(১)
২০১২ সালে যখন ক্লিনটন স্টেট সেক্ট্রেটারী থেকে পদত্যাগ করলেন, তখনই আন্দাজ ছিল, এইচ আর সি, সম্ভবত ২০১৬ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন। অবশ্য ২০০৮ সালে যখন, ওবামার হাতে প্রাইমারীতে পরাজিত হয়ে, হিলারী প্রাইমারী রেস থেকে সরে দাঁড়ালেন সেদিন অনেকেই আমরা ভেবেছিলাম, প্রেসিডেন্ট ওবামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে হিলারী ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হওয়া আমেরিকার জন্য সব থেকে ভাল হবে।

২০০৮ সালের প্রাইমারীতেও আমি হিলারী ভলিউন্টিউয়ার ছিলাম। সেবার হিলারী ওবামার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কোন সন্দেহ নেই ওবামাই ছিলেন সেরা ক্যান্ডিডেট। হিলারী এবং ওবামার টিমের সদস্যদের মিলিয়ে দেবার জন্য ২০০৮ সালের জুন মাসে ডেমোক্রাটিক পার্টির হেডকোয়াটারে একটি বিশাল সান্ধ্যপার্টির আয়োজন করেছিল পার্টি কমিটি। আমার সৌভাগ্য, ইন্ডিয়ান আউটরিচ কমিটির সদস্য হিসাবে সেদিন পার্টিতে ছিলাম। হিলারী ভক্ত অনেকের সাথেই আলাপ হয় সেদিন। যাদের অধিকাংশই আবার ফেমিনিস্ট। আমরা সবাই আশা করেছিলাম ২০১৬ তে এই দিন আসবে যেদিন ওবামার পরে হিলারী ডেমোক্রাটিক পার্টির নমিনেশন পাবেন।

২০১৩ সালেই আমি প্রথম খবর পাই হিলারী ২০১৬ তে লড়ছেন। তখন ক্যাপিটালে এই ব্যপারে কানাঘুঁশো চলছে। এর মধ্যে আমাদের এক আই আই টি প্রাত্তনী খবরটা দিয়েছিলেন। উনি এখানে একজন বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং হিলারী ঘনিষ্ট ডোনার। ২০১৩ সালেই হিলারী তার ঘনিষ্ট ডোনারদের ডেকে নিজের সংগঠন গোপনে মজবুত করছিলেন। ২০১৫ সালে তার প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পেইন ঘোষনা ছিল সময়ের অপেক্ষা।

ইনফ্যাক্ট বিল ক্লিনটনের থেকেও অনেক সফল আইনজীবি ছিলেন হিলারী ক্লিনটন। বিল ক্লিনটনের থেকে তার পলিটিক্যাল ট্রাক রেকর্ড ও ভাল। কিন্ত আমেরিকাতেও পলিটিক্সে মেয়েদের গ্লাস সিলিং ভাঙাটা সত্যিই আছে। আপনারা ১৯৬৯ সাল থেকে হিলারীর লেকচার শুনতে পারেন। শুনলেই বোঝা যাবে হিলারী ক্লিনটন অনেক বেশী ডিটেলড ওরিয়েন্টেড এবং চিন্তা করেই বক্তব্য রাখতে ভালবাসেন। ২০০৮ সালেই তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা। কিন্ত সেই বছরেই উত্থান প্রেসিডেন্ট ওবামার। কোন সন্দেহ নেই প্রেসিডেন্ট ওবামার মতন রাজনীতিবিদ শতাব্দিতে দু একটিই জন্মায়। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন অথবা থমাস জেফারসনের লীগেই স্থান হবে বারাক ওবামার।

(২)

২০১৬ তে হিলারী নমিনেশন কেক ওয়াক হবে -এটাই ভেবেছিল আমেরিকা। আমিও ব্যতিক্রম নই।

কিন্ত বাধ সাধলেন ভার্মন্টের সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। উনি কিন্ত ডেমোক্রাট নন। ২০১৫ সালেও ডেমোক্রাটিক পার্টির সদস্য ছিলেন না। কিন্ত প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেট হওয়ার জন্য ২০১৫ সালে উনি পার্টি মেম্বারশিপ নেন।

অন্যদিকে হিলারী প্রায় ৩৫ বছর ধরে ডেমোক্রাটিক পার্টির অন্যতম মূল স্তম্ভ! সুতরাং লড়াই হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অন্যদিকে বার্নিও ওবামার মতন হার্ভাড শিক্ষিত ক্যালিবান কেও নন। ব্যাচেলর ডিগ্রি পাশ করার পর দশ বছর চাকরি পান নি। কখনো ছুতোর মিস্ত্রির কাজ, কখনো সাংবাদিক, কখনো এটা ওটা করে সংসার চালিয়েছেন। ট্রেলার বা বস্তির ঘরে থাকতেন। ফলে প্রথম বিয়ে টেকে নি। দশ বছর বাদে তার প্রথম স্টেবল জব, মিউনিসিপালিটির কাউন্সিলর।

কিন্ত বার্নির এই নিম্নমধ্যবিত্ত বা দরিদ্র ব্যাকগ্রাউন্ডই এডভান্টেজ হয়ে দাঁড়াল। আমেরিকাতে বড়লোকরা প্রতিদিন আরো বেশী ধন সম্পত্তির মালিক হচ্ছে, অথচ গরীবেরা আরো বেশী দারিদ্রের সম্মুখীন। মধ্যবিত্তরা আরো বেশী গরীব হচ্ছে। এমন অবস্থা- ল কোম্পানিতে কাজ করা একজন সাধারন চাকুরিজীবি যদি এই মাসে গাড়ীর কোন জিনিস সাড়ায়, দুমাস তাকে অপেক্ষা করতে হয় ডেন্টিস্ট দেখাতে । কারন টাকা নেই। সবার সংসার চলছে টেনেটুনে। ওপরে চাকচিক্য-তলায় একদম ঘুনে খাওয়া অর্থনৈতিক অবস্থা অধিকাংশ ফ্যামিলির।

ফলে চাপা ক্ষোভ ছিলই এস্টব্লিশমেন্টের বিরুদ্ধে। সেটাকে সম্বল করে গড়ে উঠল বার্নি বা বাস্ট মুভমেন্ট। বার্নি বোঝাতে সক্ষম হলেন-এই গণতন্ত্র আসলেই ব্যবসায়ীদের কাছে চুরি হয়ে যাওয়া গণতন্ত্র। যা শ্রমিকদের কথা ভাবে না। কাজ পাচার করে দেয় ভারত আর চীনে। বেকার বসে থাকে আমেরিকার দক্ষ শ্রমিক।

কিন্ত বার্নি অনেকগুলো স্ট্রাটেজিক মিসটেক করেছেন। ডেমোক্রাটিক টিকিটে লড়ার মূল সমস্য হচ্ছে না উনি , না উনার সাপোর্টারদের অনেকে ডেমোক্রাটিক পার্টির রেজিস্টারড সাপোর্টার। ডেমোক্রাটিক পার্টিতে বাম বেস ১৫-৩০%। দক্ষিনের রাজ্যগুলিতে আরো কম। যেখানে হিলারি ক্লিনটন হচ্ছেন পার্টি ডার্লিং। এক্ষেত্রে উনার উচিত ছিল কালো, ল্যাটিনো এবং এশিয়ানদের মধ্যে ঢোকা। সেটা উনি করেন নি। উনি আমেরিকাতে ইনকাম অসাম্য নিয়েই লেজার ফোকাসড ছিলেন। ফলে ছোট ছোট রাজ্যগুলি যা সাদা চামড়ার লোক অধ্যুশিত-সেগুলো বাদ দিলে কোন বড় রাজ্যগুলিতে-যেখানে এশিয়ান বা ল্যাটিনো ভোট বেশী-সেখানে গোহারা হেরেছেন বার্নি।

(3)

এখানে নানান রাজ্যে প্রাইমারীর নিয়ম আলাদা। মূলত তিনটে টাইপের প্রাইমারী হয়-ক্লোজড, ওপেন এবং কক্কাস। ক্লোজড প্রাইমারীতে শুধু ডেমোক্রাটিক পার্টির কার্ড হোল্ডাররাই ভোট দিতে পারেন। ওপেন প্রাইমারীর ক্ষেত্রে যারা ডেমোক্রাটিক পার্টির কার্ড হোল্ডার না, তারাও ভোট দিতে পারেন। কক্কাসের ক্ষেত্রে সবাইকে উপস্থিত থেকে, একসাথে ভোটিং হয়। ফলে কক্কাসে সব থেকে কম টার্ন আউট।

এখানে বার্নির সাপোর্ট বেস হচ্ছে আমেরিকান বামেরা। যাদের বাধ্য হয়ে ডেমোক্রাটিক পার্টিতে থাকতে হয়-কিন্ত পার্টির মধ্যে এদের কেউ পাত্তা দেয় না। কারন ডেমোক্রাটিক পার্টি একটি সেন্ট্রিস্ট প্রগ্রেসিভ পার্ট। এই নিয়ে আমেরিকান বামেদের বিশাল ক্ষোভ। যে তাদের কোন রাজনৈতিক ভয়েস নেই। এদিকে যে আলাদা পার্টি করবে, তার ও উপায় নেই। কারন ডেমোক্ট্রাটরাই কষ্টে শিষ্টে রিপাবলিকানদের সাথে জেতে-কংগ্রেস এবং সেনেটে রক্ষনশীল রিপাবলিকানদেরই প্রাধান্য। এর মধ্যে বামেরা যদি বেড়িয়ে আসে-আরোই কোথাও পাত্তা পাবে না।

ফলে এবার বার্নিকে ডেমোক্রাটিক নমিনি করার জন্য আমেরিকান বামেরা অনেক খেটেছে। যদিও তা সত্ত্বেও বার্নি ভালভাবেই হেরেছে!! এর মূল কারন

আমেরিকাতে ত্রীস্তরীয় সিস্টেম। এখানে আইন বদলাতে গেলে কংগ্রেস এবং সেনেটের সাহায্য লাগে। সেখানে ডেমোক্রাটরা স ংখ্যলঘু। সুতরাং শুধু প্রেসিডেন্ট হলেই হবে না, আইন করতে কংগ্রেস এবং সেনেটেও জেতা দরকার। হিলারী ক্লিনটন এই ব্যপারে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। উনি উনার ক্যম্পেনের টাকা থেকে পার্টি ফান্ডে টাকা দিয়েছেন যারা সেনেট এবং কংগ্রেসে দাঁড়াচ্ছে। ফলে পার্টির সংগঠন হিলারীর পাশে ছিল। বার্নি তা করেন নি। বরং বার্নি ক্রমাগত ডিমোক্রাটিক পার্টিকেই গালাগাল করছিলেন তার হারের জন্য। এতে বার্নি এবং ডেমোক্রাট মেশিনারীর মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে।
এর ফল হয়েছে এই যে ক্লোজড প্রাইমারী যেসব রাজ্যে হয়েছে,- অর্থাৎ যেখানে শুধু ডেমোক্রাটদের ভোটাধিকার ছিল, বার্নি শ্রেফ উড়ে গেছে। এবং এটাই বৃহৎ রাজ্যের সিস্টেম। ফলে ছোট ছোট রাজ্য যেখানে কক্কাস হয়-সেখানে প্রায় সব জিতেও বার্নির কোন লাভ হয় নি।
আরেকটা অবশ্যই মেয়েদের এবং আফ্রিকান আমেরিকানদের ভোট-যা হিলারীর পক্ষে। কালো মানুষদের জন্য আইনজীবি হিলারী লড়ছেন সেই ১৯৬৯ সাল থেকে। তার ইতিহাস দীর্ঘ। সুতরাং তারা হিলারীর পক্ষে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে ফেমিনিস্টদের ভোটও হিলারী পেয়েছেন।
বার্নির দিকে ছিল সুধু কিছু তরুন যুবক যুবতী এবং বয়স্ক সাদা পুরুষ লিব্যারালরা।
মাঝখান থেকে যেটা হল, সেটা অনেকটা মমতার হাতে সিপিএমের ধ্বংশের মতন। ফেসবুকে, সর্বত্র বার্নি সাপোর্টাররা দাপিয়ে গেল তাদের অতি খাজামার্কা বস্তাপচা বাম বিপ্লব নিয়ে-দেখে মনে হত হিলারির কোন সাপোর্ট বেসই নেই। রাস্তাঘাট, বাড়ি, ফেসবুক সর্বত্রই ঝড় তুলেছিলেন বার্নি সমর্থকরা। কিন্ত ভোটবাক্সে সব কটা বড় রাজ্যেই গোহারা হেরেছেন বার্নি হিলারীর কাছে। আমি ভোট দিতে গিয়ে দেখি, ভোটকেন্দ্রে হিলারীর কোন প্ল্যাকার্ড নেই-কেউ ক্যানভাস ও করছে না। অথচ হিলারী কিন্ত মেরিল্যান্ডে বার্নির থেকে দ্বিগুন ভোটে জিতেছেন!

বার্নির সাথে হিলারীর যেকটি বিতর্ক হয়েছে সবকটিতে বার্নি ধেরিয়েছিলেন-এবং সব প্রশ্নের উত্তরেই সেই গরুর রচনা ধণের বৈষম্যে এসে ঠেকত। এমনকি মেজর লেবার ইউনিয়ানগুলিও হিলারীকেই এনডোর্স করেছে।

তবে বার্নির লাভের লাভ হচ্ছে এই যে বার্নি হিলারিকে একদম মধ্যপ ন্থা থেকে বামে ঠেলেছেন। ওয়ালস্ট্রিট, পলিটিক্যালি রিফর্ম এসব কিছুই হিলারির এজেন্ডাতে ঢুকেছে।

(৪)

এর মধ্যে আরেকজন বড় খেলোয়ার এলিজাবেথ ওয়ারেন, ম্যাসাচুসেটসের সেনেটর। উনি আমেরিকার বাম প্রগেসিভ সেকশনের ডার্লিং। হার্ভাডের আইনের অধ্যাপক, অত্যন্ত ভাল বক্তা-প্রতিপক্ষকে কচুকাটা করতে তিনি সিদ্ধহস্ত। অনেকেই চেয়েছিলেন, বার্নির বদলে ওয়ারেন পার্থী হোন। আসলে সেটা হলে হয়ত, হিলারী হারতেও পারতেন। কিন্ত ওয়ারেন রিক্স নেন নি। সম্ভবত লিজ ওয়ারেন জানতেন বার্নি বা হিলারী যেই জিতুক না কেন, ভিপির পোষ্টটা তিনিই পাবেন।

এলিজাবেথ ওয়ারেন গোটা প্রাইমারীর সময় সাইডলাইনে বসে খেলা দেখলেন। বার্নির সাপোর্টবেসের পুরোটাই লিজ ওয়ারেনের ফ্যানবেস-কিন্ত তবুও তিনি বার্নির পক্ষে গেলে না। গোটা ডেমোক্রাটিক পার্টিতে উনিই একমাত্র সেনেটর যনি বার্নি-হিলারী যুদ্ধে নিরেপেক্ষ ছিলেন।

হিলারী ক্যালিফোর্নিয়া জেতা মাত্র, যখন বার্নি সম্পূর্ন ভাবেই বিধ্বস্ত, লিজ ওয়ারেন হিলারী ক্যাম্পে যোগ দিলেন। ওই একই দিনে আমেরিকান কন্সটিউশন সোসাইটির মিটিং এ, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রায় কচুকাটা করলেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ডেমোক্রাটিক বেস চাইছে লিজ ওয়ারেন ক্লিনটনের রানিং মেট হৌক। কারন তাতে বার্নির বিধ্বস্ত সমর্থকদেরকে হিলারী ক্যাম্পে টানা যাবে। সাথে সাথে ট্রাম্পকে ধ্বংস করার কাজ হিলারীকে করতে হবে না। ওটা লিজ ওয়ারেনই পারবেন ভাল।

তবে সেই হিসাবটা ভুল। বার্নির সমর্থকদের মোটে ১/৩ ভাগ, খোদ ডেমোক্রাটিক পার্টির লোক। বাকি ২/৩ অংশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ওই স্বাধীন ভোটাররা হিলারীকে ভোট দিতে রাজী না। খুব সম্ভবত ঘরে বসে থাকবে বা গ্রীন পার্টিকে ভোট দেবে। আবার এই স্বাধীনভোটারদের একাংশ আবার লিজ ওয়ারেনের ফ্যান। লিজ ওয়ারেন হিলারীর রানিং মেট হলে, এই অংশটার ভোট হিলারী পাবেন।

কিন্ত তাতে অন্য আসুবিধা। ট্রাম্পের প্রতি ঘৃণাতে অনেক রিপাবলিকান হিলারীকে ভোট দিতে চান। জুলিয়ান কাস্ট্রোর মতন সেন্ট্রিস্ট রানিংমেট হলে, হিলারী রিপাবলিকান পার্টির ভোট ও পাবেন। লিজ ওয়ারেন হলে সেটা হবে না। যেমন আজকেই মার্ক কিউবান বলেইদিয়েছেন লিজ ওয়ারেন রানিংমেট হলে উনি হিলারীকে ছেরে ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।

তবে ডেমোক্রাটিক পার্টি থেকে লিজ ওয়ারেনকে ভিপি করার চাপ বাড়ছে। ডেমোক্রাটিক সেনেট নেতা, হ্যারি রিড পরিস্কার ভাবেই বলেছেন, লিজ ওয়ারেনকেই ভিপি করা হৌক।

কিন্ত একই সাথেই আমেরিকার মাথায় দুজন মহিলা জনগন কেমন নেবে কেউ জানে না। সাদা পুরুষদের ২০% ভোট ও হিলারীর সাথে নেই! তাছাড়া হিলারী বাস্তববাদি সেন্ট্রিস্ট, লিজ ওয়ারেন আদর্শবাদি বামপন্থী। তাদের দুজনের কেমিস্ট্রি কেমন খাবে কে জানে।

(৫)

এবার আসি রিপাবলিকান পার্থী ট্রাম্পের প্রসঙ্গে। কে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প?

এক কথায় একজন অসৎ বিলিয়নার ব্যবসায়ী। কিন্ত ধুরন্ধর এবং চালাক। পালস বোঝেন। মিডিয়া বিজনেসে থাকায়, জনগণ কি খেতে চাইছে, সেটা ধরেন অনেক আগে।

অনেকেই ট্রাম্পকে মুসলমান বিদ্বেশী বর্ণবাদি বলছেন। কিন্ত আমার ধারনা ট্রাম্প ওসব কিছুই না। পাতি মুসলমান বিদ্বেশ এবং বর্ণবাদি বিদ্বেশকে নিজের ভোটব্যাঙ্ক বানিয়েছেন।

তবে ট্রাম্প এখন গভীর গাড্ডায়। ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয় খুলে জালি ডিগ্রি দিয়ে প্রচুর ছাত্রছাত্রীর টাকা মেরেছিলেন। তারা এখন ২২০ মিলিয়ান ডলারের ক্ষতিপূরন চেয়ে মামলা করেছে। এবং সেই মামলায় একজন মেক্সিকান আমেরিকান জাজ কিউরিও-যিনি মেক্সিকান ড্রাগের বিরুদ্ধে লড়াইতে একজন আমেরিকান হিরোও বটে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কেস চালাতে দিয়েছেন। ট্রাম্পের ধারনা কিউরিও মেক্সিকান আমেরিকান বলে ইচ্ছা করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। রিপাবলিকান কংগ্রেসের স্পীকার পল রায়ান পর্যন্ত এটাকে ট্রাম্পের রেসিস্ট কমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন।

ইনফ্যাক্ট ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রাইমারী জিতেছেন বটে-কিন্ত সাথে সাথে গোটা রিপাবলিকান পার্টিকে ক্রাইসিসে ফেলেছেন। সবাই তার থেকে দূরে থাকতে চাইছে পাছে রেসিস্ট ট্যাগ লেগে গেলে ভোট পেতে অসুবিধা হয়।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যেই বিদ্রোহ আসন্ন বলেই আমার বিশ্বাস। আগের বারের পার্থী মিট রমনি, বুশ পত্নী লরা বুশ সবাই রিপাবলিকান পার্টিকেই দুশছেন। খুব সম্ভবত, রিপাবলিকান পার্টি, মিট রমনিকেই আবার পার্থী দাঁড় করাতে পারে যদি ডেলিগেটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলে যান ট্রাম্পের বেজনির রেসিস্ট কার্যকলাপ এবং অসাধু ব্যবসার কারন দেখিয়ে।

মোদ্দা কথা এমন ঘটনাবহুল আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগে দেখা যায় নি। যেখানে প্রতিটা দিনেই নতুন কিছু ঘটছে। কি হবে বলা মুশকিল।