P.Thankappan Nair
2. Devil worship; the sacred books and traditions of the Yezidiz-Isya Josep
3. Heirs to Forgotten Kingdoms: Journeys Into the Disappearing Religions of the Middle East- Gerard Russell
4.Land of seven rivers: History of India’s Geography- Sanjeev Sanyal
5.Peacock-Christine E. Jackson
6. Peacock in Indian Art Thought & Literature- Krishna Lal
দেবনাথ দাদা, ভাল লেখা, তবে references কোথায় ? অনুগ্রহ করে তথ্য-উৎস বলুন।
অসাধারন লেখা, ব্যেক্তিগতভাবে আমি ইয়াযাদিদের ইসলামের উপগোষ্ঠী ভাবতাম। ভুল ভাঙ্গল।
আইএস এর নির্মম শিকার বিশেষ করে মেয়েরা ধর্ষন ও যৌন দাসী হতে বাধ্য হচ্ছে! সভ্যতার ক্রম বিকাশে তারা যে হারিয়ে যায়নি এটাই বড় কথা! গনহত্যার শিকার হয়েও টিকে আছে। তাদের লড়াকু জীবন ও ধর্মীয় চেতনার প্রশংসা না করলেই নয়! নবী যেখানে ইসলামী দেশে অন্য ধর্মের চর্চা বরদাস্ত করেননি সেখানে হাজার প্রতিকুলতার মাঝে তাদের অস্তিত্বকে সাধুবাদ রইল! আপনাকেই ধন্যবাদ ইয়াযিদি ইতিহাস তুলে আনার জন্য!
আপনাদের সব্বাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।খুব ভালো লাগছে,কারন এটাই আমার প্রথম লেখা।আগামী দিনেও ইয়েজিদি দের সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য শেয়ার করব। সবশেষে এটাই বলতে চাই যে,আপনাদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।
অসাধারন তথ্যবহুল একটি লেখা।অনেক অজানাকে কিছুটা জানা হল।লেখকের জন্য শুভকামনা।
আপনারা পশ্চিম ইরাকের ইয়াজিদি সম্প্রদায় সম্পর্কে ইদানীং শুনে থাকবেন আই এস এর অমানবিকতা আর তাদের গনহত্যার উপাখ্যানে। কিন্তু এদের সম্পর্কে বিস্তারিত অনেকেই জানেন না। এ প্রবন্ধটি সে অতৃপ্তি অনেকটাই মেটাবে। এবং পরিশেষে বলবো, বিশ্বব্যাপী নানা সম্প্রদায়ে আজ বিভক্ত হলেও আসলে মানব সম্প্রদায়ের নিজেদের মাঝেই আছে একাত্ত্বতার সুর!
চমৎকার লেখা
মুক্তমনায় স্বাগতম।
চমৎকার লেখা। ইয়াজিদি’দের বিষয়ে বাংলায় জানার তৃষ্ণা ছিল, সেটা খানিকটা পূরণ হলো এই লেখায়। এই ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নিয়ে আরও জানার ইচ্ছে। আশা করি লেখা চালিয়ে যাবেন।
লেখককে ধন্যবাদ।
সুন্দর ও তথ্যবহুল লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। সরলীকরণ এর কথা মাথায় রেখেও বলতে পারি ইসলাম ধর্ম ভিন্নমত ও ভিন্নধর্মের প্রতি যতটা খড়গহস্ত অন্যধর্মগুলো এককালে সেরকম থাকলেও এখন একেবারেই সেইরূপ ত্যাগ করেছে।
এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই সমন্বয়বাদের উদাহরণও পাওয়া যায়। যেমন জাপানে বৌদ্ধ শিন্টো, আমেরিকা মহাদেশে খ্রিষ্টান ও বিভিন্ন আমেরিন্ডিয়ান ধর্ম, ভারতবর্ষে আর্য ও নানা এনিমিক ধর্ম। কিন্তু ইসলামের ক্ষেত্রে এরকম একটি উদাহরণও কি দেওয়া যাবে? ইসলামের ক্ষেত্রে বরং উল্টো উদাহরণই চোখে পরে। ইরানে বাহাই, ইয়াজিদী, ইরাক সিরিয়ায় লেবাননে ইয়াজিদী-খ্রিষ্টান-দ্রুজ, মিশরে কপটিক খ্রিষ্টান, পাকিস্তানে হিন্দু,খ্রিষ্টান, অতি সংখ্যালঘু কলশ সম্প্রদায় সহ ভিন্নধর্ম ও বিশ্বাসের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন সহ জোরপূর্বক ধর্মান্তরের ছবিই ভেসে ওঠে।
তাই বর্তমান বাস্তবতায় মুসলমান দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের আত্নমর্যাদা, আত্নপরিচয় নিয়ে টিকে থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হয়।
অনেক তথ্যবহুল লেখা। জানার আছে অনেক কিছু। এই ধরণের লেখা বেশি বেশি চাই।
তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম।…।
গোষ্ঠী’টি গণহত্যার শিকার হয়েছে;-এটাই ঠিক।এই ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সর্বোপরি অসংখ্য ধন্যবাদ।
ক্ষমা প্রার্থনার মত কিছু ঘটেনি কিন্তু 🙂 , এইটি পিয়ের রিভিউ ধরে নেবেন কেমন।
শব্দটি ঠিক করে দেবার জন্য মুক্তমনা সম্পাদকের প্রতি অনুরোধ রইলো।
মুক্তমনায় স্বাগতম। চমৎকার একখানা রচনা। ইয়াজিদি’দের নিয়ে বাংলায় সম্ভবতঃ বেশ কমই লেখা রয়েছে। এই লেখাটি জানবার সেই জায়গায় নতুন মাত্রা যোগ করলো। লেখককে ধন্যবাদ।
বলছিলেন, গোষ্ঠী’টি গণহত্যার শিকার হয়েছে; তাই না?
মনে হয় একটু জেনারালাইজড হয়ে গেলো 🙂
এই পর্য্যবেক্ষণগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম। শুভেচ্ছা।