বাঁধনের কথা মনে আছে আপনাদের নিউ ইয়ার্স ঈভে যে মেয়েটি লাঞ্ছিত হয়েছিল,তারপর তৎকালীন আওয়ামীলীগের এম,পি জয়নাল হাজারি “বাঁধনের বিচার চাই” নামে একটি বই প্রকাশ করেছিল? আমার মনে হয় পহেলা বৈশাখের ঘটনাটি তার বিবর্ধিত রূপ। একদল লোক চায় বাঙালির জীবন থেকে পহেলা বৈশাখের মত অনুষ্ঠান মুছে যাক, নারীরা ঘরবন্দি হোক, আবার ফিরে আসুক একাত্তরের সেই ভয়াবহ দিনগু।। কারণ একাত্তরের পর বাঙালি বোধয় দেখেনি এমন ধর্ষণের প্রকাশ্য মহড়া। আমার মনে হয় না আগামীতে বাঙালির কোন সার্বজনীন উৎসব থাকবে, কারণ আমরা যতটা না বাঙালি তার চেয়ে অনেক বেশী পরিমাণে ধার্মিক। আমার মনে হয় না আগামী কয়েক বছর পর আর পহেলা বৈশাখ হবে বাঙলায়, আর হলেও নারীদের বোরখা ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে সেখানে, হয়তো বা আবার বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটবে। এভাবে বাঙালির সাংস্কৃতিক মেরুদণ্ডটিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। আর বাঙলার পিনাকীও প্রগতিশীলরা পেঁচা নিয়ে বাণী দিয়ে এই ঘটনাকে জাস্টিফাই করবেন। বাঙলায় কোন উৎসব হবে না, বাঙালির সার্বজনীন কোন সংস্কৃতি থাকবে না, থাকবে শুধু নষ্ট ভ্রষ্ট ধর্মীয় রাস্ট্রতত্ব।

১৪২২ সালের পহেলা বৈশাখের ঘটনাটি আমাদের জানান দিলো, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসাবে কতটা অকার্যকর। আইন শৃঙ্খলার সাথে জড়িত মানুষগুলো কতটা নির্লিপ্ত, অপরাধ দমনে কতটা অনাগ্রহী। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কথাবার্তায় এবং বিভিন্ন স্ট্যাটাস থেকে মনে হয় তাঁরা অপরাধীদের উৎসাহ দিতে বেশি আগ্রহী। প্রথমে ধরা যাক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানের কথায়। তাঁর মতে পহেলা বৈশাখে এ ধরণের কোন ঘটনাই নাকি ঘটেনি। তাঁর মতে, এটা শুধু লিটনরাই বলছে। ঊনিশটি সি সি টিভি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কাছে এই ঘটনার কোন প্রমাণ নাই। যদিও কিছু টিভি চ্যানেল সি সি টিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যাতে ধরা পড়েছে এই ভয়াবহ ঘটনাটি। চিহ্নিত করা গেছে প্রায় অনেক।। কিন্তু, তাদের কাছে নাকি কোন প্রমাণ নেই। ঢাকা ভার্সিটির প্রোক্টর আবার এই ব্যপারে এক কাঠি সরেস ঘটনাটি জানার পরেও নাকি তিনি দাবা খেলছিলে। তিনি বাংলাদেশের নুতুন নিরো, তফাৎ শুধু খেলায়। প্রোক্টর সাহেবের কাছে জানতে বড় মন চায়, আপনার মেয়েটি যদি সেখানে থাকতো, তাহলে কি আপনি দাবা খেলতে পারতেন? একজন ঢাকা ভার্সিটির ছাত্রের কাছে নাকি ওই ঘটনার কিছু ছবি আছে, কিন্তু ঢাকা ভার্সিটির প্রধান তা প্রকাশ করতে দিচ্ছেন না। কেন? তিনি কাকে বা কাদেরকে বাঁচাতে চাইছেন? এই হলো আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকদের মানবিক মূল্যবোধ।

এখনো সময় আছে, প্রতিবাদ করতে হবে এখনি। অনেক হয়েছে। এবার সময় এসেছে পাল্টা আঘাত করার। আমাদের কাছে এছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। যারা নির্বিবাদী, নিরপেক্ষ থাকতে চান তাঁরা কি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন কাল আপনার মা বোনের সাথে এই ভয়াবহ ঘটনাটা ঘটবে না? নাকি ঘটলেও আপনারা নির্লিপ্ত থাকবেন?পোশাক পড়ার ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র, যদি খোলামেলা পোশাকই ধর্ষণের কারণ হতো তাহলে ইউরোপ এবং আমেরিকায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো সবচে বেশী। তা কিন্তু ঘটে না। কারণ এখানে ছেলেমেয়েদের অবাধ সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মেলামেশার ফলে পরস্পরের প্রতি এক ধরনের সহজাত ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাবধ সৃষ্টি হয়, যা তাঁদের ধর্ষণের মতো ধ্বংসাত্মক মানসিকতা থেকে বিরত রাখে। আর আছে আইনের শাসন এবং ধর্ষকদের প্রতি সামাজিক ঘৃণা/ আর আমাদের দেশে জেল হাজতেও ঘটে ধর্ষণের ঘটনা। রক্ষক হয়ে ওঠে ভক্ষক। আমার মনে হয় না রাষ্ট্র বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এই পশুদের বিচার করবে, কারণ আমাদের দেশটি এখন চলছে উল্টো পথে উল্টো রথে। যদিও আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন মহিলা। তবুও বিচার চেয়ে লাভ নেই। এগিয়ে আসতে হবে নিজেদেরকেই। মানুষ হিসাবে সবার উচিত প্রতিবাদী হওয়া, নইলে ভবিষ্যতে কোন নারী হয়তো পুত্র সন্তানের জন্ম দেবেন না, এই ভেবে যে তিনি একজন ধর্ষককে জন্ম দিচ্ছেন।

আমি শুধু একজন পুরুষ নই, আমি একজন মানুষ, যার জন্ম একজন নারীর গর্ভে, যে নারীর কারণে আমি এই পৃথিবীর রূপ,রস, গন্ধ উপভোগ করতে পারছি। আমার একটি বোন আছে। আশাকরি সেই ধর্ষকদেরও আছে, আমি বুঝি না একজন নারীর শরীর থেকে জন্মগ্রহণ করে কিভাবে নারীর শরীরকে খামচে ধরে? আমার দুর্ভাগ্য যে, আমি নারী নই, হলে হয়তো তাঁদের দুঃখ কস্টগুলো আরও ভালভাবে বুঝতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু তা নই,তাই একজন মায়ের সন্তান হিসাবে, একজন বোনের ভাই হিসাবে, একজন নারীর বন্ধু হিসাবে সবসময় নারীর উপর হিংস্র নির্যাতনের প্রতিবাদ করে যাবো। আজীবন ঘৃণা করে যাবো সেই সব নপুংসকদের, যাদের কারণে আমার মায়েরা, বোনেরা, বন্ধুরা রক্তাক্ত হয় । আর অফুরান শ্রদ্ধা থাকবে লিটন নন্দীর মতো মানুষদের প্রতি।