প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি জানাচ্ছেন যে যুক্তি পত্রিকার সম্পাদক এবং আমাদের মুক্তমনার লেখক অনন্ত বিজয় দাশ কে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। অনন্ত মঙ্গলবার সকালে তাঁর সুবিদ বাজার এলাকার বাসা থেকে বের হওয়ার পর এই ঘটনা ঘটে। পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করা হলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
আমরা অভিজিৎ রায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শোক সামলে উঠতে পারি নি, অথচ এরই মধ্যে ব্লগার বাবুর পর আমাদের আরও একজনকে একইভাবে কেড়ে নেয়া হল। ঘটনাগুলোর সাদৃশ্য নির্দেশ করে যে এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এমন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী যে এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনের শক্তি একই। একথাও বলা যায় যে, এই নির্মমতা এখানেই থেমে থাকবে না; অচিরেই এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি যে আমরা আজ পর্যন্ত দেশে মুক্তচিন্তার ধারক লেখক/ব্লগারদের উপর হামলা বা তাদের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কোন সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি দেখিনি। যদিও দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি ঘটেছে, তারপরেও একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রেক্ষাপটে লেখক/ব্লগারদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডগুলো বিশেষ গুরুত্ব পাওয়ার দাবী রাখে।
আঁধার রাতে ফোটা অভিজিৎ নামের জ্বলজ্বলে নক্ষত্রটির পাশে আরেকটি নক্ষত্র হয়ে অনন্ত অমর হয়ে থাকবেন। ঘৃণা আর ধ্বংসের পূজারীদের সাধ্য নেই তাঁদের আলো কেড়ে নেয়।
হায়েনা রক্তের স্বাদ পেয়ে গেছে
কলম চলুক।
আর কত জন কে মারতে পারবে কট্টরপন্থীরা,কত জন লেখকএর প্রান নেবে। একদিন না একদিন এর শেষ তো হবেই।
ওরা কট্টরপন্থীরা সব নপুংসক, ওরা অমানব, ওরা শুভ বুদ্ধিহীন, ওরা কৃত্তিম, ওরা জানোয়ার, ওদের কোন রকম সাধারণ বিচার ক্ষমতাও নেই।
তারা কেউ মরে নাই। আমাদের চেতনায় সমুজ্জ্বল।
মৃত্যুর দু’ঘন্টা আগেও অনন্ত যা লিখে গেছেন তাঁর প্রতি ছত্রে দেশপ্রেম, সমাজ সচেতনতা, ন্যায়জ্ঞান আর প্রজ্ঞাই ফুটে উঠেছে। যারা বারবার আমাদের সৎ, সাহসী আর মেধাবী মানুষগুলোকে কাপুরুষের মত হত্যা করে উল্লাসে মেতে উঠছে তারা তো ঠিকই মুক্তভাবে এই পৃথিবীর আলো, বাতাস ভোগ করছে, আবারও আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অথচ দেশ, পৃথিবী আর মানুষের জন্য যাদের এতো ভালবাসা, তাদের এভাবে চলে যেতে হবে কেন? এর শেষ কোথায়? যারা দেশের ভার নিয়েছেন, তারা এই চরম অন্যায় প্রতিরোধে কিছু তো করুন; আর নীরব থেকে সময়ক্ষেপণ করবেন না প্লীজ!
ছুরি দিয়ে মানুষ ভাজ্ঙ্গতে পারো কলমটাকে কী পারবে
যুকতিটাকে যতই ভেজাও লাল নীল রকতে
চিনতার তো মরণ নেই তাকে কীভাবে মারবে
ক্ষতবিক্ষত শরীরটা হয়তো নড়বেনা
আহত হাতেদের ব্যথা কেউ জানবেনা
আগ্রাসী নিসতবধতার মাঝে
তবু সাদা কালো অক্ষরগুলোর চিৎকার
যারা কখোনও মানতে শেখেনি হার
বার বার ভাঙ্গবে জমে থাকা নীরবতাটাকে
সমাজ যদি এখন জাগতে চায়
বহুদিনের পর সূৱযদয় দেখতে চায়
রকতের চাদর দিয়ে তাকে কী ঢেকে রাখা সমভব
আজ পূরাতন নূতনকে করে সাথী
জালীয়ে হাজার হাজার মুকতির বাতি
পুরোনো ভাঙ্গাচোরা রাসতাটায়
আবার করবে কলরব
ছুরি দিয়ে হয়তো মানুষ ভাঙ্গতে পারো
রাসতাটাকে কী পারবে
ভেঙ্গে যাওয়া রাসতা বারবার ভাঙ্গলেও
ঠিক নিজের পথ খুজে পাবে
গতকালও যার লেখায় লাইক দিয়েছি আজ তাকে আর কোথাও খুঁজে পাব না।
আমার ধারনা আওয়ামী লীগ সরকার অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখন বেশী জনপ্রিয়। কেন? কারন, আগে যারা তাদের সমর্থন করতো তারাতো আছেই, এখন মনে হয় ঐ খুনিরাও চায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক। বিচারহীনতার সংস্কৃতিটা তাদের খুব কাজে লাগছে যে।
এভাবে আর কত হত্যা দেখতে হবে?!!
বিভিন্ন বক্তা লেখক-ব্লগারদের হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে বার বার বলে আসছে যে, আজ থেকে ২০ বছর আগে পুলিশ দেশের যে কোন স্থানে সংঘটিত অপরাধের আপরাধীকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারে সক্ষম ছিল। এটা একজন অবসরপ্রাপ্ত আইজির স্বীকারোক্তি । আজ দেশের বহু স্থানে ব্রীজ হওয়ার কারনে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, মোবাইল যোগাযোগ এসেছে। পুলিশ চাইলে নাগরিকরা যে কোন গোপন উপায়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে। ফেসবুকে পুলিশসহ সকল সংস্থার একাউন্ট আছে। থানার সংখ্যাও বেড়েছে, গড়ে ২০ বর্গমাইলের মধ্যে একটি থানা, ৪ বর্গমাইলের মধ্যে একটি পুলিশ ফাঁড়ি । সবকিছু বিবেচনায় ২০ বছর আগের ৪৮ ঘন্টা এখন ১০ ঘন্টা হওয়া উচিত। এরপরও যদি কোন হত্যা তদন্তে অস্বাভাবিক সময় লাগে, অকারনে বিদেশের গোয়েন্দা ডেকে এনে সময় ক্ষেপন করে তাহলে বুঝতে হবে সর্ষের মধ্যে ভুত আছে। আর এই ভুতের কারনেই একটি হত্যাকান্ডের রেশ শেষ হতে না হতেই ঘাতকরা আরেকজনের দরজায় কড়া নাড়ে। পুলিশের হাতে মামলার বোঝা বাড়ে, চাপ বাড়ে, দেশে অন্য কোন ঘটনা ঘটলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
অনন্ত হত্যার বিচার চাই।
না, আর শোক প্রকাশ করে কিছু লিখব না। আর প্রোফাইল ছবি বা কভার ছবি শোকে কালো করব না। এখন আর শোক গ্রাস করছে না আমাকে, শূন্যতা গ্রাস করছে। তবে কলমের লড়াইটা ছাড়ছি না। লিখে যাব মগজ ছিটকে বের হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত। না, তার জন্য আমাকে অভিজিৎ – অনন্ত’র মতো বড় মাপের মেধাবী লেখক হতে হবে না। জাতি মেধাশুন্য হতে হতে এমনিতেই আমার মতো নগণ্যদের পালা চলে আসবে। তারপর এবং তারপর এবং তারপর… ? হে কোমল অনুভূতি সম্পন্ন তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিজিবিগন! আপনাদের পালা কি আসবে না? হে মোডারেট মুসলিমগণ! অচিরেই হয়তো আপনাদের মোডারেটগিরি ছেড়ে আসল চেহারায় আত্মপ্রকাশ করার সময় চলে আসছে।
আর কত মরবে ? মুক্ত কণ্ঠ আবারও লাল হল রক্তে ,এই ভাবে আর কত যাবে আমার ভাই আমার বন্ধুরা আর কত মৃত্যু দেখতে হবে ? এর উত্তর কি কেউ দিতে পারো । হায়রে বাংলাদেশ সত্যি একটা বদ্ধ ভূমি ? সে দেশে সরকার মুক্ত কণ্ঠের নিরাপত্তা দেয় না দেয় ধর্মের শানিত তরবারির এরা কতটা ধর্মপরায়ণ তা দেখানোর জন্য প্রতিযোগিতায় নামে । এটার পর একটা মৃত্যুর খবর আসে কোথায় নিরাপত্তা ?কোথায় বিচার ?কোথায় সরকার ? কোথায় কি ? এই বন্ধ ভূমিতে শুধু ধর্মই স্বাধীন । লজ্জা পাওয়া উচিৎ এই বদ্ধভূমির মানুষদের স্বাধীনতার কথা বলার সময় ।
আর কত রক্ত ঝরবে ?