আজ (১৬/০৭/২০১৫) বৃহস্পতিবার সকাল ১০.৪৫-এ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের ফোরকান মল্লিকের ফাঁসির রায় দেয়, যা একাত্তরের মানবতাবিরোধী ২২ তম অপরাধীর রায়।
টাইমলাইন-
একাত্তরের আগে:
রাজাকার ফোরকান মল্লিকের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার ছইলাবুনিয়া গ্রামে। বাবা সাদের মল্লিক ও মা সোনভান বিবি। সে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে।
১৯৭১:
একাত্তরে ফোরকান মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং মির্জাগঞ্জ থানার কাকড়াবুনিয়া, দেউলী, সুবিদখালী, কলাগাছিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে যুদ্ধাপরাধ ঘটায়।
স্বাধীন দেশে:
দেশ স্বাধীন হবার পর রাজাকার ফোরকান মল্লিক আত্মগোপনে চলে যায়। ৭৫’এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে ফোরকান রাজাকার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়।
বিচার ও রায়:
২১ জুলাই, ২০০৯:
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানায় আবদুল হামিদ নামের এক ব্যক্তি ফোরকানের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার মামলা করেন।
২৫ জুন, ২০১৪:
বরিশালের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
৩ জুলাই, ২০১৪:
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
২ ডিসেম্বর, ২০১৪:
ট্রাইবুনাল রাজাকান ফোরকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়।
১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪:
রাজাকার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে একাত্তরে ০৮ জনকে হত্যা, ০৪ জনকে ধর্ষণ, ০৩ জনকে ধর্মান্তরে বাধ্য করা ও ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরে বাধ্য করা এবং ৬৪টি বসতবাড়ি-দোকানে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ০৫ টি অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযোগগুলো হলো-
০১.
একাত্তরের আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে (২৭ জুন থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে) কোনো একদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী রাজাকার সদস্যরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোটে করে যেয়ে মির্জাগঞ্জ থানাধীন কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মো. কাঞ্চন আলী হাওলাদার, হাজী আবুল হাশেম হাওলাদারসহ মোট সাতজনকে আটক, নির্যাতন এবং বাড়িঘর লুটপাট করে।
তাদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় করে এক মাস আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
০২.
একাত্তরের আষাঢ় মাসের শেষদিকে (২ জুলাই থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে) ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গীরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোট ও স্পিডবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন দেউলি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হায়দারসহ মোট ছয়জনের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
০৩.
১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও তার সহযোগীরা পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী গ্রামে যেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদবাহক কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন খলিফা, মির্জাগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল কাদের জমাদ্দার, সুবিদখালী বাজারের ডাক্তার দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও তার স্ত্রী বিভা রানীকে আটক করে।
ওই গ্রামে তারা হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিতকরণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে।
০৪.
একাত্তরের ভাদ্র মাসের ৫ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত (২২ থেকে ২৫ আগস্ট) ফোরকান মল্লিক ও তার সহযোগীরা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে কাঁকড়াবুনিয়া বাজারে নিয়ে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে।।
০৫.
একাত্তরের ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি (২৯ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর) সময়ে একদিন ভোরে ফোরকান মল্লিক ও সহযোগীরা মির্জাগঞ্জ থানাধীন দক্ষিণ কলাগাছিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হোসেন মৃধার বাড়িতে লুটপাট ও নির্যাতন চালায়।
১৯ জানুয়ারি, ২০১৫:
ট্রাইবুনাল-২ বিচার কার্যক্রম এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করে। মোট ১৪ জন ফোরকান রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় ও পক্ষে সাফাই গায় ০৪ জন।
আসামিপক্ষের উকিল ছিল আবদুস সালাম খান ও প্রসিকিউটর ছিলেন মোখলেসুর রহমান বাদল।
১৪ জুন, ২০১৫:
রাজাকার ফোরকানের মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনাল-২ রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রাখে।
১৪ জুলাই, ২০১৫:
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ ১৬ জুলাই রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানান।
১৬ জুলাই, ২০১৫:
রাজাকার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে আনীত ৫টি অভিযোগের মধ্যে ৩ ও ৫ নং অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, ৪ নং অভিযোগের জন্য আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১ ও ২ নং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে সেসব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক, যুগান্তর, বিডিনিউজ২৪
ছবি: ইত্তেফাক
রাজাকার ফরমান মল্লিক ৭১সালের মুক্তি যুদ্ধের সময় রাজাকার হিসাবে মুক্তি যুদ্ধের স্ম্রথক বা অনুগামীদের উপর পাক সেনাবাহিনীর সাহায্যে বা সহায়তায় রাজাকার বাহিনী দিয়ে যে অমানুষিক অত্যাচার, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ, লুটপাট করেছিল, তার জন্য বিচারক উপযুক্ত দন্ডের রায় দিয়েছেন। তাতে মানব ধর্ম রক্ষা হল। এই সমস্ত রাজাকারের মৃত্যু দন্ড সঠিক সিদ্ধান্ত।
বিচার হয়ে যাওয়া সব রাজাকারের এমন টাইমলাইন লিখুন।
“মানুষের অগ্রগতিকে রোধ করবার জন্যে এই ইজম(মজহব)বাদীরা ভাবপ্রবণতা কাজে লাগায়,মানুষের মনে হীনম্মন্যতা জাগিয়ে দিয়ে(তাদের) কায়েমী স্বার্থকে জীইয়ে রাখতে চায়।এই ধরণের প্রচার করতে গিয়ে কেউ বা বলে-এই সকল সামাজিক,অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক বিধি-ব্যবস্থা স্বয়ং ঈশ্বরের সৃষ্ট।সুতরাং সর্বযুগে সর্বকালে সমান শ্রদ্ধার সঙ্গেই একে মেনে চলতে হবে।যে মানবে না সে ঈশ্বরের রোষ-বহ্নিতে দগ্ধ হবে অথবা অনন্ত নরক যন্ত্রনা ভোগ করবে।বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্রের প্রামাণ্যতা অথবা যৌক্তিকতা সম্বন্ধে যাতে মানুষ বিচার বিবেচনা করতে না পায় সজন্যে তারা ঘোষনা করে-‘অমুক শাস্ত্র অপৌরুষেয়(অর্থাত মানবসৃষ্ট নয়)।সুতরাং তার উপরে আর কারো কথা বলবার জো নেই।দর্শনশাস্ত্র যদি অমুক শাস্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে সেই শাস্ত্রের অনুগামীরা ‘নাস্তিক’ বলে ঘোষিত হবে।…তারা বুঝেও বুঝতে চায় না যে দেশ কাল-পাত্রাশ্রয়ী আপেক্ষিক তত্ত্ব সমূহের সম্বন্ধে যেকোন উক্তি,তা সে যার উক্তিই হোক না কেন-পরিবেশ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে(তাদের)মূল্য খোয়াতে বাধ্য।তোমরা নিশ্চয় বুঝছ যে-কোনো শাস্ত্রকেই ঈশ্বরের বাণী বলে প্রচার করা যায় না।”-শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী