ভোগ-ষ্পৃহা অনেক সময় অনেকের মধ্যে অব্যক্ত থাকে; ভোগীর সংষ্পর্শে তা দাবানলের মত অগ্নিরূপ ধারণ করে। জগৎ-সংসারের চির চেনা মানুষগুলোও তখন অচেনা হয়ে যায়, আরাধ্য হয়ে উঠে ভোগ। । ভোগ সর্বস্ব ভোগী; পাতাল ষ্পর্শ করেও ছুটতে থাকে , শব্দের গতির চেয়েও দ্রুততর এর গতি; আত্মজাকেও অতিক্রম করে চলে যায় , নরকে
টেলিভিশনের পর্দা চালু করেই দিলে চোখের সামনে ভেসে উঠে, ভোগের কীর্তন। ভোগ-ই ভগবান। এর প্রভাব সামাজিক জীবনাচারে এতটাই গভীর, মনুষ্যত্ব নয় , মানুষের বাহ্য হয়ে উঠে মুখ্য। বাহ্য জৌলস প্রদর্শনের তীব্র প্রতিযোগিতায়, নীতি, নৈতিকতা , এমনকি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রচলিত আইনগুলোও অকার্য্যকর হয়ে পড়ে ।
নিম্ন বর্ণ থেকে নব্য মুসলমান অর্থাৎ ‘হুইন্যা’ মুসলমান;এবং একাত্তরের পর নব্য ধনী , ভোগের স্বাদ – ফলে শুরু হয়ে গেল প্রশ্নহীন বিনাশযজ্ঞ । এই যজ্ঞ কেবল সুন্দরবন বিনাশে সীমাবদ্ধ নয়; লোকালয় অর্থাৎ বাঁশখালী থেকে ফুলপুর, গাইবান্ধা, রূপপুর পারমাণবিক কারখানা পর্য্যন্ত বিস্তৃত ।
দেশে দেশে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেবার চেষ্টা চলছে যখন, তখন বাংলাদেশে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য চলছে মানুষ নিধন।
মানুষকে দোষে কি-ই-বা লাভ ? স্বর্গের দিকে তাকালেও দেখি, সেই ভোগের রাজত্ব । জাগতির ভোগ আর পারলৌকিক ভোগের মধ্যে কি খুব একটা পার্থক্য আছে ? মানুষ অহংকার পেলে কোথা থেকে ? স্বয়ং স্রষ্টাই যদি অহংকারী হন, তার বান্দারা তো কিছুটা হলেও তার স্বভাব পাবে। পেয়েছে যে , তা আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি, গলাকাটা রাজনীতির অন্তরালে। চলছে, ধর্মীয় বিশ্বাসে সফল প্রয়োগ । মানুষে মানুষে সন্দেহ, ভেদ-বিভেদ বাড়ানোর চাষাবাদে লাভ শেষ পর্য্যন্ত ভোগের পেছনে সক্রিয় ভগবানদের।
ভেদ-বিভেদের এই রাজনীতি সামাজিক জীবনে, অভিন্ন বিশ্বাসীদের মধ্যেও প্রকটতর হয়ে উঠছে দিন দিন। রমজান বা কোরবানির ঈদের দিকে তাকালেই আমরা ভোগ প্রকাশের কদর্য্য দিকটা দেখতে পাই।
ভোগের এই সর্ব্বনাশা বান ঢুকে পড়েছে প্রায় প্রতিটি ঘরে । প্রতিযোগিতার নামে মেরে ফেলা হচ্ছে মানবিক বোধ , শিশু বয়সেই মননে প্রবেশ করানো হচ্ছে আত্মকেন্দ্রিকতা । নিত্য নূতনকে পেতে গিয়ে , নীতি বর্জ্জিত কর্ম্মের সন্ধা্নে মানুষ আজ ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে বেড়াচ্ছে দিগ্বিদিগ ।
এমনকি সন্তান-সন্তুতি, মা-বাবা, ভাই-বোন – সব সম্পর্ক আজ বিচার্য্য স্বার্থের নিরিখে , ভোগের নিরিখে ।
প্রতিদিনের চিত্র যা বলে দিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, মানুষকে দোষে লাভ নেই , তার বিশ্বাসকেও দোষে লাভ নেই ।
ভোগের উৎস যে ভগবানের ( উৎপাদনের উপায়সমূহের মালিক ) হাতে, তার সন্ধানে, তার বিনাশকল্পে সংগঠিত না হয়ে উপায় নেই।
পড়াশোনা খুব কম বলে যে কথাটা জোর গলায় বলতে পারছি না, তা হল, ভোগের এই চিত্রটা কি মাও সে তুংয়ের চোখে ধরা পড়ে গিয়েছিল ? সাংস্কৃতিক বিপ্লব কী সে কথা বলে ? জানি না, তবুও মনে হচ্ছে এই ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করেই সমাজকে শাপগ্রস্ত অবস্থা থেকে মুক্ত করা যাবে ।
#নিলাঞ্জনা::::আমেরিকা ইরাক.আর আফগানিস্তান যুদ্ধে এ কতো মানুষকে মেরেছিল জানেন? ??তাও শুধুমাত্র বাজার দখলের জন্য অর্থাৎ তাদের সাম্রজ্যবাদী হীন চরিত্র কে চরিতার্থ করবার জন্য |আর সেখানে মাও জখন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রক্তাক্ষয়ি বিপ্লব করলেন এবং তার ফলস্বরূপ মানুষের মৃত্যু ঘটলো সেটা নিয়ে আপনাদের কুমাড়াশ্রুর শেষ নেই | এর থেকেই বোঝা যায় আপনারা কোন শ্রেনীর চামচাগিড়ি করেন |নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করুন,পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে বিচার করুন |
ভোগবাদ,ব্যাক্তিকেন্দ্রীক মানুষিকতা মানবিক মূল্য বোধ,ন্যায়-নীতি কে ধবংস করাতো বুর্জোয়া সংস্কৃতির দান | যারা শিক্ষা,খাদ্য ,চিকিৎসা ,বাসস্থান আর নারীকে বাজারের পন্যে পরিনত করে তাদের কাছ থেকে এর থেকে ভালো আর কিছু আশা করা যায় কী????মানুষ ভোগ,অঞ্জতা,মৌলবাদের অন্ধকারে ডুবে থেকে মানবিকতাকে হাড়িয়ে পাশবিক খেলায় উন্মত্ত হয়ে উঠবে আর বুর্জোয়াদের ক্রিড়ানকে পরিনত হবে আর এই সুজোগ নিয়ে বুর্জোয়ারা তাদের শোষনকে তীব্রতম করবে বিনা প্রতিরোধেই | তাই মাও সে তুং নির্দেশিত পথে (মহান সংস্কৃতিক বিপ্লব )মানুষকে সংস্কৃতি ,রাজনীতি ,প্রকৃত ঞ্জান-বিঞ্জান চর্চায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে জাতে তারা সত্যকে জানবার আর সত্যের জন্যে লড়বার শক্তি ফিরে পায় |
মাও সে তুং কতো মানুষকে যেনো হত্যা করেছিল? শুধু ভোগীদেরকেই হত্যা করেছিল বোধ করি।
ভালোই লিখেছেন। শুরু থেকে মাঝে এবং প্রায় শেষ অবধি বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু ভগবান বিনাশ কেন বুঝলামনা। এটা কোন ভগবান? সংষ্কৃতির ও তো অনেক কুসংস্কার রয়েছে। যার কুপ্রভাবে ঘটছে নানা ধরণের ঘটনা-দুর্ঘটনা।একটু বুঝিয়ে দিলে ভালো হতো। ধন্যবাদ ভালো থাকুন।
ভগবান: ভগ-এর ( উৎপাদনের উপায়সমূহের ) বহন অন ( চলমান ) থাকে যাহাতে; অথবা, ভগ ( উৎপাদনের উপায়সমূহ, তাহার ব্যবস্থাদি ) আছে যাহার; কিংবা , উৎপাদনের উপায় বা যোনি আছে যে জীবদেহের বা সমাজদেহের । # প্রতীকী অর্থ: ভগযুক্ত, লাঙল গরু বীজধান জমি ইত্যাদির মালিক, জমিদার, কর্ম্মশালার মালিক, ( একালের ভাষায় ) শিল্পপতি ; (পৌরাণিক ভাষায়) ঐশর্য্যাদি ষড়্গুণশালী , মহিমান্বিত, ভগব।।-বিশিষ্ঠ, ভগবান-অত্রি…… (সূত্র: সরল শব্দার্থকোষ। রবি চক্রবর্তী এবং কলিম খান )
রিপ্লাইয়ের জন্যে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের মতো সাধারণের জন্য লেখাটা আরেকটু ব্যাখ্যা করে —- উদাহরণ দিয়ে পরিধি বাড়ানো যেত।
পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ দিদি। আসলে ,গঠনমূলক মন্তব্য পুনর্লিখনে সহায়ক হয়ে উঠে।
ধন্যবাদ ।
ভাল লিখেছেন।