দূর্গা পূজার আগে মহালয়া। ভোর রাতে উঠে বাবা, মা, কাকারা, জেঠিমা, জেঠতুত ভাইরা মহালয়া শুনতেন। ছোটবেলায় ঘুম কাতুরে ছিলাম বলে শেষদিকে শুনতাম। আর মহালয়ার সাথে সম্পৃক্ত দুটো মন্ত্র মুখস্থ ছিল। একটা —
‘যা দেবী সর্ব ভূতেষু মাতৃ রূপেন সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নম:।’
অর্থাৎ যে দেবী মায়ের রুপে সকল জীবের মধ্য বিরাজমান সেই মা কে নমস্কার।
আরেকটা —
‘যা দেবী সর্ব ভূতেষু শক্তি রূপেন সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নম: ।’
বাংলা নিশ্চয়ই যে দেবী শক্তি রুপে সকল জীবের মধ্য বিরাজমান সেই শক্তিকে কে নমস্কার। তবে আমি দ্বিতীয়টি ই আওড়াতাম আওয়াজ করে। মা হওয়ার চেয়ে শক্তি রূপই আমার বেশি পছন্দ ছিল, আছে এবং থাকবে।তবে এ মন্ত্র কিন্তু ভক্তি রূপেন সংস্থিতা নয়, শক্তি থেকে মুক্তি রূপেন সংস্থিতা।
তাই আমি আজ বলব—
‘যা নারী সর্ব ভূতেষু শক্তি রূপেন সংস্থিতা,
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নম:’।
এর বাংলা করছি — যে নারী শক্তি রুপে সকল স্থানে বিরাজমান সে নারীকে নমস্কার।
আমি সেই শক্তিশালী নারী চাই, যে নারী সামনের জঞ্জাল ধ্বংস করে সামনে এগিয়ে চলবে।
তবে নারী মানুষ । সেজন্য সে সাহসী হলেও সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ থেকে সাঁতরে উঠতে পারবে না । নারী মানুষ। সেজন্য সে শক্তিশালী হলেও ভূমিকম্পের পাহাড় ধ্বস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না, নারী মানুষ । সেজন্য সে অমিত তেজ থাকলেও বিশ পঁচিশটি হায়েনার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। পারেনি নব বর্ষের দিন।
দিল্লীতে বাসে জ্যোতি নামে একটি মেয়ে গণ ধর্ষণের শিকার হবার পর প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে বিবিসি India’s Daughter: Delhi Bus Gang Rape নামে একটি ডকুমেন্টারি বানিয়েছে। এবার ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তা আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। যদিও এর আগেই তা ইউটিউবে প্রচার হয়ে গিয়েছিল। এ নিয়েও তুমুল কান্ড। ভারত সরকার, এমনকি অনেক নারীবাদী ভারতীয়রা পর্যন্ত India’s Daughter এর প্রচার নিয়ে আপত্তি করেছে। ভারতকে ধর্ষকদের দেশ হিসেবে উপস্থাপনে তাদের আপত্তি। ঘটনাটি ঘটেছে।ভারতীয় সরকার কি তা মুছে দিতে পারবে? এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। ভারতে প্রতি ২০ মিনিটে একজন নারী ধর্ষনের শিকার।
এমনি বাংলাদেশেও নববর্ষের ঘটনাটি নিয়ে তালহাবানা শুরু করেছে। গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্মকমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “কোনো ভিকটিম বা নারী এখনও পুলিশের কাছে এসে কোনো ধরনের অভিযোগ করেনি। কেউ নিগৃহীত হয়েছেন, এমন কারও অভিযোগ পায়নি পুলিশ। হায়রে পুলিশ ! সারারাত রামায়ণ শুনে ভোররাতে বলে সীতা কার বাপ। আর সিসি ক্যামেরাতে এত কিছু ধারণ করার উদ্দেশ্য কি? তবে আশার কথা আদালত স্বপ্রণোতিত হয়ে রুল জারি করেছে।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার খবর পেয়ে ঐদিন খেতে পারিনি। বিষয়টি ভয়ংকর মনে হয়েছে। মন আতংকিত ছিল। চোখ দিয়ে জল পড়েছিল।।
এবার ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল টি এস সি এর লোচ্চামির খবরে ঘৃণায় গা গিন গিন করছে । অসভ্যতার ব্যাপকতায় চোখ জ্বলছে। মন পুড়ছে । অপরাধীদের ধরে শাস্তি না দেয়া পর্যন্ত তো এ গিন গিন কমবে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী, মাননীয় স্পীকার, মাননীয় মহিলা ও শিশু বিষয় প্রতি মন্ত্রী, মাননীয় রাজনৈতিক দল বি এনপি এর চেয়ার পারসন, মাননীয় কৃষিমন্ত্রী যিনি এককালের অগ্নিকন্যা ছিলেন, মাননীয় নারী সাংসদগণ, (একমাত্র সাংসদ তারানা হালিম ছাড়া) আপনারা নববর্ষের দিন নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতা বিষয়ে নীরব কেন? নিশ্চুপ কেন?
নারী হিসেবে আপনারা তো জানেন যে, অনাকাংক্ষখিত পুরুষের ছোঁয়া শরীরে লাগলে নারীর শরীর ঘৃণায় গিনগিন করে! আপনরা তো জানেন, নারীকে মোমের সাথে তুলনা করলেও নারীর শরীর পুরুষদের মত রাস্তা ঘাটে রোদের তাপে গলে না, অর্থাৎ তার যৌনানুভূতিতে শুড়শুড়ি লাগে না। এ জন্য নারী ভিড় ঠেলে নিজের পথ করে নেয়ার মত শক্তি রাখে, সাহস রাখে। সংযম রাখে। নপুংসক কিছু পুরুষ নিজেকে সংযত রাখতে পারে না । আপনারা তাদেরকে জেলে ভরে রাখার ব্যবস্থা করুন। তাদেরকে ঘরে বন্দী করে রাখার ব্যবস্থা করুন। নারী সাজলে তাদের মাথা ঘুরে। কাজেই তাদের হাসপাতেলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। নারী পথে বের না হওয়ার জন্য যারা প্রলাপ বকে ফতোয়ার নামে তাদেরকে পাগলা গারদে ভর্তির ব্যবস্থা করন।
স্বাধীন দেশের কিছু অসভ্য পুরুষ, নারী দেখে হয় বেঁহুশ। এরা অমানুষ। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
সবশেষে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি হায়েনাদেরকে— আগামী নববর্ষের জন্য আমরা প্রস্তুত। তোরা আসিস। আমরা মোকাবিলা করব।
আমাদের এই যুদ্ধ হয়তো সহসা শেষ হবে না, কিংবা হয়তো কোনদিনই শেষ হবে না
ধন্যবাদ গীতাদি আপনার সাহসী উচ্চারণের জন্য।
কলম চলুক।
লেখিকাকে ধন্যবাদ তার সাহসী লেখার জন্য। বহু লোকের মাঝে যখন নারী নির্যাতিতা হয় এবং পুরুষরা তামসা দেখে, সেই পুরুষদের ধিক, যারা নারীকে আপমান করে তাদের কড়া শাস্তি হওয়া দরকার এবং তাদের স্মাজ থেকে বিতারিত করা উচিত। নারীকে শক্তি আর্জন কারতে হবে। পুরুষরা এখন কাপুরুষ, নারীর সম্মান রক্ষা করতে আপ্রাগ। গুটি কয়েক আসভ্য লোকের কাছে তারা পরাস্ত। নিজকে রক্ষা ক্রেতে শক্তি ধ্রতে হবে। স্ররব শেষে স্লগান্টা খুব ভালো লাগলো। সবাইকে আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
সরকার এই বিষয়ে কি ক্রছে? সরকার যদি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্তা না নেয়, তবে আরাজক্তা দিন দিন বাড়বে। স্রকারকে কঠোর হস্তে এদের শাস্তি দিতে হবে। ম্নত্রী,আম্লা,পুলিস সবারই মা, বোন, স্রী,কন্যা আছে। তদের এই বিষয়ে ভাবা উচিত।
শুরু হোক প্রস্তুতি; আজ থেকে, এই মুহূর্ত থেকেই। নারীর অধিকার আদায় করে নিতে হবে নারীকেই। সাথে কেউ আসুক বা না আসুক।
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে
httpv://www.youtube.com/watch?v=-7IV9seX9OU
”যদি ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে–
তবে বজ্রানলে
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে॥”
মনে হচ্ছে বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলাই জ্বলতে হবে।
যদি ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে–
তবে বজ্রানলে
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে
ইউটিউবে দেখা আমার প্রিয়তমদের একটি।প্রায়শঃই দেখি। জানলেন কিভাবে?
জাগো নারী বহ্নিশিখা …
আমি হতাশ আর একটা গ্রুপকে নিয়ে, এরা আধুনিক ও শিক্ষিত কোন সন্দেহ নেই! এরা এদের কণ্যা সন্তানদের আধুনিক মানুষ হিসেবেই গড়তে চান, ঠিক যেমনটি তাদের পুত্র সন্তানেরা মাথা উঁচু করে পথ চলেন। কিন্তু কি এক অজানা কারণে নিজেরা হিজাব ধরেন এবং কণ্যারা একটু বড় হলেই বস্তায় ভরেন! এ নিযে খুব কাছের আত্মীয়রা প্রশ্ন তুললে এমন সব যুক্তি তুলে ধরেন, যা শুনলে আপনার বিশ্বাস হবে না যে তিনি তা নিজেই বিশ্বাস করেন! তবুও তা তার করা চাইই চাই! এ যেনো অনেকটা নিজের সাথে নিজের প্রতারনা! এ যেনো সত্যিই এক বন্দী দশা আমাদের নারীদের। মধ্যযুগীয় ধারনায় আপাদমস্ত আপ্লুত পুরুষতান্ত্রিক চেতনার ভিত না সরা পর্যন্ত বোধ করি এর মুক্তি নেই!
মধ্যযুগীয় ধারনায় আপাদমস্ত আপ্লুত পুরুষতান্ত্রিক চেতনার ভিত সরানো বড্ড কঠিন, দাদা
বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক প্রতিবাদী হতে শিখেছে। এই স্রোতকে রুদ্ধ করা যাবেনা। তা ওই তেঁতুলবাবার তত্ত্ব বা ১৪০০ বছর পুরোনো গোঁজামিল ভরা বাণী, যা-ই হোক না কেনো…
নারীর অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য 🙂
আমি সেই শক্তিশালী নারী চাই, যে নারী সামনের জঞ্জাল ধ্বংস করে সামনে এগিয়ে চলবে।
ভয়ের কিছু নেই, আমি সেই শক্তিশালী নারী এই বাংলাদেশেই দেখেছি @ গীতা আপু।
প্রথম পর্ব :
গেল মার্চে প্রায় পাঁচ সপ্তাহ বাংলাদেশ ঘুড়ে সবেমাত্র ইহুদী-নাসারার মুল্লুকে ফিরে এসেছি।
বাড়ীর পাশে বনানী মসজিদ, ঘর থেকে দেখা যায়। প্রতি শুক্র বার উপচে পরা অবনত মুসুল্লির ভিড় চোখে পরার মত। এই ভিড়ে যে শুধু মোল্ল-মৌলবী তা না, ফিটফাট প্রৌঢ় সাহেব’দের উপস্থিতিও কম না।
২য় পর্ব :
ঐ দিন শুক্র বার, হ্যাপি জুম্মা। গুলশান ক্লাবের গেটের বাইরে অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছি। হটাৎ কিঞ্চিত জটলা। ৬০-উর্ধ প্রৌঢ় বয়সী সাহেবের পথ আগলে ধরে আছেন আলতা পাউডার মাখা এক যুবতি। উভয়ের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, ক্রশটক। জানজোট, শব্দে বিষয়বস্তু বুঝা যাচ্ছে না। মুহুত্বেই সাহেব বেচারা ঠেলেঠুলে, ধাক্কা মেরে দ্রুত পদে ক্লাবের গেট দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ঢুকে গেলেন। প্রহরি’দের স্যালুট দেখে মনে হল, তিনি সম্ভবত ক্লাব মেম্বার। লোকটির মাথায় তখনো আল্লহু খচিত জুম্মা টুপি।
যুবতিও ছাড়ার পাত্রি নন। এইবার আরো এগিয়ে এসে লোকটির প্রতি কিছু ঘৃনা, তিরস্কার মাখা শব্দ ছিটকে মারলেন- “বুইড়া ব্যাডা, কামের কাম পারে না, খালি কামড়াইতে পারে”
ভাবনা পর্ব :
৯৫% মুমিনের বাংলাদেশেও যে এমন সাহসী নারী আছ তা দেখে আমার কাছে যারপর নেই ভাল লাগল।
ধন্যবাদ সাহসী নারী।