কাল বিকেল থেকে মনটা খারাপ। কেন, আমি জানিনা, আজ অফিসে কাজ করতে পারছিলাম না। কেউ একজন জিজ্ঞেস করল আমার শরীর খারাপ কিনা; কিন্তু না । আমার তো সচারচার শরীর খারাপ হয়না। তবে আমাকে এত বিমর্ষ লাগছে কেন? আমি কোন জবাব দিতে পারিনি। আমার কোন জবাব সত্যিই ছিল না। আমার সত্যিই কী হয়েছিল আমিও জানিনা।

আমার কেবলই মনে হচ্ছিল আমি কী মানুষ ? যদি মানুষ হই তবে তো একটা মন থাকার কথা, যদি একটা মন থাকে তবে আমার অনুভূতিও থাকার কথা। কিন্তু কেন জানিনা নিজেকে কেবল অনুভূতিশুণ্য মনে হচ্ছিল আমার । আমি কী প্রতিনিধিত্ব করি ওই সমাজকে, ওই দেশকে? নিজের মনেই নিজে নিজে ভাবছিলাম কোথায় যাচ্ছি আমরা, কী ভীষণ অস্থির এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। যেন কারো কিচ্ছু করার নেই, কিম্বা কারো কোন ভ্রূক্ষেপ নেই এই যে হচ্ছে, যা ঘটছে চারিদিকে। কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, কেন এমন হচ্ছে? এর কারণ কী? শুধু কি নাস্তিকমুক্ত দেশ চাই বলে একদল নরপিশাচ ক্ষেপেছে? শুধু কী পুরুষের আধিপত্য প্রমাণের জন্য যত্রতত্র নারীধর্ষণ ? শুধু কী ক্ষমতার দম্ভ প্রমাণের জন্য কারণে-অকারণে ভয়াবহ হারে বেড়েছে শিশু নির্যাতন? কোন বিশেষ একটি বিষয়ে নয়, এ যেন অলিম্পিক গেইম, এই গেইমে অনেক ইভেন্ট, প্রতিটি ইভেন্ট এ অংশ নিয়ে আমাদের জিততে হবে, সোনা, রূপা কিম্বা ব্রঞ্চ ! জাতী হিসেবে নানাকারণে আমরা শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার; বিশ্বের দরবারে আমরা আমাদের কৃতিত্ব নিয়ে বড়াই করি। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন, আমাদের মহান স্বাধীনতা, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা, এমনকি আমাদের ক্রিকেট টীম ও সেই কৃতিত্বের দাবিদার। কিন্তু এতকিছু গৌরব ঢাকা পড়ে যায় আমাদের নোংরামি, কদাকার, কুৎসিত চেহারার অন্তরালে। আমাদের ক্ষমতা দখলের যে রাজনীতি, আমাদের বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি, আইনের অপব্যবহার কিম্বা সুবিধার্থে ব্যবহার যেভাবে দিন দিন আমাদের সমাজটাকে গ্রাস করেছে তার হাত থেকে সহসা কোন মুক্তির পথ দেখছি না। আমাদের নেতা-নেত্রীবৃন্দ আদৌ সে বিষয়ে কোনোরূপ চিন্তিত বলেও মনে হচ্ছেনা। অধিক জনসংখ্যার, দারিদ্র্য পীড়িত একটি দেশে নানবিধ সমস্যা নিয়ে মানুষ লড়াই করে বেঁচে আছে । যে যেভাবে পেরেছে নিজের পেটের ধান্দা নিজেই করছে। মানুষ অন্ততঃ না খেয়ে মারা যাবার অবস্থায় নেই আজ। মোটা কাপড়ে, মোটা ভাতে ছেলেপুলে নিয়ে জীবনটা পাড় করতে পারলেই খুশি তারা। এই নীরিহ গোবেচারা মানুষগুলো সরকারের কাছে কী চায়? রাষ্ট্রের কাছে কী চায়? কিম্বা সরকার তাদেরকে কী দিচ্ছে? কোন কারণে এখনও এত নির্যাতন এত অন্যায়- অবিচার, এতো অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরেও কেন দেশের মানুষ নির্বিকার থাকবে? কেন মেনে নেবে সবাই মুখ বুজে এতোটা অবিচার? শুধুমাত্র ক্ষমতার দলাদলি, রাজনৈতিক কূটকচালে এভাবে একের পর এক তাজা প্রাণ ঝরে যাবে অকালে? শুধুমাত্র ফালতু বাদ বিতণ্ডার তোরে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে এত রক্তের দাগ? শুধুমাত্র ধর্মীয় হিপনোটিজমে মেতে সব খুনীকে আড়ালে রেখে দেশ এগিয়ে যাবে? প্রশাসন কাকে ভয় পান? আল্লাহ্‌র ভয় নাকি গদি হারানোর ভয়? যদি ভোটের রাজনীতি হয়ে থাকে তবে সাধু সাবধান! এখনো সময় আছে, পাবলিক ক্ষেপলে বিপদ বড় !
আমি জানিনা, কে অভিজিৎ, অনন্ত, বাবু, কে নিলয়, কী তাদের পরিচয়; কিম্বা রাজন, রাকিবের এবং মায়ের গর্ভে থাকা সন্তানটির কী অপরাধ ছিল? আমি কেবল জানতে চাই- কেন এই বরবরতা? কেন এই হিংস্রতা? কেন এই রক্তের হোলি খেলার নেশায় মেতেছে নরখাদকেরা? কীসের দম্ভে এতটা জঘন্য অপরাধ করেও নির্বিচারে ঘুরে বেড়াবে জঙ্গীরা? কী অধিকার আছে ওই খুনিদের হত্যার মত নির্মম কাজ করেও প্রাকশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ানোর ? আমি জানতে চাই মানবাধিকার শব্দের মানে কী? জানতে চাই বাক স্বাধীনতা বলতে আমাদের প্রশাসন, আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র কী বোঝেন? কিম্বা আদতে কিছুই বোঝেন কিনা। আমি জানতে চাই গণতন্ত্র বলতে ওনারা কী বোঝেন? আমি শুধু জানতে চাই কে নেবে এই সব মুহুর্মুহু হত্যার দায়? আমি শুধু বলতে চাই আমার মাকে তোমরা বাঁচাও । পচা,নোংরা, পুতিগন্ধময় আবর্জনায় নিমজ্জিত হয়ে গেছে দেশটা । কে আছো বাহে, বাঁচান রে…………।।
এসো সবাই মিলে সশব্দে চিৎকার করি, হুংকার দেই আরও অনেক উচ্চস্বরে……। যে চিৎকার শুনতে পাবে অভিজিৎরা,শুনতে পাবে রাজনরা, ওরা একবার অন্তত জানুক, আমরা এখনও বেঁচে আছি…, এখনও হুংকার দিতে পারি……, রাকিব, অভিজিৎ, বাবু, অনন্ত, নিলয়ের জন্য। চাপাতির কোপে কতগুলো স্বর বন্ধ করবে ওরা? এখনো মনুষ্য হৃদয়ের শেষ কণাটি উবে যায়নি এই আমাদের দেহ থেকে…..। আমি খুব অসহায় বোধ করি, একাকী বোধ হয় আমার, আমি অস্থিরতায় ভুগি। আমি ঘুমাতে পারিনা, সারারাত আমার দুচোখ জেগে থাকে। দুঃস্বপ্নের ভেতরে জেগে জেগে সোনার বাংলায় ফিরে যাবার দুরাশা করে সে, আবার তলিয়ে যায় দুঃস্বপ্নের ঘুমে।