আমাদের অনন্ত আর নেই। আর কিছু বলবোনা আর কিছু বলার নেই।
সিলেটে মুক্তমনার ব্লগার অনন্ত বিজয়কে কুপিয়ে হত্যা
About the Author: আকাশ মালিক
আকাশ মালিক, ইংল্যান্ড নিবাসী লেখক। ইসলাম বিষয়ক প্রবন্ধ এবং গ্রন্থের রচয়িতা।
আমাদের অনন্ত আর নেই। আর কিছু বলবোনা আর কিছু বলার নেই।
অনন্তর ব্লগের ঠিকানাটা দাঅ তো কেউ ,,,
এমন ডাউন টু আর্থ ছেলে, মন মানতে চায় না
কলম চলছে
কলম চলবে
মুক্তমনা ব্লগারদের কতল করা সওয়াব!
এ দেশ চলবে মদিনা সনদে।
এদেশে শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
পর্যায়ক্রমে এদেশে হিল্লা বিয়া, মুতা বিয়া, দোররা মারার বিচার ব্যবস্থা চালু করা হবে।
মহিলাদের ঘরের বাইরে যাওয়া হারাম। যদিও যেতে হয় তো হিজাব, নেকাব পড়ে বের হতে হবে।
এদেশ মালাউনদের হতে দেবো না।
এদেশে কাফিরদের কথা বলার অধিকার নেই।
মুরতাদদের এদেশের মাটিতে জ্যান্ত পুতে ফেলা হবে।
যেহেতু নাস্তিকদের কতল করা সওয়াবের কাজ।
তাই ওদেরকে জবাই করে ওদের রক্তে পাঞ্জাবী, টুপি রক্তাক্ত করা হবে।
মুক্তমনা, ব্লগার– এগুলো আবার কি??
যেহেতু মুক্তমনা, ব্লগার বলতে কোরআনে কিছু নেই।
তাই কোরআন- হাসীদ বিরোধী কোনো কিছু এদেশে থাকতে পারবেনা।
যারা ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলে তার ইসলামের শত্রু।
তারা অমুসলিম।
তারা বেঈমান।
তারা কাফির।
তাই—
কাফিরদের বিরুদ্ধে সবাইকে জিহাদে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
সুতরাং-
যদি নিশ্চিত জান্নাতুল ফেরদাউস পেতে চান তো—
আসুন—
আমরা সবাই জিহাদে অংশগ্রহন করি।
কতল করি সব নব সৃষ্টিকে, আধুনিকতাকে, বিজ্ঞানকে।
গ্রহন করি আদিম বর্বরতাকে।
ফিরে যাই টিস্যুর যুগ থেকে ঢিলাকুলুপের যুগে।
জগৎটা সামনে এগিয়ে যায় নতুন নতুন মৌলিক, এবং যৌগিক আইডিয়ার উপর ভর দিয়ে। আমাদের চারপাশের যা কিছু আমরা দেখি, সে জিনিশগুলো চলার জন্যেও কাজ করছে বিভিন্ন রকমের আইডিয়া। আমরা মানুষ হিসেবে পুরনো এবং নতুন, একই সাথে দু’ধরনের আইডিয়াই মাথায় রাখি। তারপর যখন দেখি নতুন কোন আইডিয়া, পুরনোগুলোর চাইতে ভাল কাজ করছে, আমরা পুরনো, অকেজো আইডিয়াটাকে বাদ দেই। কেননা, ওতে আর ভালো কাজ হচ্ছিল না। সেটা প্রগতির পরিপন্থী হয়ে যাচ্ছিলো।
আর, আইডিয়া তো আইডিয়াই। কাজে লাগলে কেউ গ্রহন করবে। কাজে না লাগলে তা পরিত্যাগ করবে।
উদ্যোগী মানুষরা যেমন তাবৎ বিশ্বে সর্বক্ষণ নতুন কিছু তালাশ করছে, এমনকি গবেষণাগারে নতুন নতুন উপকরণ, ও সামগ্রী আবিষ্কার ও উদ্ভাবন করছে; আইডিয়ার ক্ষেত্রটাও তেমনি। নতুন আইডিয়া, কেউ না “কিনলে”, বাজার পাবে না। তা এমনিতেই মরে যাবে।
কিন্তু, আইডিয়াটা যে মানুষ বাজারে নিয়ে এলো, তাকে কেন মারতে হবে? মরতে হবে?
আমরা যখন কোন বাজারে যাই, বা পশ্চিমের কোন ডিপার্টমেন্ট স্টোরে যাই, তখন আমি কিনি শুধু সামান্য কটি আইটেম। একটি বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোরে থাকা আরও যে প্রায় লাখ খানেক আইটেম থাকে, সেগুলি এড়িয়ে আমি আমার প্রয়োজনীয় জিনিশটাই তালাশ করি। কিন্তু, এতো সামগ্রী, যেগুলির আমার প্রয়োজন নাই, সেগুলি মজুত করে, প্রদর্শন করার “অপরাধে” স্টোর ব্যবস্থাপককে চাপাতি নিয়ে, খুন করতে তাড়া করি না।
সে বিরাট দোকানের, লক্ষ সামগ্রী সাজানো তাকগুলির— “মাঝপথ” (বন্ধুদের কাছে জানলাম, এই মাঝপথটাও বিপদের পথ) দিয়ে যেতে যেতে, আমি ডাইনে বাঁয়ে তাকিয়ে দেখি। আমার জিনিষটাকে খুঁজি। অনেক সময় অবাক হয়ে দেখি, আরে! এই দেখ, আগেরটার চাইতে অনেক ভালো জিনিষ, বরং সুলভে পাওয়া যাচ্ছে!
আমি বিস্মিত হয়ে সেটা তুলে নেই।
এই তো সভ্যতা; এটাই তো আধুনিকতা! ভালোকিছু তৈরি করার প্রতিযোগিতা; ভালোকিছু খুঁজে নেয়ার স্বাধীনতা!
এই জ্ঞান, এই নিপুণ কলাকৌশল, মানুষ তার সারাটা জনম ব্যয় করে করে শেখে। তারপর মরবার সময় হলে, দিয়ে যায় তার উত্তরাধিকারকে। এভাবেই সভ্যতার এই অর্জন বয়ে চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। এ এক বিপুল রিলে রেস (relay race)।
আর, এক সভ্যতাকাল থেকে পরের সভ্যতাকালে মানুষের অর্জনে দেখা যায় অনেক পার্থক্য। দেখা যায় বিপুলবেগে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লেখচিত্র।
যেমন প্রস্তর থেকে ব্রোঞ্জ, ব্রোঞ্জ থেকে লৌহ, লৌহ থেকে শিল্পযুগ, সেটাও পার করে সম্ভবত আমরা এখন জ্ঞানযুগে আছি। আমার ধারণা, শিঘ্রী আমরা যন্ত্রমানুষ আর ফরমায়েসী-তৈরী (made-to-order animal and human) জীব-সভ্যতার যুগে প্রবেশ করবো।
কিন্তু এই যে সভ্যতার এতো অর্জন, তার ভার, তার সুফল আরোহণে, আমরা নিজেদেরকে ঠিকমতো তৈরী করছি তো? রিলে রেসের ব্যাটনটা, শক্তহাতে ধরে নিয়ে, এগিয়ে যাওয়ার উদ্যম-সক্ষমতাটা আছে তো?
নইলে, এমনকি ঈশ্বর, হাঁ ধরি, স্বয়ং ঈশ্বরও যদি নিজ উদ্যোগে, তার ভাগ দিতে চায়, আমরা তৈরী নই বলে, সে দান — অপ্রস্তুত-হাত গলে পড়ে যাবে।
“আইডিয়ার ব্যাপারীদের” হত্যা করে করে, আমরা শুধু প্রাচীন অসভ্যযুগেই ফিরে যাবো। এই করে, মানুষের মধ্যেকার যে মনুষ্যত্ব, যেটার জন্য সে “মানুষ”, অন্যকিছু নয় — সেটাই শুধু নিহত হবে।
সারা দুনিয়াতে কেউ আমাদেরকে সাথে নেয়ার জন্য অপেক্ষায় বসে থাকবে না। আমরা শুধু ভুতের মত পেছনে চলে চলে এক আলোবাতাসহীন অন্ধকার গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবো।
সিদ্ধান্ত নেয়ার এটাই সময়, আমরা কী চাই, কোনটা চাই?
(আইডিয়ার ব্যাপারী, ব্লগার অনন্তকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তার অমূল্য পণ্য, আইডিয়াকে হত্যা করবে কী করে? মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্যই চলবে আইডিয়ার উৎপাদন, ও বিপণন। অনন্তের উত্তরসূরি অগনিত, তাঁরা সামনে বয়ে নিয়ে যাবে সেই আইডিয়া ও বিপণনের বৃত্তিটাকে। এতেই অমর হয়ে থাকবে অভিজৎ-অনন্তরা, অনন্তকাল। অমানুষেরা মানুষ হত্যা করেছে, মনুষ্যত্বকে হত্যা করতে পারে নাই। কখনও পারবে না। তাই ওরা পরাজিত, কাপুরুষ! )
সেল্যুট মুক্তমনা। কলম চলবে।
@ বিপ্লব রহমান,
দাদা, দেশ থেকে মুক্তমনায় যারা লিখেন, মিনতি করি এবার আপনারা একটু সতর্ক হউন। তিনজন মানুষ দিনের আলোয় খুন হওয়ার পরও কি আমরা বুঝবোনা আওয়ামী লীগ কী চায়? যতদূর সম্ভব সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
কী বলবো? শোক প্রকাশের ভাষাটুকুও হারিয়ে ফেলেছি।বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে।বড্ড ভারী হয়ে আসছে বুকটা। ভিজে যাচ্ছে দু’চোখের পাতা। রাজিব, অভিজিৎ, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত সোনার টুকরো-হীরের টুকরো ছেলেরা আমাদের;তোমাদের এ হত্যাকান্ডের বিচার একদিন হবেই হবে। যে মানবিক আদর্শের জন্য তোমাদের এ আত্মত্যাগ- সে আদর্শের বিজয় একদিন হবেই হবে। কলম চলছে। কলম চলবেই।
ইউরোপে বাইবেলবিরোধী বক্তব্যের জন্য ব্রুনো,গ্যালিলিও ধর্মান্ধ রক্তলোলুপ খ্রিস্টানদের হাতে মৃত্যুবরণ করলেও পৃথিবীর সূর্যের চারিদিকে ঘোরা বন্ধ হয়নি । খ্রিস্টান মৌলবাদীদের মতো অভিজিত রায়,ওয়াসিকুর রহমান,অনন্তবিজয় দাশের প্রাণ ছিনিয়ে নিল মুসলিম মৌলবাদীরা ।এইভাবে জোর করে কলম থামানো যাবে না ।চিরকালই ‘কলম অসির চেয়ে শক্তিশালী’ ।হিন্দু,মুসলিম,খ্রিস্টান সব ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে,সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের জয় অবশ্যম্ভাবী ।
অনন্ত বিজয়কে কুপিয়ে হত্যা
দিকে দিকে ঐ জাগিয়া উঠিল দ্বীন ইসলামের লাল মশাল………………………।
যত দিন যাচ্ছে তত বেশি নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছি। মৃত্যু দেখতে দেখতে আজ আমি বড় ক্লান্ত। বড় রিক্ত আজ আমি।
আর কত রক্ত ঝরালে ওদের মুখে হাসি ফুটবে ???
আর কত বার, কত শত মুখের ভাষা তারা কেড়ে নিলে বিজয়ল্লাসে নেচে উঠবে ??
কত মেধাবীর রক্ত চাই ওদের???
ওরা কি মানুষ ??? না………
ওরা কি হায়েনা??? না……
ওরা কি পিশাচ??? না……
ওরা কি রক্ত খেকো কোন জানোয়ার????? না……
তবে কারা ওরা??????
ওরাও কি সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের মুখ দেখে????
ওরাও কি বোনের বিরক্তি মাখা আব্দার গুলো হাসিমুখে মেনে নেয়???
ওরাও কি প্রেয়সীর হাতে একটি কদম দেবার জন্য শত মিনিটের পথ পাড়ি দেয়????
ওদের জন্যও কি নির্ঘুম চোখে তার প্রিয়তমা স্ত্রী অপেক্ষা করে????
ওরাও কি বেশি রাত করে ঘরে ফিরে বাবার বকার ভয়ে নিঃশব্দে মায়ের কোলে আশ্রয় নেয়????
ওরাও কি অভিমানী কন্যার চোখের পানি দেখার ভয়ে পককেটে চকলেট নিয়ে আসে??????
সব উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে ওরাও তো আমাদের মতই মানুষ ।
সাধারন মানুষ।
ছোট ছোট স্বপ্ন দেখা নির্বিরোধী মানুষ…
তবে কেন এমন করে এরা???
কিভাবে পারে ওরা???
একবারের জন্য ও কি টার্গেট করা মানুষটির চোখের কোনে জমে থাকা
মায়া,ভালবাসা,ক্ষোভ ,অভিমান, জিজ্ঞাসা , আকুতি ওদের চোখে পরে না ????
আর উত্তর যদি না হয়
তবে কখনও কি ওদের নিজেদের পরিচয় জানতে ইচ্ছে করে না ………
একবারও কি শান্ত মনে ভাবতে ইচ্ছে করে না,কেন এমন করছি?????
কার জন্য করছি????
যুক্তির পরাজয়ের একমাত্র শাস্তি কি স্বঘোষিত মৃত্যুদণ্ড !!!!!!!
যদি মেনে নিতে নাই পারে তবে কেন ওরা ওদের দৃষ্টিতে ভ্রান্ত! উদ্ভট!! মূর্খের!!! যুক্তি গুলোর প্রতি উত্তর তৈরি করে না ????
ওরা কি কখনও তর্ক করে নি ?
ওরা কি কখনও যুক্তিবিদ্যা পরে নি ???
ওরা কি জানে না যুক্তির পরাজয়ে কোন গ্লানি নেই বরং নতুন কিছু শেখার আনন্দ আছে ……
ওরা এত ছেলে মানুষ কেন ????
ওরা এত বোকা কেন????
ওরা কি জানে না বিশ্বায়নের এই যুগে ,ইন্টারনেট এর এই যুগে বোকা থাকাটা অন্যায় ।রীতিমত অপরাধ…।
আবার তোরা মানুষ হ ……………
শত সহস্র লক্ষ মানুষের ভালবাসা আছে তোদের সাথে …………
তোরা অস্ত্র তাক করলেও আমরা তোদের ফুল দিয়ে বরন করে নিব।
কি করব বল?? আমরা যে অস্ত্র চালাতে জানি না। সেই কবে থেকে কলম ধরেছি। ধরে নে সেটাই আমাদের অস্ত্র।
তোদের অস্ত্র আছে। আমাদের কলম আছে।
তোদের হিংসা আছে।আমাদের ভালবাসা আছে ।
তোদের মূর্খতা আছে। আমাদের জ্ঞান আছে ।
দেখা যাক কত দূর কে যেতে পারে ????????
ব্লগার অনন্ত বিজয়, অভিজিৎ।আরও নাম না জানা কলম যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা ,ভালোবাসা রইল ……
@ মোঃ তারিকুল ইসলাম,
এ জীবনে আত্মীয় আপন অনেক হারিয়েছি, স্বজনহারা শোকে অনেক কেঁদেছি, আজ অনন্তকে হারিয়ে আমার মনে হচ্ছে যেন আমি আমার নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি। এমন আর কোনদিন আমি কাঁদিনি। চোখ থেকে জল যে সরছেনা, কিছু লিখবো কী করে? ফেইসবুকে আফরোজার সাথে কিছুক্ষণ আলাপ করে দেখি আর পারছিনা, কমপিউটার অফ না করেই ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। গাড়িতে গিয়ে একা একা আরো কিছুক্ষণ কাঁদলাম। আধঘণ্টা পরে ঘরে ফিরে বাথরুমে চোখটা ধোয়ে আবার যখন কপিউটারে বসেছি কিছু বলবো বলে, দেখি তার ছবিতে ব্লগ ফেইসবুক, পত্রিকা টুইটার সয়লাব। আমি তাকে দেখলাম, সে আমার ছবিটাও কোনদিন দেখলোনা। আমার লেখালেখির সকল প্রেরণা, উৎসাহ, আমার পথনির্দেশক সবকিছুই ছিল অনন্ত। সে আমার কী ছিল অভিজিৎ আর সৈ্কত ছাড়া আর কেউ জানেন না। দূরে থেকেও পনেরোটা বছর ছায়ার মত আমার পাশে ছিল। বড় ভাই বলে সম্মোধন করতো, এতো শ্রদ্ধা করতো, ভালবাসতো, কত আকুতি ছিল একদিন দেখা হবে। দুঃখটা রইল তার সাথে আর কোনদিন দেখা হবেনা।
অনন্ত বিজয়। নামটা দারুণ অর্থপূর্ণ। মুক্তচিন্তা বিজয়ী হয় চিরকাল। হতেই হয়। অন্ধকার পরাজিত হয়, আর আলোক লাভ করে অনন্ত বিজয়।
কিছু লিখতেও কলম চলছে না। ইমেইল তালিকা থেকে দুটো নাম কমেছে। আর আজ মোবাইল থেকে একটা নাম মুছে ফেলতে হবে।
@ গীতা দাস,
মোবাইল থেকে তার নাম ডিলিট করতে পারি, মন থেকে মুছবো কী ভাবে দিদি? আমার ই-মেইল বক্সের অর্ধেক জুড়েই অনন্তের নাম, আমার বইয়ের পাতায় পাতায় অনন্তের হাতের ছোঁয়া। একটি দিনের স্বপ্ন বুনেছিলাম পনেরোটা বছরের সাধনায়। আমি একদিন তাকে ফোন করে বলবো, অনন্ত আমি এসেছি, তুমি সেই দিনের আয়োজন করো। আমরা ঢাকায় আফরোজার বাসায় এক রাত থাকবো। সেখানে বসে প্লান করবো কোথায় কোন হোটেলে আড্ডাটা বসবে। মুক্তমনায় যারা লিখেন, রণদীপম বসু, সৈ্কত, গীতা দি, মাহফুজ, রায়হান আবীর, টেকী সাফী, বিপ্লব রহমান সহ সকলকে নিয়ে এক নৈশ্যভোজন। দিদি আমার সকল স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। প্রতি বছর বই মেলা আসে আর প্রতি বছরি অনন্ত প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে দৌড়ায় আমার বই ‘যে সত্য বলা হয় নি’ এর পান্ডুলিপি নিয়ে। গত মাসে অভি খুন হওয়ার পর বললাম, অনন্ত তুমি রেডি থেকো এবার নিজের টাকায় বই ছাপাবো। অনন্ত বললো দাদা, আমি রেডি আপনি আসুন। অভি নাই, অনন্ত না্ই আমি কার জন্যে বাংলাদেশে যাবো দিদি, কাকে দেখাবো আমার বই? এ দুই জন ছাড়া যে আমার কোন অস্তিত্বই নেই।
পাঁচটা বছরে যতবার তার সাথে আলাপ হয়েছে ততবারই বলেছি, অনন্ত তোর দোহাই লাগে ভাই সাবধানে থাকিস, আমার কেন জানি মনটা বলে তুমি বাংলাদেশে সেইফ না। একদিন বললো, দাদা আমি ইংল্যান্ড আসছি কিছুদিনের মধ্যেই। আমি আজও তার অপেক্ষায় আছি, আমি নিজে হিথরো এয়াপোর্ট গিয়ে আমার গাড়িতে করে তাকে আমার বাসায় নিয়ে আসবো। আমার অনন্ত নাই, দিদি আমি তা বিশ্বাস করিনা বিশ্বাস করিনা বিশ্বাস করিনা।
মালিক ভাই, আসবেন না। নিজের দেশে আসবেন না। আমি চাই না আপনারা দেশে আসুন। এ দেশ আপনাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না।
শোক প্রকাশের ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি !
না, আর শোক প্রকাশ করে কিছু লিখব না। আর প্রোফাইল ছবি বা কভার ছবি শোকে কালো করব না। এখন আর শোক গ্রাস করছে না আমাকে, শূন্যতা গ্রাস করছে। তবে কলমের লড়াইটা ছাড়ছি না। লিখে যাব মগজ ছিটকে বের হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত। না, তার জন্য আমাকে অভিজিৎ – অনন্ত’র মতো বড় মাপের মেধাবী লেখক হতে হবে না। জাতি মেধাশুন্য হতে হতে এমনিতেই আমার মতো নগণ্যদের পালা চলে আসবে। তারপর এবং তারপর এবং তারপর… ? হে কোমল অনুভূতি সম্পন্ন তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিজিবিগন! আপনাদের পালা কি আসবে না? হে মোডারেট মুসলিমগণ! অচিরেই হয়তো আপনাদের মোডারেটগিরি ছেড়ে আসল চেহারায় আত্মপ্রকাশ করার সময় চলে আসছে।
অভিজিত রায়,ওয়াসিকুর রহমান,অনন্তবিজয় দাশের প্রতি রক্তবিন্দু থেকে যেন অসংখ অভিজিত,ওয়াসিকুর আর অনন্তবিজয় জন্মায়