[ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্ট প্রসঙ্গে নানান রকমের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে আমাদের বাংলা ভাষার লেখালেখিতে। এই সকল ভিন্নতার কিছু কিছু কেবলই দেখার বা বোঝার ভিন্নতা আবার কিছু কিছু বোঝাপড়া নিরেট উদ্দেশ্য প্রনোদিত বিভ্রান্তি ছড়ানো। ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্টকে বোঝার জন্যে হয়ত একক কোনও পুস্তক বা প্রবন্ধ নেই, এর জন্যে বেশ কিছু প্রতিনিধিত্বমূলক পুস্তক ও প্রবন্ধ পড়া দরকার। তবুও, জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট এর লেখা An Answer to the Question: “What is Enlightenment?” প্রবন্ধটি সারা পৃথিবীতেই বহুল পঠিত একটি প্রবন্ধ। মুল প্রবন্ধটি জার্মান ভাষায় লেখা কিন্তু তাঁর বহু ইংরাজি অনুবাদ আছে। বাংলায় এর তরজমা খুব সুলভ না হওয়ায় এখানে এই প্রবন্ধটির বাংলা অনুবাদ পেশ করা হলো। কান্টের এই লেখাটি ১৭৮৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত, একটু গভীর মনোযোগী পাঠকেরা বুঝতে পারবেন, এই লেখাটি এখন কতটা প্রাসঙ্গিক পৃথিবীর বিভিন্ন পিছিয়ে থাকা দেশ গুলোর জন্যে।]
এনলাইটেনমেন্ট হচ্ছে মানুষের স্ব-আরোপিত অপরিপক্বতা বা নাবালকত্ত থেকে বেরিয়ে আসা। এই অপরিপক্বতা বা নাবালকত্ত হচ্ছে অন্যের পরামর্শ-উপদেশ বা নির্দেশনা ছাড়া নিজের যুক্তিবোধ ও বিবেচনাবোধকে ব্যবহার করবার অক্ষমতা। কোনো কিছু সম্পরকে জানা-বোঝার অভাবের কারনে এই অপরিপক্বতা আসেনা, বরং এই অপরিপক্বতা বা অক্ষমতা স্বেচ্ছা আরোপিত হয় নিজের ইচ্ছা ও সাহসের অভাবে। যখন অন্যের পরামর্শ ছাড়াই কোনও কিছু সমাধানের সাহসটা না থাকে । এনলাইটেনমেন্ট এর মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে জানার দুঃসাহস তৈরী করা। নিজের বোঝাপড়া, নিজের উপলব্ধি ও বিবেচনাবোধ কে ব্যবহার করবার দুঃসাহস সঞ্চয় করা।
এনলাইটেনমেন্ট হচ্ছে মানুষের স্ব-আরোপিত অপরিপক্বতা বা নাবালকত্ত থেকে বেরিয়ে আসা। এই অপরিপক্বতা বা নাবালকত্ত হচ্ছে অন্যের পরামর্শ-উপদেশ বা নির্দেশনা ছাড়া নিজের যুক্তিবোধ ও বিবেচনাবোধকে ব্যবহার করবার অক্ষমতা।
প্রকৃতি মানুষকে তাঁর অজানা অভিভাবকত্ব থেকে মুক্ত করে দেবার পরেও একটা বিরাট অংশ মানুষ তবুও সারাজীবন ধরে বেশ সানন্দেই অপরিপক্ক – নাবালক রয়ে গেলো। এর মুল কারন ভীরুতা ও কাপুরুষতা। মানুষের এই ভীরুতা ও কাপুরুষতার কারনেই এক দলের মানুষের উপরে আরেক পক্ষ খুব সহজেই প্রভুত্ব বা অভিভাবকত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে। নাবালক হওয়া সত্যিই কত সহজ। আমার বোঝাপড়া বা সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে যদি একটি বই থাকে, আমার বিবেচনাবোধ জাগিয়ে তোলার জন্যে যদি একজন আধ্যাত্মিক গুরু থাকেন, আমার খাদ্যাভ্যাস ঠিক করে দেবার জন্যে যদি একজন ডাক্তার বা পুস্টিবিদ থাকেন তাহলে তো আমার আর চিন্তা করবার, কাজ করবার দরকারই নেই। আমার কাজ শুধু তাদেরকে বেতন বা পারিশ্রমিক দেয়া। যতদিন এই পারিশ্রমিক দিতে পারবো, ততদিন অন্যেরা আমার হয়ে এই সব ক্লান্তিকর কাজগুলো করে দেবে।
যে সকল অভিভাবক বা মুরুব্বী শ্রেনীর মানুষেরা দয়াপরবশ হয়ে অন্যদের অভিভাবকত্বর দায়িত্ত্ব নিয়েছেন তারা খুব সতর্কতার সাথেই খেয়াল করেছেন যে নারী – পুরুষ নির্বিশেষে একটা বিরাট অংশের মানুষ সাবালক হয়ে ওঠাকে শুধু কঠিনই মনে করেন না, বরং একে অনেক বিপদজনকও মনে করে থাকেন। প্রথমে এরা তাদের গৃহপালিত প্রানীদের নির্বোধ বানায়, তারপরে এটা নিশ্চিত করে যে এই সকল গৃহপালিত প্রাণী তাদের অনিচ্ছাতে এক ধাপ পা বাড়াবেনা কোথাও আর সবশেষে এই সকল মুরুব্বিরা শেখায় তাদের অবাধ্য হওয়াটা কতটা বিপদজনক। এই মুরুব্বিরা শেখাতে চান একাকী কোনও কিছু করাটা কতটা বিপদজনক। একাকী হাঁটতে পারাটা মোটেও বিপদজনক নয় যদি কেউ সেই চেস্টাটা করে এবং কয়েকবার পড়ে যায় বা ব্যর্থ হয়। যে কোনো কাজে কয়েকবারের ব্যর্থতার পরে মানুষ নিশ্চিতভাবেই সেই কাজটি শিখে যায়, কিন্তু এই ব্যর্থতার উদাহরণ মানুষকে ভীত ও আতঙ্কিত করে যার নিশ্চিত পরিনতি হচ্ছে সেই কাজটির জন্যে পুনর্বার চেস্টা থেকে বিরত থাকা।
ফলে যেকোনো মানুষের জন্যে তাঁর অপরিপক্বতা বা নাবালকতা থেকে বেরিয়ে আসাটা কঠিন হয়ে পড়ে যখন সেটাই তাঁর প্রকৃতি হয়ে পড়ে। এমনকি সে বরং উল্টো তাঁর নিজের অপরিপক্বতা বা নাবালকতারই সমর্থক হয়ে পড়ে, বরং সে তাঁর নিজের অজ্ঞানতা, না বোঝাটাকেই তাঁর নিজের যুক্তি দিয়ে সাফাই গাইতে চায়। নিয়ম, সুত্র এই সকল কিছু হচ্ছে যৌক্তিকভাবে ব্যবহারের বিষয়, অথবা মানুষের প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে তাঁর স্থায়ী অপরিপক্কতার ফসল। এমন কি কিছু মানুষ যদি এই সকল কিছু কোনোভাবে ছুঁড়ে ফেলেও দেয়, তবুও তার পক্ষে তার নিজের গর্ত বা সরু পরিখা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়ে ওঠেনা, কেননা এই মানুষগুলো তাদের সারাজীবনে মুক্ত ভাবে চিন্তা করা বা চলাচলে অভ্যস্ত নয়। পরিণতিতে, খুব সামান্য কিছু মানুষ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে তার নিজের অপরিপক্বতা বা নাবালকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
কিন্তু সাধারন জনগনের পক্ষে তাদের নিজেদেরকে আলোকিত করতে চাওয়া বা সাবলক – স্বনির্ভর হয়ে উঠতে চাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক, এবং বাস্তবে শুধুমাত্র স্বাধীনতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে তাদের এই প্রত্যাশা অর্থাৎ সাবালক হয়ে ওঠাটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে বাধ্য। এমন কি সমাজের মুরুব্বী বা অভিভাবক শ্রেণীর অনেকেই নিজেরাও তাদের অপরিপক্কতার দাসত্ব থেকে বের হয়ে এসেছেন, তারা নিজেরাও মুক্তচিন্তার চর্চা করেন এবং তারা মুক্তচিন্তার যৌক্তিকতা নিজেরাও প্রচার করেন এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করেন তা প্রচারের জন্যে। কিন্তু এটা বিশেষ ভাবে জানা দরকার যে, জনসাধারনের কাঁধে যে দাসত্বের জোয়াল একদিন এই সকল মুরুব্বিরা তুলে দিয়েছিলো এবং এই জনসাধারন সেই সকল মুরুব্বীদেরই কিছু অংশের দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে। এই সকল মুরুব্বী যারা নিজেদের সম্পূর্ণ আলোকিত করে উঠতে হয়তো ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু যথাযথভাবে উজ্জীবিত জনসাধারণ গোটা মুরুব্বী শ্রেনীটিকেই তাদেরই তৈরী করা জোয়ালে বেঁধে ফেলতে পারে। কুসংস্কার ছড়ানো পরিণতি কখনও কখনও প্রতিশোধ হয়ে ফিরে আসতে পারে কুসংস্কার ছড়ানোর পরিকল্পকদেরই দিকে অথবা তাদের ভবিষ্যত বংশধরদের দিকে।
ফলে যেকোনো মানুষের জন্যে তাঁর অপরিপক্বতা বা নাবালকতা থেকে বেরিয়ে আসাটা কঠিন হয়ে পড়ে যখন সেটাই তাঁর প্রকৃতি হয়ে পড়ে। এমনকি সে বরং উল্টো তাঁর নিজের অপরিপক্বতা বা নাবালকতারই সমর্থক হয়ে পড়ে, বরং সে তাঁর নিজের অজ্ঞানতা, না বোঝাটাকেই তাঁর নিজের যুক্তি দিয়ে সাফাই গাইতে চায়।
সুতরাং, জনসাধারণ কেবল ধীরে ধীরেই আলোকিত হয়ে উঠতে পারে। হয়তো এক ধরনের বিপ্লব এই রকমের একনায়কতান্ত্রিক – স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতালোভী শোষকদের উচ্ছেদ করতে পারে, কিন্তু শুধু বিপ্লব কখনই মানুষের চিন্তার ধরণ বা কাঠামো তৈরী করে দিতে পারেনা। বরং প্রায়শই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে পুরনো সংস্কারের মধ্যে দিয়ে নতুন সংস্কারের প্রচলন ঘটে, জনগনের যে বিশাল অংশের মাঝে চিন্তার চর্চ্চা কম, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে প্রচলন ঘটে এই সকল নতুন সংস্কারের।
আলোকিত হয়ে ওঠার জন্যে বা আলোকিত করে তুলবার জন্যে কোন কিছুরই দরকার নেই শুধুমাত্র স্বাধীনতা ছাড়া। আর এই স্বাধীনতার প্রশ্নটি, নিজের যৌক্তিকতাবোধ বা কার্যকারণ বোধকে প্রকাশ্যভাবে ব্যবহার করতে পারার মধ্যে ক্ষতিকর আর কিছুই নেই। অথচ আমাদের চারপাশে আমি কেবলই শুনতে পাই – “তর্ক করোনা !” অফিসার বলেন “তর্ক করোনা, কাজ করো!”, ট্যাক্সের লোকজন বলেন – “তর্ক করোনা, টাকা শোধ করো!”, যাজক বলেন – “তর্ক করোনা, বরং বিশ্বাস করো!”, দুনিয়ার হর্তাকর্তারা বলেন “তর্ক করো কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু বাধ্যগত থাকো!” – এভাবেই আমরা দেখি স্বাধীনতার উপরে নানান ধরনের বিকৃত বিধিনিষেধ। কিন্তু কোন বিধিনিষেধ মুক্তচিন্তা – ও স্বনির্ভর – আলোকিত হয়ে ওঠাকে বাধাগ্রস্থ করে আর কোনটা করেনা? অথবা কোন বিধি নিষেধ এক অর্থে আলোকিত হয়ে ওঠাকে বরং সাহায্য করে? আমি এর উত্তরে সবসময়েই বলি, সর্ব-সাধারণের জীবনে যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রকাশ্য ব্যবহার হতে হবে সবসময়েই মুক্ত এবং স্বাধীন। শুধু এই একটি বিষয় একাই মানুষের জীবনে আলোকায়ন নিশ্চিত করতে পারে। যদিও ব্যক্তিগত জীবনে এই স্বাধীনতা মাঝে মাঝেই অনেক সংকীর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে, অন্যের আলোকায়ন বা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার সংগ্রামকে বাধাগ্রস্থ না করে। সর্ব-সাধারণে বুদ্ধিবৃত্তি ও যুক্তির প্রকাশ্য ব্যবহার বলতে আমি বুঝি – যে কোনো একজন বুদ্ধিবৃত্তিক সচেতন মানুষ যখন তার বিবেচনাবোধ বা বুদ্ধিবৃত্তির ব্যবহার করেন পুরো সমাজের জন্যে। আর যুক্তির ব্যক্তিগত ব্যবহার বলতে আমি বুঝি, যখন কোনও মানুষ তার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক পদে থেকে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেন অনেকের হয়ে, যখন তার প্রতি সেই প্রতিষ্ঠানের বা অংশের আস্থা থাকে। তাই জনস্বার্থের বিভিন্ন বিষয়াদিতে আমাদের এমন কোনও পদ্ধতি বের করতে হবে যে সেই সকল ক্ষেত্রে কিছু মানুষ ব্যক্তিগত মতামতের দিক থেকে সম্পূর্ণ নিস্ক্রিয় থাকবেন এবং সরকারের সাথে তাদের এমন এক ধরনের চুক্তি থাকবে যেনো সরকার বা সমাজ তাদেরকে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিতে পারেন, যেনো সমাজের বেশীরভাগের স্বার্থ্য ক্ষুণ্ণ না হয়। এই ধরনের অবস্থায় বা প্রশ্নে, তর্ক করে নেয়ার চাইতে মেনে নেয়াটা ভালো। যদিও, এই পদ্ধতি বা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদেরকে কমিউনিটির অংশ বলে মনে করে থাকে, অথবা যদি তারা নিজেদেরকে কোনও বৈশ্বিক সমাজের অংশ বলে মনে করে থাকে এবং তার ফলে যদি তারা একজন স্কলার হিসাবে সর্ব-সাধারণের প্রতি কোনও মতামত প্রকাশ করেন, সেই অবস্থান বা সেই ক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই তর্ক করা উচিৎ। তবে তার তর্ক করা উচিৎ যেনো সেই প্রতিষ্ঠান বা পদ্ধতিরটির কোনো ক্ষতি না হয় যার সাথে তিনি একমত পোষণ করেন। সে জন্যেই, এটা খুবই বিপদজনক হবে, একজন সামরিক অফিসার দায়িত্বরত অবস্থায় তার উপরের কর্মকর্তার নির্দেশ পালনের বদলে যদি তর্ক জুড়ে দেয়, সেই নির্দেশ এর যথার্থতা নিয়ে, কিংবা সেই নির্দেশ এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সেক্ষেত্রে এই রকম দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তার প্রতি নির্দেশনা মেনে নেয়াটাই যৌক্তিক। কিন্তু যখন তিনি একজন সাধারন বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষের ভুমিকায় থাকেন, তখন সামরিক বাহিনীর নানান সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে, প্রকাশ্য মতামত দেবার ক্ষেত্রে কুন্ঠিত হওয়াটা উচিৎ নয়। বরং সেই সকল বিষয় নিয়ে জনগনের সম্মুখে কথা বলা উচিৎ, সেই সকল বিষয়ের বিবেচনার ভার জনগনের উপরে দেয়া উচিৎ। যেমন নাগরিকদের দায়িত্ব হচ্ছে তার উপরে ধার্য করা ট্যাক্স বা কর প্রদান করা, এই কর বা ট্যাক্স প্রদান না করে বরং এর সমালোচনা করাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে কেননা এই ধরনের সমালোচনা সমাজ জুড়ে হট্টগোল ও গণ-অবাধ্যতার অবস্থা তৈরী করতে পারে। কিন্তু সেই একই মানুষ, একজন স্কলার হিসাবে, এই কর ব্যবস্থার যথার্থতা নিয়ে অবশ্যই তার মতামত তুলে ধরতে পারেন, তার প্রশ্ন, শংকা বা দ্বিমতের কথা তুলে ধরতে পারেন। একইভাবে একজন যাজক যথাযথভাবে তার দৈনন্দিন পেশাগত ভুমিকা পালন করতে বাধ্য। যখন একজন যাজক হিসাবে তিনি কাজ করেন তখন সেই বিশেষ চার্চ এর কাঠামোর মধ্যেই তাঁকে কাজ করতে হয়, তখন কোনও বিষয়ের উপরে কথা বলতে গেলে তিনি তাঁর চার্চের আনুষ্ঠানিক অবস্থানের কথাই বলতে হয়। যাজক হিসাবে তাঁকে চার্চের শিক্ষাই প্রচার করতে হয়। কেননা তিনি তার পদে যোগ দিয়েছেন কতগুলো পূর্ব নির্ধারিত কাঠামোগত শর্তকে মেনে নিয়েই । কিন্তু একজন সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ হিসাবে তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন, চার্চ এবং ধর্মীয় বিষয় নিয়ে তাঁর সুচিন্তিত মতামত খোলামেলাভাবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকা উচিত নয়। । একজন স্বাধীন মানুষ হিসাবে তিনি চার্চের সমালোচনা করতে পারেন, চার্চের ভুলভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দিতে পারেন এমন কি তিনি চার্চের পুরোহিতদের কাজকর্ম বা ধর্মচর্চ্চার ধরণ নিয়েও তাঁর মতামত ও পরামর্শ প্রদান করতে পারেন। মোটের উপরে, একজন স্বাধীন মানুষ হিসাবে, কোনও কিছুই তার বিবেচনাবোধের উপরে স্থান পেতে পারেনা। সোজা কথায়, চার্চ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তাঁকে নিয়োগ দিয়েছেন তাঁর ধর্ম সম্পর্কে তাঁর নিজের কথা বলার জন্যে নয় বরং ধর্ম সম্পর্কে সেই চার্চ বা প্রতিষ্ঠানটি যা বলতে চায় তা বলার জন্যে, ঠিক যেভাবে বলতে চায় ঠিক সেভাবে ব্যাখ্যা করার জন্যে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সেই যাজকের বলা উচিত – “এই বিষয়ে আমাদের চার্চ মনে করে…” অথবা “ এই বিষয়ে আমাদের চার্চের যুক্তি হচ্ছে …” ইত্যাদি। অর্থাৎ অন্যের কথাটা নিজের মুখ দিয়ে বলা। এরপর তিনি চেস্টা করবেন তাঁর চার্চে বা ধর্মসভায় আগত উপাসকমণ্ডলীর জন্যে ধর্মীয় পুস্তক বা বানী থেকে যথাসম্ভব মুল্যবান ও প্রয়োজনীয় অংশগুলোকে এক জায়গায় জড়ো করার। সেই সমস্ত ধর্মীয় বানীর সবকিছুতেই তিনি নিজে বিশ্বস্ত নাও হতে পারেন, কিন্তু তিনি তাঁর পদের কারনেই সেই সকল বানী বা তথ্যগুলোকে উপাসকমণ্ডলীদের মধ্যে ব্যাখ্যা করবেন। যেহেতু এটা একশো ভাগ অসম্ভব নয় যে সেই সকল বানীর মাঝে কোনও সত্য থাকতেও পারে। অর্থাৎ এই ভুমিকার সকল ক্ষেত্রেই, কোনও কিছুই ধর্ম বা চার্চের বিরুদ্ধে যাওয়া যাবেনা, বলা যাবেনা। যদি কোনও পাদ্রী এর সাথে দ্বিমত করেন বা এর উল্টোটা মনে করেন, এবং এই মতামত যদি তাঁর সৎ বিবেচনাবোধ প্রসুত হয়, তাহলে তিনি নীতিগত ভাবে তাঁর দায়িত্ত পালন করতে পারেন না। নীতিগত ভাবে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। একই ধরনের ব্যাখ্যা একজন শিক্ষকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই যুক্তিতে, একজন পাদ্রী তাঁর পেশাগত অবস্থান থেকে কখনই স্বাধীন নন এবং স্বাধীন হতেও পারবেন না, যেহেতু তিনি পরিচালিত হচ্ছেন একটি বহিস্থ কাঠামোর দ্বারা যা তিনি নিজে নন। অপরদিকে, একজন সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ হিসাবে যখন তিনি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন বা লিখবেন তখন সেই পাদ্রী আসলে তাঁর সাধারণ সত্ত্বাটির ব্যবহার করছেন, যেখানে তিনি একশো ভাগ স্বাধীন। এখানে তিনি তাঁর যুক্তি ও বিবেচনাবোধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একশো ভাগ স্বাধীন। এখানে তাঁর স্বাধীনতা অপারতা নিজের মনন, বিবেচনাবোধ, সৃজনশীলতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে। সেই অর্থে সমাজের ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক নেতারা নিজেরাই অপরিপক্ক এবং উদ্ভট এবং তাদের এই উদ্ভটতা এক ধরনের স্থায়ী অযৌক্তিকতা তৈরী করে।
আলোকিত হয়ে ওঠার জন্যে বা আলোকিত করে তুলবার জন্যে কোন কিছুরই দরকার নেই শুধুমাত্র স্বাধীনতা ছাড়া। আর এই স্বাধীনতার প্রশ্নটি, নিজের যৌক্তিকতাবোধ বা কার্যকারণ বোধকে প্রকাশ্যভাবে ব্যবহার করতে পারার মধ্যে ক্ষতিকর আর কিছুই নেই। অথচ আমাদের চারপাশে আমি কেবলই শুনতে পাই – “তর্ক করোনা !” অফিসার বলেন “তর্ক করোনা, কাজ করো!”, ট্যাক্সের লোকজন বলেন – “তর্ক করোনা, টাকা শোধ করো!”, যাজক বলেন – “তর্ক করোনা, বরং বিশ্বাস করো!”, দুনিয়ার হর্তাকর্তারা বলেন “তর্ক করো কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু বাধ্যগত থাকো!”
বরং এটাই কি ভালো নয় যে এই সকল পাদ্রীগণ কিংবা চার্চের সমিতিগুলো ধর্ম ও আধ্যাত্মিক প্রথাগুলোর প্রতি এক ধরনের শপথ করার মধ্য দিয়ে চিরকালের জন্যে আমাদের সবার কিম্বা পুরো সমাজের প্রভু, মুরুব্বী বা অভিভাবক হয়ে উঠুক? আমার উত্তর হবে না, এটা সম্পূর্ণ অসম্ভব। এই ধরনের কোনও প্রচেস্টা বা চুক্তি হবে আগামী যুগের মানব-সভ্যতার সকল ধরনের আলোকায়ন বা এনলাইটেনমেন্ট এর পথ চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়া। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এমন কি এটা যদি খুব উচ্চতর কোনও শক্তি যেমন রাজা – সম্রাট কিংবা কোন ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির দ্বারা অনুমোদিতও হয়। এক প্রজন্মের মানুষ এমন কোনও চুক্তি করতে পারেন না যা পরবর্তী প্রজন্মের মানুষের অবস্থানকে এমন বেকায়দায় ফেলে যা সংশোধন করা তাদের জন্যে প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। পূর্ববর্তী প্রজন্ম এমন কোনও চুক্তি করতে পারেন না যা দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকিত হয়ে ওঠার পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে প্রগতির পথ বন্ধ করে দেয়া মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে করা এক ধরনের জঘন্য অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটা পরবর্তী প্রজন্মের মানুষদের জন্যে এক ধরনের অধিকার। এ ধরনের যে কোনো চুক্তিকে অমান্য করবার, ভেঙ্গে ফেলবার সকল অধিকার পরবর্তী প্রজন্মের আছে। সাধারণ মানুষের জন্যে কোনও চুক্তি – আইন বা নিয়ম প্রবর্তনের আগে একটা প্রশ্ন করা দরকার তাহলে এই চুক্তি – আইন বা নিয়মটি কি সাধারণ জনগণ নিজেদের জন্য প্রযোজ্য মনে করে? এমন কি এটাও সম্ভব যে স্বল্প মেয়াদী সময়ের জন্যে কিছু নিয়ম বা আইন প্রনয়ণ করা যেতে পারে যা সাধারণ মানুষের এবং বিশেষ করে যাজকদেরকে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মতামত প্রকাশের জন্যে স্বাধীন করে দেবে, তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলতে পারবেন, লিখতে পারবেন। এই স্বল্পমেয়াদী আইন বা নিয়মগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে যতক্ষণ সমাজের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে একটি সম্মিলিত মতামত রাষ্ট্রের কাছে পেশ করা হয়, এই নতুন আইনের নিরাপত্তার মাঝে জনগন তাদের নতুন মতামত ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তাদের নতুন চিন্তা পেশ করতে পারে। তবে নিশ্চিত করতে হবে যে এই নতুন ধারনা বা চিন্তাগুলো যেনো অন্য মানুষের অর্থাৎ যারা সাবেকী প্রথার চর্চ্চা করতে চান তাদের সেই চর্চ্চার অধিকারটিকে ক্ষুণ্ণ না করে। কিন্তু অবশ্যই বলা জরুরী যে, একটা চিরস্থায়ী ধর্মীয় বা ধর্মভিত্তিক সংবিধান যাকে কখনই প্রশ্ন করা যাবেনা তা অবশ্যই অত্যন্ত অগ্রহনযোগ্য ও আপত্তিকর, এমন কি খুব অল্প সময়ের জন্যেও। এ ধরনের সংবিধান মানুষের প্রগতির পথ চিরতরে রুদ্ধ করে দিতে পারে, মানুষের জীবনকে অর্থহীন করে দিতে পারে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। কোনো একজন ব্যক্তি মানুষ তাঁর নিজের আলোকিত হয়ে ওঠাকে কিছু সময়ের জন্যে হয়ত বাতিল করতে পারে বা পিছিয়ে দিতে পারে কিন্তু কোনভাবেই সে সারা জীবনের জন্যে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। নিজের জন্যেও নয় সমাজ বা পরবর্তী প্রজন্মের জন্যেও নয়। আলোকিত হবার পথকে বাধাগ্রস্থ করবার এই ধরনের সিদ্ধান্ত শেষ অর্থে মানব জনমের পবিত্র অধিকারকেই ক্ষুণ্ণ করে, পদ্দলিত করে। যদি কোনও মানুষ তাঁর নিজের উপরে কিম্বা সাধারণ জনগন তাদের উপরে কোনও নিয়ম বা আইন আরোপ করতে না চায়, তাহলে রাস্ট্র বা সম্রাটদের মত শক্তিধর কারো পক্ষেও সেই নিয়ম প্রয়োগ করার খমতা বা সম্ভাবনা কমে যায়। কেননা একজন রাস্ট্রনায়ক বা সম্রাটের ক্ষমতা বা ইচ্ছার উৎস হচ্ছে তাঁর জনগনের সম্মিলিত ইচ্ছা, তাঁর কাজ হচ্ছে জনগনের সম্মিলিত ইচ্ছাকে একত্রিত করা এবং তাঁর নিজের ইচ্ছাকেও জনগনের সম্মিলিত ইচ্ছার মাঝে অন্তরভুক্ত করা। যদি সকল প্রত্যাশিত উন্নয়ন এই সকল সামাজিক নিয়মের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব হয়, তাহলে এই সকল বিষয়ে তাঁর কোন মাথা ব্যাথা থাকা উচিত নয়। বরং রাস্ট্রনায়ক বা সম্রাটের উচিত হবে বিশয়গুলোকে জনগনের উপরেই ছেড়ে দেয়া। অবশ্য তাঁকে অবশ্যি সক্রিয় ভাবে খেয়াল রাখতে হবে সর্ব সাধারনের কেউই যেনো অন্য মানুষদের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে না পারে। এটা অবশ্যি তাঁর দায়িত্ব যে কোনও মানুষ কে থামিয়ে দেয়া যদি সে বা তারা অন্য মানুষদের অধিকার খর্ব করতে চায়। এমন কি সম্রাট বা রাস্ট্রনায়কের অবস্থানও স্খলিত হয় বা সেই পদের অবমাননা হয় যদি তিনি তার পদাধিকার বলে সাধারণ জনগনের মতামত কে সীমিত বা বাধাগ্রস্থ করতে চান, সেই মতামত ধর্ম সংক্রান্ত হোক বা অন্য যেকোনো বিষয়েই হোক। তিনি হয়তো এটা করতে পারেন খুব গভীর অনুসন্ধান ও বিবেচনাবোধের প্রয়োগের মাধ্যমে, তবুও তাকে মনে রাখতে হবে কোনও মানুষই প্রশ্নের অতীত নয়, রাস্ট্রনায়কও সকল প্রশ্নের উপরে নয়। রাষ্ট্রনায়ক বা তাঁর পদের চরম অপমান হয় যদি তিনি কিছু সংখ্যক ধর্মীয় গোষ্ঠীর চাপে পড়ে জনগনের আরেকটি অংশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
কজন রাস্ট্রনায়ক বা সম্রাটের ক্ষমতা বা ইচ্ছার উৎস হচ্ছে তাঁর জনগনের সম্মিলিত ইচ্ছা, তাঁর কাজ হচ্ছে জনগনের সম্মিলিত ইচ্ছাকে একত্রিত করা এবং তাঁর নিজের ইচ্ছাকেও জনগনের সম্মিলিত ইচ্ছার মাঝে অন্তরভুক্ত করা। যদি সকল প্রত্যাশিত উন্নয়ন এই সকল সামাজিক নিয়মের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব হয়, তাহলে এই সকল বিষয়ে তাঁর কোন মাথা ব্যাথা থাকা উচিত নয়। বরং রাস্ট্রনায়ক বা সম্রাটের উচিত হবে বিশয়গুলোকে জনগনের উপরেই ছেড়ে দেয়া।
এখন যদি একটা প্রশ্ন করা হয়, তাহলে আমরা কি আলোকিত সময়ে বসবাস করছি? আমি উত্তর দেবো, না, আমরা আলোকিত সময়ে বসবাস করছিনা, বরং আমরা এক ধরনের আলোকিত হয়ে উঠবার সময়ে বসবাস করছি। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের আলোকিত মানুষ হয়ে ওঠার জন্যে ঢের পথ বাকি আছে। আমাদের এখনও অনেক দূর জেতে হবে যখন আমরা দাবী করতে পারবো যে আমরা সাবলম্বী হয়েছি, আমরা এখন নিজের বিবেচনাবোধ কে স্বাধীন ভাবে প্রয়োগ করতে পারি। বিশেষত ধর্মীয় বিষয়গুলোতে আমাদের নিজেদের বিবেচনাবোধ কে প্রয়োগ করবার ক্ষেত্রে আমাদের এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু এটা এখন আমাদের কাছে পরিস্কার যে আমাদের মুক্তির পথ স্বাধীনতার পথটি উন্মুক্ত হয়ে গেছে এবং আমরা জেনে গেছি কি কি বিশয় আমাদের সেই মুক্তির পথে স্বাধীনতা অর্জনের পথে, আলোকিত হয়ে ওঠার বাধা হতে পারে। আমাদেরকে নাবালক বা অপরিপক্ক হিসাবে বন্দী রাখার সেই সকল বিশয় গুলো বা বাধা গুলো ক্রমশই দূর হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থে এই সময়টা বা এই যুগটা হচ্ছে আলোকিত হয়ে উঠবার যুগ, এই যুগটা হচ্ছে ফ্রেডরিখের* যুগ।
একজন নেতা বা রাস্ট্রনায়ককে আলোকিত বলা যেতে পারে যদি তিনি তার দায়িত্বকে তার নিজের চাইতে ছোট মনে না করেন, তিনি যদি ধর্মীয় বিষয়গুলোতে মানুষের উপরে তার নিজের বিশ্বাসগুলো চাপিয়ে না দেন, বরং সাধারন জনগণকে ধর্মীয় বিষয়গুলোতে তাদের মতামতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন এমন কি তিনি যদি নিজেকে অতি আত্মবিশ্বাসী উদারনৈতিক হিসাবে গ্রহন করতে নাও চান, তাহলেও তাকে আলোকিত মানুষ বলা যেতে পারে। এ ধরনের একজন নেতা অবশ্যই প্রশংসা ও পুরস্কার পাবার যোগ্য, কেননা তিনি মানুষকে স্বাধীন হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেন, মানুষকে স্বাধীন করে দেন তাদের নিজ নিজ মতামত এর প্রকাশ আর চর্চার ক্ষেত্রে। এ ধরনের নেতার শাসন আমলে চার্চের পাদ্রীরাও তাঁদের পেশাগত দায়িত্ত্বের বাইরেও একজন স্কলার হিসাবে তাঁদের স্বাধীন মতামত পেশ করতে পারেন, এমন কি কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাঁদের মতামত প্রচলিত প্রথাগত ধর্মীয় মতামতের থেকে ভিন্নও হতে পারে। এই ধরনের চর্চ্চাক্ষেত্র আরো বিস্তৃত হতে পারে অন্যান্য মানুষের জন্যে যাদের সেই অর্থে কোনও নির্দিষ্ট পেশাগত বাধ্যবাধকতা নেই, যেমনটা চার্চের পাদ্রীদের থাকে। স্বাধীন চিন্তার ও মত প্রকাশের এই চেতনা ও মর্মবাণী এখন সকল স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ও প্রেক্ষাপটে সংগ্রামটি ভিন্ন কেননা, সেই সকল দেশের সরকার বা রাস্ট্রও তাঁদের উপরে চাপিয়ে দিচ্ছেন নানান ধরনের বিধি নিষেধ, যদিও সরকার ও রাস্ট্রের দায়িত্ব তা নয়। এই সকল রাস্ট্র বা সরকারের সামনে এখন একটা উজ্জ্বল উদাহরণ আছে, এরা এখন দেখছেন – সাধারণ জনগণের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ না করে কিংবা কোনও রাস্ট্রের সার্বভৌমত্বকে খর্ব না করেও কিভাবে মানুষ তার চিন্তার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে চর্চ্চা করতে পারে। শুধুমাত্র রাস্ট্র যদি জনগণকে খাঁচায় পুরে রাখতে না চায়, তাহলে সাধারণ জনগণ একদিন তাঁদের চিন্তার মুক্তি ঘটাবে, বর্বরতার যুগ থেকে বেরিয়ে আসবে। এই প্রবন্ধে আমি ধর্মীয় বিষয়ের উপরে জোর দিয়েছি আমার এনলাইটেনমেন্ট প্রসঙ্গে আমার দৃষ্টিভঙ্গিটি বলার জন্যে। এনলাইটেনমেন্ট হচ্ছে মানুষের স্বেচ্ছা-আরোপিত নাবালকতা বা অপরিপক্বতা থেকে বেরিয়ে আসা, সকল ধরনের মুরুব্বিয়ানার কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসা। কেননা, প্রথমত- আমাদের শাসকগোষ্ঠী বা কথিত মুরুব্বীরা মোটেও আগ্রহী নন আমাদের চিন্তার উন্নয়ন ঘটানোর জন্যে, শিল্প সাহিত্য বা বিজ্ঞানের চর্চার বিস্তার ঘটানোর বিষয়ে এবং দ্বিতীয়ত – ধর্মের কারনে যে অপরিপক্বতা, অজ্ঞানতা তা সবচাইতে বেশী ভয়াবহ এবং মানব জনমের জন্যে অবমাননাকর। ধর্ম বিষয়ে একজন রাস্ট্রনেতা বা রাস্ট্রপ্রধানের উদার বা আলোকিত দৃষ্টিভঙ্গি স্বাভাবিক ভাবেই শিল্প – সাহিত্য – বিজ্ঞান এই বিষয়গুলোর চর্চ্চাকে উৎসাহিত করে, প্রমোট করতে পারে। ধর্ম বিষয়ে রাস্ট্রনেতাদের এই ধরনের উদারনৈতিক অবস্থান বরং তাঁদের আইন প্রনয়নেও সহায়ক হতে পারে কেননা এই ধরনের মুক্ত পরিবেশে সাধারণ জনগণ স্বাধীনভাবে তাঁদের মতামত প্রকাশ করে, তাঁরা বর্তমান শাসন কাঠামোর সমালোচনা করতে পারে, প্রচলিত আইন বা প্রথার সমালোচনা করতে পারে এবং এই সকল সমালোচনা থেকে শাসকগোষ্ঠী তাঁদের চিন্তার রসদ পেতে পারেন। এই সকল সমালোচনা থেকে বরং ভবিষ্যতে আরো মানবিক, আরো কল্যাণকর রাস্ট্র পরিচালনার জন্যে নিয়ম, প্রথা বা আইন তৈরীর ধারনাগুলো পাওয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে উজ্জ্বল উদাহরণ আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা এবং সেই অধিকারের চর্চা রাস্ট্র বা শাসক গোষ্ঠীর জন্যে আতঙ্কের কারণ না হয়ে বরং সহায়ক ভুমিকাই রেখেছে।
একজন নেতা বা রাস্ট্রনায়ককে আলোকিত বলা যেতে পারে যদি তিনি তার দায়িত্বকে তার নিজের চাইতে ছোট মনে না করেন, তিনি যদি ধর্মীয় বিষয়গুলোতে মানুষের উপরে তার নিজের বিশ্বাসগুলো চাপিয়ে না দেন, বরং সাধারন জনগণকে ধর্মীয় বিষয়গুলোতে তাদের মতামতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন এমন কি তিনি যদি নিজেকে অতি আত্মবিশ্বাসী উদারনৈতিক হিসাবে গ্রহন করতে নাও চান, তাহলেও তাকে আলোকিত মানুষ বলা যেতে পারে। এ ধরনের একজন নেতা অবশ্যই প্রশংসা ও পুরস্কার পাবার যোগ্য, কেননা তিনি মানুষকে স্বাধীন হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেন, মানুষকে স্বাধীন করে দেন তাদের নিজ নিজ মতামত এর প্রকাশ আর চর্চার ক্ষেত্রে।
কিন্তু এরপরেও, একজন শাসক যিনি নিজে একজন আলোকিত মানুষ, যার কোনও জুজুবুড়ির ভয় নেই এবং যিনি জনজীবনে শান্তি বজায় রাখার সকল ব্যবস্থাই করতে পারেন, তিনিও বলে উঠতে পারেন – “তর্ক করো, যত খুশী তর্ক করো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত, মান্য কর, মান্য করতে হবে”। এ ধরনের অপ্রত্যাশিত অবাক করা বিষয়ও আমরা দেখতে পারি, এটা মানুষের স্ববিরোধী চরিত্রের আরেকটা ধরন। জনসাধারণের মত প্রকাশের অবারিত স্বাধীনতা এক অর্থে সুবিধাজনক মানুষের চিন্তা ও আধ্যাত্মিকতার স্বাধীনতার জন্যে, কিন্তু কখনও কখনও তা মানুষের চিন্তা করবার ক্ষমতাকে সীমিতও করতে পারে। আবার চিন্তার স্বাধীনতার অভাব বা সীমিত পরিমানে সেই স্বাধীনতা মানুষকে অনেক বেশী আগ্রহী করে তোলে মুক্ত চিন্তার চর্চার ক্ষেত্রে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষ তার ক্ষমতার সর্বাধিক ব্যবহার করতে পারে।
প্রকৃতি যেমন একটি বীজের ভেতরের নরম শাঁসটিকে বাচিয়ে রাখার জন্যে বাইরে একটি শক্ত আবরন তৈরী করে এবং একটা সময়ে ভেতরের নরম শাঁসটুকু পরিনত হয়ে উঠলে তা সেই শক্ত আবরণ ভেদ করে জন্ম দেয় নতুন অংকুরের, ঠিক তেমনি, মানুষ যত বেশী পরিনত হয়ে উঠবে, ততই সে তার চিন্তার মাধ্যমে সমাজ, রাস্ট্র, সরকারের সাথে মিথস্ক্রিয়া করবে এবং এই মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সমাজ আরো উন্নত আরো কল্যাণকর একটি নতুন সমাজ হয়ে উঠতে পারে। সমাজ – রাস্ট্র বুঝে উঠতে পারে যে মানুষ আসলে যন্ত্র নয়, যন্ত্রের চাইতে আরো অনেক বেশী কিছু, তাই মানুষকে মানুষের মর্যাদা দান করার মধ্যে দিয়েই সমাজ এগিয়ে যেতে পারে।
ইমানুয়েল কান্ট
কনিগসবারগ, প্রুশিয়া, সেপ্তেম্বর ৩০, ১৭৮৪
কান্ট এর etical life নিয়ে কিছু জানতে চাই
বিষয়টা অত সোজা নয় | ধরুন আমি ডাক্তার নই | কিন্তু স্বাস্থ্য বা আরোগ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই নিজের যুক্তিবোধ আর বিবেচনাকে ব্যবহার করে | তো সেটা ঠিক কতটা উচিত হবে ? আমি যেটাকে সামান্য রোগ বলে মনে করছি , সেটা যে আসলে কোনো ভয়ঙ্কর রোগ নয় তা আমি ঠিক করে কিভাবে বুঝব ? আমার তো ডাক্তারি ট্রেনিং নেই | মানবদেহ সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না | আমার বিবেচনা কি যথার্থ হবে ?
এ প্রসঙ্গে বলি আমার আপন মেসো দাঁতের রক্তপাতকে নিজের বিচার বুদ্ধি অনুযায়ী মাড়ির সমস্যা বলে বিবেচনা করেছিলেন | কিন্তু পরে সেটা সাংঘাতিক ক্যান্সার-এ পরিনত হয় এবং তিনি মারা যান | তিনি বোধহয় যথেষ্ট এনলাইটেন ছিলেন না | একই যুক্তি বাকি সমস্ত বিশেষ বিষয়ে খাটে যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, ওকালতি ইত্যাদি |
আজ্ঞে না কান্ট সাহেব | এর মূলে আছে প্রখর বাস্তবজ্ঞান | আমি যে বিষয়ে জানি না , সে বিষয়ে নিজের যুক্তি প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে যে বিপদের আশংকা আছে সেটা মানুষ বুঝতে পারে | তাই তারা নিতে চায় না |
হ্যা তবে কিছু লোক আছেন যারা জানা বিষয়ে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না | সেখানেও কারো সাহায্য চান | এই ধরনের লোকেরাই আমার মতে প্রকৃত অপরিপক্ক |
কান্ট বিষয়টা অতি সাধারনভাবে দেখেছেন | আমি একটু বিশেষভাবে তলিয়ে দেখলাম |
যাই হোক লেখাটা ভালো |
আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটিকে এভাবে ক্রিটিক্যালি দেখার জন্যে। তবে আমার বোধ অনুযায়ী, কান্ট আসলে, আপনি জা জানেন না বা বোঝেন না, তা নিয়ে স্বাধীন মতামত প্রসঙ্গে কিছু বলেন নি। কান্ট এর মুল বিষয়টি ছিলো, কারণ / যুক্তিবোধ বা বিবেচনাবোধ এর ব্যবহার নিয়ে। তিনি মানুষের যুক্তিবোধ বা বিবেচনাবোধের ব্যবহারের দুইটি এলাকার তুলনা করেছেন, একটি হচ্ছে ব্যক্তিগত এলাকায় আরেকটি হচ্ছে, সাধারণ বা পাবলিক এলাকায়। এবং এই দুই এলাকায় মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনি দাবী করেছেন, ব্যক্তিগত এলাকায় স্বাধীন মতামত কখনো কখনো সীমাবদ্ধ হতে পারে, যেমন আপনি যদি ডাক্তার না হোন, তাহলে আপনি ডাক্তারি বিষয়ে মতামত দেবার ক্ষেত্রে হয়তো খুব স্বাধীন নন, কিন্তু আপ্নি৯ ডাক্তার না হলেও আপনি কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বা আপনার স্বাস্থ্যঅধিকার নিয়ে স্বাধীন মতামত দিতে পারেন। এই পার্থক্য টাই তিনি বলতে ছেয়েছেন।
আপনার মতামতের জন্যে ধন্যবাদ।
“হ্যা তবে কিছু লোক আছেন যারা জানা বিষয়ে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না | সেখানেও কারো সাহায্য চান | এই ধরনের লোকেরাই আমার মতে প্রকৃত অপরিপক্ক |”
কান্ট এদের কথাই বলেছেন।
অনুবাদটি খুব দরকারী। সংগ্রহে রাখলাম।
আরো একটা কথা, এনলাইটমেন্টের বাংলা পরিভাষা ‘জ্যোতির্ময়তা’, আর ‘দ্যা এইজ অফ এনলাইটমেন্ট’ এর পরিভাষা ‘জ্যোতির্ময়তার কাল’ – এমনটা পড়েছিলাম একটা অনুবাদে। আপনার নজরে দিলাম।
অনুবাদ বেশ কঠিন একটি আর্ট কিম্বা সায়েন্স, কিম্বা এক মোড়কে দুটোই। অনুবাদ নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা বলেন যে কোন অনুবাদই সম্পূর্ণ নয়, হতেও পারে না, কেননা একেকটা ভাষা তার নিজস্ব উপায়ে একই বাস্তবতাকে বর্ণনা করে। ফলে তাতে অর্থ যদিও বা একই থাকে, স্বাদটা পালটে যেতে বাধ্য। আরেকটা কথাঃ ১৭৮৪ সালের যে কোন ভাষাই ২০১৬ সালে এসে অনেকখানি পালটে গেছে। বাংলার কথা বাদ দিন – ১৭৮৪ সালের বাংলা গদ্যের খুব কম লিখিত নমুনাই আজ আর অবশিষ্ট আছে। বাংলা ভাষা সাবালক হলো এই তো সেদিন, ইংরেজ মিশনারীদের হাত ধরে। আমি ১৭৮৮ সালে ইংরেজীতে লিখা একটা বই অনুবাদ করতে গিয়ে দেখলাম যে, তাতে অর্থ অনেকটা অবিকৃত রাখাটা অনেক কষ্টে সম্ভব হলেও, স্বাদটা একই রকম রাখা প্রায় অসম্ভব। সেই সময়ের ইংরেজী আর আজকের ইংরেজীতে অনেক তফাত। সিনট্যাক্স ও সিমানটিক্স, এই দুইই পালটে গেছে গত ২৩০ বছরে।
কাজী রহমানের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলছিঃ অনুবাদের সমস্যা বহূবিধ। ক ভাষা থেকে খ ভাষায় অনুবাদে যতটুকু সমস্যা, ক ভাষার মূল লেখা, যা কিনা খ ভাষায় অনুদিত হয়েছে, তাকে খ ভাষা থেকে গ ভাষায় অনুবাদ করলে সেই সমস্যা বাড়ারই কথা। এটা অনুবাদের একটা স্বভাবজাত সমস্যা। সম্প্রতি একটা অনুবাদ পড়ছিলাম ড. ফজলুল আলম কৃত, যিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে থাকাকালীন ইসলামাবাদ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন বিলেতে। অনেক পরে, ১৯৯৬ সালে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন কর্মসূত্রে। তার অনুদিত বই “এ যুগের তিন দিকপালঃ ফ্রিডরিখ নিটশে, নোয়াম চমস্কি ও মিশেল ফুকো” বেরিয়েছিল ২০১৪ সালের একুশের বইমেলায়। এই বইতে তিনি চমস্কির অনুবাদ করেছেন মূল ইংরেজী থেকে, কিন্তু ফুকো ও নিটশের অনুবাদ করেছেন অনুবাদ থেকে। মূল লেখাগুলো ছিল অন্য কোন ভাষায়, যাতে অনুবাদকের ততটা দখল ছিল না। বইয়ের ভূমিকায় ফজলুল আলম লিখছেনঃ
অনেক ধন্যবাদ। দারুণ অনুপ্রাণিত বোধ করছি। আমি আগেই লিখেছি, আমি দর্শনের পণ্ডিত নই, এবং আমি খুব হাল্কা ঢং এ না হলেও, আমার বর্ণনায় একটু মুক্ত খোলা সহজ ভাব বজায় রাখতে চাই, চেয়েছি। আমি নিশ্চিত, এই লেখাটি নিয়ে আরেকবার বসতে পারলে, আপনাদের এই পরামর্শগুলো কাজে লাগাতে পারবো। আমি টুকে রাখলাম। ধন্যবাদ আবারো।
অনুবাদখানি আগ্রহ নিয়ে পড়লাম,খুব ভাল লেগেছে।
:rose:
গভীর ভাবনার উপস্থাপনাটি উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে মুহাম্মদ গোলাম সারওয়ার। আমার ধারণা যারা কিছুটা কৌতুহলী অথবা সংশয়ী কিংবা ইতিমধ্যেই কিছুটা আলোকিত তারা এই অনুবাদখানি আগ্রহ নিয়েই পড়বেন; সম্ভবত নতুন কিছু জানবেনও বটে। ভাবছিলাম অনুবাদখানি আরো সহজবোধ্য হতে পারতো কি’না। তা’হলে হয়ত আরো কিছু বেশি সংখ্যক মানুষ উপকৃত হত।
ছোট্ট দু একটি বিষয়:
-ননএজ’কে অপরিপক্ক পর্যন্ত রাখলেই ভালো হত মনে হয়, নাবালকত্ব প্রয়োজন আছে কি?
কান্ট্’এর ছবির ঠিক নিচের প্যারাটি নিয়ে ইচ্ছে হলে আর একবার ভেবে দেখতে পারেন।
ভালো থাকুন।
অনেক ধন্যবাদ। আমি আপনার সাথে একশভাগ একমত, অনুবাদ টি আরও সহজ হতে পারতো। কিন্তু, সত্য কথা হচ্ছে, আমি যে দুইটি ইংরাজি অনুবাদ ব্যবহার করেছি এই কাজে, সেই দুটিও সত্যিই অনেক কঠিন ছিলো, আমি মুলানুগ থাকতে চেয়েছি, আমি যেহেতু দর্শনের পণ্ডিত নই, তাই মূলের বাইরে যেতে সাহস পাইনি। হয়তো আরেকবার চেষ্টা করলে আরও সহজ করে লিখতে পারবো।
নাবালকত্ব প্রসঙ্গে আমার মতামত হচ্ছে, কেনও জানিনা আমার মনে হয়েছে এই শব্দ টা এখানে জুতসই, নাবালক মানে যে মানুষ টা এডাল্ট হয়ে ওঠেন নি … ! তবে হ্যাঁ, একটা পরিভাষা ব্যবহার করাই ভালো, সেকথা মানছি।
আপনার মতামত টি আমাকে উৎসাহিত করেছে, ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
নিরাপদে থাকুন, ভালো থাকুন।