বাংলাদেশে গত বছরের সবচেয়ে বেশি মার্কেট পাওয়া কথাটি হচ্ছে, যদিও মুসলমান সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে তবুও তার ধর্মকে আঘাত করা ঠিক হয়নি। প্রথম সুযোগ পাওয়া মাত্রই চাপাতির কোপকে, ধর্মের সমালোচনা করার(সে সমালোচনা যৌক্তিক বা অযৌক্তিক যে কোন রকমই হোক না কেন) সাথে অনেকেই এক করে ফেলে। গলার রগ ফুলিয়ে বলে, উগ্র আস্তিক ভালো নয় কিন্তু উগ্র নাস্তিকও খারাপ। এই নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে, অনেক কথা হয়েছে। আজকে অভিজিৎ রায় হত্যার এক বছর পূর্তিতে সবকিছু ছাপিয়ে এই তর্কের কথা বারবার মনে পড়ে। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এই দিনে বিশ্বাসীর আদর্শের আঘাতে অভিজিৎ রায়ের নৃশংস মৃত্যু হয়েছিল। তারপর একে একে আরও অনেকের। আদর্শ আর অনুভূতি কেড়ে নিয়েছে জলজ্যান্ত মানুষের সবচেয়ে বড় অধিকার, তার বেঁচে থাকার অধিকার। অথচ মানুষের অধিকার আছে, অনুভূতির নেই, আদর্শের নেই।

people-vs-ideas

মনে প্রশ্ন জাগে, একটা ধর্মের বা একটা বিশ্বাসের অধিকার কতটুকু? ধর্মকে আঘাত করার অধিকার কি মানুষের আছে? শুধু ধর্ম না, যে কোন ধরণের বিশ্বাসকে কি আঘাত করার অধিকার একজন মানুষের আছে? উত্তর জানতে হলে আগে জানতে হবে এখানে আঘাত বলতে আপনি কি ধরণের আঘাত বুঝাচ্ছেন। ধারা যাক, একজন মুসলিম মসজিদে বসে নামাজ পড়ছিল। এমন অবস্থায় তাকে কেউ গুলি করে মেরে ফেললো। এটা যে আঘাত এবং অন্যায় সেই বিষয়ে কারো দ্বিমত হবার কথা না। কিন্তু এবারে যদি প্রশ্ন করি, এটা কার উপর আঘাত? ধর্মের উপর নাকি মানুষের উপর? উত্তর যদি হয় ধর্মের উপর আঘাত তবে বোধহয় আপনার চিন্তাভাবনা মেঘ মুক্ত নয়। এটা মানুষের উপর আঘাত প্রথমত। একজন মানুষকে খুন করা হয়েছে, তাই এটা খুনের অপরাধ। এবারে খুঁজে দেখতে হবে খুনের কারণ কি। কারণ যদি হয় ওই লোকটি মুসলিম এবং যে তাকে হত্যা করেছে সে মুসলিমদের ঘৃণা করে বলে তাকে হত্যা করেছে তখন তার অপরাধের মাত্রা আরও অনেক বেশী হবে। পশ্চিমে এ ধরণের অপরাধকে বলে Hate crime। উইকির সংজ্ঞা অনুসারে,
A hate crime (also known as a bias-motivated crime) is a usually violent, prejudice motivated crime that occurs when a perpetrator targets a victim because of his or her perceived membership in a certain social group.

এখানে শুধু ধর্ম না, অন্য যে কোন ধরণের বর্ণবাদ প্রযোজ্য। এক সাদা লোক হয়তো কালো লোককে হত্যা করলো, এক কালো লোক হয়তো এক এশিয়ানকে হত্যা করলো, এক স্কার্ট পরা মহিলা হয়তো হিজাব পরা এক মহিলাকে আক্রমণ করে বসলো। এরকম সবগুলো ক্ষেত্রেই খতিয়ে দেখা হয় সে কালোদের ঘৃণা করে বলে কালো লোকটিকে, এশিয়ানদের অপছন্দ করে বলে এশিয়ানকে বা হিজাব ঘৃণা করে বলে হিজাব পরা মহিলাকে হামলা করেছে কিনা। যদি প্রমাণ হয় হ্যাঁ সেই কারণেই তখন তার খুনের অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাবে। সাধারণ খুনের জন্য যেই সাজা, ঘৃণার কারণে খুনের সাজা তার থেকে অনেক বেশী। এখানে অপরাধ দুইটা। প্রথমত খুন, দ্বিতীয়ত ঘৃণা। এবারে খুনের অংশটুকু বাদ দিয়ে দেই। ধরা যাক, সাদা লোকটি এসে কালো লোকটির গায়ে হাত দিল না। বরং তার সামনে এসে তাকে গালি দিল, ডার্টি নিগার বলে। কালো লোকটি এসে এশিয়ানকে বলল, ষ্টুপিড পুওর ইন্ডিয়ান। স্কার্ট পরা মহিলা হিজাব করা মহিলাকে গালি দিল, ব্লাডি টেররিস্ট বলে। তাহলে সেটা কতটুকু অপরাধ হবে? এই অপরাধের মাত্রা বা সাজা নির্ভর করে অনেকগুলা বিষয়ের উপর। এক কথায় তাই বলা সম্ভব না এই অপরাধের মাত্রা কি। আইনের দৃষ্টিতে এটা অবশ্যই গুরুতর সাজা পাবার মতো অপরাধ নয়। অপরাধটি যদি কেউ তার কাজের জায়গায় করে, তবে ভালো সম্ভাবনা এই কারণে তার চাকুরী চলে যাবার। যে কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হয়তো তাকে বর্ণবাদি বলে স্বীকার করবে এবং তার থেকে দূরে থাকতে চাইবে। একেবারে অসম্ভব নয়, কিন্তু এই অপরাধে তার জেল জরিমানা হবার সম্ভাবনা বেশ কম। যদি প্রমাণ হয় সেই বর্ণবাদি লোকগুলো আপনার গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করেছে অথবা আপনার পথ আটকেছে অথবা তার গালিগুলো হুমকির মতো ছিল তবেই হয়তো শাস্তি হতে পারে। এবারে ধরা যাক সেই বর্ণবাদি লোকগুলো একই কাজ করলো ফেসবুকে বসে। একজন হয়তো লিখল, সব কালো মানুষ ডার্টি নিগার। একজন হয়তো লিখল, সব এশিয়ান স্টুপিড। আরেকজন বলল, সব হিজাব করা মহিলা সন্ত্রাসী। সামনেই বলুক আর দূরে বসেই বলুক, এরা যে বর্ণবাদি এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে হয়তো তার কাজকে বেশীরভাগ দেশেই অপরাধ হিসেবেই ধরবে না। সুস্থ লোকে ছ্যা ছ্যা করবে, এই ব্যাটা রেসিস্ট বলে। তবে আইনের হাতে তার সাজা পাবার সম্ভাবনা একেবারেই কম। আমাদের দেশে আর কয়েকটি দেশে হয়তো ব্যতিক্রম বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বেশীরভাগ দেশের আইনেই এটাকে হয়তো আপনার বাক-স্বাধীনতা ধরে আপনার কথার সমালোচনা করবে, কিন্তু আপনাকে জেলে পুরবে না। এবারে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাই। মনে করি ওই বর্ণবাদি মানুষগুলো একটু অন্যভাবে কিছু কাজ করলো। একজন যুক্তি সাজিয়ে লিখল, এই দেশে কালোদের অপরাধ প্রবণতা বেশী। তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দেখালো কি কারণে এবং কেন তার অপরাধ বেশী করছে। তার কথার সাথে কিন্তু বেশীরভাগ মানুষ একমত হবে না। কিন্তু যেহেতু সে যুক্তি দিয়ে একটা ভুল বক্তব্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, লোকজন পাল্টা যুক্তি দিয়ে হয়তো তার কথা ভুল প্রমাণের চেষ্টা করবে। প্রাচ্যে এবং পাশ্চাত্যে বহুলোকে এরকম বহু বর্ণবাদি বক্তব্য দেয় এবং দিয়ে আসছে। এগুলো যদি অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা আমেরিকার বেশীরভাগ রিপাবলিকান নেতাকে জেলে থাকতে হতো। সুস্থ লোকে তাদের বক্তব্য শুনে কেউ হাসে কেউ রেগে যায়। যে হাসে সে হয়তো হাসতে হাসতে তার বর্ণবাদ নিয়ে তাকে পচায়। আর যে রেগে যায় সে হয়তো রাগতভাবেই তার বক্তব্যের সমালোচনা করে।

Hate Crime এর দুটি অংশ। অধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে Crime। অপরাধ যে কারণেই হোক না কেন তার জন্য সাজা হবে। পরের অংশ হচ্ছে Hate । সেই সংঘটিত অপরাধ যদি ঘৃণার কারণে হয় তবে সেই সাজার পরিমাণ অনেক বেশী হবে। হেইট ক্রাইম থেকে ক্রাইমের অংশ যদি বাদ দিয়ে দেই তবে সাজার পরিমাণ অনেক কম বা শূন্য হয়ে যায়। বেশীরভাগ সময়েই সেই ঘৃণা যতক্ষণ পর্যন্ত না কারো ক্ষতি করছে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই ঘৃণার অপরাধ দুর্বল অপরাধ। সহজ ভাষায় বলা যায় ঘৃণা করা অপরাধ নয়, হত্যা করা অপরাধ, ঘৃণার কারণে হত্যা করা আরও বড় অপরাধ। একজন মানুষ ইসলাম বা বিশেষ কোন ধর্মের সমালোচনা করতে পারে যে কোন কারণে। কেউ হয়তো ধর্মটির প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণা নিয়ে একে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে। কেউ হয়তো চমৎকার যুক্তি সাজিয়ে এর ফাঁকফোকর তুলে ধরে। দুজনেই হয়তো ধর্মটিকে অপছন্দ করে এবং চায় অন্য সকলে এই ধর্ম থেকে দূরে সরে আসুক। এই অপছন্দ করা বা Hate ততক্ষণ পর্যন্ত কোন সমস্যা নয় যতক্ষণ না এর সাথে কোন Crime যুক্ত হচ্ছে। এখন হয়তো আপনি পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলতে পারেন আরে অর ঘৃণা বা ঘৃণাযুক্ত বক্তব্যের কারণে আমি মনে বড় দুঃখ পেয়েছি। সেটার কি হবে? এধরণের বক্তব্যকে বলা হয় Hate Speech। হেট স্পীচ এর সংজ্ঞা উইকিতে দুইভাবে দেয়া। প্রথমটা আইনের বাইরে, সাধারণ হিসেবে। দ্বিতীয়টা আইনের হিসেবে।
Hate speech, outside the law, is speech that attacks a person or group on the basis of attributes such as gender, ethnic origin, religion, race, disability, or sexual orientation.
In law, hate speech is any speech, gesture or conduct, writing, or display which is forbidden because it may incite violence or prejudicial action against or by a protected individual or group, or because it disparages or intimidates a protected individual or group.

অর্থাৎ আইনের হিসেবে হেইট স্পীচ মানে সেই ধরণের বক্তব্য যেটা কোন ধরণের হিংস্র বা ক্ষতিকর কাজকে উদ্বুদ্ধ করে। এখানে ‘incite violence’ শব্দদুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক এই শব্দদুটির কারণেই আমার দেশ পত্রিকার মাহমুদুর রহমানের কাজকর্ম ‘Freedom of Speech’ এর আওতায় না পড়ে ‘Hate Speech’ এর আওতায় পড়ে। এবং ঠিক এই শব্দদুটির কারণেই ধর্ম বিরোধিতা করে যুক্তি দিয়েই লেখা হোক বা ধর্মকে নিয়ে বাজে রসিকতাই করা হোক সেটা পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই আইনের দৃষ্টিতে ‘Hate Speech’ এর আওতায় ফেলা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটা কোন সহিংসতার সৃষ্টি বা তার সম্ভাবনা করে। এখন হয়ত আপনি পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলতে পারেন, ধর্ম নিয়ে ওরকম কথা শুনে আমার খুন করতে ইচ্ছা হয়, ভায়োলেন্স করতে ইচ্ছা হয়। সেটাও আইনের দৃষ্টিতে হালে পানি পাবে না incite শব্দটির কারণে। শব্দের অর্থ উদ্বুদ্ধ করা। ব্যাপারটা যদি এমন হয় আজকে ধর্মকে নিয়ে কেউ বাজে কিছু লিখে বলল, ধর্মই সব অনিষ্ঠের মূল এবং সেই কথা শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে দলে লোকে মসজিদে গিয়ে ধর্মপালনকারীদেরকে মারা শুরু করলো। তখন সেটা সহজেই ‘Hate Speech’ এর আওতায় পড়ে যাবে। কারণ আপনার বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিছু মানুষ অপরাধ করেছে। ঠিক যেরকমভাবে আমার দেশ পত্রিকা সহিংসতা ছড়িয়েছিল ‘চাঁদে সাঈদীকে দেখা’ বা ‘নাস্তিক ব্লগার কতল করার’ কথা বলে। সংজ্ঞানুসারে ‘Hate Speech’ হোক বা না হোক, অনেকের অনেক কথা শুনে আপনার অনেকরকম অনুভূতি অনেকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। কিন্তু তার জবাবে আপনি কোন মানুষকে আঘাত করতে পারেন না। প্রতিটি মানুষই প্রতিটি ধর্মের, প্রতিটি বিশ্বাসের, প্রতিটি ধারণার সমালোচনা করার অধিকার রাখে। সমালোচনার কারণে যদি কোন ধর্ম হুমকির মুখে পরে, তার অনুসারী কমে যায় তবে সেটা কমে যাওয়াই তার সঠিক পরিণতি। আপনি দিনরাত এসে গালি দিন, আইনস্টাইন একটা বলদ। একের পর এক যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করুন, মাধ্যাকর্ষণ সূত্র ভুল। খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসতে হাসতে বলুন, গ্যালিলিও চারটা বিয়ে করেছিলেন। যাদের কথা বললাম, এদের সবাই আমার কাছে দেবতুল্য মানুষ। এদের আইডিয়া, এদের কর্মের কারণেই মানবজাতি এতদূর এসেছে বলে বিশ্বাস করি। কিন্তু আপনার অশ্লীল যুক্তি শুনে আমার অনুভূতির দণ্ড খাড়া করে আপনার দিকে তেড়ে যাবো না। আপনার কথা শুনে মহাকর্ষ সূত্র বা মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের প্রতি আমি আস্থা হারিয়ে ফেলবো না। তারপরেও যদি মাধ্যাকর্ষণ সূত্রকে আপনি কষে গালিগালাজ করে যান আমি শুধু বসে বসে হাই তুলবো। সূত্রের ইজ্জত রক্ষার জন্য জান দিয়ে দিব না। কারণ আমার কাছে সেই সূত্র জানা ও জেনে সেইমতো কাজ করাই যথেষ্ট।

রাজীব থেকে অভিজিৎ হয়ে দীপন পর্যন্ত নিহত হওয়া মানুষগুলোই হোক আর অনলাইনে প্রতিদিন তীব্র ভাষায় ধর্মকে আক্রমণ করা যে কোন মানুষ হোক তার বক্তব্যকে আমি হেইট স্পিচ বলে মানতে রাজি নই। কারণ এমন কোন উদাহরণ আমার জানা নেই যে এদের কারো বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ ধর্মপালনকারী কাউকে আঘাত করেছে, কোনরকমের সহিংসতা করেছে। তারপরেও যুক্তির খাতিরে কারও কারও বক্তব্যকে না হয় ধরে নিলাম হেইট স্পিচ হিসেবে। এবারে বলুন তো সেই স্পিচে কার কি ক্ষতি হয়েছে? অনুভূতিতে আঘাত লেগে কোন মানুষটা মরে গেছে? অন্যদিকে আমি এক নাগাড়ে গোটা দশেক মানুষের নাম বলে যেতে পারবো মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে ইসলামের সম্মান রক্ষার জন্য। আপনি যতই গলা উঁচিয়ে বলুন ওরা প্রকৃত মুসলমান নয়, ঠিক একই ভাবে ওরাও গলা উঁচিয়ে বলবে আপনি প্রকৃত মুসলমান নন। নর্থ-সাউথের যেই ছেলেগুলোকে রাজীবকে কুপিয়ে মেরেছে তার কোন টাকার জন্য এই কাজ করেনি, কোন ইহকালের লাভের আশায় করেনি। ইসলামের সম্মান রক্ষার জন্য করেছে। বাবু হত্যার পিছনে কার কত মদদ আছে জানিনা, তবে জানি হত্যাকারীরা গভীরভাবে ধর্মে অনুগত। এবং শুধু সেই ধর্মের সম্মানের কথা বলেই অদেখা অজানা একজন মানুষকে তারা ঠাণ্ডা মাথায় কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। প্রতিটি হত্যার পিছনে যত রাজনীতিই থাকুক না কেন, মূল হত্যাকারী সকলেই নিজেরা ইসলাম পালন করে এবং ইসলামের অনুভূতিকে রক্ষা করা তার ধর্ম বলে মনে করেছে বলেই এই হত্যা করেছে। রাজীব, অভিজিৎ, নিলয়, বাবু, বিজয়, দীপন প্রতিটি মানুষ ধর্মের বলি। সুস্পষ্টভাবে বললে বলতে হয় ইসলাম ধর্মের অনুভূতির বলি, আদর্শের বলি। যেই আদর্শের কোন দেহ নেই, মাংস নেই, জীবন নেই, অধিকার নেই। কিন্তু এই মানুষগুলির সবাই রক্ত মাংসের মানুষ। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এইসব মৌলিক অধিকারের অধিকারের আগেও তার সবচেয়ে বড় অধিকার বেঁচে থাকার অধিকার। কোন অনুভূতির বা আদর্শের অধিকার নেই। একটা জলজ্যান্ত রক্তমাংসের মানুষের অধিকার আছে। একটা মানুষের অধিকার আছে যেকোনো আদর্শকে চ্যালেঞ্জ করার, যে কোন আদর্শের বিরোধিতা করার। কিন্তু মানুষেরই তৈরি একটা আদর্শের (যতই তাকে ঐশী নাম দিয়ে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করা হোক না কেন) কোন অধিকার নেই একজন মানুষকে ধ্বংস করার। মানুষের হাতে যুগে যুগে আদর্শ তৈরি হয়েছে, মানুষের হাতেই আদর্শ ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু যত না আদর্শ ধ্বংস হয়েছে তারচেয়ে অনেক বেশি মানুষ পরিমাণে মানুষ আদর্শের বলি হয়েছে। একজনের তৈরি করা আদর্শের তলে চাপা পড়েছে অন্যজন।

শেষ করি শুরু করা সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে। একজন মানুষের কি অধিকার আছে ধর্মকে আঘাত করার? অবশ্যই আছে। ধর্ম বা আদর্শ একটা বিমূর্ত জিনিস। যতই নবী রসূল আর সৃষ্টিকর্তার নাম দিয়ে একে উপরে উঠানো হোক না কেন দিনশেষে এটা মানুষেরই তৈরি একটা আদর্শ ছাড়া আর কিছু নয়। আর সেই আদর্শ পৃথিবীর সব মানুষ মানতে বাধ্য নয়। কারও অধিকার নেই সেই আদর্শের অনুসারী মানুষকে আঘাত করার। কিন্তু আদর্শকে আঘাত করার অধিকার আছে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের। সেই আদর্শ যদি টেকসই কিছু হয়, কল্যাণকর কিছু হয় শত আঘাতেও সেটা অবিচল থাকবে। আর যদি আঘাতে সেই আদর্শ ভেঙ্গে পড়ে তবে ভেঙ্গে পড়াই তার নিয়তি। আদর্শ ভাঙ্গার অধিকার মানুষের আছে। মানুষ ভাঙ্গার অধিকার আদর্শের নেই। মানুষের অধিকার আছে, অনুভূতির নেই, আদর্শের নেই।