লেখার শুরুতেই জেনে নেই ৫৭ ধারাটিতে আসলে কী আছে? ৫৭ (১) ধারায় বলা আছে:
কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷
এখন থেকে ১৪৫০ বছর আগে রোমের সামন্ত রাজারা প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী খ্রিস্টানেরা ক্যাথলিক চার্চের যাজকদের সহায়তায় জনগণের উপর ধর্মের নামে যে অত্যাচার করেছিলো, তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্লাসফেমি’। ৫৭ ধারার কাছাকাছি কিংবা এপিঠ ওপিঠ বলা যেতে পারে কিংবা উল্টোটাও।
ব্লাসফেমি আইন কী?
ব্লাসফেমি শব্দের অর্থ’-‘ধর্মনিন্দা’ বা ‘ঈশ্বরনিন্দা’।
প্রাচীন ও মধ্যযুগে ইউরোপে ব্লাসফেমির উদ্ভব হয়েছিল। সে সময় রাজা বাদশাদের বলা হত ঈশ্বরের প্রতিনিধি,তাই রাজাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা মানে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বলা,এইভাবে রাজার অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন যাতে গড়ে না- উঠতে পারে সেই জন্য ওই সময় ব্লাসফেমি নামের এই কালো আইন তৈরি হয়েছিলো। ঈশ্বরদ্রোহিতার আড়ালে রাজদ্রোহিতা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা ঢাকতে চাওয়া হতো এর সহায়তায়।
এই আইনের কারণে পোলিশ বিজ্ঞানী কোপারনিকাসের সেই দ্য রেভোলিওশনিবাস’ বইটি ধর্মের বিরুদ্ধে যাওয়ায় গির্জার পাদ্রীরা বইটি নিষিদ্ধ করে দেয়,কারন ওই বইটিতে লিখা ছিল পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে,কিন্তু বাইবেলে লেখা ছিল পৃথিবীর চারদিকে সূর্য ঘোরে। ১৫৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। এরপর ইতালির বিজ্ঞানী জিয়োর্দানো ব্রুনো সেই অপ্রকাশিত সত্য উদ্ঘাটন করেন,এবং তা তিনি প্রচার করতে শুরু করলেন। এ কারণে তাঁর প্রতি ধর্মযাজকেরা ক্ষিপ্ত হন এবং কঠোর শাস্তি প্রদানের উদ্যোগ নেন। বাধ্য হয়ে ব্রুনো ইতালি ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে যান,সেখানেও তিনি একই কারণে বহিষ্কৃত হন। পোপের নির্দেশে একের পর এক দেশ ব্রুনোর জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়।এই সময় পোপের এক গুপ্তচর এক মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে ব্রুনোকে ইতালিতে নিয়ে আসে। ১৫৯২ সালের ২৩ মে বিজ্ঞানী ব্রুনোকে বন্দী করে তার উপর শুরু হয় নির্যাতন। টানা আট বছর ধরে তাকে সিসের ছাদের নিচে আটকে রেখে (গরমের সময় যা তীব্র গরম, শীতের সময় যা প্রবল ঠান্ডা) বিচারের নামে প্রহসন চালায়, শেষে বিচারের রায় হল, ‘পবিত্র গির্জার আদেশে পাপী ব্যক্তির এক বিন্দু রক্তও নষ্ট না-করিয়া হত্যা’, অর্থাৎ আগুনে পুড়িয়ে হত্যা। ১৬০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রুনোকে নিয়ে যাওয়া হল এক বধ্যভুমিতে। তাঁর জিভ শক্ত করে বাঁধা ছিল,যাতে শেষ বারের মতও তার আদর্শের কথা তিনি বলতে না-পারেন,আগুনে পুড়িয়ে এই বধ্যভূমিতে বিজ্ঞানী ব্রুনোকে হত্যা করা হল। এই হল ব্লাসফেমি আইনের নির্মম নিষ্ঠুর পরিণাম। এখানেই শেষ নয়,ব্রুনোর পর ব্লাসফেমির আরেক শিকার বিজ্ঞানী গ্যালিলিও তাঁর শেষ আটটি বছর কারাগারে দিন কাটান এবং সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
৫৭ ধারা নিয়ে প্রায়ই ফেসবুকে আলোচনা হয়। ৫৭ ধারা বাতিলের জন্যে আন্দোলন হয়, লোকে এই কালো আইনের প্রতিবাদস্বরূপ ফেসবুকের কভার পেজ, প্রোফাইল পিকচারে নানা রকম টেক্সট দিয়ে রাখে। আমার সাদাসিদে দৃষ্টিতে ৫৭ ধারা আসলে আর কিছুই না, আমাদের সমষ্টিগত রক্ষণশীল বাংলাদেশি জনগণের মানসিকতার সার্থক প্রতিফলন মাত্র। পৃথিবী যতোই সামনে আগাক না কেন বাংলাদেশ এখনো আটকে আছে সেই চৌদ্দশ সালেই।
অনেকেই বলেন আমাকে, আমি অনেক বেশি ‘জেনারালাইজ’ করি, তাই কি? কতোটুকু বেশি-কম হলে জেনারালাইজ করা যায় কিছু? “কতোটা পথ হাঁটলে পরে পথিক বলা যায়?”
নাস্তিক, তার ওপরে মেয়ে? আবার যা ইচ্ছে তাই ধর্মের বিরুদ্ধে, সংস্কারের বিরুদ্ধে, রীতিনীতির বিরুদ্ধে লিখে বেড়ায়? যে-কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে একথা, ওকথার পরে সেই মেয়ের বাবা, ভাই কিংবা মা, বোনকে এই নিয়ে প্রায়ই হেনস্তা করা হয়।
-মেয়েটা কি আল্লাহ-খোদা মানে না! একদম উচ্ছন্নে গেছে।
-আপনারাতো নামাজ রোজা করেন, ধর্মকর্ম মানেন, মেয়েকে বোঝান না কিছু? মেয়ে কি একদম কন্ট্রোলের বাইরে, শোনে না আপনাদের কথা?
মেয়ের বাবা-মা মরমে মরে যান। এমনিতেই তাঁদের ধর্ম ভীরু দুর্বল মন, মেয়েকে সেভাবে শাসন করেননি এসব নিয়ে, আগে ভেবেছেন, বয়সের দোষ, সময়ে সেরে যাবে, মেয়ের মন ঘুরে যাবে। আজ তার প্রায়শ্চিত্ত করছেন। সামাজিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েন এধরনের আলোচনায়। সুযোগ পেলেই সমাজ নাস্তিকদের পরিবারকে মানসিকভাবে ‘চমৎকার’ করে দেয়। করে খুব আন্তরিক মুখে, সইতেও পারবে না, কইতেও পারবে না। সবই তো আসলে ভালোর জন্যেই বলা হচ্ছে। এসব করা কি ভালো, বলেন? পরকালে কী জবাব দিবেন? হাশরের ময়দানে কোন মুখে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন? তাছাড়া, দেখতেসেন না আজকাল কুপায়ে মেরে ফেলতেসে, দরকার কি এসব কথা বলার বা লেখার?
যেসব পরিবারে সমকামী কিংবা তৃতীয় লিঙ্গ কিংবা বিকলাঙ্গ কোন সন্তান থাকে তাদেরকে সামাজিকভাবে কত চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় সেটা অনুভব করতে পারা যায় এসব আলোচনার মধ্যে দিয়ে। যখন কোপাবে তখন হয়তো দূরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবে, ভিডিও করবে, কাছে এসে আহত মানুষটাকে ধরবে না কিন্তু যখন নিরাপদ জায়গায় থাকবে তখন কেউ তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে ভুলবে না।
সামাজিক ‘চমৎকার’-এর মানসিক চাপ সহ্য করার পর শুরু হয় ঘরোয়াভাবে ‘ইমোশোন্যাল ব্ল্যাকমেইলিং’।
-আমার বাবা-মা, ভাইবোন তোমার জন্যে সমাজে হেনস্তা হবে, সেটা কেন আমি মানবো?
-আমি বিশ্বাস করি না করি সেটা আমার মধ্যে রাখি, আমিতো মানুষকে লিখে জানাতে যাই না। এমনিতে কি জীবনে সমস্যার কমতি আছে? তুমি কেন ইনভাইটেড সমস্যা তৈরি করো?
-আজকে আমরা ছেলেরা যখন ওখানে আড্ডা দিচ্ছিলাম, ওমুক ভাই বললো, ফেসবুকে ভাবির ঐ-লেখাটা পড়লাম। উনি বিশ্বাস করে না করে সেটা ঠিকাছে, কিন্তু অন্যরাতো বিশ্বাস করে, সেটা বুঝে লেখা উচিত। অন্যদের সম্মান করে লেখা উচিত, আপনি কি ভাবিকে এসব নিয়ে কিছুই বলেন না? আমি কোন জবাব দিতে পারি নি, তোমার জন্যে কি আমি জায়গায় জায়গায় ছোট হবো নাকি? বন্ধ করো এসব। লিখতে হলে অন্য কিছু নিয়ে লেখো, এসব স্পর্শকাতর বিষয় বন্ধ। কী এমন মানুষ তুমি, আর কী এমন লেখো যে ঘরেবাইরে এসব নিয়ে এতো আলোচনা সহ্য করতে হবে? আমি একটা নিরিবিলি সংসার চেয়েছি। সারাদিন কাজ করে এসে এতো অশান্তি আমার পোষাবে না।
একজন কী লিখবে, কতোটুকু লিখবে সেটা ঠিক করে দেয় এ-দেশের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র। কোনটা শোভন, কতটুকু শোভন তাও ঠিক করে দেবে পরিচিত সার্কেল। কতোটুকু লিখলে বাবা, মা, শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী, সন্তান হেনস্তা হবে না সেটুকু মেপে বুঝে লিখতে হবে। মেয়েদের কোন বিষয়ে কতোটুকু লেখা মানায় তার একটি অলিখিত মাপকাঠিও আছে। তারপরেও ব্লাসফেমি আইন বা ৫৭ ধারা আলাদা কিছু মনে হয়? ঘরে ঘরে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অদৃশ্য পর্দায় ঢাকা নেই ৫৭ ধারা? একটা মেয়ে সে লিখুক আর নাই লিখুক, প্রতি পদে পদে ঘরে, অফিসে, বাইরের সোশ্যাল গেটটুগেদারে কতো রকমের অলিখিত ৫৭ ধারার মধ্যে দিয়ে যায় তার খবর কেউ কি জানে? সঠিক এবং সমুচিত জবাব জানা থাকলেও, সমাজ, সংসার আর পরিবারের কারণে তাকে সীমাহীন আপোস দিয়েই হাসিমুখে সব সয়ে যেতে হয়। আইনের ৫৭ ধারা বাদ গেলে এই বাংলাদেশ আর কতোটুকু বদলাবে? যেখানে লেখার স্বাধীনতা নেই, বলার স্বাধীনতা নেই, সেখানের কাগুজে স্বাধীনতায় চিনি লিখে আর কতো চেটে খেয়ে ভাববো মিষ্টি খেলাম তবে?
মেয়েরা লিখবে হালকা পাতলা প্রবন্ধ, এই সমাজের নারীদের ওপর ঘটে যাওয়া চিরকালের বৈষম্য নিয়ে। কিংবা ফুল, পাখি, প্রকৃতি নিয়ে কবিতা, মাঝে মাঝে ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ থাকতে পারে সমাজসচেতনতার প্রতীক হিসেবে। গল্প লিখলেও নানাবিধ সাংসারিক ঘটনার মধ্যেই আটকে থাকতে হবে, শারীরিক ঘনিষ্ঠতার অংশটুকু খুব সচেতনভাবে লেখা থেকে দূরে রাখতে হবে। ভালো মেয়েরা এসব নিয়ে লেখে না, লিখতে হয় না কারণ তারা শারীরিক ব্যাপারটা সেভাবে হয়তো জানেই না, কারণ ভালো মেয়েদের শরীর থাকতে নেই। এসব নিয়ে লিখলেই আবার স্বামী, ভাই, মা তাদের মুখ ছোট হবে সমাজে, পরিবারে। কোন কোন বিষয়ে ঠিক কতোটুকু লেখা যাবে সেটা নিক্তি মাপা আছে।
কাউকে বলে কী বোঝানো যায়, মানুষ লেখে না, লেখা ভেতর থেকে আসে। লেখা একটা মানুষের অনুভূতি, চিন্তা, চেতনা, মনন, বিশ্বাস, ধর্মের প্রতিচ্ছবি। দর্জি বাড়ির অর্ডার দিয়ে বানানো জামা কিংবা বেকারিতে অর্ডার দিয়ে বানানো কেক নয়। ওতে কতটুকু ময়দা কিংবা ঘি পরবে সেটা বাইরের কেউ বলে দিতে পারে না। ওটা যে লেখে তার ভিতর থেকেই আসে। লেখক যা ভাবে সেটাই তার লেখাতে আসা স্বাভাবিক, দরকারে বা প্রয়োজনে নয়। বাইরের কারো ক্রমাগত ভাবে কাউকে বলে দেয়া ঠিক নয়, এটা লেখো কিংবা এতোটুকুই লেখো। যারা বলছে তারা ভাবছে, তারা তার শুভাকাঙ্ক্ষী কিন্তু আসলে তারা তার মৌলিক অধিকারে ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করছে, তাকে বিষাদের দিকে, বিপন্নতার দিকে, অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ক্রমাগত।
অনেকেই অনেক বিষয় নিয়ে লেখে, অনেক বিষয়ের মত ‘ধর্ম’ও একটা বিষয়। এ নিয়ে দুচারটি কথা লিখলে সামাজিক ভাবে ক্রমাগত একজন মানুষকে কেন অপদস্থ হয়ে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে? কেন তাকে বার বার বলা হবে, ধর্ম বাদ দিয়ে আর সব কিছু নিয়ে লেখো। বলি, তুমি কে হে লেখার বিষয় নির্বাচন করে দেওয়ার?
সামাজিক ভাবে বয়কট করছোতো ভাল কথা। বলে চলছো-
-নাস্তিক ওদের আবার কী দাওয়াত দিবো?
-আল্লাহ মানে না, রাসুল মানে না তাদের সাথে আবার কী মেলামেশা করবো?
ঠিক আছে, তুমি আমায় নিচ্ছো না, আমিও নেবো না তোমায়। তাই বলে তোমার কোন অধিকারটা আছে যা খুশি তাই বলে আমায় বা আমার আপনজনদের তাচ্ছিল্য দেখানোর?
কথায় কথায় লোকে নেতাদের, রাজনীতির দোষ দেয়। নেতা কিংবা রাজনীতিবিদগণ কি আকাশ থেকে পড়ে না পড়বে? নেতাতো জনগণের মাঝ থেকেই উঠে আসে। জনপ্রতিনিধিরা জনগণের প্রতিচ্ছবি। আমরা যেমন, আমাদের নেতারাও ঠিক তেমন। লতিফ সিদ্দিকী তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হারিয়ে প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের জনগন কেমন। এখন অবশ্য তিনি নিজেকে সাচ্চা মুসলমান প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এমনকি দলের বা মানুষের সুনজরে আসতে তিনি স্বেচ্ছায় সংসদ সদস্যপদও ছাড়লেন সম্প্রতি। গোলাম আযম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এতো অন্যায়ের পরেও ফাঁসিতে না-ঝুলে প্রমাণ করলেন এ-দেশের জনতা কেমন। রাজনীতিবিদদের অযথা দোষারোপ করে কী হবে, তারা আমাদেরই প্রতিচ্ছবি। আমরা নিজেরা না বদলে শুধু আশা করবো তাঁরা বদলাবেন আর নতুন বাংলাদেশ উপহার দেবেন?
কাকেই বা দেবেন তাঁরা সে উপহার! বাংলাদেশের মানুষ কি বদলানো বাংলাদেশ গ্রহণ করার মতো উপযুক্ত? না তাদের সে মানসিকতা তৈরি হয়েছে? কেবল “বদলে দাও, বদলে যাও” বললেই কি এই দেশ বদলায়, বদলাবে? ভেতর থেকে পরিবর্তন না-এলে চাপানো জিনিস কি কখনো টেকে? মুনতাসীর মামুন তো আর কম দুঃখকষ্টে বলেন নি, “বঙ্গবন্ধু একটি অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন”!
৫৭ ধারা সংবিধানে বাতিল হলেই বা কি? ঘরে ঘরে, সমাজের প্রতি স্তরে যে ব্লাসফেমি আইন চালু রয়েছে তার প্রতিবিধান কে করবে? কিভাবে করবে? কবে করবে?
আমরা যদি না-বদলাই মা
কেমনে সকাল হবে?
এ দেশের ঘন কালো এই রাত
আর পোহাবে কবে?
মুছবে কবে এই প্রশ্নবোধক চিহ্ন? বাংলার ঘরে ঘরে চৌকাঠে, জানালার গ্রীলে, ছাঁদের কড়িকাঠে অলিখিত অনুচ্চারিত যে ৫৭ ধারা মিশে আছে সেটা বাতিল হবে কবে? এই প্রশ্নের উত্তরটি না জেনে অনেকেই এই পৃথিবী থেকে চলে গেছেন হয়তো আমি, আমরাও এভাবে, এভাবেই…
২৫/০৮/২০১৫
প্রতিবাদ করলেই রাস্তায় আপনার মগজ ও ছিন্নভিন্ন লাশ পড়ে থাকবে। মধ্যযুগীয় ব্লাসফেমাস ইউরোপের চেয়ে এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র ও ইসলামিস্টরা অনেক বর্বর।
লেখিকার ব্লাসফেমি আইনের সরকারী ও বেসরকারী দিকগুলি নিয়ে আলোচনা খুব ভালো হয়েছে । আসলে সমাজের ভুতটাই সরকারের ঘাড়ে চেপেছে । এ পোড়া দেশের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে রয়েছে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মান্ধতা । এর সুযোগ নিচ্ছে কিছু সার্থন্বেষী ধর্মান্ধ মানুষ ।
ব্লাসফেমি আইন বাতিল করবার জন্য লেখক লেখিকাদের উঠে পড়ে লাগতে হবে । এমন একটা প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে লেখার জন্য লেখিকাকে ধন্যবাদ ।
মৌলবাদী সমাজ এর বেশি কিবা আশা করতে পারি আমরা ?
পুরো লেখাটা পড়ে একেবারে শেষে এসে বলতে হয় আপনি যে অর্থে ‘জেনারালাইজ’ করেন বলে বলা হয়, তা আদতে ইতিবাচক। আইন অনেকক্ষেত্রেই রাষ্ট্রযন্ত্রের রক্ষাকবচ হিশেবে কাজ করে। তাছাড়া এটা তো মানতেই হবে যে, মানবিক মূল্যবোধ ও যুক্তিচেতনা যেমন আইন দিয়ে বন্ধ করা যায়নি, তেমনি আইন দিয়ে তা প্রতিষ্ঠিতও হয়নি কোনো কালে। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো আমাদের কড়িকাঠে চৌকাঠে জমে থাকা যে প্রথাবদ্ধ অচলায়তন,তাকে ডিঙোতে হবে নিজস্ব চিন্তার জোর আর সৎ সাহসের প্রাণিত বাতিঘরের আলোতেই। আর এসব ক্ষেত্রে খুব কম মানুষকেই পাশে পাওয়া যায়। আমাদের সঙ্কটটা ত্রিমুখী- প্রথমত, ঘরে-বাইরে, ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে মুক্তচিন্তার আন্দোলনের পথটিকে প্রসারিত করার ক্ষেত্রে বাধা; দ্বিতীয়ত, আমাদের কূপমণ্ডুক ও অকার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা এবং তৃতীয়ত, সাতান্ন ধারার মতো কালাকানুন প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রের যে প্রতিবন্ধকতা, তাকে ডিঙিয়ে নয়, মাড়িয়ে যাওয়া।
সুতরাং আমি মুক্তমনার ব্যানার হেডিংটাতেই বিশ্বাস করি- “আমরা শোকাহত কিন্তু অপরাজিত”।
ব্লগার ও নাস্তিক এখন সমার্থক শব্দ হয়ে গেছে। আর আপনার মা বাবার যে অবস্থা তাকেও “জেনারালাইজ” করা যায়। এ চিত্র এখন দেখা যায়। ভালো থাকুন। লিখুন ও প্রচার করুন।
আমার তো মনে এটা নিজেকেই করতে হবে। প্রায় সময়ই প্রতিবাদের মূল্য চড়া হয়ে যায়। তবু, তবু প্রতিবাদী বাতিঘরের মত উঁচু হয়ে উজ্জ্বল হয়ে নিজের অবস্থান জানান দেয় পথ-হারাদের জন্য। শুভেচ্ছা।
আমার মনে হয় যারা উদারতা, মানবিকতা বা মানবধর্মে বিশ্বাস করে এবং তথাকথিত ঈশ্বরে যাদের বিন্দুমাত্র আস্থা নেই, তাদের কোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে ভেবেচিন্তে অগ্রসর হউয়া উচিত।
তার সংগী যদি সমমনা বা একই চিন্তা ও আদর্শ ধারণ করে তবে সামনে এগোবার সংগ্রাম বা যুদ্ধে অনেক বেশি দৃঢ় থাকা যায়। মুক্তচিন্তা ধারণ বা প্রকাশ করবার ক্ষেত্রে তখন বলিষ্ঠ ও অবিচল থাকা সহজ হয়ে ওঠে। আর যদি উল্টোটি হয় তবে শেষ বয়সে গিয়ে নামাজী বা হিজাবী হবার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না :)।
সারা বাংলাদেশ যে পরিমান মৌলবাদী কোথায় পাবে কেউ সেরকম মনের মত সঙ্গী?
সেরকম হলে সংগীহীন থাকাই উত্তম নয় কি? অথবা অপেক্ষা করা ! আর এখন ত অনেক মুক্তমনাকেই দেখি অন্তর্জালে বিচরণ করতে। তাদের মধ্যে থেকেও ত কারো সাথে ব্যাটেবলে মিলে যেতে পারে।
সেই, বড় দেরী হয়ে গেলো, উপদেশটা আগে পেলে …………………।