কয়েকদিন আগে আমার বাচ্চার স্কুলে এক নতুন মায়ের সাথে পরিচয় হলো। মিরিয়ান তার নাম। সদ্য সে অন্য স্টেট থেকে এখানে মুভ করেছে। তার দুটি বাচ্চা। এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটি পড়ে ওয়ানে। তার নাম কেনজো। আর মেয়েটি টু’তে। তার নাম একেমি। একদিন মিরিয়ান আমায় কল করে খুব মিনতির সুরে বলে, আজ স্কুল ছুটির পরে তুমি কি আমার বাচ্চাদেরকে একটু পিক করতে পারবে, প্লিজ? আমি বললাম, অবশ্যই পারবো। ও বলে, আমি কিছু খাবার-দাবার দিয়ে দেবো ওদের ব্যাকপ্যাকে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই আমি কাজ থেকে ফিরে ওদের তোমার বাসা থেকে পিক করবো। আমি বলি, তুমি ওদের ব্যাগে কোনো খাবার দেবে না কিন্তু। আমি ওদের খাওয়াদাওয়া করাবো। তুমি কিচ্ছু ভেবো না। কোনো খাবারে ওদের এলার্জি আছে কিনা, বলো। ও বলে, এখন পর্যন্ত কোনো খাবারে ওদের এলার্জি নেই।
বাচ্চাদের আমি স্কুল থেকে পিক করে প্লে-গ্রাউন্ডে নিয়ে যাই। ওরা খেলে পার্কে ঘণ্টা-দুই। তারপর আমি ওদের বাসায় আনি। খেতে দিই নাস্তা জাতীয় এটা-সেটা। ওরা খাওয়া শেষে নিজের থেকেই ব্যাকপ্যাক খুলে হোমওয়ার্ক করতে বসে যায়। হোমওয়ার্ক শেষ করে আমাকে দেখায়। তারপর আমার অনুমতি নিয়ে আবার খেলতে শুরু করে আমার বাচ্চাদের সাথে। ওরা চারজনে মিলে হাসে, খেলে, গল্প করে, পাকা-পাকা কথা বলে। আমি তাকিয়ে থাকি ওদের দিকে। আহা, কেমন নির্মল ওরা! কেমন নিশ্চিন্ত আনন্দময় ওদের জীবন!
সন্ধ্যা ৬টা বেজে যায়। আমি ওদের ডিনার খেতে দিই। এদেশের লোকেরা সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ডিনার সেরে নেয়। ছোট বাচ্চাদের সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তা নইলে বাচ্চারা সকালে স্কুলের জন্য উঠতে পারে না। আমি ওদের খেতে দিই আমাদের বাঙালি খাবার – ডাল, ভাত, সবজি। ওরা পাখির মতো টুকটুক করে চামচ দিয়ে ভাত খেয়ে নেয়। এই অপরিচিত ভিন্ন স্বাদের খাবার দেখে কোনো অভিযোগ করে না, আবদার করে না অন্য কোনো খাবারের। ছেলেটা শুধু একটু ছোট্ট করে বলে, খাবারটা একটু ঝাল। মেয়েটা বলে, খাবারটা মজা অনেক। আজ নতুন খেলাম। খাওয়া শেষ করে দু’জনেই আমাকে পাকা বুড়ো-বুড়ির মতো বলে, আমাদেরকে খাওয়ানোর জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। খাওয়া শেষ করে ওরা আবার খেলতে শুরু করে।
এই পিচ্চি ছেলেমেয়ে দুটির আচার-আচরণ দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। পৃথিবীর সব বাচ্চাই সুন্দর। কিন্তু এই দুটি বাচ্চা শুধু দেখতেই সুন্দর নয়। এদের চলন, বলন, আচার, আচরণ মুগ্ধ হবার মতই সুন্দর। সব সহোদরের মধ্যে যেমন ভাব থাকে তেমনি ঝগড়া মারামারিও থাকে। এদের মধ্যে শুধু ভাব আছে, আছে একের প্রতি অন্যের যত্ন। কিন্তু ঝগড়া মারামারি নেই। এরা নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে খেলনা, কম্পিউটারে খেলার পালা ইত্যাদি। এদের কোনো কিছুতে কোনো বিশৃংখলা নেই। যেন এরা ছোট্ট দুটি শিশু নয়, প্রাপ্তবয়স্ক দু’জন বুদ্ধিমান মানুষ।
মিরিয়ান আসে রাত আটটার পরে। আমার সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, এখানে কেন মুভ করলে? সে বলতে শুরু করে তার জীবনের গল্প।
আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি তার সাথে একই শহরে বাস করতে চাই না। অনেক প্রতারণা করেছে সে আমার সঙ্গে। তাই চলে এসেছি তার থেকে অনেক দূরে। আমরা দু’জনই পেশায় জুজুৎসু ট্রেইনার। আমাদের নিজেদের যৌথ ব্যবসা ছিল। আমাদের একটা জায়গা ছিল যেখানে এসে অনেক লোকে জুজুৎসু শিখতো। আমাদের রোজগার বেশ ভালই ছিল। ভেতরে ভেতরে ব্যবসায়ের কাগজপত্র সব ওর নামে করে নিয়েছে। আমাকে সরিয়ে দিয়েছে। জয়েন্ট একাউন্ট থেকে সব টাকা সরিয়ে নিয়েছে। সমস্ত খরচ আমার নামে ফেলে দিয়েছে। আমার ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা নিয়ে নিয়েছে, সব খরচ আমার কার্ড ব্যবহার করে করেছে। সর্বনাশ হয়ে যাবার পরেই আমি টের পাই। এখন আমি কপর্দকশূন্য। কিছু নেই। আছে শুধু ওর চাপিয়ে দেওয়া বিশাল ঋণের বোঝা। এসব নিয়ে আমাদের নিত্য ঝগড়া হতে থাকে। আমি আলাদা হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিই। ইন্টারনেটে দূরের কোনো জায়গায় কাজ ও বাসা খুঁজতে থাকি হন্যে হয়ে। অবশেষে একজন আমাকে কাজের আশ্বাস দেয় এখানে। ইন্টারনেটে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে আমি এখানে চলে আসি। এসেই আমি সেই লোকের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করি। কল করতে থাকি, ইমেইল করতে থাকি। সে আমার ফোন ধরে না, ইমেইলের উত্তর দেয় না। আমি অকূল পাথারে পড়ি। বাসা ভাড়া আকাশচুম্বি। হাতে একটা টাকা নেই। কোনো কাজ নেই। যে কাজ দেবে বলেছে সে উধাও। দুটি শিশু নিয়ে আমি এখন কী করি? কোথায় গিয়ে দাঁড়াই? দিনরাত কাজ খুঁজি। পাই না। আমার বাবার বিশেষ সচ্ছল অবস্থা ব্রাজিলে। বাবা আমাকে টাকা পাঠিয়ে সাহায্য করে বাসা ভাড়া দিতে, খাবার কিনতে, বিল দিতে। কিন্তু ব্রাজিলের টাকা এখানে আসলে যেন আর খুঁজেই পাওয়া যায় না। অবশেষে একটা কাজ পাই। বাসা খুঁজতে থাকি আবারও। আগের বাসাটার ভাড়ার টাকাও আমি রোজগার করতে পারি না। অন্যান্য খরচ তো দূরের কথা। একটা বাসা পেয়ে যাই অনেক কষ্টে তোমাদের এখানে। এখানে এসে উঠি।
বাচ্চাদের বাবা ওদের জন্য কোনো টাকা-পয়সা দেয় না। আমি চাইল্ড সাপোর্টের জন্য এপ্লাই করেছি। আইন-আদালতের ব্যাপার কিছুই জানি না, বুঝি না। আগে না জেনেই প্রাইভেট উকিল হাইয়ার করেছিলাম টাকা দিয়ে। এই অভাবের মধ্য অনেক টাকা খরচে হয়ে গেছে সেখানেও। পরে জানতে পারি একজনের কাছে যে, পাবলিক উকিলও নাকি আছে। তারপর আমি পাবলিক উকিলের মাধ্যমে কেস ফাইল করাই। কতদিন লাগবে সাপোর্ট পেতে, জানি না।
বাসাটার ভেতরে চারদিকে ভাঙা। অতি দুরাবস্থা। বাড়িওলাকে বলি, ঠিক করে দিতে। সে বলে, ঠিক করার কোনো কাম নাই। থাকলে থাকো, না থাকলে নাইক্কা। পরে জানতে পারি, সে লোক বাড়িওলাই নয়। সে হচ্ছে বাড়ির কেয়ারটেকার। ভুয়া বাড়িওলা সেজে ভণ্ডামি করে বাসা ভাড়া দিয়েছে। এটা বেসমেন্ট। বেআইনি ভাবে সে ভাড়া দিয়ে টাকাটা নিজের পকেটে পুরছে। বাড়িওলা জানেই না।
আমার বাবা আসে ব্রাজিল থেকে আমাকে সাহায্য করতে। বাবা বাসার অনেককিছু ঠিকঠাক করে দেয়। আমার বাচ্চাদেরকে স্কুলে আনা নেওয়া করে। আমি কাজে যাই। কোনো কোনো দিন ১৪ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করি। মানুষকে দিনরাত জুজুৎসু শিখাই। বাবা চলে যায় একসময়। আমি এবার চারদিকে ঘন অন্ধকার দেখতে পাই। আমাকে কাজে যেতে হয় অনেক সকালে, বাচ্চাদের স্কুল শুরু হবার অনেক আগে। যেতে একঘণ্টার বেশি লাগে। কাজ থেকে আসি ওদের স্কুল ছুটি হবার অনেক পরে। স্কুল থেকে বাচ্চাদের নেবে কে? ওদের দেখবে কে? আমার তো সামর্থ নেই বেবীসীটার রাখার।
কথা বলতে বলতে রাত ১১টা বেজে যায়। বাচ্চাদের ঘুমের সময় পার হয়ে যায়। তবুও ও বলতে থাকে। আমি শুনতে থাকি। এবার সে বিদায় নেয়। আমাকে বারেবারে ধন্যবাদ জানাতে থাকে। বলে, তোমার এই সহযোগিতার কথা ভুলবো না কখনো। আমি বলি, এটা কিছুই নয়। তোমার বাচ্চারা এতো মিষ্টি স্বভাবের যে, আমি ওদের উপস্থিতি উপভোগ করেছি। সে বলে, আমি কোনো ছুটির দিনে তোমাকে নিয়ে কোনো সুন্দর কফি শপে যাবো। তোমাকে কফি খাওয়াবো। আমি বলি, কফি খাবো না। কোনো ছুটির দিনে আমরা কোথাও ঘুরতে যাবো। বাচ্চারা মিলে খেলবে, আনন্দ করবে।
আমার আরেক বান্ধবীও মিরিয়ানের বাচ্চাদের স্কুল থেকে পিক করে। কোনো কোনো দিন ওর ফিরতে রাত ১১টা বেজে যায়। ওর ১২-১৩ ঘণ্টা কাজ থাকে। তার পর থাকে নতুন কাজের ইন্টারভিউ। বর্তমান বাসাটার ভাড়াও তার পক্ষে অনেক বেশি। সে আরো কম ভাড়ার বাসা খুঁজছে। বাসা দেখতে যাচ্ছে এখানে-সেখানে। স্কুল ছুটির দিনে বাচ্চাদেরকে সে তার কাজে নিয়ে যায় । অনেক ক্লায়েন্ট পছন্দ করে না ব্যাপারটা। কিন্তু কী করবে মিরিয়ান? কে দেখবে তার বাচ্চাদের প্রতিদিন? কোথায় রেখে যাবে সে ওদের?
দুইদিন পর মিরিয়ান আমাকে আবার কল করে। আবার তার মিনতিভরা কণ্ঠ – তুমি কি দয়া করে আমার বাচ্চাদের কালকে স্কুল থেকে পিক করতে পারবে? আমি সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ফিরবো। আমি বলি, কোনো অসুবিধা নেই। আমি পিক করবো। আবার সেদিনের মতো ওরা খেলা করে, হোমওয়ার্ক করে, আমি ওদের বাঙালি ডিনার খাওয়াই। বাচ্চারা এক-দুইবার আমাকে এসে জিজ্ঞেস করে, আমার মা কখন আসবে? আমি বলি, এই তো এসে পড়লো।
সন্ধ্যা সাড়ে ৯টা বাজে মিরিয়ান আমাকে কল করে বলে, তোমার বাসা তো খুঁজে পাচ্ছি না। ঠিকানাটা আবার বলো তো। আমি তাকে বলি, ঠিকানা তো তোমার জানা, বাসা তোমার চেনা। তুমি সেদিন না এলে! আমি তাকে আবারও ঠিকানা দিই। আবারও সে আমাকে কল দেয়, তোমার এই নাম্বারের বাসা তো এই জায়গায় নেই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, তুমি কোথায়? সে আমাকে অন্য জায়গার নাম বলে যেখানে আমার বাসা নয়। বাসার নাম্বার বলে ভুল। আমি আবার তাকে ঠিকানা বলে দিই। এভাবে বেশ কয়েকবার সে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় গিয়ে আমার বাসা ভুল নাম্বারে খুঁজতে থাকে দিকভ্রান্তের মতো। আমি তার বাচ্চাদেরকে তৈরি করে নিয়ে বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়াই যাতে সে এসে মাত্র ওদের নিয়ে বাসায় চলে যেতে পারে। রাত অনেক হয়ে গেছে। বাচ্চাদের ঘুমাতে হবে। সকালে স্কুলে যেতে হবে। সে নিজেও ক্লান্ত। ওকেও বিশ্রাম নিতে হবে। প্রায় চল্লিশ মিনিট বিভিন্ন ভুল জায়গায় বাসা খোঁজার পর সে আমার বাসা খুঁজে পায়।
মিরিয়ান যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ায় তখন ক্লান্তিতে ওর চোখ বন্ধ হয়ে আছে। কথা বলার শক্তি নেই। চোখ বন্ধ অবস্থায় গলা থেকে অতি কষ্টে ফিসফিস শব্দ বের করে বলছে, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। ওর অবস্থা দেখে আমার বুকের ভেতর হুহু করে উঠলো। সেই ভোরে কাজে গেছে। এখন রাত দশটায় এসেছে কাজের থেকে। সারাদিন ব্যায়াম শিখিয়েছে মানুষকে। সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্তিতে এখন কথা বলার শক্তি নেই, চেনা বাসা, চেনা ঠিকানা খুঁজে পাবার শক্তি নেই। নিঃশব্দে একটা সহানুভূতির নিঃশ্বাস বের হয় আমার বুক থেকে। আমি তার কাছ থেকে গোপন করি তা। তার কষ্ট আমি আর বাড়াতে চাই না। মিরিয়ান, শ্রান্ত ক্লান্ত মিরিয়ান তার বাচ্চাদের দুইহাতে জড়িয়ে ধরে। চুমু খায়। ওদের চুলে নাল ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেয়। আমার সাথে ভালো আচরণ করেছে কিনা জিজ্ঞেস করে। আমি বলি, তোমার বাচ্চারা খুব ভালো। ও বলে, ভালো তো ওদের হতেই হবে। তারপর দুইহাতে দুই বাচ্চাকে আগলে ধরে ও নিজের ঠিকানার দিকে অগ্রসর হয়; যেন মিরিয়ান এক পক্ষীমাতা আর তার ছোট্ট দুটি বাচ্চা হচ্ছে পাখির বাচ্চা। সে তার দুই ডানা দিয়ে এই ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ প্রতিকূল পৃথিবীর সকল বিপদ আপদ থেকে তার বাচ্চাদের রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
এক কথায় অসাধারন। মনে হচ্ছে পৃথীবির সব মায়েরা প্রায় একই রকম। সন্তানের সুখের জন্য তারা যে কোন ত্যাগ শিকার করতে প্রস্তুত। তবে সব মা এত সুন্দর আদর্শভাবে সন্তান লালন করতে পারেন না।
সর্বপরি,লেখীকাকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা বিষয় তুলে ধরার জন্য।
লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগল আর আমার মায়ের কথা মনে পরে গেল যে তার নিজের জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে আমাদের ভাই বোন দের মানুষ করেছেন। পৃথিবীর সব মা একই রকম।
পৃথিবীতে কিছু লোক আছে যারা খালি দেয় আর কিছু খালি নেয়। আপনাকে ধন্যবাদ সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য।
চমৎকার লেখা।
এটা আসলে সাহায্যের মতো কিছু নয়, রতন। ওর বাচ্চারা আমার বাচ্চার বন্ধু। খেলতে আসে। আমাকে টেক কেয়ার করতে হয় না।
পড়ে খুব খারাপ লাগলো | পৃথিবীতে এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা শুধুই ঠকায় | আরেক শ্রেনীর লোক আছে যারা বৌয়ের পয়সায় ফুটুনি মারে আর বৌকে গালি দেয় | এইসব কুত্তার বাচ্চারা আছে বলেই না আমাদের এত কষ্ট | মিরিয়ানকে হ্যাটস অফ , ওর সাহসকে সেলাম জানাই | আর নীলাঞ্জনা তার সহানুভুতিকেও সেলাম জানাই |
ধন্যবাদ আপনার পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য।