১৯৭০ ও ১৯৮০’র দশক দুটিতে পড়ুয়া বাঙ্গালী কিশোরী ও কিশোর সম্মোহিত হয়েছিল বাংলা অনুবাদে রুশ তথা সোভিয়েত সাহিত্যে। শঙ্কর রায়ের অনুবাদে আর্কাদি গাইদারের চুক আর গেক, রেখা চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদে পাভেল বাঝোভের ম্যালাকাইটের ঝাপি, আলেক্জান্দার বেলায়েভের উভচর মানুষ। এরকম অনেক বই প্রচুর গুণী বাঙালী যত্ন করে, পরিশ্রম করে আমাদের উপহার দিয়েছেন। এর মধ্যে আছেন খালেদ চৌধুরি, হায়াৎ মামুদ, দ্বিজেন শর্মা। অনুবাদ একটি পরিশ্রমের কাজ, অনেক ক্ষেত্রে মূল রচনার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তবু দিনশেষে মনে হয় অনুবাদক তার যথাযোগ্য মর্যাদাটা পান না। অনুবাদ ও ভাষান্তর একটি ধন্যবাদহীন উপেক্ষিত আর্ট।
‘উভচর মানুষ’ বইটি অনুবাদ করেছিলেন ননী ভৌমিক। দ্বিজেন শর্মা তাঁর প্রবন্ধ ‘ননীদা, একদিন’য়ে লিখেছেন যে মস্কোতে ননী ভৌমিকের সঙ্গে আরো অনেক সাহিত্যসেবী এসেছিলেন, কিন্তু তারা সবাই ফিরে গিয়েছিলেন। দ্বিজেনদার ভাষায়, “(তাঁরা) এখানে রক্তকরবীর রাজার উপস্থিতি টের পেয়ে থাকবেন হয়তো। শেষ পর্যন্ত কেবল ননীদাই ধরা দেন তার লৌহআলিঙ্গনে। তাঁকে সে গুঁড়িয়ে দিতে চাইল, কিছুটা সফল হল বৈকি, নইলে এখানে এতদিন কাটিয়ে সৃজনশীল কিছুই বেরোলো না তাঁর কলম থেকে, বিশ্বখ্যাত না হোন, ভারতখ্যাত কথাশিল্পী হওয়ার যার সম্ভাবনা ছিল ষোলআনা।”১
আমাদের ভাগ্যভাল দ্বিজেনদা সেই যক্ষপুরীর মকররাজের আলিঙ্গন এড়াতে পেরেছেন। বরিশাল, সিলেট, ঢাকা, মস্কো, লন্ডনের ভৌগলিক পরাবৃত্তে, পৃথিবীর ইতিহাসের পালাবদলের প্রেক্ষাপটে তিনি তাঁর সহজাত মনীষা ও ভাষাগুণকে হারিয়ে যেতে দেন নি, আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন মুগ্ধতায় মোড়া ঢাকার চাঁপাগাছের বৃত্তান্ত, মস্কোর বনবিথীর মমর্রধ্বনি, প্রকৃতির ক্রান্তিলগ্নের আকুতি, সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ধান, ডারউইনের কাহিনী।
সেই কবে, ১৯৬৫ সনে, ঢাকার তেজকুণিপাড়ায় বসে দ্বিজেনদা তাঁর শ্যামলী নিসর্গ বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন।২ প্রকৃতিকে দোহন করে নয়, বরং প্রকৃতির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেই এক ধরণের বাস্তব্যচৈতন্যের (ecological consciousness) ওপর ভিত্তি করে নগরে প্রকৃতিকে স্থাপন করার ব্যাপারে তিনি জোর দিয়েছেন। পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রুশ দেশের বিভিন্ন নগর-উদ্যানের ‘কাব্যরূপ’ দেখে বিমোহিত হয়েছেন, আমাদেরকে সেটা জানিয়েছেন। প্রকৃতি, নগর ও এই দুই দেশের সীমানায় মানব বিচরণ–এই বিষয়গুলোর ওপর দ্বিজেন শর্মার লেখা আমাকে অভিভূত করে রাখে, কারণ এই ধরণের বিজ্ঞান-ঘেঁষা লেখা তাঁর শব্দচয়ন ও ভাষাশৈলীতে হয়ে ওঠে বিমূর্ত শিল্প। কিন্তু আমার এই লেখাটি তাঁর প্রকৃতি দর্শনের ওপর নয়, বরং আমি তাঁর কাছ থেকে ডারউইন সম্পর্কে কি শিখেছি তার ওপর।
দ্বিজেন শর্মার হাতে চার্লস ডারউইন (১৮০৯ – ১৮৮২) যেন প্রাণপ্রাপ্ত। ‘যুগের শেষ অধিনায়ক’ প্রবন্ধে ডারউইনের অনুসন্ধিৎসা, সংশয়, ও বিবর্তন তত্ত্বে অভ্যাগমনকে ভাষাশৈলীতে গুছিয়ে বলতে তাঁর কোন বেগ পেতে হয় নি। দ্বিজেনদার হাতে ডারউইনের ওপর লেখা সবক’টি প্রবন্ধ বাংলা বিজ্ঞান সাহিত্যের অন্যতম সংযোজন।
১৮৩১ সনের ২৭শে ডিসেম্বর ‘বিগল’ জাহাজ ইংল্যান্ড থেকে তার যাত্রা শুরু করে। সেটির কাজ দক্ষিণ গোলার্ধে জরিপকর্ম। জাহাজে রয়েছেন ২৩ বছরের তরুণ চার্লস ডারউইন, তিনি হলেন জাহাজের অবৈতনিক প্রকৃতিবিজ্ঞানী। ১৮৩২ সালে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় বহু বিলুপ্তি প্রাণীর ফসিল খুঁজে পেল জাহাজের কর্মীরা। জাহাজের কাপ্তান ফিটস রয় এই ব্যাপারে মন্তব্য করলেন জন্তুগুলো নোহর জাহাজে উঠতে পারেনি বলে নাকি মারা গেছে। কিন্তু ডারউইনের চোখে দক্ষিণ আমেরিকার ভূখণ্ডে মহাপ্লাবনের মত কোনো মহাপ্রলয়ের চিহ্ন চোখে পড়ে নি। তিনি নিজেকে প্রশ্ন করেন, “মহাপ্রলয়ের অনুপস্থিতিতে তাহলে কেন কোনো কোনো প্রজাতির নির্বিশেষ বিলুপ্তি ঘটে?”৩
ডারউইন লক্ষ করেন দক্ষিণ আমেরিকার বিলুপ্ত প্রজাতিগুলোর সঙ্গে জীবন্ত বহু প্রাণীর সাদৃশ্য। এই “সাদৃশ্য এতই স্পষ্ট যে, এদের আত্মীয়তার বাস্তবতা অনস্বীকার্য? তবে কি ক্যাপিবেরা ও আর্মেডিলা (বর্তমানের প্রাণী) টেক্সাডন ও মেগাথেরিয়ামের রূপান্তরিত প্রকারভেদ? প্রজাতির পরিবর্তন ব্যাতিরেকে তো এমনটি অসম্ভব। কিন্তু প্রজাতি বদলায় এমন উচ্চারণ ঈশ্বরনিন্দার শামিল। লায়েলের মত যুক্তিনিষ্ঠ বিজ্ঞানীও এক্ষেত্রে রক্ষণশীল।”৩ চার্লস লায়েল কেন যুক্তিনিষ্ঠ বিজ্ঞানী সেটা পরে বলছি।
তাই ডারউইন সংশয়ে ভোগেন, ‘দোদুল্যচিত্ত’ থাকেন। ১৮৩৫ সনের ১৫ই সেপ্টেম্বর বিগল গ্যালাপাগস দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছায়। সেখানে চার্লস “সবচেয়ে বিস্মিত হন তেরো জাতের চড়ুই দেখে–একেক দ্বীপে একেক রকম, কারো ঠোঁট চিকন ছুঁচলো, কারো টিয়াপাখির মত মোটা, মাঝারি রকমফেরও আছে। ঠোঁটের গড়ন ছাড়া তারা অবিকল একই রকম, যেন কেবল গ্যালাপগাসের নিরিখেই তৈরি।”৩
ডারউইন এরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে, পাখিগুলি নতুন পরিবেশে খাবার সংগ্রহের দক্ষতা বাড়াতেই এইসব আকৃতি পেয়েছে। প্রজাতির রূপান্তর সম্ভব। এরপর ইংল্যান্ডে ফিরে এই নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করে ধীরে ধীরে তাঁর প্রত্যয় জন্মায়: “বংশ পরম্পরায় হাজার হাজার বছর ধরে এইসব পরিবৃত্তি (variation) সঞ্চয়ের মধ্যে দিয়েই হয়তো পুরনো প্রজাতি থেকে নতুন প্রজাতি জন্মায়।”৩
ইতিমধ্যে চার্লস লায়েল (১৭৯৭ -১৮৭৫) তাঁর বন্ধু হয়েছেন। লায়েলের Principles of Geology একটি যুগান্তকারী বই যা কিনা ডারউইনের মনোজগতে বিপ্লব এনেছিল। লায়েল বুঝতে পেরেছিলেন পৃথিবীর বয়েস কয়েক হাজার বছর নয়, বরং শত শত মিলিয়ন বছর। “লায়েল ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তনের ব্যাপারে নোহর মহাপ্লাবন জাতীয় মহাপ্রলয়কে ততটা আমল না দিয়ে ব্যাত্যা, সমুদ্রতরঙ্গ, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা ইত্যাকার প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।”৩ সেই লায়েলই নাকি ডারউইনকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন এই বলে, “এইসব পরিবৃত্তি, হোক ছোট কিংবা বড়, প্রকৃতিতে প্রশ্রয় পায় না। মাতৃপ্রজাতি প্রকৃতির সঙ্গে অভিযোজিত বিধায় ঐসব পরিবৃত্তির সন্তানরা অবশ্যই নিকৃষ্ট হবে এবং জীবন সংগ্রামে শৈশবেই মারা যাবে।”৩
ডারউইনের প্রথমে আশাহত হলেন, পরে ভাবলেন লায়েল নিজেই তাঁর ভূতত্ত্বে দেখিয়েছেন পৃথিবীর পরিবেশ বদলায়। তাই “আজ যে প্রজাতি আদর্শভাবে অভিযোজিত, এক লক্ষ বছর পর সেই পরিবেশ বদলালে সে আর আদর্শভাবে অভিযোজিত থাকছে কই? হতে পারে পরিবৃত্তিধর সন্তানদের কেউ কেউ তখন নিজেদের পৃথক কিছু বৈশিষ্ট্যের দৌলতে মাতৃপ্রজাতির তুলনায় অপেক্ষাকৃত অধিকতর অভিযোজিত হবে।”৩ মানুষ তো বহুজাতের ফসল, ফল ও গৃহপালিত পশুপাখি হাজার হাজার বছর ধরে সৃষ্টি করে আসছে।
এর মধ্যেই ১৮৩৮ সনে ডারউইনের হাতে এল টমাস ম্যালথাসের An Essay on the Principle of Population। ম্যালথাস মানব জনসংখ্যাকে সীমিত রাখার ব্যাপারে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারি, শিশুমৃত্যু ইত্যাদির ভূমিকা সম্পর্কে আলোকপাত করেন। “বইটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মনে হলো, এই পরিস্থিতিতেই অনুকূল পরিবৃত্তিগুলি সংরক্ষিত হবে এবং অনুপযোগীরা লোপ পাবে।”৩
কিন্তু তাঁর তত্ত্বটিকে বই আকারে বের করতে ডারউইন গড়িমসি করেন এবং শুধুমাত্র রাসেল ওয়ালেস নামে আর একজন ইংরেজ নিসর্গী যখন একই ধরণের বিবর্তন তত্ত্বে উপনীত হলেন তখন তড়িঘড়ি করে ১৮৫৯ সনে The Origin of Species বের করলেন। মানব সমাজে এই বইটির প্রভাব অনন্য।
ডারউইন-উত্তর কয়েকটি সমস্যার কথা দ্বিজেন শর্মা “ডেভিলস চ্যাপলিন”৪ প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন। ডারউইন তত্ত্বে শেষাবধি “পরিবৃত্তি হলো বিবর্তনের কাঁচামাল, ‘অস্তিত্বের সংগ্রাম’ হলো বিবর্তনের চালিকাশক্তি ও শেষ বিচারে প্রকৃতি হলো প্রধান নির্বাচক।”৩
কিন্তু অন্ধ প্রাকৃতিক নির্বাচনকে শুধুমাত্র রক্ষণশীল ধর্মবিশ্বাসীরাই নাকচ করতে চেয়েছেন এমন নয়, অনেক উদারপন্থীরাও ভেবেছিলেন প্রাকৃতিক নির্বাচন “নিষ্ঠুর, নির্মুখ, মৃত্যুকীর্ণ। ….তাই ফ্যাবিয়ান সোসালিস্ট ও নাস্তিক বারনার্ড শ অপেক্ষাকৃত কম নিষ্ঠুর এবং অধিকতর ইচ্ছাশক্তিনির্ভর লামার্কবাদকে গ্রহণযোগ্য ভেবেছেন।”৪ ফরাসী নিসর্গী জ্যাঁ-বাপতিস্ত লামার্ক (১৭৪৪-১৮২৯) ভেবেছিলেন জীবজগৎ পরিবেশের প্রভাবে পরিবর্তিত হয় এবং এই পরিবর্তনগুলি পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। লামার্কের ধারণাকে বর্তমান বিজ্ঞান ভালভাবেই নাকচ করেছে, যদিও এপিজেনেটিক্স ইত্যাদি কিছু গবেষণার মাঝে নব্য-লামার্কীয় কিছু ছায়া দেখা যায়।
ডারউইনবাদ থেকে এল সোশ্যাল ডারউইনিজম বা ডারউইনবাদী সমাজতত্ত্ব। এই তত্ত্বের প্রবক্তরা মনে করতেন “ডারউইনের তত্ত্ব মানব সমাজে প্রযোজ্য…মানবসমাজে অস্তিত্বের সংগ্রাম চলছে এবং যোগ্যতমরাই উদ্বর্তিত হচ্ছে ব্যক্তিপর্যায়ে, জাতিপর্যায়ে।”৪ এর একটি উপপাদ্য হল সবল দ্বারা দুর্বলের নিপীড়ন বৈধ। কিন্তু মানুষের বুদ্ধিমত্তা বিকশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে সে প্রাকৃতিক নির্বাচন থেকে অনেকাংশেই সরে এসেছে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মানমন্দিরগুলোই তার প্রমাণ। তাই সোশ্যাল ডারউইনবাদের দিন শেষ হয়ে আসছে।
এই লেখাটি শেষ করব দ্বিজেনদার একটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে: “আমরা পঞ্চাশের দশকের শেষার্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে বিবর্তন পড়েছি। শিক্ষকেরা ছিলেন ধর্মবিশ্বাসী, বিবর্তনবাদ সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য কোনোদিন আমি শুনিনি। তারপর অনেক বছর কলেজে বিবর্তনবাদ পড়িয়েছি, কোনো সমস্যা হয় নি। দশককাল হলো উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যক্রম থেকে বিষয়টি তুলে দিয়ে জীবপ্রযুক্তি পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু তার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাই নি।…অবিজ্ঞানের কাছে নতিস্বীকার কিংবা জ্ঞান এড়িয়ে প্রয়োগ শিক্ষণ আখেরে গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর হবে।”৪
দ্বিজেন শর্মার এই সতর্কবাণী এখন পৃথিবীর অনেক দেশের জন্যই প্রযোজ্য। অবিজ্ঞানের সাথে সমঝোতা করে ডারউইনকে হয়তো ক্ষণকালের জন্য এড়ানো যাবে, কিন্তু সেটা ভবিষ্যৎ সমাজকে পশ্চাৎমুখীই করে রাখবে।
[ব্যক্তিগতভাবে আমার সৌভাগ্য যে দ্বিজেনদা ও তাঁর স্ত্রী দেবীদি দুজনেরই স্নেহধন্য হয়েছি, এই লেখাটি তাঁদের দুজনকেই মনে করে রচিত দ্বিজেনদার ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে]
১. দ্বিজেন শর্মা, ‘ননীদা, একদিন’, নির্বাচিত প্রবন্ধ, বেঙ্গল পাবলিকেশনস, ঢাকা, ২০১৩
২. দ্বিজেন শর্মা, শ্যামলী নিসর্গ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮০
৩. দ্বিজেন শর্মা, ‘যুগের শেষ অধিনায়ক’, নির্বাচিত প্রবন্ধ, বেঙ্গল পাবলিকেশনস, ঢাকা, ২০১৩
৪. দ্বিজেন শর্মা, ‘ডেভিলস চ্যাপলিন’, নির্বাচিত প্রবন্ধ, বেঙ্গল পাবলিকেশনস, ঢাকা, ২০১৩
…অবিজ্ঞানের কাছে নতিস্বীকার কিংবা জ্ঞান এড়িয়ে প্রয়োগ শিক্ষণ আখেরে গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর হবে।”৪
দ্বিজেন শর্মার এই সতর্কবাণী এখন পৃথিবীর অনেক দেশের জন্যই প্রযোজ্য। অবিজ্ঞানের সাথে সমঝোতা করে ডারউইনকে হয়তো ক্ষণকালের জন্য এড়ানো যাবে, কিন্তু সেটা ভবিষ্যৎ সমাজকে পশ্চাৎমুখীই করে রাখবে।
বুয়েট এর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা পর্যন্ত ডারউইনের মতবাদ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বিভ্রান্ত করেন।
না, এই ওয়েবসাইটির কথা জানা ছিল না!! আমার স্ত্রী আর নিজের পক্ষ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!!
লেখককে ধন্যবাদ শৈশব-কৈশোরে পড়া অনুবাদ করা অনেক ভালবাসার বইগুলোর কথা আবার মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। আমি প্রথম যে গল্পের বই কারও সাহায্য ছাড়াই পড়েছিলাম সেটিও ছিল রুশ শিশুসাহিত্যের বাংলা অনুবাদ, নাম ‘গমের শীষ’। এখন যারা চল্লিশোর্ধ তাদের অনেকের মতো আমারও বাংলায় অনুবাদ করা রুশ বই-র এক বিশাল সংগ্রহ ছিল; বারবার ঠিকানা পরিবর্তন করতে করতে কোথায় যে হারালো অমূল্য সেই সব বই।
আমাদের নিসর্গবিদ দ্বীজেন শর্মা শতবর্ষী হোন; তাঁর জন্য অশেষ ভালবাসা।
শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন শর্মার নামের অনিচ্ছাকৃত ভুল বানানের জন্য দু;খিত।
কথাগুলির জন্য অনেক ধন্যবাদ। সেই, আমাদের সংগ্রহও কালের টানা-পোড়েনে হারিয়েছে। রুশ অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে আগে বোধহয় কথাবার্াতা হয়েছে এই ফোরামে, আমার ঠিক খেয়াল নেই। নিচের ওয়েবসাইটটিতে কিছু অনুবাদ আছে, আপনি হয়তো জানেন। ভাল থাকবেন।
http://sovietbooksinbengali.blogspot.com/
আমারও দ্বিজেনদার প্রকৃতিসমগ্র বইতে ডারইউনবাদের লেখাটা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। দ্বিজেনদার এই ৮৫তম জন্মদিনে আমার তার সাথে দেখা করার সৌভাগ্যও হয়েছে। ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখা দেয়ার জন্য।
কথাগুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রকৃতির ব্যাপারে আপনি কিরকম সংবেদী তা তো আমি জানি। সব ধরনের সৌন্দর্য আমাদের জীবনগুলিতে বর্তমান থাকুক এই আপাতত আশা।
বিজ্ঞান নিয়ে সহজ করে দিপেন’দা আবার যে লিখছেন সেজন্য অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনি এখানটায় স্বল্প বিরতিতে নিয়মিত লিখবেন।
আসলেই অনুবাদ যারা করেন তাদেরকে কেউ মনেই রাখতে চায় না। কি দুঃখজনক। অথচ ছোটবেলায় অনুবাদই বইগুলো পড়েই বইতে নাক ডোবানো শিখেছি। হায়াৎ মামুদ ভাই যেখানে থাকেন সেখান থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ, এক সময়ের খুব ভালো লাইব্রেরী সীমান্ত গ্রন্থাগার। আগে এত ভালো ভালো বই ছিলো সেখানে যে দুরের নেইবারহুড থেকেও অনেক মানুষ আসতো বই পড়তে আর বই ঘরে নিয়ে যেতে। আমার মা’ও পড়তেন সেখানকার বই। কিন্তু যতবার সাইক্লোনে টিনের চাল উড়ে যেতো ততবারই বইগুলোওর জরুরী আশ্রয় নিতে হত বিভিন্ন বাড়িতে। বই হারাতো বিস্তর। যাক সে কথা।
লেখার শুরুটা পড়ে নস্টালজিক হয়ে গেলাম। রুশ দেশের উপকথা, গাড় সবুজ মলাটের ম্যালাকাইটের ঝাঁপি, কালচে ছাই রঙের মলাটের গ্রহান্তরের আগন্তক, হৈটি টৈটি, চুক গিকের গল্প, আর সেই মন্ত্র ”সিভকা বুর্কা জাদুকা লেড়কা চেকনাই ঘোড়া … সামনে এসে দাঁড়া …” , চাষীর ছেলে ইভান আর আজব দানব, পিলিপকা-খোকন, আনাইৎ, গোল রুটি, মণির পাহাড়, তীরন্দাজ ও জার্কিন খাঁ আরো কত গল্প। আহা সেই ছেলেবেলা আবার যদি পেতাম।
কাজী রহমানকে বিস্তারিত মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ। রুশ সাহিত্য থেকে যারা অনুবাদ করেছেন তাঁরা নিজেদের একটা ধারা তৈরি করেছিলেন, সেইজন্যই বোধহয় আমরা তাতে রোমাঞ্চিত হতাম। আপনি লিখেছেন, আহা সেই ছেলেবেলা আবার যদি পেতাম। সত্যি। কিন্তু একইসাথে তাঁরা বোধহয় তাঁদের মৌলিক প্রতিভাকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, সেইজন্য দ্বিজেন শর্মা ননী ভৌমিক সম্পর্কে আক্ষেপ করেছেন, ননীদা রক্তকরবীর মকররাজের লৌহ-আলিঙ্গনে পিষে গেলেন। রুশ দেশের নরম অথচ কঠিন তুষার ননী ভৌমিকের মত মৌলিক লেখককে গুঁড়িয়ে দিল। সোভিয়েত সিস্টেম ছিল এমনই। দ্বিজেনদা অন্ততঃ তার থেকে বের হতে পেরেছেন। ভাল থাকবেন, আপনার কথা সব সময় অনুপ্রেরণা জোগায়।
পুনঃ কয়েক বছর আগে সবুজ মলাটের ম্যালাকাইটের ঝাঁপি বইটি আমার এক তরুণ বন্ধু আমাকে উপহার দেন। আপনার মত আমিও ছোটবেলায় বইটির প্রচ্ছদে সম্মোহিত থাকতাম।
সত্যি কথাই দিপেন’দা, অনেকবার শুনেছি রুশ দেশের সেই রক্তকরবী মকররাজের লৌহ-আলিঙ্গনের কথা। এরোফ্লোটে চেপে অনেক অসামান্য প্রতিভা সেখানে গিয়েছেন, জমেছেন, মজেছেন এবং তারপর একসময় আবার অনেকেই সেখান থেকে বেরিয়েও এসেছেন আরো অনেক অনেক বিশাল জগৎ জয় করতে। আপনি খুব ভালোই বোঝেন সেটা 🙂
মূল লেখাটির বাইরে এসে বকর বকর করবার জন্য দুঃখিত। তারপরও বলি, আমি কিন্তু এখনো দারুন কাগজের ওইসব চমৎকার মলাটের ঝকঝকে রঙিন ছাপা বইয়ের জন্য দু পাঁচশো মাইল ড্রাইভ করতে রাজি আছি 🙂